সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে অর্ধশতাধিক জেলেসহ ট্রলারডুবির খবর পাওয়া গেছে। আর এতে নিখোঁজের সংখ্যাও কম নয়। অনেক জেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ জেলেরই কোনো হদিস মিলছে না। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন জেলেরা।
ট্রলারগুলোতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় জেলে নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বরিশাল অঞ্চলের দেড় শতাধিক জেলের এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি।
চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে অধিকাংশ ট্রলারডুবির ঘটনা ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুম আকন জানান, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার। এ ছাড়াও বরিশাল অঞ্চলের ১১৪ জন জেলে ভারতে আটক রয়েছেন। খোঁজ মেলেনি ৩০টি ট্রলারের।
তিনি বলেন, ‘ইলিশ শিকারে ৬৫ দিনের অবরোধের পর আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে ভাসতে ভারতে চলে যায়। ওই ট্রলারের ১২ জন জেলে ভারতের বারৈপুর জেলখানায় বন্দি আছে। এবার ঝড়ের কবলে পড়ে মোট ১১৪ জন জেলে ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকার তাকদীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে বাংলাদেশের ২১ জেলে চিকিৎসাধীন।
‘এ ছাড়া বুদ্ধপুর আশ্রয় কেন্দ্র ও হলদেবুনিয়া বন বিভাগে বাকি ৯৩ জন বাংলাদেশি জেলে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। তারা সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ৩২ জন জেলেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে পাথরঘাটার ৫ জন, মহিপুরের ১০ জন ও ১৭ জন পিরোজপুরের।’
মাসুম বলেন, 'আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে তাতে মোট ১০৪ জন জেলে নিখোঁজ। এদের অধিকাংশই ভোলার চরফ্যাশন ও পটুয়াখালীর মহিপুর ও পিরোজপুরের। এ ছাড়া বরগুনা জেলার ৩৪ জন জেলে ভারতে উদ্ধার হয়ে সে দেশের সরকারের আশ্রয়ে আছে।'
তিনি জানান, সবশেষ তথ্য মতে এখনো পর্যন্ত ৩০টি ট্রলারের কোনো খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজ ট্রলারের মধ্যে পাথরঘাটার ৯টি, তালতলীর ২টি, মহিপুরের ১১টি ও চরফ্যাশনের ৮টি। পাশাপাশি ডুবে যাওয়া ৩০টি ট্রলারের মধ্যে বরগুনা জেলায় ১০টি, ভোলার চরফ্যাশনের ৮টি, পটুয়াখালীর মহিপুরের ১টি, পিরোজপুরের ৪টি ও ভোলা সদরের ৭টি।
পটুয়াখালীর মহিপুর আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা বলেন, ‘আমাদের এখানে শুধু ১২ জেলেসহ মা-বাবার দোয়া নামের একটি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। তবে ডুবে যাওয়া ১৫টি ট্রলারের সব জেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু জেলে ভারতে উদ্ধার হয়েছে।’
আলীপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, সাগরের অস্বাভাবিক ঢেউ এবং ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ছয়টি ট্রলার ১০৮ জেলেসহ ডুবে যায়। এ সময় অন্য ট্রলারের মাধ্যমে ৯৫ জেলেকে উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন।
মহিপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুম বেপারী বলেন, ‘৬ আগস্ট থেকেই সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। তবে ১৯ আগস্ট সাগরের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। আমাদের ১৬টি ট্রলার পুরোপুরি ডুবে গিয়েছিল। ১৯ আগস্টের আগে আমাদের কাছে তেমন মিসিং সংবাদ নেই।
‘হঠাৎ দুর্যোগ যেটা জেলেদের ভাষায় ‘দোমা’ বলা হয়। এবারের তুফান ভয়ানক ছিল। এবারের ১৬ ট্রলারডুবির ঘটনায় আমাদের ১৯ জন নিখোঁজ ছিল। আমরা ১০ জনকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি, এখন পর্যন্ত ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট, বয়া দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যত্নের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। জেলেরা সেগুলো ব্যবহার করতে চায় না। যে কারণে নিখোঁজ বা মৃত্যু বেশি। মৃত্যু তো আমরা বলতে পারছি না, আমরা বলতে পারি নিখোঁজ।
‘আমাদের এখানে চার হাজার জেলে সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রতিটি ট্রলারে ২০ জন করে লোক থাকে। আমাদের জেলেরা আবহাওয়ার কোনো সংকেত পায় না। কুয়াকাটায় যে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয় সেটার আওতার বাইরে চলে গেলে আমাদের সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় জেলেদের। যে কারণে সাগরে থাকা জেলেরা কোনো খবর পায় না আবহাওয়ার। যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে ট্রলারডুবি বা জেলে নিখোঁজের সংখ্যা কমবে। তাছাড়া জেলেরা তেমন রেডিও ব্যবহার করে না।’
পিরোজপুর মৎস্য ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি কমল দাস জানান, শনিবার রাতে নিখোঁজ সাত ট্রলারের মধ্যে সন্ধান মেলে পাঁচ ট্রলারের। তার মধ্যে একটি ট্রলার সাগরে ডুবে গেলেও ওই ট্রলারের জেলেদের ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করেছেন।
পাথরঘাটার জেলে মাহিদুর রহমান ও জগলু মাঝি জানান, সরকার বা মালিক কারো পক্ষ থেকেই আমাদের জীবন রক্ষার সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয় না।
জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাঝি বলেন, ‘আমরা ট্রলার মালিকদের প্রেসার করতে পারি না। তারা ব্যবসায় লসে আছে। সরকার যদি প্রতিটা ট্রলারে বয়াসহ নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করত, তবে জেলেদের অন্তত মৃত্যুর মতো ঝুঁকি থাকত না।’
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘৩২ জন জেলেকে ফেরত দিয়েছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। এর বাইরেও আমাদের ১১৪ জন জেলে এখনো ভারতে আছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে আমি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও ভারতীয় কোস্ট গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
‘এর আগে দিক হারিয়ে ভারতে প্রবেশের দায়ে আটক ১২ জন জেলের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। আমাদের সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। যদি সরকার সহযোগিতা না করে তবে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়লে জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘসূত্রতা ও ঝামেলায় পড়তে হবে।’
কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, ‘ভারতে উদ্ধার হওয়া জেলেদের উদ্ধারের খবর শুনে আমরা ভারতের কোস্ট গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা এখন পর্যন্ত ৩২ জেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বাকি জেলেদের ফিরিয়ে আনতে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে ১৯ আগস্ট খুলনাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায় ওবায়দুল নামের একটি ট্রলার। সেই ট্রলারের ৯ জনকে ২৩ আগস্ট উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ রয়েছে ৪ জন। ২০ আগস্ট দুটি পৃথক অভিযানে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ভেসে যাওয়া ৬৫ জেলেকে উদ্ধার করেছে সুন্দরবনের বন বিভাগের সদস্যরা। উদ্ধারকৃত জেলেদের মধ্যে বরগুনার পাঘরঘাটার ৩৮ জন, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও ভাঙ্গামারি ১২ জন, ভোলার আইচা এলাকার ১৫ জন রয়েছেন।
১৯ আগস্ট সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ৫টি ট্রলারে প্রায় ৯০ জন জেলে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যায়। এ সময় তিনটি ট্রলারে থাকা ৬৫ জেলে কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়ে লোকালয়ে ওঠেন।
পরে বাকি দুটি ট্রলার সাগরের মধ্যে বড় বড় ঢেউ, প্রবল স্রোত ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে পড়ে ডুবে যায়। এ সময় দুটি ট্রলারে থাকা প্রায় ২৫ জন জেলে নিখোঁজ হয়।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ.কে.এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, ২০ আগস্ট সন্ধ্যায় বনবিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট পেট্রোল টিম-২ এর টিম লিডার স্বাদ আলী জামির নেতৃত্বে বনবিভাগের সদস্যরা মালঞ্চ নদী হয়ে মাহমুদা নদী যাওয়ার সময় তাদের দেখে দুটি ট্রলারে থাকা ৪১ জেলেকে পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে তাদের খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেন।
তিনি আরও জানান, বন বিভাগের হলদেবুনিয়া স্মার্ট প্যাট্রল টিমের সদস্যরা একই দিনে রায়মঙ্গল নদী থেকে ভাসমান দুটি ট্রলারে থাকা আরও ২৪ জেলেকে উদ্ধার করে তাদের কাছে নিয়ে যান। ২১ আগস্ট বিকেলে উদ্ধার করা জেলেদের তাদের স্বজনের হাতে তুলে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য