চা-শ্রমিকরা ১২০ টাকার বদলে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি সামনে আনার পর বাগান মালিকরা সব সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে মজুরি আসলে ৪০২ টাকা বলে যে দাবি করছেন, সেটি সঠিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যারা চা-শ্রমিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারা বলছেন, যেসব ভাতার কথা বলে বাগান মালিকরা বেশি মজুরির দেয়ার দাবি করছেন, আইনত সেগুলো মজুরির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
এটি সত্য, মজুরির বাইরেও চা-শ্রমিকরা আবাসন, রেশন, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা ভাতা পান। আছে বিনোদন ভাতা, উৎসব ভাতাও। আর এসব সুযোগ-সুবিধা মিলিয়েই প্রতিদিন প্রতি জনের পেছনে ন্যূনতম ৪০২ টাকা ব্যয় হয় বলে দাবি বাগান মালিকদের।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে সিলেট অঞ্চলের ১৬৬টি চা-বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক যখন আন্দোলনে, তখন বাগান মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রচার চালানো হচ্ছে।
বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মজুরি হিসেবে নগদ অর্থ ছাড়াও একজন শ্রমিককে দৈনিক ঘর ভাড়া বাবদ ৭৬.৯২ টাকা, চিকিৎসা বাবদ ৭.৫০ টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ ০.০২টাকা, বাসাবাড়িতে উৎপাদিত ফলমূল বাবদ ১৪ টাকা, অবসরভাতা ২ টাকা, গরু চরানো বাবদ ১ টাকা, চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা ব্যয় বাবদ ১.৫০ টাকা দেয়া হয়।
দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে শনিবার সকাল থেকে একযোগে সীমিত কর্মবিরতি পালনের পর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। ফাইল ছবি
তবে মালিকরা যে এসব সুযোগ-সুবিধাকে মজুরি দাবি করছেন, তা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২ ধারার ৪৫ উপধারা অনুযায়ী করা যায় না।
মজুরির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে: ‘মজুরি’ অর্থ টাকায় প্রকাশ করা হয় বা যায় এমন সব পারিশ্রমিক যা চাকরির শর্তাবলী, প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই থাকুক না কেন পালন করা হলে কোনো শ্রমিককে তার চাকরির জন্য বা কাজ করার জন্য দেয়া হয়। এবং এমন প্রকৃতির অন্য কোনো অতিরিক্ত প্রদেয় পারিশ্রমিকও এর অন্তর্ভুক্ত হবে, তবে নিম্নলিখিত অর্থ তার অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেমন:
(ক) বাসস্থান সংস্থান, আলো, পানি, চিকিৎসা সুবিধা বা অন্য কোনো সুবিধা প্রদানের মূল্য অথবা সরকার কর্তৃক সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা বাদ দেয়া হয়েছে এমন কোনো সেবার মূল্য
(খ) অবসর ভাতা তহবিল বা ভবিষ্যৎ তহবিলে মালিক কর্তৃক প্রদত্ত কোনো চাঁদা
(গ) কোনো ভ্রমণ ভাতা অথবা কোনো ভ্রমণ রেয়াতের মূল্য
(ঘ) কাজের প্রকৃতির কারণে কোনো বিশেষ খরচ বহন কবার জন্য কোনো শ্রমিককে প্রদত্ত অর্থ
আইনের এই ধারার কথা তুলে ধরে চা-বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘বাগান মালিকরা মিথ্যাচার করছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন। শ্রম আইন ও বাস্তবতার সঙ্গে তাদের প্রচারণার কোনো মিল নেই।’
মঙ্গলবার চা সংসদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- চা-শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের পরোক্ষ যেসব সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে তা বাংলাদেশের অন্যান্য শিল্পের তুলনায় নজিরবিহীন।
এই শিল্পে প্রতি শ্রমিককে ২ টাকা কেজি দরে মাসে প্রায় ৪২ কেজি চাল বা আটা রেশন হিসেবে দেয়া হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ৩১০ টাকা। তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে চা-শিল্পে প্রায় ৯৪ হাজার ২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বিনা মূল্যে চা-শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে।
তবে বাগান মালিকদের এমন প্রচারকেও মিথ্যাচার বলছেন সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগানের শ্রমিক রিতেশ মোদী।
সব সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে একজন চা-শ্রমিকের পেছনে দৈনিক ন্যূনতম ৪০২ টাকা ব্যয় হয় বলে দাবি বাগান মালিকদের। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষের দাবির তুলনায় রেশন অনেক কম এবং নিম্নমানের। একজন পুরুষ শ্রমিকের স্ত্রী ও সন্তান রেশন পেলেও নারীরা পোষ্যের জন্য রেশন পান না। এ ছাড়া কোনো কারণে কাজে অনুপস্থিত থাকলে রেশন কাটা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বাগান উদ্যোক্তাদের দাবি, চা উত্তোলনের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই, সে ক্ষেত্রে একজন শ্রমিক দৈনিক কর্মঘণ্টার মধ্যে অতিরিক্ত পাতা উত্তোলনের জন্য বোনাস পেয়ে থাকেন, যা বাগানভেদে গড়ে দৈনিক ৬৫ টাকা হয়।
রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে আরও অতিরিক্ত আয় করে থাকেন উল্লেখ করে দাবি করা হয়, এ ক্ষেত্রে একজন শ্রমিক দৈনিক গড়ে প্রায় ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা পর্যন্ত নগদ মজুরি পেয়ে থাকেন।
তা ছাড়া বার্ষিক ছুটি ভাতা, বেতনসহ ১৪ দিনের উৎসব ছুটি ভাতা, ২০ দিনের অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্থিতি ভাতাসহ আরও কিছু প্রত্যক্ষ সুবিধা মিলিয়ে একজন শ্রমিক দৈনিক গড়ে ২৪৬ টাকা নগদে পেয়ে থাকেন বলেও দাবি করেন তারা।
তবে ছুটির দিনে কাজ করালে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে সেটি শ্রম আইনের একটি সাধারণ বিষয়।
শ্রম আইনের ১০৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো দিন বা সপ্তাহে এই আইনের অধীন নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি সেই কাজের জন্য তার মূল মজুরি ও মহার্ঘ ভাতা এবং এডহক বা অন্তর্বর্তী মজুরি, যদি থাকে, এর সাধারণ হারের দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবেন।’
ফলে ছুটির দিনে কাজ করাকে মজুরি হিসেবে দেখানো যাবে না।
লাক্তাতুরা চা-বাগানের শ্রমিক মতিলাল হাজরা বলেন, অনেক শ্রমিক দিনে ১২০ টাকাও আয় করতে পারেন না। কারণ এই পরিমাণ টাকা আয়ের জন্য একজন শ্রমিককে ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়, যেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। নারী ও বয়স্ক শ্রমিকরা এই পাতাও অনেকদিন তুলতে পারেন না।
কিছু শ্রমিক ওভারটাইম করে বাড়তি আয় করেন। তবে বেশির ভাগের পক্ষেই তা সম্ভব হয় না বলেও ভাষ্য তার।
শ্রম আইনের সঙ্গে নিজেদের দাবির ফারাক সম্পর্কে চা-শিল্পের উদ্যোক্তা ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আফজাল রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে সেবাগুলো দিচ্ছি, তা মজুরি হিসেবে ধরা যাবে না। কিন্তু আমাদের তো এই টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ব্যবসা করেই আমাদের এই টাকা দিতে হয়। ব্যবসায় যদি লাভই না করতে পারি তবে এসব সেবা কোত্থেকে দেব?’
বাগান মালিকদের এমন দাবি প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘তাদের এইা দাবি সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক। বাগান ইজারা নেয়ার শর্তেই আছে, শ্রমিকদের বাসস্থান করে দিতে হবে। চা চাষের বাইরের জমি শ্রমিকদের চাষবাষের জন্য দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বাগান মালিকরা রাবার বাগান করে, মাচ চাষ করে সব জমি নিজেরাই দখল করে নেন। শ্রমিকদের চাষের জন্য কোনো জায়গা ফাঁকা থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য যে সেবা দেয়া হয় তা খুবই নাজুক। বেশির ভাগ বাগানেই স্কুল নেই। চিকিৎসক নেই, ওষুধ নেই। ফলে বাগান মালিকদের এসব প্রচারণার কোনো ভিত্তি নেই। নিজেদের শোষণ টিকিয়ে রাখকেই তারা এই অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম হলফনামায় পেশায় নিজেকে কণ্ঠশিল্পী ও ব্যবসায়ী উল্লেখ্য করেছেন। কিন্তু পেশা থেকে কোনো আয়ের কথা উল্লেখ করেননি তিনি। অথচ গত পাঁচ বছরে মমতাজ বেগমের আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে ভারতের আদালতে দুটি প্রতারণার মামলা হয়েছে এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
কণ্ঠশিল্পী এ সংসদ সদস্যের ২০১৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে মমতাজ বেগমের বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, বাসাভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত ও কৃষিসহ অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৮ টাকা। আর ২০১৮ সালে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ২৭৬ টাকা; তার মধ্যে গান গেয়ে আয় করেছিলেন ৭ লাখ টাকা। সেই হিসেবে গত পাঁচ বছরে মমতাজ বেগমের আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ লাখ টাকা।
তবে এই পাঁচ বছরে তার ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ কমেছে। বাড়েনি নগদ অর্থের পরিমাণও, তবে ঋণের পরিমাণ কমেছে।
অপরদিকে ২০১৪ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগম ব্যবসা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, কৃষি ও পেশাসহ অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭৯ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪ টাকা। তবে ওই হলফনামায় বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকানসহ এইসব খাত থেকে কোনো আয় ছিল না তার।
এ ছাড়া সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা ও আনুসঙ্গিক পারিতোষিক বাবদ বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে মমতাজ বেগমের হাতে নগদ ৫ লাখ এবং স্বামীর কাছেও নগদ ৫ লাখ টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, নিজ নামে ২৮ লাখ টাকা, ৪৬ লাখ ২০ হাজার এবং ১ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের তিনটি দামি গাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি নির্ভরশীল ব্যক্তি অর্থাৎ তিন সন্তানের নামে মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজে ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে।
২০১৮ সালের হলফনামায় তার কাছে নগদার্থের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ এবং স্বামীর কাছে ছিল ২ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নগদার্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে স্বামীর নামে কোনো টাকা ছিল না।
২০২৩ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ২১৮ টাকা এবং স্বামীর নামে জমা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৮ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে ছিল ৮৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৭ টাকা এবং ২০১৪ সালের হলফনামায় ছিল ৩০ লাখ টাকা।
২০২৩ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৯০০ শতাংশ। যার অর্জনকালীন মূল্য ছিল ৪৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৪ টাকা এবং অকৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৫০০ শতাংশ যার অর্জনকালীন মূল্য ছিল ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৭০ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকার মাহাখালীতে ৫ তলা একটি বাড়ি আছে যার মূল্য ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিংগাইরের জয়মন্টপ এলাকায় ২ তলা একটি বাড়ি আছে যার মূল্য ৫৭ লাখ ৫ হাজার ৪৪০ টাকা। তবে ২০১৪ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে কোনো বাড়ি ছিল না। কিন্তু মমতাজ বেগমের নামে একটি কোল্ড স্টোরেজ ছিল যার মূল্য ছিল ৯০ লাখ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রমমতাজ বেগম তিনবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একবার সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হন তিনি। এবার দিয়ে টানা তিনবার তিনি নৌকার টিকিট পেলেন।
আরও পড়ুন:মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি মকবুল, তবে সেবার তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মকবুল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হন বিজয়ী।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মকবুল, তবে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে তার ডাকে সাড়া না দেয়ায় এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়েও পেয়েছেন মনোনয়নপত্রের বৈধতা।
আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, এ প্রার্থীর আয়ের কোনো উৎস নেই। তার মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, গাড়ি, এমনকি কৃষিজমিও নেই। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আছে নামমাত্র।
নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্যই মিলেছে।
হলফনামা অনুযায়ী, যৌথ মালিকানার তিন কাঠা জমি ছাড়া মকবুল হোসেনের আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেয়া হলফনামায় মকবুল এবং তার স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে শূন্যের কোঠায়।
হলফনামা অনুযায়ী, বর্তমানে মকবুল হোসেনের বার্ষিক কোনো আয় নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার ও তার স্ত্রীর জমাকৃত কোনো টাকা কিংবা বন্ড ও সঞ্চয়পত্র নেই।
বতর্মানে মকবুল ও স্ত্রীর নগদ টাকা রয়েছে যথাক্রমে তিন লাখ ও ৫০ হাজার। তার গৃহস্থালি সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
মকবুলের স্বর্ণ রয়েছে ৪০ ভরি। তার স্ত্রীর স্বর্ণ রয়েছে ১০ ভরি।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে মকবুলের বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। আয়ের খাত ছিল ব্যবসা। নগদ ছিল ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সে সময় তার ৪০ ভরি স্বর্ণ ছিল এবং গৃহস্থালি সামগ্রী ছিল ৫০ হাজার টাকার।
ওই বছর তার স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ছিল না কোনো স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, মকবুল হোসেনের বর্তমান স্থাবর সম্পদ বলতে যৌথ মালিকানার তিন কাঠা জমি এবং যৌথ মালিকানার পাকা দোতলা বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। অবশ্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
দুইবারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের এমন হলফনামা দেয়ার কথা শুনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী সালাউদ্দিন বলেন, ‘এখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে হলফনামা সমন্ধে জানতে পারছি। আগে এগুলো নিয়ে কারোর মাথাব্যথা ছিল না। এখন বুঝতে পারছি সংসদ সদস্য নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে নেতারা যত মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন।
‘এটা আসলে ঠিক না। যারা তথ্য চুরি করে হলফনামা দিতে পারে, তারা জনগণকে আর কীইবা দিতে পারে?’
আওয়ামী লীগের কর্মী বিপুল হোসেন বলেন, ‘সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের আয়ের উৎস নেই, এটা কেমন কথা! তাহলে উনি চলেন কীভাবে?
‘আর তার কোনো ব্যাংকে টাকা নেই, এটা ঠিক। টাকা যদি ছেলেদের অ্যাকাউন্টে থাকে, তাহলে তার অ্যাকাউন্টে থাকবে কীভাবে?’
আরও পড়ুন:ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় বাংলাদেশে পণ্যটির বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে শনিবার সকালে ঘুরে দেখা যায়, দুই দিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আজ সে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে।
বেনাপোল বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজ যেভাবে কিনে থাকি, সেভাবেই বিক্রি করে থাকি। গত সপ্তাহেও পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে ছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় সে পেঁয়াজ আজ বিক্রি করছি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে।’
দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ থাকলেও কিছু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে রেখেছে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল কাস্টমস জানায়, গত সপ্তাহে প্রতি টন পেঁয়াজের এলসি মূল্য ছিল ৮০০ ডলার। সর্বশেষ ৫৯ টনসহ গত মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার ভারত সরকার সে দেশে সংকট দেখিয়ে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়, যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:শব্দদূষণের মাত্রা নওগাঁয় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শব্দদূষণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত শব্দদূষণ শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত শব্দে মস্তিষ্কে বিরক্তির কারণ ঘটে। ফলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।
এ ছাড়া ব্যক্তির বিশ্লেষণ ক্ষমতা কমে যায়, মানুষ যখন ধীরে ধীরে বার্ধক্যে পোঁছে যায় তখন পরিলক্ষিত হয় শব্দদূষণের প্রভাব।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিন শহরবাসীর যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইকের উচ্চ শব্দে এমন কিছু ঘোষণা, যেমন ‘সুখবর সুখবর উন্নত জাতের একটি মহিষ জবাই করা হইবে, মহিষটির দাম … টাকা। প্রতি কেজি মাংস ... টাকা’, ‘সম্মানিত রোগী ভাইদের জন্য সুখবর, এখন থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঢাকা থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নিয়মিত রোগী দেখিবেন’, ‘ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের জন্য সুখবর। অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা কোচিং দেয়া হইতেছে।’
এর সঙ্গে আছে বিভিন্ন জনসভার মাইক। নওগাঁ শহরবাসীরা জানান, বিষয়টি তাদের জন্য অসহনীয় পর্যায় পৌঁছে গেছে। এর পর আসে ইট ও পাথর ভাঙা মেশিন ও কাঠের আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্র ও টাইলস কাটার মেশিনের বিকট কান ফাটানো শব্দ।
হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। এ সব স্থানে মাইকিং বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউ।
স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ শহরের মধ্যে ভারী যানবাহন না চললেও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ইলেক্ট্রনিক হর্ন আর উচ্চ শব্দের সাইলেন্সর লাগানো বাইকের শব্দের কারণে অতিষ্ঠ নওগাঁবাসী।
সাধারণের প্রশ্ন, এ সব নিয়ন্ত্রণের কি কেউ নেই? এর উত্তর আছে। গেজেট বলছে কঠোর আইন আছে।
নওগাঁ কেন্দ্রীয় মুসলিম গোরস্তান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী জিয়াউর রহমান বাবলু বলেন, ‘প্রতিদিন মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। এরা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি অফিস আদালত কিছুই মানে না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যে কে পালন করবে তাও বুঝি না। বিষয়টি দিন দিন অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে কথা হয় নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁ জিলা স্কুল ও নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিভাবকদের সঙ্গে।
তারা জানান, অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করেন। স্কুলের সামনে দিয়ে একটির পর একটি মাইক উচ্চ শব্দে প্রচার করতে করতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান এর কি কোনো প্রতিকার নাই?
নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কায়েশ উদ্দীন বলেন, ‘মাইকের উচ্চ শব্দসহ যত্রতত্র পাথর ভাঙা ও ইট ভাঙা চলছেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
বিধিমালায় যা বলা আছে
নীরব এলাকায় দিনে ৫০ রাতে ৪০, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ রাতে ৬০, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবল মানমাত্রার সাউন্ডে মাইকে প্রচার করা যাবে।
তবে এই বিধি রাষ্ট্রীয় কোনো দিবসের (স্বাধীনতা, ২১ ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, জাতীয় দিবস) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া মৃত্যু সংবাদ, কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ থাকলে, গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হারিয়ে গেলে, সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারকালে এ বিধি প্রযোজ্য হবে না।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীরব এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকায় ব্যবহারের জন্য পূর্বেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা হতে ৫০০ মিটারের মধ্যে ইট বা পাথর ভাঙা মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অন্য যন্ত্রপাতি চালানো যাবে না।
নির্দিষ্ট মানমাত্রার অতিরিক্ত শব্দদূষণের সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অভিযোগ জানানো যাবে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে ব্যক্তিকে কারাদণ্ডসহ জরিমানা করা হবে।
উপজেলায় এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা তৎকর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, ‘শব্দদূষণ অবশ্যই একটি বড় ধরনের সমস্যা। অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কন্সালটেন্ট (ইএনটি) তারেক হোসেন বলেন, ‘শব্দদূষণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আগে সাধারণত ৫০ বছর বয়সের ব্যক্তির মধ্যে যে সমস্যাগুলো দেখা দিত তা এখন ৪০ বছর বয়সেই দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে পথচারী, ট্র্যাফিক পুলিশ, টাইলস শ্রমিকসহ উচ্চ শব্দযুক্ত মেশিন ও মাইকের শব্দে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।’
নওগাঁ সদর ট্র্যাফিক পুলিশের ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘নওগাঁ শহরের কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয় না। এর কারণে এখন পর্যন্ত শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে কোনো মামলা হয়নি। তবে মাইকসহ অন্য শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা ট্র্যাফিক পুলিশের এখতিয়ারের বাইরে।’
আরও পড়ুন:ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিনা বিচারে প্রায় ১৫ মাস কারাগারে আটক থাকার পর চলতি বছরের ২০ নভেম্বর মুক্তি পান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা।
কারামুক্ত হলেও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা কষ্টেই দিন পার করছেন তিনি। এখনও ঠিক হয়নি মানসিক অবস্থাও, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে শিক্ষকরাও দিয়েছেন পাশে থাকার আশ্বাস।
খাদিজার পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন কারাভোগের ফলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন খাদিজা। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই কিডনিতে পাথরসহ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। কারামুক্তির পর দফায় দফায় ডাক্তার দেখানোর পর চিকিৎসা চললেও এখনও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তবে খাদিজাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে উন্নত চিকিৎসাসহ মানসিকভাবে শক্ত করে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘খাদিজার কিডনিতে পাথর হয়েছে। সে শারীরিকভাবে এখনও অনেক অসুস্থ। আমরা ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা চালাচ্ছি। মানসিকভাবেও সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি।’
খাদিজার সহপাঠী ও বন্ধুরা জানান, কারামুক্তির দিনই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় বসেছিলেন খাদিজা। এর পর দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের সব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার তার তাত্ত্বিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পড়াশোনাসহ সব বিষয়েই খাদিজাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।
স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলে খাদিজাকে মানসিকভাবে শক্ত করে তুলতেও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
খাদিজার বান্ধবি নাসরিন নাইমা বলেন, ‘খাদিজা এখন দ্বিতীয় বর্ষের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে আর আমরা তৃতীয় বর্ষে আছি। আমাদের সব বন্ধুরাই তাকে সহযোগিতা করছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বই, শিটগুলো সংগ্রহ করে দিচ্ছি। আমরা তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়ারও চেষ্টা করছি।’
এদিকে বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও খাদিজাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন সমস্যাসহ যেকোনো প্রয়োজনে খাদিজার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। খাদিজার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বিভাগের পক্ষ থেকে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানান শিক্ষকরা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, ‘খাদিজা সবগুলো পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার বাকি থাকা মিডটার্ম পরীক্ষাগুলো নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাকে শিক্ষকরা যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করছেন।’
অনলাইনে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচার ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় আলাদা দুটি মামলা করে পুলিশ।
২০২২ সালের মে মাসে পুলিশ দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এর পর থেকে কারাগারে ছিলেন খাদিজা।
দীর্ঘ ১৫ মাস কারাভোগের পর ২০ নভেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান খাদিজা।
আরও পড়ুন:খেতের পাকা আমন ধান অনেকেই এখনও কেটে ঘরে তুলতে পারেননি; অনেকে আবার কাটেননিও। কিন্তু তার আগেই ভিজে এসব ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধাকৃষ্ণপুরের ধানচাষিদের কপালে তাই এখন দুশ্চিন্তার ছাপ।
জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ওই অঞ্চলের পাকা আমন ক্ষেত। একদিকে পানিতে পড়েছে ধান, অপরদিকে শ্রমিক সংকট এবং বাড়তি মজুরির চাহিদায় দিশেহারা এ এলাকার কৃষক। হাড়ভাঙা খাটুনি আর ধার-দেনা করে উৎপাদিত ফসল থেকে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা, পুঁজি উঠবে কি না- তা নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
আগে থেকে থাকা নালাটি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই প্রতি বছর এমন ভোগান্তি পোহাতে হয় কৃষকদের। বোরো মৌসুমে তো পানি থাকেই, শুকনো আমন মৌসুমেও ধানখেতে থাকে হাঁটুপানি। আবার বৃষ্টির সময় তলিয়ে যায় বীজতলা। সব মিলিয়ে একটি নালা খনন এখন ওই অঞ্চলের কৃষকদের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের কোনো নালা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার কারণেই পাকা আমন ধান পানিতে পড়েছে।’
কৃষকরা জানান, হাল, সার, বীজ, কীটনাশক থেকে শুরু করে সেচ, নিড়ানি ও ধান কাটা পর্যন্ত যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, ধান ঘরে তুলতে না পারলে সেই খরচ কীভাবে উঠবে তাদের। এদিকে এ বছরের আমন মৌসুমে অনাবৃষ্টি বা অতি খরার কারণে চাষাবাদের প্রথম পর্যায়ে দফায় দফায় সেচ দিতে গিয়ে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা; কীটনাশকেও খরচ হয়েছ দ্বিগুণ।
তাদের দাবি, শুধু এই আমন মৌসুমেই নয়, আমন-ইরির দুই মৌসুমেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তাদের। জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয় বীজতলাও। এ ছাড়া এ কারণে একদিকে যেমন সঠিক সময়ে ব্যাহত হয় চারা রোপন, অন্যদিকে কোনো কোনো মৌসুমে অপরিপক্ক কাঁচা ধানই কাটতে হয় চাষিদের। এসব ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে জরুরি ভিত্তিতে ওই এলাকায় নালা খননের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর (ভেলাকোপা) গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকরিছিড়া নামক সেতুর উত্তরের পাথারের ফসলের মাঠে পানির মধ্যে ধান কাটছেন চাষি-শ্রমিকরা। ওই এলাকার আমন ধানের জমিগুলোতে এখনও প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি। কোনো কোনো জমিতে পানির পরিমাণ হাঁটুর বেশ নিচে হলেও কাদাপানিতে মিশে গেছে ধানগাছ। যেসব জমির ধানগাছ বেশিদিন ধরে পানিতে পড়ে আছে, সেগুলো প্রায় পঁচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃষকরা অনেকটা বিরক্ত পরিবেশেই জমির ধান কাটছেন। এ ছাড়া এ ব্রিজের পশ্চিম-উত্তরে এসকেএসইন সংলগ্ন এলাকায় ও ভেলাকোপা ব্রিজের পূর্ব-পশ্চিম পাশের কিছু জমিতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। আটকে থাকা পানি আসলে গেল বর্ষা মৌসুমের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানি নিষ্কাশনের জন্য সাদুল্লাপুর থেকে আসা নালাটি তুলসিঘাট হয়ে পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বোয়ালী ইউনিয়নের আলাই নদীতে গিয়ে সংযুক্ত হয়। প্রায় ত্রিশ বছর পূর্বে প্রতিবছরই বড় বন্যা হওয়ার কারণে নালার প্রয়োজন নেই মনে করে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কাদের মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে পূর্ব রাধাকৃষ্ণপুর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার নালা (৮ নম্বর বোয়ালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই অংশ) জমির মালিকরাই ভরাট করে ফেলেন। কিন্তু বর্তমানে বন্যার পানি আর অতিবৃষ্টিতে কয়েকটি ইউনিয়নের পানি সাদুল্লাপুর থেকে আসা নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই এলাকায় এসে পড়ে। আর এই এলাকায় অর্থাৎ ৮ নম্বর বোয়ালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড অংশে পানি নিষ্কাশনের কোনো নালা না থাকা আর জমিগুলো তুলনামূলক নিচু হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে দেড় শতাধিক ধানচাষিকে।
তবে, ওই এলাকার কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মৃত কাদের মিয়ার বাড়ির সামনের নালা হতে বোয়ালী ইউনিয়নের পূর্ব রাধাকৃষ্ণপুর নালা পর্যন্ত মাত্র ২ থেকে আড়াই কি.মি. নতুন নালা খনন করে উভয় পাশের পুরাতন নালায় সংযোগ স্থাপন করা হলে এই জলাবদ্ধতা থাকবেনা বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। ওই অংশে নালা খনন করা হলে দ্রুক পানি নেমে গিয়ে একদিকে যেমন নিরসন হবে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে তিন ফসলি চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে কৃষক লাভবান হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
ওই গ্রামের গৃহস্থ কৃষক জফের উদ্দিন দুদু বলেন, ‘দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার কোনো নালা না থাকায় প্রতি বছরই বিশেষ করে আমন মৌসুমে প্রায় তিন শ’ বিঘা জমির ফসল বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়। এ সময় পানিতে ধান কাটতে কামলা (শ্রমিক) পাওয়া যায় না। গেলেও দ্বিগুণ মজুরি গুনতে হয়। আর এতে করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
বর্গাচাষি মধু মিয়া বলেন, ‘ধার-দেনা করে এক বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। সেই ধান পানিতে পড়েছে। এতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তা-ই উঠবেনা। দুই পাশেই নালা আছে, এখানেও নালা খনন খুবই দরকার।’
একই গ্রামের গৃহস্থ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু আমন মৌসুমেই নয়, বোরো মৌসুমেও পানির মধ্যে ধান কাটতে হয়। জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয় বীজতলাও। আবার অনেক সময় চারা রোপনের কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে চারা তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।’
জলাবদ্ধতা নিরসনসহ কৃষকদের তিন ফসলের চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করতে ওই অংশে নালা খননের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ঠদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাস সাবু বলেন, ‘কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে নালা খননে পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ওই এলাকায় নালা খনন অপরিহার্য। তাতে কৃষকেরা ক্ষতি থেকে বাঁচবে এবং তিনটি ফসল চাষাবাদ করে তারা লাভবানও হবে।’
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদ আল হাসান মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামনে আমরা আলাই নদী নিয়ে একটা প্রজেক্ট (প্রকল্প) হাতে নিচ্ছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই এলাকায় নালা খননে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেন। পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনের উপার্জনে চলত পরিবারের খরচ আর তিন ভাই-বোনের লেখাপড়া।
শত কষ্টের মধ্যেও জীবনযুদ্ধে হার না মানা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ। সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪১তম বিসিএসে। কিন্তু রুবেলে এত সংগ্রাম আর জীবনযুদ্ধের পথ শেষ হয়ে গেছে নিমিষেই।
বাসের চাকা পিষ্ট করেছে রুবেলের দেহ। ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ নিয়ে রুবেল প্রাণ হারিয়েছেন সড়কে।
দেড় বছরের শিশু রাইসা হারাল তার বাবাকে। স্ত্রী, মা আর ভাই-বোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন শুধুই চোখের পানি ফেলছেন।
এদিকে সেলফি পরিবহনের চাপায় রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় শোক নেমে এসেছে তার সহপাঠী ও প্রিয়জনদের মাঝে। কেউই মেনে নিতে পারছেন না তার এই মৃত্যু। বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে তারা বয়কটের দাবি তুলেছেন রুবেলকে পিষ্ট করে হত্যায় অভিযুক্ত সেলফি পরিবহনকে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকার ধামরাইয়ের থানারোড এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সেলফি পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারান জাবি শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ।
একই দুর্ঘটনায় আব্দুল মান্নান নামে আরেক যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর আহত আরেকজন ভর্তি আছেন হাসপাতালে।
৩২ বছর বয়সী রুবেল পারভেজ ধামরাই পৌরসভার পাঠানতোলা এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মানিকগঞ্জে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মোকছেদ আলীর ছেলে রুবেল সম্প্রতি ৪১তম বিসিএস এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
রুবেলের বন্ধু ননী গোপাল বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর থেকেই রুবেল ওর পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে। টিউশনি করে খরচ চালিয়েছে, নিজে পড়াশুনা করেছে। সবশেষ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ধামরাইয়ে ২০০৭ সাল থেকেই ভাড়া বাসায় বসবাস করত রুবেল। আমরা একসঙ্গে কলেজে পড়েছি। ওর দেড় বছরের রাইসা নামে একটা মেয়ে আছে। ওর স্ত্রী ফারজানা অনার্সে অধ্যয়নরত। কোনোভাবেই ওর মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।’
রুবেলের ছোট ভাই সোহেল পারভেজ বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের বাবা মারা যান। তখন থেকেই ভাইয়া সংগ্রাম করে লেখাপড়া করছে। আমাদের তিন ভাই ও এক বোনের পড়া এবং সংসারের খরচ টিউশনি করে ভাই চালাত।
‘এত কষ্টের মধ্যেও ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছে। দুই বছর হলো বিয়ে করছে ভাইয়া। ১৮ মাসের একটা মেয়েও আছে তার।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে সড়কে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা হতে পারে না। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
এদিকে রুবেল পারভেজের মৃত্যুর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শোক নেমে এসেছে তার সহপাঠী, বন্ধু ও প্রিয়জনদের মাঝে। রুবেলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সেলফি পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলসহ বয়কটের ডাক দিয়েছেন তারা।
জাব্বার হোসেন নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রুবেল ভাইয়া আপনার এমন মৃত্যু মানতে পারছি না। মাথায় আকাশ ভেঙে পরার মতো অবস্থা। ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত ভাইয়ার কাছ থেকে গনিত শিখে এসেছি।’
রুবেল ব্যক্তিগত জীবনে লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে জানান তার পরিবার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য