সাধারণ মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (ডিসি অফিস) দরজা-জানালা খোলা রাখতে বলেছে হাইকোর্ট। এ সময় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলামকে সতর্ক করে তার কার্যালয়ের দরজা-জানালার পর্দা সরিয়ে ফেলতে বলেছেন বিচারক।
আদালত অবমাননা-সংক্রান্ত এক মামলায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক হাজির হলে সোমবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
এ সময় আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আর আদালত অবমাননায় জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেয় আদালত।
এ সময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীও উপস্থিত ছিলেন।
আদেশ শেষে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে আদালত ডায়াসের কাছে ডেকে নেন। এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘আপনাকে আদালতে আসতে হবে না। তবে আপনাকে সতর্ক করছি। সাধারণ জনগণের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখবেন। দরজা-জানালায় কোনো পর্দা থাকবে না।
‘মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে, আপনি কী করছেন। আপনি বসে আছেন, এটা যেন সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। সাধারণ মানুষ যেন সহজেই আপনার কাছে যেতে পারে।’
বিচারক আরও বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। দরজা-জানালায় ভারী পর্দা দেয়া থাকে। যেকোনো মানুষ যাতে আপনার কাছে যেতে পারে সে জন্য কোনো পর্দা থাকবে না।’
এ সময় ডিসিকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনারা লাক্সারিয়াজ জীবন-যাপন করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের তেমন যোগাযোগ থাকে না।
বিচারক বলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষ যাতে আপনাকে দেখতে পারে আপনি বসে কাজ করছেন। লুঙ্গি পরেও যেন একজন মানুষ আপনার কাছে যেতে পারে।’
‘ভালো কাজ করুন। চুরি-ডাকাতি-গুণ্ডামি, দখলবাজি যদি চলে আর এটা যদি আপনার নজরে আসে সঙ্গে সঙ্গে আপনি দেখবেন।
আদালত বলে, ‘অভিযোগ শুনেই আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। একজন জেলা প্রশাসক সরকারের হার্ট। আপনাদের দায়িত্ব অনেক। আপনাদের কাজের ওপর সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে।
‘সরকারের সব কাজ আপনাদের দিয়েই বাস্তবায়ন হয়। জানি আপনারা অনেক কাজ করেন, কিন্তু তার পরও সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখুন।’
এ সময় বিচারক বলেন, সেই দিন এ মামলায় অভিযোগকারী আপনার কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার কাছ পর্যন্ত যেতে পারেননি। আপনার অফিসের লোকজন অভিযোগ গ্রহণ করেননি। সেদিন যদি আপনি অভিযোগটি শুনতে পেতেন তাহলে হয়তো এত দূর আসত না।
এ জন্য আপনাদের দরজা-জানালায় কোনো পর্দা থাকবে না। আমরা এটা দেখব।’
আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্টের আদেশে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি গতকাল রোববার আদালতে হাজির হন। শুনানি শেষে সোমবার আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে ডিসি ও এসপির পক্ষে মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান এবং এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে ছিলেন রাগীব রউফ চৌধুরী।
আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি সম্পদের নিলামের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে আমরা হাইকোর্টে রিট করি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করে। হাইকোর্টের এ আদেশের পরও নিলামক্রেতা লোকজন নিয়ে গিয়ে নিলামকৃত সম্পত্তি দখল করেন। আদালতের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনি। তখন আদালত ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে হাজির হতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আদালতে হাজির হন। এ মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছে। ডিসি ছাড়া বাবি সবাইকে ওইদিন হাজির থাকতে বলেছে আদালত।
মামলা থেকে জানা যায়, ‘ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল, ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলসহ বসতভিটা আট একর জমির ওপর অবস্থিত। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরে ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার সম্পত্তির ওপর নিলাম ডাকা হয়। শফিকুলের সম্পত্তির মোট মূল্য ১৩৩ কোটি টাকা, যা নিলামে ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। নিলামের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্টের মধ্যে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। পরে ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ২ আগস্ট হাইকোর্ট নিলাম-পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত করে।
সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিন বছর পার না হলে কেউ সংসদ সংদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) এমন বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলটি খারিজ করে সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর মামলাটির শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর, প্রবীর নিয়োগী ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. শামীম কামাল, মো. আব্দুল মান্নান, আতাউর রহমান প্রধান ও রতন চন্দ্র পন্ডিত নামের চার ব্যক্তি চলতি বছর পৃথক রিট করেন। ওই রিটে জারি করা চারটি রুলের শুনানি গত ৭ নভেম্বর একই সঙ্গে শুরু হয়।
রিটে আইন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
নির্বাচনে সরকারি চাকরিজীবীদের অযোগ্যতার বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ এর ১২ (১) (চ) ধারায় বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসরে গেছেন এবং এ পদত্যাগ বা অবসর যাওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।
তিন বছরের এমন বিধান বাতিল চান রিটকারীরা। এই রিটের শুনানি নিয়ে রুলটি খারিজ করে দেয় আদালত।
উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করায় আপিল বিভাগে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।
সোমবার সকালে আপিল বিভাগে হাজির হয়ে তারা এ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ পূর্ণাঙ্গ রায় বাস্তবায়নে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়।
আদালতে কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন মোহাম্মাদ ইব্রাহিম খলীল। আদেশ বাস্তবায়ন না করায় তার ব্যাখ্যা দিতে সকালে আপিল বিভাগে হাজির হন আইজি প্রিজনস ও সুরক্ষা সচিব।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী ব্যারিস্টার ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘গত ২০ নভেম্বর এ দুই কর্মকর্তাকে তলব করে আপিল বিভাগ। আজকে তারা সে রায়ের আংশিক কার্যকর করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শুনানিতে রায় আংশিক কার্যকর করা হয়েছে; আদালতকে জানালে আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আবার মামলাটির তারিখ ধার্য করে দিয়েছে। এই কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।’
ঘটনার বিবরণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনের রায়ে ছয়জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতি দেয়ার নির্দেশ দেয়। এ ছয়জন হলেন মো. গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, ইকবাল কবির চৌধুরী, মো. আনোয়ারুজ্জামান, মনির আহমেদ, মো. বজলুর রশিদ আকন্দ ও মো. নুরুননবী ভূঁইয়া।
‘দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়ন না করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।’
আইনজীবী ব্যারিস্টার ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৬ নভেম্বর পদোন্নতির রায় বাস্তবায়নের জন্য বিবাদীদের দুই সপ্তাহ সময় দেয় আপিল বিভাগ।
‘এরপর দুই সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ায় সে রায় বাস্তবায়ন না করায় আদালত তাদের তলব করে।’
আরও পড়ুন:বিএনপি ও সমমনা বিরোধীদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিনে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি চলন্ত বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় বোরবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসীর বরাতে পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে ইউসুফ পরিবহনের একটি বাস টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে রাত ৮টার দিকে চন্দ্রা এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় এক নারীসহ ১০ থেকে ১২ জন অল্প বয়সের যাত্রী ওই বাসে ওঠেন। পরে যাত্রী নিয়ে গাড়িটি যাত্রা শুরু করার একটু পরেই চন্দ্রা ফ্লাইওভার এলাকা পার হওয়ার আগে বাসে থাকা নারী আগুন আগুন বলে চিৎকার করেন। আগুন দেখে তাৎক্ষণিকভাবে সব যাত্রী ও চালক বাস থেকে নেমে যান। পরে বাসে ওঠা যাত্রীরাই এ আগুন দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান জানান, খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে সম্পূর্ন বাসটি পুড়ে যায়। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান বলেন, ‘আগুনে বাসটি পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকায় রডবোঝাই চলন্ত একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় চালক ও তার হেলতার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তারা দুজনই আগুনে দ্বগ্ধ হন।
আরও পড়ুন:নাটোরে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শহরের বড়হরিশপুর এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্থানীয় ভিআইপি হোটেলের পাশে রাখা সামি-জনি এবং রাজকীয় পরিবহনের বাস দুটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাস দুটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগেই বাস দুটি পুড়ে যায়।
ওসি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নাশকতার উদ্দেশে সড়কের পাশে থেমে থাকা বাস দুটিতে আগুন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের পৃথক স্থানে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে এক বাসের চালক দগ্ধ হয়েছেন।
রোববার রাতে নগরীর আকবরশাহ ও দামপাড়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
রাত পৌনে দশটার দিকে নগরীর দামপাড়া এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিল্যাক্স পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির চালক তার আসনে ছিলেন৷ তার পাশে থাকা ছোট্ট জানালাটিও খোলা ছিল। রাত পৌনে দশটার দিকে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল থেকে ওই জানালা দিয়ে আগুনযুক্ত কিছু একটা ছুড়ে মারে। এতে চালক কিছুটা দগ্ধ হলেও বাসের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। আগুন ছড়াতে পারেনি।’
অন্যদিকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এই বিষয়ে সিএমপির পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি-পশ্চিম) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন, ‘বাসটির ভেতরে কেউ আগুন দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এতে কেউ দগ্ধ না হলেও বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ এনেছে।’
দুটি ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান বাহিনীটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে বিদেশি পর্যটককে ছিনতাইকালে ছুরিকাঘাতের ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ঘটনায় জড়িত বাবু গ্রুপ নামে সক্রিয় ছিনতাইকারী গ্রুপের হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ওই গ্রুপের বাকি সদস্যদেরও শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার বিকেল চারটার দিকে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কক্সবাজার শহরের পশ্চিম নতুন বাহারছড়া এলাকার আবুল ফয়েজের ছেলে ১৬ বছর বয়সী মেহেদী হাসান বাবু, একই এলাকার মোহাম্মদ ইউসূফের ছেলে ২৩ বছর বয়সী আবির হোসেন সান, মনির হোসেনের ছেলে ১৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবির ও ঝাউতলা গাড়ীর মাঠ এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে ১৮ বছর বয়সী মোসাইদুল ইসলাম সামাদ।
অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে কলাতলীর হোটেল ওশান প্যারাডাইসের সামনে থেকে আল হুদায়বি খালিদ মোহাম্মদ নামে এক সৌদি নাগরিকের হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বাবু গ্রুপের বাবুসহ ৬ জন। ব্যাগ নিতে না পেরে তারা ওই পর্যটককে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে। পরবর্তীতে থানায় অভিযোগ দেয়া হলে মাঠে নামে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্পেশাল অপারেশনাল টিম। তাদের অভিযানে গ্রুপ প্রধান বাবুসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশের ওই টিম।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদের বরাতে আপেল মাহমুদ জানান, অভিযুক্ত বাবু গ্রুপের বাবুসহ চারজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের তথ্যানুযায়ী বাকি দুইজনও শনাক্ত হয়েছে। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বাবু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘ছিনতাই বন্ধে ট্যুরিস্ট পুলিশ ১০ সদস্য বিশিষ্ট স্পেশাল টিম গঠন করেছে যারা ২৪ ঘণ্টা মাঠে রয়েছে। এ টিমের সফলতার অংশ হিসেবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাবু গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে করা রিট শুনানির জন্য আইনজীবীকে আরও প্রস্তুতি নিয়ে যেতে বলেছে হাইকোর্ট।
এ রিটের বিষয়ে রোববার প্রাথমিক শুনানি হয়েছে। পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ শুনানি করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
শুনানি শুরু হলে আদালত রিটকারী আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দকে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করে। সেসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব না পাওয়ায় সোমবার তাকে আরও প্রস্তুতি নিয়ে যেতে বলেছে আদালত।
বর্তমানে সংসদ বহাল অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয় রিট আবেদনে। এর আগে গত মঙ্গলবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন এ আইনজীবী।
নোটিশে বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট চলছে উল্লেখ করে বলা হয়, দেশে হরতাল-অবরোধ চলছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর ট্যাক্স রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ ট্যাক্স রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। আবার নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর।
এমন বাস্তবতায় ট্যাক্স রিটার্নের নথি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা কীভাবে সম্ভব হবে, সে প্রশ্ন করা হয় নোটিশে।
এতে উল্লেখ করা হয়, হরতাল-অবরোধের ফলে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত নন।
নোটিশে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ফের তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য