জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে অনুপাতিক হারে তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় ১২ ঘণ্টার প্রতীকী ধর্মঘট চলছে।
সোমবার সকাল থেকে কোনো ট্যাংক লরি উত্তরাঞ্চলের বাঘাবাড়ী ডিপোর উদ্দেশে বগুড়া ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির ডাকে এ ধর্মঘট চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম, ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী-রংপুর বিভাগের সভাপতি মিজানুর রহমান রতন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দাবিগুলো হচ্ছে- জ্বালানি বিক্রিতে প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ করা, ব্যবসায়ীদের কমিশন এজেন্ট গেজেট আকারে প্রকাশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রল পাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল এবং পেট্রল পাম্পের ওপর ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য সংস্থার লাইসেন্স প্রথা বাতিল করতে হবে।
সোমবার সকালে ডিপো থেকে তেল আনা বন্ধ থাকলেও ভোক্তারা পাম্পগুলো থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারছেন।
সকালে শহরের বগুড়া ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার মানিক মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চারটি ট্যাংক লরি। রাত থেকেই সেগুলো স্টেশনে আছে। কারণ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিপো থেকে তেল আনা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান মালিক পরবর্তীতে যে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’
সংগঠন সূত্র জানায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে প্রায় সাড়ে ৪০০টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় রয়েছে অন্তত ৮০টি।
সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান রতন বলেন, ‘একটি পাম্প করতে ট্রেড, বিস্ফোরক, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশসহ অন্তত সাত ধরনের লাইসেন্স লাগে। এর মধ্যে কলকারখানার লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠান কোনো দিক থেকেই কারখানার মধ্যে পড়ে না। এসব লাইসেন্স রিনিউ করতে সরকারি ফির চেয়ে ঘুষ দিতেই হয় কয়েক গুণ। অথচ আমাদের আয়-লাভের কোনো পরিমাণ বাড়েনি।
‘এ জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি, শুধু ট্রেড ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া বাকিগুলো বাতিল করতে হবে।’
ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে এখনও ডিপো থেকে তেল সরবরাহ করা হয়। আর আমাদের দেশে এই খরচ নিজেদের পকেট থেকে যায়। ৯ হাজার লিটারের একটি ট্যাংক লরি বগুড়া থেকে বাঘাবাড়ী ডিপোতে আপ-ডাউন করলে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন ডিজেল-মবিল খরচ বেড়েছে। কিন্তু কমিশন কি বেড়েছে, বাড়েনি।’
পাম্প মালিক সংগঠনের এই নেতা বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের মূল্যের (পূর্ব মূল্য) প্রায় ২ দশমিক ৭১ টাকা কমিশন দেয়া হয়। অতীতে কমিশন বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) একাধিকবার আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
‘জ্বালানি তেলের মূল্য বর্তমানে অনেক বৃদ্ধি পেলেও তাদের কমিশনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় কমিশন প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের বর্তমান মূল্যের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রদানের দাবি জানানো হয়।’
এ বিষয়ে ঢাকায় বৈঠকের কথা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাতে ঢাকা যাচ্ছি। সেখানে বৈঠক হবে। দেখা যাক তারা কী সিদ্ধান্ত দেন। এর ওপর ভিত্তি করে আমাদের ধর্মঘটের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এর আগে একই দাবিতে গত ৭ আগস্ট সকাল-সন্ধ্যা ২৪ ঘণ্টার জন্য ধর্মঘট ডেকেছিল বাংলাদেশ ট্যাংক লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও জ্বালানি তেল পাম্প মালিক সমিতি। তবে ৯ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনের পর প্রশাসনের আশ্বাসে তা স্থগিত করা হয়েছিল।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারে সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সমুদ্র সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে সোমবার সকাল ৯টার দিকে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মাসুদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বেলা দেড়টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিখোঁজ মোহাম্মদ আসমাইন (১৩) কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার করিমুল হকের ছেলে। সে কক্সবাজার ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
নিখোঁজের স্বজনদের বরাতে মাসুদুল ইসলাম জানান, সকালে কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে মোহাম্মদ আসমাইনসহ ছয় বন্ধু সাগরে গোসলে নামে। একপর্যায়ে স্রোতের টানে তিনজন ভেসে যায়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত অন্য বন্ধুদের চিৎকারে স্থানীয় লাইফগার্ড কর্মীরা তাদের উদ্ধারে নামেন।
লাইফগার্ড কর্মীরা দুজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও অপর একজন ভেসে যায়। পরে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, নিখোঁজ স্কুলছাত্রের সন্ধানে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিচ কর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালান। বেলা দেড়টার দিকে নিথর অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন:টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ।
বৃষ্টি না হওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে।
জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে।
পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে গত চার দিনে বন্যার পানিতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সোমবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল।
কমেনি দুর্ভোগ
জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জেলার অনেক দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট ও শৌচাগারের সমস্যা তো রয়েছেই।
ফসলহানি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি
কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া এক হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ছয় হাজারেরও বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে সব হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্যার কারণে অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ বন্ধ রয়েছে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪১টি। এর মধ্যে বন্যার শিকার হয়েছে ৩০১টি। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
‘যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলের ভেতরে পানি না উঠলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।’
জেলায় মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি, কলেজসহ ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।
শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেজওয়ান বলেন, ‘বন্যার জন্য আমাদের শেরপুর জেলায় প্রায় ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আমরা প্রতিনিয়ত সেগুলোর তথ্য রাখছি। পানি কমে গেলে সেগুলো খুলে দেয়া হবে।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। আমাদের এ কাজে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে আমরা এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
ডিসি জানান, এরই মধ্যে ১০ হাজারের মতো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়। আরও ২৫ হাজারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যে পাঁচ হাজার পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন:খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় রোববার সন্ধ্যায় তাকে আটক করা হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে রোববার সন্ধ্যায় সাবেক এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে আটক করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এর আগে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিছুদিন পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হলে তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর ক্যাডার আবু মুছা ওরফে কিলার মুছাকে কক্সবাজারের কলাতলী বিচ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জ সদরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর ৪ আগস্ট প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া তিন মামলার অন্যতম আসামি এই সন্ত্রাসী। আবু মুছা সদর উপজেলার দত্তবাড়ী মহল্লার মৃত ছানোয়ার হোসেনের ছেলে।
আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জে ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায়ের হওয়া এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাব-১২, সদর কোম্পানির অপারেশন টিম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জ সদর থানার তিনটি হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় পলাতক আসামি আবু মুছা ওরফে কিলার মুছাকে শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় র্যাব-১২ ও র্যাব-১৫ এর একটি দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী বিচ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১২, সদর কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার বিএন এম আবুল হাশেম সবুজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আসামি বিগত সময়ে সাবেক এমপির প্রধান ক্যাডার হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় অস্ত্র ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোরপূর্বক ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এছাড়াও গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জ সদরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালানোর কথাও সে স্বীকার করেছে।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আবু মুছা আরও জানান, বর্ণিত হত্যা মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে তিনি বেড়াচ্ছিলেন।
সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি হেনরীর এই ক্যাডার কক্সবাজারে আত্মগোপনে থেকে সুযোগ বুঝে সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে পালানোর চেষ্টা করছিল বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় পৃথক ঘটনা-দুর্ঘটনায় চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, একজন ছোট ভাইয়ের আঘাতে এবং একটি শিশু রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারায়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ধনজইল মোড়ে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত চার্জারের ধাক্কায় মনিরুল ইসলাম ও সারাফাত হোসেন নামে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
মহাদেবপুর থানার ওসি হাসমত আলী জানান, সারাফাত উপজেলার জয়পুর সরদারপাড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসানের ছেলে ও ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের ছাত্র। আর মনিরুল ইসলাম উপজেলার গোঁফানগর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে ও শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের ছাত্র।
সারাফাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।
অপর ঘটনায় ধামইরহাট উপজেলার রসুলবিল রাঙ্গামাটি গ্রামে বাবলু হোসেনের ছেলে মামুনুর রশীদ ও ছোট ভাই মাইনুর রহমান রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। এতে ছোট ভাই মাইনুর রহমানের আঘাতে বড় ভাই মামুনুর রশীদ গুরুত্র জখম হন। তাকে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক মামুনুর রশীদকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধামইরহাট থানার ওসি রাইসুল ইসলাম জানান, উপজেলার রসুলবিল রাঙ্গামাটি গ্রামে বাবলু হোসেনের ছেলে মামুনুর রশীদ ও ছোট ভাই মাইনুর রহমান রোববার মাগরিবের আজানের সময় জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এ সময় ছোট ভাই মাইনুর রহমানের আঘাতে বড় ভাই মামুনুর রশীদ গুরুতর জখম হন। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাইনুরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অন্যদিকে বিকেল ৫টার দিকে বদলগাছীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় মরিয়ম আক্তার নামে ছয় বছর বয়সী এক শিশু প্রাণ হারায়।
বদলগাছী থানার ওসি শাহজাহান আলী জানান, মিঠাপুর পশ্চিমপাড়া দইভান্ডার মোড়ে সানোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় গোবরচাঁপা থেকে আক্কেলপুরগামী শসা বোঝাই একটি ট্রাক শিশু মরিয়মকে চাপা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যায়। উত্তেজিত জনতা ট্রাকচালক ফিদাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক গ্রামের আফসার হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:নওগাঁর মান্দায় একটি ঘর থেকে স্বামী ও স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের ভারশোঁ পশ্চিমপাড়া গ্রামে থেকে শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিথর অবস্থায় উদ্ধার হওয়া দুজন হলেন ওই গ্রামের আতাউর রহমান (৭২) ও তার স্ত্রী মারুনি বিবি (৬৫)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান।
প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়ে নিহতদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছিল। গতকাল শনিবার গভীর রাতে আতাউর রহমানের মেয়ে কাজলি বিবি আমাকে ফোনে জানায়, তার বাবা আত্মহত্যা করতে পারেন। বিষয়টি জরুরিভাবে দেখার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন।
‘কাজলি বিবির এমন সংবাদে আশাপাশের লোকজনকে নিয়ে আতাউরের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকির পরও তাদের কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর দুইজনের মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর পুলিশকে খবর দেয়া হয়।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের সময় মারুনি বিবির মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মরদেহ উদ্ধারের সময় পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
‘সেখানে মৃত্যুর পরে তাদের দাফন কীভাবে হবে এবং কোথায় টাকা রাখা আছে, এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামী আতাউর রহমান আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পর্যটকদের আপাতত ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিন এই দুটি জেলা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন রোববার বিকেল ৪টায় জানান, অনিবার্য কারণবশত ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমণপ্রত্যাশী পর্যটকদের বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে দুপুরে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন থেকে জারি করা এক নির্দেশনায়ও ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।
মন্তব্য