২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, তার সবই উঠে এসেছে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের জবানবন্দিতে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া এই জঙ্গিনেতা নিরাপত্তা হেফাজতে থাকাকালে একটি ভিডিও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, এই হামলার পরিকল্পনার সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে তাদের।
২০১৮ সালে এই মামলার রায়ে এদের মধ্যে বাবরের মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড আগেই কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তার নাম বাদ পড়ে যায়।
যে গ্রেনেড ব্যবহার করে হামলা হয়েছে, সেটি হামলাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন বাবর নিজে। দুই দফা হাওয়া ভবনে এবং শেষবার বাবরের সরকারি বাসায় বৈঠক করে এই হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়।
সেই পরিকল্পনার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর এক খুনিও উপস্থিত ছিলেন।
এই ভিডিও জবানবন্দিটি কীভাবে বাইরে এলো, এ বিষয়ে অবশ্য তদন্ত সংস্থার লোকজন কিছু বলছেন না। তবে সেটি বেশ কয়েক বছর ধরেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে।
বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা অবশ্য দাবি করেছেন, মুফতি হান্নানকে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। পরে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হামলাকেই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও নৃশংস হিসেবে ধরা হয়।
সেদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আশপাশের উঁচু ভবন থেকে একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বলতে গেলে অলৌকিকভাবে।
২৪ জনের প্রাণহানির সেই হামলায় শেখ হাসিনা যে ট্রাকে করে বক্তব্য রাখছিলেন, সেটির নিচে পড়া গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়নি। হলে গোটা ট্রাকটিই উড়ে যেতে পারত। যেসব গ্রেনেড নেতাকর্মীদের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছে, তার স্প্লিন্টার শেখ হাসিনার দেহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি নেতাদের কারণে। বেশ কয়েকজন নেতা চারপাশে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করেছেন তাকে। আর সেই স্প্লিন্টারে পরে প্রাণ গেছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের।
গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারার পর যে গুলি ছোড়া হয়, তা থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পান তার দেহরক্ষী মাহবুব রশীদের কারণে। তার গায়ে বিদ্ধ হয় সেই গুলি আর এতে প্রাণ হারান তিনি।
মুফতি হান্নানের এ জবানবন্দিতে এই হামলায় তার এবং অন্যদের সম্পৃক্ততা ছাড়াও জঙ্গি তৎপরতায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
হান্নান হামলা পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত তিন দিন আগে
মুফতি হান্নান জানান, পাকিস্তানে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ১৯৯২ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তখনও তিনি হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশে (হুজিবি) যুক্ত হননি।
দেশে আসার পর কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। এরপর গ্রামে একটা কওমি মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।
২১ আগস্টের হামলায় কীভাবে যুক্ত হলেন?– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তারা এই পরিকল্পনায় যুক্ত হন ওই মাসের ১৮ তারিখে। হুজিবির আমির আব্দুস সালাম, জেনারেল সেক্রেটারি শেখ ফরিদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ কাজল তাকে খবর দেন।
মুফতি হান্নান বলেন, ‘ওনারা আমাকে খবর দেন। একটা মিটিং আছে, আজকে সকালেই মানে ১৮ তারিখ চইলা আসার জন্য বললেন।’
সে সময় হান্নান থাকতেন মেরুল-বাড্ডার আনন্দনগরের একটি বাসায়।
এ হামলায় তার এবং অন্যদের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পার্টটুকু বলতে গেলে তো অন্যদের পার্টটাও আইসা যাবে।’
তিনি জানান, সেদিন তারা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে দারুল আরকাম মাদ্রাসায় হরকাতুল জিহাদের অফিসে যান। সেখানে আব্দুস সালাম ও শেখ ফরিদ ছাড়াও তাদের কমান্ডার জাহাঙ্গীর বদর জান্দাল উপস্থিত ছিলেন। আর হান্নানের সঙ্গে যান আহসান উল্লাহ কাজল।
দুই বৈঠক বনানীর হাওয়া ভবনে
মুফতি হান্নান জানান, তাদের সংগঠনের অন্য নেতারা তাকে জানিয়েছেন, এই হামলা পরিকল্পনা নিয়ে সে সময় তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠা বনানীর হাওয়া ভবনে দুটি বৈঠক হয়েছিল। এরপর আরও একটা বৈঠক হয়।
হান্নান জানান, হাওয়া ভবনের প্রথম বৈঠকে তারেক রহমান, বাবর ও মুজাহিদ কথা বলেছেন তাদের জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে।
‘ওনারা বললেন যে, প্রথমে ১৪ তারিখে একটা মিটিং ছিল, হাওয়া ভবনে। মিটিংয়ে শরিক ছিলেন তারেক জিয়া, আলী আহসান মুজাহিদ, তারপরে হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু সাব, হরকাতুল জিহাদের আমির আব্দুস সালাম সাব, শেখ ফরিদ সাব, আর মারকাজুল ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি আব্দুর রশীদ সাব।
‘ওখানে আলোচনা হয়, তারেক জিয়া আলোচনা করেন যে, “বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা এ দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতেছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেছে। দেশে জঙ্গিবাদ বিভিন্ন ধরনের কথা বলে দেশকে উশৃঙ্খল এবং নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের একটা পদক্ষেপ নেয়া দরকার।”
‘আলী আহসান মুজাহিদ সাব বললেন, “আপনার কথা খুবই সত্য। শুধু তা-ই নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করতেছে। অতএব আপনার কথাগুলো অবশ্যই সত্য। এগুলো কাজ থামানো দরকার।”
‘এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুর জামান বাবর সাব, উনি বললেন, “কথাগুলো সবই সত্য। তখন আমাকে… কথাগুলো বলতে হবে। এখন পরিষ্কারভাবে বলেন কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।”
‘উনি (তারেক রহমান) বললেন, এখানে দুইটা পদক্ষেপ… এ দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হইছে, আমাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক মোকাবিলা করা দরকার। নচেৎ তাকে (শেখ হাসিনা) এই দেশ থেকে চিরবিদায় করে দেয়া দরকার। অর্থাৎ তাকে শেষ করে দেয়া দরকার।’
হাওয়া ভবনের বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিও
মুফতি হান্নানের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক আসামিও সেই হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নেন। তারেক রহমান তাকে কিছু বলতে বললে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিকভাবে অবশ্যই মোকাবিলা করবেন। কিন্তু আমি তো রাজনীতি করি না তেমন। আমি জানি তাকে মোকাবিলা করতে হলে তিনটা পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘এক, তার বাড়িতে আক্রমণ করতে হবে, অথবা আসা-যাওয়ার কোনো পথে আক্রমণ করে তাকে মেরে ফেলতে হবে। নচেৎ তাকে কোনো মিটিংয়ে আক্রমণ করে শেষ করতে হবে।
‘তবে একটা কথা, জনগণের যেন ক্ষতি না হয়। যত কম ক্ষতি করে তাকে শেষ করা যায়, এইটার ব্যাপারে আপনারা চিন্তাভাবনা করেন।’
এরপর সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমার কাছে গ্রেনেড আছে। এই গ্রেনেডও ব্যবহার করা যেতে পারে। দেখেন।’
তখন বঙ্গবন্ধুর সেই খুনি বলেন, ‘হ্যাঁ, গ্রেনেডে যদি হয়, তাহলে রাস্তায় আক্রমণ করা যাবে না। ওনাকে কোথাও একই জায়গায় অবস্থানের সময় আক্রমণ করতে হবে। মিটিংয়ে আক্রমণ করলে কামিয়াব হওয়া যাবে।’
সেই বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত না হওয়ায় পরদিন আবার বৈঠক হয় বলে জানিয়েছেন মুফতি হান্নান। তিনি বলেন, ‘আলোচনার পর একটা সিদ্ধান্ত যে গ্রেনেড যখন আছে এবং এখানে আমাদের রাইফেল অস্ত্র প্রয়োজন হবে।
‘গ্রেনেডে সংক্ষেপে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে। বোমা বিস্ফোরণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হবে। আর রাইফেলের দ্বারা যদি মারা হয়, তাহলে আরও মানুষ কম ক্ষতি হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, ঠিক আছে, গ্রেনেড ব্যবহার হবে।’
সে সময় তারেক রহমান জানান, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সমাবেশ ডেকেছে, মুক্তাঙ্গনে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা চাইছে অফিসের সামনে হোক। যেখানেই হোক, এখানে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
তখন বৈঠকে বলা হয়, পুলিশ থাকবে, গোয়েন্দার লোক থাকবে, তারা সহযোগিতা করবে।
হান্নান জানান, এ সংক্রান্ত তৃতীয় বৈঠক হয় মিন্টো রোডে বাবরের সরকারি বাসভবনে। সেখানেও তারেক রহমান, আলী আহসান মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু এবং হরকাতুল জিহাদের আব্দুস সালাম, শেখ ফরিদ উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন আরিফুল ইসলাম আরিফ নামে সিদ্ধেশ্বরীর একজন।
গ্রেনেড দেন বাবর নিজে
এ হামলায় তার নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে আবার প্রশ্ন করা হলে মুফতি হান্নান বলেন, ‘১৮ তারিখে আমাদের যে মূল বৈঠক হয়, ওই মিটিংয়ে… হরকাতুল জিহাদের আমির মাওলানা আব্দুস সালাম সাহেব এবং সেক্রেটারি শেখ ফরিদ, চিফ কমান্ডার জাহাঙ্গীর বদর জান্দাল, আহসান উল্লাহ কাজল ও আমি এই কয়েকজন আমরা আব্দুস সালাম পিন্টু সাবের (সে সময়ের উপমন্ত্রী) বাসায় যাই।
‘আমরা ওখানে যাওয়ার পরে সর্বপ্রথম আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই তাজউদ্দিনকে (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি) দেখতে পাই এবং তার একজন আত্মীয় মাওলানা আবু তাহেরকে দেখতে পাই।
‘এরপর আমরা অপেক্ষা করার পরে দুইটা গাড়ি আসে। কালো রঙের পাজেরো গাড়ি আসে। প্রথম গাড়িটা ঢোকে, গেট থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সাহেব গাড়ি থেকে নামেন, আরেকজন লোক নামে।
‘দ্বিতীয় গাড়ি থেকে পরপর তিনজন নামেন। তারা ভেতরে বৈঠক করেন। বৈঠক করার পরে আমরা যে কয়জন ছিলাম, তাদের সঙ্গে বসি এবং পরিচয় হয়। তখন আমরা জানতে পারি বাবর সাবের সঙ্গে যে ছিল তার নাম হলো…
এ জায়গায় তদন্তকারীরা মুফতি হান্নাকে থামিয়ে দিয়ে সংক্ষেপ করতে বললে হান্নান বলেন, ‘সংক্ষেপে পারতেছি না স্যার।’
গ্রেনেডগুলো কবে হাতে পেয়েছেন– তদন্তকারীদের এ প্রশ্নের জবাবে মুফতি হান্নান বলেন, ১৮ তারিখের সেই বৈঠকের পর বাবর তাদের বলেন যে, ‘গতকালই বলছিলাম গ্রেনেড দেয়ার কথা। সেই গ্রেনেডগুলো আমি নিয়ে আসছি।’
একটা সবুজ রঙের ব্যাগের ভেতর থেকে আরেকটা কাগজের ব্যাগ বের করে সেখান থেকে গ্রেনেডগুলো বের করে দেন বাবর।
কতগুলো গ্রেনেড ছিল, জানতে চাওয়া হলে মুফতি হান্নান বলেন, ‘প্রথম দুইটা প্যাকেট বের করে। ছোট প্যাকেট, লম্বা প্যাকেট ছিল। ওর ভেতরে পাঁচটা করে গ্রেনেড ছিল। তখন টেবিলে রাখে। দুইটা গ্রেনেড খোলা ছিল। শুধু কাপড়ে মোড়া ছিল। ওপর-নিচে টেপ লাগানো ছিল, দেখা যেত। দুইটা গ্রেনেড ছিল খোলা, এই ১২টা গ্রেনেড হ্যান্ডওভার করে।’
আইনজীবীর বক্তব্য
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটিকে বলা হয় জজ মিয়া নাটক। আসলে সব থেকে বড় নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে মুফতি হান্নানের মাধ্যমে। এ মামলায় এক সময় ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি হয়ে গিয়েছিল। সেই চার্জশিটে কোথাও তারেক রহমান, বাবরের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের আজ্ঞাবহ তদন্তকারী কর্মকর্তা দিয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়, যেখানে মুফতি হান্নানকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে কিন্তু হান্নান অস্বীকার করেছেন- তিনি এমন জবানবন্দি দেননি। এটা দিয়ে প্রমাণ হয়, এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হয়রানি করার জন্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়েছে। আশা করি উচ্চ আদালতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’
কার কী সাজা
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত যে রায় দেয়, তাতে মোট ৪৯ জনের সাজা হয়। মামলায় আসামি ছিলেন মোট ৫২ জন। তবে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড আগেই কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।
দণ্ডিতদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং সমানসংখ্যক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। বাকি ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
এই ৪৯ আসামির মধ্যে আট জন রাজনৈতিক নেতা, পাঁচ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং আট জন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা। বাকি ৩১ জন হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ বাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েলের।
বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ১১ জন হলেন মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন।
আরও পড়ুন:বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য