২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, তার সবই উঠে এসেছে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের জবানবন্দিতে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া এই জঙ্গিনেতা নিরাপত্তা হেফাজতে থাকাকালে একটি ভিডিও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, এই হামলার পরিকল্পনার সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে তাদের।
২০১৮ সালে এই মামলার রায়ে এদের মধ্যে বাবরের মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড আগেই কার্যকর হওয়ায় এই মামলা থেকে তার নাম বাদ পড়ে যায়।
যে গ্রেনেড ব্যবহার করে হামলা হয়েছে, সেটি হামলাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন বাবর নিজে। দুই দফা হাওয়া ভবনে এবং শেষবার বাবরের সরকারি বাসায় বৈঠক করে এই হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়।
সেই পরিকল্পনার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর এক খুনিও উপস্থিত ছিলেন।
এই ভিডিও জবানবন্দিটি কীভাবে বাইরে এলো, এ বিষয়ে অবশ্য তদন্ত সংস্থার লোকজন কিছু বলছেন না। তবে সেটি বেশ কয়েক বছর ধরেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে।
বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা অবশ্য দাবি করেছেন, মুফতি হান্নানকে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। পরে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হামলাকেই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও নৃশংস হিসেবে ধরা হয়।
সেদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আশপাশের উঁচু ভবন থেকে একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বলতে গেলে অলৌকিকভাবে।
২৪ জনের প্রাণহানির সেই হামলায় শেখ হাসিনা যে ট্রাকে করে বক্তব্য রাখছিলেন, সেটির নিচে পড়া গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়নি। হলে গোটা ট্রাকটিই উড়ে যেতে পারত। যেসব গ্রেনেড নেতাকর্মীদের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছে, তার স্প্লিন্টার শেখ হাসিনার দেহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি নেতাদের কারণে। বেশ কয়েকজন নেতা চারপাশে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করেছেন তাকে। আর সেই স্প্লিন্টারে পরে প্রাণ গেছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের।
গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারার পর যে গুলি ছোড়া হয়, তা থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পান তার দেহরক্ষী মাহবুব রশীদের কারণে। তার গায়ে বিদ্ধ হয় সেই গুলি আর এতে প্রাণ হারান তিনি।
মুফতি হান্নানের এ জবানবন্দিতে এই হামলায় তার এবং অন্যদের সম্পৃক্ততা ছাড়াও জঙ্গি তৎপরতায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
হান্নান হামলা পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত তিন দিন আগে
মুফতি হান্নান জানান, পাকিস্তানে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ১৯৯২ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তখনও তিনি হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশে (হুজিবি) যুক্ত হননি।
দেশে আসার পর কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। এরপর গ্রামে একটা কওমি মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।
২১ আগস্টের হামলায় কীভাবে যুক্ত হলেন?– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তারা এই পরিকল্পনায় যুক্ত হন ওই মাসের ১৮ তারিখে। হুজিবির আমির আব্দুস সালাম, জেনারেল সেক্রেটারি শেখ ফরিদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ কাজল তাকে খবর দেন।
মুফতি হান্নান বলেন, ‘ওনারা আমাকে খবর দেন। একটা মিটিং আছে, আজকে সকালেই মানে ১৮ তারিখ চইলা আসার জন্য বললেন।’
সে সময় হান্নান থাকতেন মেরুল-বাড্ডার আনন্দনগরের একটি বাসায়।
এ হামলায় তার এবং অন্যদের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পার্টটুকু বলতে গেলে তো অন্যদের পার্টটাও আইসা যাবে।’
তিনি জানান, সেদিন তারা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে দারুল আরকাম মাদ্রাসায় হরকাতুল জিহাদের অফিসে যান। সেখানে আব্দুস সালাম ও শেখ ফরিদ ছাড়াও তাদের কমান্ডার জাহাঙ্গীর বদর জান্দাল উপস্থিত ছিলেন। আর হান্নানের সঙ্গে যান আহসান উল্লাহ কাজল।
দুই বৈঠক বনানীর হাওয়া ভবনে
মুফতি হান্নান জানান, তাদের সংগঠনের অন্য নেতারা তাকে জানিয়েছেন, এই হামলা পরিকল্পনা নিয়ে সে সময় তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠা বনানীর হাওয়া ভবনে দুটি বৈঠক হয়েছিল। এরপর আরও একটা বৈঠক হয়।
হান্নান জানান, হাওয়া ভবনের প্রথম বৈঠকে তারেক রহমান, বাবর ও মুজাহিদ কথা বলেছেন তাদের জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে।
‘ওনারা বললেন যে, প্রথমে ১৪ তারিখে একটা মিটিং ছিল, হাওয়া ভবনে। মিটিংয়ে শরিক ছিলেন তারেক জিয়া, আলী আহসান মুজাহিদ, তারপরে হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু সাব, হরকাতুল জিহাদের আমির আব্দুস সালাম সাব, শেখ ফরিদ সাব, আর মারকাজুল ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি আব্দুর রশীদ সাব।
‘ওখানে আলোচনা হয়, তারেক জিয়া আলোচনা করেন যে, “বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা এ দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতেছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেছে। দেশে জঙ্গিবাদ বিভিন্ন ধরনের কথা বলে দেশকে উশৃঙ্খল এবং নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের একটা পদক্ষেপ নেয়া দরকার।”
‘আলী আহসান মুজাহিদ সাব বললেন, “আপনার কথা খুবই সত্য। শুধু তা-ই নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করতেছে। অতএব আপনার কথাগুলো অবশ্যই সত্য। এগুলো কাজ থামানো দরকার।”
‘এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুর জামান বাবর সাব, উনি বললেন, “কথাগুলো সবই সত্য। তখন আমাকে… কথাগুলো বলতে হবে। এখন পরিষ্কারভাবে বলেন কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।”
‘উনি (তারেক রহমান) বললেন, এখানে দুইটা পদক্ষেপ… এ দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হইছে, আমাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক মোকাবিলা করা দরকার। নচেৎ তাকে (শেখ হাসিনা) এই দেশ থেকে চিরবিদায় করে দেয়া দরকার। অর্থাৎ তাকে শেষ করে দেয়া দরকার।’
হাওয়া ভবনের বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিও
মুফতি হান্নানের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক আসামিও সেই হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নেন। তারেক রহমান তাকে কিছু বলতে বললে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিকভাবে অবশ্যই মোকাবিলা করবেন। কিন্তু আমি তো রাজনীতি করি না তেমন। আমি জানি তাকে মোকাবিলা করতে হলে তিনটা পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘এক, তার বাড়িতে আক্রমণ করতে হবে, অথবা আসা-যাওয়ার কোনো পথে আক্রমণ করে তাকে মেরে ফেলতে হবে। নচেৎ তাকে কোনো মিটিংয়ে আক্রমণ করে শেষ করতে হবে।
‘তবে একটা কথা, জনগণের যেন ক্ষতি না হয়। যত কম ক্ষতি করে তাকে শেষ করা যায়, এইটার ব্যাপারে আপনারা চিন্তাভাবনা করেন।’
এরপর সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমার কাছে গ্রেনেড আছে। এই গ্রেনেডও ব্যবহার করা যেতে পারে। দেখেন।’
তখন বঙ্গবন্ধুর সেই খুনি বলেন, ‘হ্যাঁ, গ্রেনেডে যদি হয়, তাহলে রাস্তায় আক্রমণ করা যাবে না। ওনাকে কোথাও একই জায়গায় অবস্থানের সময় আক্রমণ করতে হবে। মিটিংয়ে আক্রমণ করলে কামিয়াব হওয়া যাবে।’
সেই বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত না হওয়ায় পরদিন আবার বৈঠক হয় বলে জানিয়েছেন মুফতি হান্নান। তিনি বলেন, ‘আলোচনার পর একটা সিদ্ধান্ত যে গ্রেনেড যখন আছে এবং এখানে আমাদের রাইফেল অস্ত্র প্রয়োজন হবে।
‘গ্রেনেডে সংক্ষেপে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে। বোমা বিস্ফোরণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হবে। আর রাইফেলের দ্বারা যদি মারা হয়, তাহলে আরও মানুষ কম ক্ষতি হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, ঠিক আছে, গ্রেনেড ব্যবহার হবে।’
সে সময় তারেক রহমান জানান, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সমাবেশ ডেকেছে, মুক্তাঙ্গনে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা চাইছে অফিসের সামনে হোক। যেখানেই হোক, এখানে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
তখন বৈঠকে বলা হয়, পুলিশ থাকবে, গোয়েন্দার লোক থাকবে, তারা সহযোগিতা করবে।
হান্নান জানান, এ সংক্রান্ত তৃতীয় বৈঠক হয় মিন্টো রোডে বাবরের সরকারি বাসভবনে। সেখানেও তারেক রহমান, আলী আহসান মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু এবং হরকাতুল জিহাদের আব্দুস সালাম, শেখ ফরিদ উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন আরিফুল ইসলাম আরিফ নামে সিদ্ধেশ্বরীর একজন।
গ্রেনেড দেন বাবর নিজে
এ হামলায় তার নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে আবার প্রশ্ন করা হলে মুফতি হান্নান বলেন, ‘১৮ তারিখে আমাদের যে মূল বৈঠক হয়, ওই মিটিংয়ে… হরকাতুল জিহাদের আমির মাওলানা আব্দুস সালাম সাহেব এবং সেক্রেটারি শেখ ফরিদ, চিফ কমান্ডার জাহাঙ্গীর বদর জান্দাল, আহসান উল্লাহ কাজল ও আমি এই কয়েকজন আমরা আব্দুস সালাম পিন্টু সাবের (সে সময়ের উপমন্ত্রী) বাসায় যাই।
‘আমরা ওখানে যাওয়ার পরে সর্বপ্রথম আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই তাজউদ্দিনকে (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি) দেখতে পাই এবং তার একজন আত্মীয় মাওলানা আবু তাহেরকে দেখতে পাই।
‘এরপর আমরা অপেক্ষা করার পরে দুইটা গাড়ি আসে। কালো রঙের পাজেরো গাড়ি আসে। প্রথম গাড়িটা ঢোকে, গেট থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সাহেব গাড়ি থেকে নামেন, আরেকজন লোক নামে।
‘দ্বিতীয় গাড়ি থেকে পরপর তিনজন নামেন। তারা ভেতরে বৈঠক করেন। বৈঠক করার পরে আমরা যে কয়জন ছিলাম, তাদের সঙ্গে বসি এবং পরিচয় হয়। তখন আমরা জানতে পারি বাবর সাবের সঙ্গে যে ছিল তার নাম হলো…
এ জায়গায় তদন্তকারীরা মুফতি হান্নাকে থামিয়ে দিয়ে সংক্ষেপ করতে বললে হান্নান বলেন, ‘সংক্ষেপে পারতেছি না স্যার।’
গ্রেনেডগুলো কবে হাতে পেয়েছেন– তদন্তকারীদের এ প্রশ্নের জবাবে মুফতি হান্নান বলেন, ১৮ তারিখের সেই বৈঠকের পর বাবর তাদের বলেন যে, ‘গতকালই বলছিলাম গ্রেনেড দেয়ার কথা। সেই গ্রেনেডগুলো আমি নিয়ে আসছি।’
একটা সবুজ রঙের ব্যাগের ভেতর থেকে আরেকটা কাগজের ব্যাগ বের করে সেখান থেকে গ্রেনেডগুলো বের করে দেন বাবর।
কতগুলো গ্রেনেড ছিল, জানতে চাওয়া হলে মুফতি হান্নান বলেন, ‘প্রথম দুইটা প্যাকেট বের করে। ছোট প্যাকেট, লম্বা প্যাকেট ছিল। ওর ভেতরে পাঁচটা করে গ্রেনেড ছিল। তখন টেবিলে রাখে। দুইটা গ্রেনেড খোলা ছিল। শুধু কাপড়ে মোড়া ছিল। ওপর-নিচে টেপ লাগানো ছিল, দেখা যেত। দুইটা গ্রেনেড ছিল খোলা, এই ১২টা গ্রেনেড হ্যান্ডওভার করে।’
আইনজীবীর বক্তব্য
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটিকে বলা হয় জজ মিয়া নাটক। আসলে সব থেকে বড় নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে মুফতি হান্নানের মাধ্যমে। এ মামলায় এক সময় ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি হয়ে গিয়েছিল। সেই চার্জশিটে কোথাও তারেক রহমান, বাবরের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের আজ্ঞাবহ তদন্তকারী কর্মকর্তা দিয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়, যেখানে মুফতি হান্নানকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে কিন্তু হান্নান অস্বীকার করেছেন- তিনি এমন জবানবন্দি দেননি। এটা দিয়ে প্রমাণ হয়, এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হয়রানি করার জন্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়েছে। আশা করি উচ্চ আদালতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’
কার কী সাজা
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত যে রায় দেয়, তাতে মোট ৪৯ জনের সাজা হয়। মামলায় আসামি ছিলেন মোট ৫২ জন। তবে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড আগেই কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।
দণ্ডিতদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং সমানসংখ্যক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। বাকি ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
এই ৪৯ আসামির মধ্যে আট জন রাজনৈতিক নেতা, পাঁচ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং আট জন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা। বাকি ৩১ জন হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ বাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েলের।
বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ১১ জন হলেন মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কুখ্যাত চাঁদাবাজ লিটনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ছিনতাই ও অপহরণের মামলা ছিল।
বুধবার (২৮ মে) রাত ১০টার দিকে পুরানো পল্টনের নিউ বন্ধু হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকায় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অপহরণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল লিটন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এসব কার্যক্রম আরও বেড়ে যায়।
পুরানা পল্টন এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো লিটনের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে।
বুধবার রাতে নিউ বন্ধু হোটেলের পাশের একটি ভবনে থাকা লিটনের ব্যক্তিগত অফিসে অভিযান চালানো হয়। হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হোটেল কক্ষ, অফিস ও তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি মোবাইল ফোন, নগদ ২ লাখ টাকা ও ১ হাজার ১০০ ডলার উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
সেনাবাহিনীর মেজর শাকিব সাংবাদিকদের জানান, লিটনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গণহত্যার বিচার আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
উপদেষ্টা আজ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘বিচার শুরু হচ্ছে শিগগির। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি আছে সমাজে। এটি দৃশ্যমান করা হয়েছিল আট মাস আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়েই।
এরপর তদন্তকারী অফিস ও প্রসিকিউশন অফিস পুনর্গঠন করা হয়েছে। তদন্তকারী দল কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ করেছে। প্রসিকিউশন টিম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটি মামলার ফরমাল চার্জ গঠন করেছে। গতকাল রোববার এটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার পর তা আমলে নেয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেছেন, ‘ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। সেটি গতকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানি পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ্, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাবো আমরা। গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।’
স্ত্রী-কন্যাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নামে থাকা মোট নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। এসব হিসাবে মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৯৬ টাকা রয়েছে।
বুধবার (২১ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক আদালতে হিসাব অবরোধের আবেদন করেন।
অবরুদ্ধ হওয়া হিসাবে মো. আব্দুর রাজ্জাকের নিজ নামে থাকা চারটি ব্যাংকে হিসাবে, ৪২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা, তার স্ত্রী শিরিন আকতার বানুর চারটি ব্যাংক হিসাবে ৬৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৫ টাকা ও তার মেয়ে ফারজানা আক্তার তন্দ্রার হিসাবে ২৮ লাখ টাকা রয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার ও মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগে দুর্নীতি, সরকারি জমি দখল, এসিআই ও আদম ব্যবসায়ী নূর আলীর মাধ্যমে শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
এতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকালে রাজ্জাক ও তার স্ত্রী-মেয়ের নামে অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এই সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করলে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে এবং ভবিষ্যতে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই তদন্তের স্বার্থে এসব হিসাব অবরুদ্ধ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
নারী নির্যাতনের একটি মামলায় সঙ্গীতশিল্পী মামলায় মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার তালিবুর রহমান এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ডেমরার স্টাফ রোড এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় নারী নির্যাতনে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে ডেমরা পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান ইউএনবিকে জানান, ‘ইসরাত জাহান প্রিয়া নামে ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর সাথে রুবেলের টেলিফোনে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্রায় সাত মাস আগে রুবেল প্রিয়াকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কীর্তন করে টেমরা থানার অধীন আমতলা নামক স্থানে একটি ফ্লাট বাসায় রাখে। বিগত সাত মাসে প্রিয়ার সাথে সম্পর্ক করে এবং পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি।’
সম্প্রতি প্রিয়ার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেটা দেখে প্রিয়ার বাবা-মা ডেমরা থানা যোগাযোগ করেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাত দশটায় আমতলার বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রিয়াকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু রুবেল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে প্রিয়া ডেমরা থানা এসে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডেমরার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। রুবেল তখন একটি গাড়ি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
বাংলাদেশের গায়ক হলেও নোবেল খ্যাতি অর্জন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলা চ্যানেলের গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ থেকে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় জিততে না পারলেও তৃতীয় হন নোবেল, আর নিজের সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে খুব সহজেই দুই দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।
এরপর থেকে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও এই আলোচিত গায়কের সুখ্যাতি নিমেষেই নষ্ট হয়ে যায় তার ব্যক্তিগত জীবন সবার সামনে আসার পর। স্ত্রীকে মারধর, মাদক সেবন, মদের ঘোরে ভাঙচুর, টাকা নিয়ে শো করতে না যাওয়া—এমন নানা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন নোবেল।
২০১৯ সালে মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। পরবর্তীতে খ্যাতির মধ্যে থাকা অবস্থায় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিক্ততা শুরু হয় স্ত্রীর সঙ্গে, যার শেষ পরিণতি হয় বিচ্ছেদ।
২০২৩ এর নভেম্বরে অন্যের স্ত্রী ফারজানা আরশির সাথে অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করে নোবেল সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন তিনি আবারও বিয়ে করেছেন। পরবর্তীতে ফারজানা আরশি পুলিশের কাছে গায়কের নামে অভিযোগ দায়ের করে জানান যে নোবেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি, জোর করে গোপালগঞ্জের বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এরপরে মাদক খাইয়ে ওই অন্তরঙ্গ ছবিগুলো তোলা হয়েছিলো।
ব্যক্তিগত জীবনের বাইরেও একই বছর শরীয়তপুরের একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে অর্থ নিয়েও না যাওয়ায় ঢাকার মতিঝিল থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয় নোবেলের বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালে বেশ কিছু মাস রিহ্যাবে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর নোবেল সম্প্রতি আবারও গানের জগতে ফিরে এসেছিলেন এবং বেশ কিছু নতুন গানের কাজ করছিলেন।
নাশকতার পরিকল্পনা ও সামাজিকমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া সৈনিক নাঈমুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগীকে রাজধানীর খিলক্ষেতের বটতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিভিন্ন সামরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাঈমুল ইসলামকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনুষঙ্গিক আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কতিপয় বরখাস্ত বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নাঈমুল বিভিন্ন গণমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করে আসছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আগামীকাল রোববার (১৮ মে) ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এ ধরনের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল আজ বেলা দুইটার দিকে খিলক্ষেতের বটতলা বাজার এলাকায় নাঈমুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সময় নাঈমুল তার কিছু সহযোগীকে নিয়ে উপস্থিত এক সেনাসদস্যের ওপর দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান। তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাঈমুল ও তাঁর দুই সহযোগীকে আটক করে।
রাজধানীতে 'লও ঠেলা' নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় ৯ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুর থানার রায়ের বাজারের মেকাপ খান রোডে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
গ্রেফপ্তাররা হলেন— মো. জোবায়ের ওরফে যুবরাজ (২২), মো. হাসান (১৯), মো. রায়হান (২৭), মো. ওয়াসিম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন রাজু (৩২), মো. নুরুল আমিন (১৮), মো. কামাল হোসেন (২২), মো. শাহিন (২৮) ও মো. মেহেদী হাসান (২৫)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি চাপাতি ও চারটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার মেকআপ খান রোডে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। পরে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জব্দ করা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর থানা এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় ছিনতাইসহ ত্রাস সৃষ্টি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিত করতে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সঙ্গে জনসাধারণের যোগাযোগের জন্য হালনাগাদ যোগাযোগ নম্বর প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে আপডেটেড নম্বরসমূহে যোগাযোগ করুনঃ
১। গাজীপুর, কোনাবাড়ী, পূবাইল, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গি, কাপাসিয়া, কালিগঞ্জ, কাশিমপুর, শ্রীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বন্দর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং গজারিয়া।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, খ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০, গ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
২। ডেমরা, ওয়ারী, রমনা, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, শাহজাহানপুর, কোতোয়ালী, বংশাল, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর এবং কদমতলী।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৯২৪২৮, খ। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, গ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০,
ঘ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
৩। সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর, বাইপাইল, দোহার, গাজীপুর, মৌচাক এবং মানিকগঞ্জ।
যোগাযোগের নম্বরসমূহ
ক। ০১৭৬৯-০৯৫২০৯, খ। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, গ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০,
ঘ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
৪। ফরিদপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ এবং শরীয়তপুর।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৯৩৫০৯, খ। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, গ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০,
ঘ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
৫। বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, দক্ষিন খান, উত্তরখান, উত্তরা পূর্ব।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০২৫৭৬৬, খ। ০১৭৬৯-০২৫৭৬৯, গ। ০১৭৬৯-০২৫৮৬৫,
ঘ। ০১৭৬৯-০২৫৭৬৭।
৬। মিরপুর মডেল থানা, মিরপুর-২, ৬, ৭, ১০, দুয়ারীপাড়া, রুপনগর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মনিপুর।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৫০৭১০, খ। ০১৭৬৯-০৫০৬৯৩, গ। ০১৭৬৯-০৫০৬৯৫,
ঘ। ০১৭৬৯-০৫০৬৯৬।
৭। উত্তরা তুরাগ থানা ও উত্তরা পশ্চিম থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৮২৮৩৬, খ। ০১৩১৮-৩৭১৫৫৪, গ। ০১৩১৮-৩৭১৫৫৫।
৮। দারুসসালাম থানা এবং শাহআলী থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৩৩৭০০,খ। ০১৭৬৯-০৩৩৭০২, গ। ০১৭৬৯-০৩৩৭০৪।
৯। গুলশান, বনানী, ভাটারা এবং বাড্ডা থানা
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯০৫০২৮৩, খ। ০১৭৬৯০১১৫৫৯।
১০। খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানা
যোগাযোগের নম্বরঃ
ক। ০১৭৬৯০৫৩১৪৪।
১১। রামপুরা, সবুজবাগ এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা
যোগাযোগের নম্বরঃ
ক। ০১৭৬৯০৫৩১৬৮।
১২। ক্যান্টনমেন্ট, কাফরুল, ভাসানটেক।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৫১৮২৫, খ। ০১৭৬৯-০১৯০৭৩, গ। ০১৭৬৯-০১৩২৩৬।
১৩। হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান এবং নিউমার্কেট থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৮৯৭৯১৪৮৬২, খ। ০১৮৯৭৯১৪৮৬৩, গ। ০১৮৯৭৯১৪৮৬৪,
ঘ। ০১৮৯৭৯১৪৮৬৫, ঙ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮, চ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
১৪। শের-ই-বাংলা নগর, আদাবর এবং মোহাম্মদপুর থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৮১৫৭৯৫৯৫১, খ। ০১৭৬৯০৫৯৮৮৮, গ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮
ঘ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
১৫। তেজগাঁও থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯০১৯৪০৯, খ। ০১৭৬৯০১৯৪১৫, গ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮
ঘ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
১৬। লালবাগ, চকবাজার এবং কামরাঙ্গীরচর থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯০১৩৪৩৯, খ। ০১৬১৯৮৩২০৬৯, গ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮
ঘ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোন সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়।
মন্তব্য