প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী ইয়াশা মৃধা সুকন্যাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন মা নাজমা ইসলাম লাকী।
‘কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নাই। কারো ওপর ক্ষোভ নাই। এক মাস ২৭ দিন ধরে আমার মেয়ে নিখোঁজ। আমার একটাই চাওয়া, আমার মেয়েকে জীবিত ফেরত চাই।’
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন নিখোঁজ শিক্ষার্থী সুকন্যার মা।
নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, ‘আমার স্বামী লন্ডনপ্রবাসী। আমাদের একমাত্র মেয়ে ইয়াশা মৃধা সুকন্যা চলতি বছর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমার মেয়েকে আমি সব সময় কলেজে নিয়ে যেতাম এবং সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসতাম। গত ২৩ জুন আমার মেয়েকে মডেল টেস্ট দিতে কলেজে নিয়ে যাই। বেলা সাড়ে ১২টায় মেয়ে কলেজে প্রবেশ করে।
‘বরাবরের মতো আমি কলেজের বাইরে অভিভাবকদের বসারকক্ষে অপেক্ষা করি। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবার কথা বিকেল ৩টায়। সব ছাত্রীরা যখন পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যায়। শুধু আমার মেয়ে বের হয়নি। মেয়ের বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে না পারায় আমি বিকেল ৪টায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায়, আমার মেয়ে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। পরে আমি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আমার মেয়েকে পাইনি। আমার মেয়ের মোবাইল আমার কাছে দিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, 'মেয়েকে না পেয়ে আমি আমার মেয়ের ফোন চেক করতে থাকি। সেখান থেকে ইশতিয়াক নামের একটা ছেলের সঙ্গে কথোপকথন দেখতে পাই। পরে রমনা মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাই এবং একটি মামলা করি। পুলিশ আমার মেয়ের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সেই ছেলের নম্বর নিয়ে ছেলেকে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কল দিলে ছেলের বড় ভাই ধরে। পুলিশ তাকে বিষয়টা জানায় এবং বলে আপনার ভাইকে বলেন মেয়েটাকে নিয়ে যাতে রমনা মডেল থানায় আসে। পরবর্তী সময়ে সেই নম্বর বন্ধ করে দেয়, আবার চালু করে আবার বন্ধ করে দেয়।'
তিনি আরও বলেন, এর কিছুক্ষণ পর রাত ৮টা ৩৯ মিনিটে আমার মোবাইলে থাকা আমার মেয়ের ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ আসে ‘মা আমি বাসায় আসতেছি, তুমি চিন্তা করো না।’
পরবর্তী সময়ে জানতে পারি আমার মেয়ে নয়, ইশতিয়াক সেই মেসেজ করেছে। আমরা বাসায় চলে আসার প্রস্তুতি নেয়ার সময় পুলিশ ১০টা ৪০ মিনিটে ফোনে বলেন আপনি মগবাজার বটতলায় আসেন আপনার মেয়েকে নিয়ে ছেলে আসতেছে। কিন্তু ছেলে আসেনি।
‘রাত সাড়ে ১১টায় আমার ফোনে কল আসে। আমি কল রিসিভ করার পর আমাকে বলে, আন্টি ইয়াশা কি বাসায় ফিরেছে, তখন আমি বলি, কী করে ফিরবে, আমার মেয়ে তো তোমার সঙ্গে আছে। এই কথা বলে আমি পুলিশকে ফোনটা দিয়ে দেই।
পুলিশ আসামিকে বলে মেয়েকে নিয়ে আসতে, তা না হলে ভালো হবে না। ছেলে বলে, আমি ২০ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। কিন্তু পরে সেই নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।’
নিখোঁজ ছাত্রীর মা বলেন, ‘২৪ জুন সকালবেলা পুলিশ ছেলেকে থানায় ডেকে আনে এবং ইশতিয়াক তার বন্ধু সালমানকে নিয়ে আসে। তাকে থানায় আসার পর অনেক করে জিজ্ঞেস করি, বাবা আমার মেয়েটা কোথায়, কী করেছ তুমি? আমার মেয়েকে কি তুমি মেরে ফেলেছ? বলে না আন্টি মারব কেন। আমি বলি, তাহলে কি আমার মেয়েকে কারো কাছে দিয়ে দিয়েছ। পরে ছেলে মাথা নিচু করে ছিল, কিছু বলেনি। এর মানে কী?
‘পরবর্তী সময়ে ছেলে স্বীকার করে আমার কাছে পাঠানো মেসেজটি আমার মেয়ে না, এই ছেলে করেছে। পরে পুলিশ আসামিকে জিজ্ঞাসা করলে আসামি বলে, সুকন্যা সারা দিন আমার সঙ্গে ছিল। আমি রাত ৮টায় রিকশায় তুলে দেই। পরে জিজ্ঞাসা করা হয়, সারা দিন কোথায় কোথায় গিয়েছ? ছেলে ওয়ারীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যাওয়ার কথা জানায়। কিন্তু পুলিশ যখন সেই জায়গাগুলোতে ছেলেকে নিয়ে যায়, ছেলে বলে সে এই জায়গায় আসেনি। তার মানে সে মিথ্যে বলেছে।’
নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, ‘২৪ জুন বিকেলে ইশতিয়াকের সেই বন্ধুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি, আমার মেয়েকে নিয়ে ছেলে গেণ্ডারিয়ায় গেছে, সেখানে শশ্মান ঘাটে গেছে। গেণ্ডারিয়ার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে রিকশায় ছিল। রাত ৮টা ৩ মিনিটের ফুটেজে দেখতে পারি, আমার মেয়ে একা ছিল রিকশায়। কিন্তু ফুটেজে দেখা যায়, আমার মেয়ের হাতে একটা ফোন ছিল, সেটা কার ফোন? কারণ মেয়ের ফোন তো আমার কাছে। ফুটেজে দেখা যায়, ইয়াসা ফোনে কথা বলছে, আর রিকশা দিয়ে যাচ্ছে। রিকশা থামিয়ে পিছনের দিকে তাকাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের দুই রিকশা পর ইশতিয়াককে দেখা যায়। পুলিশকে বলা হয়েছে, সামনের সিসিটিভির ফুটেজগুলো বের করার জন্য, কিন্তু তারা করেনি।
পুলিশের ওপর মায়ের ক্ষোভ
নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, কোনো কিছু আমরা জানতে পারিনি। পুলিশ আমাদের পাঁচ দিন থানায় শুধু বসিয়ে রেখেছে, আর বলেছে, তদন্ত করছি আপনারা বসে থাকেন। এই ভাবে পুলিশের কাছে কয়েক দিন চলে যায়। কিন্তু আমরা কিছু জানতে পারিনি। ইশতিয়াক আমাকে একটা কথাই বলেছে, আন্টি আপনার মেয়ে চলে আসবে, কিন্তু আজও আমার মেয়ে আসেনি। ইশতিয়াক এখন কারাগারে আছে।
তিনি বলেন, 'পুলিশের কাছে তেমন সাহায্য না পেয়ে আমরা গত ১৯ জুলাই মামলাটি ডিবিতে নিয়ে যাই। মামলার তদন্ত দায়িত্ব পায় ডিবির রমনা বিভাগ। মামলাটি ডিবিতে যাওয়ার পর আমাদের ডিবি অফিসে ডেকে সব তথ্য নেয়। কিন্তু এক মাস ১৬ দিনেও মেয়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আমরা কারো কাছে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। ডিবি ও পুলিশ একই কথা বলছে। তারা কাজ করছে...। আমি শুধু আমার মেয়েটাকে ফিরে পেতে চাই। ডিবি বারবার বুঝাতে চাচ্ছে আমার মেয়ের মাথায় সমস্যা...। সেটা কেন বলছে, তা আমরা জানি না। আমরা কারো সাহায্য পাচ্ছি না। ১ মাস ২৭ দিন ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, শুধু মেয়েটাকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।'
নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন (২৩) ও একই গ্রামের বারেক হাজীর ছেলে বাশার (৩৫)।
স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঁনপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম মিয়া ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে চাঁনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সামসু মেম্বারের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বর ও তার সমর্থকরা এলাকাছাড়া ছিলেন। ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে আসেন তারা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এমনকি দুটি পক্ষই মারামারি ও গোলাগুলি করে।
একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা সালাম মিয়া ও তার সমর্থকদের এলাকাছাড়া করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সবশেষ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরতে চান। এতে বাধা দেন বিএনপি নেতা সামসু মেম্বার ও তার লোকজন।
পরে দেশীয় অস্ত্র, ট্যাঁটা, বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে একজন এবং ট্যাঁটা ও ছুরিকাঘাতের আরও একজনসহ দুইজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই সময় সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১০ জন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে সুমন (৩৫) নামের এক ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
পুলিশ প্লাজার উত্তর পাশের সড়কে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মুমূর্ষু অবস্থায় গুলশান থানা পুলিশ সুমনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রাত ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মারুফ আহমেদ ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেন জানান, নিহত ব্যক্তি পুলিশ প্লাজার উত্তর পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে হঠাৎ ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এসআই আরও জানান, সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। তার মাথা এবং বুকের বাম পাশে গুলি করা হয়েছে।
হাসপাতালে নিহত সুমনের স্ত্রীর বড় ভাই বাদশা মিয়া রুবেল জানান, সুমনের বাড়ি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায়। সুমন স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মিরপুরের ভাষানটেক এলাকায় থাকতেন। মহাখালীর টিভি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে তার ইন্টারনেট ব্যবসা রয়েছে।
তিনি বলেন, টিভি গেট এলাকায় ‘একে-৪৭’ গ্রুপের রুবেল নামের এক ব্যক্তি ডিশের ব্যবসা করেন। তার সঙ্গে সুমনের ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে এবং তিনি মাঝে মাঝে সুমনকে হত্যার হুমকি দিত। ওই পক্ষের লোকই গুলি করেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তিনি।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ী সুমনের নামে গুলশান, বনানীসহ কয়েকটি থানায় চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করেছে, অন্তর্কোন্দল থেকেই এই হত্যাকাণ্ড। ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।
আরও পড়ুন:নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী পাশসহ উপদেষ্টা পরিষদে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সভায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন’র সংশোধনী পাশ হয়েছে। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ পার্সেন্টের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান তা বাতিল করা হয়েছে। পূর্বের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যেটা থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেতো, তা বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স করা হবে। এতে করে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হচ্ছে। এটিতে শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা পূর্বে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা দূর করতে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।
জনসাধারণের সুবিধার্থে ৩ এপ্রিল একদিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সকল জনগোষ্ঠীর সামাজিক দিবসে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণার বিধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ উপদেষ্টা পরিষদে।
ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন নামের এক কলেজছাত্রকে অপহরণ করেছিল একটি চক্র। তার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। তাদের চাওয়া মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পায়নি তার পরিবার।
এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুই অপহরণকারীকে বুধবার রাত তিনটার দিকে গ্রেপ্তার এবং মিলনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, দুজনকে গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত আরও একজনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জের মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মো. সেজান আলী (২৮), আরাজী পাইকপাড়া এলাকার মুরাদ(২৫) ও সালন্দর শাহী নগরের রত্না আক্তার ইভা (১৯)।
প্রাণ হারানো কলেজছাত্র মিলন হোসেন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁওয়ের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে।
পুলিশের ভাষ্য, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজছাত্র মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার সময় ভুক্তভোগীর পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা।
প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা চায়। পরের দিন দুপুরে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি পাঁচ লাখ দাবি করে। পরের দিন সেটি আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিন দিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সর্বশেষ ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র।
গত ৯ মার্চ রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেয় অপহৃত মিলনের বাবা পানজাব আলী। কিন্তু ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পায়নি পরিবারটি।
ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বুধবার রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ও তাদের দেখানো মতে আমরা স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে লাশ উদ্ধার করি। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা স্বীকার করেছে যে, মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেখানো মতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনগত পক্রিয়া শেষে আদালতে বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এর আগে আমরা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নিই, সেদিকে সতর্ক থাকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বিচারপ্রত্যাশী ছাত্র-জনতোকে ধৈর্য ধরে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে দোষীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহর। দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চয় নিহতের পরিবার, স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ জেলার বিভিন্ন মানুষ।
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজার নিরপরাধ মানুষদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মার্চ ফর প্যালেস্টাইন কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ছাত্র শোয়াইব হাসান কর্মসূচি সঞ্চালন করেন। এতে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বুকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে ইহুদিবাদী শক্তি। তারা আমেরিকার মদদ পেয়ে বারবার আইন লঙ্ঘন করে চুক্তি অমান্য করে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে।
‘আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে অনতিবিলম্বে এমন ন্যক্কারজনক হামলা বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বশক্তিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘জাস্টিস ফর প্যালেস্টাইন’, ‘নেতানিয়াহুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘নেতানিয়াহুর আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘অবৈধ ইসরায়েলের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনকে একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে অবৈধ ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী। তারা নির্বিচারে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের হত্যা করছে। আমরা এ-ও দেখতে পাচ্ছি, কীভাবে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিবাদীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, তোমরা যদি নিরপরাধ মানুষদের ওপর বর্বরোচিত হামলা বন্ধ না করো, তাহলে ২০০ কোটি মুসলমান তোমাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ছাত্র আলী জাকি শাহরিয়ার বলেন, ‘ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হাতে লাখো ফিলিস্তিনের রক্তের দাগ লেগে আছে। তাদের ইতিহাস বেইমানির ইতিহাস, তাদের ইতিহাস অবাধ্যতার ইতিহাস। তারা আল্লাহর সাথে বারবার বেইমানি, অবাধ্যতা করেছে।
‘জাতি হিসেবে তারা অকৃতজ্ঞ, অভিশপ্ত। অথচ তারা আজ সভ্যতার নীতিকথা শোনায়। এটা অত্যন্ত লজ্জার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মুসলমান। আমরা মরতে ভয় পাই না। আমাদের ইতিহাস সমৃদ্ধ ইতিহাস, ইহুদিবাদী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের মাটিতে আবারও আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুর রশিদ জিতু বলেন, ‘ফিলিস্তিনের নিরপরাধ জনগণ আজকে নিজ দেশে পরবাসীর মতো বসবাস করছেন। উদ্বাস্তু হয়ে বিশ্বের নানান প্রান্তে শরণার্থী শিবিরগুলোয় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা আজ নিজ ভূমি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন জায়নবাদী অপশক্তির কারণে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফসোস করে বলতে হয়, যারা সভ্যতার বুলি আওড়ায় তারা ফিলিস্তিনের বেলায় চুপ হয়ে যায়। আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যতদিন না ফিলিস্তিনের ওপর হামলা বন্ধ হবে, ততদিন প্রতিবাদ চলমান থাকবে।’
আরও পড়ুন:বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন তারেক রহমানের তৎকালীন এপিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু, কাজী সালিমুল হক কামাল, আহমেদ আকবর সোবহান, সাফিয়াত সোবহান, সাদাত সোবহান ও আবু সুফিয়ান।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালতের বিচারক বৃহস্পতিবার মো. আবু তাহের এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ও আমিনুল গনি টিটু বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করা হয়।
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদক। পরে ওই বছর ১৪ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাব্বির হত্যা মামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও শাহ আলমের মধ্যে বাবরের বেইলি রোডের সরকারি বাসায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শাহ আলমের কাছে ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর। ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে এ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারেক ও বাবরের সঙ্গে শাহ আলমের চুক্তি হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চুক্তি অনুসারে শাহ আলমের কাছ থেকে বাবর ২১ কোটি টাকা নেন। এ টাকার মধ্যে বাবরের নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ২০০৬ সালের ২০ আগস্ট হাওয়া ভবনে ১ কোটি টাকা তারেকের ব্যক্তিগত সহকারী অপুকে বুঝিয়ে দেন। বাবর ৫ কোটি টাকা আবু সুফিয়ানের মাধ্যমে নগদ গ্রহণ করে কাজী সালিমুল হক কামালের কাছে জমা রাখেন। বাকি ১৫ কোটি টাকা বাবরের নির্দেশে আবু সুফিয়ান প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সালিমুল হক কামালকে ২০টি চেকের মাধ্যমে দেন।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয় দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে অপসারণ করেছেন।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা ছয় মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে বিচারক পদ থেকে ১৮ মার্চ তারিখে অপসারণ করেছেন।
১৯৬৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া খিজির হায়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ৬ আগস্ট ঢাকা জেলা জজ কোর্টে এবং ২০০১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান খিজির হায়াত খান। এর দুই বছর পর স্থায়ী হন তিনি।
দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে প্রাথমিকভাবে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে ২০ অক্টোবর থেকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
ওই ১২ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতও ছিলেন। বিচারপতি খিজির হায়াত ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য