‘আমাদের ফ্যাক্টরিতে লাখখানেক কেজি চা এক সপ্তাহ ধরে পড়ে আছে। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পাতাগুলো নষ্ট হচ্ছে। আর দুই-এক দিন এভাবে চললে এই পাতা থেকে আর চা হবে না। হলেও গুণগত মান খুব খারাপ হবে।’
চলমান শ্রমিক ধর্মঘটে চা উৎপাদনের ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে নিউজবাংলাকে এমনটি বলছিলেন আকিজ গ্রুপের মালিকানাধীন মৌলভীবাজারের বাহাদুরপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন দেশের সব চা বাগানের শ্রমিকরা। এতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশের উৎপাদনশীল এই খাতে। ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে বেশির ভাগ বাগানের ফ্যাক্টরিতেই নষ্ট হচ্ছে তোলা পাতা। আবার বাগানের কচি পাতা বয়স্ক হয়ে পড়ছে। এতে দেশে উৎপাদন হ্রাসেরই শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২১ সালে দেশে রেকর্ড ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালে। সে বছর ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। তবে এবার তাতে ধস নামার শঙ্কা বাগান মালিক ও কর্মকর্তাদের। ধর্মঘটের কারণে বাগানগুলোতে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
চা বাগানের শ্রমিকরা বর্তমানে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। মজুরি বাড়িয়ে তা ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন তারা। প্রথমে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি মেনে না নেয়ায় গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে দেশের ১৬৬টি চা বাগানের উৎপাদন ও পাতা উত্তোলন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।
উত্তোলিত চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মঙ্গলবার কারখানা চালু করতে যান মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ধামাই চা বাগানের কর্মকর্তা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তা তালা দিয়ে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের মুক্ত করেন।
এই বাগানের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ কাজল মাহমুদ বলেন, ‘শ্রমিকদের আন্দোলনে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। কিন্তু ফ্যাক্টরিতে বাগানের অনেক পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই পাতা বিক্রি করে তাদের ও আমাদের মজুরি দেয়া হয়। শ্রমিকরা যেহেতু আপাতত কাজ করছে না, তাই আমরা সবাই মিলে ফ্যাক্টরি চালু করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা এসে আমাদের তালা মেরে দেয়।’
বৃষ্টির সময়কে চায়ের উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। ফলে এখন চায়ের ভরা মৌসুম। এই সময়ে ধর্মঘটের কারণে সব বাগানের কারখানায় নষ্ট হচ্ছে উত্তোলিত চা। প্রায় এক কোটি কেজি চা সব বাগানের ফ্যাক্টরিতে জমা পড়ে আছে বলে দাবি বাংলাদেশ চা সংসদের।
ধর্মঘটের কারণে ফ্যাক্টরির চা-পাতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার বিভিন্ন বাগানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের ডিনস্টন (খেজুরী ছড়া) চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক খালিদ হাসান রুমী মঙ্গলবার রাতে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে ৯৯২০০ কেজি চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়নি। এই পরিমাণ পাতা থেকে ২২ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হতো। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
১ লাখ ৫৩ হাজার কেজি চা পাতা নষ্ট হওয়ার অভিযোগ এনে একই থানায় জিডি করেছেন রাজঘাট চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাঈনুল এহছান।
ফিনলে চা কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন বাগানে ৩৫ কোটি টাকার চা-পাতা নষ্ট হয়েছে। এগুলো থেকে আর ভালো মানের চা হবে না।’
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকটি বাগানের পক্ষ থেকে কাঁচা চা-পাতা নষ্টের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা প্রতিটি কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার সত্যতা নিশ্চিত করব।’
কেবল ফ্যাক্টরির চা-পাতা নয়, বাগানের পাতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চায়ের জন্য মূলত কচি পাতাগুলো তোলা হয়। সব বাগানেই কচি পাতা বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে। এগুলো থেকে আর চা হবে না। এ ছাড়া বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলে গাছে আর কচি পাতা গজাবে না। ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনে ধস নামবে, অন্যদিকে চায়ের গুণগত মানও হ্রাস পাবে।’
শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে সব বাগান মিলিয়ে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রতি দুই বছর পর পর বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ ও শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে সম্মত হচ্ছে না।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে জানিয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মাত্র ১২০ টাকায় এই বাজারে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমরা না বাঁচলে বাগান মালিকরা উৎপাদন করবেন কিভাবে। তাই বাগান মালিক ও চা শিল্পের স্বার্থেই শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। তাদের ন্যূনতম বেঁচে থাকার মতো মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’
শ্রম দপ্তরের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে ধর্মঘটের কারণে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুরো চাশিল্পই ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে আমরা দুই দফা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ১৬ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আমরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৩ আগস্ট মালিক ও শ্রমিক পক্ষের নেতাদের নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসবেন। আশা করি, এতে একটা সমাধান হবে। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ওই বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য আমি শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন:শেরপুরে আকস্মিক বন্যায় গবাদি পশুর খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যার অজুহাতে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বানভাসিরা।
গবাদি পশু বাঁচাতে দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি করেছেন তারা।
১৯৮৮ সালের পর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছেন শেরপুরের লোকজন। হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নাজেহাল হয়ে পড়েছেন জেলার মানুষ। টানা চার দিনের বন্যায় ভেঙে পড়েছে জনজীবন।
গবাদি পশু নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছেন বানভাসিরা। বাড়িঘর ও গোয়ালঘরে পানি প্রবেশ করায় রাস্তার পাশে ও উঁচু স্থানে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নেন বন্যা কবলিতরা।
বন্যার পানিতে সবজি ক্ষেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা।
গাজীরখামারের করিম মিয়া বলেন, ‘এবার বন্যায় সব শেষ। ধান সব শেষ। খেড় (খড়) কই পামু পরে। আর সব তো ডুইবা আছে। ঘাসও নাই। কামাই, রোজগারও নাই। গরুর খাওয়া কিনমু ক্যামনে?’
বালুরঘাটের হারুন বলেন, ‘গরু-ছাগল নিয়া বিপদে পড়ছি। গরু রাস্তায় নিয়া রাখছি। রাতে পাহারা দিতাছি। গরুর খেড় সব ডুইবা গেছে।’
কলসপাড়ের সামসুল বলেন, ‘বন্যায় গরু-ছাগলের জন্য খাওয়া কেউ দিলে এল্লা উপকার হইত। টাকা-পয়সাও নাই যে খাওয়া কিনমু। ওদেরও পেট আছে। অনেক কষ্ট করতাছে গরু-ছাগল গুইল্লা।’
কলসপাড়ের রফিকুল বলেন, ‘আমরা বন্যার এত দিনেও কোনো সহায়তা পাইনি। আমাদের গবাদি পশু নিয়ে খুব বিপদে আছি। নিজেরা খাবার পাইতাছি না। আবার গরু-ছাগলের খাওয়ার ব্যবস্থা নাই।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আবদুর রউফ জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামারিদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া খাদ্য সংকট নিরসনে দুর্গত এলাকায় ৩ টন গোখাদ্য বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, এ বন্যায় জেলার ৬৬ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গত এলাকাগুলোতে অনেক প্রাণী খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের এবারের বন্যায় পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন ঘের থেকে ৭১ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
এমন বাস্তবতায় চাষিরা বলছেন, ঠিক সময়ে বন্যার পূর্বাভাস পেলে ক্ষতি কমানো যেত।
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এ উন্নতি হয়।
জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুরের ৫ উপজেলায় পানিবন্দির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারে।
জেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে। পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে গত চার দিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়।
ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বন্যায় বিপর্যস্ত হয় শেরপুর। তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি, তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৎস্য খাত।
মাছচাষি রাকিবুল মিয়া বলেন, ‘বহু মাছ চলে গেছে। দুই-আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সব তলিয়ে গেছে। যত প্রজেক্ট আছে এখানে, সব মাছ ভেসে চলে গেছে।’
আরেক মাছচাষি খাইরুল বলেন, ‘বন্যার পূর্বাভাস না থাকায় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারি নাই। এ জন্যই ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। আমাদের প্রজেক্টের মাছ বাইরে চলে গেছে। আর এদিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মেরে বিক্রি করতাছে।
‘আর মানুষ কম দামে পেয়ে আনন্দ করে কিনতাছে, কিন্তু আমরা তো বুঝতাছি কেমন ক্ষতি হইছে আমাদের।’
মাছচাষি নাইম বলেন, ‘আগে যদি আমরা জানতাম বা কেউ যদি জানাত, তাহলে আমাদের এত ক্ষতি হতো না। আগে জানলে তো আর এই অবস্থায় থাকত না।
‘সব জাল দিয়ে ঘিরে রাখতাম। আমার ৫ লাখ টাকার মাছ ছিল। সব শেষ।’
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, এ বছর শেরপুরে ৩৩ হাজার ১৭৯টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন ১৮ হাজার ১৩৫ জন চাষি। আর প্রতি বছর এ জেলায় উৎপাদন হয় গড়ে ৩৫ হাজার ২৪০ টন মাছ। বন্যায় ভেসে যায় সাত হাজার ৩০০ পুকুরের ৭১ কোটি টাকার মাছ।
এবারই স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে এ অঞ্চলের মাছচাষিরা।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
‘তারা যদি সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে আমাদের কোনো সহযোগিতা দেয়, তাহলে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ।
বৃষ্টি না হওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে।
জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে।
পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে গত চার দিনে বন্যার পানিতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সোমবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল।
কমেনি দুর্ভোগ
জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জেলার অনেক দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট ও শৌচাগারের সমস্যা তো রয়েছেই।
ফসলহানি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি
কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া এক হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ছয় হাজারেরও বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে সব হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্যার কারণে অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ বন্ধ রয়েছে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪১টি। এর মধ্যে বন্যার শিকার হয়েছে ৩০১টি। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
‘যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলের ভেতরে পানি না উঠলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।’
জেলায় মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি, কলেজসহ ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।
শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেজওয়ান বলেন, ‘বন্যার জন্য আমাদের শেরপুর জেলায় প্রায় ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আমরা প্রতিনিয়ত সেগুলোর তথ্য রাখছি। পানি কমে গেলে সেগুলো খুলে দেয়া হবে।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। আমাদের এ কাজে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে আমরা এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
ডিসি জানান, এরই মধ্যে ১০ হাজারের মতো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়। আরও ২৫ হাজারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যে পাঁচ হাজার পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে জেলায় বন্যায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের ফসলের মাঠ থেকে শনিবার সহোদর দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন।
সর্বশেষ প্রাণ হারানো দুজন হলেন হাতেম আলী (৩০) ও তার ভাই আলমগীর হোসেন (১৮)। তারা অভয়পুর গ্রামের প্রয়াত বাছির উদ্দিনের ছেলে।
এর আগে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ পাঁচজন।
প্রাণ হারানো লোকজনের স্বজনরা জানান, শুক্রবার চেল্লাখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন সহোদর দুই ভাই। এরপর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। কুতুবাকুড়া গ্রামের দুইজন কৃষক শনিবার বিকেলে ধানক্ষেতে তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্বজনরা গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন জানান, পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে প্লাবিত হয় জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী ১৬টি গ্রাম।
নতুন করে শনিবার রাতে নকলা ও সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর শুক্রাবাদের একটি বাসায় জমে থাকা গ্যাসের আগুনে স্বামী মোহাম্মদ টোটনের পর প্রাণ হারিয়েছেন তার স্ত্রী নিপা আক্তার।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বুধবার রাত একটার দিকে মৃত্যু হয় ৩০ বছর বয়সী এ নারীর।
শুক্রাবাদের বাসাটিতে ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হন পরিবারটির তিন সদস্য, যাদের ভর্তি করা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
নিপার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে দুজনে দাঁড়িয়েছে।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তরিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার জানান, শুক্রাবাদ থেকে একই পরিবারের তিন দগ্ধকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে নিপার মৃত্যু হয়, যার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, এর আগে হাসপাতালটিতে নিপার স্বামী টোটনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাদের শিশু সন্তান ভর্তি রয়েছে, যার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
হাসপাতালে নিপার ভাই মানিক মিয়া জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার কাচারিকান্দি গ্রামে। তার ভগ্নিপতি পরিবার নিয়ে শুক্রবাদের বাসাটিতে ভাড়া থাকতেন।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় টানা ৫২ ঘণ্টা পর নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনরত একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
মহাসড়ক থেকে বুধবার দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সরে গেলে দীর্ঘ সময় পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বার্ডস গার্মেন্টসের কয়েক শত শ্রমিক।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে সড়কে অবস্থান করে তারা আন্দোলন করেছেন, কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের সাথে কথা বলেনি।
‘আজ দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়, বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে শ্রমিকরা।’
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লে-অফ করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দিন ধার্য করা ছিল, কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশও প্রদান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সব শ্রমিক পাওনাদি পাওয়ার আশায় সকালে কারখানায় গেলে নোটিশে আরও তিন মাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পান শ্রমিকরা। ওই সময় উত্তেজিত হয়ে সব শ্রমিক নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার রোড এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
অবরোধের টানা ৫৬ ঘণ্টা পর মালিককে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বার্ডস গ্রুপের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ারকে আটক করা হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর দুপুর একটার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। পরে সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়।’
আরও পড়ুন:হামলা মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহান সাদিকের আদালতে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, সকালে এম এ মান্নানকে আদালতে হাজির করলে আসামিপক্ষের হয়ে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম ও নুর আলম তার জামিন প্রার্থনা করেন। অন্যথায় অসুস্থ বিবেচনায় তাকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন করেন তারা।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুক আলম বলেন, ‘আমরা তখন আদালতকে বলেছি, এটা দ্রুত বিচার আইনের মামলা। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকও অনুপস্থিত। শুনেছি পুলিশও রিমান্ড চাইবে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে সকল পক্ষের শুনানি হতে পারে।
‘বিচারক ফারহান সাদিক পরে এম এ মান্নানকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি হবে বলে জানান।’
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের বাসভবন থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্যের দল তাকে আটক করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে আসে।
এসপি আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, শুক্রবার এম এ মান্নানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ঘটনাসহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় তার যুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামের জহুর আলীর ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর ৯৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট এক নম্বর ও এম এ মান্নানকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য