রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট কারের ওপর নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে বক্স গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় ক্রেনের চালক ও সহকারী এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তাদের ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার রাত ১০টায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কার। ক্রেনে তোলার সময় ভায়াডাক্টের অংশটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলন্ত গাড়িটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুই শিশুসহ পাঁচজন। এত আহত হন আরও দুজন।
বিকেলে এমন নির্মাণকাজ করার সময় সেখানে নেয়া হয়নি কোনো ধরনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা। ব্যস্ত সড়কে যান চলাচলের মধ্যেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছিল বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন ক্রেনের চালক, সহকারীসহ সেখানে নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীরা।
ক্রেনের চালকসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে সোমবার রাতেই মামলা হয়।
জুমার নামাজের আগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে বর্তমান খতিব ওয়ালিউর রহমান ও সাবেক খতিব রুহুল আমিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খতিব ওয়ালিউর রহমান মুসল্লিদের উদ্দেশে খুতবা (বক্তব্য) দেয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজ শুরুর আগে খতিব ওয়ালিউর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন তার অনুসারীদের নিয়ে বায়তুল মুকাররম মসজিদে প্রবেশ করে খতিবের মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে মিম্বরের কাছে বসে থাকা মুসল্লি ও খাদেমের ওপর হামলা চালান। হামলা-সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।
নামাজ পড়তে আসা আবদুল হামিদ বলেন, ‘সাবেক এই ইমাম যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বসে সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে লোক এনে হামলা চালান। এটা সত্যিই লজ্জাজনক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি বড় কোনো ঘটনা নয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
তিনি জানান, বায়তুল মুকাররম উত্তর গেট ও পল্টন মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ইউএনবির প্রতিবেদক।
‘ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার’ উল্লেখ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে- দল-মত নির্বিশেষে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’
শুক্রবার বিকেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্গাপূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে- এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসেই আপনাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসব উপলক্ষে আপনাদেরকে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে পূজা উদযাপন করুন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র ছিলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী- প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো স্বচ্ছন্দে বিনাবাধায় উপভোগ করবেন এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীষ্টান- মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা ছিলো না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয়- আমরা বাংলাদেশী।’
দেশনায়ক তারেক রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে যা হয়েছে আপনারা তা দেখেছেন। সারাদেশে আইনের শাসন ছিলো না বলেই প্রধান বিচারপতি হয়েও এস কে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিলো।
‘পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়না ঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের ভোটের অধিকার একটি কার্যকরী শক্তিশালী অস্ত্র। যতদিন পর্যন্ত মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান অর্থাৎ দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করা। একটা অবিশ্বাস্য বিপ্লব ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে একটা ভয়াবহ দানবকে হটাতে হয়েছে এবং আমরা বিজয় অর্জন করেছি।
‘এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুঃখজনকভাবে আপনাদেরকে এর ভেতরে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। ইন্ডিয়ার জার্নালিস্ট এসেছিলেন দলে দলে। সবাইকে একটা কথা আমরা বলেছি যে, এই পরিবর্তনের ফলে যেটুকু ঘটেছে সেটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক, সেটা কোনো সাম্প্রদায়িক নয়।
‘আজকে আবার একই চক্রান্ত শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। দেখুন, এগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবেন না। আজকে সেখানে একইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।
‘আসুন আমরা ভবিষ্যতে যেন একটি রেইনবো নেশন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে পারি তারেক রহমানের নেতৃত্বে সেই পথে আমরা এগিয়ে যাই।’
বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দে’র যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ফেনীর কামাক্ষা চন্দ, খাগড়াছড়ির অজয় সেনগুপ্ত, সাভারের উত্তম ঘোষ, খুলনার সুজনা জলি, বরিশালের সঞ্জয় গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেনগুপ্ত, গৌড় সিনহা প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে ইসকনের চারু চন্দ্র্র দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, গুলশান পূজা কমিটির জেএল ভৌমিক, পান্না লাল দত্ত, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্যপরিষদের নির্মল রোজারিও প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, আবদুল বারী ড্যানি, অর্পণা রায়, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, সুশীল বড়ুয়া, জন গোমেজ, মিল্টন বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পার্বত্য চট্টগ্রামে বুধবার এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) খাগড়াছড়ি ও আজ (শুক্রবার) রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ প্রদান করে ওই বার্তায় বলা হয়, আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
বার্তায় বলা হয়, এ লক্ষ্যে সরকার খুব শিগগির একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আগামীকাল শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পরিদর্শন করবে। প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী থাকবেন।
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে পাহাড়ি ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপায় এসে বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকানে হামলা চালান। খবর পেয়ে বাঙালিরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ওই সময় আহত হন উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ টহল টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর (বশেমুরবিপ্রবিপি) ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধূমপানসহ সব ধরনের মাদক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের চতুর্থ সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই সভা হয়।
সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি ছাড়াও সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সব ধরনের মাদক বহন, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট সদস্যগণ একমত হয়েছেন।’
উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ছাড়া সিন্ডিকেটের চতুর্থ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগের পাঠ্যসূচি অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
এর আগে সিন্ডিকেট সভার শুরুতে চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে যেসব ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। এ ছাড়াও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
গতকাল বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া বশেমুরবিপ্রবিপির চতুর্থ সিন্ডিকেট সভা চলে প্রায় পাঁচটা পর্যন্ত।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১০ সদস্যের মধ্যে ৯ জন অংশ নেন।
আরও পড়ুন:আগের দিনে সহিংসতায় প্রাণহানির পর শুক্রবার খাগড়াছড়ি সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘যেহেতু সাম্প্রতিক ১৯.০৯.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে খাগড়াছড়ি সদর থানা এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং তৎপ্রেক্ষিতে অফিসার ইনচার্জ, খাগড়াছড়ি সদর থানা হতে প্রাপ্ত অধিযাজনপত্রে উক্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে উল্লেখ থাকায়, সূত্র: অফিসার ইনচার্জ, খাগড়াছড়ি সদর মডেল খানা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা-এর স্মারক নম্বর ৪০৫৬, তারিখ: ২০.০৯.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।
‘যেহেতু উল্লিখিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কতিপয় ব্যক্তি একত্রে মিলিত হয়ে উক্ত স্থানে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়, সেহেতু আমি সুজন চন্দ্র রায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অত্র উপজেলার পৌরসভা (সদর) এলাকায় অদ্য ২০.০৯.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ১৪.০০ ঘটিকা হতে রাত ২১.০০ ঘটিকা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারা মতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলাম।’
আদেশে আরও বলা হয়, ‘এ আদেশ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।’
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়িদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হয।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একজন বলেন, ‘আমরা মানবেন্দ্র নারায়ণ লার্মার যোগ্য উত্তরসূরি। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার রক্ত কোনো আপস মানে না।
‘সেই রক্তের শপথ নিয়ে আমরা বলতে চাই, জুম্ম জনগণের ওপর যত মানবাধিকার লঙ্ঘন সংগঠিত হয়েছে, তার সবগুলোর বিচার আমরা নিয়েই ছাড়ব।’
প্রায় দুই ঘণ্টা সমাবেশ শেষে জুম্ম ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে যান। তারা প্রায় ২০ মিনিটের মতো মোড়টি অবরোধ করে রাখেন।
একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য