বিভিন্ন সময়ে তৈরি করেছেন নানা ধরনের মাস্টার চাবি। সেই চাবি দিয়ে পুরান ঢাকাকে টার্গেট করে কয়েক বছরে চুরি করেছেন পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল। চোরাই মোটরসাইকেল কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকার পাশের বিভিন্ন এলাকায় কম দামে বিক্রি করতেন চোর চক্র।
সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
রাজধানীর শনির আখড়া ও ধলপুর এলাকায় মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা হলেন- চক্রের হোতা নূর মোহাম্মদ, অন্যতম সহযোগী রবিন, সজল, মনির ও আকাশ।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রথমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, মোটরসাইকেল চুরির জন্য তাদের টার্গেটেড এরিয়া ছিল পুরান ঢাকা। ওই এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করতেন তারা। গত কয়েক বছরে এই চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।
দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় মোটরসাইকেল চুরি
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানায়, নূর মোহাম্মদ মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতেন। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চা দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। দুইজন মিলে পরিকল্পনা করেন, কীভাবে দ্রুত সময়ে টাকাওয়ালা হওয়া যায়। নূর মোহাম্দ রবিনকে জানান, তার কাছে করাত ধার দেয়ার রেত আছে, যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেত দিয়ে ঘঁষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলক চুরি করেন। এর পর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন বলে জানায় ডিবি।
ডিবির প্রধান হারুন বলেন, ‘চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য করে নেন। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে বাইক চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট হিসেবে ব্যবহার করে।
‘অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করেন। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেলগুলোকে ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করতেন।’
প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যরা ভাগ করে নিতেন।
আসামিদের বরাতে ডিবি আরও জানায়, তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন। এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।
গোয়েন্দা প্রধান জানান, বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার আসামি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:ঋণ জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, পাচার, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনসহ নানা অপরাধের অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলা কাঁধে নিয়ে বছরের পর বছর বহালতবিয়তে থেকে গেছেন ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তার পরিবাবের সদস্যরা।
দেশের আর্থিক খাতে অনিয়মের শিরোমণি এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী বিধি ভেঙে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকার দ্বিতীয় নামটি ছিল এই বিতর্কিত ব্যবসায়ীর। ২০২১ সালের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকায়ও দ্বিতীয় নামটি তার।
অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের পৃথক তিন মামলায় ৪৮ বছরের কারাদণ্ড কাঁধে নিয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী।
অবশেষে তার ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ বুধবার ওবায়দুল করিমসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আর্থিক খাতে নানামুখী অপকর্মে সিদ্ধহস্ত ওবায়দুল করিম সাজা থেকে বাঁচতে মামলার নথি গায়েব ও শুনানি পেছানোর কূটকৌশলে পার করেছেন ১৬ বছর। সাজা ঘোষণার তিনটিসহ তার বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা হয়। ২০০৭ সালে করা এসব মামলার বিচারকাজে এখন স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওবায়দুল করিম ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। সে সময় যৌথ বাহিনীর গঠিত দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তবে দুর্নীতির মামলা ও সাজা থেকে রক্ষা পাননি। তার অনুপস্থিতিতে বিশেষ আদালতে রায় ঘোষণা হয়। একটিতে যাবজ্জীবনসহ তিনটি মামলায় তার অন্তত ৪৮ বছর কারাদণ্ড হয়। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদণ্ড দেওয়া হয় ও আত্মসাতের সমপরিমাণ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
২ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং পাচারের সমপরিমাণ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। অবৈধ উপায়ে ৫০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
অবৈধ উপায়ে ৫২ কোটি ৯২ লাখ টাকা অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবর রমনা থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক আবদুল করিম। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৫ জুন এক রায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর এবং তথ্য গোপনের দায়ে ৩ বছরসহ মোট ১৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক খন্দকার কামাল উজ-জামান। রায়ে ৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। রায়ে বলা হয়, ওবায়দুল করিম পলাতক থাকায় তিনি যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন বা গ্রেপ্তার হবেন, সে দিন থেকে সাজার মেয়াদ শুরু হবে। কিন্তু ওবায়দুল করিম রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট শুনানি শেষে রায় স্থগিত করেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ওবায়দুল করিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ মামলায় বিচারিক আদালতে মামলার নথি খুঁজে না পাওয়ায় বিচারকাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
এর মধ্যে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকায় উঠে আসে ওবায়দুল করিমের নাম। সে সময় তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা ঠুকেই বাঁচার চেষ্টা করেন তিনি।
বিধি ভেঙে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ
বিধি লঙ্ঘন করে ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক অগ্রণী, জনতা ও রূপালী। এ ক্ষেত্রে অন্তত দুটি নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং একটিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন শিথিল করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক তিনটির প্রস্তাবিত ওই ঋণের অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি।
সিন্ডিকেট ফাইন্যান্সিং বা অর্থায়নের মাধ্যমে সম্প্রতি ওই ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সমস্যা জর্জরিত জনতা ব্যাংক এ ঋণের সিংহভাগ অর্থাৎ ৫ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দিয়েছে।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ ঋণ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ঋণটি বিতরণের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে, কিন্তু ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে এ ঋণ বিতরণে দেরি হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওবায়দুল করিমের মালিকানাধীন ওরিয়ন গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অন্তত হাজার কোটি টাকা।
ঋণের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম একটি ব্যাংক থেকে ১৬৬ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৫০৮ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু কোম্পানি তো দূরের কথা, টিআইএন নম্বরেরও খোঁজ মেলেনি। বেলহাসা একম জেভি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম, এমডি সালমান ওবায়দুল করিম ও স্পন্সর পরিচালক মাজেদ আহম্মেদ সাঈফের নামে ঋণের পরিমাণ ৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৮ টাকা। ওবায়দুল করিম আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নামে ৫১ কোটি ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৮ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৭ টাকা পরিশোধ করেননি। এমনকি এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বা অংশীদারত্বের কোনো বৈধ কাগজ পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি করার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে বারবার সময় নিয়েও ঋণ পরিশোধ করেনি ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখাতে ব্যাংকটিকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুসারে, সোনালী ব্যাংককে ২২ আগস্টের মধ্যে ঋণের যথাযথ শ্রেণিবিভাগ করে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এতে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ১০৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। কোম্পানিটির বকেয়া ঋণ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খারাপ ঋণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ছিল। তখন পর্যন্ত কোম্পানিটি চারটি কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি।
জানা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির মূল অর্থের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা এবং ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা সুদ বাবদ বকেয়া ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতির ওপর ভিত্তি করে এতদিন এই ঋণ খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংককে দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে কিস্তি বাকি থাকায় কোম্পানিটির ঋণ খেলাপি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে বলা হয়েছে।
ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে প্রায় দুই দশক আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করে ওরিয়ন গ্রুপ। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে ৪০ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার অপতৎপরতাও চালায় গ্রুপটি। সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ ভাগিয়েও নেয়। গত জুন শেষে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গ্রুপটির নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। যার বড় একটি অংশই নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানের বাইরে গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিমের গ্যারান্টার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণও হাজার কোটি টাকার বেশি। যার একটা অংশ খেলাপির হলেও প্রভাব খাটিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে নেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের মেয়াদও বারবার বাড়ানো হয়।
সম্প্রতি একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপসহ তিনটি গ্রুপের পকেটে। এতে বলা হয়, ব্যাংকটি থেকে বেক্সিমকো, এস আলম এবং ওরিয়ন গ্রুপের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখার ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণের বড় অংশ রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপের পকেটে।
এ ছাড়া গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষের দিকে (৬ মে) রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকে ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার আরেকটি ঋণ প্রস্তাব করা হয় গ্রুপটির ওরিয়ন রিনিউয়েবলস মুন্সীগঞ্জ লিমিটেডের নামে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের জামানত বা সিকিউরিটি মর্টগেজ হিসেবে যে সম্পদ দেখানো হয়েছে তা অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। সে সময় জামানতের সম্পদমূল্য ৫৪০ কোটি টাকা দেখানো হলেও তা সর্বোচ্চ ১৮০ কোটি টাকা হবে। এভাবে জামানতে ভুল তথ্য দিয়েও ঋণ ভাগিয়ে নেওয়ার আশ্রয় নিয়েছে গ্রুপটি।
গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নেওয়া ব্যবসায়ী গ্রুপ ওরিয়নের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ৮২০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর বাইরে ননফান্ডেড ঋণ রয়েছে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির মোট ১২৪টি কোম্পানির মধ্যে সচল থাকা ২২টির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গ্রুপের মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিজের ব্যক্তিগত গ্যারান্টার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১২৯ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকার ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে দেয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপি তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে নেন তিনি।
২০২০ সালে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভেঙে টাকা উত্তোলনের অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ তোলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ভেঙে খাওয়ার টার্গেটে নামে গ্রুপটি। এরপর তারা হাজার হাজার কোটি টাকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই থেকে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায়। কোম্পানিটি ঋণ হিসাবে ৯০৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার নেওয়ার আবেদনও করে। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি ব্যাংক থেকে একসঙ্গে এত টাকা ঋণ পাওয়ার নজির বাংলাদেশে নেই।
গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ২০০৭ সালে ব্যাংক থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের এক মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বেশ আলোচনায় আসে। তবে তিনি সেই মামলার নথি আদালত থেকে গায়েব করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। নথি হারিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া থমকে যায়। ফলে অন্যতম আসামি ওবায়দুল করিমসহ দোষীরা বহাল তবিয়তে থেকে যান। রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ বছরে মামলাটি নিয়ে দায়িত্বশীলদের কোনো নজরদারিও নেই।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ না করেই ২০০৮ সালে ওই রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রুল শুনানি শেষে ওই বছরই বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আসামি ওয়াবদুল করিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
নিয়মানুসারে মামলার মূল নথিটি উচ্চ আদালত থেকে বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর সেই নথিপত্র গ্রহণ করেন বিচারিক আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এরপর থেকে এ মামলার কার্যক্রম আর অগ্রসর হয়নি। মামলার মূল নথি খুঁজে না পাওয়ায় বর্তমানে ‘মামলা ও আসামিদের সর্বশেষ অবস্থা’ সম্পর্কে কেউই বলতে পারছেন না।
ওবায়দুল করিম পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
আর্থিক খাতে অনিয়মের শিরোমণি এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ওবায়দুল করিমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানসহ ছয়জন ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে। সন্ধ্যায় বিএফআইইউর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়, হিসাব জব্দ করা ব্যক্তিদের নিজস্ব ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবের মাধ্যমে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না তারা। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে। লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। এতে ওবায়দুল করিম ও তার স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম, মেহেদি হাসান ও মেয়ে জারিন করিমের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেজাউল করিমের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও দেওয়া আছে।
এ ছাড়া চিঠিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওপরে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য (পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী, পুত্র/কন্যা ও অন্যান্য) এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাবের কেওয়াইসি, হিসাব খোলার ফরম ও শুরু থেকে হালনাগাদ হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আর্থিক অনিয়মের বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওরিয়ন গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধার ওবায়দুল করিমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানসহ ছয়জন ও তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বুধবার দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
একই দিন সন্ধ্যায় বিএফআইইউ’র সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্যাংক হিসাব জব্দ করা সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। লেনদেন স্থগিত করার এই সময়সীমা প্রয়োজনে বাড়ানো হবে।
বিএফআইইউ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া চিঠিতে ওবায়দুল করিম ও তার স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম ও মেহেদি হাসান এবং মেয়ে জারিন করিমের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেয়া হয়েছে। এ ছড়া রেজাউল করিমের নামসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও জানিয়েছে বিএএফআইইউ।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো হিসাব স্থগিত করা হলে হিসাব-সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন- হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে হবে।
আরও পড়ুন:অবৈধ ও প্রতারণামূলক নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগ এনে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), এসব কমিশনের কমিশনারবৃন্দ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে। আর এসব নির্বাচনে ইন্ধনদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরকেও এতে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরিফুল আলমের আদালতে আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম।
দায়িত্ব পালনকালে অভিযুক্তরা সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ্গ এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন করে দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ করেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাদী অভিযোগে বলেন, গত তিন জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলসহ অনেক জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ ছিল না। সাধারণ মানুষ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। যারা কমিশনে ছিলেন তাদের ব্যর্থতার কারণে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাচনি মাঠে একপেশে আচরণ করেছে।
বিপুল টাকা ব্যয়ে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তাতে সংবিধানের খেলাপ করেছেন নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসব কারণে রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণা মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- ২০১৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. জাবেদ আলী, মো. আবদুল মোবারক ও মো. শাহনেওয়াজ; ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ; ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিসুর রহমান ও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
এই তিন নির্বাচনের নির্দেশদাতা, ইন্ধনদাতা ও ভুয়া সংসদের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করার কথা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদালত আমাদের আবেদনটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।’
আরও পড়ুন:রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে ৮৩ মিলিয়ন (আট কোটি ৩০ লাখ) ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের নামে ১৭টি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন ১৭টি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে জনতা ব্যাংক থেকে ৯৩টি এলসি নিয়ে প্রায় ৮৩ মিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা) পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পণ্য রপ্তানির চার মাসের মধ্যে দেশে রপ্তানিমূল্য আসতে হয়, তবে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও রপ্তানিমূল্য বাংলাদেশে আসেনি, যা বিদেশে অর্থ পাচারের প্রাথমিক সত্যতার প্রমাণ দেয়।
ওই ১৭টি প্রতিষ্ঠান হলো অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, পিংক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবান ফ্যাশনস লিমিটেড ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।
বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও এ এস এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানাধীন আরআর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের (এফজেডই) সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ও সৌদি আরবের শাখায় রপ্তানি করা হয়।
এ ছাড়াও জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশেও পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশে না এনে তারা বিদেশে পাচার করেছেন বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।
সিআইডি জানায়, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের জন্যে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানি করে ইচ্ছাকৃতভাবে রপ্তানিমূল্য দেশে না এনে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) এর (১৪) ও (২৬) ধারায় অপরাধ করেছেন অভিযুক্তরা, যা একই আইনের ৪(২)/৪(৪) ধারা অনুযায়ী দণ্ডণীয় অপরাধ।
সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীরা ব্যক্তিগত প্রভাব ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করেছেন—অনুসন্ধানে এমন তথ্য প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ ডিএমপির মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা করে।
এ ছাড়াও সালমান এফ রহমান ও বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করছে সিআইডি।
আরও পড়ুন:যেসব পুলিশ সদস্য এখন পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি তাদের আর যোগ দিতে দেয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বুধবার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহীদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনও কাজে যোগ দেয়নি, এমন পুলিশের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা তাদের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করছি। আপনারাও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানাতে পারেন।’
যারা কাজে যোগদান করেননি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছেন বলেই হয়তো তারা লুকিয়ে আছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে এখনও অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
গত ১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগাযোগ না করে অনুপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনস্বার্থেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে। জনগণ এর সুফল পাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ওই সময় তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট, উপমহাপরিচালক, বাহিনীর পরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার পতনের শহীদ সব ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করা হয়।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ আজ নবজাগরণে উজ্জীবিত। বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের হতে পারেনি বলেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন:মানুষ যাতে নিরাপদে চলাচল করতে করে, সে জন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
সচিবালয়ে বুধবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
সচিব বলেন, ‘মানুষ যাতে আরও জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, নিরাপদ বোধ করে, মানুষের মধ্যে যাতে আস্থা থাকে, এ জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব বাহিনী একই সঙ্গে একই ছাতার নিচে কাজ করছে, এই মেসেজটার জন্যই এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করেছে বিস্তৃত পর্যায়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। তারা মনে করেছে, এটা (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া) হলে পারপাস অব দ্য গভর্নমেন্ট সিকিউর দ্য সিটিজেন (সরকারের উদ্দেশ্যে জনগণকে নিরাপদ করা)। উই আর সারভিং ফর দ্য স্টেট (আমরা দেশের সেবা করছি)।
‘এই মুহূর্তে মনে হয়েছে এটা দরকার। টার্গেট (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়ার সময়) বলে দেয়া হয়েছে মাত্র ৬০ দিন।’
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে এ দায়িত্ব দেয়ায় কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘এটা কোনো ক্যাডারের ক্ষমতা না, এটা রাষ্ট্রের ক্ষমতা। কোনো দ্বন্দ্ব হবে না। এক রাষ্ট্র, এক জনগণ, এক সরকার।
‘জনস্বার্থে আপনি কাজ করেন, আমি কাজ করি। এটা (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া) ভালো ফল দেবে।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
‘দ্য কোড অফ ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এ ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারা দেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন:গাজীপুর থেকে চুরি হওয়া ১ হাজার ৯টি কার্টনভর্তি ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্টের একটি চালান উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানা।
চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তিনটি কাভার্ড ভ্যানবোঝাই পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় মোশাররফ (২৪), মো. আজাদ (৩৬) ও মো. গণি (২৯) নামের তিন ব্যক্তিকে, যারা কাভার্ড ভ্যানগুলোর চালক।
সিএমপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে জানানো হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার সময় গাজীপুরের ট্রপিক্যাল নিটেক্স বিডি লিমিটেডের ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্ট একটি সংঘবদ্ধ চক্র চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এসব পণ্য চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে আতুরার ডিপোর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ জানতে পারে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি চৌকস টিম সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালায়।
পুলিশ আরও জানায়, অভিযানের একপর্যায়ে কাভার্ড ভ্যানগুলো আতুরার ডিপো চলে যাওয়ার পথে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়ে। আটকের স্থানটি পাঁচলাইশ থানাধীন হওয়ায় জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আটককৃত চোরাই গার্মেন্টস পণ্যবোঝাই কাভার্ড ভ্যানগুলো এবং আটক তিনজনকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য