রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সাজেকে একটি কলাবোঝাই জিপ উল্টে দুজন মারা গেছেন।
সাজেকের মাচালং বাজার থেকে বাঘইহাট যাওয়ার সময় নাইল্লাছড়ি এলাকায় বুধবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন ৪৫ বছর বয়সী কলা ব্যবসায়ী ইলিয়াছ হোসেন ও ৪০ বছর বয়সী অনন্ত ত্রিপুরা। অনন্ত গাড়িতে কলা তোলা আর নামানোর কাজ করতেন।
ইলিয়াছের বাড়ি উপজেলার বঙ্গতলী ইউনিয়নের করেঙ্গাতলী ও অনন্তের বাড়ি সাজেকের মাচালং এলাকায়।
সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হক নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কলা বোঝাই করা একটি জিপ উল্টে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি বাঘাইছড়ি উপজেলায়। তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, ‘সাজেকের নাইল্লাছড়িতে কলা বোঝাই করা একটি জিপ উল্টে দুজন নিহত হয়েছেন।’
সংঘাতপূর্ণ মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়ছে টেকনাফ স্থলবন্দরে। এ অবস্থায় স্থলবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি স্থলবন্দরে এসে পড়ে। এতে স্থলবন্দরের অফিস ভবনের জানালা ও বন্দরে অবস্থান করা ট্রাকের কাচ ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় স্থলবন্দরে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থলবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক মো. নাজির বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে মালামাল নিয়ে একটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে পৌঁছায়। এই ট্রলার থেকে মালামাল খালাসের সময় মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়ে। এতে শ্রমিকরা ভয়ে পালিয়ে যান। এখন বন্দরজুড়ে আতঙ্ক।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে পর পর তিনটি গুলি এসে পড়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে। একটি গুলি স্থলবন্দরের অফিসে এসে পড়লে অফিসের কাচ ভেঙে যায়। দ্বিতীয় গুলি এসে পড়ে স্থলবন্দরের মালামাল বহনকারী ট্রাকে। অপরটি নারিকেল গাছে এসে লাগে।
টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি গুলি আমাদের অফিসে এসে পড়ে। এ ঘটনায় বন্দরের শ্রমিকরা কাজ না করে চলে যান। ফলে মিয়ানমার থেকে আসা ২৪ হাজার ব্যাগের একটি বাণিজ্যিক ট্রলারের মালামাল খালাস বন্ধ রয়েছে।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে তিনটি গুলি এসে পড়েছে। তবে কেউ হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কারা গুলি করেছে সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে দুটি গুলি এসে টেকনাফ বন্দরে পড়ে। গুলিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।’
স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের ওপারে তোতারদিয়া দ্বীপে কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরসহ সীমান্ত এলাকায় গুলি এসে পড়ছে।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ‘আমানত’ আখ্যা দিয়ে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর বিএনপির আয়োজনে বুধবার শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন। এ স্বাধীনতা ততক্ষণ থাকবে, যতক্ষণ আমরা তা ধরে রাখতে পারব। আমাদের দেশে সনাতন ধর্মালম্বীসহ সকলে মিলেমিশে বসবাস করব।’
তিনি বলেন, ‘তারা (সংখ্যালঘু) আমাদের আমানত। সামনে দুর্গাপূজা আসছে। তাদের জানমাল নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। কারণ তারা আমাদের আমানত।
‘আমানতের খেয়ানত যারা করে, তারা মোমিন না। তাদের যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলনে খুনি হাসিনা হাজার হাজার মানুষ খুন করেছে; বিএনপি নেতা, ছাত্র-জনতাকে নির্যাতন করেছে, নির্যাতনের আয়নাঘর বানিয়েছে।
‘মনে রাখবেন, সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তিনি যখন যাকে চান আমির বানান। আবার যখন যাকে চান ফকির বানান।’
শেখ হাসিনার পতনের দিন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের ৪ তারিখে চিন্তাও করতে পারিনি ৫ তারিখে রাস্তায় এত মানুষ নেমে আসবে আর হাসিনার পতন ঘটাবে। সব শেষে জনতার ভয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে।’
নেতা-কর্মীদের অন্যায় না করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কারও ওপর অন্যায়, নির্যাতন করবেন না। নয় তো আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি হবে। আপনারা কেউ তা চান না।’
আরও পড়ুন:যেসব পুলিশ সদস্য এখন পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি তাদের আর যোগ দিতে দেয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বুধবার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহীদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনও কাজে যোগ দেয়নি, এমন পুলিশের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা তাদের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করছি। আপনারাও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানাতে পারেন।’
যারা কাজে যোগদান করেননি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছেন বলেই হয়তো তারা লুকিয়ে আছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে এখনও অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
গত ১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগাযোগ না করে অনুপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনস্বার্থেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে। জনগণ এর সুফল পাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ওই সময় তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট, উপমহাপরিচালক, বাহিনীর পরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার পতনের শহীদ সব ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করা হয়।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ আজ নবজাগরণে উজ্জীবিত। বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের হতে পারেনি বলেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন:গাজীপুর থেকে চুরি হওয়া ১ হাজার ৯টি কার্টনভর্তি ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্টের একটি চালান উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানা।
চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তিনটি কাভার্ড ভ্যানবোঝাই পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় মোশাররফ (২৪), মো. আজাদ (৩৬) ও মো. গণি (২৯) নামের তিন ব্যক্তিকে, যারা কাভার্ড ভ্যানগুলোর চালক।
সিএমপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে জানানো হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার সময় গাজীপুরের ট্রপিক্যাল নিটেক্স বিডি লিমিটেডের ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্ট একটি সংঘবদ্ধ চক্র চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এসব পণ্য চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে আতুরার ডিপোর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ জানতে পারে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি চৌকস টিম সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালায়।
পুলিশ আরও জানায়, অভিযানের একপর্যায়ে কাভার্ড ভ্যানগুলো আতুরার ডিপো চলে যাওয়ার পথে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়ে। আটকের স্থানটি পাঁচলাইশ থানাধীন হওয়ায় জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আটককৃত চোরাই গার্মেন্টস পণ্যবোঝাই কাভার্ড ভ্যানগুলো এবং আটক তিনজনকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাবেক কার্যকরী সভাপতি ও সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের কবরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে আহমদুল্লাহ খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত গাড়ি নিয়ে এসে এ ঘটনা ঘটায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, লাল রঙের একটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা শুরুতে বাদলের কবরে ভাঙচুর চালায়। এরপর সেখানে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান ফেসবুকে লিখেন, ‘কতিপয় সন্ত্রাসী আজ দুপুরে গাড়ি নিয়ে এসে মইন উদ্দীন খান বাদলের পৈত্রিক ভিটার কবরে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়…এখন কবরেও মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ সরকারের আমলে যদি মানুষ কবরেও শান্তিতে থাকতে না পারে, তাহলে আমরা কোথায় যাব? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
‘বাদল কখনও কোনো দুর্নীতির সঙ্গে ছিলেন না। তার কোনো বদনাম নেই। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যু হয় ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর, যিনি চট্টগ্রাম-৭ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাসদের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও জানেন না কৃষকরা।
আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি এসেছে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।
কৃষকদের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দের পুরোটাই এ কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে একটি স্পেশাল বরাদ্দ আসে কিশোরগঞ্জে। সেটিও এ কর্মকর্তা ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ বরাদ্দে ছিল চার লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এসবের বাইরে কৃষকের মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন ২০২৩ সালের ২৮ মে থেকে নিকলী উপজেলায় কর্মরত।
প্রকল্পগুলো কী ও বরাদ্দের পরিমাণ কত
কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভাসমান বেডে মসলা, লতাজাতীয় ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনী রাজস্ব ব্যয় বাবদ নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ চার লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। লতাজাতীয় ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার (প্রতিটি প্রদর্শনীর ব্যয় ১০ হাজার) টাকা ও লতাবিহীন ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২৪ সালের ২ মে পাওয়া এ বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনীর জন্য ২০২৪ সালের ২১ মে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ বরাদ্দ দেয়া হয় তিন লাখ টাকা।
ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীতে পাঁচটিতে বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ১০টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজির ১৫টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় দেড় লাখ টাকা। এখানে ৩০টি প্রদর্শনীতে মোট তিন লাখ টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
একই বছরের ৬ জুন ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীর ১১টিতে বরাদ্দ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ৯টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৯০ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজি চারটি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৪০ হাজার টাকা। এখানে ২৪টি প্রদর্শনীতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
কোন খাতে কী বরাদ্দ জানেন না উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রদর্শনীর বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় বাবদ সরকার বরাদ্দ দেয় উপজেলা কর্মকর্তা বরাবর। প্রদর্শনী অনুযায়ী কৃষক নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে। তারা কৃষক নির্বাচন করে নিশ্চিত করেন উপজেলা কর্মকর্তাকে।
একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে উপসহকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা।
নিয়ম অনুযায়ী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা অফিসে জমা দেবেন। পরবর্তী সময়ে কৃষি কর্মকর্তা উপকরণ কিনে নির্ধারিত একটি তারিখে কৃষকদের অফিসে আসতে বলবেন। পরে সেখান থেকে উপকরণ বিতরণ রেজিস্ট্রারে (স্টক রেজিস্ট্রার) সাক্ষর রেখে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয় কৃষককে। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো উপসহকারীর সঙ্গে সমন্বয় করেননি।
সমন্বয় না করলে প্রদর্শনীতে কী কী উপকরণ বরাদ্দ এসেছে সেগুলো উপসহকারী কর্মকর্তা কিংবা কৃষকদের জানারও সুযোগ থাকে না।
নিকলী সদর ইউনিয়নের ষাইটধার গ্রামের কৃষক মিয়া হোসেন জানান, বিগত দুই বছর পূর্বে ৮০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছিলেন তিনি। তখন ১০ কেজি বীজ, এক বস্তা ইউরিয়া আর এক বস্তা ডিএপি সার ছাড়া কিছুই পাননি। এরপর আর তার অনুকূলে কোনো বরাদ্দ আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিকলী উপজেলার গুরই, সিংপুর ও সদর ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য বছর আগস্টের মধ্যেই তাদের ভাসমান বেড তৈরির বরাদ্দ দেয়া হতো। এবার তাদের কাউকেই কোনো প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পর তাদের জানানো হয়েছে, এ বছরের বরাদ্দ আসেনি।
কৃষকরা জানান, বরাদ্দ এলে তাদের দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
প্রান্তিক কৃষকদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে নিউজবাংলা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় আলাদা তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি আসে এ প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বরাদ্দ আসার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। খানিকটা পর বলেন, ‘কয়েকটা ছোট বরাদ্দ এসেছে। পানি বেশি থাকায় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
একপর্যায়ে বরাদ্দের কপি দেখানোর পর বিশেষ বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরা তার ব্যাচমেট। হঠাৎ একদিন হীরা তাকে ফোনে বলেন, ‘তোমার নামে একটি স্পেশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তুমি বরাদ্দের টাকাটা উত্তোলন করে আমাকে পাঠিয়ে দাও। অফিসের বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচে সেটি ব্যয় করা হবে।’ তিনিও তার কথামতো সেটি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারাও তো বোঝেন, অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে হয়। আমিও সেটি করেছি।
‘তারপরও বিষয়টি যেহেতু আপনাদের নজরে চলে এসেছে আমি তার সাথে কথা বলে অচিরেই বাস্তবায়ন করে নেব।’
এ কথার একপর্যায়ে তিনি ফোনে কথা বলেন হীরা নামের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে।
সাখাওয়াত তাকে বলেন, ‘তুমি যে একটা স্পেশাল বরাদ্দ দিয়েছিলে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে।’
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আরও আছে। এর আগে এ কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায়। সেখানেও তার বিরুদ্ধে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ, সার, বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে, তবে সেখানে গিয়ে বেশি দিন থাকতে হয়নি তার। তিনি চলে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।
মোহনগঞ্জে থাকা অবস্থায় অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেখানে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেন সাখাওয়াত।
এ কর্মকর্তার দাবি, সেখানকার এক সাংবাদিক তার কাছে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। দেননি বলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
যা বললেন তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক
কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগস্টেই শেষ হয়ে যায়। এ প্রকল্পের সবকিছুই ক্লোজ হয়ে গেছে। তিনিও বর্তমানে এ প্রকল্পের দায়িত্বে নেই।
তিনি জানান, তার জানা মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দও কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো কর্মকর্তা সেটি বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করে থাকেন, তবে এর দায়ভার একান্তই তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালকের ভাষ্য
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের অনিয়ম বা আত্মসাৎ করে থাকেন এবং তদন্তে এসবের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নতুন শুল্কায়নে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এর ফলে পেঁয়াজের দাম শিগগিরই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা নাগাদ নতুন শুল্কায়নে ভারতীয় চারটি ট্রাকে ১২৩ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৫৫০ ডলার থেকে ১৪৫ ডলার কমিয়ে ৪০৫ ডলার নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কাস্টমস সার্ভারে সংযুক্ত না হওয়ায় গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ভারতের সার্ভারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত হওয়ায় সেই জটিলতা কাটিয়ে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে দাম কমবে বলে প্রত্যাশা আমদানি-রপ্তানিকারক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সংকটের অজুহাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এরপর গত মার্চ মাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয় দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।
ভারতের ওই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়ায় দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। এরপর প্রায় ৫ মাস পর গত ৪ মে ন্যূনতম ৫৫০ ডলার রপ্তানি মূল্য এবং ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত সরকার।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, নতুন নিয়ম সার্ভারে সংযুক্ত হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমে আসবে বলে তারা আশা করছেন। ফলে পেঁয়াজের দাম বাজারে অনেকাংশে কমে আসবে।
স্থলবন্দর উদ্ভিদ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ বাড়িয়েছেন। মঙ্গলবার নতুন করে আরও চার ব্যবসায়ী এলসি খুলেছেন। এসব পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলে পণ্যটির বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য