চকবাজারের দেবিদ্বারঘাট এলাকার কামালবাগের চারতলা ভবনে আগুনের ঘটনায় মারা যাওয়া ছয়জনই হোটেল কর্মচারী। তারা সবাই ভবনটির নিচতলার বরিশাল হোটেলের কর্মচারী, হোটেলটির ঠিক উপরেই তাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। রাতভর কাজ শেষে সোমবার সকালে তারা একসঙ্গে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। এরপর অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান তারা।
নিহতদের শনাক্ত করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর থেকে এই ছয় কর্মচারীর কোনো খোঁজ মিলছিল না।
নিহতরা হলেন- স্বপন সরকার, আবদুল ওয়াহাব ওসমান, বিল্লাল সরদার, মোতালেব, মো. শরীফ ও মো. রুবেল।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরিশাল হোটেলটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। দুই শিফটে ভাগ করে কর্মচারীরা কাজ করেন। মারা যাওয়া ছয়জনই রোববার নাইট শিফটে কাজ করে সোমবার সকালে হোটেলের উপরে থাকার ঘরে ঘুমাতে গিয়েছিলেন।
স্বপন সরকারের গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায়। তার বাবার নাম রাকেশ সরকার, মা মালতী সরকার। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার বড় ভাই সজল সরকার ছোট ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাইকে দেখেই আমি চিনেছি। রোববার সারারাত ডিউটি করে সকালে ঘুমাতে গিয়েছিল। কে জানতো আমার ভাইয়ের এটাই ছিল শেষ ঘুম।’
ওসমানের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানার দক্ষিণ বড় কাসমা গ্রামে। ওসমান আবুল কালাম সরদার ও পেয়ারা বেগমের সন্তান। ওসমানের বড় ভাই আবদুল নিউজবাংলাকে জানান, ওসমান বরিশাল হোটেলের শুরু থেকেই কাজ করতেন। তার বয়স ২৭ বছর। ওসমান বরিশাল হোটেলে নাস্তা কারিগর। সারারাত কাজ করে সোমবার বেলা ১১টায় ওসমান হোটেলের উপরের ঘরে ঘুমাতে যান।
আবদুল বলেন, ‘আগুনের ঘটনা টিভিতে দেখে ওসমানের নম্বরে ফোন দিলে তা বন্ধ পাই। এরপর শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসি। বাবা, মা আর ভাইবোনের মধ্যে ওসমান আর আমি মিলেই সংসার চালাতাম। বরিশাল হোটেলে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি পেত সে।’
ওসমানের এলাকার বড় ভাই রাব্বী ঘটনার পর ওসমানের মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওসমান আমার গ্রামের পরিচিত ছোট ভাই। আমি নিজেও চকবাজারে কাজ করি। ঘটনার পর ওসমানের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় আমি এখানে চলে আসি৷ আগুন নেভানোর পর আমি সিঁড়ি দিয়ে হোটেলের উপরের ঘরে উঠে গিয়েই দেখি ওসমান আর বিল্লাল পাশাপাশি পড়ে আছে। আমি প্রায় সময়ই ওসমানের হোটেলে আসতাম, ওসমান আর বিল্লাল ঘনিষ্ঠ ছিল তাই ওদের দুইজনকেই চিনতে পেরেছি।’
বিল্লাল সরদারের বাড়ি বরিশালের মুলাদী থানার টুমচর গ্রামে। তার বয়স ৩৭ বছর। বিল্লাল বরিশাল হোটেলে এক বছর ধরে মেসিয়ার হিসেবে দৈনিক সাড়ে তিনশ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন। গতরাতে তিনিও বরিশাল হোটেলে ডিউটি করেছেন।
বিল্লালের বড় বোন রুমা বেগম বলেন, ‘ছোট ভাই গ্রাম থেকে আমাকে ফোন করে জানায়, বিল্লালের দোকানে আগুন লেগেছে। তারপর আমি বিল্লালের মোবাইল বন্ধ পেয়ে এখানে চলে আসি। বিল্লালের স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তারা গ্রামের বাড়ি থাকে।’
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে বিল্লালের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তার ছোট ভাই আইয়ুব আলী।
মোতালেবের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা থানার শংকরপাশা গ্রামে। তার বয়স ১৬ বছর। তার বাবার নাম মোস্তফা এবং মা মমতাজ বেগম। মোতালেব বরিশাল হোটেলের মেসিয়ার হিসেবে কাজ করত। তার পরিবারে বাবা-মা সহ আরও দুই ভাইবোন আছে। তিন ভাইবোনের মধ্যে মোতালেব দ্বিতীয়।
সকালে মোতালেবের সঙ্গে ফোনে কথা হয় মামা নিজাম দপ্তরীর। তিনি বলেন, ‘সকালে আমি খবর নেয়ার জন্য মোতালেবকে ফোন দিয়েছিলাম। তখন সে ডিউটি শেষ করে গোসল সেরে ঘুমাতে যাচ্ছিল। এরপর টিভিতে খবর দেখে এই ঘটনা জনতে পারি। ওর ফোন এখনও বন্ধ।’
সন্ধ্যায় মর্গে মোতালেবের লাশ শনাক্ত করেন মামা নিজাম দপ্তরী। তিনি বলেন, ‘মোতালেবের মাথা আর শরীরের পুরো চামড়া পুড়ে গেছে। কিন্তু চেহারা চেনা যায়।’
১৬ বছর বয়সী শরীফের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা থানার তিতচর গ্রামে। তার বাবার নাম মিজান আর মায়ের নাম ফাহিমা। শরীফের আত্মীয় আবুল কাশেম জানান, বরিশাল হোটেলে কোরবানি ঈদের পর থেকে শরীফ কাজ শুরু করে। শরীফ দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে ধোয়া-মোছার কাজ করত। শরীফের বাবার মেরুদন্ডের সমস্যা থাকায় কাজ করতে পারেন না। তাই সংসারের খরচ চালাতে এক মাস আগে তিনি বরিশাল হোটেলে কাজ করতে পাঠান শরীফকে। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে শরীফ।
রুবেলের বয়স ২৮ বছর। তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি থানার দক্ষিণ আকাল বরিশ গ্রামে। বাবার নাম সাত্তার হিলালু আর মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। তার স্ত্রী এবং সাড়ে তিন বছরের ছেলে সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকে। রুবেল গত দুই সপ্তাহ আগে বরিশাল হোটেলে মেসিয়ার হিসেবে কাজ নেন। তার মরদেহ শনাক্ত করেছেন বড় ভাই মোহম্মদ আলী। মোহম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রুবেলের সঙ্গে আমার আরেক ভাইয়ের বেলা পৌনে ১২টায় কথা হয়। টেলিফোনে সে জানায়, রাতে ডিউটি শেষে সে এখন ঘুমাতে যাবে। কথা শেষ করার আগেই রুবেল কোনো একটা সমস্যার জন্য ফোন রেখে দেয়। এরপরই আমরা আগুনের ঘটনা শুনি আর রুবেলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’
এদিকে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ছয় জনের ময়নাতদন্ত শেষ হবে মঙ্গলবার। পাশাপাশি তাদের পরিচয় শনাক্তে পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করবে সিআইডি। যদি তাদের পরিচয় শনাক্ত নিয়ে কোনো দ্বিধা না থাকে তবে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে৷
সোমবার সন্ধ্যায় ৬ জনের পরিবারই আলাদাভাবে মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে মরদেহ হস্তান্তরে কোনো জটিলতা তৈরি হবে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ চিনতে পেরেছেন। ময়নাতদন্তের পর আবারও আরেকবার শনাক্তের সুযোগ দেয়া হবে। যদি তখনও তারা নিশ্চিত থাকেন তাহলে মরদেহ মঙ্গলবার হস্তান্তর করা হবে। আর সিআইডি যেহেতু ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ এবং টেস্ট করবে তাই তারা যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে ডিএনএ টেস্টের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হতে পারে।’
আরও পড়ুন:সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার মামলায় আজ সোমবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবু আলম শহীদ খান ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৬৭টি মামলা করেছে ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোববার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
রাজধানীর শাহবাগে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে সড়কে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ পানি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরে বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘মার্চ টু ঢাকা’ অনুযায়ী আজ (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন। এর ফলে সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩৪৪টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩১৩টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১৪টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
রাজধানীর মুগদায় মায়ের সঙ্গে অভিমানে ইঁদুর মারার বিষ পান করে সামিয়া আক্তার (১৫) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সামিয়া মুগদা মাল্টিমিডিয়া স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও উত্তর মান্ডার এলাকার আজিজুল হকের মেয়ে।
সামিয়ার ভাই সাহিম জানান, সামিয়া একটু রাগী স্বভাবের ছিল। রাতে মায়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে অভিমানে বাসায় রাখা ইঁদুর মারার বিষ পান করে। পরে দ্রুত ঢামেকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি মুগদা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য