× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Questions about the role of the media in the death of teacher Khairun
google_news print-icon

শিক্ষক খাইরুনের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

দম্পতি
খাইরুন নাহার ও মামুন হোসেন দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত
খাইরুন নাহারের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের নীতি ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অতি উৎসাহ এবং পাঠক আকর্ষণ তৈরিতে সংবাদমাধ্যম মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরকে ঝুঁকিতে ফেলছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সংবাদমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার সময় এসেছে।

কলেজছাত্র মামুন হোসেনকে বিয়ে করার আট মাসের মাথায় শিক্ষক খাইরুন নাহারের মৃত্যু-ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মামুন-খাইরুন গত ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন, তবে এর ছয় মাস পর জুলাইয়ে ঘটনাটি নিয়ে ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। দুজনের ভিডিও সাক্ষাৎকারও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এতে ‘টক অফ দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয় বিষয়টি।

খাইরুন নাহারের মরদেহ উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন হোসেনকে আটক করা হয়েছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা রোববার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রের প্রেমের কাহিনি ছড়িয়ে পড়লে দুজনই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন; কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।

‘তাদের বিয়ের পর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে অনেক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। মানসিক এ চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কি না, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

পুলিশ সুপার বলেন ‘ভাইরাল হওয়ার পর আত্মীয়স্বজনের বিরূপ মন্তব্যে খাইরুন নাহার এমনিতেই বিপর্যস্ত ছিলেন। এরপর মামুনের সঙ্গে দাম্পত্য কলহে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।’

খাইরুনের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের নীতি ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অতি উৎসাহ এবং পাঠক আকর্ষণ তৈরিতে সংবাদমাধ্যম মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরকে ঝুঁকিতে ফেলছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

সংবাদমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার সময় এসেছে। ‘ভাইরাল প্রতিবেদন’ করার প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে সংবাদমাধ্যমের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন।

বেসরকারি এখন টেলিভিশনের সম্পাদক তুষার আব্দুল্লাহর মতে, ‘যেখানে ভাইরালিজম থাকবে সেখানে জার্নালিজম হবে না।’ তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণমাধ্যম এসব বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর গণমাধ্যম এক হয়ে গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেমন খুশি তেমন লিখছেন, এখন সেটা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও হয়ে গেছে।

‘ব্যক্তি যা খুশি তাই করতে পারে, কিন্তু যখন একটা প্রতিষ্ঠান একটা খবর ছাপার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কিন্তু দায়িত্বশীলতার জায়গা নিশ্চিত করতে হয়। এখন আমরা যেটা করছি ওই যে লাইক ভিউ বিভিন্ন রেটিং। আমরা এখন জার্নালিজম করছি না, করছি ভাইরালিজম। যেখানে ভাইরালিজম থাকবে, সেখানে জার্নালিজম হবে না।’

শিক্ষক খাইরুনের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষিকা তার ছাত্রকে বিয়ে করেছে এমন ঘটনা অতীতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় হয়েছে। রসাত্মক কোনো বিষয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ রয়েছে। তারা (বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম) এটিকে পুঁজি করেই ব্যবসা করতে চেয়েছিল। এ খবর হয়তো সবাই ক্লিক করবে, তাহলে এটা মানুষ খাবে।

‘এই যে খাওয়া-দাওয়া, খবর তো খাওয়া-দাওয়ার জিনিস নয়। আমরা যেটা করছি যে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে বেশি ঝুঁকে পড়ছি। মানুষের বেডরুমে পর্যন্ত আমরা ঢুকে যাচ্ছি। যেখানে এ ধরনের ভাইরালিজম জনপ্রিয় হবে, সেখানে এ ধরনের ঘটনাই আমরা দেখতে থাকব।’

সংবাদভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান প্রভাষ আমিন মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা সংবাদ হওয়ার মতোই নয়।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন শিক্ষিকা তার ছাত্রকে বিয়ে করেছেন। এখানে তো আমি কোনো অপরাধ দেখি না। পাত্র বড় হতে হবে, পাত্রী ছোট হতে হবে, এমন কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। স্ত্রীর বয়স কম হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আমরা যুগ যুগ ধরে এটা তৈরি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম যে রিপোর্ট করেছে, আমি মনে করি এটা রিপোর্ট হওয়ার কোনো বিষয়ই না। একজন নারী ও পুরুষ ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এটা নিউজের বিষয় নয়। প্রথম অপরাধ গণমাধ্যমের যে, তারা নিউজটা করেছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেটা হলো, আমি যখন ট্রলগুলো দেখছিলাম, তখন নিজেকে সেই নারীর জায়গায় ভাবছিলাম। এত ট্রল, এত গালিগালাজ, এত বিদ্রূপ নেয়ার মতো মানসিক শক্তি আমার আছে কি না। আমি নিজেও এটা নিতে পারতাম না। এটা খুবই অন্যায়, খুবই অন্যায়।’

সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর মতে, সংবাদ যেন কারও প্রাণসংহারের কারণ না হয় সেদিকে নজর দেয়া জরুরি।

শিক্ষক খাইরুনের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোসাইটিতে কোনো রকম ইমব্যালান্স যদি থাকে, সেখানে মিডিয়ার একটা ভূমিকা থাকে। কোনো নিউজ যেন কারও প্রাণসংহারের কারণ না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

‘কোনো নিউজের কারণে কেউ অপমানিত বা ক্ষুব্ধ বা লজ্জিত হচ্ছে কি না, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। একটা জীবন শেষ হয়ে গেলে সেই নিউজের কোনো ভ্যালু থাকল না, এটা গুড জার্নালিজম নয়।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষিকা কম বয়সী ছাত্রকে বিয়ে করে এমন কোনো নিন্দনীয় কাজ করেননি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো তার টিচারকে বিয়ে করেছিলেন। সেটা যদি কোনো অন্যায় না হয়, সোসাইটিতে কোনো রিপারকেশন না থাকে, তাহলে আমার এখানে থাকবে কেন?

‘কোনো নিউজ করার ক্ষেত্রে এই সোশ্যাল ভ্যালুজগুলো আমাদের মাথায় রাখা দরকার। রেসপনসেবল জার্নালিজম করাটাই আসলে মুখ্য ব্যাপার।’

তবে খাইরুনের মৃত্যুর পেছনে সংবাদমাধ্যমের দায় মানতে রাজি নন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষিকার আত্মহত্যার পেছনে কেউ যদি মিডিয়ার প্রচারণাকে দায়ী করে, তবে সেটা ঠিক নয়৷ এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা ঠিকই ছিল। আমাদের দেশের কালচার সাধারণত পুরুষ-নারী সমবয়সী বা নারী পুরুষের তুলনায় কম বয়স হলে বিয়ে হয়। শিক্ষিকা ও ওই ছেলের বিষয়টা অন্যরকম ছিল। শিক্ষিকা ছেলেটির তুলনায় বয়সে অনেক বড় ছিলেন।

‘কুকুর মানুষকে কামড় দিলে নিউজ হয় না, কিন্তু মানুষ কুকুরকে কামড় দিলে নিউজ হয়। এখানে ঘটনাটি সে রকম ঘটেছে। এখানে গণমাধ্যমের কোনো দায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে কোনো নিউজ না দেয়া হলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটা প্রচার হবেই। বর্তমান প্রযুক্তির বাস্তবতায় এগুলো লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। প্রচারণার চেয়ে সামাজিক যে নর্মসগুলো, বিয়ে কেন, কীভাবে হয়েছিল সেগুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত।’

প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর এক সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এর ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে তাকে বিয়ে করেন খায়রুন।

খায়রুনের মৃত্যুর জন্য সংবাদমাধ্যমকে একক দায় দিতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনওয়ার হোসেন। তার মতে, এ জন্য রাষ্ট্র, সমাজব্যবস্থাও দায়ী।

শিক্ষক খাইরুনের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

ড. মোহাম্মদ আনওয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় এবং মিডিয়ার আসপেক্টে বাংলাদেশে প্রাইভেসি পলিসিটা কী? রাষ্ট্র এবং সমাজ দুইটার মাঝামাঝি জায়গা থেকে মিডিয়া বিষয়গুলো ডিল করার চেষ্টা করে। এখানে মিডিয়াকর্মীদের যে ট্রেনিংয়ের দরকার ছিল, অর্থাৎ ফিলোসোফিকাল জায়গাটা, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের ওপর নির্ভর করে।

‘সোশ্যাল, রাষ্ট্রীয় আর ইউনিভার্সিটি কারিকুলাম এগুলো মিলিয়েই মিডিয়ার রুলস। মিডিয়া সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এখানে মিডিয়ার কিছু ইন্টারেস্ট আছে। তারা তাদের… বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু দেখে। যদি আমাদের একটা নর্ম গড়ে উঠত, তাহলে মিডিয়া অনেক কিছু প্রচার করতে চাইত না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে ফেমিনিস্ট পার্সপেক্টিভ প্রাইভেসির জায়গাটায় কন্ট্রিবিউট করতে পারত। আর আমাদের ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট পার্সপেক্টিভ ওয়েস্টার্ন কনটেক্সট দ্বারা ডমিনেটেড। সেদিক থেকে এটাকে আইসোলেটেডভাবে না দেখে ব্রডার পার্সপেক্টিভে দেখা দরকার। এখানে মিডিয়াকে একক দোষ না দিয়ে বা কাউকে দোষারোপ না করে বৃহৎ পরিসের চিন্তা করা দরকার।

‘তবে যে সম্মানিত নারী ভিকটিম হলেন সেটা দুঃখজনক। আমরা তাকে প্রাইভেসির যে কমফোর্ট, সেটি দিতে পারিনি।’

ড. মোহাম্মদ আনওয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা নিয়ে নিউজ করার জন্য প্রথমে আমাদের বোঝাতে হবে প্রাইভেসির জায়গাটাকে আমি কীভাবে ডিল করছি। ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট পার্সপেক্টিভ সেটাকে কীভাবে আমাদের শিখিয়েছে বা সোশ্যাল নর্মস তৈরির ক্ষেত্রে কী ধরনের রুল প্লে করে?

‘বা রাষ্ট্র প্রাইভেসিগুলোকে কীভাবে দেখে বা রেগুলেট করে- এসবের সংমিশ্রণেই বিষয়গুলো রেগুলেটেড হওয়া উচিত।’

আরও পড়ুন:
বাঁশঝাড়ে স্কুলছাত্রের মরদেহ
শিক্ষক খাইরুনের মৃত্যু: স্বামী মামুন পুলিশ হেফাজতে
বলাৎকারের মামলায় সহকারী শিক্ষক গ্রেপ্তার
কলেজছাত্রকে বিয়ে করা শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার
নারী চিকিৎসক হত্যায় রেজার স্বীকারোক্তি

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Rikta Bangladesh in BBCs list of 100 influential women

বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় বাংলাদেশের রিক্তা

বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় বাংলাদেশের রিক্তা রিক্তা আক্তার বানু। ছবি: সংগৃহীত
পেশায় নার্স রিক্তা আক্তার বানু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রতিবন্ধীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখায় প্রশংসিত হয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির ২০২৪ সালের বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নারী রিক্তা আক্তার বানু। পেশায় নার্স হলেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রতিবন্ধীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখায় প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণা জাগানো ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করে বিবিসি।

পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১০০ নারীকে বেছে নেয়া হয়েছে। বিভাগগুলো হলো- জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি। এর মধ্যে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে নির্বাচিত হয়েছেন রিক্তা আক্তার বানু।

বিবিসি বলেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন নার্স রিক্তা আক্তার বানু। সেখানে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়।

অটিস্টিক এবং সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত কন্যা সন্তানকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে না পেরে নিজের জমি বিক্রি করে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের নাম ‘রিক্তা আক্তার বানু লার্নিং ডিজেবিলিটি স্কুল’।

বর্তমানে ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে সেখানে। এটি প্রতিবন্ধিতার প্রতি সমাজের মনোভাব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও এখন এটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুদের জন্যও সেবা দিয়ে থাকে।

বিবিসির এ বছরের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর মধ্যে রয়েছেন- নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস, ধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া গিসেল পেলিকট, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ রেবেকা আন্দ্রাদে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, গায়িকা রে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নাদিয়া মুরাদ, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ট্রেসি এমিন, জলবায়ু প্রচারক আদেনিকে ওলাদোসু এবং লেখক ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইউক্রেন ও সুদানের প্রাণঘাতী সংঘাত এবং মানবিক সংকট থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী রেকর্ডসংখ্যক নির্বাচন-পরবর্তী সামাজিক বিভাজনের সাক্ষী হওয়া পর্যন্ত নিত্যনতুন উপায়ে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হয়েছে নারীদের।

বিবিসির এই ১০০ নারী এ বছর নারীদের ওপর যে চাপ পড়েছে তা স্বীকার করেছেন। তারা তাদের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন। কারণ বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে।

এই নারীদের অনেকেই জলবায়ুর জরুরি অবস্থার প্রভাব নিয়েও সচেতন। তাই এখানে জলবায়ুর অগ্রদূতদের তুলে ধরা হয়েছে যারা তাদের সম্প্রদায়কে এর প্রভাব মোকাবিলা করতে সহায়তা করছেন।

আরও পড়ুন:
বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকায় ড. ইউনূস
টাইমের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম
টাইমের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় জাহিদ মালেক

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Constitution of Women Affairs Reforms Commission

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন
সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে প্রধান করে গঠিত কমিশনে নয়জনকে সদস্য করা হয়েছে।

সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে কমিশনের প্রধান করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সোমবার এই কমিশন গঠন করা হয়।

কমিশনে নয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। তারা হলেন- ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।

আরও পড়ুন:
শ্রম সংস্কার কমিশনে যারা আছেন
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে ১২ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গঠন
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন

মন্তব্য

বাংলাদেশ
American women on their way to Mexico for abortions

গর্ভপাত করাতে মেক্সিকোর পথে ‌আমেরিকান নারীরা

গর্ভপাত করাতে মেক্সিকোর পথে ‌আমেরিকান নারীরা প্রতীকী ছবি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রচারণায় উঠে এসেছে গর্ভপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়টি। অনুমান করা যায়, বিশেষ করে নারী ভোটারদের কাছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গর্ভপাতের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।

গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা মেক্সিকোকে বেছে নিয়েছেন গর্ভপাতের জন্য। দেশটির গাইনোকোলজিস্টদের পরামর্শে তারা গিয়ে ঢুকছেন অপারেশন থিয়েটারে।

টেক্সাসের হিউস্টন থেকে মেক্সিকোতে এসেছেন স্যান্ড্রা নামের এক নারী। যুক্তরাষ্ট্রের ওই রাজ্যে ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। তাই তিনি বাধ্য হয়ে গর্ভপাতের জন্য মেক্সিকো এসেছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতকে বৈধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত দেশটির ১৫টি রাজ্য গর্ভপাতকে বৈধতা দিয়েছে।

মেক্সিকোর নারীবাদী সংগঠনগুলো গর্ভপাত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে দুশ’ কিলোমিটার দূরের জনপদ মন্টারের বাসিন্দা স্যান্ড্রা কারদোনা ও ভ্যানেসা গিমেনেয। এই দুই নারী গর্ভপাত করাতে আসা আমেরিকান নারীদের তাদের বাসায় স্বাগত জানান।

সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এই নারীরা যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য অবৈধ পথে গর্ভপাতে ব্যবহৃত কিট সরবরাহ করছেন। তবে এসব কিট মেইলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো অসম্ভব। তাই অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা এসব কিট যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য, এসব কিট ব্যবহার করে নারীরা যেন নিজ বাসায়ই সহজে গর্ভপাত করাতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রচারণায় উঠে এসেছে গর্ভপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়টি। অনুমান করা যায়, বিশেষ করে নারী ভোটারদের কাছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গর্ভপাতের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
One was arrested for trying to have an abortion by breaking his arms and legs with a hammer

হাতুড়ি দিয়ে হাত-পা ভেঙে গর্ভপাতের চেষ্টা, আটক এক

হাতুড়ি দিয়ে হাত-পা ভেঙে গর্ভপাতের চেষ্টা, আটক এক অমানবিক নির্যাতনের শিকার নারীকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া এক নারীকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বসতঘরে আটকে রেখে জোরপূর্বক গর্ভপাতের চেষ্টা চালিয়েছেন রিপন নামে এক ব্যক্তি। গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় হাতুড়ি দেয় পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় ঢাকা থেকে গর্ভপাত করতে আসা টিমের এক নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বসতঘরে আটকে রেখে এক যুবতীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঢাকা থেকে গর্ভপাত করতে আসা টিমের এক নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রিপন শেখ চারদিন আগে ঢাকার মিরপুর থেকে এক যুবতীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই যুবতীকে রিপন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে তাদের শারীরিক সম্পর্ক এবং এক পর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপর বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় চারদিন আগে ওই নারীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন রিপন।

তারা জানান, দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে মঙ্গলবার দুপুরে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে ঢাকা থেকে একটি টিম নিয়ে আসেন রিপন। এ সময় তিনি গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।

এসময় ওই যুবতীর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে যুবতীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এছাড়া ওই সময় গর্ভপাত ঘটানোর টিমের আম্বিয়া নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রিপন শেখ পালিয়ে যান।

রিপনের প্রথম স্ত্রী তানিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রিপন ওই নারীকে ঘরে আটকে রেখে অজ্ঞাত দুই নারীর সহায়তায় জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়।’

প্রতিবেশী মো. মামুন জানান, রিপন স্ত্রী পরিচয়ে যে নারীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি দুই মাসের গর্ভবতী। রিপন লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাতের চেষ্টার পাশাপাশি ওই নারীকে অমানবিক নির্যাতন করেছে।’

তন্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘রিপন ওই যুবতীকে হাতুড়িপেটা করেছে। পরে যুবতীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. কাশফি জানান, নির্যাতনের কারণে ওই নারী স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। তার হাত ও পায়ের হাড় ভাঙা। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

শ্রীনগর থানার ওসি মো. ইয়াসিন মুন্সী বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক নারীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

আরও পড়ুন:
চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে নারীকে ধর্ষণের মামলায় চালক হেলপার গ্রেপ্তার
‘সামাজিক চাপে’ শেষ কিশোরীদের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন
যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে মারধর ও খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়ার অভিযোগ
সাভারে নারী পাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার, তিনজন উদ্ধার

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Social pressures put an end to teenage girls dreams of becoming footballers

‘সামাজিক চাপে’ শেষ কিশোরীদের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন

‘সামাজিক চাপে’ শেষ কিশোরীদের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির নারী খেলোয়াড়রা অনুশিলন করছেন। ফাইল ছবি
সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির মূল উদ্যোক্তা দেবাশীষ মন্ডল বলেন, ‘এতগুলো ফুটবলপ্রেমী মেয়ের কথা চিন্তা করেই আমরা কয়েকজন মিলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করি, তবে এখন বন্ধ আছে আর্থিক সংকটের কারণে। যারা অর্থ প্রদান করতেন, তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে আর অর্থ দিচ্ছেন না।’

‘গ্রামের মেয়েরা হাফ প্যান্ট পরে মাঠে ফুটবল খেলে’ – এ ‘অপরাধে’ হামলা করা হয়েছিল খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির নারী খেলোয়াড়দের ওপর। যা নিয়ে সারা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। পরে তাদের পাশের দাঁড়িয়েছিল দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে জাতিসংঘের জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) পর্যন্ত, তবে বছর না যেতে সেই কিশোরী ফুটবলারদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে স্থানীয় কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে নিয়মিত স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ৩০ থেকে ৪০ জন কিশোরী অনুশীলন করতেন। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে নারী ফুটবলারের ওপর হালমার ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে পরদিন একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছিল।

এ হামলায় যারা আহত হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচী।

মঙ্গলী বলে, ‘আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় ছয় মাস পার না হতে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরিকল্পিতভাবে আমাদের কোচকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যারা আমাদের যে আর্থিক সহায়তা করতেন, তারাও দূরে সরে যান। সামাজিক চাপ ও রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলিকে শেষ করে দেয়া হয়।’

আক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলী বলে, ‘হামলার পর আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা নিয়ে জনপ্রতিনিধীরা এসেছিলেন। তারা বলেছিলেন আমাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, থাকা খাওয়া খরচ ও একটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী, তবে তারও মধ্যে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’

খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়ে তো মেয়েকে মাঠে পাঠিয়েছিলাম। মার খাওয়ার পরেও তারা ফুটবল ছাড়েনি। এখন তো তাদের কৌশলে মাঠের বাইরে পাঠানো হল। মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

‘প্রতিবেশীরা তাকে এখন হেয় প্রতিপন্ন করছে। আমাদের মেয়েরা ফুটবলের যে সুনাম এনেছিল, তার ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে পারলাম না।’

মঙ্গলী বাগচী ও তার খেলার সাথীরা এখনও সবাই মাঠের বাইরে। ইতোমধ্যে তাদের চারজন খেলোয়াড়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কেউ কেউ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে মাঠে কাজ করছে। বাকিরা বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে বলে জানায় সে।

মঙ্গলী বাগচী জানায়, এই ক্লাবের কিশোরীদের উপর নির্ভর করে খুলনা জেলা ও বিভাগীয় নারী ফুটবল দল গঠন করা হতো। তাদের পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করতো খুলনার দল বিজয়ী হবে কি না।

শুধু খুলনা জেলা নয় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্যান্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও কিশোরীরা প্রশিক্ষণ নিত ক্লাব থেকে। ক্লাবের খেলোয়াড় স্বর্ণা, পূজা রায়, জ্যোতি, ঋতু, প্রীতি, তারা, দেবী, সীমা ও সাদিয়া নাসরিন অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিল। যারা সবাই এখন মাঠের বাইরে।

ক্লাবটি গঠনও করা হয়েছিল খুলনার নারী ফুটবলারদের অগ্রগতির জন্য। স্থানীয় তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে জেলা পর্যায়ে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত

১০ বছর ও বিভাগীয় পর্যায়ে ৫ বার তারা বিজয়ী বা রানার্সআপ হওয়ার সাফল্য রেখেছিল, তবে তারা যখন প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে অধ্যয়ন শুরু করতো, তখন আর ফুটবলের প্রশিক্ষণ পেত না। এই কিশোরীদের ফুটবল খেলার সাথে ধরে রাখতে তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক দেবাশীষ মন্ডল।

তিনি বলেন, ‘এতগুলো ফুটবলপ্রেমী মেয়ের কথা চিন্তা করেই আমরা কয়েকজন মিলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করি। তবে এখন বন্ধ আছে আর্থিক সংকটের কারণে। যারা অর্থ প্রদান করতেন, তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে আর অর্থ দিচ্ছেন না।’

তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এদের মাঠে টিকিয়ে রাখতে এখনও উদ্যোগ না নিলে মেয়েরা খেলা থেকে বের হয়ে যাবে। আর এরা মাঠে না থাকলে খুলনা বিভাগীয় নারী টিমে দুর্বল হয়ে যাবে।’

সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় দলে যে নারী খেলোয়াড়রা খেলতেন, তারা প্রায় সবাই আমাদের শিক্ষার্থী। ক্লাবটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেল। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত এ ক্লাবটাকে আবার সচল করা। মেয়েদেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনা, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।’

তবে ক্লাবটির এই দুরবস্থা সম্পর্কে জানে না বলে জানান খুলনা জেলা ফুটবলের অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্কে আসলে আমার জানা ছিল না। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এই নারী খেলোয়াড়রা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পদ। আমি অতি দ্রুত ক্লাবটাকে সচল করে নারী খেলোয়াড়দেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করব।’

আরও পড়ুন:
পঞ্চম শিরোপা ছুঁতে চলেছে বসুন্ধরা কিংস
ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন গাজার নারীরা: ইউএনআরডব্লিউএ
ফুটবলের প্রসারে মাধবপুর ব্যারিস্টার সুমন একাডেমির যাত্রা শুরু
চেলসিকে হারিয়ে এফএ কাপের ফাইনালে ম্যানসিটি
নারী ক্রিকেটারদের উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Aleya Sarwar Daisy nominated for International Iconic Excellence Award

ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত আলেয়া সারওয়ার ডেইজি

ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত আলেয়া সারওয়ার ডেইজি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। ছবি: সংগৃহীত
উদ্যোক্তা হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অবদান ও অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ আইআইইএ দেয়া হয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র সদস্য আলেয়া সারোয়ার ডেইজি ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য (আইআইইএ) মনোনীত হয়েছেন।

উদ্যোক্তা হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অবদান ও অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ আইআইইএ দেয়া হয়ে থাকে।নেতৃত্বগুণ, বিশেষ কোনো অর্জন, কোম্পানি বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা হিসেবে সুনাম অর্জন, উৎসাহ প্রদান ও ব্যবসায়িক সফলতার ভিত্তিতে এ মনোনয়ন ও পুরস্কার দেয়া হয়।

২৪ মে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে মনোনয়নের পাশাপাশি বিশেষ অতিথি হিসেবেও বক্তব্য রাখবেন তিনি।

আলেয়া সারওয়ার ডেইজি তার বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’এ মনোনীত হয়েছি। বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে বক্তব্যে রাখব। বক্তব্যে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
8 women who were trafficked to India returned home

দেশে ফিরলেন ভারতে পাচার হওয়া ৮ নারী

দেশে ফিরলেন ভারতে পাচার হওয়া ৮ নারী ভারতে পাচার হওয়া আটজন বাংলাদেশি নারী সোমবার দেশে ফিরেছেন। ছবি: নিউজবাংলা
ইমিগ্রেশনের ওসি আযহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নারীরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার হয়ে যায়। পরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।’

বিভিন্ন সময় ‘ভালো চাকরির আসায়’ অবৈধ পথে ভারতে পাচারের শিকার আটজন বাংলাদেশি নারীকে দুই বছর পর বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের পুলিশ।

সোমবার বিকেলে নো ম্যানস ল্যান্ডে বিজিবি ও পুলিশ উপস্থিত থেকে তাদেরকে গ্রহণ করেন।

এ সময় ইমিগ্রেশনের ওসি আযহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নারীরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার হয়ে যায়। পরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, এখানে দুটি এনজিও সংস্থাও কাজ করেছে তাদের দেশে আনার ব্যাপারে।

ইমিগ্রেশনে তাদের কার্যক্রম শেষে করে পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান ওসি।

আরও পড়ুন:
গরু পাচারকারী চক্র ও ডাকাতদলের গোলাগুলি, নিহত ১
ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন গাজার নারীরা: ইউএনআরডব্লিউএ
শাহ আমানত বিমানবন্দরে এক কেজি স্বর্ণসহ ৩ যাত্রী আটক
মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৪০টি স্বর্ণের বারসহ আটক ২
ভুয়া ইমেইল খুলে জবি উপাচার্যের নামে স্ক্যাম

মন্তব্য

p
উপরে