দেশের সাধারণ মানুষ নয়, এমপি-মন্ত্রী আর আওয়ামী লীগ কর্মীরাই বেহেশতে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এলডিপির কয়েকজন নেতার জাতীয় পার্টিতে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে বলে মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যে সারা দেশে ওঠে সমালোচনার ঝড়।
এক দিন পর অবশ্য দেশের মানুষের বেহেশতে থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন মোমেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই মন্তব্য ঘিরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের এমপি-মন্ত্রী আর আওয়ামী লীগ কর্মীরাই বেহেশতে আছেন। কারণ, সরকার সমর্থকরা সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার পাহাড় কামিয়েছে। তাদের কোনো অভাব নেই। প্রতি বছর তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
‘নিজেদের দলের লোকদের বাঁচাতেই দুর্নীতিবাজ ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার।’
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটে দেশের মানুষের হিমশিম অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সীমাহীন কষ্টে আছে সবাই। দুর্নীতিবাজ আর লুটেরা কখনই সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝে না। দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় দেশের মানুষ। জাতীয় পার্টি মানুষকে মুক্তি দিতেই রাজনীতি করছে।’
অনুষ্ঠানে এলডিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রফেসর ড. মো. আবু জাফর সিদ্দিকী জি এম কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
এ সময় এলডিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এইচ এম বদরুদ্দোজা, ইমদাদুল ইসলাম সোহান, আব্দুল হাই নোমান, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, ফেরদৌস ফাহিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের সমালোচনা করে দেশে বৈষম্যহীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিুর রহমান।
শুক্রবার সকালে নীলফামারীর বড় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছরে দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। সব ধরনের, সব বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
‘তারা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলো সিলগালা করে দিয়েছিল। ঘরে বসেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা শান্তি পায়নি। ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধীর মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে বিচারের নামে খুন করা হয়েছে।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পরই ঝাল মিটিয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। তারা তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭জন চৌকস, সাহসী ও দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। হত্যা করেছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের।’
তিনি বলেন, ‘রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘাতকদের পিলখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সুষ্টি করা হয়েছিল। ঘাতকদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেয়া হয়নি। সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।’
জামায়াত আমির বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামী। মিথ্যা মামলায় তাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে হত্যার অভিযোগ করেন ডা. শফিকুর।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের শাসনামলে ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। যুদ্ধপারাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যে মামলা হয়েছিল, সেখানে একটি মামলাও তাদের বিরুদ্ধে ছিল না।
‘এছাড়া শেখ মুজিব সরকার সে সময় যাচাই-বাচাই করে ১৯৫ জনের যে তালিকা করেছিল তাদের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের সীমানার ভেতরের কোনো নাগরিক ছিল না।’
ডা. শফিকুর বলেন, ‘৫ আগস্ট যখন পরিবর্তন এলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীকে অনুরোধ করেছি ধৈর্য্য ধরার জন্য। দেশবাসী আমাদের কথা শুনেছে।
‘আওয়ামী লীগ নির্দয় হতে পারে, খুনি হতে পারে। কিন্তু দেশের ১৮ কোটি মানুষ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক।’
জামায়াত আমির বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন পালাবেন না। তিনি চলে গেলেন তার প্রিয় দেশে। তারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা তাদের সম্মান করি। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে অনুরোধ করব- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫০টির অধিক মামলা হয়েছে। আমাদের বিচারালয় যখন তাকে চাইবে তখন তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেবো না। আমরা ঘুষ খাবো না, কাউকে খেতেও দেবো না। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই- যে সমাজে লেখাপড়া করার পর ‘আমরা শিক্ষিত বেকার’ শব্দটি আমাদের কানে আসবে না।
‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সমাজের উন্নয়নে নারীরা অবদান রাখতে পারেন। নারীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ও মর্যাদার সঙ্গে জাতি গঠনে অবদান রাখবেন।’
নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল প্রমুখ।
আরও পড়ুন:‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভা করেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এটি কাকরাইল মোড়, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, শোভাযাত্রায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে। এর আগে নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকার অলিগলিতে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও এসেছেন নেতা-কর্মীরা। আর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।
কামান, ধানক্ষেত, কৃষক ও কমান্ডো সাজে নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা মাতিয়ে রাখেন। এছাড়া ঢাক-ঢোল, ট্রাক নিয়ে ও বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট পরে তারা শোভাযাত্রাকে বর্ণময় করে তোলেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শোভাযাত্রায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিদেশের মাটিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অসম্মানসূচক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের এই ধৃষ্টতামূলক কাজ বাংলাদেশ ও জনগণের মর্যাদার ওপর মারাত্মক আঘাত।
শুক্রবার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এই নিন্দা জানান।
পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্র্যান্সে যাওয়ার পথে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী দুষ্কৃতকারী উদ্ধত্যমূলক আচরণ করে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এহেন শিষ্টাচারবর্হিভূত আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের হিংস্র রূপের প্রকাশ এখনও দেশ-বিদেশে অনেক স্থানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রবাসে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অবয়ব ধারণ করে সুযোগ পেলেই গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আবারও প্রমাণ হলো যে এরা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হরিলুট এবং বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারসহ অসৎ অনাচারের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার হত্যা ও গুমের রাজনীতির বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এরা গণতন্ত্রে স্বীকৃত মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। গণতন্ত্রের সঙ্গে শত্রুতা আওয়ামী লীগের চিরদিনের বৈশিষ্ট্য।
রক্তাক্ত পন্থায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে পরাজিত করতে না পেরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় শেখ হাসিনার ক্রোধ যেমন থামছে না, তেমনই দেশ-বিদেশে তার সমর্থকরাও প্রচণ্ড হাতাশা নিয়ে সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রকামী মানুষদের হত্যা করছে বা শারীরিকভাবে আঘাতসহ নানাভাবে হয়রানির কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণ শেখ হাসিনার তৈরি করা সেই দুঃশাসনেরই অভিব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, পতিত শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিকে জটিল করে তুলতে বাইরে থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লুটপাটের সুবিধাভোগীরা বিদেশে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। গণতন্ত্রের সপক্ষের ব্যক্তিবর্গকে হেনস্থা করাসহ বাংলাদেশের ভেতরেও অন্তর্ঘাত সৃষ্টির গভীর চক্রান্তজাল বুনে যাচ্ছে তারা। লুটপাটের স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য উদগ্রীব ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশ-বিদেশে নানা এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতা হারানোর মনোবেদনায় এরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেছে নেয়।
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, আত্মপ্রত্যয়হীন, যুক্তিবিমুখ, মানবতাবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসরদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। এদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন ও বিচার বিভাগকে অবহিত করতে গণতন্ত্রকামী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী দৈত্যকে জনগণই বোতলবন্দি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এসব আওয়ামী কুচক্রীকে বিচারের আওতায় আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিএনপির উদ্যোগে র্যালির আগে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চেনার দিন। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের শত্রু চিহ্নিত করার দিন।
‘আগেও বলেছি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।’
সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার রাজপথে আজ লাখো জনতার এই মিছিল বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল আজ।
‘লাখো জনতার আজকের এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নের একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী মিছিল।’
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনে করে ভারত।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন।
গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবিলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর আওয়ামী লীগ অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাকি নির্বাসনে থাকা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনে করে। এর জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘বার বার আমরা বলেছি যে তিনি (শেখ হাসিনা) একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আমরা এই অবস্থানে আছি।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি নয়াদিল্লিতে আছেন। তবে সেখানে তাকে কোন মর্যাদায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, এক সংক্ষিপ্ত নোটিশে শেখ হাসিনা ভারতে আসেন এবং তিনি এখানেই থাকবেন।
আরও পড়ুন:বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন বিএনপির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। এটি সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে গণতন্ত্র মানায় না। এদেশে ফ্যাসিবাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট রেজিস্টারি মাঠে সংক্ষিপ্ত শোভাযাত্রা-পূর্ব এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অতীতেও বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো। তারা সব সময় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল। গণহত্যায় জড়িতরা পালিয়ে গেলেও তাদেরকে দেশে এনে বিচার করা হবে। যতদিন পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আবারও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
‘জুলাই-আগস্ট গণবিপ্লবে আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে হয়তো আমরা এই স্বাধীনতা পেতাম না। তাই বাংলাদেশ, শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এক সূত্রে গাঁথা। আমরা কারও করদরাজ্যে পরিণত হওয়ার জন্য স্বাধীনতা লাভ করিনি। অরক্ষিত স্বাধীনতা পরাধীনতার সমান।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, অ্যাডভোকেট হাদীয় চৌধুরী মুন্নি, সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও ড্যাব সিলেট জেলার সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম, সিলেট জেলা বারের পিপি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। তখন দেশের সংগ্রামী সিপাহী-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল।
‘এবারও দেশের মানুষ শহীদ জিয়ার উত্তরাধিকারী দেশনায়ক তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের সাধারণ মানুষ তারেক রহমানের হাতেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চায়।’
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছিলেন। ঠিক দেশের ক্লান্তিকালে আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান নেতৃত্বে দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনের রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
জিকে গউছ বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের জন্য অমৃত্যু কাজ করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর তার নেতৃত্বে আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক জননেতা তারেক রহমান দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্লাকার্ড নিয়ে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের শোভাযাত্রায় যোগদান করতে দুপুর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রেজিস্টারি মাঠে জড়ো হতে থাকেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশ ও জাতির প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী শাসক চক্র আমাদেরকে ইতিহাস জানার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
জামায়াতের আমির বলেন, ‘১৯৭৫ সালের জুনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত মাত্র চারটি পত্রিকা বাদে সব গণমাধ্যমের ডিক্লারেশন বাতিল করে গণমানুষের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল।
‘এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন ওই সময়ের তরুণ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং কর্নেল এম এ জি ওসমানী। কিন্তু এজন্য তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হয়েছিল। এটিই ছিল বাস্তবতা।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মূলত বৈষম্য ও অপশাসনের কবর রচনা করে দেশকে দুঃশাসনমুক্ত এবং আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা যুগপৎভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল। সংগ্রামী জনতা ফুলের পাপড়ি দিয়ে দেশপ্রেমী বিপ্লবীদের বরণ করে নিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকে অন্যের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
‘কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ৭ নভেম্বর ব্যর্থ হওয়ার পর তারা কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের ৫৭ জন দেশপ্রেমী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তকে অরক্ষিত করে ফেলেছে। তাই ৭ নভেম্বরের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে শপথ গ্রহণ করতে হবে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
জামায়াতের আমির মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত শাহাদাত বরণকারী সব শহীদকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ রেজাউল করিম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য