গত শুক্রবার রাতে দেশে চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। তার দুই-এক দিন পর থেকেই তার প্রভাব পড়ে রাজধানীর সবজিসহ অন্য কাঁচাবাজারে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার এক সপ্তাহ পর রাজধানীর প্রধান কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে কিছুটা ভিন্ন দৃশ্য। এমনকি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যও ছিল বিপরীতমুখী।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারিতে দাম বেড়েছে, কিন্তু যেভাবে খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে সে আকারে নয়।
তাদের দাবি, তেলের নতুন দাম কার্যকরের পর ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সবজির কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেশি পড়ছে দাম। তাই খুচরাতেও আহামরি দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারিতে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা, এমনকি কিছু সবজিতে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এমনকি কারওয়ান বাজারেই পাইকারি ও খুচরা দোকানে কিছু সবজি ও কাঁচা পণ্যের দামের ফারাক দেড় থেকে দ্বিগুণ।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি চায়না আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। সেটি খুচরা বাজারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
মিয়ানমারের আদা পাইকারিতে ৬০-৭০ টাকা হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেশিতে ১০০-১১০ টাকায়।
আর রসুন খুচরায় ১২০ টাকা কেজি। যেখানে পাইকারি বাজারে সেটি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
পাইকারি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির পরে পরিবহন খরচ এবং মালের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা সেটা বাড়াইনি। আগের চেয়ে কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে, কিন্তু আমরা মাঝখানে কোনো দাম বাড়াইনি।’
একই কথা বলেন আরেক পাইকারি বিক্রেতা সাগর আহমেদ। তারও দাবি, পাইকারিতে তারা কোনো দাম বাড়াননি, যা বেড়েছে সেটা ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে।
তবে খুচরা বিক্রেতা আরিফুল ইসলামের দাবি, পাইকারিতে বেড়েছে বলেই খুচরায় বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকাররা অনেক পণ্য মজুত করে রাখে, দেশে কিছু ঘটলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।’
পাইকারি বিক্রেতা রাজন মিয়া জানান, শুক্রবার পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। খুচরায় সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ আগেও খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৫ টাকায়।
খুচরা বাজারে আলু মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। পাইকারিতে এই দাম ২০ থেকে ২৩ টাকা।
পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ১৬ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে পেঁপের কেজি ৭ থেকে ১০ টাকা। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
এ ছাড়া পাইকারিতে করলা ৩০-৩৫ টাকার বিপরীতে খুচরায় ৬০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ২৫-৩০ টাকার বিপরীতে ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙা ২০-২৫ টাকার বিপরীতে ৩৫-৪০ টাকা, পটল ২০ টাকার বিপরীতে ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকার বিপরীতে ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৩৫- ৪০ টাকার বিপরীতে ৫০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ২০-২৫ টাকার বিপরীতে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি টম্যাটোর দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
পাইকারির তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা। পাইকারি ৪০ টাকার শসা খুচরায় ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়।
দুই দিন আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ স্পর্শ করেছিল। তবে শুক্রবার ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় কেজিতে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারিতে মরিচের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
বিক্রেতা আশরাফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতীয় মরিচ আমদানি হওয়ার কারণে দাম কিছুটা কমেছে।’
বাজারে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, সেখান থেকে বেড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মুরগি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘পাইকারিতে মুরগির দাম বাড়ার কারণে খুচরাতে বেড়েছে।’
দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মুরগির সঙ্গে বেড়েছে ডিমের দাম। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। সেটা বেড়ে প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা।
আরেক বিক্রেতা তারিক বলেন, ‘মুরগির দাম বেড়েছে, তাই ডিমেরও দাম বেড়েছে।’
পাইকারি বাজারে না বাড়লেও খুচরা বাজারে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মাছের দাম। এর মধ্যে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৪৬০ টাকা পর্যন্ত।
তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা, কই ২০০ থেকে আড়াই শ টাকা এবং পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। তার চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশের কেজি ছিল ৮০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে।
ক্রেতা নাজমুল হক বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় আমরা ধরেই নিয়েছি যে সবকিছুর দাম বাড়বে। তাই দাম বাড়লেও আমরা সেটা গ্রাহ্য করছি না। তবে দাম বেড়ে যে গলায় ঠেকেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
আরও পড়ুন:সরকার নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০৫ টাকা করেছে, তবে অকটেন ও পেট্রলের দাম আগের মতো যথাক্রমে ১২৫ ও ১২১ টাকা রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘১ নভেম্বর থেকে খুচরা ক্রেতাদের আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ববাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে ২০২৩ সালের মার্চে স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করে।
যশোরের বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা ডিমের ৫ শতাংশ শুল্কায়ন মূল্যের ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিমের আরও একটি চালান এসে পৌঁছেছে।
এখন থেকে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশে শুল্কায়ন হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শুল্ক সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।
ডিমের এ চালান বুধবার সকালে খালাসের জন্য কাস্টমস হাউসে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়েছে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাতুল ইন্টারন্যাশনাল।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ডিমের এ চালান বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ চালানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২০০টি ডিম আমদানি হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৫ নভেম্বরে আমদানিকারক ঢাকার রামপুরার বিডিএস করপোরেশন ৬১ হাজার ৯৫০ টিম ডিম আমদানি করে। এর বাইরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠান এখনও ডিম আমদানি করেনি।
ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজার দর কমাতে গত ১৭ অক্টোবর শুল্ক কমানো সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আদেশটি বেনাপোল কাস্টমসে আসে গত ২০ অক্টোবর।
আদেশ পাওয়ার পর ২১ অক্টোবর একটি চালানের ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিম ৭৬ পয়সায় শুল্কায়ন করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর ডিমের ৫টি চালান আসে বেনাপোল বন্দরে।
আর এসব চালান কাস্টমস থেকে ছাড় করতে কাজ করছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স রাতুল ইন্টারন্যাশনাল।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশনের ম্যানেজার ইকরামুল হাসান সজিব বলেন, ‘নতুন নির্ধারণ করা শুল্কে ডিম খালাস নিচ্ছি। গত ২১ অক্টোবর ৫ শতাংশ শুল্কের ডিম খালাস শুরু হয়। প্রতিটি ডিম আগে ১ টাকা ৯৬ পয়সা শুল্কায়ন করা হতো। শুল্ক কমানোয় এখন থেকে প্রতিটি ডিমে মাত্র ৭৭ পয়সা শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে।
‘এতে আমদানি করা নতুন চালানের এসব ডিম বাজারে ৯ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। এই ডিমের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশন। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের শ্রী লক্ষী এন্টারপ্রাইজ।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, কম শুল্কে গত ২১ অক্টোবর ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি ডিম খালাস দেয়া হয়েছিল এবং আজ ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০টি খালাস দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারের অভিযানের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে শনিবার ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) আয়োজিত ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধনের ব্যাপারে ইতোমধ্যে কমার্স মিনিস্ট্রির অনারেবল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। খুব দ্রুতই ভোক্তা অধিকার আইনকে আরও শক্তিশালী করা হবে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কৃষকের মার্কেটটা অনেক বড়। জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ। এটা ব্যবসার জন্য ভালো সুযোগ। যারা এটা নিয়ে কাজ করতে চাইবে তাদের নিজের উন্নতি হবে; একইসঙ্গে জনকল্যাণেও কাজে আসবে।
‘তরুণদের প্রতি আহ্বান থাকবে- তারা কৃষি সেক্টরে এগিয়ে আসুক। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সবরকম সহযোগিতা করা হবে। কোনো বাধা এলে সরকার তা মোকাবিলা করবে।’
সকাল ৯টায় এই সম্মেলন শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনে ১০ জন সাংবাদিককে ‘ভোক্তা অধিকার সাংবাদিকতা পুরস্কার’ দেয়া হবে।
এই সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি জেলা ও ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাছাইকৃত ভোক্তা সংগঠকরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গত ছয় দিনে ৩ হাজার ৫৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি- রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, হিলি স্থলবন্দর পাইকারি বাজারের আড়তগুলোতে শুক্রবার বিকেলে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম কমেছে। দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন ভারত থেকে ২২ থেকে ২৭ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। গত ১৯ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ভারতীয় ১২৭টি ট্রাকে ৩ হাজার ৫৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এসব পেঁয়াজ নতুন শুল্ক ২০ শতাংশ দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে।
আমদানির তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেন কমছে না, এই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি ও মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
হিলি খুচরা বাজার শুক্রবার রাতে ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ওই পেঁয়াজ মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরুজুল্লাহ সরকার বলেন, ‘অন্যান্য জায়গার তুলনায় হিলি স্থলবন্দরে কিছুটা হলেও পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। আগে যেখানে ৮ থেকে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো, এখন প্রতিদিন ২২ থেকে ২৭ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, তবে আশা করছি আর কয়েক দিন পর পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার নিচে নেমে আসবে।’
আরও পড়ুন:সিন্ডিকেট ভাঙতে বিকল্প কৃষিবাজার চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এমনটা জানিয়ে বলেছেন, এই বাজারের মাধ্যমে উৎপাদন পর্যায় থেকে কৃষকের পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেগুনবাড়িতে ঢাকা শহরের ৫০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে বিকল্প কৃষিবাজার চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, কৃষক যেন সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য বিক্রি করতে পারে। যারা এটি করবে তাদের সহায়তা করবে সরকার। টাস্কফোর্স সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকার ইতোমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কাজ শুরু করেছে বলেও জানান শ্রম উপদেষ্টা।
বন্যাসহ আরও কিছু কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট কিংবা ফরিয়াদের মজুদসহ কারসাজির কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য ও জনদুর্ভোগ বাড়ে। এর বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারিভাবে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দেয়ার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা আরও ছড়িয়ে দিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে সহায়তা করবে কৃষিবাজার। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করবে সরকার।
আরও পড়ুন:চালের সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে রোববার জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি, দেশের আপামর জনগণের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালের ওপর আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক হ্রাস এবং আগাম কর প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
‘চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, বিদ্যমান রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে পাঁচ শতাংশ এবং বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-করাদি হ্রাস করার ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের আমদানি ব্যয় ১৪.৪০ টাকা কমবে। আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক হ্রাস এবং আগাম কর প্রত্যাহারের ফলে বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, দেশের আপামর জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।’
কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবজি আসার পথে নানা কারণে চড়া দামে কিনতে হয় ভোক্তাদের।
এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে তা ক্রেতাদের সুলভ মূল্যে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’।
স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মানিকগঞ্জ, বগুড়াসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষক থেকে সরাসরি পণ্য কিনছে স্বপ্ন। বেগুন, কাঁচা পেঁপে, লাউ, পটল, ঢেঁড়স, শসাসহ বেশ কিছু সবজি খোলা বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে ক্রেতাদের জন্য অফারে শুক্রবার ও শনিবার (১৮ ও ১৯ অক্টোবর) স্বপ্ন আউটলেটে বিক্রি হয়।
এ বিষয়ে স্বপ্নর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাপন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সময় তাদের খানিকটা স্বস্তি দিতে আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি এনে সুলভমূল্যে বাজার থেকে যথেষ্ট কম দামে আমাদের ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
‘আপাতত ৮টি সবজি দিয়ে এই উদ্যোগটি শুরু হচ্ছে। সামনে এর পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে।’
স্বপ্নর পণ্যগুলোর মূল্য দেখা যাবে নিচের চিত্রে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য