গত শুক্রবার রাতে দেশে চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। তার দুই-এক দিন পর থেকেই তার প্রভাব পড়ে রাজধানীর সবজিসহ অন্য কাঁচাবাজারে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার এক সপ্তাহ পর রাজধানীর প্রধান কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে কিছুটা ভিন্ন দৃশ্য। এমনকি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যও ছিল বিপরীতমুখী।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারিতে দাম বেড়েছে, কিন্তু যেভাবে খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে সে আকারে নয়।
তাদের দাবি, তেলের নতুন দাম কার্যকরের পর ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সবজির কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেশি পড়ছে দাম। তাই খুচরাতেও আহামরি দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারিতে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা, এমনকি কিছু সবজিতে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এমনকি কারওয়ান বাজারেই পাইকারি ও খুচরা দোকানে কিছু সবজি ও কাঁচা পণ্যের দামের ফারাক দেড় থেকে দ্বিগুণ।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি চায়না আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। সেটি খুচরা বাজারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
মিয়ানমারের আদা পাইকারিতে ৬০-৭০ টাকা হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেশিতে ১০০-১১০ টাকায়।
আর রসুন খুচরায় ১২০ টাকা কেজি। যেখানে পাইকারি বাজারে সেটি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
পাইকারি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির পরে পরিবহন খরচ এবং মালের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা সেটা বাড়াইনি। আগের চেয়ে কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে, কিন্তু আমরা মাঝখানে কোনো দাম বাড়াইনি।’
একই কথা বলেন আরেক পাইকারি বিক্রেতা সাগর আহমেদ। তারও দাবি, পাইকারিতে তারা কোনো দাম বাড়াননি, যা বেড়েছে সেটা ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে।
তবে খুচরা বিক্রেতা আরিফুল ইসলামের দাবি, পাইকারিতে বেড়েছে বলেই খুচরায় বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকাররা অনেক পণ্য মজুত করে রাখে, দেশে কিছু ঘটলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।’
পাইকারি বিক্রেতা রাজন মিয়া জানান, শুক্রবার পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। খুচরায় সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ আগেও খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৫ টাকায়।
খুচরা বাজারে আলু মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। পাইকারিতে এই দাম ২০ থেকে ২৩ টাকা।
পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ১৬ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে পেঁপের কেজি ৭ থেকে ১০ টাকা। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
এ ছাড়া পাইকারিতে করলা ৩০-৩৫ টাকার বিপরীতে খুচরায় ৬০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ২৫-৩০ টাকার বিপরীতে ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙা ২০-২৫ টাকার বিপরীতে ৩৫-৪০ টাকা, পটল ২০ টাকার বিপরীতে ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকার বিপরীতে ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৩৫- ৪০ টাকার বিপরীতে ৫০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ২০-২৫ টাকার বিপরীতে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি টম্যাটোর দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
পাইকারির তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা। পাইকারি ৪০ টাকার শসা খুচরায় ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়।
দুই দিন আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ স্পর্শ করেছিল। তবে শুক্রবার ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় কেজিতে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারিতে মরিচের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
বিক্রেতা আশরাফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতীয় মরিচ আমদানি হওয়ার কারণে দাম কিছুটা কমেছে।’
বাজারে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, সেখান থেকে বেড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মুরগি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘পাইকারিতে মুরগির দাম বাড়ার কারণে খুচরাতে বেড়েছে।’
দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মুরগির সঙ্গে বেড়েছে ডিমের দাম। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। সেটা বেড়ে প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা।
আরেক বিক্রেতা তারিক বলেন, ‘মুরগির দাম বেড়েছে, তাই ডিমেরও দাম বেড়েছে।’
পাইকারি বাজারে না বাড়লেও খুচরা বাজারে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মাছের দাম। এর মধ্যে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৪৬০ টাকা পর্যন্ত।
তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা, কই ২০০ থেকে আড়াই শ টাকা এবং পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। তার চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশের কেজি ছিল ৮০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে।
ক্রেতা নাজমুল হক বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় আমরা ধরেই নিয়েছি যে সবকিছুর দাম বাড়বে। তাই দাম বাড়লেও আমরা সেটা গ্রাহ্য করছি না। তবে দাম বেড়ে যে গলায় ঠেকেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
আরও পড়ুন:কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সারা দেশে ২৯টি খাদ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিলেও এর প্রভাব দেখা যায়নি রাজশাহীর বাজারে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,পাইকারি বাজারে দাম না কমায় কমে বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
রাজশাহীর বাজার পরিদর্শনে জানা যায়, ছোলার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৯৮ টাকা বেঁধে দিলেও শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীর বাজারে পণ্যটি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।
দুই ধরনের মসুর ডালের নির্ধারিত দাম ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা এবং ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু বাজারে মসুর ডাল প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
খুচরা বাজারে খেসারির ডালের সর্বোচ্চ দাম ৯৩ টাকা করা হলেও বাজারে মিলে ১৩০ টাকায়।
মাসকালাইয়ের দাম ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং মুগডালের খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ দাম ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়, তবে বাজারে খেসারির ডাল ১৬০ টাকা ও মুগ দাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এ ছাড়া ছাগলের মাংসের দাম এক হাজার তিন টাকা করা হয়, তবে রাজশাহীর বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। খাসির মাংস বিক্রি হয় এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও রাজশাহীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগির কেজি ছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা।
সরকার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে ৬৫ টাকা। এ ছাড়া রসুন ১২০ টাকা ও আদার দর ঠিক করা হয় ১৮০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের দর নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা কেজি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্ধারিত দামের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি বাজারে।পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। আদা আগের দামেই ২০০ টাকা কেজি এবং রসুন বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজি দরে।
শুকনো মরিচের সর্বোচ্চ দাম ৩২৭ টাকা বলা হলেও রাজশাহীতে বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও শিম ৫০ টাকা এবং আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২৪ টাকা বেঁধে দিয়েছে সরকার, তবে বাজারে এসব সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।
বাজারে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। বেগুন ও শিম বিক্রি হতে দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অন্যদিকে টমেটো ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে রাজশাহী বাজারে ৩৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো খেজুর নাই। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে।
চিড়ার খুচরা দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। বেসনের কেজি ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, তবে নির্ধারিত দামে পণ্যগুলো বিক্রি হয়নি।
চিড়া বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর বেসন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
বিক্রেতারা অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম তুলে ধরে বলেন, বাজারে সরবরাহ বাড়লে পণ্যের দাম কমে এবং সরবরাহ ঘাটতি থাকলেই দাম বাড়ে। এতে তাদের করার কিছু নেই।
রাজশাহী সাহেব বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৭৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করি। আমরা সিটি হাটে গরু কিনি। গরু কিনতে যে টাকা লাগছে, সেইভাবেই আমরা বিক্রি করছি।
‘হাটে যা কিনছি, সেইভাবেই বিক্রি করছি। ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দাম তো বাড়তি। আমরা করব কী?’
সাহেব বাজরের মুরগি বিক্রেতা জনি হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো কেনার পরে বেচাকেনা। আমরা তো কমাতে পারছি না। আমরা বেশি দামে কিনছি। সেভাবেই বিক্রি করছি।
‘আমাদের এক কেজি মাল বেচে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। এখন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করে আমাদের ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হবে।’
সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে দামে কিনছি, সেই অনুপাতেই বিক্রি করছি।’
ক্রেতাদের ভাষ্য, সব পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকার দাম কমালে বাজারে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে, কিন্তু বাড়ালে রাতারাতি বেড়ে যায়। প্রয়োজন সরকারের কঠোর নজরদারি।
রাজশাহী মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে আসা মাসুদ রানা বলেন, ‘সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি, তবে দাম বাড়ালে সেটি অবশ্যই এতক্ষণ কার্যকর হয়ে যেত। আমরা সাধারণ মানুষ, সাধারণ ইনকাম করি। দাম নিয়ে আমরা তো হিমশিম খাচ্ছি।’
বাজারে মুরগি কিনতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের কোনো প্রভাব পড়েনি দাম কমার, তবে সরকার যদি এই বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই এগুলোর দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। এ জন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফরিন হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দামের ঘোষণা দেয়া হয়। আমরাও জেনেছি আজ (শনিবার) এই দাম ব্যবসায়ীরা কার্যকর করেনি।
‘আমরা এবং ভোক্তা অধিকার সোমবার থেকে যৌথভাবে মাঠে নামব এবং অবশ্যই সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করব।’
আরও পড়ুন:দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দীর্ঘদিন ধরেই। আর পবিত্র রমজানে বাজার হয়ে পড়েছে লাগামহীন। এ অবস্থায় খুবই কঠিন সময় পার করছে শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। রমজানে তাদের মাসিক ব্যয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বেড়ে গেছে। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব পরিবারকে।
শহরাঞ্চলে অনেকেই আছেন যাদের বাসা সুপারশপগুলোর আশপাশে। একটা সময়ে দৈনন্দিন বাজারটা তারা এখানেই সারতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা এই পরিবারগুলো এখন স্থানীয় কাঁচাবাজারের দিকে ছুটছেন। খুঁজছেন কিছুটা সাশ্রয়ে কেনাকাটার উপায়।
রাজধানীতে বসবাসকারী বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে কাজী শরিফুল হক বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘রমজানে ইফতার ও সেহরির সময় যে খাবার খাওয়া হয়, তাতে অন্য সময়ের থেকে মাসে খাবার খরচ বেশি হয়। এসময় সাধারণত ফল, গরুর মাংস ও খাসির মাংসের মতো কিছু জিনিসের ব্যবহার কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় বেশির ভাগ পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই মাছের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মুরগির কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’
সরকার নির্ধারিত মূল্যে খেজুর পাওয়া যায় না জানিয়ে শরিফুল বলেন, ‘আপেল, মাল্টাসহ কিছু ফল প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।
‘চাল ও ভোজ্যতেলের দাম আপাতত স্থিতিশীল। তবে সংসার খরচ শুধু বাজারের খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধ (স্বাস্থ্য), পানির বিল, গ্যাসের বিল, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়াসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।’
ইদানীং রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে শরিফুলের মতো অবস্থা অধিকাংশ ক্রেতার।
২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্কুইজড মিডল’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ২০১১ সালে এটিকে তাদের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করে। শব্দবন্ধটির সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘এটি এমন একটি শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত সমাজ, যাদের আয় নিম্ন বা মধ্যম স্তরের। এরা মুদ্রাস্ফীতি, মজুরি হিমায়িত ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় খরচ কমাতে বাধ্য হয়।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ইউএনবিকে বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি ও এলোমেলোভাবে বিনিময় হারের উঠানামা (আমদানি পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে) শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ শহুরে মানুষ সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে একটি পরিবারের ভোগ করা পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় নিজের জমিতে, যা শহরে হয় না। মধ্যবিত্তদের বেশিরভাগই এমনকি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নগর জীবনকে আরও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।’
কাওরানবাজারের শরিফুলসহ অন্যদের একই রকম অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাহমিদা বলেন, শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম নয়, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যয় এবং নানা ধরনের (ইউটিলিটি) বিলও বেড়েছে।
‘কোভিডের প্রাদুর্ভাব (২০২০-২০২২) কমে যাওয়ার পর পরিবারের আয়, মূলত বেতন বাড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে পড়েছেন চাকরিজীবীরা।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৩ সালের নভেম্বরে টানা ২২তম মাস বাংলাদেশে গড় মজুরি প্রবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির হারের অনেক নিচে রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমদানি হোক বা দেশে উৎপাদিত হোক সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।
‘চাকরিজীবীদের আয় না বাড়লেও অন্যদের পাশাপাশি তাদের ব্যয়ও বেড়েছে। আর এটি নির্দিষ্ট আয়ের গোষ্ঠীর জন্য একটি বিশেষ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি যৌক্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে দাম বাড়ানো হয় অর্থাৎ বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলা, তাহলে এই বোঝা নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকবে। কিন্তু যখন স্বেচ্ছাচারিতা করে তখন জনগণের পক্ষে এটি খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
‘এমনটি ঘটছে কি না সেদিকে কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগ দেয়ার উচিত। কারণ দেশে মূল্যবৃদ্ধি, মজুতদারি ইত্যাদির বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।’
যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যায়, সেখানে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, বাজারে স্থিতিশীলতা আনার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বাজার খরচ পাঁচ টাকা। আর ওই সামান্য টাকায় মিলেছে ৯ ধরনের খাদ্য উপকরণ। আর এই বাজারের ক্রেতারা সবাই সমাজের পিছিয়ে পড়া দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ।
শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগরীর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পাকা রাস্তায় বসেছিল এই বাজার। ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব) নামের একটি সংগঠন পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন করেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পুলিশের কনস্টেবল এস এম আকবর। সংগঠনটি পরিচালনাকারী অন্যরাও পুলিশের সদস্য। চাকরির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের সঙ্গে সমাজের অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষও যুক্ত হয়ে হতদরিদ্রদের সহায়তায় হাত বাড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় রমজানে হাজারও পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে ক্রেতারা পেয়েছেন ৩ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি করে চিড়া, ছোলা, চিনি, মুড়ি, পেঁয়াজ এবং আধ কেজি করে খেজুর ও তেল। কার্যক্রম শুরুর দিনে প্রায় ৩০০ পরিবারের মাঝে এসব উপকরণ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
কেএমপি কমিশনার এ সময়ে বলেন, ‘ওয়াব নামের সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পুলিশের চাকরি করার পাশাপাশি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এটা মানবিক পুলিশিং কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। এই সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ইতোপূর্বেও বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘সংকটাপন্ন রোগীকে বিনামূল্যে রক্তদান, গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা উপকরণ কিনে দেয়াসহ শিক্ষার খরচ বহন, দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সেলাই মেশিন প্রদান এবং প্রাকৃতিক প্রতিটি দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে থাকেন।’
ওয়াব-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সেবামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একটি মানুষ তার কর্ম দিয়েই কিন্তু প্রমাণিত হয়; সে কী চাকরি করে তা দিয়ে প্রমাণিত হয় না। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই পরমাত্মা তথা স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোও একটি ইবাদত।’
সামাজিক সংগঠন ওয়াবের অ্যাডমিন সরদার মসনুর আলী বলেন, ‘রমজানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু হবে। খুলনা থেকে এর উদ্বোধন হলো। ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে যারা ঠিকমতো বাজার করতে পারছেন না তারা পাঁচ টাকার বিনিময়ে এসব উপকরণ পাবেন। এছাড়া যাদের পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা পণ্য পৌঁছে দিয়ে আসেন, যাতে গ্রঈতা সামাজিকভাবে নিজেকে হেয় মনে না করেন।’
সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মাছ-মাংসসহ ২৯টি কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
শুক্রবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর বাসসের
এতে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর ৪(ঝ) ধারা অনুযায়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে কৃষিপণ্য কেনাবেচার জন্য অনুরোধ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, নতুন নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী মুগ ডালের পাইকারি বাজার মূল্য হবে ১৫৮.৫৭ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৬৫.৪১ টাকা। মাসকলাইয়ের পাইকারি বাজার মূল্য ১৪৫.৩০ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৬৬.৪১ টাকা, ছোলার (আমদানিকৃত) পাইকারি বাজার মূল্য ৯৩.৫০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৯৮.৩০ টাকা, মসুর ডাল (উন্নত) পাইকারি বাজার মূল্য ১২৫.৩৫ টাকা ও খুচরা ১৩০.৫০, মসুর ডাল (মোটা) পাইকারি বাজার মূল্য ১০০.২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ১০৫.৫০ টাকা, খেসারি ডাল পাইকারি বাজার মূল্য ৮৩.৮৩ টাকা ও খুচরা মূল্য ৯২.৬১ টাকা।
এ ছাড়া পাংগাস (চাষের মাছ) পাইকারি বাজার মূল্য ১৫৩.৩৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৮০.৮৭ টাকা, কাতল (চাষের মাছ) পাইকারি বাজার মূল্য ৩০৩.০৯ টাকা ও খুচরা মূল্য ৩৫৩.৫৯ টাকা। গরুর মাংস কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৬৩১.৬৯ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬৬৪.৩৯ টাকা, ছাগলের মাংস পাইকারি বাজার মূল্য ৯৫২.৫৮ টাকা ও খুচরা মূল্য ১০০৩.৫৬ টাকা, বয়লার মুরগি পাইকারি বাজার মূল্য ১৬২.৬৯ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৭৫.৩০ টাকা, সোনালি মুরগি পাইকারি বাজার মূল্য ২৫৬.১০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৬২ টাকা। ডিম (পিস) পাইকারি বাজার মূল্য ৯.৬১ টাকা ও খুচরা মূল্য ১০.৪৯ টাকা।
দেশি পেঁয়াজ কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৫৩.২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬৫.৪০ টাকা, দেশি রসুন কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৯৪.৬১ টাকা ও খুচরা মূল্য ১২০.৮১ টাকা, আদা আমদানিকৃত পাইকারি বাজার মূল্য ১২০.২৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৮০.২০ টাকা। শুকনো মরিচ কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ২৫৩.২৬ টাকা ও খুচরা মূল্য ৩২৭.৩৪ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৪৫.৪০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬০.২০ টাকা।
বাঁধাকপি কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ২৩.৪৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৮.৩০ টাকা, ফুলকপি কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ২৪.৫০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৯.৬০ টাকা, বেগুন কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৩৮.২৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪৯.৭৫ টাকা, সিম কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৪০.৮২ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা, আলু কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ২৩.৩০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৮.৫৫ টাকা, টমোটো কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ৩০.২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪০.২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি পাইকারি বাজার মূল্য ১৬.৪৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৩.৩৮ টাকা।
খেঁজুর জাহিদি পাইকারি বাজার মূল্য ১৫৫.৫৩ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৮৫.০৭ টাকা, মোটা চিড়া পাইকারি বাজার মূল্য ৫২.৭৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬০ টাকা, সাগর কলা হালি পাইকারি বাজার মূল্য ২২.৬০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৯.৭৮ টাকা ও বেসন পাইকারি বাজার মূল্য ৯৯.০২ টাকা ও খুচরা মূল্য ১২১.৩০ টাকা।
পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে সোনালি আঁশ রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পাট দিবস উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে পাট খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্মারক হস্তান্তর শেষে দেয়া বক্তব্যে সরকারপ্রধান পাটজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা পাট, পাটজাত পণ্য যত বেশি উৎপাদন বাড়াতে পারব, দেশীয় কাজে যেমন লাগবে, আর রপ্তানি ক্ষেত্রেও বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই পাটের রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা, কোন দেশে কী ধরনের চাহিদা আছে, সেটা দেখা এবং সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করার দিকেই আমাদের দৃষ্টি হতে হবে।’
পাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি এই সোনালি আঁশ, যে সোনালি আঁশ আমাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য সোনালি দিনের হাতছানি দিচ্ছে। কাজেই সেটা আমাদের যথাযথ কাজে লাগাতে হবে।’
সরকার পাটের সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে চায় মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরকার পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায়।
তিনি বলেন, পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাট ও পাট শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার খুঁজতে হবে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ব্যবহারে সুযোগ বেড়েছে। পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানিপণ্যে প্রণোদনা দেবে সরকার।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশের সম্পদ খুব সীমিত। পাট আমাদের দেশের একটি পণ্য। পাটকে জাতির পিতা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পাট আমাদের এমন একটি পণ্য যার চাহিদা কখনও শেষ হবে না।
‘পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। এই সোনালি আঁশ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। বর্তমান যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশবান্ধব পণ্যের, পাট তেমন একটি পণ্য।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশীয় পণ্যটা যদি আমরা উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে পাটই আমাদের জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। দেশীয় বিভিন্ন কাজে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবন করেছি। তার ফলে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আবিষ্কারের ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা আজকে পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাটের আঁশ এবং চামড়া মিলে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি।’
পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় সুযোগ বেড়ে গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাট শিল্প আরও উন্নত কীভাবে করা যায়, সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি। একদিকে গবেষণা অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে পাট থেকে আরও উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করা, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। পাটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুরের বাজারে সবচেয়ে দামি সবজি এখন দেশি সজনে ডাঁটা। গ্রীষ্মকালীন সবজিটির দাম ও চাহিদা কথা বিবেচনায় ভারত থেকেও আমদানি করা হচ্ছে।
জেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে মঙ্গলবার দেখা যায়, সেখানে ভারতীয় সজনে ডাঁটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। আর দেশি সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৪০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত।
অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে সবজির বাড়তি চাহিদা থাকায় দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে থাকা ব্যবসায়ীরা যুক্তি করে রমজান মাস উপলক্ষে বাড়িয়েছে সব সবজির দাম।
ইতোমধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
সোমবার জেলার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ বামন্দী বাজারে সবজির দাম ছিল কেজিপ্রতি ঠিক এমন- সজনে ডাঁটা ৪৪০ থেকে ৪৮০, বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শসা ৮০, পটল ১০০, টমেটো ৪০, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, গাজর ৩০, শিম ৩০ থেকে ৪০, লাউ প্রতি পিচ ৩০, পুঁইশাক ২৫ টাকা।
সজনে ডাঁটার পরের স্থান তরকারি হিসেবে খাওয়া কাচা কাঁঠাল বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
সবজি ক্রেতা জিয়াউর বলেন, ‘রমজান মাসে পরিবারের ছেলে মেয়েরা মাছ মাংসের চেয়ে সবজি খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই বাজারে সবজি কিনতে এসেছি। নতুন সবজি হিসেবে আধা কেজি সজনে ডাঁটা কিনলাম। দাম ধরলো ২৪০ টাকা। যা কিনা বাজারের সবচেয়ে দামি সবজি।’
এনজিও কর্মি জুলেখা খাতুন বলেন, ‘আমরা এনজিওর চাকুরি করি, সারা দিন সময় পাইনা তাই সন্ধ্যার পর হাটে এসেছি। বাজারে এসে সজনে ডাঁটা দেখে লোভ হলো।
আধা কেজি সজনে ডাঁটার দাম বলে ২২০ টাকা। আমি বললাম দাম এতো বেশি যে। বিক্রেতা বলে দুপুরে নাকি এ সজনে ডাঁটা কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকা করে।’
ব্যাবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, এ বছর এমনিতেই সবজির দাম বাড়তি, তারপরে এখন শুরু হচ্ছে রমজান মাস। অন্য মাসের তুলনায় এই রমজান মাসে সবজির চাহিদা বেড়ে যায়। বিপরীতে সবজি আমদানি কমে যায়।
তিনি বলেন, বতর্মানে আলু ৩৫ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ১০০, নতুন রসুন ১৪০, শুকনো রসুন ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো রসুন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে খুব কম।
আরেক ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাজারের মধ্যে নতুন সবজি বলতে কাঁচা কাঁঠাল ও সজনে ডাঁটা। দেশীয় সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত। আর কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর ভারতীয় সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা।’
জেলার গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, ‘রমজান মাস সামনে রেখে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্য বাজার মনিটরিং শুরু করেছি। অতি দ্রুত বাজার মনিটরিং আরও বাড়ানো হবে। কোনো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তৈরি করতে দেয়া হবে না। অতিরিক্ত দাম নিলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:রমজান উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা করে দাম নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আগামী বছর পবিত্র মাসটিতে বাংলাদেশেও এমন উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে রোববার সাংবাদিকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি।
বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে সুফল আসছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সো আমরা পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি এবং একেবারে যে ইমপ্রুভ (উন্নতি) হয় নাই, তা না। আমরা কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য অলরেডি তাদের সম্মতি আমরা পেয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যে পেঁয়াজও ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে ঢুকবে।’
আগামীতে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার আশা প্রকাশ করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং আপনাদের মাধ্যমে আমি সকল ব্যবসায়ী মহলকে বলব, আমি ইউএইতে দেখলাম যে, ১৮টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তারা একেবারে রাষ্ট্রীয় সার্কুলার দিয়েছে যে, এই পণ্যগুলির কেউ দাম এই মাসে বাড়াতে পারবে না। তো আমরা ইনশাল্লাহ এবার হয়তো পারি নাই।
‘আমাদের সাপ্লাই চেইনগুলা আমরা ইমপ্রুভ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ ইমপ্রুভ করে আগামীতে আমরা ক্যাবিনেটের (মন্ত্রিসভার) অনুমোদন নিয়ে এই যে এসেনশিয়াল প্রোডাক্ট (নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য), এই প্রোডাক্টগুলির একটা কমপ্লিট লিস্ট (সম্পূর্ণ তালিকা) তৈরি করে আমরা ওইভাবে এটার সাপ্লাই বাড়ানো এবং পণ্যের নির্ধারিত দাম, আমরা ঠিক করতে পারি।’
চেইন শপগুলোতে পণ্যের দাম অপেক্ষাকৃত কম উল্লেখ করে নিজের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আনফরচুনেটলি (দুর্ভাগ্যবশত) যখন কাঁচাবাজারে গেলাম, তখন দেখা গেল যে, প্রত্যেকটা জিনিসেরই দাম দুই-তিন টাকা ওই দামের (সুপার মার্কেটের দামের) চেয়ে বেশি। সো একেবারে রিটেইল পর্যায়ে কাঁচাবাজারগুলি অস্থায়ীভাবে থাকে। সো ওইগুলা আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব, এটা এখন থেকে আমাদের বের করতে হবে।’
বাজারে তদারকি বাড়ানো হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই। সরবরাহটাকে নিশ্চিত করা। কোনোভাবেই জানি সরবরাহ ঘাটতি না হয়। তো আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছি এবং বাজার মনিটরিং ইনশাল্লাহ আমরা বাড়াব।
‘ওই ছোট ছোট পাড়ার বাজারগুলি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, আমরা সেটা সুপারভিশনের মাধ্যমে হোক এবং ফুড ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে হোক, এটা আমরা চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য