রিমন কর্মকার নামে এক যাত্রী সকালে নিউজবাংলার ফেসবুক পেজে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি লেখেন, ‘তরঙ্গ প্লাস আজকে ওয়েবিল কাটছে। কিন্তু কাল নিউজে দেখলাম কোনো চেকার থাকবে না।’
ওয়েবিলে বাস চলছে কি না, একজন গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে এই প্রশ্ন রাখার পর ফাহিদ মোনায়েম নামে একজন কমেন্টে লেখেন, ‘রামপুরা আলিফ, রবরব, অছিম, রাজধানী, স্বাধীন, রমজান এরা ওয়েবিল ও চেক করছে। চেক ও চেকের আগে উঠলেই চেকের বিল দিতে হবে।’
হাসান ইমন লেখেন, ‘রামপুরা বনশ্রী, মেরাদিয়া, ত্রিমোহনী ব্রিজে চেকার দেখা গেছে, রাজধানী, অছিম, আলিফ পরিবহনে দেখা গেছে।’
অর্থাৎ রাজধানীতে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় যে কৌশলে, সেই ওয়েবিল তুলে দেয়ার অঙ্গীকার করেও কথা রাখেননি বাসমালিকরা।
ওয়েবিলে নয়, কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া কাটা হবে- বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মালিক সমিতি এমন ঘোষণা দেয়ার পরও বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাস ভাড়ায় সেই নৈরাজ্য চলছেই।
বাসমালিকদের সমিতি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে কয়েক মাস সময় লাগবে। এমনকি এ নিয়ে ইতিবাচকভাবে লেখার অনুরোধও করেছেন তিনি।
তবে অন্তত ১৬টি বাস রুটে খোঁজ নিয়ে একটাতেও এনায়েত উল্লাহর অনুরোধের ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সাভার থেকে যাত্রীবাড়ী রুটে চলা এমএম লাভলী ও লাব্বাইক পরিবহন, মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী পর্যন্ত চলা স্বাধীন পরিবহন, ঘাটারচর থেকে উত্তরা রুটে চলা প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন, গাবতলী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলা বসুমতি, মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ হয়ে বনশ্রী পর্যন্ত চলা তরঙ্গ প্লাস, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি থেকে বনশ্রী ও মিরপুর-১ থেকে বনশ্রী রুটে চলা আলিফ পরিবহন, গাবতলী থেকে বাড্ডা লিংক রোড রুটে চলা রবরব পরিবহন, গাবতলী থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটে চলা আছিম পরিবহন, গাবতলী থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটের রাজধানী পরিবহন, মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে বনশ্রী রুটের রমজান পরিবহন, রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান রুটের শ্রাবণ পরিবহন, মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে কেরানীগঞ্জ রুটের দিশারী পরিবহনসহ অসংখ্য কোম্পানি এখনও ওয়েবিলে ভাড়া নিচ্ছে।
সাংবাদিক জেনে ওয়েবিলে ‘নাটক’
ওয়েবিলে বাড়তি ভাড়া কেন নিচ্ছে জানতে চাইলে এম এম লাভলী পরিবহনের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. আনোয়ার বলেন, ‘ভাই আমি নতুন মানুষ। অল্প কয়েক দিন এই বাসে কাজ করতেছি। বুঝি নাই।’
রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় আনোয়ারের সঙ্গে কথোপকথন চলার সময় চেকার হিসেবে বাসে উঠে যাত্রী গুনতে শুরু করেন রিফাত হোসেন রাব্বি নামে একজন। কতজন ছাত্র আছেন, পুলিশ পাস আছে কি না, এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তিনি ওয়েবিলে সই করার পরই নিজের অবস্থান পাল্টে ফেলেন।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করতেই রাব্বির মুখে পুরো উল্টো বুলি। ওয়েবিলে যাত্রী তোলার দায় তিনি ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা আনোয়ারকে দোষারোপ শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘তুমি কেন বেশি ভাড়া নিছ?’
আনোয়ার প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, ‘নেই নাই।’ পরে প্রমাণ দেয়ার পর বলেন, ‘ভাই ভুল হয়ে গেছে।’
এরপর রাব্বী ওয়েবিলে যাত্রীসংখ্যা লিখে ওয়েবিলের উল্টো পাশের পৃষ্ঠায় ‘২০০ টাকা জরিমানা’ লিখে দেন।
এই ২০০ টাকা কে নেবে, আদৌ কেউ নেবে কি না, বা নিলে যাত্রীর লাভ কী, এমন অনেক প্রশ্নের জবাব না জেনেই সেখান থেকে ফিরতে হলো।
কয়েক মাস সময় লাগবে: এনায়েত উল্লাহ
গত নভেম্বরের মতোই এবারও ওয়েবিলে বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েও যাত্রীদের ঠকিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে বাসমালিক সমিতির এই নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরকে কাজটা করতে দেন না ভাই। আমরা তো শুরু করলাম মাত্র। আমাদেরকে করতে দেন। শুরুতে যদি নেগেটিভভাবে দেখেন তাহলে আমাদের কাজটা করতেও অসুবিধা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কীভাবে মনে করেন এটা দুই-চার ১০ দিনে হয়ে যাবে? আমরা এটা নিয়ে কয়েক মাস কাজ করব। সব ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।’
কীভাবে চেষ্টা করছেন?- এমন প্রশ্নে এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘এদেরকে (বাস কোম্পানি) সিস্টেমে আনার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করতেছি। গতকালও আমি বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বসেছি। আমাদের ৯টা দল মাঠে কাজ করতেছে। একেক দলে মিনিমাম পাঁচজন কাজ করছে।’
গত নভেম্বরেও এনায়েত উল্লাহর বাস মালিক সমিতি ঠিক এই কাজগুলো করেছিল এবং পরে এনায়েত নিজে বলেছেন, ওয়েবিল ছাড়া সম্ভব নয়।
ওয়েবিলে চলবে না, ঘোষণা নতুন নয়
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর গত নভেম্বরে কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করার পর বিআরটিএর ঘোষণা ছিল, ওয়েবিল অবৈধ। সেটি থাকবে না। এমনকি আইন না মানলে বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের হুমকিও দেয়া হয়।
সে সময় খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন, ওয়েবিলে বাস চলবে না। ভাড়া কাটা হবে কিলোমিটার হিসেবে।
এবার লিটারে তেলের দাম আরও ৩৪ টাকা বাড়ানোর পরও বিআরটিএ থেকে একই কথা বলা হলেও কার্যত সড়কে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাদের। আর ইচ্ছাও আছে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে এ কারণে যে সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, যদি ওয়েবিলে চলে এবং তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযোগ পায়, তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। অর্থাৎ বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানেন না, রাজধানীতে ওয়েবিলে কোনো বাস চলে কি না।
তিনি বলেন, ‘তারা ওয়েবিল বন্ধ করে পজ মেশিনের মাধ্যমে ভাড়া কাটুক। ঢাকা নগর পরিবহন, বিআরটিসি এই পজ মেশিনের মাধ্যমে ভাড়া কাটে। বাসে একটা করে পজ মেশিন দিয়ে দিলেই তো দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া কাটা সহজ হয়।’
‘এসব ঘোষণা লোক দেখানো’
যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন ওয়েবিল নিয়ে বাসমালিকদের ঘোষণা লোক দেখানো।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওয়েবিল বন্ধ করতে এত মাস লাগবে কেন? ওয়েবিল বন্ধের জন্য এনায়েত উল্লাহর ঘোষণা এই নিয়ে চতুর্থ দফা। আসলে তারা কী করতে চায় এটাই বড় প্রশ্ন।’
কিলোমিটার হিসেবে নয়, চলছে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়
কিলোমিটারে আড়াই টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা- এই নিয়মের থোরাই কেয়ার করছে নগরে চলা বাসগুলো। কেউ সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে ১৫ টাকা, কেউবা ২০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি। আবার চার কিলোমিটারের ভাড়া ২০ বা ২৫ টাকা- এভাবেও আদায় চলছে।
চার কিলোমিটারের জন্য ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির বাসে এই পথে ২৫ টাকা, কেউ ২০ টাকা, কেউ এমনকি ৩০ টাকাও আদায় করছে।
বেসরকারি বাস কোম্পানির পাশাপাশি হাতিরঝিলে সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত চক্রাকার বাসও এই অনিয়মের বাইরে নয়। তিন কিলোমিটারে ২০ টাকা, চার কিলোমিটারে ২৫ টাকা আদায় চলছে সেখানে, অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।
এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।
‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’
দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।
একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।
তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।
‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য