জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এবার রেলের ভাড়া সমন্বয়ের চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কবে আসছে, সেটি জানাননি।
মঙ্গলবার দুপুরে টঙ্গী-গাজীপুর রুটে চলমান ডাবল লাইনের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘নৌপথ এবং সড়কপথে পরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করা হলেও তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে রেলের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
গত শুক্রবার মধ্যরাতে ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ায় সরকার। এর আগে গত নভেম্বরে বাড়ানো হয় ১৫ টাকা। সে সময় পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেলেও ভাড়া বাড়ায়নি রেলওয়ে।
ছয় বছর আগে রেলে শেষবার ভাড়া বেড়েছিল। রেলে সবশেষ ভাড়া বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় গড়ে ভাড়া বাড়ে ৭ শতাংশ। এতে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বেড়ে হয় ৪০ পয়সার মতো।
এর চার বছর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয় ৫০ শতাংশ। সে সময় কিলোমিটারপ্রতি গড় ভাড়া ২৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩৬ পয়সা।
তেলের দাম বাড়ানোর আগে রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীপিছু তাদের খরচ ২ টাকা ৬০ পয়সার বেশি। এখন তা আরও বাড়বে।
বর্তমানে দূরপাল্লায় বাসে ভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগর পরিবহনে আড়াই টাকা।
লঞ্চে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৩০ পয়সা। ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ২ টাকা করে। তেলের দাম বাড়ায় এখন মালিকরা চাইছেন যথাক্রমে ৪ টাকা ৬০ পয়সা ও ৪ টাকা। তবে এই হারে ভাড়া দাবিকে যুক্তিযুক্ত মনে করছে না নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তাই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।
এই হিসাবে রেল ভাড়া অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় সবচেয়ে কম। আর যাত্রীপিছু খরচের চেয়ে কম আদায় করায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দিতে হয় সরকারি সংস্থাটিকে।
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছর ১ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে তারা।
রেলমন্ত্রী কথা বলেন জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নিয়েও। জানান, আগামী ডিসেম্বরে চালু হবে এই লাইন। তখন কোনো ট্রেনকে আর ক্রসিংয়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। এতে রেলের সময়সূচিতে উন্নতি হবে।
কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর জংশন পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর জংশন পর্যন্ত রেলপথ উন্নত করার কাজ শুরু হয়।
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন কল্পতরু ওই ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
রেলে কাটা পড়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, রেলের দুর্ঘটনা এড়াতে নিজেদের সচেতন হতে হবে। রেলগেট দেয়া হয় মূলত রেলের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু যারা সড়ক তৈরি করছে, তাদেরকেও নিরাপদ সড়কের জন্য দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কামরুল ইসলাম, ডাবল লেন প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসরীন পারভীনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এ অবস্থা সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটারের রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নোয়াপাড়াসহ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশেরও একই হাল।
এ ছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পর্যন্ত দুই লেনের সড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়কের এই দুরাবস্থায় বিশেষ করে পণ্যবোঝাই বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে যানবাহনের গতি কমেছে এবং ঘন ঘন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, যানজটের ভোগান্তি এবং ধুলাদূষণ যাত্রীদের জন্য প্রতিদিনের অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।
চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার একটি বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
মহাসড়কের বাইরে কুমিল্লার অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কও বেহাল।
৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক খানাখন্দে পূর্ণ ও সরু হওয়ায় চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্য ভ্রমণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে।
যাত্রী ও চালকদের ওপর প্রভাব
কুমিল্লা বাসমালিক সমিতির সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘কুমিল্লায় মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালক-যাত্রী উভয়কেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মিনিবাস চালক আবুল হোসেন প্রতিদিনের ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সরু রাস্তা, ভারী যানবাহন এবং গর্ত সব মিলিয়ে চালকদের জন্য একটি নিয়মিত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মুজাফফরগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশটি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চাঁদপুর অংশে যাতায়াত অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক বন্যা ও ভারি বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা।
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমরা ১৫ দিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের বৃহত্তম বন্দর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সংযোগকারী প্রধান সড়ক হিসেবে কাজ করে।
মহাসড়কটি গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষির মতো শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকে সহজতর করে, যা আমদানি-রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এ রুট দিয়ে পরিচালিত হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে শুধু সড়ক নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হবে না, দেশের অর্থনৈতিক গতিও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি ও রদবদলের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জেলার ১২ পুলিশ সুপারকে (এসপি) একযোগে বদলি করা হয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপসচিব আবু সাঈদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ অধিদপ্তরের (টিআর) পুলিশ সুপার আবু সাইমকে রংপুরের পুলিশ সুপার, গাইবান্ধার কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার আবু সায়েম প্রধানকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমকে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার, এসবির পুলিশ সুপার জাকির হোসেনকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দীনকে বরিশালের পুলিশ সুপার, এসবির পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলামকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ অধিদপ্তরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেককে গাজীপুরের পুলিশ সুপার, এন্টি টেররিজম ইউনিটের ঢাকার পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার, এপিবিএন সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার নিশাত অ্যাঞ্জেলাকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার আসলাম শাহাজাদাকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হককে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এবং এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ারকে নওগাঁর পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনি সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারান্তরীণ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি হয়নি। এ সংক্রান্তে ঢাকা থেকে আসা এক আইনজীবীর তিনটি আবেদনই নাকচ হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালতে বুধবার উপস্থিত হয়ে চিন্ময়ের জামিন শুনানি এগিয়ে আনাসহ তিনটি আবেদন করেছিলেন হাইকোর্টের এক আইনজীবী। কিন্তু ওকালতনামা না থাকায় আদালত তার তিনটি আবেদনই নামঞ্জুর করে।
এ সময় ওই আদালতে উপস্থিত চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, আসামি পক্ষে ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আদালতে তিনটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন। এর একটি চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য, একটি নথি উপস্থাপনের জন্য এবং অপরটি তাকে শুনানি করার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য।
আদালত অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের কাছে জানতে চায়, তার কাছে ওকালতনামা আছে কিনা বা মামলা পরিচালনার জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীর অনুমতি আছে কিনা। এ সময় তিনি নেই বলে জানালে আদালত তাকে আইন মেনে আসতে বলেন।’
অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি ওনার এ ধরনের দরখাস্ত দেয়ার আইনি অধিকার নেই। তার কাছে আসামির ওকালতনামা নেই এবং যিনি এই মামলা ফাইল করেছেন তার পক্ষ থেকেও তাকে কোনো পাওয়ার দেয়া হয়নি।
‘শুনানি করা বা নথি উপস্থাপনের জন্য অবশ্যই ওকালতনামা দিতে হবে অথবা ফাইলিং আইনজীবীকে বলতে হবে- ঢাকা থেকে যিনি এসেছেন তিনি তাকে ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু ওই আইনজীবীর কাছে এর কোনোটাই ছিল না। তাই আদালত এটা রিজেক্ট করে দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। ২৬ নভেম্বর জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। ৩ ডিসেম্বর জামিন শুনানির দিন থাকলেও কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানির দিন আগামী ২ জানুয়ারি ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে একদিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার এই সময়কালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ নিয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫৩৬ জন। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৬০৩ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৬, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৮৪, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৮, খুলনা বিভাগে ৪৫, রাজশাহীতে ২৭, ময়মনসিংহে ১৩, রংপুরে ৩ এবং সিলেট বিভাগে দুজন রয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৭ হাজার ৬০৩ জনের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। একই সময়ে মারা যাওয়া ৫৩৬ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ।
এছাড়াও একই সময়ে সারা দেশে ৫১৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৫ হাজার ১৫১ জন।
আরও পড়ুন:দেশের উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। অন্যান্য অঞ্চলেও ক্রমেই কমছে তাপমাত্রা। আগামী পাঁচ দিনে সারাদেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রা কমতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।’
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পেতে পারে। আর দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপ দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দখলে নেয়ার পর গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে। এপারে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ ভেসে আসছে না। এতে করে সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে এক ধরনের ‘স্বস্তি’ ফিরেছে।
তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা মংডু শহর পুরোপুরি আরাকান আর্মি দখলে নেয়ার পর নিরাপত্তার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নয়াপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপের লোকজন সীমান্তে লবণ চাষসহ নাফ নদের তীরে টেলা জালে মাছ ধরতে ব্যস্ত ছিল জেলেরা। তবে নাফ নদে আগের মতো দেখা যায়নি জেলে নৌকা।
নাফের তীরে টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটের ভ্রাম্যমাণ দোকানি বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে রাতে মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দে আমাদের র্নিঘুম রাত কেটেছে। কেননা সেদেশে যুদ্ধের কারণে বোমা-গুলির শব্দে এপারে বাড়িঘর বার বার কেঁপে উঠছিল।’
তিনি বলেন, ‘গত দুদিন ধরে পাশের দেশ (রাখাইন) থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যায়নি। যার ফলে রাতে নির্ভয়ে ঘুমাতে পেরেছি।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত দুদিন ধরে ওপারে সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য আপাতত এপারে দ্বীপের ৩০ হাজার মানুষ স্বস্তিতে আছে। লোকজন চাষাবাদেও ফিরছে।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের বোট মালিক সমিতির সভাপভি আবদুর রশিদ বলেন, ‘সীমান্তে আগের মতো গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও নিরাপত্তার কথা ভেবে সামায়িকভাবে আমাদের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এজন্যই নিরাপত্তার জন্য সীমান্তবর্তী নাফ নদ ও সাগরে মাছ শিকার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে সেন্টমার্টিনে পর্যটকের আগমনসহ দ্বীপবাসীর জন্য ইমার্জেন্সি সাপ্লাইয়ের জন্য কিভাবে ঝুঁকিহীনভাবে নৌযান চলাচল করতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জোরদার টহল রয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সীমান্তে চরম উত্তেজনায় মাছ ধরার নৌকাগুলোকে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাছ ধরার নৌকার মালিকরা মিয়ানমার সংলগ্ন এলাকায় মাছ শিকারে যাবেন না বলে আস্বস্তু করেছেন। আপাতত সীমান্তে গোলার শব্দ বন্ধ থাকলেও কখন আবার গোলাগুলি শুরু হয় বলা মুশকিল।’
টেকনাফ-২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিকনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ রোধসহ সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বিজিবি।’
আরও পড়ুন:ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে যাত্রা করা বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের লংমার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছেছে।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে লংমার্চের বহর স্থলবন্দর মাঠে এসে পৌঁছে। সেখানে সমাবেশের মধ্য দিয়ে লংমার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে সকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সকাল ৯টার দিকে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী আনুষ্ঠানিক লংমার্চ শুরু করেন।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননাসহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির তিন সংগঠন।
কর্মসূচি ঘিরে স্থলবন্দর এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আখাউড়া স্থলবন্দরে গ্রামপুলিশ, থানা–পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে সংগঠন তিনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এবং হাতে ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছেছেন।
লংমার্চ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের পথসভায় বক্তব্য দেন নেতারা।
এদিকে স্থলবন্দর মাঠ থেকে আধ কিলোমিটার আগেই জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লার নেতৃত্বে নেতা–কর্মীসহ সব মানুষের যানবাহন থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেখানে একটি ফাঁকা জায়গায় নেতা–কর্মীদের পাঁচ হাজার যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরে বিজিবির পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে লংমার্চ শুরুর আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় রিজভীসহ তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তারা ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের আধিপত্যবাদী মনোভাব এবং মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান।
পরে কয়েক শ’ গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন থেকে কাঁচপুরের দিকে লংমার্চ শুরু করেন।
লংমার্চের গাড়িবহরটি ফকিরাপুল, মতিঝিল ও ইত্তেফাক মোড় ও হানিফ ফ্লাইওভার অতিক্রম করে যাত্রাপথে এগিয়ে যায়।
কাঁচপুর থেকে ভৈরবের দিকে যাত্রা করে আগরতলার কাছে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছানোর আগে একটি পথসভা করবে বিএনপির এই তিন সহযোগী সংগঠন।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে বুধবার সকাল ৭টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
এর আগে রোববার বিক্ষোভ মিছিলের পর ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দেয় বিএনপির তিনটি সংগঠন।
এর একদিন পর তারা আগরতলা অভিমুখে লংমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য