বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর রুট পারমিট বাতিল থেকে অল্পে রক্ষা পাওয়া রাইদা পরিবহন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর আবার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় করছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়ে এই পরিবহন কোম্পানিটিও অন্যান্য কোম্পানির মতো অবৈধ ওয়েবিলের কৌশল ব্যবহার করছে।
রাজধানীতে বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য এবং যাত্রীদের নিত্যদিন ঠকে যাওয়া ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ‘উটপাখির’ ভূমিকায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র।
গত নভেম্বরের শুরুতে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর রাজধানীতে কিলোমিটারপ্রতি বাস ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
সে সময় দেখা যায়, বিআরটিএ যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, রাজধানীর বাসগুলো আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করছিল।
ওয়েবিলের নামে নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি হারে আদায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর বিআরটিএর অভিযানেও এর প্রমাণ মেলে।
পরে ১০ ডিসেম্বর বিআরটিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বারবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার কারণে ২৫টি বাসের রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল রাইদাও।
সে সময় বারবার জরিমানা দেয়ার পরও রাইদার বাসগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করেই যাচ্ছিল। কয়েক দিনের অভিযানে বসুমতি পরিবহনে সর্বোচ্চ ১৬ বার এবং রাইদায় ১৩ বার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ মেলে।
তবে বিআরটিএ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। শেষ পর্যন্ত রুট পারমিট আর বাতিল হয়নি। এবং কেন হয়নি, সেই ব্যাখ্যাও দেয়নি সরকারি সংস্থাটি।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান গত মার্চে নিউজবাংলাকে জানান, এই ২৫ কোম্পানি আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে যে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নেবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই কর্মকর্তা সে সময় বলেন, ‘তারা আবেদন করায় কমিটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই ২৫ কোম্পানির বাস বন্ধ করলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হবে। করোনার কারণে এমনিতেই বাস কমে গেছে, এই বাসগুলো বন্ধ করে দিলে আরও ঝামেলা হবে। ঢাকার মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমরা তাদের অবজারবেশনে রেখেছি। পরবর্তী মিটিংয়ে গত তিন মাসের অবজারবেশন তুলে ধরা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এরপর পেরিয়ে গেছে আরও পাঁচ মাস। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল আরেক দফা। এবার লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ার পর ঢাকায় বাস ভাড়া ঠিক হয়েছে কিলোমিটার প্রতি আড়াই টাকা। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া থাকছে আগের মতোই ১০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি চার কিলোমিটার গেলে এই ভাড়া দিলেই চলবে।
কিন্তু অনিয়মে ডুবে থাকা রাইদা এই বিধান মানবে কেন? তারা আগের মতোই কিলোমিটারের হিসাব বাদ দিয়ে তাদের ইচ্ছামতো একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আরেকটি দূরত্ব পর্যন্ত ওয়েবিল বসিয়ে ভাড়া আদায় করছে।
আগে যে ওয়েবিলে ভাড়া রাখা হতো ১০ টাকা, সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। আগে যেখানে ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা, সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
এই বাসটি চলে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত। রুটের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। আড়াই টাকা হারে ভাড়া দাঁড়ায় ৪২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা। এবার ভাড়া বাড়ার আগে নিত ৬০ টাকা।
সায়েবাদাদের জনপদ মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে পুরো পথে ভাড়ার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।
গত শুক্রবার তেলের দাম বাড়ানোর পর শনিবার রাতে বাস ভাড়ার বিষয়ে ঘোষণা আসে, কার্যকর হয় পরদিন থেকে।
নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে কি না, এটি দেখতে অতীতের মতোই অকার্যকর পথে হাঁটছে। আট জন ম্যাজিস্ট্রেট নামিয়ে পরীক্ষা চলছে। আর এই সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ডেই আবার উঠে আসে রাইদার অনিয়ম।
যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পেয়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রামপুরা সড়কে বাসটিতে থামানোর পর যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। পরে তার প্রমাণও মেলে।
কিলোমিটারে ৪ টাকা পর্যন্ত আদায়
এই পরিবহনে পুরো পথের জন্য ৭০ টাকা ভাড়া আদায় করায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আসে ৪ টাকা ১১ পয়সা। কিলোমিটার প্রতি বেশি আদায় হচ্ছে ১ টাকা ৬১ পয়সা, অর্থাৎ বেশি নেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা।
জনপথ মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ৫০ টাকা ভাড়া গুনে রামিজ উদ্দিন ঠকেছেন ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। কারণ, ১৩ কিলোমিটারে আড়াই টাকা হারে ভাড়া আসে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা।
নিউজবাংলাকে রামিজ বলেন, ‘তারা একেকটা ওয়েবিলের বিপরীতে আগের ভাড়ার থেকে ৫ টাকা করে বেশি নিচ্ছে। আগে থেকেই তারা বেশি ভাড়া নেয়। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় নাই।’
জুরাইন থেকে রামপুরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের জন্য রাইদায় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে পড়ে ৩ টাকা ১৮ পয়সা। অথচ নেয়ার কথা ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। বেশি নিচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।
ঠকে যাওয়া যাত্রীদের একজন মো. রবিউল বলেন, ‘সরকারের নির্ধারিত ভাড়া রাইদা নিচ্ছে না। সায়দাবাদ থেকে কমলাপুর নামলে ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। খিলগাঁও নামলেও ২০ টাকাই নিচ্ছে। জুরাইন থেকে রামপুরা ৩৫ টাকা নিচ্ছে। বাড্ডা, নতুন বাজার যেখানেই নামি ৩৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।’
সায়েদাবাদ থেকে মালিবাগ পর্যন্ত দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া হয় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু রাইদা নিচ্ছে ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ৪ টাকা করে।
বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নে একটি বাসে ভাড়া কাটতে থাকা সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চেকে কোম্পানি থেকে যে ভাড়া নিচ্ছে, আমি সেই টাকাই ভাড়া কাটতেছি।’
ওয়েবিল তো অবৈধ- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোম্পানি যে সিস্টেম করছে, সেই সিস্টেমেই ভাড়া নিচ্ছি।’
অতীতের মতো এবারও বাসে ভাড়ার চার্ট টাঙায়নি রাইদা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘চার্ট এখনো দেয় নাই আমাদের। দিলেই টানাব।’
এবার গণমাধ্যম এড়াচ্ছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা
গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর ভাড়ার নৈরাজ্য বিষয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া ব্যাপার ছিল না। সে সময় ফোন করলে তারা সাড়া দিতেন। কিন্তু এবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান, পরিচালক-কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত দুই দিনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে অন্তত ২০ বার কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। একবার তিনি এসএমএস করতে বললে অনিয়মের চিত্র জানিয়ে তার মন্তব্য জানতে চায় নিউজবাংলা। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি।
এরপর বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশনস) লোকমান হোসেন মোল্লার মোবাইল ফোনে কল করার পর যথারীতি তারও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে রাইদাসহ ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া গেল না।
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা পরিবহনের বাস যদি ৮০টি হয়, একটি বাসকে জরিমানা করল, তাহলে বাকি ৭৯টি বাস তো নৈরাজ্য চালাচ্ছেই। অতীতে যে রকম লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে, ওই ধরনের অভিযান দিয়ে এই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা যাবে না। কোম্পানির প্রধানকে ধরে আনতে হবে। ধরে এনে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নৈরাজ্য ঠেকাতে না পারলে বাড়তি ভাড়া স্থায়ী হয়ে যাবে উল্লেখ করে মোজাম্মেল বলেন, ‘তিন-চার দিন বেশি ভাড়া নিলে এটা নিয়মিত ভাড়ায় তৈরি হবে। সেই সুযোগটি করে দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবি বাস্তাবায়নের দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীর ও বাসচালকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— প্রভাবশালী গোষ্ঠী কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তারা পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে প্রকৌশল পেশায় প্রবেশের পথ সংকুচিত করছে। এ ছাড়া চাকরি ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল, তাদের পদবি পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল ও বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি বাতিল, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে নিম্নপদে নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবলকে কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিষিদ্ধ ও আইনানুগভাবে নিশ্চিত করা।
এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন।
উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ের নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতায় একাডেমিক কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা।
সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার মামলায় আজ সোমবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবু আলম শহীদ খান ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৬৭টি মামলা করেছে ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোববার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
রাজধানীর শাহবাগে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে সড়কে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ পানি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরে বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘মার্চ টু ঢাকা’ অনুযায়ী আজ (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন। এর ফলে সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩৪৪টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩১৩টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১৪টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য