বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর রুট পারমিট বাতিল থেকে অল্পে রক্ষা পাওয়া রাইদা পরিবহন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর আবার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় করছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়ে এই পরিবহন কোম্পানিটিও অন্যান্য কোম্পানির মতো অবৈধ ওয়েবিলের কৌশল ব্যবহার করছে।
রাজধানীতে বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য এবং যাত্রীদের নিত্যদিন ঠকে যাওয়া ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ‘উটপাখির’ ভূমিকায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র।
গত নভেম্বরের শুরুতে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর রাজধানীতে কিলোমিটারপ্রতি বাস ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
সে সময় দেখা যায়, বিআরটিএ যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, রাজধানীর বাসগুলো আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করছিল।
ওয়েবিলের নামে নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি হারে আদায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর বিআরটিএর অভিযানেও এর প্রমাণ মেলে।
পরে ১০ ডিসেম্বর বিআরটিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বারবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার কারণে ২৫টি বাসের রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল রাইদাও।
সে সময় বারবার জরিমানা দেয়ার পরও রাইদার বাসগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করেই যাচ্ছিল। কয়েক দিনের অভিযানে বসুমতি পরিবহনে সর্বোচ্চ ১৬ বার এবং রাইদায় ১৩ বার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ মেলে।
তবে বিআরটিএ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। শেষ পর্যন্ত রুট পারমিট আর বাতিল হয়নি। এবং কেন হয়নি, সেই ব্যাখ্যাও দেয়নি সরকারি সংস্থাটি।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান গত মার্চে নিউজবাংলাকে জানান, এই ২৫ কোম্পানি আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে যে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নেবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই কর্মকর্তা সে সময় বলেন, ‘তারা আবেদন করায় কমিটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই ২৫ কোম্পানির বাস বন্ধ করলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হবে। করোনার কারণে এমনিতেই বাস কমে গেছে, এই বাসগুলো বন্ধ করে দিলে আরও ঝামেলা হবে। ঢাকার মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমরা তাদের অবজারবেশনে রেখেছি। পরবর্তী মিটিংয়ে গত তিন মাসের অবজারবেশন তুলে ধরা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এরপর পেরিয়ে গেছে আরও পাঁচ মাস। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল আরেক দফা। এবার লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ার পর ঢাকায় বাস ভাড়া ঠিক হয়েছে কিলোমিটার প্রতি আড়াই টাকা। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া থাকছে আগের মতোই ১০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি চার কিলোমিটার গেলে এই ভাড়া দিলেই চলবে।
কিন্তু অনিয়মে ডুবে থাকা রাইদা এই বিধান মানবে কেন? তারা আগের মতোই কিলোমিটারের হিসাব বাদ দিয়ে তাদের ইচ্ছামতো একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আরেকটি দূরত্ব পর্যন্ত ওয়েবিল বসিয়ে ভাড়া আদায় করছে।
আগে যে ওয়েবিলে ভাড়া রাখা হতো ১০ টাকা, সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। আগে যেখানে ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা, সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
এই বাসটি চলে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত। রুটের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। আড়াই টাকা হারে ভাড়া দাঁড়ায় ৪২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা। এবার ভাড়া বাড়ার আগে নিত ৬০ টাকা।
সায়েবাদাদের জনপদ মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে পুরো পথে ভাড়ার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।
গত শুক্রবার তেলের দাম বাড়ানোর পর শনিবার রাতে বাস ভাড়ার বিষয়ে ঘোষণা আসে, কার্যকর হয় পরদিন থেকে।
নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে কি না, এটি দেখতে অতীতের মতোই অকার্যকর পথে হাঁটছে। আট জন ম্যাজিস্ট্রেট নামিয়ে পরীক্ষা চলছে। আর এই সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ডেই আবার উঠে আসে রাইদার অনিয়ম।
যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পেয়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রামপুরা সড়কে বাসটিতে থামানোর পর যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। পরে তার প্রমাণও মেলে।
কিলোমিটারে ৪ টাকা পর্যন্ত আদায়
এই পরিবহনে পুরো পথের জন্য ৭০ টাকা ভাড়া আদায় করায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আসে ৪ টাকা ১১ পয়সা। কিলোমিটার প্রতি বেশি আদায় হচ্ছে ১ টাকা ৬১ পয়সা, অর্থাৎ বেশি নেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা।
জনপথ মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ৫০ টাকা ভাড়া গুনে রামিজ উদ্দিন ঠকেছেন ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। কারণ, ১৩ কিলোমিটারে আড়াই টাকা হারে ভাড়া আসে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা।
নিউজবাংলাকে রামিজ বলেন, ‘তারা একেকটা ওয়েবিলের বিপরীতে আগের ভাড়ার থেকে ৫ টাকা করে বেশি নিচ্ছে। আগে থেকেই তারা বেশি ভাড়া নেয়। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় নাই।’
জুরাইন থেকে রামপুরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের জন্য রাইদায় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে পড়ে ৩ টাকা ১৮ পয়সা। অথচ নেয়ার কথা ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। বেশি নিচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।
ঠকে যাওয়া যাত্রীদের একজন মো. রবিউল বলেন, ‘সরকারের নির্ধারিত ভাড়া রাইদা নিচ্ছে না। সায়দাবাদ থেকে কমলাপুর নামলে ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। খিলগাঁও নামলেও ২০ টাকাই নিচ্ছে। জুরাইন থেকে রামপুরা ৩৫ টাকা নিচ্ছে। বাড্ডা, নতুন বাজার যেখানেই নামি ৩৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।’
সায়েদাবাদ থেকে মালিবাগ পর্যন্ত দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া হয় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু রাইদা নিচ্ছে ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ৪ টাকা করে।
বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নে একটি বাসে ভাড়া কাটতে থাকা সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চেকে কোম্পানি থেকে যে ভাড়া নিচ্ছে, আমি সেই টাকাই ভাড়া কাটতেছি।’
ওয়েবিল তো অবৈধ- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোম্পানি যে সিস্টেম করছে, সেই সিস্টেমেই ভাড়া নিচ্ছি।’
অতীতের মতো এবারও বাসে ভাড়ার চার্ট টাঙায়নি রাইদা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘চার্ট এখনো দেয় নাই আমাদের। দিলেই টানাব।’
এবার গণমাধ্যম এড়াচ্ছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা
গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর ভাড়ার নৈরাজ্য বিষয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া ব্যাপার ছিল না। সে সময় ফোন করলে তারা সাড়া দিতেন। কিন্তু এবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান, পরিচালক-কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত দুই দিনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে অন্তত ২০ বার কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। একবার তিনি এসএমএস করতে বললে অনিয়মের চিত্র জানিয়ে তার মন্তব্য জানতে চায় নিউজবাংলা। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি।
এরপর বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশনস) লোকমান হোসেন মোল্লার মোবাইল ফোনে কল করার পর যথারীতি তারও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে রাইদাসহ ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া গেল না।
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা পরিবহনের বাস যদি ৮০টি হয়, একটি বাসকে জরিমানা করল, তাহলে বাকি ৭৯টি বাস তো নৈরাজ্য চালাচ্ছেই। অতীতে যে রকম লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে, ওই ধরনের অভিযান দিয়ে এই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা যাবে না। কোম্পানির প্রধানকে ধরে আনতে হবে। ধরে এনে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নৈরাজ্য ঠেকাতে না পারলে বাড়তি ভাড়া স্থায়ী হয়ে যাবে উল্লেখ করে মোজাম্মেল বলেন, ‘তিন-চার দিন বেশি ভাড়া নিলে এটা নিয়মিত ভাড়ায় তৈরি হবে। সেই সুযোগটি করে দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য