সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর হিসাবে প্রতি কিলোমিটার বাস ভাড়া হবে আড়াই টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। এই হিসাবে চার কিলোমিটার যাওয়া যাবে এই সর্বনিম্ন ভাড়ায়।
কিন্তু রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটারে স্বাধীন পরিবহন ভাড়া আদায় করছে ১৫ টাকা, যা এতদিন আদায় করা হতো ১০ টাকাই।
গত শুক্রবার সরকার ডিজেলের ভাড়া ৩৪ টাকা বাড়ানোর পরদিন বাস ভাড়া বাড়ানোর যে ঘোষণা আসে, তাতে রাজধানীতে কিলোমিটারপ্রতি বাড়ানো হয় ৩৫ পয়সা।
এই ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে পরে জানিয়ে দেয়া হয়, সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়বে না। এর আগে নভেম্বরে সবশেষ তেলের দাম বাড়ানোর পর যে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়, সে সময় জানিয়ে দেয়া হয় সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।
সে সময় রাজধানীতে বাস ভাড়া ঠিক করা হয় কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা হিসাবে। কিন্তু স্বাধীন পরিবহন সরকারের এই নিয়ম না মেনে স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করতে থাকে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতা আরও বেড়েছে এবার।
কিলোমিটারের বদলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত আলাদা ভাড়া রাখার হিসাব করতে বসানো হয় ওয়েবিল। পুরো পথের জন্য কিলোমিটার হিসেবে একটি ভাড়া ঠিক করার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত পথের ভাড়া ঠিক করা হয় ওয়েবিল থেকে অন্য ওয়েবিল পর্যন্ত।
এক ওয়েবিল থেকে আরেকটি পার হয়ে গেলেই ভাড়া নেয়া হতে থাকে ১০ টাকা করে। কিন্তু এই ওয়েবিলগুলো ৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার দূর দূর বসানো হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বসানো হয় দুই কিলোমিটার অন্তর অন্তর।
ফলে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া কার্যত পড়ে ৫ টাকা, যা ছিল সরকার নির্ধারিত হারের ২ দশমিক ৩২ গুণ।
এবার সেই ওয়েবিল থেকে আরেক ওয়েবিল পর্যন্ত ১৫ টাকা করে দাবি করতে থাকায় যাত্রীরা এবারও ঠকতে শুরু করেছে।
যেমন মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা হতে পারত। কিন্তু ফার্মগেট পর্যন্ত ১৫ টাকা আদায় করার পর কিলোমিটারপ্রতি ভাড়ার হার দাঁড়ায় ৪ টাকা ৫৪ পয়সা।
অথচ একই বাসে কোনো দূরত্বের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ছয় টাকাও দেখা গেছে।
আগে থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা স্বাধীন পরিবহন ভাড়া বাড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। অথচ সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ১৬ শতাংশ। আর বাড়ানোর পর যে হারে ভাড়া ঠিক হয়েছে, আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছিল।
স্বাধীন পরিবহনের যাত্রীদের একজন তানজিনা খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে আগে মালিবাগ রেল গেটে ভাড়া নিত ২০ টাকা। আজকে ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা। এরা ভাড়ার কোনো সামঞ্জস্য রাখছে না। যা খুশি নিচ্ছে।’
ভাড়া বাড়ার আগে এই রুটে আদায় করা হতো ২০ টাকা।
এই পথের দূরত্ব ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার। আগের হারে ভাড়া হয় ১৪ টাকা ৪০ পয়সা। বর্তমান হারে তা আসে ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ বাড়তি আদায় করা হচ্ছে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা।
আড়াই টাকা কিলোমিটারের বদলে আদায় করা হচ্ছে ৪ টাকা ৪৭ পয়সা হারে।
বেশি কেন নিচ্ছে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি গাড়ির চালকের সহকারী মো. সুজন। তিনি বলেন, ‘বাংলামোটর চেকার আছে। তার কাছে জিজ্ঞাসা করেন।’
আরেক যাত্রী সুমন মিয়া বলেন, ‘আসাদ গেট থেকে দক্ষিণ বনশ্রী পর্যন্ত আগে স্টুডেন্ট ভাড়া দিতাম ২০ টাকা। মূল ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। গতকাল থেকে একই দূরত্বে আমাদের থেকে ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা। ফুল ভাড়া ৬০ টাকা।’
এই পথের দূরত্ব আসে ১০ কিলোমিটারের মতো। আগের হারে ভাড়া আসে ২১ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমান হারে আসে ২৫ টাকা।
অর্থাৎ আড়াই টাকার বদলে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৬ টাকা হারে।
ভাড়া বেশি কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে স্বাধীন পরিবহনের চালক মো. মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এইটা কোম্পানির লোককে জিজ্ঞাসা করেন। আমরা জানি না। তেলের দাম বাড়ার পরে কোম্পানির পক্ষ থেকে আমাদের যেভাবে বলে দিছে সেইভাবেই ভাড়া কাটতেছি।’
ওয়েবিলের নামে বেশি টাকা নিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটাও কোম্পানির লোক জানে।’
বেশি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে ইস্কাটনে ওয়েবিলের চেকার নাজমুল হাসান বলেন, ‘এটা কোম্পানিরে জিজ্ঞাসা করেন কেন বেশি নিচ্ছে।’
একই প্রশ্নে স্বাধীন পরিবহনের ইনচার্জ রিয়াজ রহমান বেশি ভাড়া নেয়ার কথা বেমালুম অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশি ভাড়া নেই না।’
বেশি ভাড়ার আদায়ের প্রমাণ দেখালে তিনি আবার বলেন, ‘আমরা বেশি ভাড়া নেইনি।’
বিআরটিএ তো ওয়েবিলকে অবৈধ বলেছে। এই অবৈধ পদ্ধতিতে কেন ভাড়া কাটছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাঁচ লিটারের বোতল তেল থেকে কেউ যদি এক লিটার তেল চায় দোকানদার কি দেবে? দেবে না। তাছাড়া দিন শেষে ভাড়ার হিসাব রাখার জন্যও তো ওয়েবিলের দরকার আছে।’
বিআরটিএ চেয়ারম্যান কী বলছেন
বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণের রাতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে যখন সিদ্ধান্ত জানান, সেদিনই তিনি বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য, বিশেষ করে ওয়েবিলের মাধ্যমে ভাড়া কাটার বিষয়ে প্রশ্নের মুখে তোলেন।
আপনাদের ঘোষিত ভাড়া কখনও কার্যকর হয় না। ওয়েবিলের নামে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি হারে আদায় করা হয়। তাহলে কেন এভাবে ভাড়া নির্ধারণ করেন- এমন প্রশ্নে নুর মোহাম্মদ মজুমদার সেদিন বলেন, ‘গতবার ভাড়া নির্ধারণ করার পর মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য, বিআরটিএ, পুলিশ যৌথ টিম কাজ করেছে, যা কয়েক মাস অব্যাহত ছিল। যারা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’
ওয়েবিলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়েবিল যেটা বলেছেন, সেটা অবৈধ জিনিস। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট যদি এই ধরনের অভিযোগ পায় বা দেখতে পায়, তাহলে আইনের আওতায় আনা হবে।’
গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরও বিআরটিএ চেয়ারম্যান একই ধরনের কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ওয়েবিলে চালানো হলে বাসের রুট পারমিট বাতিল হবে, জব্দ হবে।
কতগুলো বাস জব্দ করা হয়েছে- সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারব না।’
বাস ভাড়া বাড়ার পর রাজধানীর চিত্র তুলে ধরে বিআরটিএর বক্তব্য জানতে গত দুই দিন ধরে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
কমপক্ষে ২০ বার ফোনে চেষ্টা করার পর একবার কল ধরলেও তার কথা বোঝা যাচ্ছিল না। পরে তিনি এসএমএস করতে বলেন।
বিআরটিএ প্রধানের কাছে প্রশ্ন ছিল: ‘ভাড়া নির্ধারণ করেছেন আড়াই টাকা কিলোমিটার হিসেবে। কিন্তু অনেকে ভাড়া নিচ্ছে ৬ টাকা পর্যন্ত। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আগেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নাই। একবারও করতে পারছেন না। অবৈধ ওয়েবিল এখনো চালু আছে। যাত্রীরা ঠকছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আপনাদের এই ব্যর্থতার কী জবাব দেবেন?
তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির সমালোচনা
স্বাধীন পরিবহনের যে চিত্র, সেটি কার্যত প্রতিটি বাসেরই। যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে কিলোমিটার হিসাবে। রাজধানীর বাসে ওয়েবিলে আগে যে বাড়তি ভাড়া নিত, তার সঙ্গে আবার নতুন করে পাঁচ থেকে ১০ টাকা যোগ করেছে। আমাদের অভিযোগটাও সেই জায়গায়।’
বিআরটিএর জরিমানায় কাজ হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটা পরিবহনের বাস যদি ৮০টি হয়, একটি বাসকে জরিমানা করল, তাহলে বাকি ৭৯টি বাস তো নৈরাজ্য চালাচ্ছেই। অতীতে যে রকম লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে, ওই ধরনের অভিযান দিয়ে এই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা যাবে না। কোম্পানির প্রধানকে ধরে আনতে হবে। ধরে এনে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাস স্টপেজগুলোতে ডিজিটাল ভাড়ার তালিকা টানাতে হবে। বিআরটিএ যেটা ভাড়ার তালিকা দেয়, এটা তো সাধারণ যাত্রীরা বোঝে না। এই ধরনের গোজামিল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই গোঁজামিল অতিরিক্ত ভাড়াকে উৎসাহিত করে।’
নৈরাজ্য ঠেকাতে না পারলে বাড়তি ভাড়া স্থায়ী হয়ে যাবে উল্লেখ করে মোজাম্মেল বলেন, ‘তিন-চার দিন বেশি ভাড়া নিলে এটা নিয়মিত ভাড়ায় তৈরি হবে। সেই সুযোগটি করে দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য