ছোট ছোট সাতটি দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এর পরপরই নানা ইস্যুতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা।
এই জোটে আছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এতে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ হবে জনগণের মুক্তির কাফেলা।’
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র নয়, ওপেন ঘোষণা করে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ৷ সরকারবিরোধী লড়াইয়ের বিকল্প নেই।’
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে সংগ্রামে অংশ নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মঞ্চের রূপরেখা তুলে ধরেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি জানান, আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিক্ষোভ ও মিছিল করবেন তারা। এই কর্মসূচির বিস্তারিত পরে জানাবেন তারা।
জোটের রূপরেখায় বলা হয়, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
এই জোটের দুটি দল ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শরিক হিসেবে ঐক্যফ্রন্টে ছিল। এগুলো হলো জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য।
বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়তে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যে সংলাপ করেছে, তাতে এই জোটের পাঁচটি দল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য ছাড়াও আছে গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। প্রতিটি বৈঠকের পর যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে।
গত ৩ আগস্ট রাজধানীতে একটি আলোচনায় গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়। সেদিন নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে গিয়ে তারা তৃতীয় শক্তি হতে চান। তাদের বিবেচনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির চরিত্র একই।
সেদিন মান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। মানুষের এখন এমন অবস্থা তারা আওয়ামী লীগকেও বিশ্বাস করে না। আবার বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকেও বিশ্বাস করে না। তারা বিকল্প চায়। আমরা সে চেষ্টা করছি।…আমরা একটা পরিবর্তন চাই এবং মানুষকে সেটি বোঝাতে হবে। এই পরিবর্তন শুধু সরকারের পরিবর্তন না, রাষ্ট্রব্যবস্থারও পরিবর্তন।’
নুর বলেন, ‘আমরা গত ৩৪ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলকেই ক্ষমতায় দেখেছি। আমরা দুই দলেরই চরিত্র দেখেছি। তাদের চরিত্র একই। এই দুই দল ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কিছুই হবে না। এ জন্য তৃতীয় কোনো শক্তিকে আমাদের ক্ষমতায় নিতে হবে।’
বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে আমাদের ঐক্য গড়তে হবে। এই ঐক্যে একটা নির্যাতিত দল হিসেবে বিএনপিকে সঙ্গে রাখতে পারি। কিন্তু তাদের হাতে ক্ষমতা ছাড়া যাবে না।’
আত্মপ্রকাশের পর জোটের রূপরেখায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ- সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহির কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার। একই সঙ্গে ফেডারেল পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় কমিশন গঠন।
‘বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিম্ন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তার পরিচালনা ও তদারকি উচ্চ আদালতের হাতে ন্যস্ত করা, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
‘দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির টেকসই প্রকৃতিবান্ধব ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল জনগণের জন্য সমান সুযোগের নিশ্চয়তা তৈরি।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক, ‘মব জাস্টিস’ বা জনতার উচ্ছৃঙ্খল বিচার সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি বলেছেন, ‘গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নাটকীয় নির্বাচন। এসব নির্বাচনের সময়কার সকল নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধীই হোক, বিচার হতে হবে আইনের মাধ্যমেই, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। মব জাস্টিস সমর্থনযোগ্য নয়।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা এবং মব জাস্টিসের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
মব জাস্টিসের সাথে দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে আসামিরা হেনস্তা হন?
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সাবেক তিন সিইসি দায়ী থাকলেও আইনসম্মতভাবেই তাদের অপরাধের বিচার চায় বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অভিযোগ করেন, দেশে আবারও করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে, কিন্তু সরকার কোনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া,নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ মাহমুদ হোসেন শ্যামল,সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ,সহ-সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, যুগ্ম-সাধারণ বেলাল উদ্দীন সরকার তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)।
সোমবার (২৩ জুন) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো সদস্য ও জাতীয় গণকংগ্রেস স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লি হংঝং ও অন্যান্য সিনিয়র সিপিসি নেতাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতে সিপিসি নেতারা বিএনপি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বৈঠককালে লি হংঝং আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভবিষ্যতে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, সিপিসি নেতারা আশা করেন যে, এই বৈঠক চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
তারা সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে নিয়মিত আলোচনা এবং অব্যাহত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন বলে জানান শায়রুল কবির।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের নেতৃত্বের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। চীন বৃহত্তর বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে তার ইতিবাচক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে, দিনের শুরুতে বিএনপির প্রতিনিধিদল চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন এবং তারা অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই সফরকে বিএনপি ও সিপিসির মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্কের লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, উভয় দল ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশা করছে।
এর আগে রবিবার রাতে সিপিসির আমন্ত্রণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে।
তারা বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (বেইজিং সময়) ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে পৌঁছান।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য আট সদস্য হলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের দল গণপিটুনির সংস্কৃতিকে সমর্থন করে না। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার গণপিটুটির ঘটনায় তাদের কোনো কর্মী জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৩ জুন) তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা গণপিটুনির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করে আসছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় স্বচ্ছতার সঙ্গে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হোক। নূরুল হুদার গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া আশাও করে তার দল।
তিনি বলে, ‘কিন্তু আমরা তার উপর যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে—তা সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী এতে জড়িত থাকে—তাহলে আমরা তদন্তের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব...এটি আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।’
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি চায় প্রতিটি ব্যক্তি, সে যত গুরুতর অপরাধীই হোক না কেন, তিনি তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করুক। ‘সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়।’
রবিবার(২৩ জুন) রাতে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরার বাসভবনে একদল জনতা তাকে আক্রমণ করার পর গ্রেপ্তার করা হয়। নুরুল হুদার কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হুদা সাদা টি-শার্ট এবং লুঙ্গি পরে ছিলেন এবং তার গলায় জুতার মালা ছিল। এক পর্যায়ে একজন ব্যক্তি জুতা দিয়ে হুদার মুখে আঘাত করেন। ভিডিওটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করার জন্য হুদার ভূমিকার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নুরুল হুদা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য দায়ী কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন।’
সালাহউদ্দীন বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধ্বংসের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মতো আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভেঙে ফেলার জন্যও দায়ী। ‘কিন্তু আমরা এই ধরনের বিষাক্ত সংস্কৃতি বা জনতার বিচারে বিশ্বাস করি না,’ বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী টুকু।
গণতন্ত্র মঞ্চ লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
কোনো এক ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা উচিত না বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (২২জুন) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমন কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে প্রস্তাব করেছিলাম—একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়্ত্বি পালন করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বার ও মেয়াদের ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই। তিনটি দল ছাড়া সবাই এই প্রশ্নে এক জায়গায় এসেছি।’
‘অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সেটা যত বারই হোক। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা, আমি মনে করি। এটিই আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে, বলেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির।
তিনি বলেন, ‘এমন নজির বহুদেশে আছে। এটা বাংলাদেশেও জরুরি বলে আমরা মনে করি। এ নিয়ে আমরা প্রায় ঐকমত্যে এসেছি। বিকালে আরও দুটো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হবে।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এরআগে গেল ১৭ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর পরেরদিন অবশ্য অংশ নিয়েছিল তারা।
এদিকে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কাছাকাছি আসতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই এনসিসি গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি গত সপ্তাহে হওয়া চার দিনের সংলাপে। এ পর্যায়ে ঐকমত্যের সংজ্ঞা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথাও ভাবছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
রবিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও উপস্থিত ছিলেন।
এমন এক সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ফখরুলসহ বিএনপির আরও আট নেতার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আজই বেইজিং সফরে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আগামী রবিবার (২২ জুন) চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই সফরের জন্য বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিসি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও দলীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ই এই সফরের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। সায়রুল কবীর আরও জানান, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া, চেয়ারপারসনের তিন উপদেষ্টা— জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জাবিউল্লাহ ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া এবং দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
সফর শুরুর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে চীনা দূতাবাসে সাক্ষাৎ করে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচিত চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর করার প্রত্যাশারই প্রতিফলনই এই সফর। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকে একটি ‘প্রতীক্ষমাণ সরকার’ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক পর্যবেক্ষক, যার অপেক্ষা চলছে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত।
এই সফরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চীনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, সদ্য-গঠিত এনসিপি ও কিছু ইসলামপন্থী দল।
এর আগে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি ২১ সদস্যের ‘অনন্য’ প্রতিনিধিদল ১১ দিনের সফরে চীন যায়।
ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বহুদলীয় সম্পর্ক জোরদারের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সফর আয়োজন করা হয়।
১১ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি বেইজিং, শানশি এবং ইউনান প্রদেশে সিপিসির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
মন্তব্য