কুমিল্লার বরুড়ায় মাদ্রাসাশিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।
অসুস্থ অবস্থায় ১৫ বছরের মো. শিহাবকে শুক্রবার সকালে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে বেলা ১টা ১২ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
তথ্যগুলো নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার।
শিহাবের বাড়ি বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামে। সে ইউনিয়নের মেড্ডা আল মাতিনিয়া নূরানী মাদ্রাসায় পড়ত।
তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রবের বিরুদ্ধে।
শিহাবের ভাবি সাবিকুন নাহার ঝুমুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দেবরকে কয়েক দিন আগে শিক্ষক আব্দুর রব বেত দিয়ে মারেন। এ সময় সিহাব অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষকরা তাকে ওষুধ এনে খাওয়ান। তাতেও সে সুস্থ না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা থেকে ফোন করে শিহাবের অসুস্থতার খবর জানানো হয়।
‘আমার শ্বশুর গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় শুক্রবার সকালে উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তাকে কুমিল্লা মেডিক্যালে পাঠায়। ওইখানে নিলে দুপুরে সে মারা যায়।’
শিহাবের মা খালেদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, “আমার ছেলেকে যখন বাসায় আনা হয় তখন তার অনেক জ্বর। অনেক রাতে সে আমাদের বলে, ‘আমার কেন জ্বর তোমরা কেউ জানতে চাইলে না? আমার হাত থেকে ভাত পড়ে গেছে দেখে হুজুর আমাকে জোড়া বেত দিয়ে অনেক পিটিয়েছে।’
“আমার ছেলের ছোট থেকে হাত ভাঙা। আমগাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙে। তাই হয়তো হাত থেকে ভাত পড়ে গেছে। এ জন্য তাকে মারল আব্দুর রব হুজুর। আমার ছেলে জ্বরে সকালে বমি করে দেয়। এরপর আমরা হাসপাতাল নিই।”
তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার ঘরে এত ভাত, আমার ছেলেকে ভাতের জন্য মারল!’
ঝলম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্থানীয় মেম্বারের কাছে শুনেছি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক তাকে প্লেট দিয়ে আঘাত করেছে। মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে শুনেছি এমন কিছুই, তবে সিরিয়াস কিছু হয়নি। আমি এখন ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে জেনে বিস্তারিত বলতে পারব।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রবের মুঠোফোনে দুপুরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নিউজবাংলার পরিচয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মেড্ডা আল মাতিনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আহমেদ শফি বলেন, ‘আমি সিহাবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। আপনি পরে ফোন করলে খুশি হব।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান জানান, শিহাবকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত করলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
মরদেহ থানায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে বরুড়া থানার ওসি ইকবাল বলেন, ‘আমরা মরদেহের পিঠে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। ওই শিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়েছি। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:‘পাঁচ মাস, প্রায় পাঁচ মাসের মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল। ভয়ভীতি নিয়ে দিন কাটছিল। এখনও ভয়ভীতি আছে, ভয়ভীতি যাবে না। তবে এখন আমি মুক্ত।’
ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতির পর কথাগুলো বলেছেন মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।
জেলা আমলি আদালত-১-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে মঙ্গলবার মামলা থেকে হৃদয় মণ্ডলকে অব্যাহতির মৌখিক আদেশ দেন। বুধবার সে আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেন বিচারক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের জিআরও মো. জসিমউদ্দিন।
এ খবর শুনে শিক্ষক বলেন, ‘ভয়টা রইল না যে আবার কারাগারে যেতে হবে অথবা আবার মাসে মাসে হাজিরা দিতে হবে। এটার থেকে তো মুক্তি পাইলাম।
‘অনেক শিক্ষকই চাইছিলেন আমি এই স্কুল থেকে চলে যাই। স্কুলের শিক্ষকরা তো চাইছিলেন এই সমস্যাটা সৃষ্টি হোক। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সব সময় আমার ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনও আছে।’
হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এর বিচারক জশিতা ইসলাম অব্যাহতির আদেশ দেন। তবে মৌখিক ঘোষণার পর আজ আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিচারক। গত ৮ আগস্ট পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।’
যা ঘটেছিল
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন হৃদয় মণ্ডল।
তিনি গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাতেই হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল রোববার জামিনে মুক্ত হন হৃদয় মণ্ডল। তাকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া।
কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, যাদের অভিযোগের কারণে তিনি কারাভোগ করেছেন, তাদের ওপর তার কোনো ক্ষোভ নেই।
গত ১১ এপ্রিল সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। তদন্ত শেষে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি বলে ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন সাবেক উপ উপাচার্য (প্রশাসন) ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আমির হোসেন।
শুক্রবার বিকেলে ভোট শেষে সন্ধ্যায় এই ফল ঘোষণা করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ।
তিনি জানান, সর্বোচ্চ ৪৮ ভোট পেয়েছেন অধ্যাপক আমির। ৪৬ ভোট পেয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম দ্বিতীয় এবং ৩২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার।
এই ফল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। এর মধ্য থেকে একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে সিনেটের বিশেষ সভা শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ভোট শুরু হয়।
ভোট শুরুর আগে অধ্যাপক ড. মোতাহার হোসেন তার প্রার্থিতা বাতিল করে নেন।
নির্বাচনে শিক্ষকদের ৩টি প্যানেল থেকে মোট ৮জন প্রার্থী ছিলেন।
আরও পড়ুন:খুলনার রূপসায় ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার ডোবা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ্তিস্বর বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এসব নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন।
প্রধান শিক্ষক দীপ্তিস্বরকে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রাইভেট পড়ানোর সময় দীপ্তিস্বর ছাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করতেন। সবশেষ তিনি এক ছাত্রীকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার সবাই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে বিদ্যালয়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অফিসকক্ষে ঢুকে বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিল, ব্যাবহারিক জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। তারা প্রধান শিক্ষককে মারধরেরও চেষ্টা করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
ওসি মোশাররফ বলেন, ‘ওই শিক্ষককে থানায় আনার পর তার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর বাবা বুধবার রাতেই মামলা করেন। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।’
এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৯ আগস্ট স্কুল শেষে প্রাইভেট পড়ানোর সময় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌনতার প্রস্তাব দেন দীপ্তিস্বর। তাতে রাজি না হওয়ায় ছুটির পর মেয়েটিকে তিনি শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ওই ছাত্রীর চিৎকারে অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে শিক্ষক সেখান থেকে চলে যান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. কামাল উদ্দীন বাদশা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া তাছনিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল। আমি সেটা থানায় ফরওয়ার্ড করেছি। ওই প্রধান শিক্ষকের কার্যকলাপ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগাম অবসর চেয়ে সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের আবেদন গ্রহণ করে তাকে অবসরের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তার কাছ থেকে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা পাবে জানিয়ে এই টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত বুধবার ইস্যু করা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করা সামিয়াকে চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার ৩১-০৩-২০২২ তারিখের পত্রের বরাতে এবং ২৬-০৪-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে জানানো যাচ্ছে যে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আপনাকে দেনাপাওনা সমন্বয় সাপেক্ষে ১৫-১১-২০২১ তারিখ হতে বিধি মোতাবেক আগাম অবসর (আর্লি রিটায়ারমেন্ট) গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
‘সিন্ডিকেটের ২৬-০৪-২০২২ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আপনাকে আরও জানানো যাচ্ছে যে, আপনার নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চিঠিতে জানানো হয়, ‘আপনার প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদসহ জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২১৬ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট আপনার দেনা ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা।’
বকেয়াগুলো কিসের টাকা জানতে চাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার মোখতার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি যে তারিখ থেকে (গত ১৫ নভেম্বর) আর্ন লিভে গিয়েছিলেন সেই তারিখ থেকে উনার স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর থেকে উনি যে বেতন ভাতা পেয়েছেন সেগুলো। তবে তিনি যদি আবার অর্জিত ছুটির জন্য আবেদন করেন তাহলে ছুটির পরিবর্তে অর্থ মঞ্জুর পাবেন।’
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের মধ্যে ২০২১ সালের নভেম্বরে চার মাসের অর্জিত ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যান সামিয়া রহমান। গত ৩১ মার্চ তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মার্চ মাসের শুরুতে তিনি বিনা বেতনে আরও এক বছরের ছুটির জন্য আবেদন করেন। তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না করার পর তিনি আগাম অবসরের আবেদন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ার পর সামিয়ার পদাবনতি ঘটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় তাকে এক ধাপ পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে যান। গত ৪ আগস্ট সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
তবে আগেই সামিয়া আগাম অবসরের আবেদন করায় এবং সেটি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করায় আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকতা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সহকারী রেজিস্ট্রার মোখতার হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘উনি (সামিয়া রহমান) আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি নতুন করে শিক্ষকের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় আর তখন যদি তিনি আবেদন করেন সে সময় ওনাকে নিয়োগ দেয়া হলে তারপর শিক্ষকতা শুরু করতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বাকেরগঞ্জের জিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করেন। আধা ঘণ্টা পর পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান খান স্বপন অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে শ্লীলতাহানি করেছেন। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার থানায় অভিযোগ দেয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ছাত্রীর মায়ের দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে পরীক্ষায় পাস না করানোর হুমকিও দিতেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গত ১ আগস্ট শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে মেয়েটিকে শারীরিকভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করেন। সে সময় সহপাঠীরা গিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি জানালে মা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ করেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আকমল হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও বাকেরগঞ্জ দুধল মৌ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে নারীঘটিত অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আশুতোষ ব্রক্ষ্ম জানিয়েছেন, অভিযোগ সত্য নয়। স্থানীয় একটি পক্ষ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে প্রধান শিক্ষককে অপসারণের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটনা সাজিয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার জানান, ওই ছাত্রীর মায়ের দেয়া অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:অভিভাবককে জুতাপেটা, অনিয়মসহ নানা অভিযোগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবির বিরুদ্ধে যথাযত পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে গত ১৯ জুলাই ঢাকা-বুড়িমারী মহাসড়কে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা।
তারা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি দেরিতে স্কুলে আসেন, এক অভিভাবককে তিনি জুতাপেটা করেছিলেন, স্কুলের অর্থ আত্মসাতেও তিনি জড়িত। এরপর প্রধান শিক্ষক ১১ জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
অভিভাবক আবদার আলী বুধবার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার কীভাবে একজন অভিভাবককে মারেন, আবার মামলাও দেন? যতদিন ওনার অপসারণ না হবে, ততদিন আমরা আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব না।’
আফরোজা বেগম নামে আরেক অভিভাবক সে সময় বলেন, ‘স্কুলের হেড ম্যাডাম বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। অভিভাবককে তার জুতা দিয়ে পেটানোর কারণে আমরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব না। উনি বদলি হলে পাঠাব।’
অভিভাবকরা জানান, গত ১৮ জুলাই দেরিতে স্কুলে যাওয়ার অভিযোগ তুলে এর কারণ জানতে প্রধান শিক্ষকের কাছে যান এক অভিভাবক। তখন প্রধান শিক্ষক তাকে জুতাপেটা করেন। এ ঘটনা শুনে অভিভাবকরা মানববন্ধন করেন।
১৯ জুলাইয়ের পর থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাননি অভিভাবকরা।
সরেজমিন বুধবার স্কুলে দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
এই স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১২০ জন শিক্ষার্থী আছে। প্রধান শিক্ষকসহ আছেন সাতজন শিক্ষক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবিকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসায় আমরা প্রত্যেকে হোম ভিজিট করেছি। কিন্তু অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বদলি না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না। আমরা প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে যাচ্ছি, কিন্তু একই কথা বলছেন।
‘আমরাও অতিষ্ঠ তার আচরণে। দুপুর ১২টায় আসেন ১টায় যান। প্রধান শিক্ষকের একক আধিপত্য, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, রুটিন মেইনটেন্যান্সে অনিয়ম, এমনকি স্কুলের ফ্যান খুলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ বহু অভিযোগ আছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য