চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। অভিযোগ উঠেছে, ৩৭৬ সদস্যের বিশাল এই কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত, অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী এবং বিএনপি ও জামায়াত-সংশ্লিষ্ট অনেকে স্থান পেয়েছেন।
চবি শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা এই কমিটির বিরোধিতায় ক্যাম্পাসে দুদিন ধরে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন।
চবি ছাত্রলীগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ৩৭৬ জন। এর মধ্যে সহসভাপতি পদে আছেন ৬৯ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পেয়েছেন ১১জন।
হত্যা মামলার আসামি শীর্ষ পদে
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন রাজু মুন্সী। তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হলেও এখনও পাস করতে পারেননি। ছাত্রত্ব না থাকলেও থাকেন আবাসিক হলে।
কমিটিতে পদ পাওয়া এই নেতা ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া সিআরবি জোড়া খুন মামলার আসামি। এ ছাড়া চলতি বছরের ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের এক শিক্ষককে মারধর ও হত্যার হুমকি দেন এই ছাত্রনেতা।
সহসভাপতি পদ পাওয়া প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়ের নামেও আছে হত্যা মামলা। চবির আলোচিত ছাত্রলীগ কর্মী তাপস হত্যা মামলার আসামির তালিকায় তার নাম রয়েছে।
তাপস হত্যা মামলার আরেক আসামি এস এম জাহেদুল আউয়াল নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় মামলার আসামি হয়েছেন এমন অনেকেই কমিটিতে ওপরের সারির পদে আসীন হয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
রামদায় ধার দেয়া দুই কর্মী সহসভাপতি পদে
২০১৫ সালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সেই সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের সৃষ্ট অস্থিরতার সময়ে দুই শিক্ষার্থী ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন।
২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার পরদিন একটি জাতীয় দৈনিকে একটি ছবি ছাপা হয়। সেখানে দেখা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সেই সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপুর দুই অনুসারী শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় ধার দিচ্ছেন। তারা হলেন মিজানুর রহমান খান ওরফে শ্রাবণ মিজান ও মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন ওরফে টাইগার মোফা।
এই ছবি প্রকাশের পরপর ক্যাম্পাসে হইচই শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই দুই কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এ ছাড়া ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের কোনো পদে রাখা হয়নি।
বিতর্কিত সেই দুজন এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন। এ দুজনই বর্তমানে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী।
আজীবন বহিষ্কৃত হয়েও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবহির্ভূত কাজে জড়িত থাকার দায়ে ২০১৬ সালে ছয়জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
তার হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের সহসভাপতি মো. রাকিব উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান, যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, আপ্যায়ন সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদস্য সাইদুল ইসলাম সাঈদ ও আরিফুল হক টিপু।
আজীবন বহিষ্কার হয়েও বর্তমান কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন সাঈদুল ইসলাম সাঈদ। তিনি ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
কীভাবে তার নাম কমিটিতে এলো তা জানার জন্য ইকবাল হোসেন টিপুকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত নেতাও আছেন কমিটিতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের বগিভিত্তিক গ্রুপ বিজয়ের নেতা মো. ইলিয়াস পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পদক পদ পেয়েছেন। তিনি আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। নিজের কর্মীদের অনেককে পদবঞ্চিত করার অভিযোগে তাকে ‘মাদক কারবারি’ আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন বিজয়ের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তাদের দেয়া পাঁচ দফা দাবির প্রথমটিই ছিল, মো. ইলিয়াসকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তাকে দুই মাস আগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় বলে জানান বিজয় গ্রুপের আরেক পদবঞ্চিত নেতা দেলোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে মো. ইলিয়াস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা যদি আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাহলে আমার কাছে পদ চায় কীভাবে? তাদের দায়িত্ব কি আমি নেব? আর আমি কীভাবে পদ দেব? আমি কি সাইনিং অথরিটি, নাকি কমিটি আমি গঠন করেছি?’
ইলিয়াস আরও বলেন, ‘ক্ষোভের বশে অনেকে অনেক কিছুই বলতে পারে। ২০১০ সাল থেকে আমি রাজনীতি করছি, গ্রুপ চালাচ্ছি। আমার নামে মাদক বিষয়ে অভিযোগ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে আছে কেন? আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি, কোনো মামলা বা অভিযোগ যদি থাকে তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
এক ভাই ছাত্রদলে, অন্য ভাই ছাত্রলীগে
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া আবু বক্কর তোহা শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিনের আপন ভাই। এর সত্যতা তোহা নিজেও স্বীকার করেছেন। তবে তার ভাইয়ের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন।
কমিটিতে চাকরিজীবীর নাম
বর্তমান কমিটিতে কয়েকজন চাকরিজীবীও স্থান পেয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপনাট্য ও বিতর্ক বিষয় সম্পাদক পদ পেয়েছেন অনুপম রুদ্র। তিনি চবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে দেড় বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন।
এ ছাড়া সহসভাপতি পদ পাওয়া এস এম জাহিদুল আউয়াল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
নিজের অজান্তেই কমিটিতে পদ
নিজের অজান্তেই কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়ে বসে আছেন বিজন চৌধুরী নামে একজন। ২০১৩-১৪ সেশনের এই ছাত্র দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ে আর লেখাপড়া চালিয়ে যাননি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে নিজেকে দাবি করলেও কমিটিতে তার নাম আছে তা তিনি নিজেই জানতেন না।
বিজন বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বগিভিত্তিক রাজনীতির বিজয় গ্রুপের একজন কর্মী ছিলাম। তবে অপরাজনীতির শিকার হয়ে আমি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি অনেক আগেই ছেড়ে দেই।’
মানা হয়নি গঠনতন্ত্র ও জ্যেষ্ঠতার ক্রম
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ৬ নম্বর ধারার (সাংগঠনিক কাঠামো) ‘জ’ নম্বরে বলা আছে, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সাংগঠনিক জেলা হিসেবে গণ্য হবে।’
একই ভাগের ধারা ১০ থেকে জানা যায়, ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা শাখায় সহসভাপতি হতে পারবেন ২১ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন ৯ জন। সাংগঠনিক সম্পাদকও হতে পারবেন ৯ জন। কিন্তু চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন ৬৯ জন। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পেয়েছেন ১১ জন করে।
কমিটি গঠনে জ্যেষ্ঠতার ক্রম মানা হয়নি- খোদ পদ পাওয়া নেতারাই এমন অভিযোগ করেছেন। চবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই কমিটিকে তারা ‘বিশৃঙ্খল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া রকিবুল হাসান দিনার বলেন, ‘এই কমিটি নিয়ে আমরা পুরোপুরি অসন্তুষ্ট। বিশৃঙ্খল একটি কমিটি হয়েছে। সিনিয়র-জুনিয়রের কোনো ক্রম নেই। ক্যাম্পাস ও রাজনীতি ছেড়ে দেয়া অনেকেই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। কমিটি নিয়ে প্রত্যাশার বিন্দু পরিমাণও পূরণ হয়নি। এর দায়ভার চবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের।’
সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘চবি ছাত্রলীগের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য কমিটি এটি। এই কমিটিতে চাকরিজীবী, বিবাহিত, রাজনীতি ছেড়ে চলে যাওয়া ও রাজনীতি না করা অনেকেই পদ পেয়েছেন। কমিটিতে সিনিয়রকে জুনিয়র পোস্ট আর জুনিয়রকে সিনিয়র পোস্ট দেয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। কোনো শৃঙখলাও নেই। বিশাল হলেও এটাকে পকেট কমিটি বলা যায়।’
তিনি অভিযোগ করেন, সভাপতি ও সেক্রেটারি তাদের অনুসারীদের বেশি পদ দিয়েছেন। ফলে তার অনুসারীরা বঞ্চিত হয়েছেন।
তার বিরুদ্ধেও যে মামলা আছে তা স্বীকার করে প্রদীপ বলেন, ‘শুধু তাপস হত্যা নয়; ২০১৪ সালে আমানত হলের শিবির সেক্রেটারি মামুন হত্যা মামলায় আসামির তালিকায়ও তার নাম রয়েছে।
ভাইরাল ২ পাতা, সত্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর আরও দুই পাতা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাতে আরও ৫০ জনের নাম সহসভাপতি পদে আছে। তবে এই দুটি পেজের সত্যতা ও কত সদস্যের কমিটি সেটি নিশ্চিত করে বলছেন না দায়িত্বশীল কেউই।
যারা পদ দিলেন, তারাই এড়াচ্ছেন সাংবাদিকদের
কমিটি নিয়ে বিতর্ক ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও প্রতিবারই তিনি লাইন কেটে দেন।
সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনে লাইন কেটে দেন। ফলে তার মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার কল দেয়া হলে তারা ফোন ধরেননি।
চবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে বিষয়গুলো সামনে আসছে সেগুলোর তথ্য-প্রমাণসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দিলে আমরা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’
কারা জমা দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছেন, যারা অভিযোগ করতে চান তারা জমা দেবেন। প্রয়োজনে নাম গোপন রেখেও দপ্তর সেলে অভিযোগ জমা দিতে পারেন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জিতু বলেন, ‘কমিটির সদস্যসংখ্যা নিয়ে অনেক জটিলতা আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আজ বা কাল বসব। এরপর সবিস্তারে বলব।’
গঠনতন্ত্র মানা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে কী হলো, বিষয়গুলো কীভাবে সুরাহা করা যায়, তা নিয়ে আমরা কথা বলছি। আমরা পরে জানাব।’
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য