বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বাকেরগঞ্জের জিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করেন। আধা ঘণ্টা পর পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান খান স্বপন অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে শ্লীলতাহানি করেছেন। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার থানায় অভিযোগ দেয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ছাত্রীর মায়ের দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, তার মেয়েকে বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে পরীক্ষায় পাস না করানোর হুমকিও দিতেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গত ১ আগস্ট শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে মেয়েটিকে শারীরিকভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করেন। সে সময় সহপাঠীরা গিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি জানালে মা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ করেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আকমল হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও বাকেরগঞ্জ দুধল মৌ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে নারীঘটিত অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আশুতোষ ব্রক্ষ্ম জানিয়েছেন, অভিযোগ সত্য নয়। স্থানীয় একটি পক্ষ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে প্রধান শিক্ষককে অপসারণের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটনা সাজিয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার জানান, ওই ছাত্রীর মায়ের দেয়া অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির রোষানলে পড়ে ১০ বছর ধরে চাকরিতে ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এক কলেজশিক্ষক।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গৌরাঙ্গ বাজারে অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন গচিহাটা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল মুনসুর। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য তার প্রাপ্য বেতন- ভাতা পরিশোধ এবং চাকরিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন চান।
অভিযুক্ত ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন। তিনি গচিহাটা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি।
আখতারুজ্জামানের দাবি, নারীঘটিত বিষয়ের কারণে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণি পেয়েও ‘মানবেতর জীবনযাপন’
অভিযোগকারী আবুল মুনসুর জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণি পেয়ে মাস্টার্স করেন। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যুক্ত হওয়ার ব্রত নিয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজে। ১৯৯৫ সালের পহেলা জুন কলেজটিতে যোগদানের পর ২০১৪ সালের পহেলা নভেম্বর তিনি পদোন্নতি পান সহকারী অধ্যাপক পদে।
তার ভাষ্য, জীবনের এই পর্যন্ত সময়টুকু ছিল বেশ সাজানো গোছানো ও স্বস্তির। এরপর হঠাৎ করেই তার জীবনে নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার।
এ শিক্ষক জানান, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন রুষ্ট হন তার ওপর। মিথ্যা অভিযোগে প্রথমে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং পরবর্তী সময়ে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ গভর্নিং বডি।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির সরকারি অংশের বেতন শিট থেকে মো. আবুল মুনসুরের নাম বাদ দেয়া হয় এবং ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়, কিন্তু ঢাকা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিলের সভায় মো. আবুল মুনসুরকে সমুদয় প্রাপ্য বেতন-ভাতাসহ স্বপদে বহালের জন্য সিদ্ধান্ত দেয়া হয় এবং কলেজ গভর্নিং বডিকে তা পত্র দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
কলেজ গভর্নিং বডি তাকে পুনর্বহাল না করে পুনরায় রিআপিল করলে বোর্ড পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এরপরও দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি কলেজ গভর্নিং বডি।
‘অচল করে দেয়া হয়েছে হাত-পা, চলে গেছেন স্ত্রী’
আবুল মুনসুরের ভাষ্য, চাকরিবিহীন অবস্থায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে গেছেন। এই সময়ে অন্যত্র চাকরি হলেও সেসব স্থানে যোগদান করার জন্য কলেজ থেকে অনুমতিপত্রও তাকে দেয়া হয়নি। এমনকি মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন তার লোকজন দিয়ে পিটিয়ে তার বাম হাত ও বাম পা অচল করে দিয়েছেন। ফলে তছনছ হয়ে গেছে তার সাজানো-গোছানো জীবন।
তিনি জানান, সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। ঘরে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধা মা ও প্রতিবন্ধী দুই বোনের জন্যও কিছু করতে পারছেন না তিনি।
মুনসুর অভিযোগ করেন, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে তাকে ধমকাতেন এবং চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিতেন। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের শিক্ষক পরিষদের সভায় বিনা অন্যায়ে তাকে ধমকান এবং চাকরি থেকে সাত দিনের মধ্যে বহিষ্কারের জন্য অধ্যক্ষকে মৌখিক নির্দেশ দেন। এরপর মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পরপর দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
তিনি জানান, তিনি নোটিশ দুটির জবাব যথাসময়ে দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ জবাব মেনে নেয়নি। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন বিষয়টি কলেজ শিক্ষক পরিষদকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। কলেজ শিক্ষক পরিষদ তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়, তাদের ধারণা হয়েছে যে, যৌন হয়রানি বা অসদাচরণের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ জন্য আবুল মুনসুরের বিরুদ্ধে কোনো কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত হবে না।
সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল মুনসুর অভিযোগ করেন, ‘মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন সরকারি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। নিজেকে তিনি সরকার বলে দাবি করেন। তিনি অধ্যক্ষকে চাপে ফেলে জোর করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগপত্র ঢাকা বোর্ডে পাঠান। বস্তুত অভিযোগকারীর অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও চক্রান্ত।
‘আমার বর্তমান বয়স ৫৯ বছরেরও বেশি। অতীতে আমার বিরুদ্ধে অন্যায়মূলক কোনো কাজ করার রেকর্ড নেই। এরপরও কেবল মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জনের রোষানলের কারণে আমি চাকুরিতে ফিরতে পারছি না। এমনকি আমাকে অনাপত্তিপত্র না দেয়ায় অন্য কোথাও চাকুরিও করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে আমার বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) থেকেও আমার নাম বাদ দিয়ে মাউশিতে পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় চরম অর্থকষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
ওই সময় নিজের পারিবারিক দুরাবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল মুনসুর।
সংবাদ সম্মেলনে মো. আবুল মুনসুরের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এএসএম আজিজুর রহমান ভূঞা, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম এবং কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবু লায়েছ ভূঞা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত গভর্নিং বডির সভাপতির ভাষ্য
অভিযোগের বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নারীঘটিত বিষয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। পরে ঢাকা বোর্ড তার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিলে এর বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে গিয়েছি।
‘সেখানে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে। যদি রায় তার পক্ষে আসে, তবে সে বেতন-ভাতাদি পাবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৩ শতাংশ শিক্ষকই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা থাকছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রোববার বিভাগটির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ দুটি তথ্য জানান।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক নিয়োগে প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করছি আমরা। এখন প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রাথমিকের বাজেট বাড়ানোটাই সময়ের দাবি।’
‘প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯’ অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯-এ বলা হয়েছে, একটি উপজেলার মোট পদের ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য ও ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা নির্ধারিত থাকবে।
নারী, পোষ্য ও পুরুষ–এ তিন ধরনের কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আবার চার ধরনের কোটা অনুসরণ করতে হতো। সেগুলো হলো এতিমখানা নিবাসী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ১০ শতাংশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ৩০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্য ১০ শতাংশ।
তা ছাড়া তিন কোটার প্রতিটি ক্যাটাগরিতে অবশ্যই ২০ শতাংশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হতো।
এভাবে তিন কোটায় বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া যাবে। কোটা বাদ দিয়ে বাকি পদগুলোতে শুধু মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। সেটা ৪০ শতাংশের বেশি নয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটা-সংক্রান্ত আগের সব পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রহিত করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ কোটার ভিত্তিতে হবে।
এমন বাস্তবতায় প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করা হবে নাকি জনপ্রশাসনের সবশেষ কোটা বণ্টনের প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করা হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। অবশেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিষয়টি স্পষ্ট করলেন। এর ফলে আগামীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯৩ শতাংশ মেধা এবং ৭ শতাংশ কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হতে পারে।
আরও পড়ুন:বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনডেক্সধারী সব শিক্ষকই বদলির সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা খুব শিগগির এমন সুখবর পাবেন।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের শূন্যপদের বিপরীতে সর্বজনীন বদলি নিয়ে কাজ করছি। আজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব শিক্ষককেই বদলি করা সম্ভব।’
শূন্যপদে বদলির প্রজ্ঞাপন জারিতে দেরির কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বদলির আওতায় আনা খুব সহজ ব্যাপার নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত পাওয়া গেছে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর জাহিদুল হককে হত্যার হুমকির প্রতিবাদ এবং জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হুমকিদাতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার ও সন্ত্রাসবিরোধী বিশ্বজিৎ ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে মানববন্ধন করেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষকরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধনে যোগ দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফ্যাসিস্টদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না’, ‘এক জাহিদ মরে গেলে লক্ষ জাহিদ ঘরে ঘরে’সহ নানা স্লোগান দেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন কর্মসূচির আয়োজন করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কীভাবে একজন কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গুলি করে মারার হুমকি দেয়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে আমরা শিক্ষার্থীরা মাঠে থাকব। যারা হুমকি দিচ্ছে তাদেরকে ছেড়ে কথা বলব না।
ছাত্র আন্দোলনে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন, এটা কি তার অপরাধ? অভিযুক্ত কাজী মনির ও হুমকিদাতা সালাউদ্দিন মোল্লা স্পষ্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধী ছিলো। এখন সে বাইরে বসে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী অতুল রায় বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসররা বিদেশে পালিয়েছে। পালিয়েও আমাদের হুমকি দিচ্ছে। শিক্ষকদের হুমকি দেয়া মানে আমাদের ছাত্র আন্দোলনকে হুমকি দেয়া। জবিতে ফ্যাসিস্ট আমলের যারা রয়ে গেছে তাদের আমরা খুঁজে বের করবো এবং সব অভিযুক্তকে যেকোনো মূল্যে আইনের আওতায় আনব। প্রশাসন আমাদের দাবি না মানলে আমরা সব ক্লাস বর্জন করব।’
প্রিন্ট মেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের স্নেহভাজন জাহিদুল হককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরও। আমরা ব্যথিত বোধ করছি, এজন্য এখানে দাঁড়িয়েছি।’
ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সুমন বলেন, ‘আমাদের যে কলিগের ওপর হত্যার হুমকি এসেছে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন জাতীয় অংশীজন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে তার চিন্তা সবসময় ছিলো। আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষেও তার শক্ত ভূমিকা ছিল।’
চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান ও ডিন আলপ্তগীন তুষার বলেন, ‘আজ আমরা ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষকরা সম্মিলিত হয়েছি শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হককে হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের বহিষ্কারের দাবিতে। উনিও শিক্ষক আমিও শিক্ষক। আজ জাহিদকে হুমকি দিয়েছে, কাল আমাকে দেবে।’
প্রসঙ্গত, শিক্ষক জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে। হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষক। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
আরও পড়ুন:পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে সঙ্গে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনগুলোতে সই করেছেন উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। যোগদানের তারিখ থেকে তিনি চার বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক এম এনামুল্লাহ। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। আগামী চার বছরের জন্য তাকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তাকেও চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। আগামী চার বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
একই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতেও উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন উপাচার্য হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মো. ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। আগামী চার বছর তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
একইসঙ্গে রাবিতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) পদেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ পদে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মইন উদ্দিন।
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিন্যান্স বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
একই দিনে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফ্যাকাল্টি অফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাউসার এ পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।
অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। ১৯৯৫ সালে তিনি লেকচারার পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর তিনি ক্রমান্বয়ে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক হয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর বুড্ডিস্ট হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করায় স্বামী বিবেকানন্দ পদক পেয়েছিলেন।
২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য হতে যাচ্ছেন অধ্যাপক দিলীপ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য জেড এম পারভেজ সাজ্জাদও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে উপাচার্য পদে তার নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে চার) বছর হবে। এই পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাবেন। বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধাও ভোগ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
এদিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক দিলীপ কুমার বলেন, রক্তস্রোতের পর পাওয়া নতুন বাংলাদেশে আমি এই দায়িত্ব পেয়েছি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, আহত হয়েছে। আন্দোলনের যে আদর্শ সেটি আমি বাস্তবায়ন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, সমৃদ্ধি এবং গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধির জন্য আমার যতটুকু করণীয় করে যাবো।
আরও পড়ুন:১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন পরীক্ষার্থী। এবার গড় পাসের হার ২৪ শতাংশ।
সোমবার বিকেলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ওয়েবসাইট থেকে এই ফল প্রকাশের তথ্য জানা যায়।
এনটিআরসিএ এর আগে ১৫ মে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। তাতে গড় পাসের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ১২ ও ১৩ জুলাই।
গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ওই প্রিলিমিনারিতে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। তাতে স্কুল ও কলেজ পর্যায় মিলিয়ে মোট পাস করেন চার লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন চাকরিপ্রার্থী। সে হিসাবে প্রিলিমিনারিতে ৮ লাখ ৬০ হাজারের বেশি প্রার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
মন্তব্য