ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রহিম নিহতে বিচারের দাবিতে জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নুরে আলমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ করেন দলের নেতা-কর্মীরা। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হরতালের ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ট্রুম্যান।
এর জেরে জেলা শহরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। শহরের মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করছে। লঞ্চ ও ফেরি চলাচল রয়েছে স্বাভাবিক।
এরই মধ্যে সকাল ৮টার দিকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ভোলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির ডাকা হরতালে যেন কোনো ধরনের নাশকতা না হয়, এ জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্য বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়োজিত রয়েছে। হরতাল চলাকালে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন রয়েছেন। ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বলা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।’
ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রহিম নিহতের বিচারের দাবিতে আমরা হরতালের ডাক দিয়েছি। সকাল থেকে জেলা শহরকেন্দ্রিক আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতাল চলছে।
‘আমাদের নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়া শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনে দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা সভাপতি নুরে আলম ও কর্মী রহিমের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে যাবেন।’
সারা দেশে লোডশেডিং ও জ্বালানি অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে গত ৩১ জুলাই রোববার ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সেদিনই স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবদুর রহিম নিহত হন।
পুলিশ সদস্যসহ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন দিন ধরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের।
আরও পড়ুন:‘পাঁচ মাস, প্রায় পাঁচ মাসের মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল। ভয়ভীতি নিয়ে দিন কাটছিল। এখনও ভয়ভীতি আছে, ভয়ভীতি যাবে না। তবে এখন আমি মুক্ত।’
ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতির পর কথাগুলো বলেছেন মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।
জেলা আমলি আদালত-১-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে মঙ্গলবার মামলা থেকে হৃদয় মণ্ডলকে অব্যাহতির মৌখিক আদেশ দেন। বুধবার সে আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেন বিচারক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের জিআরও মো. জসিমউদ্দিন।
এ খবর শুনে শিক্ষক বলেন, ‘ভয়টা রইল না যে আবার কারাগারে যেতে হবে অথবা আবার মাসে মাসে হাজিরা দিতে হবে। এটার থেকে তো মুক্তি পাইলাম।
‘অনেক শিক্ষকই চাইছিলেন আমি এই স্কুল থেকে চলে যাই। স্কুলের শিক্ষকরা তো চাইছিলেন এই সমস্যাটা সৃষ্টি হোক। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সব সময় আমার ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনও আছে।’
হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এর বিচারক জশিতা ইসলাম অব্যাহতির আদেশ দেন। তবে মৌখিক ঘোষণার পর আজ আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিচারক। গত ৮ আগস্ট পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।’
যা ঘটেছিল
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন হৃদয় মণ্ডল।
তিনি গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাতেই হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
১৯ দিন কারাভোগের পর ১০ এপ্রিল রোববার জামিনে মুক্ত হন হৃদয় মণ্ডল। তাকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া।
কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, যাদের অভিযোগের কারণে তিনি কারাভোগ করেছেন, তাদের ওপর তার কোনো ক্ষোভ নেই।
গত ১১ এপ্রিল সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। তদন্ত শেষে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি বলে ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে যাওয়া মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১৩ জন নিহতের ঘটনায় গেটম্যান ও নিহত মাইক্রোচালকের দায় খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন ও নিহত মাইক্রোচালক গোলাম মোস্তফা নিরুকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবুল কালামের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
বুধবার আবুল কালাম নিজেই নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। গেটম্যান সাদ্দামের ঘটনাস্থলে অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে মামলায় সে আসামি হয়ে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আর মাইক্রোবাসচালক তো মারাই গেছে।’
২৯ জুলাই আরঅ্যান্ডজে কোচিং সেন্টার থেকে খইয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফেরার পথে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় অরক্ষিত একটি লেভেল ক্রসিংয়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোটিকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১১ জন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান দুজন। এ ঘটনায় আহত তিনজন এখনও চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মামলা করেন সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার সময় সাদ্দাম হোসেন লেভলে ক্রসিংয়ে ছিলেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দুর্ঘটনার পর প্রাণহানির পুরো দায় মাইক্রোচালকের বলে দাবি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তখন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেখানে রাস্তায় ক্রসিংয়ে সাদ্দাম নামে একজন গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি দাবি করেছেন যে সময়মতোই ক্রসিংবার ফেলেছিলেন। তার কথা অমান্য করে মাইক্রোবাসের চালক বারটি তুলে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
পরে রেলওয়ে কর্মকর্তার এ দাবি সত্য নয় দাবি করেন বেঁচে ফেরা দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোর যাত্রী জুনায়েদ কায়সার ইমন।
ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোর পেছনের সারিতে ছিলেন হাটহাজারীর কলেজছাত্র জুনায়েদ। তিনি জানান, ক্রসিংয়ে কোনো বার ছিল না। এ কারণে চালক গাড়ি টেনে নেন রেললাইনে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘ট্রেনের কোনো ব্যারিকেড ছিল না। ট্রেন যখন আসছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে ট্রেন আসছে। ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে মেরে দিয়েছে। খেয়ালও করিনি। নিমিষেই ট্রেন চলে আসছে। আমি পড়ে গেছি পেছনে। কীভাবে পড়লাম, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।’
এ ঘটনা তদন্তে পরে দুটি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি কমিটি গেটম্যান ও মাইক্রোবাসের চালককে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় রুবেল হোসেনের দাফন নিজ বাড়ি মেহেরপুরে হয়েছে।
সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
ভোরে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন। দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়ামনি, যাদের বিয়ে হয়েছে গত শনিবার। সোমবার ছিল বউভাত।
হৃদয়ের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে কনের বাড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন তারা। ছেলের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
রুবেল ছাড়াও যারা মারা গেছেন তারা হলেন কনের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝরনা বেগম, ৬ বছর বয়সী জান্নাত ও দুই বছর বয়সী জাকারিয়া।
নিহত এই চারজনের দাফন মঙ্গলবার রাতে জামালপুরে সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় চারজনের দাফন হয়েছে নিজ বাড়ি জামালপুরে।
মেলান্দহ উপজেলার আগ পয়লা গ্রামে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝরনা বেগম এবং তার দুই শিশুসন্তান জাকারিয়া ও জান্নাতের দাফন সম্পন্ন হয়।
ইসলামপুর উপজেলার লাউদত্ত গ্রামে রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানাজা শেষে কনের মা ফাহিমা বেগমকে নিজ বাড়ির আঙিনায় দাফন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাল নীল বাতির সঙ্গে সাইরেন বাজিয়ে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি এগিয়ে এলে ভিড় জমায় শত শত উৎসুক জনতা। আর অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় স্বজনদের চিৎকার। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। হঠাৎ এমন মৃত্যুতে হতবাক নিহতদের স্বজনসহ এলাকাবাসীও।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন। দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তারা ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়ামনি, যাদের বিয়ে হয়েছে গত শনিবার। সোমবার ছিল বউভাত।
হৃদয়ের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে কনের বাড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন তারা। ছেলের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
রুবেল ছাড়াও যারা মারা গেছেন তারা হলেন কনের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝরনা বেগম, ৬ বছর বয়সী জান্নাত ও দুই বছর বয়সী জাকারিয়া।
আরও পড়ুন:প্রশাসনের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে মধ্যরাতে হলে ফিরে গেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হল থেকে রাইস কুকার ও রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম সরানোর নির্দেশনা বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন অপরাজিতা হলের ছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে অবস্থান নেন তারা। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরাও।
রাত দেড়টার দিকে শিক্ষর্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে লিখিত দেন অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা নুসরাত রিম্মি। পরে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে অপরাজিতা হলের টয়লেটে গিয়ে এক ছাত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে গলায় বঁটি চালান। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় অপরাজিতা হলে দা, বঁটি, চাকু এমনকি রাইস কুকারও নিষিদ্ধ করে হল কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীদের রুমে রুমে গিয়ে সরঞ্জামগুলো জব্দ করা হয়। সবাইকে ডাইনিংয়ের খাবার খেতে নির্দেশ দেয়া হয়।
অপরাজিতা হলের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের ডাইনিংয়ের খাবারের মান খুবই খারাপ। তার মধ্যে রাইস কুকার নিষিদ্ধ করা হলো। রান্নার সব সরঞ্জামও হলে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।’
লীমা নামের আরেক ছাত্রী বলেন, ‘আন্দোলনে আসতে আমাদের বাধা দেয়া হয়েছিল। আমরা হলের দুটি তালা ভেঙে নেমেছিলাম।’
আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক মো. শরীফ হাসান লিমন এসেছিলেন। তবে তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে ফিরে যান।
পরে রাত দেড়টায় প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে লিখিত দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১. রাইস কুকার ও হলের রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
২. সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টের প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও মহিলা আত্মীয়দের থাকার অনুমতি প্রদান করতে হবে।
৪. পানির পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৫. প্রভোস্ট তার নিজ ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদের ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগত এবং অ্যাকাডেমিক বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে ও ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৭. যেকোনো পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেয়া বন্ধ করতে হবে।
৮. যেকোনো পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৯. হলের মিল খাওয়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না।
১০. আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেয়া যাবে না।
১১. এ দাবিগুলো না মানলে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ করতে হবে।
আরও পড়ুন:শোক দিবসে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে কর্মীদের পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় জেলা পুলিশের আরও ৫ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিউজবাংলাকে।
তিনি জানান, বরগুনা সদর থানার এএসআই মো. সাগর, পুলিশ লাইন্সের কনস্টেবল মো. রবিউল ও ডিবি পুলিশের কনস্টেবল কেএম সানিকে প্রত্যাহার করে ভোলা জেলা পুলিশে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর ডিবি পুলিশের এএসআই মো. ইসমাইল এবং ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রুহুল আমিনকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর জেলা পুলিশে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদি হাচান। একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া দেননি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম তারেক রহমানের (প্রশাসন ও অর্থ)।
এর আগে দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীকে প্রত্যাহার করে প্রথমে বরিশাল রেঞ্চে এবং পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে সোমবার দুপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় হামলাকারীরা ছাদ থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ কারণে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
এ সময় সেখানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন।
বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, গাড়ি ভাঙচুরকারীকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা মহররম ছিলেন সেখানে। তিনি অনেক ভুল করেছেন।
‘যেখানে আমি উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শোনেননি।’
মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কে এম এহসান উল্লাহ জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সোমবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়।
চকবাজারে চারতলা ভবনে আগুনের ঘটনায় বরিশাল হোটেলের মালিক ফখরুদ্দিনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম মামলার এজাহার গ্রহণ করেন। তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করে দেন।
এর আগে মামলার আসামি বরিশাল হোটেলের মালিক মো. ফখরুদ্দিনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই রাজীব কুমার সরকার এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন জানান।
বিচারক আবেদন বিবেচনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড দেন।
সোমবার দুপুরে চকবাজার দেবীদাস লেনে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বরিশাল হোটেলের ছয় কর্মচারীর মৃত্যু হয়। তারা সবাই হোটেলটিতে নাইট শিফটে কাজ করে সকালে ঘুমিয়েছিলেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল ভবনের দ্বিতীয় তলায়। নিচতলায় ছিল বরিশাল হোটেল।
এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা করেন আগুনে মারা যাওয়া রুবেলের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী। মঙ্গলবার ভোরে বরিশাল হোটেলের মালিক ফখরুদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য