এক হাত তুলায়, আরেক হাত চরকায়। গড়গড় শব্দে সুতা কেটে চলেছেন একদল নারী। গভীর মনোযোগে তাদের সকাল গড়িয়ে কখন যে দুপুর হয়ে যায় খেয়ালই থাকে না।
এমন মনোযোগের পরও দিনে মাত্র এক থেকে দুই গ্রাম সুতা কাটতে পারেন একেকজন। কারণ এই সুতাটি এত মিহি যে, সহজে কাটা যায় না। এমনকি মেশিনেও কাটা সম্ভব নয়। ছিঁড়ে যায়। তাই ধীরে ধীরে হাত দিয়ে কাটতে হয় সুতাটি।
কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল মিহি এই সুতা দিয়েই ফিরে আসছে অতীতের হারানো গৌরব। তৈরি হচ্ছে মসলিন কাপড়। আর এই কাপড় দিয়েই বানানো একটি শাড়ির পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় সাত লাখ টাকা!
চান্দিনার সোনাপুর, দোতলা আর দেবিদ্বারের রামপুর- কুমিল্লার এই তিনটি গ্রামই এখন বহু মূল্যবান সেই শাড়ির আঁতুড় ঘর। এই গ্রামগুলোর সাতটি স্থানে ২২৬ জন নারী এখন মসলিনের সুতা কাটেন। তাদের তৈরি সুতা চলে যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। সেখানেই বিখ্যাত মসলিন কাপড় বুনছেন ২৩ জন কারিগর।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ফুটি কার্পাস তুলা থেকেই তৈরি হয় মসলিনের সুতা। চরকা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ মেট্রি কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হতো। বলা হয়, একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে বের করে আনা যায় একটি মসলিন শাড়ি। নানা কারণে ১৮ শতকের শেষ দিকে বাংলায় মসলিন কাপড় তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে চান্দিনার সোনাপুর গ্রামের মুন্সীবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনের ঘরে দুটি কক্ষে চরকায় সুতা কাটছেন ৪৫ নারী। তাদের সুপারভাইজার রোকসানা আক্তার জানান, সোনাপুর ও আশপাশের গ্রামে আগে মোটা সুতা কাটা হতো। ৬ বছর আগে তাঁত বোর্ড থেকে তাদের ৪০ জনকে মসলিন কাপড়ের সুতা কাটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখান থেকে ছয়জনকে বাছাই করা হয়। ওই ছয়জন পরে তিন গ্রামের ২২৬ নারীকে প্রশিক্ষণ দেন।
রোকসানা বলেন, ‘গত বছর সময় ধরে আমরা মসলিন সুতা কাটছি। সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সুতা কাটি। প্রতিদিন ২৫০ টাকা মজুরি পাই।’
এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত নাজমা বেগম, বিলকিস আক্তার জানান, তারা গ্রামের মধ্যে নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারছেন। এক বেলা কাজ করে, অন্য বেলা পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। এতে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে সংসারে কিছুটা সচ্ছলতাও এসেছে।
সোনাপুর গ্রামের মধ্যপাড়া কেন্দ্রের সাফিয়া বেগম বলেন, ‘মজুরি আরেকটু বাড়ালে আমাদের সুবিধা হয়।’
আরও পড়ুন:তেলের দাম বাড়ানোর পর কেবল বেসরকারি পরিবহন কোম্পানি নয়, ভাড়ার নৈরাজ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও। রাজউক পরিচালিত হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসের পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসেও ঢাকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ মিলছে।
যাত্রীরা নিত্যদিন ঠকছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাপে থাকা যাত্রীরা পরিবহনের ক্ষেত্রে যতটা ব্যয় করার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি দিতে বাধ্য হওয়ায় নগরবাসীর পকেটে টান পড়ছে আরও বেশি।
শুক্রবার মোহাম্মদপুর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত চলাচল করা বিআরটিসির ডবল ডেকার বাসগুলোতে বেশি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই রুটে ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে ভাড়া আদায়ের কথা থাকলেও ভাড়া আদায়ে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে না। পুরোনো টিকিটের পেছনে টাকার অঙ্ক বসিয়ে যাত্রীদের দেয়া হচ্ছে।
বেশি ভাড়া নেয়ায় যাত্রীরা কথা বলতে গেলে টিকিট বিক্রেতা বলছেন, ‘এটাই নতুন ভাড়া।’
ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করার পর সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আড়াই টাকা।
অর্থাৎ কোনো বাসে চার কিলোমিটার গেলে একজন যাত্রী ভাড়া দেবেন ১০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারের জন্য যোগ হবে আড়াই টাকা।
বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলো এই নিয়মের পরোয়া না করে পুরো রুটকে কিছুদূর পরপর চেক বানিয়ে ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। বিআরটিসির বাসে এই ওয়েবিল না থাকলেও জনগণের নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ রাখা হয়নি।
বিআরটিসি পরিবহনের বাস মোহাম্মদপুর থেকে তিতুমীর কলেজ পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে ২৫ টাকা। বিআরটিএর হিসাবে এই পথে ৮ দশমিক ২০ কিলোমিটারে ভাড়া আসে ২০ টাকা ৫০ পয়সা। বেশি নেয়া হচ্ছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা।
চার্টে ২১ টাকা, আপনারা ২৫ টাকা কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে টিকিট বিক্রেতা মো. হাসান বলেন, ‘চার্টে ২১ টাকা না, ২২ টাকা আছে।’
পরে চার্টের ভাড়া ২১ টাকা দেখালে তিনি বলেন, ‘দুই-চার টাকা ভাংতি কই পাব?’
ভাংতি দিতে পারবেন না তাই বলে ৪ টাকা বেশি নেবেন সবার থেকে? -উত্তরে হাসান বলেন, ‘আমি বেশি নিচ্ছি না।’
মহাখালী ওয়ারলেসের ভাড়াও নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। এই ভাড়ায় অবশ্য গুলশান-১ পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে।
মোহাম্মদপুর থেকে মহাখালী ৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার। ভাড়া আসে ১৮ টাকা। তবে নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
একই রুটের বিআরটিসির আরেকটি বাসে আসাদগেট থেকে বাড্ডা ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা। এই দূরত্বে বিআরটিএর চার্টে ভাড়া লেখা ২১ টাকা। ভাড়া বেশি নিচ্ছে ৯ টাকা।
টাউন হল থেকে মহাখালী ভাড়া নিয়েছে ২০ টাকা। তবে বিআরটিএর চার্টে এই দূরত্বে ভাড়া লেখা ১৫ টাকা।
আসাদগেট থেকে বাড্ডার ভাড়া চার্টে লেখা ২১ টাকা আপনি ৩০ টাকা কেন নিয়েছেন? উত্তরে ফজলে রাব্বি বলেন, না বেশি নিচ্ছি না।
পরে প্রমাণ দিলে তিনি বলেন, ‘ভাই ফেরত দিচ্ছি।’
টাউন হল থেকে ১৫ টাকার ভাড়া কেন ২০ টাকা নিয়েছেন- উত্তরে রাব্বি বলেন, পাঁচ টাকা ভাংতি নাই।
এ সময় বেশি টাকা যে যাত্রীর কাছ থেকে নিয়েছেন তিনি এসে বলছেন, কই তুমি তো আমার কাছ থেকে ভাড়া ২০ টাকা বলেই নিয়েছ।
তখন রাব্বি বলেন, ভাই ভাংতি ছিল না তাই ২০ টাকা নিয়েছি।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের আরেক কৌশল
এই রাস্তার যাত্রী মো. সুজন বলেন, ‘অন্যদের মতো বিআরটিসিও ভাড়া বেশি নিচ্ছে। ভাড়া বাড়ানোর পর প্রথম দিন মোহাম্মদপুর থেকে আমতলী ২৫ টাকা ভাড়া নিয়েছে। আজকে নিয়েছে ২০ টাকা। ১২ টাকা, ১৮ টাকা, ২৩ টাকা, ২৭ টাকা এ রকম খুচরা টাকাকে তারা রাউন্ড ফিগারে ভাড়া নেয়। ১২ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা নেয়। ১৮ টাকার ভাড়া ২০ টাকা, ২৩ টাকার ভাড়া ২৫, ২৭ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পাশের দেশে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, যারা ভাড়া আদায় করে তাদের কাছে একটা ব্যাগ থাকে। সেখানে খুচরা পয়সা থাকে। তারা ১১, ১৩, ১৭, ২১ টাকা ভাড়া রাখে এবং বাকি খুচরা টাকা ফেরত দেয়।
‘কিন্তু আমাদের দেশে বেসরকারি থেকে শুরু করে সরকারি কোনো বাসেই খুচরা টাকা ফেরত দেয়া হয় না। তারা এক টাকা ভাড়া বাড়লে তার সঙ্গে ৪ টাকা যুক্ত করে রাউন্ড ফিগার করে নেয়।’
গাড়ির নম্বর চাইলেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান
বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে জানালে বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাড়ির নম্বরসহ আমাকে দেন। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সকল গাড়িতেই একই ভাড়া নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে আমরা ই-টিকিটিং সিস্টেমে ভাড়া নেই।’
ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে তারা ভাড়া নিচ্ছে না। পুরোনো টিকিটের পেছনে ভাড়ার অঙ্ক লিখে ভাড়া আদায় করছে- এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, ‘আপনি বলেছেন যেহেতু আমরা কালকেই অ্যাকশন নেব। সকালেই আমাদের অপারেশন অফিসার পাঠাচ্ছি।’
যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাতে আরও উৎসাহিত হয়। বিআরটিসি বাস বেশির ভাগই লিজে চলছে। লিজ প্রথা বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালনোর অনুরোধ করব।’
তিনি বলে, ‘লিজ যারা নিচ্ছেন, তারা অবশ্যই মুনাফা করছেন। এই মুনাফাটা যদি যাত্রীদের মধ্যে বণ্টন করা যায় তাহলে বিআরটিসি নিজে এবং জনগণ উভয়েই লাভবান হবেন। তাতে বিআরটিসি একটা মডেল হিসেবে দাঁড়াতে পারে।’
আরও পড়ুন:সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতি কিলোমিটারের বাসভাড়া আড়াই টাকা হিসাব করে ন্যূনতম ১০ টাকা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
ওয়েবিলের নামে কালশী থেকে জোয়ারসাহারা পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই পথের দূরত্ব ৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার। সরকারি হিসাবে ভাড়া আসে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। আইন অনুযায়ী ১১ টাকা নেয়া সম্ভব নয় বিধায় নিতে হতো ১০ টাকা। ফলে এই গন্তব্যেও যাত্রী ঠকছে ১৫ টাকা।
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে উত্তরার কামারপাড়া রুটে চলাচল করে প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন। তাদের ভাড়ায় এমন চিত্র দেখা গেছে। এই বাসগুলোতে একটি চেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ২৫ টাকা।
নির্ধারিত চেকের আগে উঠলে যাত্রী যেখানেই নামুক, তাকে এই পরিমাণ ভাড়া দিতেই হবে। তবে এমন নয় যে, সেই চেকের পর পরবর্তী চেক পর্যন্ত পুরো ভাড়াই আদায় করা হয়। আবার এমনও না যে, দুই চেকের মধ্যে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার, যার ভাড়া বর্তমান হারে ২৫ টাকা হয়। দূরত্ব প্রায় অর্ধেক।
মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর বাংলা কলেজ পর্যন্ত ৫.৩ কিলোমিটার দূরত্বে যাত্রী যেখানেই নামুক না কেন ভাড়া দিতে হবে ২৫ টাকা। অথচ সরকারি হিসাবে এই পথের ভাড়া আসে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা। ভাড়ায় এখন আর পয়সার ব্যবহার নেই বলে সেটা সর্বোচ্চ নেয়া সম্ভব ১৩ টাকা। কারণ আইন অনুযায়ী ভোক্তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবামূল্যের কম নেয়া গেলেও বেশি নেয়া সম্ভব নয়।
এই হিসাবে এই গন্তব্যে একজন যাত্রীর কাছ থেকে বেশি নেয়া হচ্ছে ১২ টাকা। আর কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকার বদলে ভাড়া পড়ছে ৪ টাকা ৭১ বয়সা। এই ২৫ টাকায় অবশ্য মিরপুর ১ ও ১০ নম্বরেও যাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ার হার কিছুটা কম পড়লেও তা সরকার নির্ধারিত হারের দেড়গুণেরও বেশি।
মিরপুর-১ বা ১০ বা ১১ থেকে বাসে উঠে কেউ বিমানবন্দর সড়কে যেতে চাইলে আবার এভাবে ঠকতে হয়। কালশীতে একটি চেক বসিয়েছে। সেটি পার হলেই ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। আর কালশী চেক থেকে খিলক্ষেত গেলে ভাড়া দিতে হচ্ছে উত্তরা পর্যন্ত পুরো গন্তব্যের, যদিও খিলক্ষেত থেকে দূরত্ব কমসে কম সাত কিলোমিটার।
খিলক্ষেতের যাত্রীরা পুরো পথের ভাড়া দিতে না চাইলে তাদের নামতে হবে জোয়ারসাহারা পর্যন্ত। তবে সেখানে যাত্রী নামে কমই। ইচ্ছা করেই এমন একটি জায়গায় চেক বসানো হয়েছে, যেখানে যাত্রীর উঠানামা কম। কেবল এক কিলোমিটারের জন্য বাড়তি ১৫ টাকা আদায় করা হয়।
আবার পুরো পথের ভাড়া নিলেও মাঝে যাত্রী উঠানামা করা হয় না, এমন নয়। কালশীর পর পুরো পথে যেখানেই যাত্রী হাত তোলে, বাস ফাঁকা থাকলে সব জায়গায় থামে বাস, আর ইসিবি চত্বরে পুরো একটি স্টপেজ আছে। কিন্তু যাত্রী সেখানে নামলেও তাকে ভাড়া দিতে হবে কমসে কম জোয়ারসাহারা পর্যন্ত। অথচ এর পরে আরও একটি স্টপেজ আছে এমইএইচে।
এটি অবশ্য কেবল এই দুটি পরিবহন কোম্পানির চিত্র নয়, রাজধানীতে বছরের পর বছর ধরে প্রায় প্রতিটি পরিবহন কোম্পানি এই প্রতারণা করে আসছে। এমনকি এ থেকে বাদ নয় সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত চক্রাবাস বাস, যেটি বলে হাতিরঝিলে। বরং ইজারাদারের স্বার্থ দেখতে গিয়ে রাজউক জনসাধারণের স্বার্থ উপেক্ষা করছে। আর থেকেই দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা এই বাসে এবার আরও বেশি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর স্বার্থ দেখার দায়িত্ব যাদের, তারা পুরোপুরি চুপ।
গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর নগরীকে বাসভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করার পর ভাড়ার এই প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি।
কোম্পানিগুলো সে সময় মুচলেকা দেয় যে, তারা বাড়তি ভাড়া আদায় করবে না। কিন্তু বাড়তি ভাড়াই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তেলের দাম এবার লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পর সেই বাড়তির ওপর আরও বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন গন্তব্যে দেখা গেছে, বর্তমান হারের চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছিল আগে থেকেই, এবার নেয়া হচ্ছে আরও বেশি।
বাস ভাড়ার এই প্রতারণার প্রমাণ হাতেনাতে দেখে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। এরপর মন্ত্রী তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আইন মেনে চলার জন্য বাস কোম্পানির সুমতির ওপর ভরসা করার কথা বলেছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নইলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।
তবে এমন হুঁশিয়ারি গত নভেম্বরেও এসেছিল। ব্যবস্থা আসলে নেয়া হয়নি। আর বিআরটিএ কর্মকর্তারা এবার গণমাধ্যমকে এড়াচ্ছেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার থেকে অন্য কর্মকর্তাদের বারবার ফোন করলেও কেউ সাড়া দিচ্ছেন না।
গতবারের মতোই সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলেছে, বৃহস্পতিবার থেকে বাস ওয়েবিলে চলবে না। যাত্রীরা ভাড়া দেবেন কিলোমিটার হিসেবে।
এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দিন প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন দুটিকে দেখা যায় অবৈধ ওয়েবিলে ভাড়া নিতে।
পরিস্থানের বাসের যাত্রী মো. সুমন বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে আমি বাংলা কলেজ যাব। স্টুডেন্ট ভাড়া দিয়েছি ১০ টাকা। বাসে যিনি টাকা উঠাচ্ছেন তিনি আমার কাছে আরও পাঁচ টাকা দাবি করেন। আমি দিতে না চাইলে জোর করেন।’
বাসে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা আল-আমিন বলেন, ‘সব বাসে ওয়েবিল বন্ধ হলেও প্রজাপতি, পরিস্থান ও বসুমতিতে ওয়েবিল চলে।’
বাংলা কলেজের ভাড়া ২৫ টাকা কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, ‘এই পথে একটা ১৩ টাকা ও একটা ১২ টাকার চেক আছে।’
প্রজাপতি বাসে আসাদ গেট থেকে বাংলা কলেজের ভাড়া নিচ্ছে ২০ টাকা। চার কিলোমিটারের এই পথে ভাড়া আসে ১০ টাকা। বেশি নিচ্ছে ১০ টাকা। অর্থাৎ দিগুণ হারে দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
প্রজাপতি বাসের যাত্রী আল নাহিয়ান বলেন, ‘প্রজাপতি বাস মিরপুর-১ নম্বর থেকে টোলারবাগ পার হলেই দেড় কিলোমিটার পথে ১৫ টাকা ভাড়া রাখে। এই ভাড়ায় আসা যায় কলেজগেট পর্যন্ত। ভাড়া আগে ছিল ১০ টাকা। এখনও ওয়েবিলে চলতেসে। মিরপুর রোডের ম্যাক্সিমাম গাড়ির এখনও ওয়েবিল চালু।’
দিগুণ ভাড়া কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. হাফিজ বলেন, ‘আমি জানি না, চেকারকে জিজ্ঞাসা করেন।’
দারুসসালাম পয়েন্টের প্রজাপতি বাসের চেকার মো. জালাল বলেন, ‘আমাদেরকে মালিক পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয় নাই। তারা আগে যেভাবে বলছে সেই ভাবে ভাড়া নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন:বাসভাড়া নিয়ে রাজধানীতে যে নিত্য প্রতারণা চলছে, তার বাইরে নয় সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত বাসও।
রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার যে বাস পরিচালনা করা হয়, তাতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর নির্ধারণ করে দেয়া হারের আড়াই গুণের বেশিও ভাড়া আদায় করা হয়। বিআরটিএ সর্বনিম্ন যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, রাজউকের কোম্পানি আদায় করে তার দ্বিগুণ।
রাজউক নিজে অবশ্য এই বাস পরিচালনা করে না। অর্থের বিনিময়ে ইজারা নিয়েছে কোম্পানি। আর ইজারাদারের স্বার্থ দেখতে গিয়ে উপেক্ষা করছে জনগণের স্বার্থ।
বিআরটিএর হারের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায়ের পেছনে এক রাজউক কর্মকর্তার দাবি, তাদের বাসযাত্রী পরিবহনের সাধারণ বাহন নয়, এটি পর্যটন সংশ্লিষ্ট। ফলে বেশি ভাড়া আদায় করা যায়। অথচ এই বাসে ঢাকার লোকাল যেকোনো বাসের মতোই দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হয়। আর পর্যটন নয়, হাতিরঝিলের এক পাশ থেকে অপর পাশে যাতায়াতের জন্যই যাত্রীরা বাসটি ব্যবহার করে।
রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার যে বাস পরিচালনা করা হয়, তাতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর নির্ধারণ করে দেয়া হারের আড়াই গুণের বেশিও ভাড়া আদায় করা হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
২০১৬ সালে এই সড়কে যাত্রী পরিবহনে ১০টি মিনিবাস চালু হয়। বর্তমানে চলছে ২০টি। ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সেগুলো।
এইচআর ট্রান্সপোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান রাজউকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চালাচ্ছে এগুলো।
গত নভেম্বর এবং চলতি আগস্টে তেলের দাম দুই দফা বাড়ানোর পর বাসের ভাড়া দুই দফা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলা হয়েছে। অথচ দুইবার বাড়ানোর পর যে বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভাড়া আগেই আদায় করা হতো।
২০১৬ সালে রাজধানীর হাতিরঝিলে যাত্রী পরিবহনে ১০টি মিনিবাস চালু হয়। বর্তমানে চলছে ২০টি। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সেগুলো। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
দূরত্ব, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া- কোনো কিছুই খাটে না এখানে
গত শুক্রবার লিটারে ৩৪ টাকা করে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরদিন বিআরটিএ রাজধানীতে প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া আড়াই টাকা নির্ধারণ করে জানায়, সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০ টাকা। অর্থাৎ চার কিলোমিটার যাওয়া যাবে এই ভাড়ায়। এরপর প্রতি কিলোমিটার হিসেবে যোগ হবে আরও আড়াই টাকা করে।
কিন্তু নিউজবাংলা হিসাব করে দেখেছে, হাতিরঝিলে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিলোমিটার প্রতি ৬ টাকারও বেশি হারে।
এফডিসি কাউন্টার থেকে রামপুরা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বে এখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। প্রতি কিলোমিটার ভাড়া পড়ছে ৫ টাকা ৯৫ পয়সা।
এত দিন আদায় করা হতো ২০ টাকা। তখন কিলোমিটার পড়ত ৪ টাকা ৭৬ পয়সা। তাতেও পোষেনি ইজারাদারের।
অথচ বিআরটিএর বেঁধে দেয়া হিসেবে ভাড়া আসে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। এই হারের চেয়ে বেশি নেয়া সম্ভব নয় বিধায় যাত্রীদের আসলে ১০ টাকায় চলাচল করার কথা ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ১০ টাকায় বাসে ওঠারই জো নেই। প্রথম যখন বাস চালু করা হয়, সে সময়ই এই পথের ভাড়া ঠিক করা হয় ১৫ টাকা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১০ টাকা।
এরপর নভেম্বরে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয় ১৫ টাকা, এবার ঠিক করা হয়েছে ২০ টাকা।
এই ২০ টাকায় কত দূর যাওয়া যায়?
এফডিসি বাসস্টপ থেকে পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার আর পুলিশ প্লাজা থেকে রামপুরা পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১ কিলোমিটারের জন্যও এই ভাড়া ঠিক করা হয়েছে।
বিআরটিএ সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা ঠিক করে না দিলে প্রথম গন্তব্যে সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়া উচিত ছিল ৭ টাকা ৭৫ পয়সা এবং দ্বিতীয় গন্তব্যে হওয়া উচিত ছিল ২ টাকা ৭৫ পয়সা।
কিন্তু এখন এফডিসি থেকে পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত ভাড়া পড়ছে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা হারে, আর পুলিশ প্লাজা থেকে রামপুরা পর্যন্ত ১৮ টাকা ১৮ পয়সা হারে।
রামপুরা থেকে মধুবাগ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্যও আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫ টাকা।
আগে ভাড়ার হার ছিল ৪ টাকা ১৬ পয়সা, এখন হয়েছে ৫ টাকা ৫৫ পয়সা।
শুরু থেকেই হাতিরঝিলের চক্রাকার পুরো পথ যাওয়ার সুযোগ ছিল। একেবারে শুরুতে ঠিক করা হয় ৩০ টাকায় যাওয়া যাবে ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটারের এই পথ। দুই বার ৫ টাকা করে বাড়িয়ে এখন তা করা হয়েছে ৪০ টাকা।
প্রতি কিলোমিটার ভাড়া পড়ছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা হারে।
ভাড়া বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ, নেই কারও সই
গত মঙ্গলবার থেকে বাড়তি ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে। কাউন্টারের সামনে একটি তালিকা টানানো হয়েছে ভাড়া বাড়ানোর। নিচে লেখা আছে ‘কর্তৃপক্ষ’। তবে এই কর্তৃত্ব কার তা জানা যায়নি, কারণ, কোনো কর্মকর্তার সই নেই।
এফডিসি বাস স্টপেজের টিকিট বিক্রেতা মাসুদ করিমকে ১৫ টাকা দিয়ে পুলিশ প্লাজার টিকিট দিতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘১৫ টাকার কোনো টিকিট নেই, ২০ টাকা।’
এরপর তিনি ভাড়া বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি দেখতে বলেন। বিজ্ঞপ্তিতে কারও সই না থাকার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘এইটাই। গেলে ২০ টাকা দেন।’
যাত্রীরা রাগে গজ গজ করতে করতে টিকিট কাটছিলেন আর একজন আরেকজনের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে থাকেন, বলতে থাকেন, কোন যুক্তিতে এইটুকু পথের জন্য এত ভাড়া হয়।
আবার বাড়তি ভাড়া নেয়া হলেও টিকিট দেয়া হচ্ছে আগের হারের। সেই টিকিটে একটা সিল দেয়া হয়েছে কেবল। এ নিয়ে টিকিট বিক্রেতার মন্তব্য দায়সারা গোছের।
কখনও চলেনি বিআরটিএর অভিযান
জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর গত নভেম্বরে বাস ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার পর বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে বিআরটিএ রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে যে অভিযান চালায়, তখন বাদ পড়ে হাতিরঝিলের চক্রাবাস বাস।
এবার যখন বাড়তির ওপর আরও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, তখনও বিআরটিএ এই পথের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না।
গতবার বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ফোন দিলে তারা কথা বলতেন। এবার কোনো ফোনই তারা রিসিভ করছেন না। একবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার কল রিসিভ করার পর তিনি এসএমএস করতে বলেন। বাসভাড়ায় নৈরাজ্য এবং বিআরটিএর কার্যত ঘুমিয়ে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন লিখে পাঠানো হলে তিন দিনেও তার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি।
সুপারভাইজারের দাবি, এই জগত ভিন্ন
নির্ধারিত হারের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে লাইন সুপারভাইজার শওকত হোসেনের বক্তব্য বিবেচনায় নিলে বলতেই হয়, হাতিরঝিল একটি ভিন্ন জগৎ। এখানে সরকারের করা নিয়মকানুন খাটে না। তারা যা বলবে, সেটিই বিধান।
তিনি বলেন, ‘বাইরের ভাড়ার সঙ্গে এখানের ভাড়া কমপেয়ার করলে হবে না। এই গাড়িগুলো সম্পূর্ণ আলাদা। এটা হাতিরঝিল প্রজেক্টের গাড়ি। এটা টুরিস্ট বাস হিসেবে চলে।’
বাইরের বাসের সঙ্গে এই বাসের সার্ভিসের কী পার্থক্য- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিলে টুরিস্ট বাস হিসেবে বরাদ্দ।’
যাত্রীরা তো দাঁড়িয়ে যায় আপনাদের বাসে। তাহলে বেশি ভাড়া কেন নিচ্ছেন- উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে প্রজেক্ট এইভাবেই চুক্তিবদ্ধ।’
ভাড়ার চার্টে বিআরটিএ বা রাজউকের কোন স্বাক্ষর নাই। কীভাবে বুঝব আপনারা প্রতারণা করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনার তো অপশন আছে। আপনি রাজউকের কাছে যান।’
এইচআর ট্রান্সপোর্টের ফিল্ড অফিসার মাসুদ করিমও বলেন, ‘আপনি রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
বিআরটিএ বা রাজউকের সই ছাড়া এই চার্ট কেন ভিত্তিহীন ধরা হবে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজউক স্বাক্ষরিত যে চার্ট, সেটা অফিসে আছে।’
তবে রাজউকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ফলে তারা কোনো নতুন চার্ট তৈরি করে দেননি।
এই বিষয়টি জানালে মাসুদ করিম বলেন, ‘তাহলে আমি জানি না। আপনি রাজউকে যোগাযোগ করেন।’
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে রাজউকের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু রাজউক তো অনুমোদন দেয় নাই এখনও।’
রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কি বাড়তি ভাড়া নিতে পারে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজউক অনুমোদন দেবে না দেবে না, সে জন্য তো তেলের দাম বাড়া বসে থাকে না। আমরা স্বাক্ষর দিয়ে দেব।’
তাহলে আপনাদের কথাতেই তারা ভাড়া বাড়িয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে যাব কেন। তারা তাদের হিসেবে বাড়িয়েছে।’
সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার দুই গুণের বেশি ভাড়া নিচ্ছে তারা। আপনাদের হিসাব কীভাবে হয়- এমন প্রশ্নে রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, ‘এখানে কিলোমিটার ধরে ভাড়া নিচ্ছে না তো। এখানে কিলোমিটারের হিসেব চলে না।’
‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন নৈরাজ্য হলে অন্যরা করবেই’
যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন সরকারের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে ভাড়ার নৈরাজ্য হয় তখন নগরীর অন্য বাসগুলো আরও সুযোগ নিতে চায়। আমি মনে করি রাজউকের এখানে দায়বদ্ধতা আছে, বিআরটিএ এর দায়বদ্ধতা আছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের দায়বদ্ধতা আছে।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর পুতিনের ক্ষমতা ধসে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ছয় মাস পর উল্টো ফল দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া জ্বালানি গ্যাস ও তেলের জোগান কমিয়ে দিয়ে ইউরোপকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে এক নিবন্ধে জ্বালানি ও পণ্যবিষয়ক প্রতিবেদক হাভিয়ের ব্লাস লিখেছেন, চলমান লড়াইয়ে পুতিনের জয়কে নিশ্চিত করছে দেশটির বিপুল জ্বালানি সক্ষমতা। নিবন্ধটি ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
যেভাবেই দেখা হোক না কেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জ্বালানি বাজারে জিতে যাচ্ছেন। মস্কো তেলের খনি থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ডলার আয় করছে। এই মুনাফা তারা ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ও নিজ দেশে যুদ্ধের প্রতি সমর্থন অর্জনের পেছনে খরচ করছে।
রাশিয়ান বাণিজ্যের ওপর নভেম্বরে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে জ্বালানি সংকট নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে ভোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়তে পারে।
জ্বালানি তেলের বাড়তি চাহিদার কারণে পুতিন ইউরোপে গ্যাসের সাপ্লাই কমিয়ে দেবেন। এর ফলে অক্টোবর থেকে ঘরে ও অফিসে বিদ্যুতের দাম অনেক বেড়ে যাবে। যুক্তরাজ্যে দাম বাড়বে প্রায় ৭৫ শতাংশ আর জার্মানিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়বে শতভাগেরও বেশি।
জ্বালানিকে রাশিয়া সাফল্যের সঙ্গে অস্ত্রে পরিণত করেছে। পশ্চিমা সরকারগুলো গৃহস্থালি খরচের ভর্তুকি দিতে শত শত কোটি ডলার খরচের চাপে পড়বে। এ সমস্যা নিয়ে ফ্রান্স এরই মধ্যে সমস্যায় পড়েছে।
তীব্র জ্বালানি সংকট
পুতিন যেভাবে জ্বালানি তেলের সুবিধা নিজের দিকে ঘুরিয়েছেন তা রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। গত মাসে দেশটির উৎপাদন যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হচ্ছে, যা ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগে জানুয়ারিতে উৎপাদিত ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল থেকে সামান্য কম। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত তেলের উৎপাদন ওই হারের চেয়েও বেশি।
এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। জুলাইয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো তেলের উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরেছে। চলতি বছর এপ্রিলে ইউরোপীয় দেশগুলো তেল কেনা বন্ধ করে দেয়ার পর উৎপাদন ১ কোটি ব্যারেলে নেমে এসেছিল। মস্কো তখন বাধ্য হয়ে নতুন ক্রেতা খোঁজায় মনোযোগী হয়।
উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া
মার্চ ও এপ্রিলে রাশিয়ার তেলের উৎপাদন দ্রুত কমে যায়। তবে এখন তা ইউক্রেন আক্রমণের আগের অবস্থার কাছাকাছি পর্যায়ে ফিরে এসেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর তাদের কাছে প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি করতে পারছিল না মস্কো। তবে এখন তারা নতুন ক্রেতা খুঁজে পেয়েছে।
রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের (ক্রুড অয়েল) ক্রেতা এখন এশিয়া, বিশেষ করে ভারত। মধ্যপ্রাচ্য ও তুরকিয়েকেও তারা নতুন ক্রেতা হিসেবে পেয়েছে। ইউরোপেও নভেম্বরে আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার আগে কিছু দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনেছে।
যারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, রাশিয়ার তেলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে, তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় সূচকটি হলো, রাশিয়ান তেলের দাম। প্রাথমিকভাবে মস্কো ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে বিভিন্ন দেশের কাছে বিশাল ছাড়ে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করেছে। এরপর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্রেমলিন একটি আঁটসাঁট বাজারের সুবিধা নিয়ে মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে।
নতুন এ ধারার ভালো উদাহরণ হচ্ছে ইএসপিও ক্রুড। এটি বিশেষ এক ধরনের তেল, যা রাশিয়ার দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আসে। এ বছরের শুরুর দিকে এটি এশিয়ার তেলের বেঞ্চমার্ক দুবাই ক্রুডের কাছে ব্যারেল প্রতি ২০ ডলারের বেশি ছাড়ে বিক্রি করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি ইএসপিও ক্রুড অয়েল দুবাইয়ে তেলের সমতায় পরিবর্তন এনেছে।
রাশিয়ার মধ্যবর্তী ও ইউরোপের নিকটবর্তী উরাল অঞ্চলের ক্রুড অয়েল ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত মস্কো। এখন আর উরাল ক্রুড অয়েল থেকে ইএসপিওর মতো লাভ হচ্ছে না। কারণ এর মূল ক্রেতা ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানির মতো দেশ। তবে সম্প্রতি এর দামও আগের মতো হয়ে আসছে।
মস্কো নতুন পণ্যের বাজারও খুঁজছে। এসব বাজার মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় এবং যেখানে রাশিয়া অর্থায়ন করে। এরা রাশিয়ার ক্রুড অয়েল কিনতে ও চাহিদার বাজারে পাঠাতে ইচ্ছুক। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি থাকা ও রাশিয়া বিপুল ছাড় দিতে সক্ষম হওয়ায় ক্রেমলিনে প্রচুর অর্থ আসছে। ফলে আপাতত জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে না।
রাশিয়ান সাফল্যের সবশেষ সূচকটি সরাসরি বাজার সম্পর্কিত নয়, সেটি রাজনৈতিক। মার্চ ও এপ্রিলে পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের আশা ছিল, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে ওপেক রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। অথচ বাস্তবে উল্টোটা ঘটেছে।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রিয়াদ সফরের পরেও পুতিন ওপেক প্লাস জোটে তার প্রভাব বজায় রেখেছেন। বাইডেন সৌদি আরব থেকে চলে যাওয়ার পরপরই ওপেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী মূল ব্যক্তি রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক সৌদি আরবে যান। তার কয়েক দিন পর ওপেক বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের ওপর চাপ বজায় রেখে তেলের উৎপাদন সামান্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়।
জ্বালানি বাজারে জয়ের অর্থ হল পুতিন ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি সীমাবদ্ধ করে বার্লিন, প্যারিস ও লন্ডনের ওপর চাপ সৃষ্টির সক্ষমতা রাখেন। এসব দেশ এবারের শীতে রেশনিং হতে পারে এমন খুচরা জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য ঘাটতির জন্য প্রস্তুত। মস্কো তেল বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করছে। এ জন্য রাশিয়া পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ সীমিত করে দিলেও বিশেষ ক্ষতির মুখে পড়বে না।
শীতল আবহাওয়া, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বছরের শেষ দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সব মিলিয়ে ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের সমর্থন কমিয়ে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। ইউরোপীয় রাজনীতিকরা এতদিন কিয়েভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্তর্জাতিক প্রশংসা পেতে আগ্রহী ছিলেন। এখন তারা ভোটারদের জ্বালানি সংকটে পড়া ঠেকাতে নিজের দেশে পণ্যমূল্য বাগে আনতে চাইবেন।
জনসমক্ষে ইউরোপীয় সরকারগুলো রাশিয়ান শক্তি থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য দৃঢ়সংকল্পে অটুট। তবে গোপনে তাদের স্বীকার করতেই হচ্ছে, এমন অবস্থান অর্থনীতিতে আঘাতের হুমকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ঢাকার বাংলামোটরে এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সজীব খান। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বাসভাড়া দিতেন ৪০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর ২০ টাকা বেড়ে সেই ভাড়া হয়েছে ৬০ টাকা।
অর্থাৎ আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে ব্যয় বৃদ্ধির এই হিসাবই শেষ নয়।
গুলিস্তান থেকে বাংলামোটরে আসা-যাওয়া করেন তিনি। আগে এই পথে ভাড়া নিত ১০ টাকা করে। চার কিলোমিটার পথের ভাড়া এখনও ১০ টাকাই হয়। কিন্তু বাসগুলো আদায় করছে ১৫ টাকা করে ৩০ টাকা।
অর্থাৎ এই পথেও ১০ টাকা মিলিয়ে প্রতিদিন সজীবের বাস ভাড়া বেড়েছে ৫০ টাকা। মাসে ২৬ দিন অফিস করলে বাড়তি ব্যয় করতে হবে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সবজি, মাছসহ অন্যান্য খাদ্যপণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে সজীবকে।
তিনি বলেন, ‘মাসে বেতন ২৫ হাজার টাকা। এই বেতন নিয়ে এমনিতেই সংসারে টানাটানি অবস্থা। তার মধ্যে হঠাৎ করেই যদি বাস ভাড়াই ১ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় বাড়ে, তাহলে জীবন ধারণ করাই কঠিন হবে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। স্কুল, বাজার, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, নৌযান অর্থাৎ জ্বালানি তেলনির্ভর সব যানবাহনে বেড়েছে ভাড়া। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে অন্যান্য নিত্যপণ্যে।
করোনা-পরবর্তী বিশ্বে যখন নিত্যপণ্য ও জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি, এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা পৃথিবীকেই ফেলে দিয়েছে বিরাট অনিশ্চয়তার মধ্যে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা, দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়া, তার সঙ্গে বেড়ে যাওয়া খরচের সঙ্গে যখন নাভিশ্বাস, সে সময় জ্বালানি তেলের দামে দিল লাফ।
ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা আর অকটেন-পেট্রলের দাম ৪৪ ও ৪৬ টাকা করে বাড়ানোর পর দেশে বাস ভাড়া বেড়েছে নগর পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা, দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা।
কিন্তু ভাড়া আসলে যতটা হওয়ার কথা, আদায় চলছে তার চেয়ে বেশি। আবার ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি দর। আবার কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ১ টাকা বাড়লে ছোট নোটের অভাবে আদায় হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
কেউ শখ আহ্লাদের পেছনে ব্যয় কমাচ্ছে, কেউ সন্তানদের পেছনে ব্যয় কমাচ্ছে, কেউ ঘোরাঘুরি বাদ দিচ্ছে, কেউ আড্ডায় কম যাচ্ছে, কেউবা কম খাচ্ছে।
পরিবহন ব্যয়ে লাফ
মিরপুর-১ নম্বর থেকে নিজের মোটরসাইকেলে করে ফার্মগেটে বেসরকারি ব্যাংকে অফিস করেন বিল্লাল হোসেন। বাইকে ৫০০ টাকার তেল নিলে আগে ৬ থেকে ৮ দিন চলাচল করা যেত। এখন সেই পরিমাণ তেল কিনতেই ব্যয় হবে ৬৫০ টাকার বেশি। অর্থাৎ মাসে ব্যয় বাড়বে অন্তত ৬০০ টাকার বেশি।
বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘মাসের এই ব্যয় সমন্বয় করতে হবে অন্য কোনো চাহিদা বাদ দিয়ে। বেতন যেহেতু এক টাকাও বাড়েনি, তাই এই ব্যয় সমন্বয় করতে ইচ্ছার মৃত্যু ঘটাতে হবে।’
নিজের বাইক আছে বলে বিল্লালের খরচ তাও কিছুটা কম বেড়েছে। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ধানমন্ডির সায়েন্সল্যাব মোড়ের অফিসে যাওয়া আলিম উদ্দিনের বেড়েছে আরও বেশি।
মাঝবয়সী এই ব্যক্তি জানান, বাসেই যাতায়াতের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু যেখান থেকে তিনি বাসে চাপেন, সেখান থেকে ওঠাই কঠিন। মাসের অন্তত ২০ দিনই ব্যর্থ হন। এরপর উপায়ান্ত না দেখে বাইকে করে যান।
তিনি বলেন, ‘আগে বাইকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় যাওয়া যেত। কিন্তু এখন আড়াই শ থেকে ৩০০ টাকা চায়।’
আক্ষেপ করে আলিম উদ্দিন বলেন, ‘সর্বসাকল্যে বেতন পাই ৪২ হাজার টাকা। পথেই চলে যায় বড় অঙ্কের অর্থ। এর সঙ্গে দুই বাচ্চার স্কুলের ব্যয়, সংসারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে চোখেমুখে অন্ধকার অবস্থা। বলেন, মাসের ২০ দিন রাইড শেয়ারে যেতে যদি ৫০ টাকা করে বেশি দিতে হয় তাহলে মাস শেষে বাড়তি ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এই টাকার সংস্থান কোথা থেকে আসবে?’
ফার্মগেট থেকে মিরপুর ৬০ ফিট রোডের একটি স্কুলে এসে শিক্ষকতা করেন তৌহিদা আহমেদ। ফার্মগেট থেকে টেম্পোতে এতদিন ভাড়া ছিল ২০ টাকা। সেই ভাড়া ৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৬ টাকা।
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই করোনার কারণে স্কুলের বেতন কমিয়ে দিয়েছে, তার পরও আসা-যাওয়ায় এভাবে ব্যয় বাড়লে চাকরি করে লাভ কী?’
মিরপুর ৬০ ফিট রোডের পাকা মসজিদ থেকে মিরপুর-২ নম্বরের মণিপুর স্কুলের মূল শাখায় ছেলেকে টেম্পোতে নিয়ে এবং ফিরতে এতদিন শায়লা ইসলামের ব্যয় হতো ৪০ টাকা। জনপ্রতি ভাড়া ছিল ১০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া বেড়ে এখন হয়েছে ৬০ টাকা। জনপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে এখন ভাড়া হয়েছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ সামান্য এই পথ যাতায়াতেই দিনে ব্যয় বেড়েছে ২০ টাকা। তাহলে মাসের ২৫ দিন স্কুলে যাওয়া আসায় ব্যয় বাড়ছে ৫০০ টাকা।
ব্যয় সামাল দিতে চাহিদায় কাটছাঁট
রাজধানীর নিকুঞ্জ নিবাসী পার্থ রায় বলেন, ‘মাসে দুই দিন মাংস খাওয়ার রেওয়াজ ছিল পরিবারে। কিন্তু এখন এক দিন খাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।’
তিনি বলেন, ‘নিকুঞ্জ থেকে মৌচাক পর্যন্ত যেতে বাস ভাড়া বেড়েছে। বাসে যাওয়া কঠিন হওয়ায় রাইড শেয়ারে যেতে হয়। সেখানেও বাড়তি ব্যয় করতে হবে।’
সংসারে ব্যয়ের খতিয়ান তুলে ধরে বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি খাবারের ব্যয় কমিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না।
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে বাসা ভাড়া ৫০০ টাকা বেড়েছে। মে মাসে পানির বিল ৫০০ থেকে এক হাজার করেছে বাসার মালিক। সন্তানের স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য দিনে আগে ভাড়া লাগত ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এখন লাগে ৬০-৭০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বাড়তি। অফিসে যাওয়া-আসা করতেও বাস ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। কিন্তু আয় দুই বছর আগে যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। সংসার চালাতে এখন প্রতি মাসেই ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে।’
পরিত্রাণ কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা নেই। সংসারে পাঁচজন মানুষ। এখন খাওয়া কমিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় কী? আগে সপ্তাহে তিন দিন মাছ খেতাম, এখন সেটা এক দিন করতে হবে। ন্যূনতম পোশাক দিয়ে চলতে হবে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।’
‘অনেক ব্যয় কাটছাঁট করে টিকে থাকতে হবে’
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই মানুষ ব্যয়ের চাপে আছে, তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে সামনে এসেছে। আয় না বাড়লেও ব্যয় বৃদ্ধিতে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষ, যাদের আয় নির্দিষ্ট তাদের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। করোনা-পরবর্তী সময়ে এত কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি কেউ হয়নি। এ থেকে উত্তরণ কীভাবে, সেটাও জানা নেই।
‘করোনার সময়ে অনেকের আয় কমে যায়। ধারদেনা করে চলার চেষ্টা করেছে সবাই। অনেকে গ্রামে গিয়ে বিকল্পভাবে চলার চেষ্টা করছে। মানুষ যখন একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়া নতুন করে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। মানুষ তো কোনো না কোনোভাবে বেঁচে থাকবে। পারিপার্শ্বিক অনেক ব্যয় কাটছাঁট করে জীবনযাত্রায় টিকে থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সার্বিক অর্থনীতির ওপর। দাম বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। বাড়তে শুরু করেছে কৃষি, শিল্প ও সেবার খরচ। এতে শঙ্কায় রপ্তানিকারকরা। মহাদুশ্চিন্তায় আছেন ভোক্তা। স্থির আয়ের সঙ্গে বাড়তি অস্বাভাবিক ব্যয়ের হিসাব মেলাতে প্রতিনিয়ত অসহনীয় হয়ে উঠছে জনজীবন।
তেলের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিকে কতটা পর্যুদস্ত করছে, তা খতিয়ে দেখবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। এটি সার্বিক অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে, তার মূল্যায়ন করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই এ মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ মূল্যায়নের মাধ্যমে যে দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত হবে, অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় ফেরাতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষকে কীভাবে আরও স্বস্তি দেয়া যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ থাকবে এই অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে।
উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, এ পর্যালোচনাটি দাম বাড়ার আগে হওয়া উচিত ছিল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রিভার ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রাকিবুল আলম দীপু জানান, মার্কেট সার্ভে না করে একটা পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সারা দেশের সমস্ত কর্মকাণ্ডে কী পরিমাণ প্রভাব পড়বে, সেটি পর্যালোচনা করা হয়নি। সেটি সহনীয় ও পরিকল্পিতভাবে না হওয়ায় এখন তার বোঝা দেশের সব জনগণ, তথা অর্থনীতির ওপর পড়ছে। সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটি বিশদ মূল্যায়ন করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া। না হলে মূল্য দিতে হবে অর্থনীতিকে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মূল্যায়নের উদ্যোগটি ইতিবাচক, তবে সেটি খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট হতে হবে। আবার শুধু প্রভাব বের করলেই হবে না; কীভাবে দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা যায়, তার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনীয় ব্যয়ও করতে হবে। তা না হলে অর্থনীতি দ্রুত রুগ্ন হয়ে পড়বে এবং তার অস্থির আচরণ আরও বাড়তে থাকবে।’
আহসান মনসুর কৃষকদের হাতে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছে দেয়া, নিম্ন আয়ের মানুষদের সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের তালিকায় পণ্য বাড়ানো এবং জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে এমন খাতগুলোতে ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানামুখী সংকটেও এতদিন দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপের কারণে কমে আসছিল ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতিও, কিন্তু গত ৫ আগস্ট মধ্যরাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘটনা পাল্টে দেয় গোটা অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ। এটি নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে সব শ্রেণির ভোক্তা ও ব্যবহারকারীকে। জীবনযাত্রার ব্যয় আগামী দিনে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ সবার।
যদিও দাম বাড়ানোর আগে আগে অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব কতভাবে পড়তে পারে সে বিষয়ে বিশদ কোনো পর্যালোচনা করেনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তারা দেখেছে শুধু নিজেদের লাভ-ক্ষতি। তাদের হিসেবে দেখানো হয়, এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সরকারের ভর্তুকি বাঁচবে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১৪ টাকা। আগে এর দাম ছিল ৮০ টাকা। এতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৬ টাকা লিটারের পেট্রলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩০ টাকা। অন্যদিকে ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৯ টাকার অকটেনের নতুন দাম করা হয় ১৩৫ টাকা।
এ পরিমাণ ভর্তুকি বাঁচাতে গিয়ে অর্থনীতির সব খাতে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের কারণে কত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে, সেটি ভেবে দেখা হয়নি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিদ্যমান বাস্তবতায় চাপে থাকা অর্থনীতির সুরক্ষা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এখন সেদিকেই গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেস স্থাপনের অনুমতি পাচ্ছে না ফ্লাইটের অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি এয়ারলাইনস এয়ার অ্যাস্ট্রা। বিকল্প হিসেবে সিলেট বা চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এ নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতিও শুরু করেছে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় এই মুহূর্তে এই বিমানবন্দরে নতুন করে কোনো এয়ারলাইনসকে জায়গা দেয়ার সুযোগ নেই। টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এদিকে এয়ার অ্যাস্ট্রা বলছে, আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে তাদের প্রথম উড়োজাহাজটি দেশে পৌঁছাতে পারে। এটিআর সেভেনটি টু মডেলের এই উড়োজাহাজটি বেবিচকের এয়ারওর্দিনেস সার্টিফিকেট (এওসি) পাওয়ার পর এটি দিয়েই যাত্রা শুরু করবে এয়ারলাইনসটি।
এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রথম উড়োজাহাজটি যুক্তরাজ্যে পেইন্টিংয়ের কাজ শেষে বুলগেরিয়ায় এসেছে। আমরা সেখান থেকেই উড়োজাহাজটি ডেলিভারি নেব। বুলগেরিয়া থেকে আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বরের প্রথমার্থের কোনো এক সময়ে এটি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এরপর এটি এয়ারওর্দিনেস সার্টিফিকেট (এওসি) পাবে। এরপর থেকেই আমরা অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট শুরু করব।
‘বেবিচক আমাদের বলেছে, এই মুহূর্তে শাহজালালে ওভারনাইট পার্কিংয়ের সুযোগ নেই। আমাদের অন্য কোনো বিমানবন্দরে রাতে পার্কিং করতে বলেছে। আমরা সে অনুযায়ী সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে রাতে পার্কিংয়ের সব ব্যবস্থা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অপারেশন শুরুর পর সকালে সিলেট বা চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট ঢাকায় নিয়ে আসব এবং সারাদিন এখান থেকে অপারেট করে রাতে আবার সিলেট বা চট্টগ্রামে ফ্লাইট নিয়ে গিয়ে সেখানে রাত্রিকালীন পার্কিং করব।’
এয়ার অ্যাস্ট্রার যাত্রা শুরু করলে দেশে ফ্লাইট পরিচালনায় থাকা বেসরকারি এয়ারলাইনসের সংখ্যা হবে তিন। এর ফলে এভিয়েশন খাতে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বেবিচকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এয়ারলাইনস ফ্লাইট শুরুর পর প্রথম এক বছর আবশ্যিকভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক বছর পর আন্তর্জাতিক গন্তব্যে উড়ালের অনুমতি চাইতে পারে এয়ারলাইনস।
গত ২৫ বছরে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইনস, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার।
সর্বশেষ করোনার মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে আরেকটি এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ার। কয়েক দফা চালুর কথা বললেও আর ফ্লাইটে ফেরেনি এয়ারলাইনসটি। বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে জিএমজি, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালাত।
দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়া ফ্লাইটে রয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার।
বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘নতুন দুটি এয়ারলাইনসকে ঢাকার বাইরে থেকে অপারেশন শুরু করতে বলা হয়েছে। ঢাকায় আমাদের স্থান খুব লিমিটেড। এজন্য আমরা বলে দিয়েছি যদি চালু করতে হয় তাহলে ঢাকার বাইরে থেকে আপনারা অপারেশন শুরু করেন। তারা সেভাবেই তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
‘থার্ড টার্মিনাল হওয়ার পর নতুন পার্কিং হবে, তখন তারা ঢাকা থেকে অপারেট করতে পারবে। এখনও প্রক্রিয়া চলছে।’
শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনের আগেই চালু করা যাবে এই টার্মিনাল।
এ হিসাবে এয়ার অ্যাস্ট্রা যদি ঢাকায় বেস স্থাপন করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় তাদের অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ১০ মাস।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য