একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য সাড়ে তিন বছর পর এসে প্রকাশ্যে জোট নেতা ড. কামাল হোসেনকে দায়ী করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামতে বিএনপির বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপের মধ্যে ড. কামালকে উপেক্ষার মধ্যে এমন বক্তব্য এলো।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সরকার ইভিএম-এ নির্বাচন করতে চায় কেন?’ বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মোশাররফ। সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।
আলোচনায় মোশাররফ অন্যান্য নানা বিষয়ের সঙ্গে কথা বলেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি নিয়ে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দল গিয়ে ড. কামাল হোসেনকে ইমাম বানিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে, তিনি বললেন নির্বাচনই করবেন না। এই ফ্রন্টে আমরা এত কষ্ট করে যে রূপরেখা বানালাম, ড. কামাল হোসেনের নির্বাচন না করার কারণে ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা সেদিন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ফলে বিএনপির মতো একটি দলকে এই ফ্যাসিবাদী সরকার পাঁচ বা ছয়টি আসন দিয়ে বিদায় করে দেয়।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তার জোট ২০ দলের পাশাপাশি গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে নিয়ে গঠন করে আলাদা জোট। ব্যক্তি হিসেবে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন।
আরও পড়ুন: ড. কামালকে ডাকছে না বিএনপি
ছোট দল হলেও বিস্ময়করভাবে বিএনপি জোটের প্রধান নেতা হিসেবে সামনে নিয়ে আসে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনকে, যিনি কোনো নির্বাচনের ভোটে কখনও জিততে পারেননি।
সেই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট মোট ছয়টি আসনে জেতে। পরে স্থগিত একটি আসনে জয় পাওয়ার পর আসনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭টি।
নির্বাচনের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ড. কামাল হোসেনের প্রতি নানাভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই চুপ ছিলেন।
মোশাররফ কথা বলেন বিএনপির চলমান সংলাপ নিয়েও। বলেন, ‘সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তাদের মতামত নিয়ে এটা সমৃদ্ধ করতে চাই। সে জন্য এখনও সেই রূপরেখা জনগণের সামনে আসেনি।
‘আজও আমাদের মহাসচিব একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এই আলোচনা শেষে অবশ্যই দেশে একটা মঞ্চ করতে পারব; যুগপৎ আন্দোলন করতে পারব কি না, এর একটা সিদ্ধান্ত হবে।’
আন্দোলনের জন্য জনগণ মুখিয়ে আছে বলেও মনে করেন বিএনপির এই নেতা। বলেন, ‘এখন শুধু রাস্তায় মানুষের ঢল নামা বাকি। আমরা রাস্তায় সংকটের সমাধান করব ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।
‘ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনোভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তদের পতন হবেই হবে।
‘শ্রীলঙ্কায় দুই ভাই ১৮ বছর শাসন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অতএব রাস্তায় নামার বিকল্প নেই। মানুষ দুরবস্থার মধ্যে আছে। তারা একটা পরিবর্তন চায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
হারিকেন ধরিয়ে দেবেন, টাকাই তো নেই
লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভে হারিকেনের ব্যবহার দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দলটির শাসনামলে দেশে বিদ্যুতের করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেছিলেন, বিএনপি নেতাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে হবে। সেই বক্তব্যেরও জবাব দেন মোশাররফ।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেয়ার কথা বলছেন। আরে সেটা করতেও তো ৪-৫ কোটি হারিকেন কিনতে হবে। সেই টাকাও তো তাদের নেই। আজকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ।’
সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে।
‘তারা বিদ্যুৎ খাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা লুট করছে। তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন।
‘দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশ থেকে তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এভাবে দেশকে আমদানিনির্ভর করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। এখন তারা রিজার্ভের হিসাব নিয়েও মিথ্যাচার করছে। আইএমএফের সঙ্গে তাদের হিসাব মিলছে না। সরকার এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না।’
বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘এটা তো বেশি দিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন।’
ইভিএম চলবে না
এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোটে কারচুপি করা যায় বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, আমরাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়নি। তবে সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরা তো চাইই না। সুতরাং এটা তো এখানেই মীমাংসিত হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘যে দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারে না, তারা কীভাবে মেশিনে ভোট দেবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ, এটা মানুষের তৈরি। সেখানে পেপার ট্রেইল নাই। সুতরাং এটা দুরভিসন্ধিমূলক। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন।’
আরও পড়ুন:বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে জনগণের সঙ্গে তামাশা হিসেবে দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফখরুল এ অবস্থান ব্যক্ত করেন।
সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ‘ভূমি অধিগ্রহণবিষয়ক’ মতবিনিময় সভা শেষে শুক্রবার সকালে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই সময় তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে।’
ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের মানুষের যখন প্রতি মুহূর্তে ভোগান্তি হচ্ছে, কষ্ট করছে এবং তারা হিমশিম খাচ্ছে, জীবন দুর্বিষহ হচ্ছে, সেই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন যে, বেহেশতে আছে। আমি দুঃখিত ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলছি।
‘ইদানীংকালে উনার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যে চেহারা, সেই চেহারার মধ্যে যেটা ফুটে উঠেছে যে, স্ফীত হয়েছেন এবং বেশির ভাগ মন্ত্রীদের যেটা হয়েছে যে, সবাই আমাদের দেশি ভাষায় বলি, স্যরি যে একটা হালকা কথা বলব, চিটনাই বেড়ে গেছে। তার কারণটা হচ্ছে, প্রচুর লুটপাট হচ্ছে। সেই লুটপাটের কারণে তারা জনগণের সঙ্গে পরিহাস, তামাশা শুরু করেছে এই সমস্যা নিয়ে।’
জনদুর্ভোগের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেয়ার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় এর আগেও এমন এমন সব উক্তি করেছেন, যে উক্তিগুলো দেশের মানুষের কাছে কিছুটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উনার এ রকম পরিহাস করার কোনো অধিকার নেই।’
আরও পড়ুন:দেশের জনগণ নয় বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এখন বেহেশতে আছেন বলে মনে করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের এক বক্তব্যের সমালোচনায় শনিবার নয়াপল্টনে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ নয়, সরকারের বশংবদরা বেহেশতে আছে। কিন্তু জনগণ আপনাদের দুঃশাসনের নরকে আছে।’
বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছেন বলে শুক্রবার সকালে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে।’
ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের নেতারা এখন কোটিপতি। লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট করে যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, যারা বিদেশে অট্টালিকা তৈরি করেছে সেই টাকা পাচারকারীরা বেহেশতে আছেন। তবে সে বেহেশত সাদ্দাতের বেহেশত। অচিরেই সেই বেহেশত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মোমেন সাহেব আপনি তো বাজারে যান না, রিকশাওয়ালার কথা শোনেন না, গরিব মানুষের কথা শোনেন না। একটা ডিমের দাম এখন সাড়ে ১২ টাকা, এক হালি ডিমের দাম পঞ্চাশ টাকা, এক কেজি ইলিশ কিনতে দুই হাজার টাকা লাগে।
‘সবজি বাজারে এখন আগুন, মানুষ চাল-ডাল-সবজি কিনতে পারছে না। অভাবের তাড়নায় মানুষ সন্তান বিক্রি করছে। জনগণ আপনাদের তৈরি করা আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা এখন হাহাকার করছে, এগুলো গণমাধ্যমে উঠছে, যদিও গণমাধ্যম চাপে আছে। তারপরেও অনেক কিছু গণমাধ্যমে উঠে আসছে।’
রিজভী বলেন, ‘গোটা দেশে এখন দুর্ভিক্ষের ছায়া বিস্তারলাভ করেছে। আপনারা বেহেস্তের কথা বলে অহংকার করেন, জনগণের টাকা হরিলুট করে আপনাদের অনেক টাকা, আপনারা বেহেশতে থাকতে পারেন, মোমেন সাহেব আপনার এই বক্তব্য ক্ষুধার্ত জনগণের সাথে চরম রসিকতা।’
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে রাজপথ দখলের হমকি দেন, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকে তাহলে আপনারা রাজপথ থেকে ভীত শৃগালের মতো পালিয়ে যাবেন।
‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম করে, খুন করে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করে, সম্পদ হরিলুট করে, চুরি করে আপনারা অহংকার দেখাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া মাঠে নামলে আপনারা তুলার মতো উড়ে যাবেন।’
রিজভী বলেন, ‘এত বড় কথা বলেন, আপনার নেত্রীকে এক এগারোতে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কই তখন তো রাজপথে একটি মিছিল করতে পারেননি। ১৫ আগস্টের ঘটনার সময় তো রাস্তায় নামেননি। আপনাদের পতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে জিয়া মঞ্চ আয়োজিত এ সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকো একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক ও নিরহংকার মানুষ ছিলেন। রাজনৈতিক কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে বালুর ট্রাক দিয়ে বন্দি করে রেখেছিলেন
‘মায়ের সে দুর্দিন তার ছোট সন্তান মেনে নিতে পারেননি। সেদিন মানসিকভাবে চাপে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছিল।’
আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ফয়েজ উল্লাহ ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:গরু পাচার মামলায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (সিবিআই) জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে পারলেন না তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট মণ্ডল। অসুস্থতার অজুহাত তুলে ১০ বার সিবিআই নোটিশ এড়ালেও শেষরক্ষা হয়নি। এবার গ্রেপ্তারের পর সিবিআই তাকে ১০ দিনের হেফাজতে নিয়েছে।
শুক্রবার সকালে কলকাতার আলিপুর কমান্ডো হাসপাতালে প্রায় ঘণ্টাখানেক তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। এরপর ৪ সদস্যের বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়ে দেয়, কেষ্ট মণ্ডলের বড় কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলেও ‘টেনশন’ কমাতে ওষুধ দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের ছাড়পত্র মিলতেই দুপুর ১২টা থেকে গরু পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। বীরভূমের প্রভাবশালী এ নেতাকে সিবিআই কর্মকর্তারা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেও স্বীকারোক্তি মেলেনি। কেষ্ট জবাব দিচ্ছেন দায় এড়িয়ে।
কলকাতার নিজাম প্যালেসের ১৪ তলায় সিবিআই গেস্ট রুমে রাখা হয়েছে অনুব্রত মণ্ডল কেষ্টকে। তার শোবার চৌকির পাশে রাখা আছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, শ্বাসকষ্টের পুরনো সমস্যার কারণে। একজন সাহায্যকারী আছেন তার পাশে। তিনি নিয়মিত যেসব ওষুধ সেবন করেন, তা দেয়া হচ্ছে। ১০ দিনের হেফাজতে ডায়েট চার্ট মেনে খাবার দিতে বলেছে আদালত।
সিবিআই তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন গরু পাচারে তৃণমূল নেতার যোগসূত্র ও আর্থিক লেনদেন বিষয়ে। চক্রের সদস্যদের নাম জানতে চাইছেন তারা। কেষ্ট মণ্ডল প্রথম দিনের জেরায় এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যান কৌশলে।
এদিকে কেষ্ট মণ্ডলের দুর্দিনে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নেতার নাম উল্লেখ না করলেও দলের তরফে এক সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘দল কারো পাপের দায় নেবে না।’
তবে কেষ্টর সমর্থকরা শুক্রবার মেদিনীপুরে মিছিল করেছে। সিবিআই তদন্তের প্রতিবাদে শনিবার রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের কর্মসূচি আছে।
এ পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘উইকেট আরও পড়বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবার মন্ত্রিসভার বৈঠক করতে হবে জেলে গিয়ে।’
তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। পরে আসানসোলের বিশেষ আদালতে তুললে বিচারক ১০ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় আন্দোলনকারী দেশে আর নেই, ভবিষ্যতেও হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান।
ঢাকার সাভারে আশুলিয়া প্রেস ক্লাব চত্বরে শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রমিক সংগঠন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘মহানবী (সা.) বলেছিলেন, আগুনের স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ প্রাণী হত্যা করতে পারে না। কিন্তু ওনারা (বিএনপি) মানুষ হত্যা করেছিলেন পেট্রলবোমা দিয়ে। তারপরে আজকে বড় বড় কথা বলেন।
‘রাজনীতি করা, রাজনীতির শিক্ষা আমাদের দেন? আন্দোলনের কথা আমাদের বোঝান? আওয়ামী লীগের চাইতে বড় আন্দোলনকারী আর কেউ নাই, ভবিষ্যতেও হবে না।’
আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাই একসময় বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা মানি না। আপনারাই আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্টকে নষ্ট করেছিলেন। এখন সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আর কোনো সুযোগ নাই।
‘নির্বাচন হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে। নির্বাচন শেখ হাসিনা পরিচালনা করবে না। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। শেখ হাসিনা শুধু ওই তিন মাসের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।’
ইউরোপ, আমেরিকা আর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে দেয়া উন্নয়নের নৌকা এখন শ্রীলঙ্কার পথে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি জ্বালানি খাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর মিরপুরে এক কর্মী সম্মেলনে শুক্রবার বিকেলে তিনি এ কথা বলেন।
মিরপুর ও শাহ্আলী থানা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপ, আমেরিকা আর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে দেয়া উন্নয়নের নৌকা এখন শ্রীলঙ্কার পথে। দেশে লোডশেডিং বাড়ছে, ডলারের দাম বাড়ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। কিন্তু কেন এসব বাড়ছে সে ব্যাপারে জবাব নেই সরকারের। তারা বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফকে গালাগাল দিয়ে এখন ঋণের জন্য তাদের পেছনেই ঘুরছে।
‘আমরা দেশের স্বার্থে কথা বললেই সরকারের কিছু নেতা ষড়যন্ত্র খোঁজেন। দেশ শ্রীলঙ্কার মতো ব্যর্থ হতে চলেছে বলায় আমাদের তারা মূর্খ বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেই তারা গালাগাল দিতে শুরু করেন। তারা বুঝতে চান না, মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়।’
জ্বালানি খাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের মানুষ জানতে চায়, জ্বালানি খাতে প্রতি বছর কত হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। কারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অথচ সরকার দুর্নীতিবাজ ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অপরাধীদের পক্ষ নিচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের সভাপতিত্বে পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বুদ্ধি প্রতিমন্ত্রী আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু।
জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, সার-গ্যাস, গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ওই মন্তব্য করেন দুলু।
শুক্রবার লালমনিরহাট জেলা বিএনপি আয়োজিত ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুলু বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তিনি ল্যাপটপের সামনে চেয়ারে বসে নিজের ছবি দেখেন আর বলেন- খেলা হবে আন্দোলনের মাঠে। খালি বুলি মারে আর নিজের চেহারা দেখে। পুলিশকে ছাড়া লালমনিরহাটের মাটিতে এসে এক সেকেন্ড টিকতে পারলে বাপের বেটা মনে করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা নাকি তাহাজ্জতি। যদি তাহাজ্জতিই হন, তাহলে নামাজ পড়ার সময় কি ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়? এসব ঢং ছাড়া আর কিছুই না। বাংলাদেশের মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠে গেছে।’
তারেক রহমান যেদিন আসবেন সেদিন দেশে ভূমিকম্প শুরু হবে বলে মন্তব্য করেন দুলু।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মমিনুল হক।
সমাবেশ শেষে তাদের একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করতে কার্যালয় থেকে কিছুদূর এগোতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে পণ্ড হয়ে যায়। সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিএনপি মুসলিম লীগের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘মুসলিম লীগের প্রথমে মার্কা বাইসাইকেল ছিল, বাইসাইকেলের পর মুসলিম লীগ মার্কা পরিবর্তন করে যখন হারিকেন ধরল, তখন হারিকেন দিয়েও আর মুসলিম লীগকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘এখন বিএনপি ধানের শীষ বাদ দিয়ে যখন হারিকেন ধরেছে, আমার সন্দেহ হচ্ছে কদিন পরে হারিকেন দিয়েও হয়তো বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মুসলিম লীগের মতো হাওয়া হয়ে যাবে।’
রাজশাহীর মোহনপুরে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তেলের দাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং বাংলাদেশে দাম কম থাকার সুযোগে ট্রাকে ট্রাকে ভারতে তেল পাচার করা হতো। সে কারণে মূল্য সমন্বয় করে তেলের দাম পশ্চিমবাংলার সমান করেছে সরকার।
‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে চীন ও তাইওয়ান মুখোমুখি। বিশ্বের সব জায়গায় অস্থিরভাব। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল। এমনকি সারা বিশ্বে তেলের দাম শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে আমরা কিন্তু তা করিনি। মূল্য সমন্বয় করে তেলের দাম পশ্চিমবঙ্গের সমান করা হয়েছে। আগামীতে যখন বিশ্বে জ্বালানি তেলের মূল্য কমবে তখন আমরাও কমাব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য