প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২ প্রকল্পের আওতায় ভোলার লালমোহন ও চরফ্যাশনে আশ্রয়ণের ঘর দেয়া এবং বিভিন্ন জনকে চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগে মোহাম্মদ আলী সরকার নামে এক প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তার সহযোগী সুরেন্দর নাথ ঢালীকেও আটক করা হয়।
সোমবার রাতে লালমোহন পৌর শহরের ওয়েস্টার্ন পাড়া থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটক ৬৫ বছরের মোহাম্মদ আলী চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়নের আদর্শপাড়া এলাকার মৃত গৌরাঙ্গ সরকারের ছেলে। তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে মাধব চন্দ্র সরকার থেকে মোহাম্মদ আলী সরকার নাম ধারণ করেছিলেন।
আটকের পরপরই চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আবদুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে লালমোহন থানায় মামলা করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোহাম্মদ আলী সরকার প্রচার করে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নামে ভিশন-২ প্রকল্পের আওতায় সাধারণ মানুষের মাঝে ঘর বিতরণ করা হবে। বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের ছবি ছাড়াও এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চাকরি দেয়া হবে বলে একাধিক চুক্তিনামা দেখান তিনি।
সেই প্রকল্পেই চাকরির কথা বলে আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নেন মোহাম্মদ আলী। পরে রাজ্জাককে লালমোহন পৌর শহরের ওয়েস্টার্ন পাড়ার ঠিকানায় একটি অফিসে আসতে বলেন এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে বলেন।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয় রাজ্জাকের। তাই মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে পূর্বের দেয়া ১ লাখ টাকা ফেরত চান তিনি।
লালমোহন থানার ওসি মাকসুদুর রহমান মুরাদ বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ড থেকে মোহাম্মদ আলীকে আটক করা হয়। এ সময় অফিসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবি টাঙানো অবস্থায় পাওয়া যায়, যা সম্পূর্ণ এডিট করা।’
ওসি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর ছবি ছাড়াও তার অফিস থেকে আরও অসংখ্য ছবি, একটি অনলাইন টিভির কার্ড, কয়েকটি স্টাম্প ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়।
আটকের পর চাকরির নামে প্রতারণার শিকার যুবক আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মোহাম্মদ আলী ও তার সঙ্গীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এবার লঞ্চের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি।
মঙ্গলবার লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার থেকেই ঢাকা-বরিশাল রুটে বাড়তি ভাড়া নেয়া হবে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দিন থেকেই ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নিচ্ছেন লঞ্চ মালিকরা।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয়ের জন্য ৩০ ভাগ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রথম ১০০ কিলোমিটারের প্রতি কিলোমিটার ৩ টাকা করে। আর ১০০ কিলোমিটারের পরবর্তী দূরত্বের জন্য ২ টাকা ৬০ পয়সা প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী) সংস্থার সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল ৪২ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর। সে ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ বাড়িয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে করে ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ডেকে ৩৫২ টাকা ভাড়া থাকলেও এখন বাড়িয়ে ৪৫৮ টাকা করা হয়েছে। তবে আমরা ৪৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করব।’
রিন্টু জানান, নিয়ম অনুযায়ী তারা কেবিনের ভাড়া ডেকের ভাড়ার চেয়ে চার গুণ হবে। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে লঞ্চ মালিকরা বসে কেবিনের নতুন ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরই সরকার নির্ধারিত ৩৫২ টাকা ডেকের ভাড়া আদায় করছিল লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে কিছু লঞ্চ পদ্মা সেতু চালুর পর যে ২০০ টাকা করে ডেকের ভাড়া নিত। তেলের দাম বাড়ার পর সেই লঞ্চগুলো ৫০ টাকা বাড়িয়ে ডেকের ভাড়া ২৫০ টাকা আদায় করত।
অন্যদিকে সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের ভাড়া পদ্মা সেতু চালুর পর যা নেয়া হতো তেলের দাম বাড়ার পর তার থেকে ১০০-২০০ টাকা বাড়িয়ে রাখা হতো।
ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের এমভি মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার শাহাদাৎ ইসলাম শুভ বলেন, ‘ডেকের ভাড়া ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে মনে হয় না যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি ভাড়া নিতে পারব। সিঙ্গেল এসি কেবিন ১ হাজার ১০০, নন-এসি কেবিন ১ হাজার, ডাবল এসি কেবিন ২ হাজার ২০০, নন-এসি ২ হাজার ও সোফা ৭০০ টাকা করে নির্ধারণ করেছি আমরা। অর্থাৎ সেতু চালুর পর আমরা যে ভাড়াটা নিতাম, তার থেকে ১০০-২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর বেশি ভাড়া নিলে যাত্রী পাব না।’
এদিকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলোতে এখন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এই লঞ্চগুলোতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়।
বরিশাল থেকে লালমোহন রুটে ২৮০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। পাশাপাশি বরিশাল থেকে ভোলায় ১২০ টাকার ভাড়া ১৫০, বরিশাল থেকে পাতারহাটে ১০০ টাকার ভাড়া ডেক ১২০ ও বিলাস ১৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে বুধবার থেকে সঠিক ভাড়া নির্ধারণ হবে বলে জানিয়েছেন এসব রুটের লঞ্চ মাস্টাররা।
আরও পড়ুন:শোক দিবসে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা তদন্তে এবার কমিটি করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আগে সোমবার রাতে ঘটনাটি তদন্তে কমিটি করে জেলা পুলিশ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, সোমবার বরগুনা জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে অনাকাঙ্খিত হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান এসব নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে সোমবার দুপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় হামলাকারীরা ছাদ থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ কারণে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
এ সময় সেখানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন।
বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, গাড়ি ভাঙচুরকারীকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা মহররম ছিলেন সেখানে। তিনি অনেক ভুল করেছেন।
‘যেখানে আমি উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শোনেননি।’
মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কে এম এহসান উল্লাহ জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সোমবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়।
বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান দুপুরে জানান, এ ঘটনায় আলোচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মহররম আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মঙ্গলবার দুপুরে মানববন্ধনও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
মানববন্ধন শেষে সমাবেশে সাংস্কৃতিক জোটের সমন্বয়ক ইফরাতুল হাসান রাহিম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে চা শ্রমিকরা বড় একটা জোগান দিয়ে থাকেন। তবে তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।
‘১২০ টাকা পর্যন্ত মজুুরি বাড়াতে প্রায় ৫০ বছর লেগেছে তাদের। এই সময়ে ১২০ টাকা মজুরি দেয়া একটা জুলুম। আমরা সরাসরি তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না, কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি এখান থেকে সংহতি জানাতে। সরকার চাইলেই এই সমস্যার সমাধান অচিরেই করতে পারে।’
সমাবেশে চা শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রূপালী পাল বলেন, ‘চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির এই আন্দোলন অনেক আগে থেকেই। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে এ আন্দোলন আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রায় ছয় দিন হয়ে গেছে তাদের আন্দোলন চলছে, কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে এখনও কোনো আশানুরূপ ফল আসেনি।
‘চায়ের শ্রমের মজুরিনির্ভর মানুষগুলো একবেলা খেতে পেলে আরেক বেলা খেতে পায় না। চায়ের সঙ্গে রুটি বা চা দিয়ে ভাত এমন খাবার তাদের শরীরের পুষ্টিমান পূরণ করতে পারে না। চা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থাকলেও তারা ঝরে পড়ছে অচিরেই।’
শোক দিবসের কারণে দুদিন আন্দোলন কর্মসূচি শিথিল ছিল। মঙ্গলবার থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের ১৬৬টি চা বাগানের শ্রমিকরা।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিসহ আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
গত মঙ্গলবার থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে চার দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে নামেন তারা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে বাগানের উৎপাদন।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় শিকার করে নিয়ে যাওয়ার সময় ৩৫টি হীরামন টিয়া উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পাখিগুলো অবমুক্ত করেন ইউএনও শামীম ভুইয়া।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পানকৌড়ি’র সভাপতি বখতিয়ার হামিদ বিপুল।
তিনি বলেন, ‘সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা পানকৌড়ির দুই সদস্য জানতে পারি, পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে শিকারিরা। ওই খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কুলচারার মোড়ে অপেক্ষা করতে থাকি। এ সময় দিগড়ী গ্রামের হযরত, আলা, শাজাহান ও ডোমচারার শরিফুলকে বস্তার মধ্যে করে পাখি ধরে নিয়ে যেতে দেখি।’
বিপুল জানান, বস্তার মধ্যে পাখি নিয়ে যেতে দেখে শিকারিদের পিছু নেন তারা। এ অবস্থায় বস্তাগুলো ফেলে পালিয়ে যায় শিকারিরা। পরে বস্তার ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫টি হীরামন টিয়া এবং পাখি শিকারের সরঞ্জাম।
পরে পাখিগুলোকে অবমুক্ত করতে বস্তা থেকে বের করে খাঁচায় ঢুকিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেয়া হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া জানান, পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
ইউএনও বলেন, ‘দুপুরে পাখিগুলো অবমুক্ত করা হয়েছে। পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় বস্তা ও পাখি শিকারের সরঞ্জাম।’
পাখি শিকারের সঙ্গে জড়িতদের তলব করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, হীরামন টিয়ার বসবাস ভারতে হলেও এই প্রজাতির উল্লেখযোগ্য পাখি আগস্টের শুরুর দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসে। মূলত খাবারের সন্ধানেই এরা বাংলাদেশে আসে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আবার চলে যায়।
আরও পড়ুন:বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সোমবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়।
নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কে এম এহসান উল্লাহ। তবে কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে সোমবার দুপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ।
এ সময় সেখানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনায় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, গাড়ি ভাঙচুরকারীকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা মহররম ছিলেন সেখানে। তিনি অনেক ভুল করেছেন।
‘যেখানে আমি উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শোনেননি।’
এমপি শম্ভুর করা অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কী ঘটেছে ডিআইজি স্যারের নেতৃত্বে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এমপি সাহেব মুরব্বি মানুষ। তার সঙ্গে পুলিশের কেউ অশোভন আচরণ করে থাকলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কল রিসিভ করেননি। পরে সরকারি নম্বরের ওয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
যা ঘটেছিল
বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পদবঞ্চিত কয়েকজন হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় হামলাকারীরা ছাদ থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ কারণে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।
এতে জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুর চালায়।
আরও পড়ুন:নাটোরে কলেজ শিক্ষক খাইরুন নাহারের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী কলেজ ছাত্র মামুনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা হতে পারে। আইনজীবী, চিকিৎসক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন তাদের দাম্পত্য কলহের কথা স্বীকার করেছেন। মামুন দাবি করেছেন যে শনিবার রাত ২টায় দাম্পত্য কলহের জের ধরে তিনি খাইরুনকে লাথি মেরে ঘরের বাইরে চলে যান। এরপর শিক্ষক খাইরুন নাহার বেশ কয়েকবার ফোন করলেও মামুন ফোন রিসিভ করেননি। এতে ক্ষোভে খাইরুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন।
‘মামুন সেদিন রাত ২টা ১৭ মিনিটি থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেছেন এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, রাত ২টা ১৭ মিনিটের দিকে মামুন বাসার বাইরে যাচ্ছেন।
‘আরেকটি ফুটেজ পাওয়া গেছে ওই বাসার দেড় কিলোমিটার দূরের জেলগেট এলাকার। তাতে কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে মামুনকে। এছাড়া সদর থানার সামনে সেলফি তোলা ও নিজের মোবাইলে দাম্পত্য কলহ নিয়ে আপেক্ষ প্রকাশ করে নিজেই ভিডিও করেন মামুন।’
পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। খাইরুনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলতেন মামুন। মামুনের সম্মতিতে খাইরুন তার আগের পক্ষের বড় ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য দুই লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে মামুন আর ওই টাকা দিতে দেননি। এমন নানা বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল।
রোববার সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়ায় নান্নু ম্যানশনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে খায়রুন নাহরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার চাচাত ভাই অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় মামুনকে গ্রেপ্তার দেখায়।
বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার বিকেলে মামুনকে জেলা দায়রা জজ আদালতে তোলা হয়। এ সময় মামুনের জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন। তবে এই আবেদন নাকচ করে মামুনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে যে খাইরুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন। আর যদি আত্মহত্যা হয়ে থাকে তবে মামুনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হবে। এজন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
খাইরুনের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সামিউল ইসলাম শান্ত জানান, খাইরুন নাহারের মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গলায় ফাঁসের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধে মৃত্যুর আলামত পাওয়া গেছে। তবে ভিসেরা রিপোর্ট এলেেএ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
খাইরুনের খালাতো ভাই নাইম হোসেন বলেন, ‘বিয়ের পর খাইরুন নিজের টাকায় মামুনকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। মামুন আবারও নতুন মডেলের মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এসব কারণে দুজনের মাঝে মনোমালিন্য হতে থাকে। খাইরুন আত্মহত্যা করলেও এর জন্য একমাত্র মামুনই দায়ী।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন বলেন, ‘মামুন হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি পুলিশ। এ কারণে ৫৪ ধারায় তাকে আদালতে পাঠিয়েছে।’ তবে মামুনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হতে পারে এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ জানান, খাইরুন নাহারের মৃত্যুর ঘটনায় তার চাচাতো ভাই নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খামার নাচকৈড় গ্রামের সাবের উদ্দিন অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এরপর পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামুনকে আদালতে পাঠায়। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণে এটি আত্মহত্যা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর মূল বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এটি আত্মহত্যা হলে আত্মহত্যায় প্রচারণাকারী হিসেবে মামুন অভিযুক্ত হতে পারেন।
মামুনকে নিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসী যা বলছেন
নাটোরের গুরুদাসপুরের পাটপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের একজন মিঠুন আলী বলেন, ‘মামুন বিয়ে করার আগে নিজ বাড়ি থেকেই কলেজে যেত। এলাকায় তাকে সবাই ভাল ছেলে হিসেবেই জানত।’
মমতাজ বেগম নামে মধ্যবয়সী এক নারী জানান, মামুনকে ভালো ছেলে হিসেবেই তিনি জানেন। দেখা হলে আদব-কায়দার সঙ্গেই কথাবার্তা বলতেন।
বাবলু হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘মামুনের বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। এলাকায় সে বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি করতো। সবসময় ফিটফাট থাকত। ওর সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানি না।’
মামুনের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা তো মামুন ও খাইরুনের বিয়েটা হাসিমুখেই মেনে নিয়েছিলাম। তারপর যে কী থেকে কী হয়ে গেল। আমার ব্যাটাকে ফিরিয়ে এনে দাও।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ গার্মেন্টস কর্মী নুরুজ্জামানকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারছে না। তবে নুরুজ্জামানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্সর স্টেশন অফিসার সঞ্জয়।
সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে সেতুর ঢাকামুখী মাওয়ার ১০/১১ নম্বর পিলার অংশে চলন্ত প্রাইভেট কার থেকে ঝাঁপ দেন ৩৮ বছরের নুরুজ্জামান। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানা এলাকায়। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের উর্মি গার্মেন্টসে কাজ করতেন তিনি।
এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তার খোঁজ পায়নি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
তবে তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে ঠিক কী কারণে ওই ব্যক্তি নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মাওয়া নৌ-পুলিশ। নদীতে ঝাঁপ দেয়ার কারণ বলতে পারছেন না নুরুজ্জামানের স্ত্রী ও ঝাঁপ দেয়ার সময় প্রাইভেট কারে থাকা ওমর ফারুকও।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে নৌ-পুলিশ।
সোমবার রাতে সেতু থেকে ঝাঁপ দেয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ধারণ করা হয় পাশের লেনে থাকা বিপরীতগামী অন্য একটি চলন্ত গাড়ি থেকে। বলা হচ্ছে, চলন্ত প্রাইভেট কার থেকেই লাফ দেন নুরুজ্জামান। তবে গাড়ি চলন্ত অবস্থায়ই তিনি লাফ দিয়েছেন কি না, ওই ভিডিও থেকে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
নুরুজ্জামান যখন নদীতে ঝাঁপ দেন, সে সময় চালক ছাড়া প্রাইভেট কারে ছিলেন পেশায় অটোমিস্ত্রি ওমর ফারুক। তারা নারায়ণগঞ্জে একই এলাকায় থাকেন।
ঘটনার পর তিনি জানান, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে এদিন সকাল ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে রওনা দিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান তারা। তবে তারা সমাধিতে ফুল দিতে পারেননি। সেখান থেকে ফেরার পথেই পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেন নুরুজ্জামান।
ওমর ফারুকের বর্ণনায়, ‘তিন-চার দিন আগে থেকে (নুরুজ্জামান) বলতেছিল- আমারে নিয়া টুঙ্গিপাড়ায় যাইব, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিব, শ্রদ্ধা জানাইব। আমার তো কাজ আছে, আমি যাইতে পারুম না বলি। তখন সে আমাকে বলল, তোমার কাজের মজুরি আমি দিয়া দিব, আমার সঙ্গে চলো। আমি লোকটার কথা ফালাইতে পারিনি। সে জন্য আমি তার সাথে গেছি।
‘কাঁচপুর থেকে তার সাথে আমি গাড়ি ভাড়া করি। সেখান থেকে আমরা সকালে রওনা দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাই। ওইখানে যাওয়ার পর আমাদের কার্ড নাই, তাই আমরা ঢুকতে পারি নাই। তখন প্রধানমন্ত্রীর আসার সময় ছিল। বড় নেতারাও ওইখানে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিল, তারাও আমাদেরকে ওখান থেকে সরে যেতে বলে। তখন আমরা সাইডে আইসা পড়ছি।’
সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে নুরুজ্জামান সে সময় মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে ভিডিও করার সময় বলতেছিল, এই ভিডিওগুলি আমি ফেসবুকে ছাইড়া দিমু। আমি ফুল দিতে পারি নাই, কষ্ট পাইছি। সাড়ে ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করি। আমি সারা মাসের বেতনের টাকা খরচ কইরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল ও শ্রদ্ধা জানাইতে আসছি, আমি বঙ্গবন্ধুরে কতটুকু ভালোবাসি তাই ভিডিওর মধ্যে...’
ওমর ফারুকের ভাষ্য, সেখানে ২ ঘণ্টার মতো অবস্থান করে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাড়ি উদ্দেশে রওনা দেন। ফেরার পথে পদ্মা সেতুতে ঢাকাগামী লেনটিতে কাজ চলছিল। সে কারণে তাদের প্রাইভেট কারটিও ধীরগতিতে ছিল। তখনই কারের পেছনের সিটে বসা নুরুজ্জামান হঠাৎ দরজা খুলে নদীতে ঝাঁপ দেন।
এ ঘটনার কারণ জানেন না স্ত্রী সবুরাও। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার স্বামী পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিছে। খবর শুনে সেখানে গিয়ে আমি তাকে খুঁজতে থাকি। কী কারণে সে নদীতে ঝাঁপ দিছে বলতে পারি না।’
এ বিষয়ে মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অহিদুজ্জামান বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেছিলেন নুরুজ্জামান। কিন্তু ফুল দেয়ার অনুমতি কার্ড না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতুতে ঢাকামুখী লেন দিয়ে ফেরার পথে নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি।
‘এ ঘটনায় নুরুজ্জামানের সঙ্গে গাড়িতে থাকা ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাঁড়িতে নেয়া হয়েছে।’
ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্সর স্টেশন কর্মকর্তা সঞ্জয় বলেন, ‘তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারেনি। তবে নৌ-পুলিশের সহায়তায় সেতুর আশপাশ এলাকায় নুরুজ্জামাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’
মন্তব্য