রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। তার নাম আবুল কালাম।
রোববার সকালে রায়েরবাগ ও মাতুয়াইলের মাঝামাঝি স্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহতের খালাতো ভাই রাশেদুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে কর্মস্থল বংশালে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি লোহার দোকানে বসতেন ৪০ বছর বয়সী কালাম।
পুলিশ জানায়, তাজ পরিবহনের একটি বাস পেছন থেকে কালামের বাইককে আঘাত করে। এই ধাক্কায় পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পুলিশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
দুর্ঘটনার পর চালক বাসটি ফেলে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ সেটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে।
যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তামান্না আক্তার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জরুরি বিভাগ মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতের বড় ভাই আব্দুল সালাম জানান, নারায়ণগঞ্জের পাগলা নয়ামাটি নুরবাগে তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামে।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কালাম ছিলেন বড়। তিনি এক ছেলের জনক ছিলেন।
দেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে সত্য মনে করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ অবস্থান ব্যক্ত করেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।
‘শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ কথাটা (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) কিন্তু আজকে দেশের প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে এসেছে। তার মানে কী? জনগণের সমর্থন নেই। শেখ হাসিনার পায়ের নিচে মাটি নেই—এই কথাটাই তো সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
‘এই অবৈধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক সময় তার অজান্তেই অনেক সত্য কথা বলে বসেন। এই সরকার সম্পর্কে বিএনপি এবং দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের যে ধারণা, সেটাই এই সরকারের মন্ত্রীরা প্রমাণ করছেন। বেহেশতে থেকে তো আর মিথ্যা কথা বলা যায় না। তাই সত্যটাই বলে দিচ্ছেন অবৈধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’
আরও পড়ুন:সুইডেনভিত্তিক এক নিউজপোর্টালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘর’ নামের একটি স্থাপনায় নিয়ে রাখা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সব রাজনৈতিক দলকে এই আয়নাঘর বন্ধে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর চুরমার করে দিতে হবে। পুলিশকে উদ্দেশ করে সব বিরোধী দলকে সমবেত কণ্ঠে বলতে হবে- আপনারা যদি এই আয়নাঘর বন্ধ না করেন তাহলে প্রতিটি পুলিশের বিচার হবে।
‘অথচ আমাদের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি একবারও বলছে না যে ক্ষমতায় গেলে তারা সব আয়নাঘর ভেঙে চুরমার করে দেবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকারদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়াসহ তিন দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে। অন্য দুটি দাবি হলো- সব রাজবন্দিকে মুক্তি দেয়া এবং জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমেরিকা যেমন গুয়ানতানামো বে তৈরি করেছে, তেমনই আওয়ামী সরকার তৈরি করেছে আয়নাঘর। কিন্তু গুয়ানতানামো বে-তে যাদেরকে নেয়া হয়, তাদের তথ্যও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আয়নাঘরের বন্দিদের কোনো হদিস মেলে না। দ্রুত গুমের শিকারদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নিজেও গুমের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যিক ফরহাদ মজহার মুখ খোলেননি। তিনিও গুম হয়েছিলেন। শেখ সাহেবের আমলে আমিও কয়েকদিনের জন্য গুম হয়েছিলাম। সিরাজ শিকদারও গুম হয়েছেন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার করতে হবে। ২০১৪ সালের খেলা আর চলবে না, ১৮ সালের খেলাও চলবে না। এবার ইভিএমের চালাকি চলবে না। একই চালাকি বারে বারে করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ভয় পাবেন না। আপনার প্রতি অন্যায় হবে না। আপনি খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে দেন। দেখেন না মাঠে কী হয়! ছাত্রদের কথা শোনেন। তারা আগামী দিনের ভোর দেখতে পায়।
‘জিঘাংসা, হিংসা-প্রতিহিংসা বাদ দিন। আপনার কোনো লোকের ওপর হাত উঠানো হবে না। আমি নিশ্চিত, আমি আপনার পাশে দাঁড়ালে এরাও দাঁড়াবে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদকে উদ্দেশ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকুক। এই আন্দোলনে জয়ের আশা করছি। আপনারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আপনারাই দেশে শান্তি আনবেন।’
সমাবেশে গুম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকের হাত গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন।
তাদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিলুজ্জামান বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাস থেকে সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে গুমের শিকার হই। প্রথমে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে তুলে আমাকে বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়। রাতভর নির্যাতন করা হতো। তিনদিন পর আমাকে আদালতে তোলা হয়। ওই তিনদিন আমি কোথায় ছিলাম সেটা জানতাম না। সেটা এখনো দুঃস্বপ্নের মতো লাগে।’
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার ওপর চলা পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
গুমের শিকারদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নয়তো ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে আয়নাঘর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’
মিনা আলামিন নামে মোদিবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নেত্রনিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আপনারা যা দেখেছেন তা অনেক কম। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমিসহ কয়েকজন বন্ধুকে গুম করা হয়। সেখানে কী হয় সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি আখতার হোসাইন বলেন, প্রোগ্রামের ঘোষণা করার পরই গতকাল আমার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রানি করেছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি। আমরা আজ রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি সেসব মানুষের কথা বলার জন্য যারা গুমের শিকার হয়ে ভয়ের কারণে জনপরিসর থেকে হারিয়ে যান। আমরাও যদি কোনোদিন গুম হয়ে যাই, আপনারা কথা বলবেন, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল আলম ভূঁইয়া ও ছাত্র ফেডারেশন নেতা আরমানুল হক।
এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা, ড. তানজিম উদ্দিন খান, ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান, সু্প্রিমকোর্টের আইনজীবী কাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সারা হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মতিঝিলে গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তির পেটে ৩০টি অর্ধগলিত ইয়াবা পাওয়া গেছে। আরও ২০টি ইয়াবা ভালো অবস্থায় পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ৬২ বছর বয়সী সিদ্দিক আহমেদের ময়নাতদন্তের সময় এই ইয়াবার সন্ধান পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক সোহেলী মঞ্জুরী তন্নী।
এর আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের এর উপস্থিতিতে মর্গে সিদ্দিকের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক সুব্রত দেবনাথ।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, ‘ভিকটিমের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’
বুধবার রাতে মতিঝিল ডিবি পুলিশ সিদ্দিক আহমেদকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে মেডিসিন ওয়ার্ডে তিনি মারা যান।
গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এরশাদ হোসেন বলেন, ‘রমনা থানার মাদক মামলায় বুধবার সিএমএম কোর্টে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তিনি মারা যান।’
নানা সময় প্যাকেটে ইয়াবা ভরে সেগুলো গিলে পেটে করে তা বহনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বহুজন একাজ করতে গিয়ে পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছেন।
চিকিৎসকরা এই প্রবণতাকে বিপজ্জনক বলে থাকেন এই কারণে যে, পেটের ভেতর যদি কোনো প্যাকেট ফেটে যায়, তাহলে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হতে পারে। এই ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরও পড়ুন:ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিন এবার কবিগুরুর গানেই। বর্ষা চলে গেল, বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে।
জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় বাংলা ঋতুর যে বর্ষাকাল, সেটি শেষ হয়েছে সবে। তবে চারপাশের আবহাওয়া দেখে বোঝা কঠিন এটি নাতিশীতোষ্ণ শরৎকাল। বরং চৈত্র বা বৈশাখের মতোই চোখ রাঙাচ্ছে এই ঋতুর প্রথম মাস ভাদ্রের শুরুর সপ্তাহ সূর্য।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে এমন শুকনো বর্ষা গত ৪২ বছরেও আসেনি। অবাক করা ঘটনা হলো, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন বৃষ্টি দেখেছে এই ধরণি। তবে বর্ষার ঝুম বৃষ্টি দেখেনি এক দিনও।
ফলত কাঠফাটা রোদে মানুষের নাভিশ্বাস। তাপমাত্রা যতটা দেখায়, গরমের বোধ তার চেয়ে ন্যূনতম ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি। কখনও কখনও মরুর সমান গরম এই সবুজ দেশে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বছরের এই সময়টায় যে তাপমাত্রা থাকার কথা, এর চেয়ে অন্তত ৬ থেকে সাড়ে ৬ ডিগ্রি বেশি রয়েছে।
আবহাওয়ার এই চরিত্র এমনিতেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় জর্জর দেশবাসীকে ভোগাবে আরও বেশি। কৃষিবিদদের শঙ্কা এই বৃষ্টিহীনতার প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদনে। সেচ দিয়ে পানির চাহিদা হয়তো পূরণ করা যাবে। তবে তাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে আরও বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে ভোক্তাকে।
দেশে বৃষ্টিপাতের প্রধান মাস জুলাইয়ে এবার বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম। আগস্টের পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি, তবে এই মাসের পূর্বাভাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির কথাই বলা হয়েছে। জুনেও ছিল তাই।
শুকনোর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি খারাপ দশা চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টি হয়েছে কেবল ৩২ দশমিক ২ শতাংশ।
বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ, খুলনা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ আর ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে।
সার্বিকভাবে জুলাই মাসে দেশে ৫২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হলেও এবার হয়েছে ২১১ মিলিমিটার।
তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বৃষ্টি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম হলেও বৃষ্টিপাতের দিন স্বাভাবিকের চেয়ে ছিল বেশি।
ঢাকা বিভাগে জুলাইয়ে ২০ দিন বৃষ্টি হয় সাধারণত। কিন্তু এই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ২৮ দিন। কিন্তু এত কম বৃষ্টি হয়েছে যে মাটিও সেভাবে ভেজেনি। বর্ষার জলাবদ্ধতা এবার চোখেই পড়েনি রাজধানীতে।
গোটা দেশে এই মাসে ২৬ দিন বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়েছে ৩১ দিন। প্রায় প্রতিদিনই ঝিরঝিরে বৃষ্টি মনের ক্ষুধা বাড়িয়েছে কেবল।
মরুর তামপাত্রা ঢাকায়
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা আর এর অনুভব এক নয়।
আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের হিসাবে এদিন ঢাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ অনুভূত হচ্ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সাধারণত কোনো এলাকার আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্ন অবস্থা এবং বৃষ্টি ও বাতাসের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে অনুভূত তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
ঢাকাবাসী আর মরুর দেশ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদবাসীর গরমের অনুভূতি এদিন ছিল সমান। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি আর গরমের অনুভূতি ছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, বছরের এই সময়ে ঢাকার স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার বাইরে থাকার কথা ৩১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামী তিন মাসের পূর্বাভাস কী বলে
অক্টোবর পর্যন্তই বৃষ্টিপাত কম হবে বলে মনে করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ত্রৈমাসিক যে পূর্বাভাস দেয়া আছে তাতে জানানো হয়েছে, আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম বৃষ্টি হতে পারে।
অবশ্য মাসের অর্ধেক সময় এই পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে।
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে স্বাভাবিকের কাছাকাছি বৃষ্টি হবে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ আছে।
‘এটা সারা বিশ্বের চিত্র’
বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বনভূমি উজাড় বৃষ্টি কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া পৃথিবীর অন্য জায়গায় পরিবেশে যে ঘটনা ঘটে তার প্রভাবও বাংলাদেশে পড়ে। ৬৬ বছর পরে ফ্রান্সের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে এবার। এই পরিস্থিতির জন্য ফ্রান্স প্রস্তুত ছিল না। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার বিষয় নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ না, আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এবার বৃষ্টি কম হয়েছে। ৪২ বছরের মধ্যে এ বছরের জুলাই মাসে বৃষ্টি এত কম হয়েছে।’
চলতি মাসে বৃষ্টি কেমন হতে পারে- জানতে চাইলে মল্লিক বলেন, ‘এই মাসেও বৃষ্টি একটু কম হবে।
‘তবে একটা লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলে আগামীকাল থেকে দুই-তিন দিন বৃষ্টি হবে মুষলধারে। এই বৃষ্টিতে গরম কিছুটা কমবে। আবার যেহেতু বাতাসে জলীয় বাষ্প বৃদ্ধি পাবে, সেহেতু উত্তর অঞ্চলে গরমের অস্বস্তি থাকবে।’
কৃষিতে বিপদ
বৃষ্টিপাত কম হওয়ার প্রভাব কৃষি উৎপাদনে পড়বে, এটা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টি কম হওয়াতে বৃষ্টিনির্ভর কৃষিতে সেচ দিয়ে কাভার করা লাগছে। এটা বাড়তি একটা খরচ। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
‘কম বৃষ্টিপাত পরিবেশের ওপরেও প্রভাব ফেলবে। আমাদের দেশে আগে ষড়ঋতু ছিল। এখন ষড়ঋতুর প্রভাব পরিবেশে নাই। শীতের মেয়াদ, প্রকোপ কমে গেছে। সব মিলিয়ে পরিবেশের একটা পরিবর্তন এসেছে।’
বৃষ্টি কম হওয়ায় ফসল উৎপাদন কম হতে পারে কি না জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সময়মতো পানি না দিতে পারলে অবশ্যই উৎপাদন কম হবে। সেচের মাধ্যমে ফসলে পানি দেয়ার সক্ষমতা সবার নাও থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:আদালতে অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সিদ্দিক আহমেদ নামে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
মতিঝিল ডিবি পুলিশ পুলিশের উপপরিদর্শক এসআই মো. এরশাদ হোসেন জানান, সিদ্দিক আহম্মেদের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ হিলা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উলু চামারী গ্রামে।
তিনি জানান, রমনা থানার মাদক মামলায় ৬২ বছর বয়সী সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার তাকে সিএমএম আদালতে নেয়া হলে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ডিবিসির স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম জুয়েল ও ক্যামেরাপারসন আজাদ আহমেদের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ চত্বরে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা জুয়েল ও আজাদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভিক্টর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী কাওসার ভূঁইয়ার ভাই নাজমুল হাসান ভূঁইয়ার মামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা এ মামলাকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানান।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, কাওসার ও তার সহযোগীরা গত ২ আগস্ট সাংবাদিক জুয়েল ও আজাদের ওপর হামলা চালান। এতে তারা গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় কাওসার ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। কারাগারে বসেই তারা দুই সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
সমাবেশে বক্তাদের একজন বলেন, সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর কাওসার ও সহযোগীরা দুই সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা করেছেন। কাওসার বাহিনীর সদস্যরা দুই সাংবাদিকের বাসা ও অফিসের সামনেও মহড়া দিচ্ছেন।
সমাবেশে সাংবাদিক জুয়েল ও আজাদের নামে হওয়া মামলা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা। একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিকের করা মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত দেয়ার দাবিও জানান তারা।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, জুয়েল ও আজাদের নামে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। সাত দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ক্র্যাব, ডিআরইউ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) শিগগিরই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানানো হয়।
ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমালের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, ডিআরইউ সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান, ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম, র্যাক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক নেতা মাহমুদুর রহমান খোকন, গোলাম মুজতবা ধ্রুব, দিপন দেওয়ান, রুদ্র রাসেল, জিয়া খান, নাদিয়া শারমিন, আবু দাউদ খান, সুশান্ত সাহা, আতাউর রহমান, ইসমাইল হোসেন ইমুসহ অনেকে।
সমাবেশ পরিচালনা করেন ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু।
আরও পড়ুন:রাজধানীর পল্লবীতে নির্মাণাধীন ভবনের চতুর্থ তলায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিচে পড়ে সঞ্জয় দাস নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সঞ্জয়ের সহকর্মী অতুল দাস বলেন, ‘পল্লবীতে নির্মাণাধীন ভবনের চতুর্থ তলায় দাঁড়িয়ে কাজের তদারকি করছিলেন সঞ্জয়। এ সময় পাশে থাকা বিদ্যুতের তারে হাত লাগে তার। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি নিচে পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। চিকিৎসক বেলা পৌনে ২টায় তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, সঞ্জয়ের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধীরাই থানা এলাকায়।
ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ এএসআই আব্দুল করিম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
মন্তব্য