রাজধানীতে বিকাশ পরিবহনের চলন্ত বাসে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তার চালক মাহবুবুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হেলপার পলাতক।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোস্তফা রেজা নূর শুনানি শেষে আসামি মাহবুবকে জিজ্ঞাসাবাদে এক দিনের রিমান্ড দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বুধবার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাসচালক মাহবুবুর রহমানকে। পরে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আছিবুজ্জামান আসিফ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আসামির পক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী নুরুল নবী। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড দিয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ২৪ জুলাই রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি থেকে আজিমপুর যেতে বাসে ওঠেন এক ছাত্রী। বিকাশ পরিবহনের বাসটির সিটে বসে ছাত্রী কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলেন। একপর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।
রাত সোয়া ৯টার দিকে ছাত্রী বুঝতে পারেন তার শরীরে কেউ হাত দিয়েছেন। তাকিয়ে দেখেন বাসে কোনো যাত্রী নেই, তার পাশের সিটে বসে আছেন বাসের হেলপার। বিপদ আঁচ করতে পেরে বাসের হেলপারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছাত্রী বাস থেকে নামার চেষ্টা করেন। তখন হেলপার পেছন থেকে তার মুখ চেপে ধরেন। ছাত্রী নিজেকে রক্ষার জন্য চিৎকার করেন এবং চালককে বাস থামাতে বলেন।
চালক বাস না থামিয়ে দ্রুতগতিতে ইডেন কলেজের সামনে দিয়ে আজিমপুরের দিকে যেতে থাকেন। আজিমপুর গার্লস স্কুলের কাছে বাস কিছুটা গতি কমালে ছাত্রী লাফ দেন। আত্মরক্ষার পর ছাত্রী ঘটনা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
চলন্ত বাসে ছাত্রী লাঞ্ছনার এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হলে লালবাগ থানা পুলিশ প্রাথমিক অনুসন্ধানে নামে। পুলিশ ভিকটিমকে খুঁজে বের করার পাশাপাশি বিভিন্ন সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা করে।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ বিকাশ পরিবহনের বাস ও চালককে শনাক্ত করে। বুধবার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চালক মাহবুবকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বহনকারী সরকারি গাড়িতে যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দিয়েছে। তিনি সামান্য ব্যথা পেলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। পুলিশ চালকসহ বাসটি আটক করেছে।
জি এম কাদের শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বনানী কার্যালয় থেকে উত্তরার বাসায় ফেরার পথে খিলক্ষেত এলাকায় লা-মেরিডিয়ান হোটেল সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, জি এম কাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজ বাসভবনে বিশ্রামে আছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়েছেন।
দেশে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার এবং অনলাইনে ও ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে মানসিক হয়রানির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
করোনা-পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রবণতা বাড়তে শুরু করেছে। এর ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর হার ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএএফ) ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২২’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।
তিনি বলেন, ‘১৯৯ জন ভুক্তভোগীর মধ্যে মাত্র ৫৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ করেছেন। এটা মোট ভুক্তভোগীর মাত্র ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২১ এর পরিসংখানের তুলনায় মাত্র ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।
সমস্যা নিয়ে পুরুষ অভিযোগকারীর ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন। সে তুলনায় নারী অভিযোগকারীর সংখ্যা কম, মাত্র ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েও আশানুরূপ ফল পাননি ৫৫ দশমিক ২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী। মাত্র ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন।
২০২১ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিযোগের পর আশানুরূপ ফল পেয়েছেন মোট ভুক্তভোগীর ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, যা ২০২২ সালের পরিসংখ্যানের তুলনায় ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। এবারের প্রতিবেদনে প্রত্যাশিত ফল পাওয়ার পরিমাণ অনেকাংশে কমেছে।
প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের আইনি ব্যবস্থা না নেয়ার কারণের মধ্যে ভিন্নতা দেখা গেছে। বিষয়টিকে গোপন রাখতে আইনি ব্যবস্থা নেননি সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ ভুক্তভোগী। এছাড়া ১৭ শতাংশ ভুক্তভোগী সামাজিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, ১৭ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানি এড়াতে এবং ১৭ শতাংশ অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না ভেবে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
তবে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস করেননি ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী। অন্যদিকে ২ শতাংশ ভুক্তভোগী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে তা মনেই করেননি।
সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় সিসিএ ফাউন্ডেশন আট দফা সুপারিশ করেছে।
সুপারিশগুলো হলো- ১. ব্যাপকভাবে সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ২. জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেয়া, ৩. বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা, ৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, ৫. সাইবার সাক্ষরতা বৃদ্ধি, ৬. সচেতনতামূলক কাজে রাজনৈতিক জনশক্তির সঠিক ব্যবহার, ৭. গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার এবং ৮. অংশীজনদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির প্রেসিডেন্ট মো. ইমদাদুল হক, প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের চরকোদালকাটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছদ্মবেশী মাদক কারবারি চক্রের হোতা অভিযোগে জিয়ারুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করেছে র্যাব। তার ঘর থেকে ৪ কেজি ৪০০ গ্রাম হোরেইন জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক রিয়াজ শাহরিয়ার।
এর আগে ভোরে চরকোদালাকাটি জেলেপাড়া থেকে আটক করা হয় ৩৫ বছর বয়সী জিয়ারুলকে।
র্যাব কর্মকর্তা রিয়াজ বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৫ এর গোয়েন্দা দল ভোরে দুর্গম চর এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করে। তারা জিয়ারুলের বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি হেরোইন মজুতের কথা স্বীকার করেন। তার ঘরে বাক্সে লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় ৪ কেজি ৪০ গ্রাম হেরোইন। অভিযানের সময় তার ঘর থেকে একজন পালিয়ে গেছে।’
তার বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘জিয়ারুল কৃষক বেশে দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাচালান করে আসছিলেন। তিনি নিজেই ভারত থেকে হেরোইন আনেন। মাদকদ্রব্য চোরাচালান করে তিনি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছিলেন।
‘তার বিরুদ্ধে আগের কোন মামলা নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকাতেও তার নাম নেই। জিয়ারুলের পারিবারিক অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, তিনি বিপুল টাকার মালিক নন।’
র্যাব কর্মকর্তা রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, তার পেছনে কে বা কারা আছে তদন্ত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘জিয়ারুলকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তিনি সংঘবদ্ধ মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রের সদস্যরা বর্ডার এলাকায় কৃষি কাজের আড়ালে মাদক কারবার করে আসছেন। তারা সীমান্তের ওপার থেকে কৃষকের ছদ্মবেশে হেরোইন চোরাচালান করেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তারা এ পন্থায় মাদক সরবরাহ করেছেন বলে স্বীকার করেন জিয়ারুল।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেলে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামি রেজাউল করিম রেজা। তিনি নিজেকে জান্নাতুলের স্বামী হিসেবে দাবি করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শনিবার আসামি রেজাউলকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির আদালতে হাজির করেন। আসামি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে চান। তদন্ত কর্মকর্তা ১৬৪ ধারায় তা রেকর্ড করতে আদালতে আবেদন জানান।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম আসামির জবানবন্দি রেকর্ডের পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত এ মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আসামি রেজাউলকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতুলকে হত্যার বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। পুলিশ আসামির রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ জব্দ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকের সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা গোপনে বিয়ে করেন।
পরিবারের অমতে বিয়ে করায় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। রেজাউলের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তা নিয়ে ঝগড়া হয় দুজনের। এরই সূত্রে রেজাউল সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জান্নাতুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ১০ আগস্ট জান্নাতুলকে তার জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে নেয়া হয় পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ নামের আবাসিক হোটেলে। সেখানে থাকা অবস্থায় রেজাউলের সঙ্গে জান্নাতুলের তর্ক ও ধস্তাধস্তি হয়। রেজাউল ব্যাগে থাকা ছুরি বের করে জান্নাতুলের শরীরে একাধিক আঘাত করেন। একপর্যায়ে গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যান।
তালাবদ্ধ রুম থেকে জান্নাতুলের মরদেহ উদ্ধারের পর কলাবাগান থানায় মামলা হয়। জান্নাতুলের পিতা শফিকুল আলম এ মামলা করেন।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ সদর দপ্তর। ডাকাতি ও দস্যুতা প্রতিরোধে পুলিশ সব ইউনিটকে ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ক্রাইম অ্যানালাইসিস শাখা থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা এবং মামলা পর্যালোচনার পর পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ‘কখনো কখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনার আলোকে ডাকাতি বা দস্যুতার মামলা করতে ব্যত্যয় ঘটছে। আবার কখনোবা এ জাতীয় ঘটনা ঘটলেও মামলা হচ্ছে না।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ডাকাতি বা দস্যুতার মতো অপরাধের বিষয়ে সময়োচিত ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে এ জাতীয় অপরাধ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। আর তা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও পুলিশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে।’
পুলিশ সদরের নির্দেশনাগুলো হলো-
১. কোনো ডাকাতি বা দস্যুতার ঘটনা ঘটলে এজাহারকারীর বক্তব্যের আলোকে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করতে হবে। এজাহারকারীর দেয়া তথ্যে কোনো অসামঞ্জস্যতা দেখা গেলে তথ্য যাচাই করে অনতিবিলম্বে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. ডাকাতির মামলায পুলিশ সুপার বা মেট্রো ডিসি মামলা তদারকি করবেন। দস্যুতার মামলা হলে পুলিশ সুপার নিজে অথবা ন্যূনতম একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তা তদারকি করবেন।
৩. সাজা ভোগকারী ডাকাত ও ডাকাতি মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ তালিকা করতে হবে এবং তাদের অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে।
৫. ঘটনার পরপরই সম্ভাব্য স্থানে আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে।
৬. দস্যুতা, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলার কারণে বরখাস্ত হওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে এবং তাদের অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে।
৭. ডাকাতি ও দস্যুতা প্রতিরোধে সময়ে সময়ে একাধিক ইউনিট সমন্বিতভাবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে।
৮. মামলার তদন্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে এবং যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ে শেষ করে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
৯. গণমাধ্যমে ডাকাতি বা দস্যুতার সংবাদ প্রকাশ হলে তা দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্যের গরমিল দেখা গেলে তা যথাযথভাবে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকে ইউনিটের মিডিয়া ফোকাল পারসনের মাধ্যমে জানাতে হবে।
১০. পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ডাকাতি মামলা প্রতিরোধ সংক্রান্ত সাধারণ নির্দেশনাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে গত চার দশকে ৬০ শতাংশ পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম।
সংগঠন দুটির দাবি, চার দশক আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০ পাহাড় থাকলে বর্তমানে আছে ৮০টি। ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৫টি পাহাড় ধ্বংস করেছে সরকারি সংস্থা- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্ধারিত জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়সহ চট্টগ্রামের সব পাহাড় ও নদী রক্ষার দাবি জানান এই দুই সংগঠন নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনের পর পাকিস্তানের ২৪ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়ের সংখ্যা কমেছে। স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি। এরপর ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় ধ্বংস।
‘২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার, মতিঝরনা, ষোলশহর এবং ফয়স লেকে। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয় বলে ওই গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৬ সালে নগরের পাঁচ থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে তা কমে হয় ১৪ দশমিক শূন্য ২ বর্গকিলোমিটার। এ সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয়। এটা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ। নগরের বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হয়। সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ পাহাড় কাটা পড়ে পাঁচলাইশে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপর এক গবেষণায় বলা হয়, গত চার দশকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১২০টির মতো পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। ৪০ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০ পাহাড় ছিল। যার ৬০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে । সিডিএ ১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে। বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস সড়কের আশপাশে পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাহাড়গুলো প্রতিনিয়ত কেটে কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী কর্ণফুলী, হালদা ও সাংগু আজ দখল, দূষণ, ভরাট, চর ও অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ে ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছে।
‘শহরের অতি নিকটে জঙ্গল সলিমপুর ও আলিনগর এলাকা। এখানে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় ছিল ৩ হাজার ১০০ একর। গত ২ যুগে ৪০ থেকে ৫০ জনের চিহ্নিত ভূমিদস্যু বাহিনী চট্টগ্রামের এই জঙ্গল সলিমপুর এবং আলিনগর এলাকার পাহাড় কেটে আলাদা নিজস্ব সাম্রাজ্য তৈরি করেছে। তাদের সহযোগী হিসেবে আছে আরও অন্তত ৩০০ দখলদার বাহিনী। এই ভূমিদস্যুরা ২০০০ সাল থেকে যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, তখন সেই দলের ব্যানার টাঙিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য সুদৃঢ় করেছে। তারা প্রতিনিয়ত সরকারে খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষের কাছে ভাড়া বা দখল বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’
আলিউর রহমান বলেন, ‘জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কাটা ও পাহাড় দখলে জড়িতদের মধ্যে রয়েছে ইয়াছিন গং, আল আমিন গং, মকবুল শেখ গং, আক্কাছ গং, আবছার গং, জামাল গং, গাজী সাদেকুর রহমান গং, মশিউর রহমান গং, গোলাম গফুর গং।’
সংবাদ সম্মেলনে পাহাড় কাটায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ।
শরীয়তপুরে পদ্মা নদীতে ডাকাত দলের সঙ্গে নৌ পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
একপর্যায়ে পাইপগান, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ পাঁচ ডাকাতকে আটক করে পুলিশ।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল হক এসব তথ্য জানান।
জাজিরা উপজেলার দুর্গম চর পালেরচর এলাকায় শুক্রবার ভোরে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানান, শরীয়তপুরের জাজিরার দুর্গম পালেরচর এলাকায় পদ্মা নদীতে স্পিডবোটে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। এমন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় অভিযানে যায় মাঝিরঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্পিডবোট থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা ৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে।
গোলাগুলির একপর্যায়ে ডাকাতরা স্পিডবোট নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার গাঁওদিয়া বাজারে স্পিডবোট রেখে পালানোর সময় আকতার হোসেন, ইকবাল মুন্সী, আবুল বাশার, সাকিল দেওয়ান ও ইয়ামিন নামের পাঁচ ডাকাতকে আটক করা হয়।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ২টি পাইপগান, ৭ রাউন্ড গুলি, ৮টি রামদা ও ১টি স্পিডবোটসহ ডাকাতিতে ব্যবহার করা বেশ কিছু সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মালামাল পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় আগ্নেয়াস্ত্র ও ডাকাতি আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য