নির্বাচন কমিশন (ইসি) খুব বেশি কথা বলছে অভিযোগ তুলে কমিশনকে যে কদিন আছে চুপচাপ বসে চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘এই যে নির্বাচন কমিশন রয়েছে, সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা বলে। যার কাজ সে করবে। নির্বাচন কমিশন এত কথা বলেন কেন? কে নির্বাচনে আসবে, কে নির্বাচনে আসবে না তাতে কিছু আসে যায় না, এই কথা বলার আপনি কে? হু আর ইউ?’
ইসিকে উদ্দেশ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক মীমাংসা হবে রাজনৈতিকভাবে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। সরকার চিন্তা করবে কীভাবে জনগণের সঙ্গে তারা মীমাংসা করবে, কীভাবে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত দেবে। এটার দায়িত্ব ঠুঁটো জগন্নাথ নির্বাচন কমিশনের নয়।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে গেলে এই নির্বাচন কমিশনকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আগামী নির্বাচন এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে বলে কি আহ্লাদে আটখানা হয়ে আছেন? হাসিনা যখন থাকবে না, তখন তো আপনাদের তাড়াতে হবে। খুঁজেই তো পাওয়া যাবে না। যে কয়েক দিন আছেন, চুপচাপ বসে থাকেন, চা-টা খান। গণতন্ত্রের সবক দেয়ার অধিকার সাংবিধানিক পদে থেকে আপনাদের কেউ দেয়নি।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী অজান্তেই চা খাওয়ার কথা বলেছেন
সভায় গয়েশ্বর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার বাড়ি ঘেরাও করতে গেলে চা দিয়ে আমন্ত্রণ করবেন। আপনার বাড়ি যদি কেউ ঘেরাও করতে যায়, যত পানির দরকার হবে সেই চায়ের পানি আছে তো? নাই।
‘তারা আপনার চায়ের দাওয়াতে হয়তো যাবে না; যদি দেশের জনগণ গণভবন ঘেরাও করতে যায়, জিনিসপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়ে আপনাকে বিদায় জানাতে যেতে পারে। আপনি ক্ষমতা ছেড়ে না গেলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। হয়তো আপনি মনের অজান্তে চা খাওয়ার কথাটা বলছেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বললেন, খালেদা জিয়াকে টুস করে পানিতে ফেলে দেয়া এটা একান্তই হিউমার। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ঠাট্টাও জানে। ঠাট্টা খালেদা জিয়ার সাথে করেন। কিন্তু জাতির সামনে যে ঠাট্টা ১৪ বছর যাবৎ করছেন, এটার হিসাব জনগণ একদিন নিতেই পারে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার প্রমুখ।
আরও পড়ুন:সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় না থাকায় পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদাম ও কারখানায় আগুনের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
রাজধানীর দেবীদাস ঘাট লেনে আগুনে পুড়ে যাওয়া কারাখানা পরিদর্শনের সময় বুধবার তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘যেখানে খাবার হোটেল ও পলিথিন কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি একটি ওয়াক্ফ এস্টেট। এখানে স্থাপনার বৈধতা নেই, বাণিজ্য অনুমতি নেই। তার পরও সেখানে রেস্তোরাঁ ও কারখানা হয়েছে অবৈধভাবে।
‘বাণিজ্য অনুমতি না থেকেও সেখানে গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ গেল কীভাবে? আইনের ব্যত্যয় হলে এ রকম দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।’
সোমবার দেবীদাস ঘাট লেনের চারতলা একটি ভবনে আগুন ধরে ছয় হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেয়র।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালের পর থেকে এখানে ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি না। তার পরও কারখানা হচ্ছে, ব্যবসা চলছে। আমরা ১ হাজার ৯২৪টি রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা চিহ্নিত করেছি। এসব স্থানান্তর করতে বলেছি। যার কাজ চলমান।’
মেয়র তাপস আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনঃখনন কার্যক্রম ও নিউ মার্কেটসংলগ্ন বনলতা কাঁচাবাজার পরিদর্শন করেন।
এ সময় মেয়রের সঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দুর্নীতিসংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম জুয়েল ও ক্যামেরা পারসন আজাদ আহমেদ। এবার সেই হামলাকারীরাই উল্টো ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভুইয়ার ভাই নাজমুল হাসান ভূইয়া।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় স্টাফ রিপোর্টার জুয়েল, ক্যামেরা পারসন আজাদ ছাড়াও অজ্ঞাত উল্লেখ করে ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ভিক্টর ট্রেডিংয়ের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন সাংবাদিক জুয়েল ও তার সঙ্গীরা। তারা বাদী নাজমুলসহ অন্যদের মারধরও করেন। একপর্যায়ে তারা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী আ. মালেকের ড্রয়ার থেকে টাকা নিয়ে যান।
মামলায় উল্লেখ করা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বলেন, ‘২ আগস্ট দুপুরে ভিক্টর ট্রেডিংয়ের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাদের আটকে রেখে মারধর করে। আমাদের ডিভাইসও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তারা আমাদের ধারণ করা সব ফুটেজ মুছে দেয়।
‘আমরা ওখান থেকে বের হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছি। ওই মামলায় থানা পুলিশ কাওছার ভূইয়া ও তার সহযোগী সাত হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার ১৫ দিন পর ঠিকাদার কাওছারের ভাই নাজমুল আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। আমাদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই মামলাটি করা হয়েছে।’
জুয়েল আরও বলেন, ‘আমি মামলা করার পর সমঝোতার চেষ্টা করে আসামিরা। আমরা বলেছি, আইন আইনের গতিতে চলবে। আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পেরে হয়রানির উদ্দেশ্যে ঘটনার ১৫ দিন পর তারা আদালতে মামলা করেছে।’
আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকুসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্র্যাব। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্রাইম রিপোর্টারদের এই সংগঠন। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলে বিএনপি সন্ত্রাস ও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বিএনপি ও তার মিত্রদের মোকাবেলায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।
সমাবেশে বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগুন-সন্ত্রাস ও বোমাবাজি করে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। খেলা হবে- আন্দোলনে, রাজপথে। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হোন।’
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে রাজপথ থেকে, বন্দুকের নল থেকে নয়। দ্রুতই আওয়ামী লীগ রাজপথে নামবে। নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রস্তুত হোন। আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনার দেশ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০০৬ সালের সঙ্গে ২০২২ সালের তুলনা করেন। কিসের সাথে কী মেলাচ্ছেন?’
মির্জা ফখরুল দুইদিন ধরে মিথ্যা বলছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘গুম-খুন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে বিএনপি যে নালিশ করেছে তার তদন্ত করার এখতিয়ার জাতিসংঘের নেই।
‘বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি৷ তাদের কাজই হলো বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করা। তারা সন্ধ্যার পর দূতাবাসগুলোতে ধরনা দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু বিএনপি দেশের উন্নয়ন চায় না। সারাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায় বলেই তারা উন্নয়নের বিরোধিতা করছে, আগুন-সন্ত্রাস ও নাশকতা করেছে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আসতে হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। তাই ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আজ লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজপথে নেমে এসেছে। যেকোনো মূল্যে উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। আর যারা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের সমূলে উৎপাটন করা হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সেটি মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন সময়ে তৈরি করেছেন নানা ধরনের মাস্টার চাবি। সেই চাবি দিয়ে পুরান ঢাকাকে টার্গেট করে কয়েক বছরে চুরি করেছেন পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল। চোরাই মোটরসাইকেল কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকার পাশের বিভিন্ন এলাকায় কম দামে বিক্রি করতেন চোর চক্র।
সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
রাজধানীর শনির আখড়া ও ধলপুর এলাকায় মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা হলেন- চক্রের হোতা নূর মোহাম্মদ, অন্যতম সহযোগী রবিন, সজল, মনির ও আকাশ।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রথমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, মোটরসাইকেল চুরির জন্য তাদের টার্গেটেড এরিয়া ছিল পুরান ঢাকা। ওই এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করতেন তারা। গত কয়েক বছরে এই চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।
দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় মোটরসাইকেল চুরি
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানায়, নূর মোহাম্মদ মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতেন। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চা দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। দুইজন মিলে পরিকল্পনা করেন, কীভাবে দ্রুত সময়ে টাকাওয়ালা হওয়া যায়। নূর মোহাম্দ রবিনকে জানান, তার কাছে করাত ধার দেয়ার রেত আছে, যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেত দিয়ে ঘঁষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলক চুরি করেন। এর পর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন বলে জানায় ডিবি।
ডিবির প্রধান হারুন বলেন, ‘চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য করে নেন। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে বাইক চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট হিসেবে ব্যবহার করে।
‘অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করেন। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেলগুলোকে ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করতেন।’
প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যরা ভাগ করে নিতেন।
আসামিদের বরাতে ডিবি আরও জানায়, তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন। এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন।
গোয়েন্দা প্রধান জানান, বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার আসামি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমীতে সরকারি ছুটির আগের দিন রাজধানীতে চলাচলে দুঃসহ অবস্থা। দুপুরের পর থেকে প্রধান সড়কগুলোতে ঠায় দাঁড়িয়ে যানবাহন। কোনো রুটে আবার গাড়ির অভাবে দীর্ঘ অপেক্ষা যাত্রীদের। এর কারণ, সেই রুট দিয়ে আসতে পারছে না আটকে থাকা গাড়ি।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির আগে এক দিন বাড়তি ছুটির কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়নি। এটি তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচিকে ঘিরে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে একযোগে বোমা হামলার স্মরণে আওয়ামী লীগের প্রতি বছরের কর্মসূচির সঙ্গে এবারের কর্মসূচির পার্থক্য আছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্ষমতাসীন দল আরও বেশি কর্মী-সমর্থকদের জড়ো করতে চাইছে। কেবল ঢাকা নয়, দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা শহর, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়নেও একই ধরনের জমায়েতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে লোকসমাগম।
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়েছেন রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে। বিকেল ৪টায় জমায়েত হওয়ার কথা থাকলেও আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। ফলে কার্যত দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সড়ক অচল হয়ে যায় মিছিলে মিছিলে। আর এর প্রভাবে তৈরি হয় দুঃসহ যানজট।
আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি মূলত ছয় দিন আগে বিএনপির বড় একটি জমায়েতের জবাব। সেদিনও ছিল কর্মদিবস। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির আগে সেদিন নয়াপল্টনের সড়কে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন মিছিল করে। সেদিনও নয়াপল্টন, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত রয়ে যায় এর রেশ।
জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগেই নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। রাজপথে বাড়ছে কর্মসূচি। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্মসূচিগুলো পালিত হচ্ছে কর্মদিবসে সড়ক বন্ধ রেখে।
বড় ধরনের কর্মসূচিগুলো ছুটির দিনে করা যায় কি না, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার দাবি করছেন নগরবাসী।
ক্ষমতাসীন দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তাদের আপত্তি নেই। তবে এ জন্য সব দলের ঐকমত্য জরুরি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন আহমেদ প্রিন্স মনে করেন, সরকার জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে না। এখন এসব নিয়মনীতি অলীক কল্পনা।
রাজপথে কর্মসূচি বাড়ছে
গত ৪ আগস্ট নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল নেতা নুরে আলমের জানাজা পড়ে বিএনপি। পরে সেখানে হয় সমাবেশ।
দুই দিন পর একই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। এই কর্মসূচি পালনেরও কারণও ভোলায় সংঘর্ষে দলের দুই কর্মীর মৃত্যু।
ভোলার সেই ঘটনায় ৮ আগস্ট একই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল।
এর তিন দিন পর ১১ আগস্ট সেই সড়কে দুপুরের পর থেকে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সমাবেশ করে বিএনপি।
একই দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় নতুন রাজনৈতিক জোট গণতান্ত্রিক মঞ্চ।
এর পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনের সমাবেশ হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। সেদিনও যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে কয়েক ঘণ্টা।
১৬ আগস্ট জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে মিছিল করে গণতান্ত্রিক বাম জোট। সেটি শাহবাগে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এই কর্মসূচি ঘিরেও কয়েক ঘণ্টা ব্যস্ত এ সড়ক স্থবির হয়ে থাকে।
পরদিন নগরবাসীর দুর্ভোগ হয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কারণে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বলতে গেলে স্থবির হয়ে থাকে নগরীর একটি বড় অংশ।
আগামী ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস
বুধবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচির দিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরীফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে সারা ঢাকা সিটির লোককে হাঁটতে হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের কারণে বেলা ৩টার দিকে যে অবস্থা এই ভোগান্তি রাত পর্যন্ত থাকবে। প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর আরও ভয়াবহ হয়েছে।
‘আমি শাহবাগ যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলাম। তবে জ্যাম দেখে বাস থেকে নেমে হেঁটে যাই। অনেকেই বাচ্চা নিয়ে গরমে ঘামতে ঘামতে যাচ্ছে। ঘামে ভিজতেছে, কষ্ট করছে।’
তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা তাসিন মল্লিক বলেন, ‘ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। একটার পর একটা মিছিল যাচ্ছে। সব বাস থমকে দাঁড়িয়ে। মানুষ সব হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব প্রোগ্রাম এমন দিনে হওয়া উচিত, যেদিন ছুটি থাকে অথবা এমন জায়গায় হোক যে জায়গাগুলো উন্মুক্ত।’
রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব আছে বলেও মনে করেন তাসিন। বলেন, ‘নেতাদের মধ্যে এই বোধ আছে কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভাবান্তর নেই
তীব্র যানজটের মধ্যে কর্মদিবসে রাজপথে কর্মসূচিতে জনভোগান্তির বিষয়টি নজরে আনলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে জনদুর্ভোগ এড়াতে হলে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য প্রয়োজন।’
ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের দায়দায়িত্ব তো বেশি- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কাজ করছে। জনদুর্ভোগের কর্মসূচি আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। তবে দিবসভিত্তিক কর্মসূচিগুলো রুটিন ওয়ার্ক।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সভা, সমাবেশ, মিছিল এগুলো সাংবিধানিক অধিকার।’
তবে তার মতে, তাদের কর্মসূচিতে জনগণ খুশি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক রাস্তার ওপরে হওয়ায় কিছুটা ট্র্যাফিক সমস্যা হয়েছে। তবে এতদিন পর বিরোধী দলের বড় সমাবেশের উপস্থিতি দেখে জনগণের ভোগান্তি নয়, তারা খুশি হয়েছে।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না দেয়াকেও সড়কে কর্মসূচি পালনের একটি কারণ হিসেবে দেখান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘নানা রকম স্থাপনা বানিয়ে সেটা অনুপযোগী করে ফেলা হচ্ছে।’
তাহলে সমাধান কী- জানতে চাইলে যেদিন বিএনপির কর্মসূচি থাকে, সেদিন সেসব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প রাস্তায় দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন ফখরুল।
সেই সঙ্গে সরকারকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সমাবেশের উপযোগী করে তোলার কথা বলেছেন।
জনগণের ‘অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে’ নতুন যে জোট গঠন হয়েছে, সেই গণতন্ত্র মঞ্চের সবচেয়ে প্রবীণ নেতা আ স ম আবদুর রবের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তার জবাব আসেনি।
সড়ক আটকে কর্মসূচি পালন করায় জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে প্রশ্ন শুনে তিনি তার রাজনৈতিক সচিব শহীদুল্লাহ ফরায়েজীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
তবে ফরায়েজী প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘এটা তো খুব কঠিন প্রশ্ন। আপনি আপনার ই-মেইল আইডি দেন। আমি উত্তর পাঠিয়ে দেব।’
তবে ই-মেইল করা হলেও প্রশ্নের জবাব আসেনি। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাতে সাড়া দেননি।
একই প্রশ্নে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দায় দেন সরকারকে। তিনি বলেন, ‘সরকার যখন নায্য আচরণ করে, তখন দায়িত্বশীল সংগঠনগুলো এগুলো মেনে চলে। তবে সরকার যখন নায্য আচরণ করতে পারে না, তখন এসব নিয়মনীতি মানার প্রশ্ন ওঠে না।’
তিনি বরং রাজপথে কর্মসূচি আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘জনগণকে আমি আহ্বান জানাব, তারা যে দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে অর্থাৎ মানুষের যে সংকট, তা সমাধানে প্রতিবাদী হয়ে উঠুক। যে যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। একের পর এক মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যেতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এতে অফিসফেরত মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে সমাবেশ ও মিছিল করে আওয়ামী লীগ।
সমাবেশের মঞ্চ করা হয় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়কের পাশে। সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
এ ছাড়া সমাবেশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।
বিক্ষোভের আগে সমাবেশে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর হাতে ছিল কালো পতাকা। এ সময় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়কে দলের নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে বেলা ৩টার দিকেই শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাবের সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই পথে সাধারণ মানুষকে হেঁটে চলাচল করতে হয়েছে।
সমাবেশের কারণে কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবনের সড়কও বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে গুলিস্তান থেকে ধানমন্ডিগামী যানগুলোকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে ঘুরে যেতে হয়েছে।
শাহবাগ থেকে গুলিস্তান যেতে বাসে উঠেছিলেন যাত্রী আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু যানজটে বসে থেকে একসময় হেঁটেই রওনা হন তিনি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাধ্য হয়ে এত রাস্তা হেঁটে যেতে শুরু করেছি। আসলে এসব বিষয় নিয়ে এখন আর কিছুই বলার নেই আমাদের।’
তিনি জানান, গুলিস্তান থেকে দোহার যাবেন তিনি, জরুরি কাজ থাকায় হাঁটতেই হচ্ছে।
সমাবেশ চলাকালে কাকরাইল মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক আবদুর রশিদের সঙ্গে। তিনি মালিবাগ থেকে যাত্রী নিয়ে যাবেন চকবাজার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মালিবাগ থেকে কাকরাইল মোড়ে আসতে যানজটের কারণে ১ ঘণ্টা লেগেছে। এত সময়ে চকবাজার চলে যেতে পারতাম। কিন্তু এখনও কাকরাইলে পড়ে আছি।’
মালিবাগ থেকে রিকশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি যাবেন সরকার মাসুদ। তিনিও জানান, তীব্র যানজটে পড়তে হয়েছে তাকে। যার কারণে তার ১ ঘণ্টা লেগেছে। যানজটে অনেক ভোগান্তি হয়েছে।
মালিবাগ, মগবাজার ও বাড্ডা এলাকায় গাড়ি না থাকায় সড়কের পাশে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। যে কয়েকটি গাড়ি চলেছে, সেগুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের মিছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় পল্টন এলাকায় ভোগান্তিতে পড়েন অফিসফেরত সাধারণ মানুষ। অনেককে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:কামাল হোসেন কমলের বাড়ি পটুয়াখালীতে। ১৫ বছর আগে ঢাকায় এসে তিনি রিকশা চালানো শুরু করেন। ভাড়ায় চালানো সেই রিকশাটি একদিন চুরি হয়ে যায়। ধারদেনা করে মালিককে সেই রিকশার দাম পরিশোধ করেন কমল।
জীবন-যুদ্ধ শুরুর দিকের এই ঘটনা পুরোপুরি পাল্টে দেয় এই যুবককে। নিয়ে যায় অন্ধকার জগতে। চুরি হয়ে যাওয়া রিকশার খোঁজ করতে গিয়ে তিনি সন্ধান পান চোর চক্রের। একপর্যায়ে নিজেও জড়িয়ে পড়েন এই চক্রে। নিজেই গড়ে তোলেন রিকশা চোর চক্র।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরির পর সবুজবাগ-মুগদা এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজে সেগুলো রাখতেন কমল। পরে রং পরিবর্তন করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করতেন। চক্রটি ৭ বছরে পাঁচ শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছে। সর্বস্বান্ত করেছে গরিব রিকশাচালক ও মালিকদের।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার ভোরে কমলসহ এই চোর চক্রের চার সদস্য ধরা পড়েছেন র্যাবের হাতে। অন্য তিনজন হলেন- সাজু, ফজলু ও শাহিন সরদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৩টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ১৮টি রিকশার চার্জার ব্যাটারি, চারটি মোবাইল ফোন, চারটি মাস্টার চাবি ও নগদ ১৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, কমল এই চক্রের হোতা। তিনি ১২ বছর ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। প্রথমে তিনি একাই রিকশা চুরি করতেন। যাত্রী হিসেবে রিকশায় উঠে পথে চালককে নেশাযুক্ত কোমল পানীয় খাইয়ে অজ্ঞান করে তিনি রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতেন। আবার কখনও রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভেজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করতেন।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, একা একা রিকশা চুরিতে হাত পাকিয়ে কমল ধীরে ধীরে একটি চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটি অভিনব কায়দায় রিকশা চুরি করত। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াত। সাজু ওই রিকশা চালিয়ে যেতেন। পথে নতুন কোনো রিকশা দেখলে সেটিকে টার্গেট করা হতো।
কমল টার্গেট করা রিকশার চালককে বলতেন- সামনের রাস্তায় একটি বাসা থেকে আমার কিছু মাল তুলব। ওই মালগুলো কাছাকাছি আরেকটি বাসায় পৌঁছে দিলে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দেয়া হবে। এরপর ওই রিকশার চালকের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন। বেশি ভাড়ার রিকশাচালকও প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতেন। পরে সুবিধামতো একটি বাসার সামনে রিকশা থামিয়ে কমল চালককে বলতেন, বাসার ভেতরে ঢুকে মালামাল নিয়ে আসতে হবে। চালক সে অনুযায়ী বাসায় প্রবেশ করা মাত্র চক্রের অপর সদস্য ফজলু রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতেন। এই পর্যায়ে রিকশা হারিয়ে চালক কান্না শুরু করলে রিকশা খোঁজার নাম করে কমলও সটকে পড়তেন।
চক্রটি এভাবে চুরি করা রিকশাগুলো রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা এলাকায় শাহীন, আকবর, মনির ও বাবলুর গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত। তারপর রিকশার মালিককে ফোন করে ‘মুক্তিপণ’ দাবি করত। তারা সেই টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করত। এরপর একটি অজ্ঞাত স্থানে রিকশা রেখে মালিককে ফোন করে রিকশা নিয়ে যেতে বলত।
কৌশল পরিবর্তন
র্যাব জানায়, সহযোগীসহ কমল একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর চুরির এই কৌশল ফাঁস হয়ে যায়। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে চক্রটি চুরির কৌশল পাল্টে ফেলে। এই পর্যায়ে কমল ও তার সহযোগীরা যাত্রী হিসেবে রিকশায় উঠে নির্জন স্থানে নিয়ে চালককে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেতেন। পরে রং পরিবর্তন করে খোলাবাজারে সেটি নতুন হিসেবে বিক্রি করে দিতেন। কখনও রিকশার মোটর পার্টস খুলে আলাদাভাবে বিক্রি করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিকশা চুরি চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী কমল। চক্রটি রিকশা চুরির জন্য মূলত বাসাবো বাসস্ট্যান্ড ও মান্ডা এলাকাকে বেছে নিত। আর চুরির পর রিকশাটি চালিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতেন তার সহযোগী সাজু। আরেক সহযোগী ফজলুর সহায়তায় রং ও সিট কভার পরিবর্তন করে রিকশাগুলো ৫ হাজার থেকে ১২ টাকা দামে বিক্রি করা হতো।
র্যাব জানিয়েছে, কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৭টি চুরির মামলা এবং ফজলুর নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। শাহিন মান্ডা খালপাড় এলাকায় ৩০ বছর ধরে রিকশার একটি গ্যারেজ পরিচালনা করে আসছেন। ৭ বছর আগে এই চোর চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি চোর চক্রকে তার গ্যারেজ ব্যবহার করে চোরাই রিকশা রাখা ও বিক্রিতে সহায়তা করতেন। আর রিকশা বিক্রির টাকা থেকে তিনি ১০ শতাংশ কমিশন পেতেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য