মামি-ভাগনের মধ্যে গড়ে ওঠে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক। টানাপোড়েন তৈরি হয় মামির সংসারে। পরিবারের সদস্যরা জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন ভাগনেকে। কিন্তু এখানে থেমে যায়নি সব। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের পালকে যোগ হয় নতুন রং। সেই রং ভাগনের সংসারেও নিয়ে আসে বিষাদের ছায়া।
এই পর্যায়ে নতুন দিকে মোড় নেয় এই গল্প। নিজেকে অপরাধী ভেবে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন ভাগনে। মামির রক্তে নিজের হাত রাঙিয়ে ভাগনে নিজেকে তুলে দেন পুলিশের হাতে। কাঠগড়ায় নির্দ্বিধায় নিজেকে স্বীকার করে নেন খুনি হিসেবে। বর্ণনায় দেন হত্যার আদ্যোপান্ত।
ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার। গলা কেটে হত্যা মামলায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শহরের হারুয়া গুরুদয়াল সরকারি কলেজ রোড এলাকায় নিজ বাসায় শনিবার বেলা পৌনে ২টার দিকে খুন হন গৃহবধূ রোকসানা। এ ঘটনায় রাতে তার স্বামী মো. তাইজুল অভিযুক্ত ভাগনে মামুন মিয়াকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।
রোকসানা-তাইজুল দম্পতির ঘরে তিন ছেলেমেয়ে আছে। আসামি মামুন পৌর শহরের শোলাকিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তার ঘরেও আছে সন্তান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি বাস করতেন হারুয়া এলাকায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, ২০০৫ সালে শহরের হারুয়া এলাকার তাইজুলের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকসানার। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই রোকসানার সঙ্গে তাইজুলের ভাগনে মামুনের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এর পর থেকেই তাইজুল-রোকসানার পরিবারে কলহের শুরু হয়। মামুন ও রোকসানার সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে মামুনের পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। মামুনের ঘরে জন্ম নেয় এক সন্তান।
এরপরও মামুন ও রোকসানার সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। বিষয়টি জেনে মামুনের স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান। অন্যদিকে মামুন ও রোকসানার সম্পর্কেরও অবনতি হয়। এ সম্পর্ক থেকে মামুন সরে যেতে চাইলেও রোকসানা তা চাননি। তাই মামুন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাশেদুল আমিনের আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামুন। হত্যার কথা স্বীকার করে মামুন বলেন, ‘এ অবৈধ সম্পর্ক আমি শেষ করতে চেয়েছি কিন্তু মামির (রোকসানা) জন্য পারিনি। আমি অনেক পাপ করেছি, তাই মামিকে হত্যা করে সেই পাপ শেষ করে ফেললাম।’
তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘জবানবন্দি শেষে ওইদিন বিকেলেই মামুনকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামুনের জবানবন্দির কারণেই দ্রুত অভিযোগপত্র দেয়া সম্ভব হয়েছে।’
এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে মামুন ও তাইজুলের পরিবারের মধ্যে কলহ চলে আসছিল। গত শনিবার দুপুরে রোকসানা রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় মামুন তাদের ঘরে ঢুকে রোকসানার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রোকসানাকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন মামুন।
স্থানীয় ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামুন রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। রোকসানার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি সবাই জানত। এ নিয়ে তাইজুল-রোকসানার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শনিবার দুপুরে নামাজের পর শুনি মামুন রোকসানাকে হত্যা করেছেন। হত্যার পর তিনি মরদেহের পাশেই বসেছিলেন। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে।
রোকসানার স্বামী তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘মামুনের সঙ্গে রোকসানার সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েকবার আমি তাদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা কেউ আমার কথা শুনত না। আমার ৮ বছর বয়সী মেয়ে জানিয়েছে, কিছুদিন আগেও তার নানার বাড়িতে মামুন গিয়েছিল। সেখানেও তার মায়ের সঙ্গে মামুনের কথা-কাটাকাটি হয়। ওইদিনও মামুন তার মায়ের মাথায় কাঠ দিয়ে আঘাত করে।’
কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন বলেন, ‘রোকসানার সঙ্গে মামুনের সম্পর্কের কারণে তার পরিবারের টানাপোড়েনের কথা উঠে এসেছে৷ মামুন পরিকল্পিতভাবে রোকসানাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন বলে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷’
আরও পড়ুন:ফরিদপুর সদরে যৌনপল্লি থেকে দুই তরুণীকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই পল্লির এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পারুল বেগম ওরফে পারু (৪৮) জেলার রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আপন (৩০), জহির (৩০) ও ববি (৩৮)।
গ্রেপ্তার না হওয়া এ তিনজনের মধ্যে ববি যৌনপল্লির সর্দারনি হিসেবে পরিচিত। আপন ও জহিরের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানা এলাকা থেকে এক তরুণীকে গত ১০ মার্চ ঢাকায় নিয়ে আসেন আপন। দুই দিন সেখানে রেখে তাকে (তরুণী) তিন ব্যক্তির হাতে তুলে দেন তিনি। ওই তিন ব্যক্তি ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় তরুণীকে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরের দিন একটি সাদা কাগজে তরুণীর স্বাক্ষর নিয়ে জানানো হয়, এখন থেকে তিনি যৌনপল্লির লাইসেন্সধারী সদস্য।
এতে আরও বলা হয়, মেয়েটিকে পারুর বাসায় রেখে ববি ও অন্যদের মাধ্যমে জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এর মাঝে মেয়েটি বাড়িতে যোগাযোগের জন্য একজন খদ্দেরকে তার ছোট বোনের মোবাইল নম্বর দেন। পরে ওই খদ্দেরের মোবাইল কলের মাধ্যমে মেয়েটির সন্ধান পায় তার পরিবার। এরপর তার মা ও ফুফা রথখোলায় এসে তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ যৌনপল্লিতে অভিযান চালানোর পর ফেনীর পূর্ব ছাগলনাইয়ার আরেক তরুণীও তাকে উদ্ধারে পুলিশের সাহায্য চান। ওই তরুণী জানান, তাকেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় এক রাত রেখে রথখোলা যৌনপল্লিতে এনে পারুর কাছে বিক্রি করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান জানান, যৌনপল্লিতে তরুণীকে নেয়ার ঘটনায় তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে অভিযান চালিয়ে পারুল বেগম ওরফে পারুকে গ্রেপ্তার করে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লার বরুড়ায় ঘর থেকে এক যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পৌরসভার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বুধবার উদ্ধার হওয়া ওই যুবকের নাম মোহাম্মদ শরীফ, যার বয়স ৩০ বছর।
স্থানীয় একজনের বরাতে পুলিশ জানায়, শরীফের ঘরের দরজা খোলা ছিল। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশের একটি টিম মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বাহিনীটি আরও জানায়, কারা শরীফকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির ভাষ্য, শরীফ দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তিনি মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন। তার নামে বরুড়া থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
বরুড়া থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। শরীরের বিভিন্ন ক্ষতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত।’
নওগাঁর পোরশা সীমান্তে ২৬ মার্চ গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক আল আমিনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
সীমান্তের হাঁপানিয়া এলাকায় ২৩৬ মেইন পিলারের কাছে বুধবার রাত ৯টার দিকে বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
ওই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ ১৬ বিজিবির নিতপুর ক্যাম্পের সুবেদার মাহফুজুর রহমান জানান, আল আমিনের মরদেহ ফেরত নিতে বিএসএফের সঙ্গে বুধবার দিনভর যোগাযোগ করেন তারা। এরপর সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের পর রাতে আল আমিনের মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ। স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে দেয়া হয় আল আমিনের মরদেহ।
তিনি জানান, বিএসএফের পক্ষ থেকে ভারতের কেদারিপাড়া ক্যাম্পের কমান্ডার পরিদর্শক সুভাষ চন্দ্র মিনা উপস্থিত ছিলেন।
নীতপুর সীমান্ত এলাকায় ২৬ মার্চ ভোরে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আল আমিন।
আরও পড়ুন:নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কো থেকে যে ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে, তা প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ ধরনের মিথ্যাচার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা প্রদান করেনি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গজনভি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ইসরায়েলের ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের তাকে ‘ট্রি অফ পিস’ সম্মাননা স্মারক দেন।’
ভাস্কর হেদভা সেরও নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর সম্মাননা বা পুরস্কার নয়। এটি গজনভি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত একটি পুরস্কার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করব। ড. ইউনূস ও ইউনেস্কোর নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। সেটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর- এ তথ্যও জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পীর দেয়া পুরস্কারকে ড. ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করেছেন। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অপমানকরও বটে।
‘ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ করব যে, এভাবে এ ধরনের ভয়াবহ মিথ্যাচার প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটি সঠিক নয় এবং ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান।
এ ধরনের সংবাদ প্রচারকে ‘প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিশিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
“ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
“১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিশিয়াল প্রতিনিধিই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার/সম্মাননা দেয়ার এখতিয়ারও রাখেন না।
“সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে।
“বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।”
এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখা চাওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এ ছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত না হন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
আরও পড়ুন:মেহেরপুর পৌরসভার ৯২ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৫ মাসের বেতন বকেয়া থাকার অভিযোগে পৌর মেয়রকে শোকজ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শনিবার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনকে শোকজ করা হয়।
মেয়র বরাবর প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়, মেহেরপুর পৌরসভার ৯২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২৫ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ ৬ কোটি ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৫৯ টাকা।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়।
পৌর অধ্যাদেশে বলা আছে, রাজস্ব আয় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদানের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভার ২৫ মাসের বেতন বাকি থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ধারা ৩২ এবং ৯১ এর উপধারা (৪) এর পরিপন্থি। এ অবস্থায় অসদাচারণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে কেন মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে নোটিশে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ‘আমি চিঠি পেয়েছি এটা সঠিক। চিঠির জবাব দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।’
মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শামীম হাসান জানান, মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভার মেয়রকে শোকজ করার চিঠি তিনি হাতে পেয়েছেন। মেয়র লিখিত জবাব দেয়ার পরে মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জে সিগারেটের ভেতর ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ওসমান গনি নামে এক মুদি দোকানিকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সোর্সের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের ভাটবাউর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ ও থানা ঘেরাওয়ের পর রাত ১০টার দিকে ওসমান গনিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
ভুক্তভোগী ওসমান গনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের ভাটবাউর এলাকার মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে।
অভিযুক্ত পুলিশের সোর্স সাদিকুল ইসলাম রাব্বিও একই এলাকার বাসিন্দা।
ওসমান বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে আমার দোকানে এসে পাঁচ টাকা দামের একটি সিগারেট কিনে চলে যায় স্থানীয় বখাটে ও পুলিশের সোর্স সাদিকুল ইসলাম রাব্বি। কিছুক্ষণ পর সিগারেট ড্যাম বলে সেটি পাল্টে নিয়ে যায় সে।
‘এরপর আমি দোকান বন্ধ করে ইফতার শেষে আবার দোকান খোলার পর সাব-ইন্সক্টের মাসুদুর রহমানসহ তিন পুলিশ সদস্য আমার দোকানে এসে মাদকের কথা বলে দোকান তল্লাশি শুরু করেন। দীর্ঘ সময় খোঁজাখুজির পর রাব্বির ফিরিয়ে দেয়া সিগারেটের ভেতর থেকে দুই পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ।’
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, পুলিশের সোর্স হওয়ায় নানাভাবে এলাকার মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও হয়রানি করে আসছে রাব্বি। এর আগেও মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে সে।
তার দাবি, রাব্বি এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে এখনও ৩টি মাদক মামলা চলমান থাকলেও তিনি নাকি পুলিশের সোর্স।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশের সঙ্গে মিলে টাকার খাওয়ার ধান্ধা করছিল সে। পুলিশ আর রাব্বি মিলে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতে আর এলাকার মানুষের কারণে বেঁচে গেছি। তা না হলে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে টাকা খাইতো।’
মানিকগঞ্জ সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমান জানান, মুদি দোকানের আড়ালে ভাটবাউর বাজারের মুদি দোকানি ওসমার গনি মাদক ব্যবসা করে আসছেন বলে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে ওসমান গনির দোকান তল্লাশি চালিয়ে তার দোকানের একটি সিগারেটের ভেতর থেকে দুটি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি জানান, ওসমান গনিকে আটকের পর সন্ধ্যায় ভাটবাউর এলাকার শতাধিক মানুষ থানায় আসেন এবং ওসি সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করে ওসমান গনিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, ওসমান গনিকে ছেড়ে দেয়ার পর সাদিকুল ইসলাম রাব্বিকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বির দাবি, আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি মুদি দোকানে মাদকের তথ্য দিয়েছে। এজন্য আরিফ হোসেনকে থানায় নিয়ে আসতে রাব্বিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের লিটন বলেন, ‘ওসমান গনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি কখনও বিড়ি-সিগারেটও খান নাই। এলাকায় তার মতো ভালো মানুষ কমই আছে। অবৈধভাবে মাদক দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশকে আরও সর্তকতার সঙ্গে কাজ করা উচিত। কারণ পুলিশের সোর্স সাদিকুল ইসলাম রাব্বি নিজেই একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে মামলাও আছে।’
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে মুদি দোকানি ওসমান গনিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে প্রাথমিক অবস্থায় সাদিকুল ইসলাম রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং সে কীভাবে মাদকের তথ্য পেয়েছে- সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তাকে দুদিন সময় দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফরিদপুরের নগরকান্দার আলোচিত আলাউদ্দিন অন্তর নামের ১৪ বছর বয়সী কিশোর হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মাহাবুব আলম, কামাল মাতুব্বর ও খোকন মাতুব্বর। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন আশরাফ শেখ, আজিজুল শেখ ও সুজন মাতুব্বর।
রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল বলেন, ‘বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে। এ রায়ের ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে এবং দেশে আইনের শাসনের পথ সুগম হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৭ জুন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী (পাগলপাড়া) এলাকার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন ওরফে অন্তরকে অপহরণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়। পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি সারা দেশে আলোচনার জন্ম দেয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য