পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় কেনিয়া। এ জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক ও আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী আফ্রিকার দেশটি।
রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সোমবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপক্ষীয় ও রাজনীতিবিষয়ক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত মই লেমোশিরা এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, শিগগিরই ঢাকায় কেনিয়ার দূতাবাস স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ বিমান ও কেনিয়া এয়ারওয়েজের মধ্যে আলোচনা চলছে।
মই লেমোশিরা বলেন, ‘কেনিয়ার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাত, আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্প খাতে বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে। কেনিয়ায় বিনিয়োগের মাধ্যমে পুরো আফ্রিকার বাজারে পণ্য সরবরাহ সম্ভব।
‘পররাষ্ট্রনীতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়েছে কেনিয়া। সে কারণে কেনিয়ার কাছে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।
কেনিয়ার প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে এই আলোচনায় এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত ও প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিকস, প্রক্রিয়াজাত সামুদ্রিক খাবার ও কৃষিপণ্য আমদানি করতে পারে কেনিয়া। এ ছাড়াও পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, সমুদ্র অর্থনীতি ও কৃষি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কেনিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
আফ্রিকার ৫৪টি দেশের সমন্বয়ে মুক্তবাণিজ্য এলাকা আফ্রিকান ইউনিয়ন, পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকান কমন মার্কেট (সিওএমইসিএ) ও পূর্ব আফ্রিকান কমিউনিটির সদস্য রাষ্ট্র কেনিয়া। এসব কারণে আফ্রিকায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরিতে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
তিনি জানান, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কেনিয়ায় পোশাক, বস্ত্র, ওষুধ, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।
ব্যবসা-বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ ও কেনিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ঢাকায় কেনিয়ার দূতাবাস অফিস স্থাপন ও দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ পারস্পরিক ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এর আগে কেনিয়ার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত স্টেলা মোকায়া ওরিনা জানান, দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ও কেনিয়ার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদার করা গেলে দুই দেশই লাভবান হবে।
সভায় এফবিসিসিআইর পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর কেনিয়াতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কেনিয়া সরকারের সহযোগিতা পেলে স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশটিতে বিনিয়োগ করার বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।
এফবিসিসিআই পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘কেনিয়াতে বাংলাদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তা কাজে লাগাতে হবে।’
পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা স্থাপনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিল্লিতে কেনিয়া হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার আইরিন ওলো, ট্রেড কাউন্সিলর জেয়ার্ড বি. মাইয়্যেকা, এফবিসিসিআইর পরিচালক হাফেজ হারুন, মো. নাসের, এস এম জাহাঙ্গীর আলম (মানিক), সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির, আবু হোসেন ভুঁইয়া (রানু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
আরও পড়ুন:স্থানীয় ওষুধশিল্পের সুরক্ষায় প্যাটেন্ট আইন সংশোধন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে বুধবার আয়োজিত ‘এলডিসি উত্তরণে ওষুধ শিল্পের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ওষুধশিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পৃথক একটি রোডম্যাপ তৈরির কথা বলেন। একই সঙ্গে পোশাকশিল্পের মতো এই খাতে প্রণোদনার প্রস্তাব দেন তারা।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশীয় ওষুধশিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এটি মোকবিলায় আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে স্থানীয় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করতে হবে।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবিলম্বে ওষুধশিল্প পার্ক (এপিআই পার্ক) চালু হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এর ফলে ভবিষ্যতে ওষুধশিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ওষুধশিল্প দ্রুত এগিয়ে যাবে।’
ট্রিপস চুক্তির আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় প্রয়োজনীয় প্রচার চালানোর আহ্বান জানান সালমান এফ রহমান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। এলডিসি-পরবর্তী সময়ের জন্য ওষুধশিল্পকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি খাত এবং শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের চেয়ারপারসন নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রাহমানসহ অনেকে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান এমপি বাংলাদেশের প্যাটেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান।
নিহাদ কবির মেধাস্বত্বসংক্রান্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করা হবে বলে আশ্বাস দেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা।
দেশের ওষুধশিল্পে পোশাক খাতের মতো প্রণোদনা দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন রিজওয়ান রাহমান।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রিপস চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ। ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ–সিপিডি।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক সংলাপে এ প্রশ্ন তুলেছেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল তখন দেশের ভেতরে বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ লাভ করেছে বিপিসি। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে সংস্থাটি জ্বালানি তেল বিক্রি করে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা গেল কোথায়?’
সরকারি ব্যয়ের স্বচ্চতা নিশ্চিত করতে বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং একইসঙ্গে পুরনো হিসাবের খতিয়ান জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানায় সিপিডি।
সিপিডি মনে করে, বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের সামনে আসা উচিত। ভোক্তার ওপর দায় না চাপিয়েও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা যেত।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিপিসি বলেছে যে মুনাফার ৩৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে, কীভাবে বিনিয়োগ হয়েছে তার হিসাব হিসাব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ১২৬ কোটি, ২০১৬ সালে ৯ হাজার ৪০ কোটি, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা লাভ করেছে বিপিসি। এছাড়া ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৬৭ কোটি এবং ২০২১ সালে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা লাভ হয়েছে বিপিসির। এই লাভের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় হয়েছে তার সঠিক হিসাব জনগণ জানে না। দেশের স্বার্থে বিপিসির লাভ-লোকসানের হিসাব জানা প্রয়োজন।’
সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘শুনেছি প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। বিপিসি নাকি সবচেয়ে ধনী গ্রাহক। বিপিসির ২৫ হাজার কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে। তাহলে এসব টাকা কার? বিপিসি চাইলে এই সংকট সময়ে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে পারত।’
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও পাকিস্তানে বেশি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
‘দাম কাদের চেয়ে বেশি? সিংগাপুর, হংকং ও জার্মানির চেয়ে বেশি। যাদের মাথাপিছু আয় ৫০ হাজার ডলারের কাছাকাছি তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যখন তুলনা করব তখন সে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখাটা জরুরি।’
সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রথমেই পরিবহন সেক্টরের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে। অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে।
‘কৃষিজ উৎপাদন কমে যাওয়ায় খাদ্যপণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। শিল্পের উৎপাদনেও খরচ বাড়বে। তার ফলে ব্যবসার লভ্যাংশ কমে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে সব সেক্টরে খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দেশের মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়। বিশেষ করে এর বড় ধাক্কাটা আসবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর।’
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি ও রেশনিং কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন:দেশে কিছুটা সংকট থাকলেও মানুষ ভালোই আছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এ কথা মনে করার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, গ্রামগঞ্জের কোনো মানুষ না খেয়ে নেই। প্রত্যেক মানুষের গায়ে জামাকাপড় আছে।
তেলের দাম লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকারকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কথায় কথায় ভর্তুকি দিলে অন্য খাতে ইনব্যালেন্স চলে আসবে।’
তিনি এও বলেন, ‘যেই প্রজেক্ট আমাকে দুঃসময়ে দুর্দিনে সার্ভিস দেবে, একটু কষ্ট করে সেই কাজ যদি আমি না করি, তাহলে তো আমি সারা জীবনই দরিদ্র থাকব।’
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: জনজীবনের চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এক সংলাপে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। এর আয়োজক ছিল করে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ।
দেশের সক্ষমতা বেড়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামগঞ্জের কোনো মানুষ না খেয়ে নেই। প্রত্যেক মানুষ খেতে পারছে। প্রত্যেক মানুষের গায়ে জামাকাপড় আছে।...আমি মনে করি না, আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। একটা প্যানিক (আতঙ্ক) সৃষ্টি করে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।’
আমদানির জন্য কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ঘাটতি আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু দেশে রিজার্ভ আছে। রিজার্ভ দিয়ে এটা কভার করা যাবে।’
বিদেশ থেকে ঋণ প্রসঙ্গে
আলোচনায় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তাজুল বলেন, ‘আইএমএফ থেকে আমরা মাঝে মাঝে ঋণ নেই এবং তা শোধ করে দেই। কোভিডের সময়ও নিয়েছি। এটা স্বাভাবিক বিষয়।’
এখন বিভিন্ন সংস্থা ঋণ দেয়ার জন্য আসে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা যদি এত খারাপ হয়, তাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে ঋণ দেয়ার জন্য।'
‘বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে নেয়ার কাজ করার জন্য নতুন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক আমাদের সেধে টাকা দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক এসে ঘুরছে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা দেয়ার জন্য। তারা ঋণ কখন দেয়? যখন আমরা শোধ করতে পারি।’
অর্থ পাচার নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আপনি বলছেন, এই দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে গেছে। এখন টাকা তো গেছে, তাদের ধরেন। বলবেন, আপনি ধরেন না কেন? ধরার জন্য আমাদের যে চেষ্টা নেই, এটা বলব কী করে? এটা তো আজকে না, প্রথম থেকে গেছে। বহুজনের টাকাও আনা হয়েছে বিদেশ থেকে।’
‘বিশ্বের সংকট সরকার তৈরি করেনি’
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের দশাই মোটামুটি একই বলেও দাবি করেন তাজুল। বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না পৃথিবীর অবস্থা কোন দিকে যাবে। দুঃসময় সারা পৃথিবীতে। এটা বর্তমান সরকার তৈরি করেনি।
‘আমরা আশা করেছিলাম ২০৪১ সালের আগেই আমরা উন্নত রাষ্ট্র হব। কিন্তু সব কিছুর ওপরে তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের, এ ছাড়া আমরা মতামত দেই। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতেই অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থা।’
বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে যে সমালোচনা উঠেছে তার জবাবও দেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেক উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমাদের দেশের অবস্থা এত খারাপ হলে তারা তো আমাদের সহযোগিতা করত না। একটি গ্রুপ বলে বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কা হবে। কেন হবে? শ্রীলঙ্কা কী করেছে আর আমরা কী করছি? ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন।’
‘অতীতে রিজার্ভের সমান আমদানি এক মাসেই’
যে আমদানি দেশের অর্থনীতিতে চাপে ফেলেছে, সেটি সামলাতে পারা দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রমাণ হিসেবেও দেখছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমদানি করছি বেশি। বাংলাদেশ প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের আমদানি করে। এতে একদিকে আমাদের ওপর চাপ আসছে, আরেক দিকে দেখে খুশিও লাগছে যে বাংলাদেশ মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে। একসময় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলারের। আমরা তো এখন এটা হ্যান্ডেল করতে (সামাল দিতে) পারছি।’
সরকার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার বিভিন্নভাবে মানুষকে সক্ষম করে তুলছে। বড় প্রজেক্ট হচ্ছে মানে আমাদের আর্ন হচ্ছে, জিডিপি বাড়বে।’
পেট্রল-অকটেনের দাম বাড়ানো কেন
দেশে উৎপাদন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ার কারণ দেখিয়ে পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর কারণ নিয়ে মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলা থেকে যেই গ্যাস ওঠে, এর সঙ্গে একটা লিকুইড ওঠে, যেটাকে রিফাইন করে আমরা পেট্রল ও অকটেন বানাই। কিন্তু এগুলো কারা ব্যবহার করে? তারা গুলশানের মতো এলাকায় থাকে, ১৫ টাকার পানি ২৫ টাকা দিয়ে কেনে তারা।’
তেলের সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশসহ সারা বিশ্বের প্রায় ২৫ ভাগ জ্বালানি আসে রাশিয়া থেকে, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বের সব চেয়ে বেশি জ্বালানি সরবরাহ আসে ভেনিজুয়েলা থেকে। কিন্তু দেশটির ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে সেখান থেকেও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
তেলের দাম বাড়ানোর কারণে আরও মূল্যস্ফীতি হবে কি না- এমন প্রশ্নে তাজুল বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে, মূল্যস্ফীতির কথা বলা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি আমরা ডেকে আনিনি, এটা জোর করে ঢুকেছে।
‘জনগণের জন্যই জনগণকে কষ্ট করতে হবে।’
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন।
আরও পড়ুন:ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলের অনুসন্ধান চেয়ে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছে, ‘এভাবে দুর্নীতি-অনিয়ম চলতে পারে না। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।’
বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সুমনকে উদ্দেশ করে বেঞ্চ বলে, ‘আপনার মনোভাবের সঙ্গে আমরা শতভাগ একমত। তবে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলের অভিযোগের বিষয়ে দুদকে একটি আবেদন করুন। দুদক যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা দেখব।’
এরপর আদালত রিট শুনানি আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
এর আগে বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন ব্যারিস্টার সুমন।
রিটে ওসি মনিরুলের সম্পদের অনুসন্ধানের নির্দেশনার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশপ্রধান, দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
‘এভাবে চলতে দেয়া যায় না, এভাবে চলতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। ওসির সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে করা রিটের শুনানিকালে এ মন্তব্য করে হাইকোর্ট।
দুদকের কাছে একটা আবেদন করে আগামী সপ্তাহে ফের আবেদন নিয়ে যেতে বলেছে আদালত।
পরে রিটটি শুনানির জন্য আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত।
রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলামের আট তলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদের খবর আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
এর আগে সোমবার ‘ঢাকায় ওসির আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
প্রতিবেদনটি দেখে আদালত তাকে লিখিত আবেদন নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। আজ তিনি রিট আবেদন করেন।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চে আজ শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ রিটের পরামর্শ দেয়।
বিষয়টি আদালতের নজরে আনা ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, বিষয়টি আদালতের নজরে আনা দরকার। দুদকের তদন্তের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা।’
তিনি বলেন, ‘দেশে অসংখ্য সৎ পুলিশ অফিসার আছে, কিন্তু এই ওসির মতো যদি সবাই এত সম্পদ বানান, তাহলে সৎ অফিসার যারা, তারা মনে অনেক বেশি কষ্ট পাবেন। ফলে দেশে আর সৎ অফিসার নাও হতে পারেন।
‘এভাবে অসৎ অফিসাররা যদি ট্রেন্ড তৈরি করেন, তাহলে সৎ অফিসার খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ জন্য বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে এসেছি। আদালত শুনেছেন। শুনে আদালত বলেছেন, এটা তো ঠিক না।
‘তখন আদালত দুদকের আইনজীবীকে ডেকেছেন। দুদকের আইনজীবীও বলেছেন, এটা খুবই হুমকিস্বরূপ; এটা হতাশাজনক। তখন আদালত আমাকে পিটিশন নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আগামী ১০ আগস্ট বুধবারই এ বিষয়ে পিটিশন দায়ের করব।’
গত ৫ আগস্ট একটি দৈনিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের সম্পদ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ঢাকায় আটতলা বাড়ি করেছেন ওসি। তিনি বানাচ্ছেন আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে তার রয়েছে চারটি প্লট।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে ওসি মনিরের বিরুদ্ধে।
এতে আরও বলা হয়, পুলিশের একজন পরিদর্শক হয়ে ওসি মনিরুল কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশ বিভাগে আলোচনা চলছে। বর্তমানে তিনি নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা স্কেলে সাকল্যে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন পান।
আরও পড়ুন:সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড জানিয়েছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত বা অপ্রদর্শিত অর্থ রাখার সুযোগ তাদের কোনো ব্যাংকে নেই। তিনি এও জানিয়েছেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে কারা টাকা জমা রেখেছে, সে বিষয়ে তার দেশের সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়তে তার দেশের উদ্যোগের বিষয়টিও তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘সুইস ব্যাংক আন্তর্জাতিক সব প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করে। সেখানে কালো টাকা বা দুর্নীতির অর্থ রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
সুইস ব্যাংক বলতে সুইজারল্যান্ডের কোনো একক ব্যাংককে বোঝায় না। সুইস নাশনাল ব্যাংক বলতে যে প্রতিষ্ঠানটি আছে, সেটি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটির যেকোনো ব্যাংকে রাখা টাকাই সুইস ব্যাংকের টাকা হিসেবে আলোচনায় আসে।
গত জুনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার বেশি। টাকার অবমূল্যায়নে এই অঙ্ক এখন ৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে গত ১২ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।
এই অর্থ জমা নিয়ে বরাবর তুমুল বিতর্ক হয় বাংলাদেশে। সমালোচকরা বলে আসছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ এটি।
অবশ্য বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে অবৈধ উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ যেমন সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। তাই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের মোট অর্থের মধ্যে বৈধ-অবৈধ সব অর্থই রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব মেলে না এ কারণে যে, সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
এই হিসাব প্রকাশের আগের বছর সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ ফেরত আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এরপর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) সঞ্চয়কারী বাংলাদেশিদের নামের তালিকা চায় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব ব্যাংকে টাকা জমাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানাতে বলা হয়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দেয়া হয়নি।
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড কালো টাকা রাখার স্বর্গরাজ্য নয়। এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সুইস ব্যাংক অবৈধ অর্থকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করে না। সুইজ ব্যাংক বিশ্বের একটি অন্যতম ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আমাদের জিডিপির অন্যতম একটি বড় অংশ। সুইজ জাতীয় ব্যাংক প্রতি বছর বাংলাদেশি গ্রাহকদের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় ব্যক্তিগত টাকা সংরক্ষণ হার বাড়ছে না, বরং কমছে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছে ওই তথ্য প্রতি বছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক দিয়ে থাকে। ওই অর্থ অবৈধপথে আয় করা হয়েছে কি না, এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কারও তথ্য চায়নি
অন্য এক সুইস প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট করে কারো সম্পর্কে তথ্য চায়নি।
অর্থপাচার নিয়ে সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আমরা যেকোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও চুক্তি করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে সব তথ্য সরবরাহ করেছি।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘গত বছর দুই দেশের বাণিজ্য এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এ দেশের স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম সুইস সরকারের সহায়তায় হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সুইস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সুইস সরকার ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। আগামী দিনগুলোতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
আগামী দিনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তির প্রসারে সুইস সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুইজারল্যান্ড সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে। সুইজারল্যান্ড চায় রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদে প্রত্যাবাসন হোক।
‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অবস্থায় আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করব। আমরা জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য নই। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে এখন রয়েছি। সেখানে আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরব।'
অনুষ্ঠানে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) এর সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীনের সঞ্চালনায় সংগঠনটির সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসসহ উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যরা।
আরও পড়ুন:দাপ্তরিক সব কাজে সরকারি ই-মেইল ব্যবহার করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আ. রাজ্জাক সরকারের সই করা এক চিঠিতে ৫ আগস্ট এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিটি সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে। এতে দাপ্তরিক কাজে ই-মেইল ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির ৭ জুলাইয়ের সভায় সরকারি কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কাজে তথ্য আদান-প্রদানে সরকারি ই-মেইল ব্যবহার নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এতে বলা হয়, ই-মেইল সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক যোগাযোগমাধ্যম। দাপ্তরিক তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তর/সংস্থা/কর্মকর্তার সব দাপ্তরিক যোগাযোগে সরকারি ই-মেইলের মাধ্যমে করাসহ ই-মেইলে স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার এবং প্রতি তিন মাস পর তা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্দেশনা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলা ডলারের দৌড় থামাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও কমছে না মুদ্রাটির তেজি ভাব, কাটছে না সংকট।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছে টাকার মান। দুই মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ মাস ৮ দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৫০ কোটি (দেড় বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবারও রাষ্টায়ত্ত জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন সংস্থা বাংলাাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল আমদানি এবং বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলতে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এ হিসাবে এই ১ মাস ৮ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে এত বেশি ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি উল্লম্ফন ও আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদা পূরণের জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার ছাড়া হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ এটি। যখন বাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দেবে তখন ডলার বিক্রি করা হবে। আবার যখন সরবরাহ বেশি হবে তখন কেনা হবে।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, এখন বেশি বিক্রি করা হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তাণ্ডবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব দেশের মতো আমাদেরও আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণেই বেশি ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। রিজার্ভের ওপরও চাপ পড়ছে।
‘তবে সুখের খবর হচ্ছে, আমদানি কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্সও বাড়ছে। শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
এদিকে কিছুদিন ‘স্থির’ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
অন্যদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে সোমবার ডলারের দর উঠেছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা। আর সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১২ শতাংশ।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৭ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক ব্যাংক ১১০ টাকা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক। সোমবার ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লেখা চিঠিতে এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনার পর এবার ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার
ডলার বিক্রির কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের ৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
১২ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলে আরও কমে গেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য