টাকা কেটে নিয়েও ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় কমলাপুর রেলস্টেশনে আন্দোলন করা মহিউদ্দিন রনির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সহজ ডটকম-ভিনসেন জেভি। সেই সঙ্গে ট্রেনের টিকিটে কোনো ধরনের অনিয়মও হয়নি দাবি করে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে সহজ-জেভি।
সোমবার পাঠানো ওই বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছে ট্রেনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি।
মহিউদ্দিন রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত এপ্রিলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেছিলেন। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ৬ দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে আন্দোলন করছেন তিনি।
রনির অভিযোগে যা ছিল
রনি অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুনের রেলের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন তিনি। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে তার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয় টিকিটের। কিন্তু তিনি কোনো আসন পাননি। এমনকি টাকা নেয়ার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও পাননি বলে দাবি করেন।
সেদিন তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে ‘সিস্টেম ফেইল’ করার কথা বলা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা রিফান্ড না পেলে আবার যেতে বলা হয়।
রনির অভিযোগ, ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।
সহজের ব্যাখ্যা
রনির অভিযোগ নিয়ে সহজ ডটকম ও ভিনসেন জেভি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মহিউদ্দিন হাওলাদার রনি গত ১৩ জুন সকাল ৮টা ৩৬ মিনিটে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেট পোর্টাল থেকে ঢাকা থেকে রাজশাহীর চারটি টিকেট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ওই সময় তার এমএফএস অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে তার মোবাইল ওয়ালেটে তিন হাজার টাকা জমা করেন রনি। ৯টা ৩৭ মিনিটে টিকেটের ২ হাজার ৬৮০ টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু রেলের নিয়ম অনুযায়ী, টিকিট বুকিংয়ের ১৫ মিনিটের মধ্যে তার মূল্য পরিশোধ করতে না পারলে বুকিং বাতিল হয়ে যায়। সেটি তার ক্ষেত্রেও হয়।
সহজ জানায়, তাদের ডিজিটাল রেকর্ড অনুযায়ী সেই তারিখে ওই গ্রাহকের নামে কোনো টিকেট ইস্যুই হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ই-টিকেট পোর্টালের সব শর্ত মেনে নিয়েই মহিউদ্দিন রনির টিকেট কেনার কথা থাকলেও তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন রনি। সহজ-জেভি টাকা না পাওয়ায় টিকেট ইস্যু হয়নি, রনির মোবাইল ওয়ালেটে টাকা ফ্রিজ হয়ে ছিল।
যেহেতু গ্রাহকের টিকেটটি শর্তানুযায়ী সাকসেসফুলি ইস্যু হয়নি তাই তার মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডার পরের ৩ কর্মদিবসের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতিতে ‘আনফ্রিজ’ করে গ্রাহককে দিয়ে দেয়া হয়। এটি একটি পরীক্ষিত, নিরাপদ ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতি। প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতিতে পার্থক্য আছে। যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে সব ব্যাংক এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে গ্রাহকদের রিফান্ড করে থাকে।
সহজের দাবি, সেবা দেয়ায় কোন ধরনের অবহেলা ছিল না শর্তে উল্লেখিত সময়ের আগেই টাকা ফেরত পেয়েছিলেন রনি। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং ওয়েবসাইটের (www.eticket.railway.gov.bd) সব নিয়ম ও শর্তা মেনেই রনিকে সেবা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী (যা টিকেটিং অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেও উল্লেখ আছে) ৮ কর্মদিবসের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করায় রনিকে পরের ৩ কর্মদিবসের মধ্যেই অ্যাকাউন্টে টিকিটের মূল্য বাবদ দেয়া সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেয়া হয়।
রনি দুই মিনিটের মধ্যেই সেবা পেয়েছিলেন বলেও দাবি করেছে সহজ-জেভি। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট সংক্রান্ত সহায়তা মেইলে ([email protected]) রনি যোগাযোগ করলে (১৩ জুন, সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে) তাকে দুই মিনিটের ভেতর প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে রিপ্লাই দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ই-মেইলের কোনো রিপ্লাই দেননি।
গোপন পিন ছাড়া টাকা কাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে সহজ ডটকমের দাবি, রনির এ অভিযোগ সঠিক নয়।
সহজের ব্যাখ্যা- তার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের গোপন পিন নম্বর ছাড়াই টাকা কাটা হয়েছে, যা একেবারেই সঠিক নয়। তার মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডার এ বিষয়ে সব তথ্যপ্রমাণ ইতোমধ্যেই তার কাছে উপস্থাপন করেছে।
সহজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা কেন ভোক্তা অধিকারের?
গত বুধবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রেলের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
সহজের বিরুদ্ধে গ্রাহক অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে এই জরিমানা করা হয়।
রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ছয় দফা দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা ১২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে প্রতিকার চেয়ে সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শুনানি শেষে সহজকে জরিমানা করা হয়।
সহজ-জেভি সোমবার যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে দাবি করা হয় তাদের কোনো অবহেলা ছিল না।
প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদের কাছে নিউজবাংলা প্রশ্ন করে, যদি সহজের কোনো অবহেলা না থাকে তাহলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আপনাদের জরিমানা করল কেন?
তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্ন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে আপনাদের করা উচিত। তারা কেন জরিমানা করেছেন।’
যদি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গ্রাহক অবহেলার প্রমাণ না পেত, তাহলে জরিমানার রায় তো দিতো না, পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটা অবশ্যই দিত না।’
বুধবার জরিমানার পর ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ভোক্তার প্রতি সহজ-এর অবহেলা পাওয়া গেছে। সহজের এই অবহেলা প্রমাণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
আইন অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হবে অভিযোগকারী রনিকে। অর্থাৎ তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য