আদালতের অনুমোদন ছাড়া সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কারও চারিত্রিক বিষয়ে প্রশ্ন না করার বিধান রেখে এভিডেন্স (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
পরে বৈঠকের বিস্তারিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আইনটির খসড়া এর আগে ১৪ মার্চ মন্ত্রিসভায় উঠেছিল। তখন নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।'
‘অনেক সময় ভিকটিমকে বিপরীত পক্ষ থেকে চরিত্রহীন প্রমাণ করার প্রবণতা দেখা যায়। এখন মন্ত্রিসভা সে বিষয়ে সংশোধন দিয়েছে। কারও চারিত্রিক বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আদালত বিবেচনা করবেন এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে কি না।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল কোর্টকে আইনগত স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাই কিছু সংশোধনী আনার প্রয়োজনীয়তা ছিল। এর মাধ্যমে ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়। কারণ আগে এভিডেন্স অ্যাক্টে (সাক্ষ্য আইন) ডিজিটাল কোর্ট এটা ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইটির থেকে পাওয়া ডাটা ব্যবহার হবে। যেসব ডাটা অর্থাৎ তথ্য আসবে, সেগুলো সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া যাবে। কেবিনেট মিটিংয়ের আলোচনায় এমনটাই বলা হয়েছে।
‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ডিজিটাল রেকর্ড যেমন অডিও, ভিডিও ফুটেজ এগুলো বিবেচনায় আনা হবে। এটা আগে ছিল না। আগে ছিল- কলা (আর্ট), হস্তরেখা (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) ইত্যাদি।’
আনোয়ারুল আরও বলেন, ‘এটা খুব দ্রুত করতে বলা হয়েছে। তবে এটা ১৮৭২ সালের আইন। তাই একটু সময় লাগবে।’
আরও পড়ুন:একের পর এক জনপ্রতিনিধির ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও মিথ্যা মামলায় ঘটনায় স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি ফোরামের আন্দোলনের মুখে অবশেষে বেলকুচি থানার ওসি আসলাম হোসেনকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে প্রশাসন। সোমবার বিকেলে তাকে প্রত্যাহার করে সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, ওসি আসলাম হোসেনকে প্রত্যাহারের পর বেলকুচি থানার নতুন ওসি হিসেবে খায়রুল বাশারকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেলকুচির পৌর কাউন্সিলর মাহাবুবুল আজাদ তারেকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় রোববার মানববন্ধন করেন জনপ্রতিনিধিরা।
এ সময় উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ বলেন, ‘প্রায় ৬ মাস আগে বেলকুচি থানার ওসির দায়িত্বে আসেন আসলাম হোসেন। এর পর থেকে বেলকুচি উপজেলায় ৬ জন জনপ্রতিনিধির ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা পর্যন্ত নেয়া হয়নি। উপরন্তু আমাদের নামে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি ফোরামের এই সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ওসি আসলাম হোসেনকে প্রত্যাহার না করা হলে জনপ্রতিনিধিরা কলম বিরতিতে যাবেন।’
রাজধানীর খিলক্ষেত বরুয়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মেছের আলীর মরদেহ উদ্ধার হয় ২৩ মে। মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি হত্যাকাণ্ড তা-ও নিশ্চিত হতে পারছিল না পুলিশ।
ঘটনার মোড় ঘুরে যায় একটি ব্যাগের হদিস পাওয়ার পর। মরদেহ উদ্ধারের পরদিন ঘটনাস্থলের পাশে ওই ব্যাগটি পায় পুলিশ। আর এই ব্যাগের সূত্র ধরেই পুলিশ নিশ্চিত হয় যে এটি হত্যাকাণ্ড। শেষ পর্যন্ত শনাক্ত হয় হত্যাকারী।
মেছের আলী হত্যার ঘটনায় রোববার রাতে রমজান আলী নামে একজনকে শ্রীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, খিলক্ষেতের বরুয়া বাজার সংলগ্ন বাসা থেকে ২০ মে রাতে বের হয়ে নিখোঁজ হন মেছের আলী। ২৩ মে বিকেলে বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মেছের আলীর ছেলে আল আমিন বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকায় এবং প্রকাশ্যে কারও সঙ্গে মেছের আলীর শত্রুতা না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল যে মেছের আলীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এমন ধারণা থেকেই পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়নি।
ঘটনাস্থল থেকে ব্যাগ উদ্ধার
মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে সেখানে একটি ব্যাগ পান পুলিশের তদন্তকারীরা। সেই ব্যাগের ভেতরে কাস্তে, কম্বলসহ কিছু কাপড় ও মিনা নামে একজনের জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাগ উদ্ধারের পর মিনা ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শাহাবুদ্দিন নিজেও একটি ঘটনার শিকার।
হত্যা রহস্যে নাটকীয় মোড়
শাহাবুদ্দিন ও মিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে মিনার স্বামী শাহাবুদ্দিন তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে সহজ-সরল এই মানুষটি নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন।
রেলওয়ে স্টেশনে বয়স্ক এক লোকের সঙ্গে শাহাবুদ্দিনের কথা হয়। তাকে ভাতিজা সম্বোধন করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমিও নেত্রকোণায় যাব, চল একসাথেই যাই। আমরা যদি এখানে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে।’
ওই ব্যক্তি বিকল্প রাস্তার কথা বলে শাহাবুদ্দিনকে বাসে করে নিয়ে আসেন কারওয়ান বাজারে। সেখানে তিনি শাহাবুদ্দিনকে চা খাওয়ান। চেতনানাশক মেশানো ওই চা খাওয়ার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। আর এই ফাঁকে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও পকেটে থাকা ৪০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ওই বয়স্ক ব্যক্তি। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় শাহাবুদ্দিন নেত্রকোণায় পৌঁছেন।
শাহাবুদ্দিনের ব্যাগ যেভাবে মেছের আলীর মরদেহের পাশে
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রযুক্তির সহায়তায় ওই বয়স্ক ব্যক্তির সন্ধান পায় পুলিশ। তার নাম রমজান আলী। থাকেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। তিনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে চা বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে ছিনতাই করেন। কয়েক বছর ধরে এই কাজ করে আসছিলেন তিনি।
খিলক্ষেতের বরুয়া বাজার ও মেছের আলীকে যেখানে পাওয়া যায় সেই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০ মে একজন বয়স্ক লোক অটোরিকশায় মেছের আলীর সঙ্গে যাচ্ছেন। তার কাঁধে ঝুলানো র্যাক্সিনের একটি ব্যাগ। আর এই ব্যাগের ভেতরে ছিল শাহাবুদ্দিনের ব্যাগটি, যা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়।
ব্যাগের মধ্যে থাকা মিনা নামে এক নারীর জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সূত্র ধরে খু্ঁজে বের করা হয় তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় পুলিশ পায় রমজানের তথ্য।
এডিসি ইফতেখায়রুল বলেন, ‘এই দুটি ঘটনা একই ব্যক্তি ঘটিয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা শ্রীপুর থেকে রমজান আলীকে গ্রেপ্তার করি। তিনি মেছের আলীকে চেতনানাশক খাইয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘রমজান আলী মেছের আলীকে চেতনানাশক খাইয়ে তার কাছে থাকা টাকাপয়সা নিয়ে চম্পট দেয়। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা মেছের আলী অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগে মারা গেছেন কিনা তা ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
চার হাজার টাকার লোভে মেছের আলীকে হত্যা
শাহাবুদ্দিনের মতো মেছের আলীকেও টার্গেট করে চেতনানাশক খাইয়ে তার কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নিয়ে যান রমজান।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এডিসি ইফতেখায়রুল জানান, মেছের আলী নিখোঁজের দিন রমজানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মেছের আলীর সবজির ভ্যানে বসেই অনেকক্ষণ কথা হয় দুজনের। রাতে বাসা থেকে মেছের আলী বের হয়ে রেলগেটের সামনে আসেন। সেখানে এক জায়গায় বসার পর রমজানা তাকে চা পান করান। চেতনানাশক মেশানো ওই চা পান করার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মেছের আলী। পরে তার কাছে থাকা চার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেহ টেনে নিয়ে বড় বড় ঘাস আছে এমন জায়গায় ফেলে আসেন রমজান।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মেছের আলীর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর রমজান দেখতে পান যে তার কাছে ৪ হাজার টাকা রয়েছে। এই চার হাজার টাকার লোভেই মেছেরকে দেয়া চায়ে চারটি চেতনানাশক বড়ি মিশিয়ে দেন তিনি।
‘মেছের আলীকে ফেলে যাওয়ার সময় রমজান আলী ভুলবশত ওই ব্যাগটি ঘটনাস্থলে ফেলে যান। আর ওই ব্যাগের সূত্র ধরেই আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।’
আরও পড়ুন:ঢাকা জজ কোর্টে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে সৃষ্ট এই ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতদের সবাই বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য। তারা হলেন- ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম সায়েম, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন তারুণ্য, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মোসাম্মৎ মুক্তি।
তাদের মধ্যে ওমর ফারুক ওরফে ফারুকীকে ঢামেক নিউরো সার্জারি ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। রাত ৮টার দিকে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া মোসাম্মৎ মুক্তি ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। বাকি তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে যান। তারা দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
তারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট এম মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, জজকোর্ট প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপর তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় দণ্ডিত জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেনকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
এই জামিন আদেশের ফলে তার মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে যে আপিলের প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডা. সাবরিনাকে জামিন দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
আইনজীবী মাসুদুল হক পরে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করা হয়েছে। এ মামলায় জামিন হওয়ায় এখন তার মুক্তিতে বাধা নেই। কারণ বাকি মামলাগুলোতে তিনি আগেই জামিন পেয়েছেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী জানান, এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ডা. সাবরিনা শারমিন ও প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে তিনটি পৃথক অভিযোগে গত বছরের ১৯ জুলাই ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
রায়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে চার বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তিনটি ধারার সাজা পর পর কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। সে কারণে আসামিদেরকে ১১ বছর করেই সাজা খাটতে হবে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন সাবরিনা, সঙ্গে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
মামলা থেকে জানা যায়, করোনার ভুয়া সনদ দেয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে ২০২০ সালের ২৩ জুন গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও থানায় হামলা করে পুলিশকে মারধর করে।
এ মামলায় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর একই বছরের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় আদালত। বিচার শেষে আট আসামিকে সাজা দেয় বিচারিক আদালত।
আরও পড়ুন:বাতাসা খাইয়ে অচেতন করে স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলায় বাগেরহাটে কাইয়ুম শেখ নামে এক কবিরাজ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার ভোরে ফকিরহাট থানা পুলিশের একটি দল জেলার চিতলমারী উপজেলার কলাতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৪৫ বছর বয়সী কাইয়ুম শেখ ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মতলেব শেখের ছেলে।
পুলিশ জানায়, সোমবার (২৯ মে) বিকেল ৩টার দিকে হাতের আঁচিল তুলতে এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে কবিরাজ কাইয়ুম শেখের বাড়িতে যায় ওই শিক্ষার্থী। কবিরাজ আঁচিল তোলার চিকিৎসার সময় রোগীর সঙ্গে অন্য কেউ থাকা যাবে না বলে তার বান্ধবীকে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মেয়েটিকে বাতাসা খেতে দেন। এরপর মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাতে অভিযুক্ত কাইয়ুম শেখের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ফকিরহাট মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলীমুজ্জামান বলেন, ‘ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত আসামী কাইয়ুম শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মতিঝিল। এখানে স্কুল-কলেজসহ অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আছে ভর্তি বাণিজ্য। এ ছাড়া আছে অনেক মার্কেট ও কাঁচা বাজার। এসব কিছু ঘিরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জেরেই খুন করা হয়েছিল বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপুকে।
টিপু হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, টিপু হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের সরাসরি শ্যুটার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ। তাকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেক আসামি শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে। আর টিপু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা। হত্যার পর তাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান হতে গ্রেপ্তার করে ফিরিয়ে আনা হয়।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশরার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের তদন্তে টিপু হত্যার মোট আসামির সংখ্যা ৩৪। তবে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায়, তার নাম এক্সেল সোহেল; তাকে বাদ দিয়ে ৩৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তার নামও সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করা হবে চার্জশিটে।
হারুন অর রশীদ বলেন, মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ অনুসারে জবানবন্দি দিয়েছে তিনজন। তারা হলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ, নাসির উদ্দিন মানিক ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা।
তিনি বলেন, আধিপত্য ও আর্থিক সংশ্লেষ টিপু হত্যার বড় কারণ। তবে টিপু হত্যায় যারাই জড়িত ছিলেন তাদের কারো রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যারাই সম্পৃক্ত বা টিপু খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করে আজ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
টিপু হত্যার মামলার তদন্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, জাহেদুল ইসলাম টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। ১৪ মাস আগে টিপু খুন হন। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্ত কাজ শুরু করে। প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। টিপু একা খুন হননি। তাকে মার্ডার করতে আসা শ্যুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি। এই খুনের তদন্তে আমরা প্রায় ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে আমরা ৩৩ জন আসামির নামে চার্জশিট দাখিল করেছি। মোট পলাতক রয়েছেন ৯ আসামি।
হারুন বলেন, ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শ্যুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ইন্ডিয়া পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বেইলী রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা ও হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেছেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। সেজন্য কোনো ধরণের ভুল বা ক্রুটি না হয় সেজন্য তদন্তে সময় নেয়া হয়। আজ সেটার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, যারা জড়িত, অপরাধী, সাক্ষ্য প্রমাণ পারিপাশ্বিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শুধু তাদের নামই মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত না তাদের কারো নাম সংযুক্ত করা হয়নি। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা আমরা করিনি।
টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি যারা
জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে) এমদাদুল হক , জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সুমন সিকদার ওরফে মুসা, মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম, মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর, আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল, জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন,, হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু, মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত সৈকত, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ, খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা, আবু সালেহ শিকদার ওরফে সুটার সালে, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, সোহেল শাহরিয়ার, মোহাম্মদ মারুফ খান, ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইমরান হোসেন ওরফে জিতু, রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব,ও মোরশেদুল আলম পলাশ।
পলাতত আসামি যারা
এনামুল ইসলাম ওরফে এক্সেল সোহেল, রিফাত হোসেন, রানা মোল্লা, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল উজ্জল, কামরুজ্জামান, বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার, গোলাম আশরাফ তালুকদার ও মারুফ আহমেদ মনসুর।
রেস্টুরেন্টে কাঁচা ও রান্না করা মাংস রাখা ছিল একসঙ্গে। হাতেনাতে ধরে মাদারীপুরের এক রেস্টুরেন্টকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের শকুনি লেকপাড় এলাকার স্বপ্নচূড়া রেস্টুরেন্টে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে এ জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, শহরে অভিজাত রেস্টুরেন্ট হিসেবে পরিচিত স্বপ্নচূড়ায় খাবারের মূল্য, অব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ জানায় এক ভোক্তা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরে যৌথ দল রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়।
এ সময় ওই রেস্টুরেন্টে ফ্রিজে কাঁচা ও রান্না করা মাংস একসঙ্গে রাখা ছিল। এ ছাড়া রেস্টুরেন্টের মালিক ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারের (টিআইএন) অনুমতি না নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছিল।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রেস্টুরেন্টের মালিক গোলাম রাব্বানীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘রেস্টুরেন্টটিতে বেশ কয়েকদিন আগের রূপচাঁদা মাছসহ কাঁচা ও রান্না করা মাংস একসঙ্গে ফ্রিজে রাখা হয়েছিল।
‘তাদের প্রতিষ্ঠানটি জেলা প্রশাসন থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও রেস্টুরেন্টের কর্মীদের স্বাস্থ্যসনদ ছিল না। তাই তাদের সতর্ক করার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। পরবর্তীতে তারা এ কাজ করলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য