গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে একবারই, সেটিও মিনিট দুয়েকের জন্য। অন্যদিকে এখান থেকে কিলোমিটার সাতেক দূরে রহিমপুর গ্রামে শুক্রবার রাত ১১টায় বিদ্যুৎ যায়, আসে রাত ৩টায়।
নগুয়া এলাকাটি কিশোরগঞ্জ শহরের এক প্রান্তে। সেখানে বিদ্যুতের এই ভালো অবস্থা জেলা সদরের মানুষের কাছে বিরল নয় মোটেও।
একযুগ আগে দেশে বিদ্যুতের যখন অসহনীয় পরিস্থিতি তখনও কিশোরগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি খারাপ ছিল না অতটা। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার পর সেটির উন্নতি হয় আরও বেশি।
গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়া শুরু করেছে যখন থেকে, তখন থেকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিও কমতে শুরু করে, যেটি আবার ফিরে এসেছে জুনের শেষদিক থেকে। আর গত সপ্তাহে ঘটা করে যখন লোডশেডিং শুরু হয়, তখন কিশোরগঞ্জ শহরের বিপরীত চিত্র দেখা দেয় গ্রামে।
রহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা শাকিল ভুঁইয়া বলেন, ‘দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। যখন তখন কারেন্ট যায়। আর এবার শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি নাই, গ্রামে এত গরম পড়বে, সেটি কল্পনায়ও ছিল না।’
কিশোরগঞ্জ শহরের মতো দেশের সব জেলা সদরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অতটা ভালো নয়। তবে কিশোরগঞ্জে শহর ও গ্রামে যে ব্যবধান, সেটি সব জেলাতেই। শহরে লোডশেডিং যতটা করা হচ্ছে, গ্রামে করা হচ্ছে বহুগুণ।
কুমিল্লার গ্রামে রাতে তিনবার ভোগান্তি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের অধীন উপজেলাগুলোতে প্রতিদিন মুহূর্তে গড়ে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও দিনের বেলা মাত্র তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে পারছি। এক মাস ধরে দিনে তিন থেকে চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছেই।’
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে শিমপুর, কালিরবাজার, জগন্নাথপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা জানান, রাত ৮টা বাজলেই লোডশেডিং শুরু হয়। এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। রাত ১২টায় আবার যায়, এরপর ভোরে আরেকবার। গত চার-পাঁচ দিন ধরে এভাবেই চলছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য বলছে, জেলার চার সমিতির অন্তর্ভুক্ত উপজেলাগুলোয় দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। নিয়মিত ১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পান গ্রামাঞ্চলের লোকজন।
কুমিল্লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন প্রামাণিকের দাবি অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ফিডারের সমস্যার কারণে তা মেরামত করতে হয়। ওই সময় প্রয়োজনেই লোডশেডিং করা লাগে। কুমিল্লায় বেঁধে দেয়া সময়ের বাইরে লোডশেডিং হয় না।’
লক্ষ্মীপুরের চিত্র
লক্ষ্মীপুরে গ্রাম এলাকায় দিন-রাত মিলিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে ৮ থেকে ১০ বার। ঘণ্টার হিসেবে বিদ্যুৎহীন সময় কাটাতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
জেলার পাঁচ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। পিক আউয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে সরবরাহ অনেক কম।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘রাত-দিন মিলে ৪-৫ বার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে কোনো কিছু করার নাই।’
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠেছে। পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’
জেলা বণিক ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকার এলাকাভিত্তিক যে সময় দিয়েছে, সেটা কার্যকর হচ্ছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে জানি না।’
মানিকগঞ্জের গ্রামে বিদ্যুৎ যায় ঘণ্টায় ঘণ্টায়
মানিকগঞ্জে জেলা ও উপজেলা সদরে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে।
লতপুরের জিয়াউল হক বলেন, ‘আগে তো কারেন্ট কম যাইত। কিন্তু সরকারের ঘোষণার পর থেকে কারেন্ট বেশি যায়। বুধবার রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কারেন্ট ছিল। এর পর সকাল থেকে আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। বর্তমানে এমন অবস্থা হইছে, যে আমাদের এলাকায় টানা এক ঘণ্টাও কারেন্ট থাকে না।’
সাটুরিয়ার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দিনের বেলায় একটু কম যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং দেয়। তা ছাড়া রাতে একবার কারেন্ট গেলে সারা রাতে আসার খবর থাকে না। এখন তো মনে হইতেছে সরকারের ঘোষণার আগেই আমরা ভালো ছিলাম।’
সিংগাইরের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭ ঘণ্টাও আমরা কারেন্ট পাই না। সরকার যে ঘোষণা দিছে, তার চেয়ে দুই ঘণ্টা বেশি বিদ্যুৎ না থাকলেও সমস্যা কম হবে। কিন্তু বর্তমানের অবস্থায় আমরা সবাই খুব বিরক্ত হইতেছি।’
মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুর রশিদ মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এক ঘণ্টার মধ্যে থাকতে। কিন্তু নানা কারণে পারছি না। তাছাড়া শহর ও শিল্প কারখানাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’
ব্যাটারিই চার্জ হচ্ছে না মেহেরপুরের গ্রামে
এই জেলায় ২৪ ঘণ্টায় যে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়, তার বেশির ভাগই রাতে হয় বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। গরমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জেও সমস্যা হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক মখলেচ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ভ্যান চার্জ হতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ গত রাতে বিদ্যুৎই ছিল তিন ঘণ্টা। গাড়িতে চার্জ না থাকলে ভাড়া মারব কীভাবে?’
মোবাইল মেরামতকারী দোকানি মো. মামুন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে যারা মোবাইল সারাতে দিয়ে গেছে, তাদের কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। পারব কীভাবে? সারা দিনে বিদ্যুৎ পাচ্ছি তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার রাতের অবস্থা আরও খারাপ।’
গৃহিণী শারমিন আক্তার বলেন, ‘দিনের বেলায় সংসারের কাজ কাজ সারতে গিয়ে সময় শেষ হয়ে যায়। রাতে যে একটু ঘুমাব, তার আর উপাই নাই। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। গত রাতে আধাঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বাচ্চাদের বাতাস করা লাগছে।’
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু রাহান জানান, জেলায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১১৬ মেগাওয়াট। অফপিক আওয়ারে চাহিদা ৭০ মেগাওয়াট। বতর্মানে তারা পাচ্ছেন অর্ধেকেরও কম।
নীলফামারীতে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীন
চাহিদার অর্ধেক পাচ্ছেন নীলফামারীর সাড়ে চার লাখ গ্রাহক। ফলে ২৪ ঘণ্টার অর্ধেক সময়ই থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎহীন।
এই গ্রাহকের মধ্যে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড বা নেসকোর গ্রাহক এক লাখ ৩৬ হাজার এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩ লাখ ১৬ হাজার।
নীলফামারী জেলা শহরের প্রগতি পাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আহমেদ আজিজ শুভ বলেন, ‘শুনেছি এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না। কিন্তু চিত্র পুরোটাই আলাদা। কয়েক দফায় লোডশেডিং হয়েছে এবং বিদ্যুৎ থাকছে না। আমার ব্যবসা বিদ্যুৎ নির্ভর। এভাবে চলতে থাকলে নিঃস্ব হতে হবে।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নীলফামারীর মহাব্যবস্থাপক সুলতান নাছিমুল হক জানান, তাদের ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট।
নোয়াখালীতে লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়
লোডশেডিংয়ের ‘শিডিউল বিপর্যয়ের’ পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের নোখাখালীর কর্মকর্তারা সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারছেন না।
মাইজদী হাউজিং এস্টেট এলাকার ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে রাতে একাধিক বার লোডশেডিং হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। জেলার সব এলাকায় একইভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে।’
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলায় ১৫৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১০০ মেগাওয়াট। ফলে সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম চলছে।’
‘ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে রাঙ্গামাটিতে’
সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর বাসিন্দা সংগীতশিল্পী লক্ষীদেবী চাকমা জানান, ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরুর দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-৯ বার লোডশেডিং হয়েছে।
কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকার এক স্থানীয় সুমন চাকমা বলেন, ‘হুট করে লোডশেডিং হয় আবার ৩-৪ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসে। আবার অনেক সময় একবার বিদ্যুৎ গেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার অধিক সময় লাগে বিদ্যুৎ আসতে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথম প্রথম একটু হিমশিম হতে পারে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য