গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে একবারই, সেটিও মিনিট দুয়েকের জন্য। অন্যদিকে এখান থেকে কিলোমিটার সাতেক দূরে রহিমপুর গ্রামে শুক্রবার রাত ১১টায় বিদ্যুৎ যায়, আসে রাত ৩টায়।
নগুয়া এলাকাটি কিশোরগঞ্জ শহরের এক প্রান্তে। সেখানে বিদ্যুতের এই ভালো অবস্থা জেলা সদরের মানুষের কাছে বিরল নয় মোটেও।
একযুগ আগে দেশে বিদ্যুতের যখন অসহনীয় পরিস্থিতি তখনও কিশোরগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি খারাপ ছিল না অতটা। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার পর সেটির উন্নতি হয় আরও বেশি।
গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়া শুরু করেছে যখন থেকে, তখন থেকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিও কমতে শুরু করে, যেটি আবার ফিরে এসেছে জুনের শেষদিক থেকে। আর গত সপ্তাহে ঘটা করে যখন লোডশেডিং শুরু হয়, তখন কিশোরগঞ্জ শহরের বিপরীত চিত্র দেখা দেয় গ্রামে।
রহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা শাকিল ভুঁইয়া বলেন, ‘দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। যখন তখন কারেন্ট যায়। আর এবার শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি নাই, গ্রামে এত গরম পড়বে, সেটি কল্পনায়ও ছিল না।’
কিশোরগঞ্জ শহরের মতো দেশের সব জেলা সদরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অতটা ভালো নয়। তবে কিশোরগঞ্জে শহর ও গ্রামে যে ব্যবধান, সেটি সব জেলাতেই। শহরে লোডশেডিং যতটা করা হচ্ছে, গ্রামে করা হচ্ছে বহুগুণ।
কুমিল্লার গ্রামে রাতে তিনবার ভোগান্তি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের অধীন উপজেলাগুলোতে প্রতিদিন মুহূর্তে গড়ে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও দিনের বেলা মাত্র তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে পারছি। এক মাস ধরে দিনে তিন থেকে চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছেই।’
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে শিমপুর, কালিরবাজার, জগন্নাথপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা জানান, রাত ৮টা বাজলেই লোডশেডিং শুরু হয়। এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। রাত ১২টায় আবার যায়, এরপর ভোরে আরেকবার। গত চার-পাঁচ দিন ধরে এভাবেই চলছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য বলছে, জেলার চার সমিতির অন্তর্ভুক্ত উপজেলাগুলোয় দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। নিয়মিত ১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পান গ্রামাঞ্চলের লোকজন।
কুমিল্লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন প্রামাণিকের দাবি অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ফিডারের সমস্যার কারণে তা মেরামত করতে হয়। ওই সময় প্রয়োজনেই লোডশেডিং করা লাগে। কুমিল্লায় বেঁধে দেয়া সময়ের বাইরে লোডশেডিং হয় না।’
লক্ষ্মীপুরের চিত্র
লক্ষ্মীপুরে গ্রাম এলাকায় দিন-রাত মিলিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে ৮ থেকে ১০ বার। ঘণ্টার হিসেবে বিদ্যুৎহীন সময় কাটাতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
জেলার পাঁচ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। পিক আউয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে সরবরাহ অনেক কম।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘রাত-দিন মিলে ৪-৫ বার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে কোনো কিছু করার নাই।’
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠেছে। পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’
জেলা বণিক ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকার এলাকাভিত্তিক যে সময় দিয়েছে, সেটা কার্যকর হচ্ছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে জানি না।’
মানিকগঞ্জের গ্রামে বিদ্যুৎ যায় ঘণ্টায় ঘণ্টায়
মানিকগঞ্জে জেলা ও উপজেলা সদরে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে।
লতপুরের জিয়াউল হক বলেন, ‘আগে তো কারেন্ট কম যাইত। কিন্তু সরকারের ঘোষণার পর থেকে কারেন্ট বেশি যায়। বুধবার রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কারেন্ট ছিল। এর পর সকাল থেকে আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। বর্তমানে এমন অবস্থা হইছে, যে আমাদের এলাকায় টানা এক ঘণ্টাও কারেন্ট থাকে না।’
সাটুরিয়ার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দিনের বেলায় একটু কম যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং দেয়। তা ছাড়া রাতে একবার কারেন্ট গেলে সারা রাতে আসার খবর থাকে না। এখন তো মনে হইতেছে সরকারের ঘোষণার আগেই আমরা ভালো ছিলাম।’
সিংগাইরের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭ ঘণ্টাও আমরা কারেন্ট পাই না। সরকার যে ঘোষণা দিছে, তার চেয়ে দুই ঘণ্টা বেশি বিদ্যুৎ না থাকলেও সমস্যা কম হবে। কিন্তু বর্তমানের অবস্থায় আমরা সবাই খুব বিরক্ত হইতেছি।’
মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুর রশিদ মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এক ঘণ্টার মধ্যে থাকতে। কিন্তু নানা কারণে পারছি না। তাছাড়া শহর ও শিল্প কারখানাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’
ব্যাটারিই চার্জ হচ্ছে না মেহেরপুরের গ্রামে
এই জেলায় ২৪ ঘণ্টায় যে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়, তার বেশির ভাগই রাতে হয় বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। গরমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জেও সমস্যা হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক মখলেচ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ভ্যান চার্জ হতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ গত রাতে বিদ্যুৎই ছিল তিন ঘণ্টা। গাড়িতে চার্জ না থাকলে ভাড়া মারব কীভাবে?’
মোবাইল মেরামতকারী দোকানি মো. মামুন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে যারা মোবাইল সারাতে দিয়ে গেছে, তাদের কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। পারব কীভাবে? সারা দিনে বিদ্যুৎ পাচ্ছি তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার রাতের অবস্থা আরও খারাপ।’
গৃহিণী শারমিন আক্তার বলেন, ‘দিনের বেলায় সংসারের কাজ কাজ সারতে গিয়ে সময় শেষ হয়ে যায়। রাতে যে একটু ঘুমাব, তার আর উপাই নাই। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। গত রাতে আধাঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বাচ্চাদের বাতাস করা লাগছে।’
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু রাহান জানান, জেলায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১১৬ মেগাওয়াট। অফপিক আওয়ারে চাহিদা ৭০ মেগাওয়াট। বতর্মানে তারা পাচ্ছেন অর্ধেকেরও কম।
নীলফামারীতে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীন
চাহিদার অর্ধেক পাচ্ছেন নীলফামারীর সাড়ে চার লাখ গ্রাহক। ফলে ২৪ ঘণ্টার অর্ধেক সময়ই থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎহীন।
এই গ্রাহকের মধ্যে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড বা নেসকোর গ্রাহক এক লাখ ৩৬ হাজার এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩ লাখ ১৬ হাজার।
নীলফামারী জেলা শহরের প্রগতি পাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আহমেদ আজিজ শুভ বলেন, ‘শুনেছি এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না। কিন্তু চিত্র পুরোটাই আলাদা। কয়েক দফায় লোডশেডিং হয়েছে এবং বিদ্যুৎ থাকছে না। আমার ব্যবসা বিদ্যুৎ নির্ভর। এভাবে চলতে থাকলে নিঃস্ব হতে হবে।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নীলফামারীর মহাব্যবস্থাপক সুলতান নাছিমুল হক জানান, তাদের ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট।
নোয়াখালীতে লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়
লোডশেডিংয়ের ‘শিডিউল বিপর্যয়ের’ পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের নোখাখালীর কর্মকর্তারা সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারছেন না।
মাইজদী হাউজিং এস্টেট এলাকার ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে রাতে একাধিক বার লোডশেডিং হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। জেলার সব এলাকায় একইভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে।’
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলায় ১৫৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১০০ মেগাওয়াট। ফলে সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম চলছে।’
‘ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে রাঙ্গামাটিতে’
সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর বাসিন্দা সংগীতশিল্পী লক্ষীদেবী চাকমা জানান, ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরুর দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-৯ বার লোডশেডিং হয়েছে।
কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকার এক স্থানীয় সুমন চাকমা বলেন, ‘হুট করে লোডশেডিং হয় আবার ৩-৪ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসে। আবার অনেক সময় একবার বিদ্যুৎ গেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার অধিক সময় লাগে বিদ্যুৎ আসতে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথম প্রথম একটু হিমশিম হতে পারে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় হত্যা মামলার আসামি মোহন আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চকমহাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহন ওই গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহন তার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি মেরামতের জন্য পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া বাজারে যান। ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে বাগাতিপাড়ার চকমহাপুর এলাকায় পৌঁছালে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকা নেয়ার পথে ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, ২০২১ সালে ১১ জুলাই বাগাতিপাড়ার সীমান্তবর্তী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হরিপুরে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র জাকির হোসেন ছুরিকাঘাতে হত্যার শিকার হন। মোহন আলী ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
নিহতের মা হনুফা বেগম জানান, হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তার ছেলে মোহন কারাগারে ছিল। প্রায় চার মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়ে সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে আসার পর থেকেই মোহনকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন জাকিরের স্বজনরা।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাকিরের স্বজনরা মোহনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন হনুফা বেগম। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত মোহনের মামা আয়নাল আলী বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানায় শুক্রবার সকালে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
তীব্র তাপদাহ চলমান থাকা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাটিতে।
অতি তাপে অতিষ্ঠ চুয়াডাঙ্গার লোকজন। জেলার হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
প্রচণ্ড গরমে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্যানচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকি যে তাপ পড়চি মনে হচ্চি যেনে সূর্য মাতার ওপর চলি এসিচে। আজ যেনে সব থেকি বেশি তাপ পড়চি। গা দিয়ি তরতর করি ঘাম ঝরচি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার বিকেল তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আরও কয়েক দিন এমন দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে, তবে এখনই এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো সম্ভবনা নেই।’
হিট অ্যালার্ট
তীব্র দাবদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে হিট এলার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে।
সতর্কতার অংশ হিসেবে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকার একটি হাসপাতালে শুক্রবার সকালে শিবনারায়ণের মৃত্যু হয়, যার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ মোবাইল ফোনে ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করা শিবনারায়ণ দাশের বাবা সতীশচন্দ্র দাশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী ও তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ।
ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন শিবনারায়ণ দাশ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন তিনি।
ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৯৭০ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এ বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।
সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারির দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে নিয়ে আসেন। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হয় পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র।
শিবনারায়ণ দাশ পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকেন লাল বৃত্তের মাঝে। এমনি করে রচিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনীর পতাকা, যা কিছুদিন পর স্বীকৃত হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে।
নাটোরের লালপুরে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে র্যাব।
উপজেলার মোহরকয়া ভাঙ্গাপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তির নাম মিরন ইসলাম।
নাটোর র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ মওদুদ বলেন, ‘মোহরকয়া গ্রামের বুদু মণ্ডলের চাকরিপ্রত্যাশী ছেলেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে মিরন ইসলাম কৌশলে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। তার কথায় বিশ্বাস করে শফিকুল বিভিন্ন সময়ে মিরনকে ১০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা ও অবশিষ্ট চার লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য তার ছেলের নামে নাটোরের লালপুরের উত্তরা ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবের তিনটি ফাঁকা চেক প্রদান করেন।
‘এর পরে মিরন ভুক্তভোগীর ছেলের নামে একটি সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ভর্তির নিয়োগপত্র প্রদান করেন। ভুক্তভোগী সেই নিয়োগপত্র নিয়ে বুদু মন্ডল ছেলেসহ ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই চট্টগ্রামের বায়েজিদ ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে নিয়োগপত্রটি সেখানে একজন সেনাবাহিনীর সদস্যকে দেখান। তখন সেনাবাহিনীর সেই সদস্য জানান, নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এরপর বুদু মন্ডল বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত চেয়ে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী সময়ে র্যাবের কাছে অভিযোগ করলে র্যাব তাকে (মিরন) আটক করে।’
আটককৃত মিরন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে কৌশলে প্রতারণা করি। আমি সেনাবাহিনীর মনোগ্রামসহ সিলমোহর ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করি। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে এইভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিই।’
ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার দুইজন শ্রমিক নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।
পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণশ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্মাণশ্রমিকদের গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর প্রথমে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা করা হয়।
এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ।
খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
তিনি জানান, প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকার অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলে ৪ প্লাটুন বিজিবি পাঠাতে বলা হয়েছে।
ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সমকালকে জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দু বসতি অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণশ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙে ফেলেন তারা। এ সময় বাইরে থেকে কেউ ওই গ্রামে যেতে পারেনি। সেখানে একটি কালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তপতি মন্ডল নামে ওই গ্রামের এক নারী বলেন, ‘আমি বাড়ি গিয়েছিলাম ঘোষি নিতে। তখন ওরা (শ্রমিকরা) রড ওঠানামা করছিল আর নিজেরাই বকাবাজি করছিল। তারপর আমি চিৎকার শুনতে পাই। এগিয়ে গিয়ে দেখি, মা একদম পুড়ে গেছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেল, এই যা। তারপর কী হলো, তা দেখিনি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। পাশাপাশি ফরিদপুর থেকে র্যাব সেখানে পৌঁছেছে। থেমে থেমে সেখানে ফাঁকা গুলির আওয়াজ শোনা গেছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘এখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিলেন। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ওসি ফোর্সসহ এখানে আসে। তাদের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ইউএনও ছিলেন।
‘তারা এখানে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে আমরা ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ এসে তাদেরসহ আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে হাসপাতালে পাঠাই।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ ঘটনায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল মারা হয়েছে। আমরা সারা রাতই পাহারা দিয়েছি। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি স্যার নিজেও সবসময় খবরা-খবর রাখছেন।’
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণশ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে।
রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পঞ্চপল্লী গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সকাল থেকে এখানে বিজিবি মোতায়েনের জন্য চার প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য