গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে একবারই, সেটিও মিনিট দুয়েকের জন্য। অন্যদিকে এখান থেকে কিলোমিটার সাতেক দূরে রহিমপুর গ্রামে শুক্রবার রাত ১১টায় বিদ্যুৎ যায়, আসে রাত ৩টায়।
নগুয়া এলাকাটি কিশোরগঞ্জ শহরের এক প্রান্তে। সেখানে বিদ্যুতের এই ভালো অবস্থা জেলা সদরের মানুষের কাছে বিরল নয় মোটেও।
একযুগ আগে দেশে বিদ্যুতের যখন অসহনীয় পরিস্থিতি তখনও কিশোরগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি খারাপ ছিল না অতটা। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার পর সেটির উন্নতি হয় আরও বেশি।
গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়া শুরু করেছে যখন থেকে, তখন থেকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিও কমতে শুরু করে, যেটি আবার ফিরে এসেছে জুনের শেষদিক থেকে। আর গত সপ্তাহে ঘটা করে যখন লোডশেডিং শুরু হয়, তখন কিশোরগঞ্জ শহরের বিপরীত চিত্র দেখা দেয় গ্রামে।
রহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা শাকিল ভুঁইয়া বলেন, ‘দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। যখন তখন কারেন্ট যায়। আর এবার শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি নাই, গ্রামে এত গরম পড়বে, সেটি কল্পনায়ও ছিল না।’
কিশোরগঞ্জ শহরের মতো দেশের সব জেলা সদরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অতটা ভালো নয়। তবে কিশোরগঞ্জে শহর ও গ্রামে যে ব্যবধান, সেটি সব জেলাতেই। শহরে লোডশেডিং যতটা করা হচ্ছে, গ্রামে করা হচ্ছে বহুগুণ।
কুমিল্লার গ্রামে রাতে তিনবার ভোগান্তি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের অধীন উপজেলাগুলোতে প্রতিদিন মুহূর্তে গড়ে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও দিনের বেলা মাত্র তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে পারছি। এক মাস ধরে দিনে তিন থেকে চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছেই।’
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে শিমপুর, কালিরবাজার, জগন্নাথপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা জানান, রাত ৮টা বাজলেই লোডশেডিং শুরু হয়। এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। রাত ১২টায় আবার যায়, এরপর ভোরে আরেকবার। গত চার-পাঁচ দিন ধরে এভাবেই চলছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য বলছে, জেলার চার সমিতির অন্তর্ভুক্ত উপজেলাগুলোয় দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। নিয়মিত ১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পান গ্রামাঞ্চলের লোকজন।
কুমিল্লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন প্রামাণিকের দাবি অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ফিডারের সমস্যার কারণে তা মেরামত করতে হয়। ওই সময় প্রয়োজনেই লোডশেডিং করা লাগে। কুমিল্লায় বেঁধে দেয়া সময়ের বাইরে লোডশেডিং হয় না।’
লক্ষ্মীপুরের চিত্র
লক্ষ্মীপুরে গ্রাম এলাকায় দিন-রাত মিলিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে ৮ থেকে ১০ বার। ঘণ্টার হিসেবে বিদ্যুৎহীন সময় কাটাতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
জেলার পাঁচ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। পিক আউয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে সরবরাহ অনেক কম।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘রাত-দিন মিলে ৪-৫ বার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে কোনো কিছু করার নাই।’
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠেছে। পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’
জেলা বণিক ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকার এলাকাভিত্তিক যে সময় দিয়েছে, সেটা কার্যকর হচ্ছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে জানি না।’
মানিকগঞ্জের গ্রামে বিদ্যুৎ যায় ঘণ্টায় ঘণ্টায়
মানিকগঞ্জে জেলা ও উপজেলা সদরে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে।
লতপুরের জিয়াউল হক বলেন, ‘আগে তো কারেন্ট কম যাইত। কিন্তু সরকারের ঘোষণার পর থেকে কারেন্ট বেশি যায়। বুধবার রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কারেন্ট ছিল। এর পর সকাল থেকে আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। বর্তমানে এমন অবস্থা হইছে, যে আমাদের এলাকায় টানা এক ঘণ্টাও কারেন্ট থাকে না।’
সাটুরিয়ার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দিনের বেলায় একটু কম যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং দেয়। তা ছাড়া রাতে একবার কারেন্ট গেলে সারা রাতে আসার খবর থাকে না। এখন তো মনে হইতেছে সরকারের ঘোষণার আগেই আমরা ভালো ছিলাম।’
সিংগাইরের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭ ঘণ্টাও আমরা কারেন্ট পাই না। সরকার যে ঘোষণা দিছে, তার চেয়ে দুই ঘণ্টা বেশি বিদ্যুৎ না থাকলেও সমস্যা কম হবে। কিন্তু বর্তমানের অবস্থায় আমরা সবাই খুব বিরক্ত হইতেছি।’
মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুর রশিদ মৃধা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এক ঘণ্টার মধ্যে থাকতে। কিন্তু নানা কারণে পারছি না। তাছাড়া শহর ও শিল্প কারখানাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’
ব্যাটারিই চার্জ হচ্ছে না মেহেরপুরের গ্রামে
এই জেলায় ২৪ ঘণ্টায় যে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়, তার বেশির ভাগই রাতে হয় বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। গরমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জেও সমস্যা হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক মখলেচ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ভ্যান চার্জ হতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ গত রাতে বিদ্যুৎই ছিল তিন ঘণ্টা। গাড়িতে চার্জ না থাকলে ভাড়া মারব কীভাবে?’
মোবাইল মেরামতকারী দোকানি মো. মামুন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে যারা মোবাইল সারাতে দিয়ে গেছে, তাদের কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। পারব কীভাবে? সারা দিনে বিদ্যুৎ পাচ্ছি তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার রাতের অবস্থা আরও খারাপ।’
গৃহিণী শারমিন আক্তার বলেন, ‘দিনের বেলায় সংসারের কাজ কাজ সারতে গিয়ে সময় শেষ হয়ে যায়। রাতে যে একটু ঘুমাব, তার আর উপাই নাই। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। গত রাতে আধাঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বাচ্চাদের বাতাস করা লাগছে।’
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু রাহান জানান, জেলায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১১৬ মেগাওয়াট। অফপিক আওয়ারে চাহিদা ৭০ মেগাওয়াট। বতর্মানে তারা পাচ্ছেন অর্ধেকেরও কম।
নীলফামারীতে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎহীন
চাহিদার অর্ধেক পাচ্ছেন নীলফামারীর সাড়ে চার লাখ গ্রাহক। ফলে ২৪ ঘণ্টার অর্ধেক সময়ই থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎহীন।
এই গ্রাহকের মধ্যে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড বা নেসকোর গ্রাহক এক লাখ ৩৬ হাজার এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩ লাখ ১৬ হাজার।
নীলফামারী জেলা শহরের প্রগতি পাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আহমেদ আজিজ শুভ বলেন, ‘শুনেছি এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না। কিন্তু চিত্র পুরোটাই আলাদা। কয়েক দফায় লোডশেডিং হয়েছে এবং বিদ্যুৎ থাকছে না। আমার ব্যবসা বিদ্যুৎ নির্ভর। এভাবে চলতে থাকলে নিঃস্ব হতে হবে।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নীলফামারীর মহাব্যবস্থাপক সুলতান নাছিমুল হক জানান, তাদের ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট।
নোয়াখালীতে লোডশেডিংয়ে শিডিউল বিপর্যয়
লোডশেডিংয়ের ‘শিডিউল বিপর্যয়ের’ পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের নোখাখালীর কর্মকর্তারা সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারছেন না।
মাইজদী হাউজিং এস্টেট এলাকার ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে রাতে একাধিক বার লোডশেডিং হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। জেলার সব এলাকায় একইভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে।’
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলায় ১৫৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১০০ মেগাওয়াট। ফলে সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম চলছে।’
‘ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে রাঙ্গামাটিতে’
সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর বাসিন্দা সংগীতশিল্পী লক্ষীদেবী চাকমা জানান, ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরুর দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-৯ বার লোডশেডিং হয়েছে।
কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকার এক স্থানীয় সুমন চাকমা বলেন, ‘হুট করে লোডশেডিং হয় আবার ৩-৪ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসে। আবার অনেক সময় একবার বিদ্যুৎ গেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার অধিক সময় লাগে বিদ্যুৎ আসতে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথম প্রথম একটু হিমশিম হতে পারে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য