রাজনৈতিক দল হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণ না করলে এবং জনস্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে দেশের মানুষ বিএনপিকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, ‘জনগণ আশা করে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নেতারা দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড পরিহার করবে। অন্যথায় বাংলাদেশের জনগণ বিএনপিকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত করবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির রাজপথের শক্তি যত ম্লান হচ্ছে, ততই মিডিয়ার সামনে তাদের হুঙ্কার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বারবার নির্বাচনে না আসার মতো শিশুসুলভ বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছি যে, দেশের সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণের ভোটের রায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।
‘কোনো শর্ত দিয়ে নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাক্সবন্দি করার ষড়যন্ত্র ও অগণতান্ত্রিক অশুভ অপশক্তির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রত্যাবর্তন জনগণ মেনে নেবে না।’
বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপির মানসিক দেউলিয়াত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে। আসলে অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পায় বলেই তারা সাংবিধানিক পন্থার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের দিবাস্বপ্নে নিমজ্জিত হয়ে আছে।’
এর আগে শুক্রবার বিকেলে এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া সরকার। এ কারণে বিরোধী দলকে দমনপীড়নের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার ভারত সরকারকে সেসব করার অনুরোধ করার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, আমার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু উগ্রবাদী আছে। আমাদের দেশ সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন না। আপনার দেশেও যেমন দুষ্টু লোক আছে, আমাদের দেশেও আছে। আমার দেশ সারা পৃথিবী থেকে একটা আইসোলেটেড আইল্যান্ড না। এইখানে কিছু দুষ্টু লোক আছে, আপনার দেশে যখন কোনো অসুবিধা হয়, আমরা চুপ করে থাকলেও দুষ্টু লোক খবর পায়।’
‘কিছুদিন আগে তাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু কথা বলেছিলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা বলিনি। এই ধরনের প্রটেকশন আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা যদি একটু বলি, তখন উগ্রবাদীরা আরও সোচ্চার হয়ে আরও বেশি বেশি কথা বলবে। তাতে ক্ষতিটা হবে কী? আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হবে। আমাদের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য আমরা ভারতকে বলেছি, কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনও প্রশ্রয় দেব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল। শেখ হাসিনা আছেন বলে ভারতের যথেষ্ঠ মঙ্গল হচ্ছে। বর্ডারে এক্সট্রা (অতিরিক্ত) খরচ করতে হয় না। প্রায় ২৮ লাখ লোক আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে বেড়াতে যায়। ভারতের কয়েক লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করে। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সুন্দর অবস্থানের কারণে। সুতরাং আমরা উভয়ে এমনভাবে কাজ করব যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। ভারত সরকারকে বলেছি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে যদি আমরা উভয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিই।’
২০২১ সালে কুমিল্লায় পূজামন্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজন নেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘যে বিষয়টি নিয়ে আমার উপরে বক্তব্য রেখেছেন, সেটা তার একবছর আগের। পূজার সময় কুমিল্লায় একটি দেবতার কাছে কোরআন শরীফ রেখে একটা ছবি তোলে। সেটা ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পর কিছু গোষ্ঠী ওখানে আক্রমণ করে। আক্রমণ থামাতে গিয়ে পুলিশ গুলি করে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে এই ঘটনা আমরা জানি, তখনও আমরা কিন্তু কুড়িগ্রামের কাহিনী জানতাম না। তখন আমাদের মন্ত্রণালয় যেসব কথা বলেছে, সত্যি কথা বলেছে। আমি শিক্ষক লোক, সত্য কথা বলি। আমরা বলেছি, তখন পর্যন্ত মোট ছয়জন লোক মারা যায়। তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, চারজন মুসলমান, দুজন হিন্দু। তবে আমরা একজন লোকও মারা যাক সেটা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘এখানে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অনেকে গল্প বলেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি যেটা করেছি, তা বিবেকের তাড়নায় করেছি। কিন্তু এটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, টুইস্ট করে আপনাদের কাছে বলা হয়েছে। আমি বলছি- কোথাও সত্যের অপলাপ হয়নি। জেনেশুনেও আপনারা যদি প্রতিক্রিয়া দেখান, তাহলে এটা তো বড় মুশকিল।’
এসময় উস্কানি না দেওয়ার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী । তিনি বলেন, 'আমরা এমন কাজ করব না, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এমন কোনো উস্কানি দেব না, যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশে কিছু মসজিদ পুড়েছে। আমরা কোনোভাবে সেটা প্রচার করতে দিইনি। এর কারণ হচ্ছে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু জঙ্গি আছে যারা এটার বাহানায় আরও অপকর্ম করবে। আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনো স্টেটমেন্ট দেই না।'
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দুলাল চন্দ্র দে, ঢাকা মহানগরের আহবায়ক এস কে সিকদার ও চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শংকর সেনগুপ্ত।
আরও পড়ুন:গরু পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (সিবিআই) হেফাজতে আছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই।
সুকন্যার বিপুল সম্পদের উৎস জানতে বুধবার ৪ সদস্যের সিবিআই টিম হানা দিয়েছিল বীরভূমের নিচুপট্টির বাড়িতে। দলে একজন নারী তদন্তকারীও ছিলেন। তারা সরাসরি বাড়ির দোতালায় উঠে যান।
সুকন্যার নামে একাধিক সম্পত্তি, কোম্পানি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি দেখিয়ে তদন্তকারীরা জানতে চান তার উৎস। পেশায় শিক্ষিকা সুকন্যা সব শুনে নিশ্চুপ থাকেন। এক পর্যায়ে কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন, মা মারা গেছেন। বাবা সিবিআই হেফাজতে। এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত মানসিক পরিস্থিতি তার নেই।
মানবিক ইস্যু সামনে আসায় মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তদন্তকারী দল কেষ্ট মন্ডলের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এর আগে ‘অসুস্থতার’ অজুহাত তুলে ৯ বার সিবিআই নোটিশ এড়িয়ে যান কেষ্ট। দশমবারে তাকে সুযোগ না দিয়ে সিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করে ১০ দিনের হেফাজতে নিয়েছে।
কেষ্টকে গ্রেপ্তারের পর পরই সুকন্যার বিপুল সম্পত্তির উৎস জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছিল সিবিআই। তিনিও জেরা এড়াতে বাবার পথে হাটেন মানসিক কষ্টের কথা জানিয়ে।
তদন্ত সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, এএনএম অ্যাগ্রোচেন ফুডস এবং নীড় ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল ও তার স্বজনদের নামে। কয়েক কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে।
এদিকে সুকন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে শিক্ষকতা পেশায় তার নিয়োগ বিষয়ে। টেট পাশ না করেই তিনি পেশায় যোগ দেন এবং প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে অবৈধভাবে বেতন তোলেন। তার জন্য হাজিরা খাতা বাড়িতে আনা হতো বলেও অভিযোগ আছে। এসব বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার তাকে হাইকোর্টে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। সুকন্যা সেখানে গেলে অবশ্য বিচারক তাকে চলমান মামলায় হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
অনুব্রত মণ্ডল কেষ্টকে রাখা হয়েছে কলকাতার নিজাম প্যালেসের ১৪ তলায় সিবিআই গেস্ট রুমে। সেখানেই তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
আরও পড়ুন:সুইডেনভিত্তিক এক নিউজপোর্টালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘর’ নামের একটি স্থাপনায় নিয়ে রাখা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সব রাজনৈতিক দলকে এই আয়নাঘর বন্ধে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর চুরমার করে দিতে হবে। পুলিশকে উদ্দেশ করে সব বিরোধী দলকে সমবেত কণ্ঠে বলতে হবে- আপনারা যদি এই আয়নাঘর বন্ধ না করেন তাহলে প্রতিটি পুলিশের বিচার হবে।
‘অথচ আমাদের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি একবারও বলছে না যে ক্ষমতায় গেলে তারা সব আয়নাঘর ভেঙে চুরমার করে দেবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকারদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়াসহ তিন দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে। অন্য দুটি দাবি হলো- সব রাজবন্দিকে মুক্তি দেয়া এবং জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমেরিকা যেমন গুয়ানতানামো বে তৈরি করেছে, তেমনই আওয়ামী সরকার তৈরি করেছে আয়নাঘর। কিন্তু গুয়ানতানামো বে-তে যাদেরকে নেয়া হয়, তাদের তথ্যও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আয়নাঘরের বন্দিদের কোনো হদিস মেলে না। দ্রুত গুমের শিকারদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নিজেও গুমের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যিক ফরহাদ মজহার মুখ খোলেননি। তিনিও গুম হয়েছিলেন। শেখ সাহেবের আমলে আমিও কয়েকদিনের জন্য গুম হয়েছিলাম। সিরাজ শিকদারও গুম হয়েছেন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার করতে হবে। ২০১৪ সালের খেলা আর চলবে না, ১৮ সালের খেলাও চলবে না। এবার ইভিএমের চালাকি চলবে না। একই চালাকি বারে বারে করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ভয় পাবেন না। আপনার প্রতি অন্যায় হবে না। আপনি খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে দেন। দেখেন না মাঠে কী হয়! ছাত্রদের কথা শোনেন। তারা আগামী দিনের ভোর দেখতে পায়।
‘জিঘাংসা, হিংসা-প্রতিহিংসা বাদ দিন। আপনার কোনো লোকের ওপর হাত উঠানো হবে না। আমি নিশ্চিত, আমি আপনার পাশে দাঁড়ালে এরাও দাঁড়াবে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদকে উদ্দেশ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকুক। এই আন্দোলনে জয়ের আশা করছি। আপনারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আপনারাই দেশে শান্তি আনবেন।’
সমাবেশে গুম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকের হাত গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন।
তাদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিলুজ্জামান বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাস থেকে সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে গুমের শিকার হই। প্রথমে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে তুলে আমাকে বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়। রাতভর নির্যাতন করা হতো। তিনদিন পর আমাকে আদালতে তোলা হয়। ওই তিনদিন আমি কোথায় ছিলাম সেটা জানতাম না। সেটা এখনো দুঃস্বপ্নের মতো লাগে।’
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার ওপর চলা পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
গুমের শিকারদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নয়তো ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে আয়নাঘর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’
মিনা আলামিন নামে মোদিবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নেত্রনিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আপনারা যা দেখেছেন তা অনেক কম। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমিসহ কয়েকজন বন্ধুকে গুম করা হয়। সেখানে কী হয় সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি আখতার হোসাইন বলেন, প্রোগ্রামের ঘোষণা করার পরই গতকাল আমার বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রানি করেছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি। আমরা আজ রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি সেসব মানুষের কথা বলার জন্য যারা গুমের শিকার হয়ে ভয়ের কারণে জনপরিসর থেকে হারিয়ে যান। আমরাও যদি কোনোদিন গুম হয়ে যাই, আপনারা কথা বলবেন, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল আলম ভূঁইয়া ও ছাত্র ফেডারেশন নেতা আরমানুল হক।
এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা, ড. তানজিম উদ্দিন খান, ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান, সু্প্রিমকোর্টের আইনজীবী কাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সারা হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি দাবি করেছে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্যথায় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো পরিবেশ নেই।
বুধবার খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা ।
আগের দিন ঢাকা সফর নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা ও আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেও আমরা সরকারকে সব স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে বসে, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো সংলাপ হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকার পদত্যাগ না করবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করবে, সংসদ বিলুপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না।’
খালেদা জিয়া এখন মুক্ত হলেও তার ১৭ বছরের সাজা রয়েছে, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে স্থগিত আছে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর পাঁচ বছরের সাজা হয়। একই বছর উচ্চ আদালত সেই সাজা বাড়িয়ে করে ১০ বছর।
আবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালত অন্য একটি রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সাত বছরের সাজা দেয়। এই সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেও তার মীমাংসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিএনপি।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত হয়। এরপর তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর আরও তিন দফা সাময়িক মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হয়, যেটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে।
‘ম্যাডাম ভালো আছেন’
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, তার আবার হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও হয়নি।
সকাল থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে বিএনপি নেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে যেকোনো সময় হাসপাতালে নেয়া হতে পারে।
ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডাম খুব ভালো আছেন। তার প্রতিটি টেস্টের রিপোর্ট ভালো। টেস্টে কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতাল থেকে সবশেষ বাসায় আসার পর এমন কিছু হয়নি যে এই মুহূর্তে হাসপাতালে যেতে হবে। মূলত হচ্ছে অসুস্থতার মধ্যে তিনি সুস্থ আছেন। আপনারা কোথায় কী শুনেছেন, কীভাবে এটা ছড়ানো হলো বুঝতে পারলাম না।’
‘ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ভয়ংকর’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও জবাব দেন ফখরুল।
‘যে বুলেট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, বেগম জিয়া সেই বুলেট আপনাকেও ছাড়েনি’- সড়কমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা তো ভয়ংকর কথা, এই বুলেটের কথা যদি তিনি বলে থাকেন তাহলে আমার সন্দেহ হয়, আমি জানি না-শুনিনি কিন্তু তাহলে বোঝা যাবে তিনি পুরোপুরিভাবে এই ধরনের একটি চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তারা রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চান, এবং জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত পরিকল্পনা রয়েছে কি না সেই প্রশ্ন নিশ্চয় আসে। এটা তাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। কারণ, তিনি দায়িত্বশীল সরকারের মন্ত্রী, এটা প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। তিনি যদি বলে থাকেন যে আমি এটা বলিনি তাহলে তাকে এটা বলতে হবে। তিনি যদি বলে থাকেন তাহলে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’
মানবাধিকার ইস্যুতে বিএনপি যতগুলো অভিযোগ করেছে সবকিছু রাজনৈতিক বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন ফখরুল। বলেন, ‘তারা তো এ কথা বলবেন, তারা কি এ কথা স্বীকার করবেন? তিনি তো স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি তো টেলিভিশনে দেখলাম তিনি বক্তব্যে বলেছেন, জাতিসংঘের কোনো ক্ষমতা নেই গুম বা অপহরণ হয়ে যাওয়া বিষয়গুলোর বিচার করার। তার মানে এগুলো সংঘটিত হয়েছে এটা স্বীকার করছেন। নেত্রনিউজের প্রতিবেদনে আরও বেশি প্রমাণিত হয়েছে।
‘সরকারকে একটি আলাদা কমিশন গঠন করে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা তদন্ত করার সুপারিশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তাদের দেয়া বিবৃতিতে যা উঠে এসেছে সেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, তার সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত চাই, জড়িতদের বিচার চাই।’
এ সময় বিএনপির মিডিয়া সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মেয়েদের ওয়াশরুমে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত তানজীন আল আলামিন মেয়েদের ওয়াশরুমে প্রবেশের কথা স্বীকার করলেও কাউকে হেনস্তা করা হয়নি বলে দাবি করেছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক তানজীন আল আলামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
অভিযোগ করা ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বুধবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে টিএসসিতে এই ঘটনার শিকার হন বলে দাবি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর পরামর্শে তিনি সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ ইমেইলে পেয়েছেন জানিয়ে ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটি খুব দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের যা করণীয় আমরা সেটি করব।’
ছাত্রী তার অভিযোগে লিখেছেন, ‘গত ১৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ৮টা ২০ মিনিটে আমি টিএসসিতে নারীদের জন্য নির্ধারিত ওয়াশরুম ব্যবহার করছিলাম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজীন আল আলামিন মদ্যপ অবস্থায় নারীদের ওয়াশরুমে ঢোকেন। তিনি একটি টয়লেটের দরজা খোলা রেখে অর্ধনগ্ন হয়ে মূত্রত্যাগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আমার দিকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন।
‘এতে আমি প্রচণ্ড ভীত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। পরে আমি বন্ধুদের নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলতে থাকেন। তিনি ভুল স্বীকার করেননি। বরং তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এমতাবস্থায় আমি হয়রানি ও হুমকির প্রেক্ষিতে অনিরাপদ বোধ করছি এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন শিক্ষার্থী।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে তানজীন আল আমিন বলেন, ‘আমি মেয়েটাকে কোনোভাবে হেনস্তা করিনি। সে সময় আমি প্রাকৃতিক ডাকের চাপে ছিলাম। তাই ভুল করে মেয়েদের ওয়াশরুমে ঢুকে গেছি।
‘ভুল বুঝতে পেরে আমি বের হয়ে পুরুষদের ওয়াশরুমে গেছি। পরে মেয়েটি এবং তার বন্ধুরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাকে এবং তার বন্ধুদের বারবার সরি বলেছি। আমি যখন হলে চলে আসি, তখন তারা আমাকে ফোন করেন। তখনও আমি বারবার সরি বলেছি। এটি মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। এখন আমি মেয়েটির সাথে সরাসরি দেখা করব। তিনি যেভাবে বলবেন, সেভাবে করব আমি।’
মদ্যপ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েটার হয়তো এ রকম মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
আরও পড়ুন:পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রক্ষা করতে না পারার পেছনে রাজনৈতিক ব্যর্থতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অনেককে ফোন করেছিলেন, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক নেতা ছুটে আসেননি বা প্রতিরোধের ডাকও দেননি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ ব্যর্থতার দায় আমাদের চিরদিন বহন করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে কারও তাগিদ ছিল না। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এতগুলো প্রাণ গেল, এতগুলো রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে, রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে মিশেছে কিন্তু কেউ ছুটে আসেনি। যদিও শুধু বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছুটে এসে জীবন দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জিয়া জড়িত না থাকলে বঙ্গবন্ধুকে কেউ হত্যা করার সাহস পেত না।' হত্যাকাণ্ডের আগে একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকে জিয়া উপস্থিত ছিল বলে দাবি করে আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর জিয়া ডালিমকে বলেছিলেন, তুমি খুব ভালো কাজ করেছ।' ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেও বিএনপি হত্যা করতে চেয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তারেক জিয়ার প্রত্যক্ষ মদদে একুশে আগস্টের সমাবেশে গ্রেড হামলা করেছিল যা ওই ঘটনার মূল খলনায়ক মুফতি হান্নান স্বীকার করেছেন।’
ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ফখরুল সাহেব (বিএনপি মহাসচিব) মাঝেমধ্যে কথা বলতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ফেলে দেন। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের রক্তস্রোত আমরা ভুলিনি। আইভি রহমানসহ বহু নেতাকর্মীর রক্ত আমরা ভুলে যাইনি। ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত হামলা চালিয়ে আমাদের নেত্রীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পরে এফবিআইয়ের তদন্তও স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান বলেছিলেন, ‘আমরা হাওয়া ভবনের সিগন্যাল পেয়ে হামলা চালিয়েছি।’
১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের দুটি ঘটনাতেই জিয়া পরিবারের সম্পৃক্ততা আছে বলে মন্তব্য করেন কাদের।
এ দেশে আন্দোলনে জিতলে নির্বাচনেও জেতা যাবে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, কোথায় আন্দোলন? সোনার হরিণ দেখা তো দিল না আজও। আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন কোনোদিনও দেখা দেবে না। এ দেশে আন্দোলনে জিতলে নির্বাচনেও জেতা যাবে। ষড়যন্ত্র করে কাউকে হত্যা করতে পারবেন কিন্তু ক্ষমতায় যেতে পারবেন না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব মাঝে মাঝে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ফেলেন। আমাদের কত চোখের পানি কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে সে হিসাব কি আপনাকে দেব? আন্দোলন করবেন। ব্যর্থ হলে নন্দ ঘোষ আওয়ামী লীগ। ১৩ বছর ধরে কত শুনলাম রোজার ঈদের পরে, কোরবানির ঈদের পরে আন্দোলন। দিন যায়, রাত যায়, পদ্মা সেতুতে কত পানি গড়িয়ে যায়। কিন্তু ফখরুল সাহেবদের আকাঙ্ক্ষিত আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা যায় না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দিল্লি দূরস্ত।’
আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘যে বুলেট শেখ হাসিনাকে শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, সে বুলেট বেগম জিয়া আপনাকেও বিধবা করেছে। বাঁচতে পারেননি। অনেক খুনির ফাঁসি হয়ে গেছে। কারও কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না। কানাডা, আমেরিকা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না। আজকে আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করব খুনিদের ফিরিয়ে দিন। এটা বাংলার মানুষের দাবি। কেন খুনিদের ফেরত দিচ্ছেন না? ৪৭ বছর চলে গেছে। আমাদের এক কথা এক দাবি আমরা খুনি চক্র রাশেদ, নূর, ডালিম এদের ফেরত চাই।’
তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব কষ্ট প্রকাশ করে কী করবেন? শেখ হাসিনাকে আল্লাহ ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি ভাগ্যবতী। আল্লাহ এই দেশে একজনকে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীনতার জন্য, আরেকজনকে করেছেন মুক্তির জন্য। শোককে শক্তিতে পরিণত করে আপসহীন কান্ডারি শেখ হাসিনা। অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন:বাম গণতান্ত্রিক জোটের নতুন সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর শুক্রবার থেকেই জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন প্রিন্স।
প্রিন্স নিউজবাংলাকে জানান, সাধারণত তিন মাস পর জোটের সমন্বয়ক নির্বাচিত হন।
তিনি বলেন, ‘প্রতি তিন মাস পর জোটভুক্ত দলগুলো থেকে নতুন সমন্বয়ক নির্বাচন করা হয়। কোনো কোনোবার তা কিছুদিন দেরিও হয়।’
গত ১ মে থেকে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জোটভুক্ত দলগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য