শ্রমবাজার গতিশীল করতে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার তিন হাজার শ্রমিক বৈধ উপায়ে ইতালি যেতে পারবে। ভবিষ্যতে এই কোটা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তনে মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহিত করতে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত।
এ সময় এনরিকো বলেন, ‘২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালি সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতালিতে নির্দিষ্ট মৌসুমে এবং অন্যান্য সময়ে শ্রমিক পাঠানোর কোটাভিত্তিক সুবিধা লাভ করে। এরপর গত দুই বছরে ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক বৈধ উপায়ে ইতালিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে আরও তিন হাজার বাংলাদেশি বৈধ ভিসা পেতে যাচ্ছে। এখন থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ইতালি যাওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে।’
এ ছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক পথে বিদেশ যাওয়া সবার জন্য উদ্বেগজনক উল্লেখ করে মানব পাচার রোধে জনসেচতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন এনরিকো।
২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পথে ২১ হাজার ৮৪৮ অনিয়মিত অভিবাসী ইতালিতে প্রবেশ করে, যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
আরও জানা গেছে, ২০২২ সালে ১৪ হাজার ৭৫৮ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমায়। এর মধ্যে ইতালিতে প্রবেশ করে ৬ হাজার ৫৫৭ জন, আর গ্রিসে পৌছাঁয় ৫ হাজার ৭০ জন; যা গত বছরের তুলনায় ১৫৩ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া ২০২২ সালে ইতালিতে মোট ২৮ হাজার ৫০৪ জন বাংলাদেশি অনিয়মিত অভিবাসী নিবন্ধন করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিসরীয়রা।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
সভায় বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বিদেশ নেয়ার কথা বলে কোনো দালাল যেন কোনো সহজ-সরল, নিরীহ মানুষকে প্রলুব্ধ করে মৃত্যুর ফাঁদে নিক্ষেপ না করতে পারে সে জন্য সবার সহযোগিতা চাই। যারা প্রতারিত হচ্ছে তারা আপনার আমার ভাই, বন্ধু ও পরিবারের লোক। তারা আপনার সন্তানও হতে পারে। সবাই এগিয়ে আসুন আমরা হাতে হাত মিলিয়ে এই অঞ্চল থেকে এই অনিরাপদ অভিবাসন চিরতরে নির্মূল করি।’
মতবিনিয়ম সভায় শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকার দালালের মাধ্যমে প্রতারিতরা ছাড়াও জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। জুলাই মাসের পর আগস্ট মাসেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের পালে জোর হাওয়া লেগেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের ৭ দিনেই ৫৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার বা ৭৪৬ কোটি টাকা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকার বেশি দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
মাসের বাকি ২৪ দিনেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে- এমন আশার কথা শুনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুলাই মাসের মতো আগস্ট মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ১২ শতাংশ।
প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের আগস্ট মাসের ৭ দিনে (১ থেকে ৭ আগস্ট) ৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত (১ মাস ৭ দিনে) ২৬৪ কোটি ৭০ লাখ (২.৬৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ২২৪ কোটি ৩০ লাখ (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ওলটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে কয়েক দিন আগে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ-হতাশা এবং আগামী দিনগুলোতে কী হবে? এই প্রশ্ন সবার মধ্যে তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কথা। ভরা করোনা মহামারির মধ্যেও ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
‘মহামারির মধ্যে ওই সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন প্রবাসীরা’ এই মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। চলতি জুলাইয়ের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এই অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ২১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে প্রতিদিন ৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার করে পাঠিয়েছেন তারা; টাকার হিসাবে প্রতিদিন দেশে এসেছিল ৬৪০ কোটি টাকা।
এখন তার চেয়েও বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
গত বছরের জুলাই মাসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২০-২১ অর্থবছরে। সে সময় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৭৯ ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছিল।
এসব হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং এই অর্থবছরে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ লোক কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই ইতিবাচক ধারা পুরো অর্থবছর জুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।’
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে; ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরেও অব্যাহত আছে।
দেশে গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নামে। ঈদের ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরে ২১ দিনে এসেছে ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
ঈদের পরেও কেন রেমিট্যান্স বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকা পর্যন্ত দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে।
সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১১০ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর প্রায় একই। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।
রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি কারণের কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন।
‘দেশে ডলারের সংকট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালচাল নিয়ে তৈরি করা পাক্ষিক প্রতিবেদনেও রেমিট্যান্স নিয়ে সুসংবাদের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ২১ জুলাই প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সব প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরেছেন। টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।
‘এই বিষয়গুলো আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।
আরও পড়ুন:প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জেরে নিজের দুই বছরের সন্তানকে নির্যাতন ও এর ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে পারভীন আক্তার নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। ওই ভিডিও পরে স্বামীকে পাঠান পারভীন।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় হওয়া ওই নির্যাতনের ভিডিওটি পরে ফেসবুকেও ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল ভিডিও দেখে মঙ্গলবার গভীর রাতে নির্যাতিত ওই শিশুকে উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ। পরে শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মা-সহ ওই শিশুকে আদালতের হেফাজতে পাঠানো হয়।
বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি মডেল থানার ওসি আব্দুল মান্নান।
ওসি জানান, তিন বছর আগে উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের নূরুল আমিনের মেয়ে পারভীন আক্তারের বিয়ে হয় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের প্রবাসী মহিনউদ্দিনের সঙ্গে। তাদের সংসারে ফাহাদ নামে ২ বছরের একটি শিশুপুত্রও রয়েছে।
বিয়ের মাত্র ১ বছরের মধ্যেই প্রবাসী মহিনউদ্দিনের সঙ্গে পারভীনের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এ অবস্থায় পারভীন আক্তার বাবার বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
এ ছাড়া লিগ্যাল এইড চাঁদপুর কার্যালয়ে আবেদন করলে পারভীনকে ভরণপোষণ বাবদ মহিনউদ্দিন প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা দেবেন- এমন সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মহিনউদ্দিন ঠিকমতো টাকা না দিতে পারায় সম্প্রতি পারভীন তাদের ২ বছরের শিশুপুত্র ফাহাদকে নির্যাতন করে ও এর ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠান।
শিশুটির পিতা ওই ভিডিও দেখে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন মানুষকে অনুরোধ করতে থাকেন।
ইতোমধ্যে সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরেও আসে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার গভীর রাতে ওসি আব্দুল মান্নান সহ শাহরাস্তির ইউএনও হুমায়ুন রশিদ ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে সঙ্গে নিয়ে শিশুটির নানার বাড়িতে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন তারা।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিও দেখে রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের আয়াজনে পূর্ব লন্ডনের ভ্যালেনটাইনস পার্কে হয়ে গেল ঈদ পুনর্মিলনী উৎসব।
মুজিববর্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে দ্বৈত শতবার্ষিকী নামের তিন মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন করা হয়।
গত শনিবার বেলুন ছেড়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।
ইসমাইল হোসেনের সঞ্চালনায় অ্যাডভাইজার এস বি ফারুক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব, প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি প্রশান্ত দও পুরকায়স্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
এরপর একে একে হয় নারী ও পুরুষদের পিলো পাসিং এবং মিউজিক্যাল চেয়ার, শিশুদের ১০০ মিটার দৌড় ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক সম্পাদীকা রিপা রাকীবের পরিচালনায় গান পরিবেশন করেন রিপা রাকিব, নাদীয়া লোদী, কাজী কল্পনা, তামান্না, মারুফ চৌধুরী এবং ইসমাইল হোসেন।
জমজমাট এই অনুষ্ঠানে সদস্যদের নিজেদের হাতে তৈরি পিঠা, পুলি, সেমাই, জর্দা, মিষ্টি, পায়েস, সমুচা ও সন্ধ্যায় পরিবেশন করা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি। সঙ্গে ছিল সামি কাবাব, ডিম, সালাদ, আর সফট ড্রিংকস।
অনুষ্ঠান আয়োজনে সমন্বয়কারী দলের সদস্য সৈয়দ এনাম, নিলুফা হাসান, ব্যারিস্টার এম কিউ হাসান, এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা এবং অন্যরা এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তার হাত বাড়ান।
কর্মী হিসেবে মালয়েশিয়ায় যেতে একজন বাংলাদেশির সর্বোচ্চ খরচ হবে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। আকাশপথে মালয়েশিয়ায় ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বহন করবে ওই কর্মীকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বুধবার এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ারের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘একজন মালয়েশিয়াগামী কর্মীর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে সকল ব্যয় হবে তা সংশ্লিষ্ট কর্মীকে বহন করতে হবে।’
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ অংশে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবন্ধন ফি, কল্যাণ ফি, বীমা, ইন্স্যুরেন্স, স্মার্ট কার্ড ফি, প্রাক-বহির্গমন ফি, পোশাক পরিচ্ছদ, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্টের সার্ভিস চার্জ ও বিবিধ যেসব ক্ষেত্রে একজন কর্মীকে বিভিন্ন ব্যয় বহন করতে হবে।
আর এসব খরচ বিবেচনায় নিয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানে গমণে ইচ্ছুক একজন কর্মীর সর্বোচ্চ খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা অনুযায়ী, বিমানভাড়া, মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’, বিমা, মালয়েশিয়ায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইমিগ্রেশন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স, করোনারভাইরাস পরীক্ষাসহ ১৫টি খাতের ব্যয় সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও অফিস আদেশে উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন:মালদ্বীপে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাই দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার অনুরোধ জানিয়েছে মালেতে বাংলাদেশে হাইকমিশন।
বৃহস্পতিবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন।
এতে বলা হয়, মালদ্বীপে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি) আওতায় বৈধকরণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে।
যাদের বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট নেই তাদেরকে দ্রুততার সঙ্গে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে বৈধভাবে কাজ শুরু করারও অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈধকরণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছে, সেই প্রতিষ্ঠান মালিককে ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রিতে আবেদন করতে হবে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সব প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন।
আরও পড়ুন:শিগগিরই ৩২০ দক্ষ বাংলাদেশি রোমানিয়া যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী।
সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় রাষ্ট্রদূত জানান, তিনি ২৬ জুন রোমানিয়ার সোনোমা স্পোর্টসওয়্যার কারখানা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে যাচ্ছেন ৩২০ বাংলাদেশি কর্মী।
একই দিন রোমানিয়ার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বাকাউ) প্রেসিডেন্ট ডরু সিমোভিচির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি।
সোনোমা স্পোর্টসওয়্যার কারখানা পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আন্তোনেলা গাম্বা রাষ্ট্রদূত দাউদ আলীকে বলেন, তার কোম্পানি এরই মধ্যে আলাদা পোশাক কারখানা চালানোর জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন অপারেটর, কাটিং মাস্টার, ম্যানেজারসহ বিভিন্ন খাতে ৩২০ বাংলাদেশি দক্ষ পোশাককর্মীকে বেছে নিয়েছে।
দাউদ আলী জানান, আন্তোনেলা তার পোশাক কারখানার জন্য আরও ১২০ জন এবং জুতার কারখানার জন্য ২০০ বাংলাদেশি কর্মী নেবেন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে এবং শ্রমিকরা তার কারখানা ছেড়ে ইউরোপের অন্য দেশে না যান, তাহলে তিনি নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য আরও ১ হাজার বাংলাদেশিকে নিয়োগ দেবেন।
মাইগ্রেশন খরচ কমানোর জন্য কোনো এজেন্টকে যুক্ত না করে এটি সরাসরি সরকারি মাধ্যমে সম্পন্ন করা প্রয়োজন বলেও জানান আন্তোনেলা।
রাষ্ট্রদূতকে তিনি জানান, অভিবাসন ব্যয় কমাতে শুধু বিমানের টিকিট এবং ভিসা ফি দিতে হবে বাংলাদেশি কর্মীদের।
ওই সময় রাষ্ট্রদূত আন্তোনেলাকে কর্মীদের এয়ার টিকিট দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। বিষয়টি তিনি বিবেচনায় রাখার কথা জানিয়েছেন।
বার্তায় দাউদ আলী আরও জানান, তিনি রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টের কাছে জুতার কারখানাও পরিদর্শন করেন, যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করছেন।
ওই কারখানার মালিকও বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নেয়ার বিষয়ে তার আগ্রহের কথা রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য