করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্ব যখন সংকটের মুখে, তখন দেশ ও জাতির কথা ভেবে বিএনপি কোনো দায়িত্বশীল আচরণ করছে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বরং দলটি জাতির ঐক্যের দুর্গে হানা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তার।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার এক বিবৃতিতে কাদের এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উসকানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়েছেন কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করোনা মহামারির অভিঘাতের মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সারা বিশ্বকে এক সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব রাজনৈতিক দল দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপি নামের রাজনৈতিক অপশক্তিটির কাছ থেকে জাতি কখনও দায়িত্বশীল কোনো আচরণ পায়নি।
‘বরং তারা সব সময়ই সংকটময় মুহূর্তে জাতির ঐক্যের দুর্গে হানা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করে।’
বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে বলেও দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘ঠিক যেমনটি করোনাকালেও ছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় যেসব রিপোর্ট উঠে এসেছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান যথেষ্ট ভালো।’
এই কৃতিত্বের পুরোটাই তিনি দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়, তখনও সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের ওপর সেই মন্দার প্রভাব পড়েনি। শেখ হাসিনা মানেই সংকটকে সম্ভাবনায় রূপদানের নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা মানেই দুর্যোগে সুযোগ সৃষ্টির কারিগর।’
বিপরীতে সংকট মোকাবিলায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসকে নস্যাৎ করতে বিএনপি নেতারা প্রতিনিয়ত নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছে বলেও জানান কাদের।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে আস্থায় রাখতে না পেরে বিএনপি একটি হতাশাবাদী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাই বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রতিনিয়ত নিরাশার গল্প শুনিয়ে জাতির সঙ্গে তামাশা করছে। তারা খুব সচেতনভাবেই এটি করছে যাতে করে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে; সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়।’
পাশাপাশি তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরির পাঁয়তারা করছে বলেও দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টায় শান্তিপ্রিয় মানুষকে আত্মঘাতী করে তোলার মতো দূরভিসন্ধি বিএনপির অর্বাচীন রাজনীতির পরিচায়ক।’
বিএনপি নেতারা কথায় কথায় বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে দেশের জনগণের আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করতে চায় বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা।
কাদের বলেন, ‘তারা দেশের স্বপ্নবান জনগোষ্ঠীর সামনে বিভ্রান্তির ধোঁয়া ছড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। অথচ সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন, দুই দেশের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিই ভিন্ন। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে সমান্তরালে রেখে তুলনা করার কোনো সুযোগ নেই।’
বিবৃতিতে উঠে এসেছে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটিও। এ বিষয়ে কাদের বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে জনগণের ওপর চাপ বাড়ে এ কথা সত্য। সেদিক বিবেচনায় রেখে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
‘তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার সেই মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করে ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখে।’
নির্বাচনের সময় এলেই বিএনপি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে বলেও মন্তব্য করতে ছাড়েননি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
কাদের বলেন, ‘নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় বিএনপি। তাদের বোঝা উচিত জনগণের জন্য কিছু না করে শুধু বাগাড়ম্বর বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতায় আসীন হওয়া যায় না।
‘বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই নিজেদের স্বার্থ হাসিলে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার জন্যও তারা জনগণের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারছে না। তাই বিএনপি নেতৃবৃন্দ জাতির সামনে বিভ্রান্তিকর বক্তৃতা ও বিবৃতি প্রদান করে চলেছে।’
জনগণের আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করা কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হতে পারে না বলে মনে করেন কাদের।
তাই বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘সামনের সংকট মোকাবিলার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার না করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করুন। তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে।’
আরও পড়ুন:খুলনা মহানগর বিএনপির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মিসভায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন এই হামলা করেছে।
নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় বুধবার রাত ৮টার দিকে এই হামলা হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী আহত এবং ৩০টি মোটরসাইকেল ও শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিলটন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সমাবেশ শুরুর পর পরই মহানগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে কয়েকশ যুবলীগ-ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ কর্মী মিছিল-স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তাদের বেশির ভাগই ছিল হেলমেট পরা, হাতে লোহার রড, লাঠি ও বাঁশ। এসেই তারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলে পড়ে।
‘তাদের লাঠিচার্জ, লোহার রডের আঘাতে শতাধিক কর্মী আহত হন। হামলাকারীদের অনেকেই কর্মিসভা লক্ষ্য করে বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল ও পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করে। তারা সভার মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ও মাইক ভেঙে ফেলে।’
মিলটন জানান, সভায় ভাঙচুরের পর ওই দলটি রাস্তায় রাখা মোটরসাইকেল, এমনকি দোকানপাটও ভাঙচুর করে। হামলার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে হামলাকারীরা আশপাশের এলাকায় মিছিল করে। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়।
আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এই নেতা।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে ওই এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা হয়নি।’
এদিকে রাত ১০টার দিকে খুলনা মহানগর যুবলীগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নগর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা ও মিছিল হয়। কর্মসূচি শেষে নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় তাদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা গিয়ে নিজেদের সভার চেয়ার ভাঙচুর করে।
আরও পড়ুন:নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলে বিএনপি সন্ত্রাস ও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বিএনপি ও তার মিত্রদের মোকাবেলায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।
সমাবেশে বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগুন-সন্ত্রাস ও বোমাবাজি করে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। খেলা হবে- আন্দোলনে, রাজপথে। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হোন।’
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে রাজপথ থেকে, বন্দুকের নল থেকে নয়। দ্রুতই আওয়ামী লীগ রাজপথে নামবে। নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রস্তুত হোন। আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনার দেশ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০০৬ সালের সঙ্গে ২০২২ সালের তুলনা করেন। কিসের সাথে কী মেলাচ্ছেন?’
মির্জা ফখরুল দুইদিন ধরে মিথ্যা বলছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘গুম-খুন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে বিএনপি যে নালিশ করেছে তার তদন্ত করার এখতিয়ার জাতিসংঘের নেই।
‘বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি৷ তাদের কাজই হলো বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করা। তারা সন্ধ্যার পর দূতাবাসগুলোতে ধরনা দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু বিএনপি দেশের উন্নয়ন চায় না। সারাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায় বলেই তারা উন্নয়নের বিরোধিতা করছে, আগুন-সন্ত্রাস ও নাশকতা করেছে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আসতে হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। তাই ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আজ লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজপথে নেমে এসেছে। যেকোনো মূল্যে উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। আর যারা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের সমূলে উৎপাটন করা হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সেটি মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন:বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমীতে সরকারি ছুটির আগের দিন রাজধানীতে চলাচলে দুঃসহ অবস্থা। দুপুরের পর থেকে প্রধান সড়কগুলোতে ঠায় দাঁড়িয়ে যানবাহন। কোনো রুটে আবার গাড়ির অভাবে দীর্ঘ অপেক্ষা যাত্রীদের। এর কারণ, সেই রুট দিয়ে আসতে পারছে না আটকে থাকা গাড়ি।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির আগে এক দিন বাড়তি ছুটির কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়নি। এটি তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচিকে ঘিরে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে একযোগে বোমা হামলার স্মরণে আওয়ামী লীগের প্রতি বছরের কর্মসূচির সঙ্গে এবারের কর্মসূচির পার্থক্য আছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্ষমতাসীন দল আরও বেশি কর্মী-সমর্থকদের জড়ো করতে চাইছে। কেবল ঢাকা নয়, দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা শহর, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়নেও একই ধরনের জমায়েতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে লোকসমাগম।
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়েছেন রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে। বিকেল ৪টায় জমায়েত হওয়ার কথা থাকলেও আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। ফলে কার্যত দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সড়ক অচল হয়ে যায় মিছিলে মিছিলে। আর এর প্রভাবে তৈরি হয় দুঃসহ যানজট।
আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি মূলত ছয় দিন আগে বিএনপির বড় একটি জমায়েতের জবাব। সেদিনও ছিল কর্মদিবস। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির আগে সেদিন নয়াপল্টনের সড়কে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন মিছিল করে। সেদিনও নয়াপল্টন, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত রয়ে যায় এর রেশ।
জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগেই নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। রাজপথে বাড়ছে কর্মসূচি। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্মসূচিগুলো পালিত হচ্ছে কর্মদিবসে সড়ক বন্ধ রেখে।
বড় ধরনের কর্মসূচিগুলো ছুটির দিনে করা যায় কি না, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার দাবি করছেন নগরবাসী।
ক্ষমতাসীন দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তাদের আপত্তি নেই। তবে এ জন্য সব দলের ঐকমত্য জরুরি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন আহমেদ প্রিন্স মনে করেন, সরকার জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে না। এখন এসব নিয়মনীতি অলীক কল্পনা।
রাজপথে কর্মসূচি বাড়ছে
গত ৪ আগস্ট নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল নেতা নুরে আলমের জানাজা পড়ে বিএনপি। পরে সেখানে হয় সমাবেশ।
দুই দিন পর একই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। এই কর্মসূচি পালনেরও কারণও ভোলায় সংঘর্ষে দলের দুই কর্মীর মৃত্যু।
ভোলার সেই ঘটনায় ৮ আগস্ট একই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল।
এর তিন দিন পর ১১ আগস্ট সেই সড়কে দুপুরের পর থেকে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সমাবেশ করে বিএনপি।
একই দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় নতুন রাজনৈতিক জোট গণতান্ত্রিক মঞ্চ।
এর পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনের সমাবেশ হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। সেদিনও যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে কয়েক ঘণ্টা।
১৬ আগস্ট জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে মিছিল করে গণতান্ত্রিক বাম জোট। সেটি শাহবাগে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এই কর্মসূচি ঘিরেও কয়েক ঘণ্টা ব্যস্ত এ সড়ক স্থবির হয়ে থাকে।
পরদিন নগরবাসীর দুর্ভোগ হয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কারণে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বলতে গেলে স্থবির হয়ে থাকে নগরীর একটি বড় অংশ।
আগামী ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস
বুধবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচির দিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরীফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে সারা ঢাকা সিটির লোককে হাঁটতে হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের কারণে বেলা ৩টার দিকে যে অবস্থা এই ভোগান্তি রাত পর্যন্ত থাকবে। প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর আরও ভয়াবহ হয়েছে।
‘আমি শাহবাগ যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলাম। তবে জ্যাম দেখে বাস থেকে নেমে হেঁটে যাই। অনেকেই বাচ্চা নিয়ে গরমে ঘামতে ঘামতে যাচ্ছে। ঘামে ভিজতেছে, কষ্ট করছে।’
তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা তাসিন মল্লিক বলেন, ‘ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। একটার পর একটা মিছিল যাচ্ছে। সব বাস থমকে দাঁড়িয়ে। মানুষ সব হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব প্রোগ্রাম এমন দিনে হওয়া উচিত, যেদিন ছুটি থাকে অথবা এমন জায়গায় হোক যে জায়গাগুলো উন্মুক্ত।’
রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব আছে বলেও মনে করেন তাসিন। বলেন, ‘নেতাদের মধ্যে এই বোধ আছে কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভাবান্তর নেই
তীব্র যানজটের মধ্যে কর্মদিবসে রাজপথে কর্মসূচিতে জনভোগান্তির বিষয়টি নজরে আনলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে জনদুর্ভোগ এড়াতে হলে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য প্রয়োজন।’
ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের দায়দায়িত্ব তো বেশি- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কাজ করছে। জনদুর্ভোগের কর্মসূচি আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। তবে দিবসভিত্তিক কর্মসূচিগুলো রুটিন ওয়ার্ক।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সভা, সমাবেশ, মিছিল এগুলো সাংবিধানিক অধিকার।’
তবে তার মতে, তাদের কর্মসূচিতে জনগণ খুশি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক রাস্তার ওপরে হওয়ায় কিছুটা ট্র্যাফিক সমস্যা হয়েছে। তবে এতদিন পর বিরোধী দলের বড় সমাবেশের উপস্থিতি দেখে জনগণের ভোগান্তি নয়, তারা খুশি হয়েছে।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না দেয়াকেও সড়কে কর্মসূচি পালনের একটি কারণ হিসেবে দেখান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘নানা রকম স্থাপনা বানিয়ে সেটা অনুপযোগী করে ফেলা হচ্ছে।’
তাহলে সমাধান কী- জানতে চাইলে যেদিন বিএনপির কর্মসূচি থাকে, সেদিন সেসব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প রাস্তায় দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন ফখরুল।
সেই সঙ্গে সরকারকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সমাবেশের উপযোগী করে তোলার কথা বলেছেন।
জনগণের ‘অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে’ নতুন যে জোট গঠন হয়েছে, সেই গণতন্ত্র মঞ্চের সবচেয়ে প্রবীণ নেতা আ স ম আবদুর রবের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তার জবাব আসেনি।
সড়ক আটকে কর্মসূচি পালন করায় জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে প্রশ্ন শুনে তিনি তার রাজনৈতিক সচিব শহীদুল্লাহ ফরায়েজীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
তবে ফরায়েজী প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘এটা তো খুব কঠিন প্রশ্ন। আপনি আপনার ই-মেইল আইডি দেন। আমি উত্তর পাঠিয়ে দেব।’
তবে ই-মেইল করা হলেও প্রশ্নের জবাব আসেনি। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাতে সাড়া দেননি।
একই প্রশ্নে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দায় দেন সরকারকে। তিনি বলেন, ‘সরকার যখন নায্য আচরণ করে, তখন দায়িত্বশীল সংগঠনগুলো এগুলো মেনে চলে। তবে সরকার যখন নায্য আচরণ করতে পারে না, তখন এসব নিয়মনীতি মানার প্রশ্ন ওঠে না।’
তিনি বরং রাজপথে কর্মসূচি আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘জনগণকে আমি আহ্বান জানাব, তারা যে দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে অর্থাৎ মানুষের যে সংকট, তা সমাধানে প্রতিবাদী হয়ে উঠুক। যে যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। একের পর এক মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যেতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এতে অফিসফেরত মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে সমাবেশ ও মিছিল করে আওয়ামী লীগ।
সমাবেশের মঞ্চ করা হয় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়কের পাশে। সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
এ ছাড়া সমাবেশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।
বিক্ষোভের আগে সমাবেশে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর হাতে ছিল কালো পতাকা। এ সময় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়কে দলের নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে বেলা ৩টার দিকেই শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাবের সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই পথে সাধারণ মানুষকে হেঁটে চলাচল করতে হয়েছে।
সমাবেশের কারণে কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবনের সড়কও বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে গুলিস্তান থেকে ধানমন্ডিগামী যানগুলোকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে ঘুরে যেতে হয়েছে।
শাহবাগ থেকে গুলিস্তান যেতে বাসে উঠেছিলেন যাত্রী আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু যানজটে বসে থেকে একসময় হেঁটেই রওনা হন তিনি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাধ্য হয়ে এত রাস্তা হেঁটে যেতে শুরু করেছি। আসলে এসব বিষয় নিয়ে এখন আর কিছুই বলার নেই আমাদের।’
তিনি জানান, গুলিস্তান থেকে দোহার যাবেন তিনি, জরুরি কাজ থাকায় হাঁটতেই হচ্ছে।
সমাবেশ চলাকালে কাকরাইল মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক আবদুর রশিদের সঙ্গে। তিনি মালিবাগ থেকে যাত্রী নিয়ে যাবেন চকবাজার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মালিবাগ থেকে কাকরাইল মোড়ে আসতে যানজটের কারণে ১ ঘণ্টা লেগেছে। এত সময়ে চকবাজার চলে যেতে পারতাম। কিন্তু এখনও কাকরাইলে পড়ে আছি।’
মালিবাগ থেকে রিকশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি যাবেন সরকার মাসুদ। তিনিও জানান, তীব্র যানজটে পড়তে হয়েছে তাকে। যার কারণে তার ১ ঘণ্টা লেগেছে। যানজটে অনেক ভোগান্তি হয়েছে।
মালিবাগ, মগবাজার ও বাড্ডা এলাকায় গাড়ি না থাকায় সড়কের পাশে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। যে কয়েকটি গাড়ি চলেছে, সেগুলোতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের মিছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় পল্টন এলাকায় ভোগান্তিতে পড়েন অফিসফেরত সাধারণ মানুষ। অনেককে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলেসহ বিএনপির একটি দল ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা মানবাধিকার বিষয়ে নানা অভিযোগ জাতিসংঘের দলটিকে জানিয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই বৈঠক হয়।
তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি কোনো পক্ষ। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘের দল এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলবে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং ইলিয়াস আলীর ছেলে ও মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবরার ইলিয়াস।
আর জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রোরি মআংগোভেন।
২০১০ সালে ইলিয়াস আলী ঢাকার বনানী থেকে নিখোঁজ হন। বিএনপির অভিযোগ, সরকারি সংস্থা তাকে তুলে নিয়েছে। তবে সরকারের কোনো বাহিনী এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। আবার এক যুগেও বিএনপি নেতাকে উদ্ধার করা যায়নি।
বৈঠক শেষে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিনিধি দল চার দিন যাবৎ ঢাকায় সফর করছে। অনেকের সঙ্গে কথা বলছে তারা। আমাদের সঙ্গেও কথা বলেছে।
‘বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা কোনো ফিডব্যাক দেয়নি আমাদের। তারা প্রেস কনফারেন্স করে জানাবে।’
বিএনপির আগ্রহে এই বৈঠক হয়েছে নাকি জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের আগ্রহে বসেছেন- জানতে চাইলে শামা বলেন, ‘ওনাদের আগ্রহ আছে বলেই তো বৈঠক হয়েছে।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিএনপি কীভাবে দেখে জানতে চাইলে দলটির নেত্রী বলেন, ‘এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মানবাধিকার পরিস্থিতি যেভাবে দেখে, বিএনপিও সেভাবে দেখে।’
আরও পড়ুন:দেশ এখন খাদের কিনারে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি এও অনুমান করেছেন যে, দেশ ভয়াবহ সংকটের দিকে যাচ্ছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বদিউল বলেন, ‘আমরা সংকটের মধ্যে আছি। আরও ভয়াবহ সংকটের দিকে যাব। আমরা খাদের কিনারায় এসে গিয়েছি, জানি না এর পরিণতি কী হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন চলছে ভাই ব্রাদার তন্ত্র। সেই সঙ্গে আছে মতলববাজির উন্নয়ন। যার মধ্যে আমরা নিপতিত হয়েছি।’
তার সংগঠন আরও কয়েকটা গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কী হয়েছিল, সেটি তুলে ধরবেন বলেও জানান বদিউল।
আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটা আকস্মিক বা হঠাৎ করেই হয়েছে এমন নয়। এটা তৈরি করার মতোই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।
‘এই পরিস্থিতিতে একটা গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে। সরকার বা প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিদ্যুৎ খাতে আমাদের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এখনও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, সামনেও ভর্তুকি দিতে হবে। সুতরাং আমাদের বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেছেন, ‘ওপর মহল কিংবা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে অনেকেই বলেন, দেশে গ্যাস নেই কিংবা যা আছে তা উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট না। আমদানি করেই চলতে হবে। জনগণের সামনে এসব কথা বলার আগে আমাদের আরেকটু দায়িত্বশীল হতে হবে।
‘সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই বলেন, মিয়ানমার গত ১০ বছরে গ্যাস পায়নি, যা পাওয়ার অনেক আগে পেয়েছে। কিন্তু এ কথা অসত্য। মিয়ানমার দুই তিন বছর আগেও গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জ্বালানির যে সংকটে আমরা আছি, সেই সংকট আমাদের অনিবার্য ছিল না। এটা অনিবার্য করে তোলা হয়েছে।
‘সরকারের লুটপাট ও ক্ষমতাবানদের খুশি করার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জ্বালানি খাতে আমাদের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। অনুকূল পরিবেশে টিকে থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে ব্যবস্থাপনা ধসে পড়ে সেটা তো কোনো পরিকল্পনার মধ্যে পড়ে না।’
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হলে দেশ তিন মাসেই পাল্টে যাবে বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘দেশে যদি শান্তি ফিরিয়ে আনতে হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয়, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়াকে আগে জামিন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশ চলবে না।’
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় উচ্চ আদালতে ১০ বছর আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতে সাত বছরের সাজা হওয়া খালেদা জিয়াকে বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে আটকে রাখার অভিযোগও করেন জাফরুল্লাহ। তবে ২০২০ সালের মার্চে সাজা স্থগিত করিয়ে বিএনপি নেত্রীকে বাসায় ফেরার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আদালতে দুর্নীতি প্রমাণ হলেও জাফরুল্লাহ মনে করেন, বিএনপি নেত্রীর কোনো অপরাধ ছিল না। তিনি বলেন, ‘টাকা চুরি করে নাই, এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক অ্যাকাউন্টে রাখার জন্য জেল খাটাতে হয়। এ জন্য তাকে আটকে রাখা হয়েছে।’
বিরোধী দলকে প্রধানমন্ত্রী চায়ের আমন্ত্রণ জানালেও ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বললেন চা খেয়ে যান। তার পরই ভোলায় পুলিশের গুলিতে দুইজন মারা গেলেন। তার মানে উনার (প্রধানমন্ত্রীর) হাতে ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা অন্যদের হাতে।
‘চাবিকাঠি অন্য জায়গায়। পুলিশের যেখানে লাঠিচার্জ করার কথা সেখানে গুলি করছে। তার কারণ হলো কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। একটা জায়গা গুলি করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমিত লাগত। এখন তা নেই। আজকে সেই ক্ষমতা এসপির হাতে দিয়ে দেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে আসতে এত ভয় পাচ্ছেন কেন? দিয়ে দেখেন নাহ? চলে গেলে তো ভালোই। জিতে গেলে চরিত্রের পরিবর্তন করলেন। আর কত দিন, অনেক দিন করেছেন।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আজকে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই, লড়াই করতে হবে। যতগুলো দল পারেন একত্রিত হয়ে এক মঞ্চে না হোক অন্তত যুগপৎ অভিন্ন আন্দোলন করতে হবে।’
সাতটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনতার অধিকার পার্টির আত্মপ্রকাশ হয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন দলটির চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনতার অধিকার পার্টি জাতির সঙ্গে বেইমানি করবে না। দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবে।’
সংগঠনের মহাসচিব মোশাররফ হোসেনের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গণশক্তি আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মো. তাহের, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য