বন্যায় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং।
এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো, পানি সম্পদ, কৃষি, শিক্ষা, পরিবহন, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তা দিয়ে আসছে এডিবি। বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে আছে।’
বাংলাদেশের পাশে থাকায় এডিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাশে থাকার জন্য আহবান জানান মন্ত্রী।
বৈঠকে এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং সরকারের পাশাপাশি এডিবির পক্ষ থেকে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে এডিবি সব সময় পাশে ছিল এবং যেকোনো ক্লান্তিলগ্নে পাশে থাকবে।’
সম্প্রতি প্রকাশ করা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বন্যায় ক্ষতি নিরূপণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা দেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ২ হাজার ৭৪২ কিলোমিটার সড়ক ও ৬ কিলোমিটার ৯৭১ মিটার সেতু। এসব মেরামতে সরকারের খরচ হবে আনুমানিক ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিলেট বিভাগের সড়কে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩১ কিলোমিটার সড়কে ক্ষতি হয়েছে। এই সড়কগুলো মেরামতে সম্ভাব্য ব্যয় ২ হাজার ৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
সিলেটে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২ কিলোমিটার ৫৯৬ মিটার সেতুও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৭২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সড়ক ও সেতু মেরামতে সিলেট বিভাগে খরচ হবে ২ হাজার ১২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
ভারতের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে গত এপ্রিলে প্রথম দফা বন্যার মুখে পড়ে সিলেট বিভাগ। মে মাসে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। দেড় যুগের মধ্যে এটি সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা হিসেবে চিহ্নিত হয় তখন। এর মধ্যেই গত ১০ জুন থেকে ফের পাহাড়ি ঢলের মুখে পড়ে সিলেট অঞ্চল। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে ১৫ জুন থেকে শুরু হয় বন্যা। লাগাতার বন্যায় বসতির পাশাপাশি সড়ক ও সেতুর মারাত্মক ক্ষতি হয়।
একই সময় বৃষ্টিপাতের ফলে রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলেও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ কারণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকায় সিলেটের পরেই আছে ময়মনসিংহ বিভাগ। এ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণার মোট ২৬৮ কিলোমিটার সড়ক ও ৩ কিলোমিটার ৯৫৩ মিটার সেতু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৯৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।
রংপুর বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ ২৫ কিলোমিটার, সেখানে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩২ মিটার। এগুলো মেরামতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে এ খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ১৮ লাখ। ঢাকা বিভাগে ২ কোটি ৭৫ লাখ এবং রাজশাহীতে ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে সড়ক ও সেতু মেরামতে।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের মানুষ কষ্ট পেলে সেই কষ্ট আমাকেও ছুঁয়ে যায়। তাই নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার শুরুতে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। তিনি গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সভায় যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলোকে সহনীয় পর্যায়ে কীভাবে নিয়ে আসতে পারি সেই ব্যবস্থা নেয়া একান্তভাবে জরুরি বলে আমি মনে করি। কারণ মানুষের জন্যই রাজনীতি করি। মানুষ কষ্ট পেলে আমারও কষ্ট হয়।
‘নিম্নবিত্ত বা ফিক্সড ইনকাম যাদের, নির্দিষ্ট আয়ে যাদের চলতে হয় তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।’
সাধারণ মানুষের কষ্ট কমাতে ১৫ টাকা কেজিতে ৫০ লাখ মানুষকে চাল কেনার সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি প্রায় এক কোটি ‘বিশেষ পারিবারিক কার্ড’ দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষগুলো কষ্ট না পায়।’
দেশ যখন এগিয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ যখন ভাল থাকে তখনই দেশে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু হয়ে যায় বলেও দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
‘যখনই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং একটু ভালোর দিকে যায় তখনই নানারকম শঙ্কার সৃষ্টি হয়। তখন এটাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য নানারকম চক্রান্তও শুরু হয়ে যায়। এবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে অবরোধ আরোপের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে দেখা গেল আমাদের কেনার সামর্থ্য থাকতেও সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেল।’
নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি ফেলে না রেখে সবাইকে কিছু না কিছু উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু-কন্যা।
আরও পড়ুন:বিধি প্রণয়ন না করে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম নির্ধারণ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসাহ (পারফরম্যান্স) বোনাস ঘোষণার বিষয়ে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
কনজুমার অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান স্থপতি মোবশ্বের হোসেনের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো.ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এলজিআরডি সচিব, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান,এমডি ও সিইও এবং অডিটর ও কম্পট্রোলারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ওয়াসার কর্মীদের উৎসাহ বোনাস এবং পানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ হয়। পত্রিকার প্রতিবেদন যোগ করে হাইকোর্টে এ রিট করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৯১তম সভায় পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (উৎসাহ বোনাস) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। করোনা মহামারি–পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরের পারফরম্যান্সের জন্য ঢাকা ওয়াসার স্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক ও প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বোনাস দেওয়া হবে। আর গত ২৫ জানুয়ারি ২৮৬তম সভায় কর্মীদের একটি মূল বেতনের অর্ধেক ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) পারফরম্যান্স বোনাস দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাড়ে তিনটি পারফরম্যান্স বোনাস দিতে সংস্থাটির ব্যয় হবে ১৯ কোটি টাকার বেশি।
পানির দামের বিষয়ে বলা গণমাধ্যমে বলা হয়, আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আবাসিকে ২৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত পানির দাম বাড়াতে চায় তারা। এ জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কীভাবে মূল্যস্ফীতি প্রশমন করা যায়, সে বিষয়ে কৌশল খুঁজতে হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সব মন্ত্রণালয় আমরা দেখব যাতে মূল্যস্ফীতি কীভবে আরও প্রশমিত করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বলেছেন। খাদ্য খাতে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা বলেছেন। সেচের কাজ সোলারে করতে বলেছেন।’
এবার একনেক সভায় ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানি সংরক্ষণসহ ছয় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৬২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এম এ মান্নান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকটের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ জন্য পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
অনুমোদিত অপর প্রকল্পগুলো
সোনাপুর-কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ (বসুরহাট-দাগনভুইয়া) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৭ কোটি টাকা।
গল্পামারী-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ২৮তম কিলোমিটারে চুনকুড়ি নদীর উপর চুনকুড়ি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি টাকা।
কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বিসিক মুদ্রণ শিল্প নগরী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:বাস র্যাপিড ট্রানজিট- বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার চাপায় পিষ্ট হয়ে নিহত আইয়ুব হোসেন রুবেলের স্ত্রীর দাবি নিয়ে মরদেহ নিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন মোট সাত জন। আরও এক স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে।
রত্না নামে রুবেলের মেয়ে পরিচয় দিয়ে একজন তার বাবার ছয় স্ত্রীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাকি একজনকে চেনেন না জানিয়েছেন। বলেছেন, তার মায়ের সঙ্গে রুবেলের বিচ্ছেন হয়েছে।
আলোচিত এই দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিহত পাঁচজনের ময়নাতদন্ত হয় রাজধানীর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
দুপুরের আগে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে। এখন লাশ হস্তান্তর করবে। আর এ কাজটি করবে উত্তরা পশ্চিম থানা।’
বেলা ৩টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন জানান, রুবেলের মরদেহ কার কাছে হস্তান্তর করা হবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।’
কেন এই সিদ্ধান্তহীনতা- সেই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, একাধিক নারী এসে নিজেদের রুবেলের স্ত্রীর দাবি করছেন।
মোট কতজন নারী স্ত্রী দাবি করে মরদেহ নিতে চাইছেন- জানতে চাইলে মোর্শেদ আলম বলেন, ‘আমরা শুনেছি দুইজন এসেছেন। ওখানকার দায়িত্বশীল যারা আছেন, তারা পরিচয় শনাক্ত করে লাশ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করছেন।’
তবে সংখ্যাটি দুইয়ের অধিক বলে জানিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ মোহসীন। বলেন, ‘সেখানে আমাদের লোকজন আছেন। সেখান পাঁচজনের মরদেহ আছে। এর মধ্যে চারজনের মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একজনের একাধিক স্ত্রী আসায় কার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
ঘটনাস্থলে যান রুবেলের মেয়ে পরিচয় দেয়া রত্না নামে এক তরুণীর কাছ থেকে জানা যায় সাতজনের কথা।
তিনি জানান, তার মায়ের সঙ্গে বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার পর যোগাযোগ ছিল না। এর মধ্যে দুর্ঘটনার মৃত্যুর কথা জেনে তিনি সেখানে এসেছেন।
রুবেলের স্ত্রী পরিচয়ে আসা পাঁচজন নারীর নাম উল্লেখ করেন রত্না। বলেন আরও একজন আছেন যিনি নাম বলতে নিষেধ করেছেন।
রত্মা এও জানান, আরও এক নারী নিজেকে রুবেলের স্ত্রী দাবি করছেন, তবে তার কথা তিনি জানেন না আর কখনও দেখেনওনি।
সোমবার চাপা পড়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আইয়ুব হোসেন রুবেলই। থাকতেন বিমানবন্দর সড়কের কাওলা এলাকায়।
তার ছেলে হৃদয়ের সঙ্গে রিয়া মনি নামে এক তরুণীর বিয়ে হয়েছে শনিবার। সোমবার ছিল বৌভাত। এই অনুষ্ঠান শেষে রিয়া মনির স্বজনরা জামাতাকে আশুলিয়ার বাড়িতে অতিথি করে নিয়ে যেতে আসেন।
রুবেলই গাড়িতে করে তাদের এগিয়ে দিতে চান। সঙ্গে ছিলেন হৃদয়, রিয়া, রিয়ার মা, খালা এবং খালাতো ভাই ও বোন।
হৃদয় ও রিয়া বেঁচে গেলেও মারা যান বাকি সবাই।
যা বললেন মেয়ে
হাসপাতালে পাশে থাকা এক নারীকে দেখিয়ে রুবেলের মেয়ে রত্না বলেন, ‘উনি আমার আব্বুর বউ। আরেকজন আছে, এখন পরিচয় দিচ্ছে না। আমি ওনার বাসায় গেছি, আমার আব্বুর সাথে। ওনার বাসায় আমাকে নিয়ে গেছে, ওনার সাথে আমি থাকছি, এখন উনি পরিচয় দিতে চাইতেছে না যে আমি তোমার আব্বুর ওয়াইফ।’
মোট কতজনের কথা জানেন- এমন প্রশ্নে রত্না বলেন, ‘আমার জানামতে এই আন্টি, হৃদয়ের মা, রেহানা আন্টি, শাহিদা আন্টি, পারুল আন্টি, আরেকজন আছেন ওনি এখানে নাম বলতে মানা করছেন।
‘আরেকজন এখানে এসে আমি শুনছি। ওনার নাম আমি কোনো দিন শুনিও নাই, দেখিও নাই।’
রত্মা জানান, কয়েক বছর তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। দুই মাস আগে দেশে ফেরার পর ফোনে কথা হয় বাবার সঙ্গে। সেদিন ঝগড়ার পর আর কথা হয়নি।
সোমবার দুর্ঘটনার পর রত্নার চাচাতো ভাই সাইফুল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন রত্নাও। এরপর তিনিই রুবেলের স্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সাত বছর পর অনেক স্ত্রীর তথ্য জেনেছেন পুতুল
সালমা আক্তার পুতুল নামে একজন বলেন, ‘এক আপুর সাথে আমার পরিচয় ছিল। ওই আপু আমাকে পরিচয় করিয়ে দিছে। বলছে, উনি বিয়ে করবে ওনার ওয়াইফ অসুস্থ। ওনার বউ দরকার। আমার হাসব্যান্ড তখন ছিল না। আমার হাসব্যান্ডের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে। তখন কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে রাজি হইছি।
‘২০১৪ সালে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের বিয়ের কিন্তু কাজি রেজিস্ট্রি ছিল না। মৌখিকভাবে বিয়ে করছে। এক বছর-দুই বছর করতে করতে ২১ সালে এসে শুনি ওনার এতগুলো বউ। আমি ফেসবুক চালাইতাম না। ফেসবুক চালাতে গিয়া ওনার সাথে অ্যাড যাদের যাদের আছে, তাদের অ্যাড করতে যেয়ে অনেকগুলো বউ বের হয়েছে।
‘তখন আমার মাথা নষ্ট, আমি অনেক রাগারাগি করছি। কোনো বউ স্বীকার করে না। পরে লাস্টে আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলে মামলা করছি।’
অন্য এক প্রশ্নে পুতুল বলেন, ‘উনি প্রতি সপ্তাহে এক দিন একেক জনের বাসায় ঘুমাইত।’
তিনি জানান, রুবেল তার কাছ থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন জমি কিনে দেবেন বলে। কিন্তু টাকা দেননি। এরপর সব অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে বিয়ের কথাও অস্বীকার করে বলেন, বিয়ের কোনো কাগজ নেই। এই কথা বলার পরই তিনি মামলা করেন।
অন্য একজন স্ত্রী আছে জানতেন তিনি
অন্য এক নারী নিজেকে রুবেলের স্ত্রী দাবি করার পর গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, তিনি একাই স্ত্রী ভাবতেন কি না। তখন সেই নারী জানালেন, অন্য এক স্ত্রী আছে বলে জানতেন।
-রুবেলের সঙ্গে তার পরিচয় কত দিনের।
সেই নারী বলেন, ‘অনেক দিন।’
-আপনি কী চান?
সেই নারী বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই। আমার গার্জিয়ান আছে বড়। তারা যেটা মনে করে, সেটাই আমি রাজি, আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই।’
-দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হৃদয়ের সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না?
সেই নারী বলেন, ‘আমি ওদেরকে চিনি না। এই ফার্স্ট টাইম ওদেরকে দেখছি। এক যুগের মধ্যে ফার্স্ট আমি দেখছি। আমি ওদেরকে চিনি না।’
-আপনি জানতেন আপনি একা?
সেই নারী বলেন, ‘না না না, আরেকজন আছেন রত্নার আম্মু, ওনাকে আমি চিনতাম। ওনার বাসায় গেছি, আইছি।’
-আপনার সঙ্গে হাসব্যান্ডের লাস্ট কবে দেখা হয়েছে?
সেই নারী বলেন, ‘আমার সাথে তো কালকেই… আমার ঘর থেকে আসছে, বাসা থেইক্যা।’
-আপনার কোনো ছেলেমেয়ে আছে?
সেই নারী বলেন, ‘ছেলেমেয়ে তো আছে অবশ্যই। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।
আরও প্রশ্ন করতে থাকলে সেই নারী বলেন, ‘ভাই আমি আর কিছু বলতে চাই না। ভাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
মানিকগঞ্জের শাহিদা জানান, তাদের বিয়ে ’৯৯ সালে
সেখানে মানিকগঞ্জ থেকে আসা শাহিদা খানম নামে অন্য এক নারী বলেন, ‘তাকে কত সালে বিয়া করছে, তার কোনো কাগজপত্র আছে কি না, আমার তো কাবিনের কাজগপত্র আছে। একজনে বউ দাবি করলেই… একজন রাস্তা থেকে ব্ল্যাকমেইল করে যে সে আমার হাসব্যান্ড। কিন্তু ডকুমেন্টস থাকতে হইব। আমার সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট আছে।
‘আমার বিয়া হইছে ১৭-৮-১৯৯৯। এর মধ্যে এলাকার কেউ বলতে পারব না স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো কিছু নিয়া ঝগড়া হইছে।’
আইয়ুব হোসেন রুবেল কি ঢাকায় থাকতেন?
শাহিদা বলেন, ‘না, না, না, আমার স্বামী গ্রামে থাকে। ঢাকায় উনি আসছিল, ব্যবসা করে। প্রতিদিন যায়। …বৃহস্পতিবার দিন আসছে আবার বৃহস্পতিবার দিন গেছে। আবার শনিবার দিন আসছে। শুক্রবার দিন আমার বাসায়।
‘শনিবার দিন বলল, উত্তরায় একটা পার্টি আছে। আবার ১৫ আগস্ট কালকে। বলল কী, ওখানে আমার একটা অনুষ্ঠান আছে। আমি অনুষ্ঠানে থাকব। আমার গাড়ি চাইছে আমি গাড়ি দিব না। আমি নিজে ড্রাইভ করব।’
শাহিদা জানান, বেলা ২টার সময় ফোনে তার সঙ্গে কথা হয় রুবেলের। বলেন ২ ঘণ্টা পরেই তিনি আসছেন।
এ সময় শাহিদা হাতে থাকা মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক ছবি আছে। আমরা অনেক জায়গায় ঘুরতে গেছি।’
এরপর নিজের হাতের মোবাইল ফোনে থাকা ছবি দেখাতে থাকেন। তখন নেই নারীর মেয়ে বলেন, ‘আমি নিজে ভিডিও করছি।’
সেই মেয়ে বলেন, ‘পরশু দিন শনিবার ঢাকায় যায়। বলছে কি তার একটা মিলাদ না কী যেন আছে। সেখানে তার থাকতে হবে। আমরা তো নরমালি যেভাবে বাসায় থাকি, সেভাবে থাকতাম। তারপর খবর আসছে বাবা নাই।
শাহিদার ছেলের সঙ্গে দুপুর পর্যন্ত, এরপর আরেক পক্ষের ছেলে হৃদয়ের বৌভাতে
রুবেলের ছেলে পরিচয় দিয়ে এক তরুণ বলেন, ‘আমার মাকে আবার বাবা ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেছিল। আমি তখন অনেক ছোট। আমি আগের সংসারের।’
রুবেলের আগের বিয়ের তথ্য জানতে পারার কথাও জানান এই তরুণ। তবে রুবেল সেটি স্বীকার করেননি।
সেই তরুণ বলেন, ‘আব্বুর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই ব্যাপারটায় আমরা আংশিক ছিলাম, ক্লিয়ার ছিলাম না। আব্বু আমাদের কখনও বলে নাই, কখনও স্বীকার করে নাই। ইভেন ওই ফ্যামিলি থেকে আমাদের ইনবক্স করা হতো, নানা ধরনের মেসেজ দিত। আব্বু বলত, এইগুলো প্রশ্রয় দিও না, ব্লক করে দাও।
‘তাদের সঙ্গে আমাদের কখনও দেখা হয় নাই।’
এই তরুণ জানান, আইয়ুব হোসেন রুবেল মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ডুপ্লেক্স বাড়ি করছেন। ২২ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছেন। আরও বেশ কিছু সহায়-সম্পত্তি করেছেন।
সেই তরুণ এও জানান, সোমবার দুপুর পর্যন্ত তিনি রুবেলের সঙ্গে ছিলেন। রুবেল তাকে তখন অন্য একটা কাজের কথা বলে হৃদয়ের বৌভাতে যান।
তিনি বলেন, ‘যেদিন আব্বু দুর্ঘটনায় পতিত হন, সেদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত আব্বু আমার সাথে। ২টার সময় আব্বুকে বিদায় দিই। বিদায় দেয়ার পর আমি একজনকে গাবতলীতে আগায় দিতে গেছি। এরপর যে কাজটার জন্য আব্বুকে ডাকছিলাম, ওইটার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই।
‘আব্বু আমাকে বলছে বনানীতে একটা প্রোগ্রাম আছে। সামহাউ আমাদেরকে মিথ্যা কথা বলছিল। বিকালের পর একটা অ্যাকসিডেন্টের ছবি দেখেছি, আমরা গায়ে মাখি নাই। আব্বু বনানীতে, উত্তরায় হয়েছে, অন্য একটা ইনটেনশনে ছিলাম, আমি খেয়াল করি নাই।
‘যখন আম্মু আমাকে সাড়ে ৭টা নাগাদ ফোন দিয়া বলতেছে, আমি তোর আব্বুর নামে এটা ওটা শুনতেছি। তোর আব্বু তো মনে হয় আর নাই। আব্বুর কাছে তাড়াতাড়ি যা।’
এরপর সেই তরুণ উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে গাড়িতে থাকা হৃদয় ও তার স্ত্রীকে দেখতে পান। তাদের সঙ্গে কথাও বলে আসেন।
সেই তরুল বলেন, ‘আব্বু যখন আমার কাছ থেকে বিদায় নিল, তখন আব্বু মেইনলি যাচ্ছিল আগের ঘরে যে সন্তান আছে, ওনার বৌভাত নাকি ছিল। ওনার বউকে আনার জন্য নাকি গিয়েছিল।’
হৃদয়ের বাবা হিসেবে গণমাধ্যমে পরিচয় আসায় কিছুটা মনক্ষুণ্ণ এই তরুণ। বলেন, ‘তাদের ইহজীবনে কোনো নাম-গন্ধ ছিল না। অ্যাকসিডেন্টের পর যেটা হয়েছে, তারাই এখন মেইন ফ্যামিলি হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:দুই বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দুই বছর পরে এসে সে হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘অচিরেই’ কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। সে লক্ষ্যে একটি রূপরেখাও প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার ‘সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা জানান আইনমন্ত্রী। সভা আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা কমিশনের রূপরেখা তৈরি করেছি। ২০১৯ সালে যখন প্ল্যান করলাম, তখন করোনার আক্রমণ শুরু হলো। এটার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ এ ক্ষেত্রে তার আদেশ শিরোধার্য। তিনি হয়তো পরিমার্জন করবেন, সে জন্য এর আগে আমি এটি জনসমক্ষে আনতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে, তাকে হত্যা করা হবে, এটা কেউ ভাবতেও পারেনি। যারা ঘরের পাহারায় ছিল, তারাই বেইমানি করেছে। সে কারণেই তারা ঘরে ঢুকতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যদি কোনো আন্দোলন হতো, অপজিশন পার্টি থেকে, তাহলেও মানা যেত। ফলে এটাকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলা যাবে না। এটা ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ড।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু এটা অবিচ্ছেদ্য। যারা তাকে হত্যা করেছে, তারা বুঝতে পেরেছিল, যে ব্যর্থ রাষ্ট্র তারা করতে চেয়েছে, তার পরিবারের এক ফোঁটা রক্ত থাকলে সেটা তারা করতে পারবে না। এ থেকেই বোঝা যায়, এটি পূর্বপরিকল্পিত, ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে অনেক আগে থেকেই দাবি করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
এমনকি দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সে বিষয়টি সামনে এনেছেন।
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো শুরুই করেছিলেন শাহ আইজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে। তিনি ছিলেন রাজাকার নাম্বার ওয়ান। এ ছাড়া তার মন্ত্রিসভার অনেকেই আইয়ুব খানের মন্ত্রী ছিলেন। এই গোষ্ঠীর ধারাটা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যেই জিয়াউর রহমান দেশ শাসন শুরু করেছিলেন।’
আলোচনা সভায় বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক চেয়রাম্যানের কাছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার লোকজনের অভিযোগ করা নিয়েও বক্তব্য দেন। বলেন, দেশে এখনও বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক চেয়ারম্যানের কাছে কিছু মানবাধিকারকর্মী বলেছে বাংলাদেশ নাকি পুলিশ স্টেট। অথচ এরা টক শোতে যায়, তারা অসভ্য ল্যাংগুয়েজ পর্যন্ত ব্যবহার করে। আমরা বাধা দিই না। এটাই বাকস্বাধীনতা। এটাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।’
আলোচনায় বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ঘটনায় তদন্ত কমিটি দাবি করেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক।
তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মতৃপ্তির জন্য বলে থাকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কী তাই? বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ঘটনায় অত্যন্ত শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অনেক শক্তিশালী লোকের নাম চলে আসবে তদন্তে। খেয়াল রাখতে হবে এমন কমিটি গঠন করতে হবে, যারা চোখ রাঙানোকে উপেক্ষা করতে পারবে।’
বিগত বিএনপি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেক তথ্য গায়েব করে দিয়েছে বলে দাবি করেন এই বিচারপতি। বলেন, ‘এগুলো তো খুঁজে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল তা নয়, তার আদর্শকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’
সভায় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা একটি গণহত্যার শামিল। এই হত্যাকাণ্ড তো হঠাৎ করে ঘটেনি। এর একটি বিশাল প্রেক্ষাপট ছিল। সেই গোষ্ঠী এখনও এ দেশে রাজনীতি করছে, এখনও সজাগ রয়েছে। পাকিস্তানিরা বলেছিল, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা নেবেন। সে রূপরেখা ধরেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব এ কে এম আতিকুর রহমান সভার সভাপতিত্ব করেন, সঞ্চালনা করেন বরেণ্য নাট্য অভিনেতা ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশটিতে জাতিসংঘের আমন্ত্রণে পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের সফর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বলেছেন, যেহেতু জাতিসংঘের আমন্ত্রণে এই সফর তাই যুক্তরাষ্ট্র এখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আইজিপি কি আমেরিকা যেতে পারবেন?
উত্তরে তিনি বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রদূত) যেটা বলেছেন ইউএনের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা রয়েছে। সে অনুযায়ী এটা প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেটা শেষ হয়ে এলে এটা নিশ্চিত করতে পারবেন।
‘আমরা তো মনে করি ইউএন তাকে (আইজিপি) দাওয়াত দিয়েছে, তিনি যাবেন। এর জন্য যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলোর তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি জেনেশুনেই যাবেন।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে র্যাব এবং এর সাত কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বেনজীর আগে র্যাবেই ছিলেন। তার বাহিনীটির সাবেক কর্মকর্তা হিসেবেই তিনি নিষেধাজ্ঞায় পড়েন।
এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর বেনজীরকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
দেশটিতে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের চিফ অফ পুলিশ সামিটে (ইউএনকপ) অংশ নিতে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে তার নামও রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি র্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও কথা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে, যেভাবে র্যাবের কাজ করা উচিত ছিল, সেভাবে কাজ করেনি বলেই তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলেছি, র্যাব বেআইনি কোনো কাজ করলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
‘আমি বলেছি, এখন র্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও কারাগারে আছেন, যারা গাফিলতি করেছেন। আমি একটা ইনসিডেন্টের কথা বলেছি, নারায়ণগঞ্জে যে সেভেন মার্ডার হয়েছিল, সেই অফিসারদের আজকে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হয়েছে। তারা হায়ার কোর্টে আপিল করেছেন, সে প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের যে সদস্য অন্যায় করছেন তাদেরও শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।’
বন্দুকযুদ্ধের নামে বিনা বিচারে হত্যার যে অভিযোগ ওঠে, সেটি নিয়েও বৈঠকে কথা হয় বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এও বলেছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের ‘ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি সেলফ ডিফেন্সে গুলি করে থাকে। সেটা যথাযথ হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয় ঘটনার পর পরই। তিনি যদি মনে করেন এটা যথাযথ হয়নি, তাহলে সেই সদস্যকে ট্রায়াল ফেইস করতে হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সে সময় বলেন, ‘এটা তো তোমরা পাবলিক্যালি অ্যানাউন্স করো না।’
তখন মন্ত্রী বলেন, ‘যেগুলো করার সেগুলো আমরা করছি।’
আর যে বিষয়ে কথা
আর কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘উনি বলেছেন বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। ইলেকশন পর্যন্ত এটা ঠিক থাকবে কি না জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট তিনি একটি পিস ফুল এটমসফেয়ার কন্টিনিউ করবেন আপ টু ইলেকশন। লট অফ ডেমোনস্ট্রেশন হচ্ছে, লট অফ মিটিং হচ্ছে আমাদের এখানে কোনো ইয়ে নাই।
‘তিনি আমাদের যেটা বলতে চেয়েছেন আমাদের সঙ্গে আমেরিকার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, সেটা এগিয়ে নিতে এবং অন্য কোনো সেক্টরে তারা সহযোগিতা করতে পারে কি না, সেগুলো তিনি জানতে চেয়েছেন।
‘তারা মানব পাচার বন্ধে কাজ করতে ইচ্ছুক। আমাদের নিরাপত্তার জন্য যদি কিছু প্রয়োজন হয় সেখানে সহযোগিতা করতে পারে। তারা আমাদের আগেই দু-তিনটি জায়গায় সহযোগিতার জন্য লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা খুব শিগগির সমঝোতা স্মারক সই করব, সেটা আমরা তাকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন এগুলো শেষ পর্যায়ে আছে।’
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে আমি বলেছি, এ বিষয় তোমাদের সহযোগিতা আমরা লক্ষ করেছি। এই সমস্যা সমাধানে তারা তাদের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী করবে বলে আমরা মনে করি। তারা এ বিষয়ে তাদের যে সহযোগিতা এখন আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
‘আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে তারা আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বর্ডার এলাকায় কোস্টগার্ডকে আগে তারা সহযোগিতা করেছে, সেটা করার জন্য এবং আমাদের বিজিবির কিছু ইনঅ্যাকসেসেবল কিছু জায়গা আছে সেই জায়গায় কীভাবে স্ট্রং করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।’
আরও পড়ুন:স্লিভলেস টপ পরা এক তরুণীকে নরসিংদী রেলস্টেশনে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তার শিলাকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার তাকে ছয় মাসের জামিন দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম।
নরসিংদী রেলস্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গত ১৮ মে সকালে ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। মেয়েটির পরনে ছিল জিন্স ও টপস। এ সময় স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী ওই তরুণীকে হেনস্তা করেন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন।
ওই তরুণী দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন। পরে স্টেশন মাস্টারের মধ্যস্থতায় দুই বন্ধুসহ ওই তরুণীকে ঢাকাগামী ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হয়।
ঘটনাটির একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে নরসিংদী রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে মার্জিয়াকে ৩০ মে শিবপুরের মুনছেপের চর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য