সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যে-ই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক।
মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়ায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বাড়িঘর পরিদর্শনের সময় তিনি এ কথা বলেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এটি কঠোর অপরাধ। সম্প্রীতি বিনষ্টে যে-ই অপরাধী হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অগ্নিসংযোগ, হামলাসহ নানা অরাজকতা সৃষ্টি করে। তারা দেশকে সব সময় অস্থিতিশীল পরিবেশে রাখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
প্রতিমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও মন্দিরের পুরোহিতদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। ১৫ জুলাইয়ের ঘটনায় আপনারা যারা ক্ষতির শিকার হয়েছেন, সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে। যেসব মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পুনর্নির্মাণ করা হবে।’
সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এমপি আমাদের গর্ব। মাশরাফি দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তিনি আপনাদের পাশে এসে সাহস জুগিয়েছেন ।’
প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, অসীম কুমার উকিল, মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, পংকজ নাথ, পঞ্চানন বিশ্বাস, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় মতবিনিময় সভা হয়।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে এক কলেজছাত্রের ফেসবুক আইডি থেকে বৃহস্পতিবার কটূক্তির কমেন্ট করার অভিযোগ ওঠে।
এর জেরে শুক্রবার বিকেলে হামলা চালানো হয় দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায়।
হামলাকারীরা গোবিন্দ সাহা ও দিলীপ সাহার বাড়ি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবার দোকানসহ ১০টির বেশি বাড়ি-দোকান ভাঙচুর করে। একটি বাড়িতে আগুনও দেয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি সাহাপাড়া মন্দিরের প্রতিমা, চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাঙচুর করে।
হামলার ঘটনায় লোহাগড়া থানার এসআই মাকরুফ রহমান রোববার রাতে মামলা করেন। তাতে ২০০ থেকে ২৫০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, ‘ঘটনার দিন জনরোষ সৃষ্টি ও হামলার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে তাদের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল।’
এ নিয়ে হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ১৬ জুলাই রাতে দিঘলিয়া গ্রামের সালাহউদ্দীন কচি অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:এখন থেকে ট্যুরিস্টসহ যেকোনো ধরনের ভিসাতেই সৌদি আরব গেলে ওমরাহ পালন করা যাবে। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জন্য মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে প্রবেশে বাড়তি কোনো অনুমতি নিতে হবে না।
দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এমন সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব তাদের নেয়া ভিশন ২০৩০ সামনে রেখে আমলাতন্ত্রকে সহজ করতে ও হজযাত্রীদের দেশটিতে আরও বেশি আকৃষ্ট করতে এমন বিভিন্ন সুবিধা দেবে।
সে কারণে চলতি বছরের ওমরাহকে সামনে রেখে, হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা, সর্বোচ্চ পরিষেবা দেয়া এবং হজের অভিজ্ঞতাকে আরও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ করতেই হজ মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিল।
দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্বের ৪৯ দেশের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসার সুবিধা দেবে তারা। দেশগুলো থেকে অনলাইনে ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, ই-ভিসার আবেদনের পর যারা যোগ্য বিবেচিত হবেন তাদের সৌদি বিমানবন্দর থেকেই ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং শেনজেন ভিসাধারীরা সৌদি আরবে গিয়ে ঘোরাফেরার পাশাপাশি চাইলে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।
এমনকি যারা পরিবার ভিসাতে সৌদি যাবেন, তারাও ওমরাহ পালনের জন্য 'ইতমারনা অ্যাপে' ওমরাহ পালনের আবেদন করতে পারবেন।
অনুমতি ছাড়াই শিশুরা প্রবেশ করতে পারবে গ্র্যান্ড মসজিদে
কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই এখন থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।
এক টুইটে মন্ত্রণালয় জানায়, ‘কোনো অনুমতি ছাড়াই এখন থেকে পিতামাতারা তাদের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতর নিয়ে যেতে পারবেন।’
যদিও পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের ‘ইতমারনা অ্যাপের’ মাধ্যমে আবেদন করে পবিত্র এই স্থানটিতে প্রবেশের অনুমতি নিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর কাবা শরিফের চারপাশে প্রতিবন্ধকতা দিয়েছিল সৌদি সরকার। বাইরের দেশের জন্য বন্ধ ছিল হজ পালনও। চলতি বছর থেকে কিছুটা বড় পরিসরে আবারও হজ আয়োজন শুরু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আর চলতি মাসের শুরুতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে কাবার সামনে দেয়া প্রতিবন্ধকতাও।
এ ছাড়া ওমরাহ ও হজকে নিরাপদ এবং হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথাও জানিয়েছে দেশটির হজ মন্ত্রণালয়।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাদের যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন, সে সময়ের মধ্যে দেশটিতে বছরে তিন কোটি জনকে হজ ও ওমরাহ পালনের সুযোগ দিতে চান।
আর এর মাধ্যমে দেশটি বছরে ১৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করেছে।
আরও পড়ুন:পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কারবালার মর্মান্তিক বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণে চট্টগ্রামে শোক মিছিল করেছে শিয়া মতাদর্শী মুসলিম সম্প্রদায়।
মঙ্গলবার শিয়া ইমামিয়া ইশনা আশারা সদরঘাট ইমাম বারগাহ’র ব্যানারে নগরীর সদরঘাটের ইমামবাড়ি থেকে এই মিছিল বের হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় এই মিছিলে খালি পায়ে শামিল হন কয়েক শ নারী-পুরুষ। মিছিলে শোহাদায়ে কারবালা স্মরণে প্রতীকী কফিন বহন করেন অংশগ্রহণকারীরা।
মিছিলটি নগরীর সদরঘাট ইমামবাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কালীবাড়ি মোড় হয়ে নিউমার্কেট মোড় প্রদক্ষিণ করে ফের ইমামবাড়িতে গিয়ে শেষ হয়। বরাবরের মতোই এবারও এ দিনে ইমামবাড়িতে নানা আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রতিবছর ১০ মহরম আশুরার দিনে কারবালার ঘটনা স্মরণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে এই মিছিলের আয়োজন করে শিয়া সম্প্রদায়। করোনার কারণে গত দুই বছর বড় মিছিল বের করা সম্ভব হয়নি। দুই বছর পর এবার সদরঘাট ইমামবাড়ি থেকে মাওলানা আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে বড় আকারের মিছিল বের হয়।
মাওলানা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বহু বছর ধরে এটা চলে আসছে আমাদের। এদিন মিছিল শেষে আমরা কারবালার শহীদদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করি। কীভাবে তাদের অনুসরণ করা যায়, তা পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর চেষ্টা করি।’
মিছিলে কারবালার ঐতিহাসিক ঘটনা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে নানা স্লোগান দেন অংশগ্রহণকারীরা। এদিন নগরীর ঝাউতলা, শেরশাহ ও হালিশহর এলাকা থেকেও শোকমিছিল বের করার কথা রয়েছে।
ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ভ্রমণ করা। জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটা যখনই করা হোক, তার জন্য প্রতিদান ও বরকত রয়েছে।
শরিয়তের বিধান মতে, ওমরাহর নিয়ম হলো-আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সুন্নত বা নফল ওমরাহ পালনের নিয়ত করে হজের মতো ‘মিকাত’ তথা ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত জায়গা থেকে বা তার আগেই ইহরামের নিয়ত করতে হয়।
অতঃপর বাইতুল্লাহ শরিফে এসে সাত চক্কর তওয়াফ করে সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের সাঈ করতে হয়। সর্বশেষ হলক (মাথা মুণ্ডানো) কিংবা কসর (চুল ছোট করা)-এর মাধ্যমে ইহরাম খুলতে হয়।
-
ওমরাহ কেন পালন করতে হয়
কোরআন ও হাদিসে ওমরাহর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন করো।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬)।
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত মাঝখানের গোনাহগুলোর জন্য কাফফারা স্বরূপ।’ (বোখারি: ১৬৮৩, মুসলিম: ৩৩৫৫)।
ওমরাহ দারিদ্র্য বিমোচন করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ আদায় করো। কেননা, হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য বিমোচন ও গোনাহ দূর করে দেয় ঠিক সেভাবে, যেভাবে হাঁপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি: ৮১০)।
সৌদি আরবে শুরু হয়েছে ওমরাহর মৌসুম। শনিবার দেশটিতে যাবেন বিদেশি ওমরাহযাত্রীদের প্রথম দল।
ওমরাহ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ভিসা দেয়া শুরু করেছে।
সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এ বছর প্রথমবারের মতো তিন মাসের জন্য ভিসা পাবেন ওমরাহযাত্রীরা।
সৌদি গেজেটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৯০ দিনের ভিসা দিয়ে সৌদি আরবের সব অঞ্চল ঘুরে দেখতে পারবেন ওমরাহ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাওয়া লোকজন।
দেশটির হজ ও ওমরাহ কার্যক্রম সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির উপপ্রধান হানি আল-আমিরি বলেন, চলতি মৌসুমে ওমরাহযাত্রীদের বরণে প্রস্তুত স্থানীয় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি জানান, ওমরাহযাত্রীদের নানা ধরনের সহায়তা দেবে এ কাজে সক্ষম পাঁচ শতাধিক কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান।
আল-আমিরি আরও জানান, কমিটির কাজ হলো হজ ও ওমরাহ খাত এবং সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা। একই সঙ্গে সম্ভাব্য সমস্যার বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান ও সুপারিশ করবে কমিটি।
আরও পড়ুন:আগামী ৯ আগস্ট পবিত্র আশুরা পালিত হবে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আউয়াল হাওলাদার।
সভায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আকাশে শুক্রবার কোথাও পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে শনিবার পবিত্র জিলহজ মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। আগামী রোববার থেকে পবিত্র মহররম মাস গণনা শুরু হবে।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারুক আহম্মেদ, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা শাহেনুর মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. ছাইফুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার এডিসি (সাধারণ) মো. ইলিয়াস মেহেদী, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মুহা. আছাদুর রহমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপপরিচালক মো. সিরাজুল হক ভুঞা, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের সহকারী প্রশাসক মো. শাহরিয়ার হক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ নিয়ামতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘উচ্চ হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছে, নিকৃষ্ট হিন্দু রয়ে গিয়েছে এখানে।’ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জেলাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
২৩ জুলাই বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ সদরে সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সাহাব আহম্মেদ। সেই বক্তব্যের ৩০ সেকেন্ড সোমবার ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে নিউজবাংলার কাছে সাহাব আহম্মেদের ওই বক্তব্যের ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ এসেছে।
এতে সাহাব আহম্মেদকে বলতে শোনা যায় (বাক্যরীতি অপরিবর্তিত), ‘আমি সাহাব আহম্মেদ। আমার বাবা মহিউদ্দিন আহম্মেদ আপনাদের এমপি ছিলেন। একজন এমপির বাংলা অর্থ হচ্ছে জাতীয় সংসদ সদস্য। জাতীয় সংসদের কাজ হচ্ছে দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা, দেশের আইন প্রণয়ন করা। একজন সংসদ সদস্য (পঙ্কজ দেবনাথ) যখন আরেকজন জনপ্রতিনিধিকে বলেন, তাকে রামদা দিয়ে কোপাবেন, ওই মুহূর্তে তার সংসদ সদস্য পদে থাকার কোনো অধিকার নাই।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা জিনিস জানেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে একসময় অনেক হিন্দু ছিল অর্থাৎ সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিল। এখানে যারা উচ্চ সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন তারা সব কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছে, আর যত নিকৃষ্টগুলা এখানে থেকে গেছেন।
‘দেখেন বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাইয়া জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সবাই ওনাকে চেনে, সবাই ওনাকে সম্মান করে। জ্যোতি বসুর মতো লোকরা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে, আর পঙ্কজ দেবনাথের মতো কীটগুলা বাংলাদেশে থেকে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মেহেন্দিগঞ্জটা শান্তির জনপদ, সেই মেহেন্দিগঞ্জকে এরা বারবার রক্তাক্ত করছে। তার (পঙ্কজ দেবনাথ) রক্তের নেশা হয়ে গেছে। সে হত্যা করতেছে, লোকজনকে আহত করতেছে। আবার হুমকি দিচ্ছে, কামাল খানের মতো জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে রামদা দিয়ে কোপাবে। আসলে ভাই এই নিকৃষ্ট পঙ্কজ দেবনাথের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহম্মেদের ছেলে ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদের ভাই সাহাব আহম্মেদ।
ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ধরেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে এ বিষয়ে বরিশাল-৪ (হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘সাহাব আহম্মেদ যে সাম্প্রদায়িক একটা লোক সেটা তো সবাই জানে। আপনারা তো শুধু ওনার বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু ওনার আরও অপকর্ম রয়েছে। সাহাব আহম্মেদ বরিশাল নগরীর আলেকান্দা এলাকায় নির্যাতন করে অতুল মুখার্জীর মামাবাড়ির জমি দখল করেছেন। নির্যাতন সইতে না পেরে ওই হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়। এর পাশেই এক খ্রিষ্টান নারীকে হত্যা করে তার জমিও দখল করেন সাহাব আহম্মেদ।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু বলেন, ‘একজন আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে আমরা এই ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করি না। আমরা মনে করছি, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশ ত্যাগ করার পেছনে সাহাব আহম্মেদের ইন্ধন রয়েছে। উনি সাম্প্রদায়িকতাকে যে লালন করেন তা ওনার বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে।’
সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক তৌহিদুজ্জামানের কল রেকর্ড ফাঁস হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ওই কল রেকর্ডে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে কোপানোর কথা বলেন এমপি পঙ্কজ। এর প্রতিবাদে ২৩ জুলাই মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। সেই সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদ।
আরও পড়ুন:দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বাড়াতে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ কোটি টাকার চুক্তি সই করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার এ চুক্তি সই হয়।
চুক্তির আওতায় ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে বাংলাঢোল লিমিটেড ও আইসিটি পরামর্শক হিসেবে রিভ সিস্টেম লিমিটেডকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটার আওতায় মিডিয়া ও আইসিটি- দুটি গ্রুপ কাজ করবে। তাদের কর্মসূচিতে অনেক কিছু থাকতে পারে। এখানে লিফলেট, পোস্টার, বিজ্ঞাপন থাকবে। নিউজ লেটার, টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ড্রামা থাকতে পারে। জনসচেতনতা বাড়াতে আমরা টকশো, ডকুমেন্টারিসহ নানা কিছু নিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি।
‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। যে ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে, এগুলোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স। কোনো অবস্থাতেই কোথাও যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য সম্প্রীতি বাড়াতে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্মসূচিগুলো হাতে নিয়েছে।’
নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কারা দায়ী, এটা তো আপনারা মিডিয়ায় দেখেছেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যে বা যারা অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ব্যাহত করার জন্যই মাঝে মাঝে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে, তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো মিনিমাইজ করার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য