সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার যে ঘোষণা, উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রংপুর ও রাজশাহীর ১৬ জেলায় তা মানা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ যাচ্ছে বারবার। কখনও আধা ঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা, কখনও তার চেয়ে বেশি সময় থাকছে লোডশেডিং।
তীব্র গরমে বিদ্যুতের বারবার যাওয়া-আসায় জনজীবন যেমন অতিষ্ঠ, তেমনি কারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিচ্ছে অচলাবস্থা।
বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো বলছে, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। তাই কথা রাখা যাচ্ছে না। গ্রাহকদের এসএমএস পাঠিয়ে দুঃখও প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার তার উৎপাদনক্ষমতার একটি বড় অংশ বসিয়ে রেখে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চাইছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা শুরু হলে জানানো হয়, ঈদের পর থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সূচি করে দেয়া হবে।
সোমবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সারা দেশে আপাতত দিনে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে লোডশেডিং হবে দিনে দুই ঘণ্টা।
এর পর থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো তার আওতাধীন এলাকাগুলোর মধ্যে কোনটিতে কখন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখবে সেই সূচি অনলাইনে আপলোড করতে থাকে।
দিনে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধের সিদ্ধান্তে মানুষ খুব একটা অসন্তুষ্ট হয়েছে, এটা বলা যাবে না। কিন্তু কথা রাখতে না পারা উত্তরে তৈরি করছে অসন্তোষ।
বারবার বিদ্যুৎ বন্ধে এসএমএসে দুঃখ প্রকাশ
এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে আষাঢ়ে নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি। প্রচণ্ড গরমে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে জীবন হয়ে পড়েছে দুঃসহ।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতি এলাকাতেই অন্তত চারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। একবার গেলে অন্তত এক ঘণ্টা আর আসছে না।
এই জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি বা নেসকো বলছে, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কথা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
ভোরেই যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায় সেসব এলাকার মানুষ ধারণা করেন, এক ঘণ্টা লোডশেডিং যেহেতু হয়েই গেল, সারা দিন বুঝি আর যাবে না।
কুমারপাড়া এলাকার প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলামও ভেবেছিলেন সকাল সকাল আপদ দূর হলো। কিন্তু পরক্ষণেই তাকে হতাশ হতে হলো।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজ তো বলতে গেলে ছুটিই কাটাচ্ছি সারা দিন। দুই ঘণ্টা কাজ করছি তো এক ঘণ্টা বন্ধ। এতে ক্ষতি হচ্ছে, সঙ্গে বিরক্তিও তৈরি হচ্ছে।’
মালদা কলোনি এলাকার ব্যবসায়ী রাসেদুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। ব্যবসার তো খারাপ অবস্থা। গরমে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে গেছে।’
এই অবস্থায় নেসকোর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার গ্রাহকদের কাছে এসএমএস পাঠিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অপ্রতুল। ফলে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় অনিচ্ছাকৃত লোডশেডিং হচ্ছে।
রাজশাহীতে ঘাটতি ২৭ শতাংশ
সরকারি হিসাবে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা ও উৎপাদনে ফারাক ১৫ শতাংশের বেশি। তবে রাজশাহী অঞ্চলে সরবরাহ কম ২৭ শতাংশের মতো।
নেসকোর রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া গেছে ৩১২ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করতে হয়েছে ১১৮ মেগাওয়াট।
তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা থাকলেও আমরা সেই কথা রাখতে পারছি না।’
আবহাওয়াও বিরূপ
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, প্রতি বছর আষাঢ় মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, এবার তা হয়নি।
রাজশাহীতে গত বছর আষাঢ়ে বৃষ্টি হয় ২৫ দিন, সব মিলিয়ে ৩৫৪ মিলিমিটার। চলতি বছর আষাঢ়ের এক মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৮ দিন, বৃষ্টির পরিমাণ ৩৯ দশমিক ০২ মিলিমিটার।
এই ৮ দিনের মধ্যে গত ১৮ জুন এক দিনেই হয়েছে ২০ দশমিক ৯ মিলিমিটার। ২০ জুন হয় আরও ৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। এরপর বাকি দিনগুলোতে খুবই কম বৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহীর তাপমাত্রা থাকছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রেজোয়ানুল হক বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আর ভারি বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা কমবে না।’
রংপুরে সরবরাহ চাহিদার অর্ধেক
রাজশাহীতে তাও চাহিদার তিন-চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সর্বউত্তরের বিভাগ রংপুরের পরিস্থিতি আরও খারাপ।
নেসকোর রংপুর কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জেলায় দিনে চাহিদা ১৫০ থেকে ১৫৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৭৫ মেগাওয়াট।
আর বিভাগের আট জেলায় দিন-রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট।
সরবরাহের এই ঘাটতির কারণে এলাকাভিত্তিক যে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি করা হয়েছে তা কাগুজে হয়ে গেছে। দিনে একবার করে লোডশেডিং দেয়ার কথা রাখা যাচ্ছে না।
নেসকোর ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশনের অধীনে রংপুর শহরেই ২৩টি ফিডার রয়েছে। তাতে প্রতিটি ফিডারে দিনে একবার করে লোডশেডিং দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চারবার লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিটি লোডশেডিং এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
নেসকোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশরাফুল আলম মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের তালিকা মানা যাচ্ছে না।’
রংপুরের বাইরের নীলফামারী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা জেলার ফিডারগুলোতেও একই অবস্থা।
বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ নানা ব্যবসায় অচলাবস্থা দেখা গেছে। কাজ শুরু করে অর্ধেক কাজ শেষ না হতেই আবার থামিয়ে দিতে হচ্ছে।
রংপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে হোটেল ব্যবসায়ী সাজু মিয়া বলেন, ‘আমরা ফেসবুকে দেখছি বাজার ফিডারে দিনে একবার লোডশেডিং দেবে। কিন্তু ওরা কথা রাখল না। গরমের কারণে কাস্টমার বেশিক্ষণ থাকে না।
‘৯টার দিকে বিদ্যুৎ এলেও আধা ঘণ্টা পর আবার চলে যায়। এক ঘণ্টা পর ফের চলে যায়, আবার আসে এভাবে চারবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে।’
গুপ্তপাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চারবার বিদ্যুৎ গেছে। একবার গেলে দেড় ঘণ্টা নাই। এখনও অর্ধেক দিন এবং পুরো রাত বাকি আছে। জানি না কতবার বিদ্যুৎ যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঘোষণা দিল একটা, হচ্ছে আরেকটা। সকাল থেকে বিদ্যুৎ শুধু আসা-যাওয়া করছে। কোনো নিয়মের বালাই নেই।’
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বালাটারী গ্রামের এরশাদ আলী জানান, সকাল থেকে তিনবার বিদ্যুৎ গেছে। যখন গেছে তখন একবার ৪০/৫০ মিনিট করে ছিল। একবার এক ঘণ্টার বেশি পরে এসেছে।
নীলফামারী জেলা শহরের প্রগতি পাড়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান লিটু জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুইবার লোডশেডিং হয়। প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়।
একই জেলার পঞ্চপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাইদুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিন দফায় বিদ্যুৎ ছিল না। প্রতিবারই এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল দুর্ভোগ।
রংপুর চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, ‘লোডশেডিং বেশি হলে জেনারেটর দিয়ে হিমাগার চালানো হয়। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে পণ্যের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য