ভোটে কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে তাকে মোকাবিলায় রাইফেল নিয়ে আসার কথা বলে সমালোচনার মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবার গণমাধ্যমের সামনে আসবেন কি না, সেটি নিয়ে ভাবছেন।
সিইসির দাবি, তিনি রসিকতা করতে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি গণমাধ্যমে ভিন্নভাবে আসার কারণে তিনি বিব্রত হয়েছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গত রোববার থেকে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ শুরু হয়েছে তাতে সিইসির এই তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।
সিইসি নিজেও এই বিষয়টি নিয়ে বারবার বক্তব্য রেখেছেন। প্রথম দিন এই কথা বললেও সেদিনই পরে উল্টো কথা বলেছেন। এর পরদিন আবার বলেছেন, তিনি রসিকতা করেছেন। তৃতীয় দিন মঙ্গলবার এসে বলেছেন, মিডিয়ায় তার বক্তব্যের উপস্থাপনা ঠিক হয়নি। পরে আবার এই কথা বলায় ক্ষমাও চেয়েছেন।
এদিন সিইসি প্রথমে কথা বলেন ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপের সময়। সেখানে তিনি গণমাধ্যমের ওপর হতাশা প্রকাশ করে পরে ক্ষমা চান।
সেই বক্তব্যে গণমাধ্যমের প্রতি উষ্মা প্রকাশ পেলেও ক্ষোভ পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপের সময় গণমাধ্যমের প্রতি সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাবি করেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে এসেছে। তাই এখন থেকে গণমাধ্যমের সামনে কতটা খোলামেলা হবেন, সেটি নিয়ে ভাববেন।
গত ১৭ জুলাই জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপকালে তিনি সব দলকে ভোটের মাঠে অটল থাকার পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছিলেন- ‘মাঠে কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘যেভাবে বক্তব্যটা পত্রপত্রিকায় উপস্থাপিত হয়েছে এটা কখনেও বক্তব্য হতে পারে না। আমরা সময় সময় হাস্যরস করি আপনারাও করেন। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি।
‘এটা যদি কখনও সিইসি মনে করেন সবার অস্ত্র নিয়ে আসা উচিত, তাহলে চার মাস আগে থেকেই ক্রমাগতভাবে বলে যেতাম আপনাদের যার যা আছে- অস্ত্র, তীর-ধনুক, রাইফেল, বোম; এগুলো নিয়ে আসবেন।
‘এটা কথার পিঠে কথা হাস্যরসের সঙ্গে বলা হয়েছিল। এটা আপনারা সহনশীলতার সঙ্গে দেখবেন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
গণমাধ্যমের জন্য নিজের দুয়ার আগের মতো খোলা থাকবে কি না সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টিও উঠে আসে সিইসির বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ সুযোগ মিডিয়াকে দিয়েছি। আমি আগে মিনিস্ট্রিতে সচিব ছিলাম। মিটিং কখনও ওপেন করা হয় না। মিটিং অলওয়েজ কনফিডেনশিয়াল। তারপর একজন মুখপাত্র অবহিত করেন। কিন্তু কোনো একটা সময় এটা চালু হয়েছে এখানে। আমরা আর এটাকে বন্ধ করিনি। সকলেই শুনতে পারেন, যে স্বচ্ছতাটা আমরা ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।
‘কিন্তু যেভাবে আমাদের বক্তব্য বিকৃত হচ্ছে এবং মানসম্মান যেভাবে বিকিয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়েও আমাদের এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে, যে আমরা কতটা ওপেন হব। আর সকলের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, যে আমাদের মিডিয়ার ভাইয়েরা যারা আছেন, তারা যেন আমাদের বক্তব্যটাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন। কারণ পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, নির্বাচন কমিশনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে তা মতামত পর্যালোচনা করব কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। আর কোন কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বা আমাদের কর্মপরিধির মধ্যে সেগুলো পড়ে কি না, সেগুলো আমরা সংলাপ শেষে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ওপরও জোর দেন সিইসি। বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মোটাদাগে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেন যে কেউ সহিংসতা করব না, শান্তিপূর্ণভাবে করব। কেউ সহিংসতা করলে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করব।’
ভারতে এবার উড়াল দেওয়ার পরই বিধ্বস্ত হয়েছে যাত্রীবাহী একটি হেলিকপ্টার। এতে, পাইলটসহ সাত আরোহী নিহত হয়েছেন।
রবিবার (১৫ জুন) সকালে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে এ ঘটনা ঘটে। রাজ্যের কেদারনাথ ধাম থেকে গুপ্তকাশী তীর্থস্থানের উদ্দেশে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় হেলিকপ্টারটি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উড্ডয়নের মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নন্দন সিং রাজওয়ার জানিয়েছেন, ‘দুর্ঘটনার পর উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান চলছে।’
অ্যারিয়ান অ্যাভিয়েশন নামের একটি বেসরকারি হেলিকপ্টার সংস্থার পরিচালিত হেলিকপ্টারটি কেদারনাথ তীর্থপথের নিকটবর্তী একটি বনাঞ্চলে স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিধ্বস্ত হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাইলট ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট থেকে আসা তীর্থযাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার পর আগুন ধরে যাওয়ায় মরদেহগুলো মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।
ভারতের অন্যতম চারটি তীর্থস্থানের একটি কেদারনাথ। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী সেখানে ভ্রমণ করেন। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলটিতে পৌঁছাতে অনেকেই হেলিকপ্টার সেবার ওপর নির্ভর করেন।
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনার শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাটি ঘটলো। মাত্র তিন দিন আগে গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দেশটির আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই যাত্রীবাহী এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল।
এ ঘটনায় বিমানে থাকা ২৩২ যাত্রী ও ১০ ক্রুর মধ্যে ২৪১জনই নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ২৭০ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বিমানটি আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ছাত্ররা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় মেডিকেল হোস্টেলের ৫ শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, জাতিকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া হবে।
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশনের সাথে কর্মকর্তাদের ঈদুল আজহা পরবর্তী মতবিনিময় সভায় সিইসি এ কথা বলেন।
সভায় অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময়ে সিইসি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আপনাদেরকে যতকাজ দিয়েছি, কোন কাজে আপনারা ব্যর্থ হননি। টাইম ফ্রেমের মধ্যেই আপনারা সব কাজ করেছেন। সুতরাং নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ যা বাকি আছে, অনেকগুলো আমরা এগিয়ে নিয়েছি। আমাদের কাজ অনেকদূর এগিয়ে আছে। এখন সবাই মিলে ফিনিশিং দিতে হবে। আমরা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিব, ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, আমাদের শপথ হবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা, কোনো দলের জন্য লেজুড়বৃত্তি না করা, আইন অনুযায়ী কাজ করা, বিবেক সম্মতভাবে কাজ করা।
সিইসি আরো বলেন, ‘আমরা থাকব রেফারির ভূমিকায়। যারা খেলবে খেলুক। খেলে যারা জিতবে জিতুক।
আমাদের দায়িত্ব হবে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে দেয়া। সেটা করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সবসময় বলে যাচ্ছেন, আমি একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই। কিসের ওপর ভিত্তি করে উনি কথাটা বলছেন। এই যে উনি ওয়াদাটা দিচ্ছেন, বিশ্বব্যাপী দিচ্ছেন। আমাদের ওপর আস্থা আছে বলেই ওয়াদাটা দিচ্ছেন।’
সাতক্ষীরার আ.লীগের সংরক্ষিত আসেনের সাবেক এমপি রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। এসময় তার ছেলে সাফায়েত সরোয়ার রুমনকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ বিলাশবহুল বাড়িতে ২ ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর সাতক্ষীরা ক্যাম্পের মেজর ইফতেখার আহমেদ।
সাফায়াত সরোয়ার রুমন আশাশুনির কাদাকাটি গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে এবং তার মা রিফাত আমিন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আ.লীগের সাবেক সভানেত্রী ও আ.লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ছিলেন।
যৌথবাহিনীর অভিযানের শুরুতেই দুইতলা হতে রুমন লাফিয়ে নিজতলা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন যৌথবাহিনী রুমনকে আটক করে বাড়িতে তল্লাশি করে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে।
সেনাবাহিনীর মেজর ইফতেখার আহম্মেদ অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত আমিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ৩ শতাধিক ইয়াবা বড়ি ও একটি রাইফেল, একটি তলোয়ার এবং মদ ও খালি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে এবং সাবেক এমপির ছেলে সাফায়াত সরোয়ার রুমনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদের চার কর্মকর্তার দায়িত্বে রদবদল ও পদোন্নতি হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ অধিশাখার উপসচিব মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের কমান্ড্যান্ট আলি আকবর খানকে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি করা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. শামসুল হককে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ঢাকা আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি করা হয়েছে। আর সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি রোমানা আক্তারকে ঢাকা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের কমান্ড্যান্ট করা হয়েছে।
জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় ঘেরা গজনী পর্যটন কেন্দ্র। এখন পর্যটন কেন্দ্রটি চরম পরিবেশ সংকটে রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী নদী-নালা, খাল-বিল, ঝরনা থেকে দিনের পর দিন পাথর ও বালু লুটপাট করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্প।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গারো পাহাড়ের কোলে গড়ে তোলা হয় ‘গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র’। গজনী মৌজার নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভ্রমণপিপাসু এ পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করেন। সরকারও এখান থেকে রাজস্ব আয় করে থাকে।
তবে সম্প্রতি এই পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশের পাহাড়, নদী ও ঝর্ণা এলাকা অবৈধভাবে দখল করে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলন। স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র—যাদের বলা হচ্ছে ‘বালুদস্যু’—তারা দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে ট্রাক, মাহিন্দ্রা ও ট্রলিগাড়ি ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার পাথর ও বালু পাচার করছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের কালঘেষা নদীর হালচাটি, মালিটিলা, গান্ধীগাঁও, বাঁকাকুড়া, দরবেশতলা, মঙ্গল ঝুড়া, পশ্চিম বাঁকাকুড়া, ছোটগজনী, গজনীসহ আশপাশের এলাকা থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ। প্রতিবাদ করলেই হুমকি, গালিগালাজ এমনকি হামলারও শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের।
সম্প্রতি ঈদের আগে এক সপ্তাহে বনবিভাগ পাঁচটি মাহিন্দ্রা গাড়ি আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বালুদস্যুরা রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কার্যালয়ে হামলা চালায় ও কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। গত ৪ জুন রাতে উপজেলা সদরের বাজারে বালু ভর্তি মাহিন্দ্রা গাড়ির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় বালুদস্যুরা।
এমনকি, এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু শ্রমিকদের শাস্তি দেয়ায় বালুদস্যুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তাতে বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ কার্যকলাপ।
গজনী ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ বলেন, ‘লোকবলের অভাব ও নিরাপত্তা জণিত কারণে আমরা রাতে অভিযান চালাতে পারি না। এই কারণে বালুদস্যুরা রাতের অন্ধকারে সুযোগ নিচ্ছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবেশবাদী বলেন, ‘গারো পাহাড় শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তার দেয়াল। এখানকার জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু এবং পর্যটন—সবই আজ হুমকির মুখে। এই লুটপাট যদি এখনই বন্ধ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে পুরো এলাকা মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।’
স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এই অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
নিপুণ বাসা তৈরির দক্ষ করিগর বাবুই পাখি ও এর বাসা এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, নতুন বণায়নে বাসযোগ্য পরিবেশ ও খাদ্যের অভাব, নির্বিচারে তালগাছ কর্তন, অসাধু শিকারীর ফাঁদসহ বহুবিধ কারণে কালের আবর্তে প্রকৃতির স্থপতি, বয়ন শিল্পী এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি বাবুই পাখি ও এর দৃষ্টিনন্দন বাসা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। কিচিরমিচির শব্দ আর এদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করত। অপূর্ব শিল্প শৈলীতে প্রকৃতির অপার বিস্ময় এদের সেই ঝুলন্ত বাসা বাড়ির তালগাছসহ নদীর পাড়ে, পুকুর পাড়ে, বিলের ধারে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। আগের মতো বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রাম বাংলার জনপদ।
নিরীহ, শান্ত প্রকৃতির এই বাবুই পাখি উচু এবং নিরিবিলি পরিবেশে বাসা তৈরি করে। গ্রামগঞ্জের তাল, সুপারি, নাড়িকেল, খেজুর গাছে বাসা তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে এরা। এসব গাছের সংকটে মাঝে মাঝে হিজল গাছেও বাসা বাধতে দেখা যায় তাদের।
এই পাখি বাসা তৈরির কাজে ব্যবহার করে খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচি পাতা, ঝাউ ও কাঁশবনের লতা। চমৎকার আকৃতির এই বাসা বিশেষ করে তাল গাছের ডালে এমনভাবে সাটানো থাকে যাতে কোনো ঝড়-তুফানে সহসাই ছিড়ে না পড়ে। এদের বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগায় এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করে। এটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমই মজবুত ও টেকসই । ঠোট দিয়ে বাবুই পাখি আস্তর ছড়ায়। পেট দিয়ে ঘঁষে তা আবার মসৃণ করে। বাসা বানাতে শুরুতেই দুটি নিম্নমুখী গর্ত করে থাকে। পরে তা একদিকে বন্ধ করে ডিম পাড়ার জায়গা করে।
অন্যদিকে লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ তৈরি করে। ব্যালেন্স করার জন্য বাসার ভিতরে কাদার প্রলেপ দেয়। এমন বাসাও তৈরি করে যেখানে বসে দোলনার মতো দোল খায়। আধুনিক যুগে যা বড়ই যুক্তি সংগত। বাসার ভিতরে ঠিক মাঝখানে একটি আড়া তৈরি করে বাবুই পাখি। যে আড়াতে পাশাপাশি বসে এরা প্রেম আলাপসহ নানা রকম গল্প করে। এ আড়াতেই এরা নিদ্রা যায়। কি অপূর্ব বিজ্ঞান সম্মত চেতনাবোধ। ছোট হলেও বুদ্ধিতে সব পাখিকে হার মানায়।
এক গাছ থেকে আরেক গাছ, এক বাসা থেকে আরেক বাসায় এরা সঙ্গী খুঁজতো। পছন্দ হলে সঙ্গী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য ডোবার গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে উড়ে বেড়ায় এক ডাল থেকে অন্য ডালে। এরপর উচুঁ গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। অর্ধেক কাজ হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল পুরো কাজ শেষ করে। তা না হলে অর্ধেক কাজ করেই নতুন করে আরেকটি বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। অর্ধেক বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৪-৫ দিন।
কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুই পাখির পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে সময় লাগে আরো ৪ দিন। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬ টি পর্যন্ত বাসা বুনতে পারে। তাছাড়া এরা ঘর করতে পারে ৬ টির সঙ্গে। স্ত্রী বাবুইদের এতে কোনো বাঁধা নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুসপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর বাচ্চা বাসা ছেড়ে প্রথম উড়ে যায় জন্মের তিন সপ্তাহের মধ্যে।
কৃষকের ধান ঘরে ওঠার মৌসুম হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। দুধ ধান সংগ্রহ করে এনে স্ত্রী বাবুই বাচ্চাদের খাওয়ায়। তবে এখন সঙ্গত কারণেই বাবুই পাখি তালগাছ ছেড়ে ভিন্ন গাছে নীড় বেঁধেছে। এই দক্ষ স্থপতি বাবুই পাখির নীড় ভেঙে দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ। এক সময় গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে দেখা যেতো অগণিত বাবুই পাখির বাসা। এই এলাকার গাঁও গ্রাম ঘুরেও এখন আর দৃষ্টি নন্দন বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসা আগের মতো দেখা যায় না।
উপজেলার আধবই গ্রামের পাখি প্রেমিক নওশীন বাবু ঐশী বলেন, সারাবিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭টি। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাস। তিনি আরও বলেন, বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।
উপজেলা কৃষক ইব্রাহিম বলেন, নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখতে হলে বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে উক্ত গাছ রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতিক সোন্দর্য বৃদ্ধিতে বাবুই পাখির বাসা তৈরির পরিবেশ সহজ করে দিতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পরিবেশবান্ধব বাঁশের আসবাবপত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, দেশে কাঠের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে। এই চাপ কমাতে আসবাবপত্র তৈরিতে কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ব্যবহারে উদ্যোগী হতে হবে। বাঁশ সহজলভ্য, দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং পরিবেশবান্ধব।
আজ পরিবেশ উপদেষ্টা বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদুল আজহা পরবর্তী ১ম কর্মদিবসে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসময় তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং পরিবেশ রক্ষায় নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্রের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে তিনি বাঁশগবেষণা কেন্দ্রে বাঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আধুনিক পণ্য উদ্ভাবনের ওপর জোর দেন। উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক, টেকসই ও রুচিশীল বাঁশের আসবাবপত্র তৈরি করে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ ও আন্তর্জাতিক বাজারেও সম্ভাবনা তৈরি করা সম্ভব।
সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিববৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর সমূহের প্রধানগণ, এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য