ভোট ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এসব বলেন।
বিএনপির কথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তাই তাদের নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি সরকার পরিবর্তন চায় অথচ নির্বাচনে আসতে চায় না। সরকার পরিবর্তন চাইলে তো নির্বাচনে আসতে হবে।’
‘২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে হতে যাওয়া এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এখন পর্যন্ত ঘোষণা হচ্ছে তারা বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাবে না।’
বিএনপির দাবি, ভোট হতে হবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে। আর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বদলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সেই সরকার।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান না আগামী নির্বাচনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ হোক। তার সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। এ লক্ষ্যে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে নয়।’
নিরপেক্ষ সরকার না এলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘জনগণ বিএনপির তথাকথিত নিরপেক্ষ নির্বাচন আগেই দেখেছে।’
‘বিএনপি নেতাদের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ছবক মানায় না। তাদের নেত্রী একসময়ে বলেছিলেন, শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। কাজেই বিএনপি নেতাদের মুখে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা দলটির দ্বিচারিতার যে রাজনীতি তা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
‘নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি উচ্চ আদালত কর্তৃক মীমাংসিত ইস্যু, এ নিয়ে নতুন করে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।’
বিএনপির নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ হওয়ার নয় জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘সরকার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো কমিশনকে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দিয়ে যাবে। সরকার ক্ষমতায় থাকলেও নির্বাচনসংক্রান্ত সবকিছু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।’
‘যদিও বিএনপির কাছে নিরপেক্ষতা হলো নির্বাচন কমিশন তখনই নিরপেক্ষ, যখন বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার শতভাগ গ্যারান্টি পাবে। কিন্তু এ নিশ্চয়তা নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে দিতে পারে না।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই বলে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যেরও জবাব দেন কাদের।
বলেন, ‘একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ ধরনের বক্তব্য দেশের গণতন্ত্র, সকল সংসদ সদস্য এবং সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি নির্মম উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।’
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সভায় যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরি ও বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি দিয়েই বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
ভোলার বাংলাবাজারে নিজ বাসভবনে রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল একই গান গাইছেন, একই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তার বক্তব্য আমলে নেয়ার কিছু নেই। তিনি বিবৃতি দিয়েই তার দল বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন। রাজপথে তাদের কোনো আন্দোলন নেই।
‘রাজপথ দখল করেছি আমরা, রাজপথ দখল এত সহজ না। ’৯৬ সালে নির্বাচনের আগে বিএনপি ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল, তারা ক্ষমতায় ছিল দেড় মাস। আওয়ামী লীগের আন্দোলনে বিএনপি মাত্র দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছে, এটাকে বলে আন্দোলন। মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল।’
ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট চলছে। এই সংকটে আমরাও পড়েছি, তা অস্বীকার করার কিছু নেই। আমরা সব সময় চেষ্টা করি, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে। আশা করি, সেপ্টেম্বর নাগাদ জ্বালানির এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই।’
বিকেলে ঢাকা থেকে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মমিন টুলু ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব।
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে নির্বাচনি আইনে বেশকিছু পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনি আইনে (রিপ্রেজেন্টেটিভ পিপলস অর্ডার ১৯৭২-আরপিও) বেশ কিছু অনুচ্ছেদ সংস্কার করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে ইসি। সে লক্ষ্যে ভোটার, এজেন্ট, পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীসহ ৫টি বিষয়ে সংস্কার আনার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার বিকেলে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশিদা সুলতানা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে নতুন আইন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্রেব্রুয়ারি মাসে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার দায়িত্বভার গ্রহণ করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এর ৬ মাসের মধ্যে আরপিও সংশোধনের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
এর আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পাশাপাশি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন।
ইসি রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘সংলাপের আগেই আমরা সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করে ফেলেছিলাম। তবে সংলাপের জন্য সেই ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্থগিত করা হয়। সংলাপের আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সংযুক্ত করে আমরা ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছি।
‘আরপিওতে এমন কিছু সংশোধনী কমিশন আনতে যাচ্ছে যেগুলো করলে উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোট করা সম্ভব হবে। আরপিওর এই ছোটখাটো ত্রুটি সংশোধন করলে মানুষের আস্থাও বাড়বে। ভবিষ্যতে যে কমিশনই আসবে তাদের জন্যও নির্বাচন করা সহজ হবে।’
আরপিওতে কিছু ধারার প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, ‘ধারায় অপরাধের বর্ণনা থাকলেও শাস্তির বর্ণনা নেই। এবার তা সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের বাইরেও যেন ভোটার ও এজেন্টরা নিরাপদে থাকে সে বিষয়টি সংযুক্ত করা হবে। তাতে করে ভোটাররা যাতে অবাধে কেন্দ্রে আসতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত হবে।’
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বিএনপি ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন্য আহত হয়েছেন৷
উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রতিবাদে বিকেলে উপজেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। একই সময় অন্যদিক থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি শোভাযাত্রা বের করে এগোতে থাকে। দুই পক্ষ বোদা মডার্ন ক্লিনিকের সামনে মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বেধে যায়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
তারা জানান, সংঘর্ষে আশপাশে যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আধা ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
বোদা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনজাম পিয়াল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে আমরা প্রতিবাদ করি। এতে আমাদের ওপর চড়াও হয় তারা। এ সময় দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। তাদের হামলায় আমাদের সাত কর্মী আহত হয়েছেন। চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
বোদা পৌর বিএনপির সদস্য সচিব দিলরেজা আফরোজ চিন্ময় বলেন, ‘আমরা তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করি। সেই মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে আটজনকে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার জানান, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
আরও পড়ুন:দেশ পরিচালনায় এখন শেখ হাসিনার সমকক্ষ কেউ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শোকাঞ্জলি অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। বর্তমান সময়ে দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার বিকল্প বা সমকক্ষ কেউ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন,
‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সেই হত্যাকারীরাই আজ ইতিহাস বিকৃত করছে। নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। জাতির পিতার হত্যাকারী, মদদদাতা ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাত। ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি।
এখন শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাস।
বক্তব্য দেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম মাহফুজা আক্তার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী ও পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী নাকি তথ্য সচিব- কার কথা ঠিক, সে প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী বলছেন, আইএমএফের শর্ত মানার জন্য এই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আর এদিকে তথ্য সচিব বলছেন, এটা হচ্ছে আমাদের পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান বাঁচানোর জন্যে।’
লোকসান কেমনে হলো, সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপি নেতা বলেন, ‘যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল, তখন তুমি আগের দামেই তেল বিক্রি করেছ। এবং তাদের লাভ ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন আবার যখন তেলের দাম বাড়াল, তখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।’
রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ড্যাব) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় গিয়ে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা ও অকটেনের নাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রতি ব্যারেল ডিজেল ১৭০ ডলার পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। এখন তা ১৩০ থেকে ডলারের মধ্যে।
আর অশোধিত তেল একপর্যায়ে ১৪০ ডলার হয়ে গেলেও এখন তা ৯০ ডলারের ঘরে থিতু হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, তারা বিশ্ববাজারের প্রতি নজর রাখছেন। সেখানে তেলের দাম কমে আসছে। সরকার কেনাও শুরু করেছে। সেই তেল দেশে এলেই দাম কমবে।
বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশে কমবে, এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।
২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বিপিসি যে মুনাফা করেছে, সেটি নিয়ে সরকার জ্বালানি খাতের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ফখরুল বলেন, ‘এই প্রফিট কোথায় গিয়েছে শুনুন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা সরকার নিয়ে নিয়েছে। কারণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রফিট সে তার অ্যাকাউন্টে রাখতে পারবে না, সেটা সরকার ইচ্ছে করলেই নিয়ে নিতে পারে।’
বিএনপির মহাসচিব উল্লেখ করেন সারের দামের কথাও। সম্প্রতি কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে এই দাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় ৩০০ টাকায় বস্তা পাওয়া যেত। কয়েক দিনে এটি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইটার দাম বাড়ানো হলে কী হবে? ১ হাজার ৩০০ টাকায় বস্তা কিনতে হবে।
‘এখন ১ হাজার ৩০০ টাকায় সার কিনে যে ধান উৎপাদন করবে, ফসল উৎপাদন করবে, তার মূল্যই সে পাবে না। অন্যদিকে আপনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছেন। সে যে সেচ করবে, সেটা সে পারবে না। ফলে সে কৃষিকাজ থেকে দূরে সরে যাবে। ফলে খাদ্য নিশ্চয়তা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশটাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশকে শাসন করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সে হয়ে যায় রাষ্ট্রদ্রোহী বা দেশদ্রোহী। অসংখ্য মামলা এবং মামলা চলছেই।’
তিনি বলেন, ‘৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা। তার কোনো ভিত্তিই নেই। যে টাকার জন্য মামলা সেটা সেখানেই আছে। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার একটা বিচার হয় নাই।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়ানোর দুই দিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসছে। আর কম দামের তেল দেশে এলে তখন দাম কমাবে সরকার।
মন্ত্রী এও বলেছেন, সরকার কম দামের তেল কেনা শুরু করেছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে স্পষ্টত জনক্ষোভের মধ্যে রোববার বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
‘বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম মডিউল’-এর উদ্বোধন করতে প্রধান অতিথি হয়ে যান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'সারা বিশ্বে এখন দাম কমে আসছে, সব জায়গায় কমা শুরু হয়েছে। আমরাও কম দামে কেনা শুরু করেছি। এগুলো যখন দেশে এসে পৌঁছাবে, তখন আমাদের চাপ থাকবে না।’
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।
জ্বালানি তেলের এত বেশি হারে দাম এর আগে কখনও বাড়েনি দেশে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ মানুষ এর সমালোচনা করছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির সমস্যায় থাকা দেশে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়বে বলে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবহনে বর্ধিত খরচের বিষয়টি আছে।
এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার যতটা ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে।
সমালোচকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের দাম অনেকটাই বাড়লেও সম্প্রতি তা কমে আসছে। এই অবস্থায় সরকার আরেকটু অপেক্ষা করতে পারত।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রতি ব্যারেল ডিজেল ১৭০ ডলার পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। এখন তা ১৩০ থেকে ডলারের মধ্যে।
আর অশোধিত তেল একপর্যায়ে ১৪০ ডলার হয়ে গেলেও এখন তা ৯০ ডলারের ঘরে থিতু হয়েছে।
‘আমরা বিশ্ববাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি’ - বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দরের বিষয়টি সরকার একক বিবেচনায় ঠিক করে। তবে অনেক দেশ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব করে। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশে বাড়ায়, বিশ্ববাজারে কমলে দেশে কমায়।
২০১৬ সালে বাংলাদেশে তেলের দাম একবার কমানোর পর পরিবহন ভাড়া কমেনি। পরে বিশ্ববাজারে দামের পতন হলেও দাম আর কমায়নি সরকার।
তবে এবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববাজারে দাম কমে এলে দেশেও দাম কমবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করেই এই ঘোষণা দিয়েছেন।
তেলের দাম ঠিক করতে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করা হবে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এই মুহূর্তে সেটা বলতে পারব না। তবে আমরা এলপিজি গ্যাসের মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করছি। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও আস্তে আস্তে চালু হবে।'
হঠাৎ এত বেশি হারে মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আশপাশের দেশগুলোর কী অবস্থা? এখানে যে দাম বাড়ানো হয়েছে লজিক ছাড়া তো বাড়ানো হয়নি। বারবার বলছি, যখন দাম বাড়ে আমাদের জনগণের প্রতি লক্ষ্য থাকে- তা হলো কতটুকু বাড়বে, কতটুকু সহ্য করতে পারবে।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে মানুষের কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভালোর জন্য মাঝে মাঝে কষ্ট করতে হয়।’
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জোর দেন অনুষ্ঠানের বিষয় বন্ডের ওপর। তিনি বলেন, ‘কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর সেবা প্রদান এবং সরকারি রাজস্বের সুরুক্ষা নিশ্চিত করতে বন্ড লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন কাজ করবে।’
২০১৭ সালে প্রকল্পটি নেয়া হয়। ২০২৩ সালে কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ও সময় হ্রাস পাবে এবং সেবা প্রদানের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় তার সমপরিমাণ রাজস্ব মামলায় আটকে আছে। অটোমেশন শেষ হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, চারদিকে ষড়যন্ত্র চলছে, ডানে-বামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেন, ‘বিএনপি আবার জামায়াত-শিবির নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল সরকারকে উৎখাত করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা হত্যা করতে পারলে দেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে পারবে।
‘শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে, আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি প্রত্যেকবারই রক্ষা পেয়েছেন। ২০২৩ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। এটি হবে আজকে আমাদের শপথ।’
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় করতে হবে। সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারি সুকৌশলে মোকাবিলা করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমান বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে তিনি দেশের অর্থনীতি সামলাচ্ছেন নানা প্রচেষ্টায়। ঠিক সে সময়েই স্বাধীনতাবিরোধীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’
মন্তব্য