রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মারধরের শিকার হয়েছেন বলে প্রথমে বিভিন্নজনকে ফোন করে জানালেও এখন তিনি বার বারই অস্বীকার করছেন। এমনকি মারধরের কথা স্বীকার করার একটি অডিও ক্লিপ শনিবার প্রকাশ হওয়ার পরও অধ্যক্ষের দাবি অডিওটিও সত্য নয়।
সেই অধ্যক্ষের সঙ্গে তার কলেজে দেখা করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী। রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষের পাশে প্রায় ৩০ মিনিট বসেছিলেন। এ সময় কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদুল হক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কলেজের অন্যান্য শিক্ষকসহ কলেজ পরিচালনা পরিষদকে ওমর ফারুক বলেন, ‘অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার লাইভ করা হয়। সাক্ষাৎকারে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা জানিয়েছেন, আসাদুজ্জামান আসাদ যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছেন সেটি তার নয়। অডিওটি তার ভয়েস ক্লোন করে বানানো।’
এসময় অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ‘আসাদ আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তবে তার সঙ্গে মারধর নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তিনি আমার ক্লোন রেকর্ডটি ফেসবুক- ইউটিউবে প্রচার করবেন, এটা কখনো আশা করিনি।
‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হয়েছে। তানোর ও গোদাগাড়ীতে ওমর ফারুক চৌধুরীর যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার মনে হয় এই কাজগুলো করা হয়েছে।’
এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, প্রকাশ্যে এমপির বিপক্ষে না গেলেও ওই ঘটনা তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত কমিটির কাছে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। যদিও তদন্ত কমিটির প্রধান বলছেন, এখনই তিনি এ বিষয়ে মিডিয়ায় কোনো কথা বলবেন না।
রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী গত ৭ জুলাই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে রাজশাহী নগরীতে নিজ কার্যালয়ে ডেকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বুধবার সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হয়। অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এমপি ফারুক চৌধুরী বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর উল্লেখ করে এসব সংবাদ প্রকাশ করা হয়। আঘাতে অধ্যক্ষের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হওয়ারও উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে এ ঘটনা সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমপি ফারুক চৌধুরী ১৪ জুলাই রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এমপি বলেন, ‘সেদিন আমি অধ্যক্ষ সেলিমকে মারধর করিনি। শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধক্কি শুরু হলে আমি নিজে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করি।’
অধ্যক্ষ সেলিম রেজা নিজেও সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেদিন এমপি আমাকে মারধর করেননি। খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব খবর ছড়াচ্ছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদ শনিবার রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নানামুখী তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
আসাদ বলেন, ‘অধ্যক্ষ সেলিম রেজা মারধরের শিকার হয়েছেন এবং সেদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।’
তিনি দেউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সেই কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের শোনান।
আসাদ বলেন, ‘এমপির মারধরের শিকার হয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। শরীরে আঘাতের ক্ষতও দেখিয়েছেন অধ্যক্ষ।’
অডিওতে অধ্যক্ষ বলছেন, ‘সেদিন এমপির অফিসে যাওয়ার জন্য অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু অন্য অধ্যক্ষদের ডেকেছিলেন।‘
আক্তারুজ্জামান অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করেন, ‘তারপরে আপনি গেলেন?’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘হ্যাঁ, গেলাম। আমি তো এমনি যাই না, ডাকলে যাই। অন্যরা সাতদিনে তিনদিনই দেখা করে। আমি আর চব্বিশনগরের প্রিন্সিপাল হাবিব ভাই না ডাকলে, কোন মিটিং না হলে যাই না। এটাও আবার রাগ। সেদিনও আমি আর হাবিব ভাই একসঙ্গে গেছি। এই দুইটা লোক ছাড়া ভাই সবাই ওর (এমপির) পা চাটা।’
আক্তারুজ্জামান প্রশ্ন করেন, ‘ওখানে যাওয়ার পর?’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওখানে যাওয়ার পরে বিড়ইলের মজিবর ছিল। ওই যে স্কুল এমপিওভুক্ত হলো। ওরা ফুল-টুল নিয়ে গেছে। ওখানে সেক্রেটারি রশিদ ভাই (গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ) ছিল। ওরা বেরিয়ে আসলো। আমরা বসে ছিলাম। ৫-৭ মিনিট। তারপরে রশিদ ভাইয়ের সাথে হ্যান্ডশেক হলো। কথাবার্তা হলো। ওটা ওমর প্লাজার পূর্ব পাড়ে।
‘তখন রাজু এসে বলছে- এই, এমপি উঠে যাবে। ঢোকেন, ঢোকেন, ঢোকেন। সব ঢুকে গেলাম। ঢুকতেই প্রথম কথা। আমাকে বলছে- সেলিম, তোমার কলেজে কী হয়েছে? আমি বলছি, কই স্যার? কিছু তো হয়নি। তখনই গালি... তোর অফিসে বসে আমার নামে, রাজুর পরিবার নিয়ে, আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলিস, টিচাররা কথা বলে। তুই আমাকে না বলে, ওই টিচারদের বিচার না করে... এই বলে উঠে এসেই মনে করেন যে কিল, ঘুষি, লাথি।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘বার বার উঠছে-বসছে, মারছে। হকিস্টিক ডেকে নিয়ে আসছে। পর্দা টেনে দিল। প্রিন্সিপালকে দিয়েই পর্দা টানাইছে। রাজু পর্দা টেনে দিল। দিয়ে বলছে, এই হকিস্টিক নিয়ে আই। শালাকে হকিস্টিক দিয়ে মেরেই ফেলব। শালাকে আজ মেরেই ফেলবো, শালা আমার বিরুদ্ধে কথা বলে।’
এদিকে অডিও কথোপকথনের বিষয়ে কথা বলতে শনিবার অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। দুপুরের পর তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রোববার সকালে একটি অনলাইনে কথা বলে অধ্যক্ষ দাবি করেন- অডিওটি সত্য নয়, বানোয়াট।
তবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘অডিও ক্লিপটি আমার ও সেলিমের মধ্যে ৯ জুলাই টেলিফোনে কথোপকথনের অংশ। হামলার কথা শোনার পর আমি তাকে ফোন করেছিলাম।’
এদিকে মারধরের শিকার হওয়ার কথা প্রথমে নিজেই বিভিন্নজনকে বললেও এখন ভয়ে তিনি উল্টোপথে হাঁটছেন বলে মন্তব্য করেন রাজশাহী জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা।
তিনি বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমিও তার সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কাছেও তিনি দাবি করেছিলেন যে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে পিটিয়েছেন। কিন্তু এখন শুনছি তিনি ভিন্ন কথা বলছেন।’ কারণ জানতে চাইলে বাদশা বলেন, ‘ভয়ে। স্থানীয় এমপি। এ কারণেই হয়তো।’
বাদশা বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি বলেছি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আশ্বস্ত করেছেন, তারা যা তথ্য পাচ্ছেন সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেবেন।’
অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের অভিযোগটি তদন্ত করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের একটি কমিটি। ১৪ জুলাই থেকে কমিটির সদস্যরা রাজশাহীতে আছেন।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষ সেলিম রেজা শুক্রবার সকালে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। রাজশাহী শহরের রায়পাড়া এলাকায় সেলিমের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তদন্ত দল। কমিটির কাছে তিনি স্বীকার করেছেন যে এমপি তাকে লাঞ্ছিত করেছেন।
কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৫০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। সবশেষ যে অডিওটি প্রকাশ হয়েছে এবং সেখানে যাদের নাম এসেছে তাদের সঙ্গেও কথা বলছি। পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য