সড়কে যানজট, দুর্ঘটনা কিংবা ট্রাফিক নিয়ম ভাঙার প্রশ্ন এলেই ‘যত দোষ, নন্দ ঘোষের’ মতো দায় চাপানো হয় মোটরসাইকেলের ওপর। অনেকেই মনে করছেন, সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, দুই চাকার বিশেষায়িত বাহনটির বিক্রি ও চলাচল সীমিত করা হোক।
সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের প্রথম দিন একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশসহ অন্য অনেক দেশের তুলনায় এ দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। সার্বিকভাবে এর উৎপাদন ও বিক্রিও তুলনামূলকভাবে কম।
জাপানের বহুজাতিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার পরিচালিত এক বাজার জরিপ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন একজন। অর্থাৎ এক শতাংশেরও নিচে। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন। অথচ মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর দিক থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে একজন। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি চারজনে একজন। অর্থাৎ ভারতে ৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ২৫ শতাংশ লোক মোটরসাইকেল ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) পরিচালিত গবেষণার তথ্যমতে, ভিয়েতনামে প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে মোটরসাইকেল আছে ৩৫৮টি। এর বিপরীতে বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য মোটরসাইকেল আছে মাত্র ৭টি।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিক্রির বার্ষিক পরিমাণও অনেক কম। ইন্দোনেশিয়ায় বছরে ৩৮ লাখ, ভিয়েতনামে ২৮ লাখ, পাকিস্তানে ২০ লাখ ও থাইল্যান্ডে ১৫ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এর বিপরীতে বাংলাদেশে এ সংখ্যা এখনও ৬ লাখের কম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্থানীয় উৎপাদনও। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৫ বছরে এখানে ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় তিন গুণ (২ দশমিক ৯৮ গুণ)।
এই সময়ে চাহিদার ওপর দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলের স্থানীয় বাজারে বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে। এখন দেশে সর্বনিম্ন ৭৭ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে প্রায় সব ব্র্র্যান্ডের যেকোনো মডেলের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চলতি বছরের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এখন নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে ৩৭ লাখ ১ হাজার ৭৮৬টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় আছে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০টি।
সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২৩ লাখের হিসাব আমলে নিলেও দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর উল্লিখিত তথ্যের প্রমাণ মিলবে।
সম্প্রতি দেশে ভাড়ায় চালিত অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল বৃদ্ধির কারণে এর ক্রয়-বিক্রয় এবং নিবন্ধনের হারও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। নিবন্ধিত প্রায় ৩০ লাখ মোটরসাইকেলের মধ্যে ২৫ শতাংশ চলাচল করছে ঢাকায়। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ঢাকায় মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে ৫২ হাজার ১২৪টি এবং সারা দেশে ২ লাখ ৮৮১টি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বিআরটিএর নিবন্ধন ছাড়াও দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন অনেক মানুষ। এ সংখ্যা কম করে হলেও লাখ পাঁচেক হতে পারে।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত সকল মোটরসাইকেল সচল আছে, এমন মনে করা যাবে না। সাধারণত মোটরসাইকেলের গড় আয়ুষ্কাল ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরা হয়। সেই বিবেচনায় একটা সময় পর তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তা ছাড়া নানা কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েও মোটরসাইকেল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে সার্বিকভাবে ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি থাকলেও সড়কে মোটরসাইকেল এখনও অনেক কম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, উন্নত গণপরিবহন ছাড়া মোটরসাইকেলের ব্যবহার কমানো কঠিন। তবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
স্ববিরোধী অবস্থানে সরকার
একদিকে মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে দেশে এর উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর তৎপরতা চলছে। শিল্প মন্ত্রণালয় চায় প্রতি বছর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে মোটরসাইকেল উৎপাদন বাড়াতে। এভাবে ২০২৭ সালের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বছরে ১০ লাখ ইউনিটে নিয়ে যেতে চায় সরকার। অপরদিকে এ খাতটির অগ্রগতি নিরবচ্ছিন্ন করতে বাজেটে নানাভাবে নীতিসহায়তা দিয়ে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়কে বাহনটির অবাধ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত করছে।
দেশে ভারতের হিরো ও জাপানোর হোন্ডা ব্র্যান্ডের পরিবেশক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ নিউজবাংলাকে বলেন, মোটরসাইকেল মোটেও বিলাস পণ্য নয়, বরং দ্রুত সময়ে সবার গন্তব্যে পৌঁছানোর নিরাপদ ও অত্যাবশ্যকীয় বাহন। তাই মোটরসাইকেলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে এবং চাহিদা বাড়ছে। বৈশ্বিক বাস্তবতা ও সময়ের এই চাহিদার কারণে চাইলেই এটির চলাচল বন্ধ করা যাবে না। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তকে তিনি সাময়িক বলেও মনে করেন।
১০ কোম্পানির বিনিয়োগ
বর্তমানে দেশে সর্বনিম্ন ৮০ সিসি থেকে সর্বোচ্চ ১৬০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোক ও টু স্ট্রোক মোটরসাইকেল স্থানীয়ভাবে বাজারজাত হচ্ছে। এ খাতে বাজার ধরতে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১০ কোম্পানি বিনিয়োগে নেমেছে। এদের সম্মিলিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার লোকের।
কোম্পানিগুলো যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দেশে মোটরসাইকেলের একটা স্থায়ী বাজার তৈরি করেছে। এখন চেষ্টা সেই বাজার অংশীদারত্বকে আরও বড় করার। এ জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করতে মোটরসাইকেলে যুক্ত করা হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। মোটরসাইকেলের মডেল, ডিজাইন ও সিসিতে আনা হচ্ছে পরিবর্তন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও দেশীয় ব্র্যান্ড ‘রানার’-এর উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান খান নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের যে অগ্রগতি, সেটি সরকারের নীতি সহায়তার ওপর ভর করেই হয়েছে।
মোটরসাইকেলের বাজার কত বড়
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে দেশে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৩টিতে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে এর বাজার ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার। সেটি ২০১৯ সালে বেড়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০১৪ সালে দেশে সবকটি ব্র্যান্ড মিলে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ইউনিট। ২০১৮ সালে সেই বিক্রি বেড়ে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ ইউনিটে দাঁড়ায়। আর ২০১৯ সালে এসে এই বিক্রি দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ ইউনিট।
এর মধ্যে বাজার অংশদারত্বের হিসাব অনুযায়ী ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজের একক অংশীদারত্ব ছিল ৫৩ শতাংশ এবং টিভিএসের ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতীয় ও জাপানি ব্র্যান্ড হিরো হোন্ডার ১৫ শতাংশ এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানারের ৮ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশের বাজার ছিল দেশীয় ও বিদেশি অন্য ব্র্যান্ডগুলোর। তবে বাজার অংশীদারত্বে ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহা, সুজুকি ও মাহেন্দ্রাও।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।
এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।
‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’
দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।
একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।
তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।
‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’
আরও পড়ুন:ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চায় বাংলাদেশ।
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে খাদ্যে ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যবস্থা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, আমরা দেখলাম ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যঘাটতি। আর তা ছাড়া প্রাণী, পশুর খাদ্যের তো অভাবই। এই অবস্থায় আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন রিজার্ভ মানিও তেমন ছিল না। আবার ইনফ্লেশনও (মূল্যস্ফীতি) অনেক বেশি ছিল।
“এশিয়াতে তখন খাদ্যমন্দা। ওই অবস্থায় যাত্রা শুরু করে আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলব না। নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করব। তার কারণ হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সবসময় বলতেন যে, ‘আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাইব না। কারণ ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।’”
তিনি বলেন, ‘ভিক্ষুক জাতির কখনও ইজ্জত থাকে না। কাজেই আমরা মান-সম্মান নিয়েই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আর সেই আদর্শ নিয়েই কিন্তু আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সুরক্ষা বাড়াতে জাহাজ ঘিরে কাঁটাতারে বেড়া দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নাবিকদের নিয়ে জাহাজটি দুবাইয়ের কঙিক্ষত বন্দরে পৌঁছাতে পারে ২২ এপ্রিলের মধ্যে।
জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম এসব তথ্য দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুবাইয়ের পথে রয়েছে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পাড়ি দিয়েছে। বর্তমানে জাহাজটি ঝুঁকিমুক্ত এলাকা দিয়ে চলাচল করছে।
এমভি আবদুল্লাহ প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল স্পিডে দুবাই অভিমুখে চলছে। জাহাজটির দুই পাশে এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধজাহাজ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অগ্রসর হচ্ছে।
মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজটি আগামী ২২ এপ্রিল সকালে গন্তব্যস্থল দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় হাইরিস্ক এরিয়া থেকে বেরিয়ে গেছে জাহাজটি।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌ বাহিনীর দুটি জাহাজ এখনো এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি আছে। নেভির জাহাজের সঙ্গে এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজটি জলদস্যুমুক্ত হওয়ার পর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে; যাতে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা পার হওয়ার আগেই অন্য কোনো জলদস্যুর দল জাহাজটিতে উঠতে না পারে। একই সঙ্গে জাহাজের ডেকে হাই প্রেসার ফায়ার হোস বসানো হয়েছে, যাতে উচ্চচাপে পানি ছিটানো যায়।
এর আগে ১৩ এপ্রিল রাতে সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। আশা করা হচ্ছে, ২২ এপ্রিল জাহাজটি কাঙ্ক্ষিত বন্দরে পৌঁছাবে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। মুক্ত হওয়ার সময় ওই জাহাজ থেকে নেমে যায় ৬৫ জন জলদস্যু। এরপর জাহাজ ও নাবিকরা মুক্ত হন।
দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, ‘পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।’
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
‘এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।’
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, ‘রাজশাহী, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং মৌলভীবাজার জেলা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।’
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণ অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য