গেল কোরবানির ঈদে ময়মনসিংহের ত্রিশালে আলোচিত ষাঁড়টির নাম ছিল কালো মানিক। খামারির দাবি, এটিই দেশের সবচেয়ে বড় ষাঁড়। গত কোরবানি ঈদে ১৫ লাখ টাকা দাম ওঠা ষাঁড়টির জন্য এবার ২০ লাখ টাকা খরচ করতে চেয়েছিলেন কয়েকজন ক্রেতা। কিন্তু এই দামেও বিক্রি করেননি খামারি।
দৈনিক ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয় বিশালাকৃতির কালো মানিকের পেছনে। এখন এটিকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় মালিক।
ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি ছয় বছর আগে স্থানীয় বাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কেনেন উপজেলার ধানীখোলা দক্ষিণ ভাটিপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন সুমন। এরপর থেকে পরম যত্নে লালন-পালন করেছেন তিনি। শারীরিক গঠন, রং আর নামে ক্রেতাদের আকর্ষণ করায় ময়মনসিংহের অন্য ষাঁড়ের চেয়ে দামও উঠেছিল সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা।
কিন্তু নিজের মনমতো দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি। এখন এটিকে আবারও এক বছর লালন-পালন করা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন সুমন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কুচকুচে কালো রঙের জন্য নাম রেখেছিলাম কালো মানিক। অতি যত্নে আর প্রাকৃতিক উপায়ে খইল, ভুসি, ভুট্টা, কলা, ভাত, খড়, ঘাস খাইয়ে বড় করেছি। গত বছর কালো মানিক ৬ ফুট উঁচু ও ১০ ফুটেরও বেশি লম্বা ছিল। দাম হাঁকা হয়েছিল ৩০ লাখ। তখন ক্রেতারা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা দাম বলায় বিক্রি করা হয়নি।’
বর্তমানে গরুটি দৈর্ঘ্যে ১১ ফুট আর প্রস্থে সাড়ে ৭ ফুট। ওজন প্রায় ৫০ মণ। এ জন্য এবার দাম হাঁকা হয়েছিল ৪০ লাখ। তবে এবার সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা দাম উঠলেও আরও বেশি দামের আশায় বিক্রি করা হয়নি।
সুমন বলেন, ‘এবার ঈদে আমার বাড়িতেই ২০ লাখ দাম বলা হয়। তবে আরও দামের আশায় ঈদের আগ মূহুর্তে ঢাকার গাবতলী বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে সর্বোচ্চ দাম উঠে ১৭ লাখ টাকা। ঢাকার চেয়ে গ্রামেই আমার ভালো ছিল।’
ষাঁড়টির জন্য প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে জানিয়ে খামারি বলেন, ‘প্রতিদিন আমার পক্ষে এত টাকা খরচ করা প্রায় অসম্ভব। আবারও এক বছর ষাঁড়টি পালব কি না, করলেও ভালো দাম পাব কি না তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি।’
ষাঁড়টিকে বিক্রি না করে সুমন ভুল করেছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। মোজাফফর মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় আর আকর্ষণীয় হওয়ায় ভালো দাম করেছিল ক্রেতারা। কিন্তু খামারি বিক্রি না করে ভুল করেছেন। এখন আগের দামে ক্রেতা পাওয়া কষ্টকর হবে।’
সামাদ মিয়া বলেন, ‘হাতি আকৃতির ওজন, গায়ের রং আর নামটা সবাইকে আকর্ষণ করেছে। এ জন্য কয়েকজন ব্যক্তি ৫০ মণের ষাঁড়টিকে ২০ লাখ টাকা দাম করেন। এখন যদি খামারি তার ষাঁড়টিকে জবাই করে বাজারে বিক্রিও করেন, তাহলে ৭০০ টাকা কেজি হিসেবে দাম পাবেন সর্বোচ্চ ১৪ লাখ টাকা। তবুও তিনি ৬ লাখ টাকা কম পাবেন। এ হিসেবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারি।’
উপজেলা পশু ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. হারুন অর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার উপজেলায় কালো মানিক নামের এ ষাঁড়টি সবচেয়ে বড়। এটি ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন-পালন করছেন খামারি। ধারণা করেছিলাম এবার বিক্রি করবেন খামারি।
‘এবার মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। এ জন্য অনেক বড় ষাঁড় হাটে নিয়ে আশানুরূপ দাম না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন খামারিরা। আমি মনে করি, লাভ হলে বিক্রি করে দেয়াই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলে নৈশ কোচে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনও আছেন।
রোববার রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ জনকে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানায়।
এর আগে আলোচিত এ মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন, রাজা মিয়া, মো. আব্দুল আউয়াল ও মো. নুরনবী। গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওইদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা জানান।
এ ঘটনায় বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাসে ডাকাতি ও এক নারী যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:গাজীপুরে স্বামীকে মারধরের পর চলন্ত বাস থেকে ফেলে নারীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছেন পাঁচ আসামি।
জেলা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে রোববার বিকেলে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
একই সময় বিচারিক হাকিম আদালত-৫-এর বিচারক রিফাত আরা সুলতানা ২২ ধারায় অভিযোগকারী নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন এসব নিশ্চিত করেছেন।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, শনিবার ভোরে ওই নারীকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মহানগর পুলিশের একটি টহল দল। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বামীকে বাস থেকে ফেলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এসপি আরও জানান, ঘটনা জানার পর মহাসড়কে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার এবং বাসটি জব্দ করা হয়। ওই নারী আসামিদের শনাক্ত করেন।
আসামিরা হলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দরিপাড়া গ্রামের ২৩ বছর বয়সী রাকিব মোল্লা, নেত্রকোণা জেলা সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের ২০ বছর বয়সী সুমন খান, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠালকাচারি গ্রামের ২৩ বছর বয়সী মো. সজিব, একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোলা গ্রামের ১৯ বছর বয়সী মো. শাহীন মিয়া এবং খুলনার রূপসা উপজেলার খান মোহাম্মদপুর এলাকার ২২ বছর বয়সী মো. সুমন হাসান।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোববার দুপুরে অভিযোগ করা নারীর শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সানজিদা হক।
তিনি জানান, ধর্ষণের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
যা ঘটেছিল
বাসে ধর্ষণের অভিযোগে ওই নারীর স্বামী শ্রীপুর থানায় শনিবার রাতে মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন এজাহারের বরাতে জানান, নওগাঁ থেকে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাসে স্বামীর সঙ্গে নামেন ওই নারী। ময়মনসিংহের স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে যেতে অন্য একটি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। রাত ৩টা ১০ মিনিটে তাকওয়া পরিবহনের বাসে ওঠেন। সে সময় বাসে ছয়-সাতজন যাত্রী ছিলেন।
বাদীর অভিযোগ, রওনা দেয়ার কিছু সময় পর বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোতাপাড়ায় পৌঁছালে দুজন যাত্রী নেমে যান। রাত ৩টা ৪০ মিনিটে মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা ফ্লাইওভার পার হয়ে কিছুদূর সামনে গেলে বাসে থাকা দুই-তিনজন এসে হঠাৎ তাকে মারধর শুরু করে। তার স্ত্রী ঠেকাতে গেলে মুখ চেপে ধরা হয়। এরপর বাদীর টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এমসি বাজার এলাকায় তাকে ফেলে দেয়া হয়। তার স্ত্রীকে নামতে দেয়া হয়নি।
এজাহারে আরও বলা হয়, চলন্ত বাসেই ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এরপর জৈনাবাজারে ইউটার্ন নিয়ে তাকে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন:ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার মামলায় ৫১ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বাটের হাট নামক এলাকায় গত বছরের ১৮ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে।
সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫১ আসামির জামিনের জন্য রোববার দুপুরে পীরগঞ্জ আমলি আদালতে আবেদন করা হলে বিচারক এস এম শফিকুল ইসলাম তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধক হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, এই মামলার বাদী ছিলেন তৎকালীন পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান। আসামি করা হয় ১৪৬ জনকে। এর মধ্যে ৫ জন শিশু। পুলিশ তদন্ত করে ৫১ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তারা জামিন নিতে গেলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান।
রামনাথপুর ইউনিয়নের বাটের হাটে হিন্দু পল্লিতে গত বছরের ১৮ অক্টোবর হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আগুনে ৩৯টি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে ২৭টি বাড়িতে।
আরও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে ডাকাত দলের হাতে ধর্ষণের অভিযোগ করা নারীর সোয়াব টেস্টের ফল নেগেটিভ এসেছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই নারীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য গঠন করা টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান রেহেনা পারভীন।
তিনি রোববার বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে সোয়াব টেস্ট নেগেটিভ আসতে পারে। এতে ধর্ষণ হয়নি এমনটি বলা যাবে না।
‘তবে ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন থাকা ও বিভিন্ন আলামত দেখে এটা ধর্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে। অধিকতর পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন আলামত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) ওসি মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ডাকাতির বিষয়টি তিনজনই স্বীকার করেছেন। তবে ধর্ষণের কথা কেবল আসামি রাজা মিয়া স্বীকার করেছেন। অন্য দুজন ডাকাতিতে অংশ নেয়া অন্যদের নাম-পরিচয় দিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
তিন আসামির আদালতে দেয়া জবানবন্দির বরাতে ওসি এসব তথ্য রোববার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসামিরা ছিলেন ছিঁচকে ডাকাত। তারা মহাসড়কে ডিম ও গ্যাস সিলিন্ডার বহনকারী গাড়িতে ছোট ছোট ডাকাতি করতেন। লুট শেষে গাড়ি মহাসড়কেই ফেলে রেখে যেতেন। মঙ্গলবারও তারা এ রকম ডাকাতি করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই তারা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুটের সিদ্ধান্ত নেন এবং ওই বাসে ডাকাতি করেন।’
যা ঘটেছিল
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোডে জনতা নামক খাবার হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো বিরতি শেষে বাসটি ফের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
পথে তিনটি স্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন করে মোট ১২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন এবং পেছনের দিকে খালি সিটে বসেন।
যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) পার হওয়ার আধা ঘণ্টা পর (রাত দেড়টার দিকে) টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছুরি, চাকুসহ দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসের চালককে সিট থেকে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে পেছনে সিটের নিচে ফেলে রাখে।
টহল পুলিশের কাছে ধরা পড়া এড়াতে তারা বাসটিকে গোড়াই থেকে ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাত দল বাসটির জানালার পর্দা ও যাত্রীদের পরনের বিভিন্ন কাপড় ছিঁড়ে চোখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা বাসের ২৪ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বাসের এক নারীকে পাঁচ-ছয়জন ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার নারী যা বলেন
সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ওই নারীও। তিনি বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়ার একটি জায়গা থেকে উঠি। সিরাজগঞ্জের হোটেলে রাত সাড়ে ১১টায় এসে পৌঁছাই। খাওয়া-দাওয়া শেষে গাড়ি চলল। তার কিছুক্ষণ পরই তিনটা ছেলে ওঠে।
‘তারপর তারা বলে, আমাদের আরও লোক আছে সামনে। তখন আরও চারটা লোক ওঠে। তার মধ্যে আরেকজন বলে, সামনে আমার আরও লোক আছে। সিরাজগঞ্জের মধ্যে আরও ছয়জন ওঠে। তাদের পেছনে সিট দিয়ে দেয়।’
নিজেকে একজন পরিবহনশ্রমিকের স্ত্রী দাবি করে ওই নারী বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর তিনজন ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বলে, আমরা নামব। তার পরই ড্রাইভারের গলায় চাক্কু বাধায়। তারপর ড্রাইভার ও হেলপারকে তুলে নিয়ে চলে আসে। বাসের পেছনের দিকে নিয়ে এসে আটকায়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে কন্ডাক্টরকেও তুলে নেয়।’
ওই নারী আরও বলেন, ‘তারপর যাত্রীদের মধ্যে বেটাছেলেদের সবাইকে বেঁধে ফেলে। মুখও বেঁধে ফেলে। পরে মেয়েদেরও বেঁধে ফেলতে শুরু করে। টাকা-পয়সা-মোবাইল সবই কেড়ে নেয়। কারও গয়নাও নিয়ে নেয়।
‘একপর্যায়ে আমার গলা চেপে ধরে। ছয়জন আমাকে ধর্ষণ করে। পরে বিভিন্ন জায়গায় গাড়ির গতি কমিয়ে ডাকাতরা নামতে থাকে। একসময় হঠাৎ ডাকাত দলের চালক গাড়ির জানালা দিয়ে নেমে যায়। গাড়িটি খাদে পড়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসেন উদ্ধার করতে। যাত্রীরা জানালা দিয়ে বের হয়ে আসেন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছে তারা ডাকাতির ঘটনা বলেন। আমাকে প্রথমে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার রাতে ভর্তি করা হয় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে।’
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর কমিশন ও ট্যাংকলরির ভাড়া না বাড়ানোর প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘট স্থগিত করেছে খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি ও জ্বালানি মালিক সমিতি।
রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘট বিকেলে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতারা।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের সঙ্গে সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সমিতির খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক আমাদের ডেকেছিলেন। দীর্ঘক্ষণের সভায় তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আমাদের বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করতে চেয়েছেন।
‘তাই আমরা আপাতত ধর্মঘট স্থগিত করেছি। কাল সকাল থেকে আবারও তেল পরিবহন শুরু হবে। তবে শিগগিরই দাবিগুলো না মেনে নিলে আমরা আবার ধর্মঘট ডাকব।’
ধর্মঘটের কারণে রোববার সকাল ৮টা থেকে খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ ছিল। তেল পরিবহন বন্ধ ছিল খুলনার ১০ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুরের চার জেলায়।
তবে পাম্প থেকে তেল বিক্রি বন্ধ হয়নি।
সমিতির মহাসচিব ফরহাদ হোসেন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের ট্যাংকলরির ভাড়া বাড়ানো হয়নি। সরকার ভাড়া নির্ধারণ না করে দিলে আমরা ভাড়া বাড়াতে পারি না। এক ট্যাংকলরি তেল নিয়ে নির্ধারিত পাম্পে যেতে আমাদের আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের তুলনায় তেলের দাম বাড়ানো হলেও পাম্প মালিকদের কমিশন বাড়ানো হয়নি। এসব দাবিতে আমরা আজ থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরে আলোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার বিকেলে ওই তিন আসামিকে টাঙ্গাইল আদালতে তোলা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। পরে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলমের আদালতে রাজা মিয়া ও আব্দুল আউয়াল এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমী খাতুনের আদালতে নুরন্নবী জবানবন্দি দেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও কোর্ট ইন্সপেক্টর তানভীর আহমেদ রাত ৮টার দিকে জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিন আসামিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তার কোনো কাগজ এখনও আমাদের হাতে আসেনি।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাজা মিয়াকে আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক পাঁচ দিন মঞ্জুর করেন। তবে রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই তিনি আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হন।
অন্য দুই আসামি আব্দুল আউয়াল ও নুরুন্নবীর রিমান্ড আবেদনের আগেই দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওইদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা জানান।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাসে ডাকাতি ও এক নারী যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
এ অভিযোগে পরে বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে।
এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
তেলের দাম বাড়ানোর পরদিন শনিবার দুপুরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, মূল্য বৃদ্ধি না করা হলে তিনটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা হারাবে সরকার।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরও এ তেলে লিটারপ্রতি ৮ দশমিক ১৩ টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি তেল যাতে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার না হয়ে যায়, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সর্বশেষ গত বছরের ৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে কেবল ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি করে পুনর্নির্ধারণ (ডিজেল ৮০ টাকা ও কেরোসিন ৮০ টাকা) করা হয়। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা সত্ত্বেও অকটেন ও পেট্রলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি।
মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুর দিকে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ কিছুটা কমায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য আরও বেড়ে যায়।
ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বিপিসির ব্রেক ইভেন অর্থ আন্তর্জাতিক বাজারে যদি ডিজেল প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ ডলার এবং অকটেন প্রতি ব্যারেল ৮৪ দশমিক ৮৪ ডলারে নেমে আসে, তবে ডিজেল ও অকটেন প্রতি লিটার যথাক্রমে ৮০ টাকা ও ৮৯ টাকায়, অর্থাৎ বিদ্যমান মূল্যে বিক্রয় করা সম্ভব হতো, যা এখন প্রায় অসম্ভব।
‘একইভাবে ক্রুড অয়েলের মূল্য এ বছরের জুনে ব্যারেলপ্রতি ১১৭ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে, যা এখনও অব্যাহত আছে। জ্বালানি তেল আমদানিতে সর্বশেষ গত জুলাই মাসের গড় প্লাস রেট অনুযায়ী বিপিসির দৈনিক লোকসানের পরিমাণ ডিজেলে প্রায় ৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৭০০ টাকা ও অকটেনে প্রায় ২ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার ২১৬ টাকা। মোট প্রায় ৭৭ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৯১৬ টাকা। গত মে ও জুনে লোকসান ছিল শতাধিক কোটি টাকা।’
বিপিসির বিপুল ভর্তুকি দিতে হচ্ছে জানিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘এভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিপিসির প্রকৃত লোকসান/ভর্তুকি দাঁড়ায় ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার ওপরে। সর্বশেষ মূল্য সমন্বয়ে ডিজেলের মূল্য ১১৪ টাকা করা হলেও গত জুলাইয়ের গড় হিসাবে প্রতি লিটারে খরচ পড়বে ১২২ দশমিক ১৩ টাকা, অর্থাৎ প্রতি লিটারে তার পরও ৮ দশমিক ১৩ টাকা লোকসান বিপিসিকে বহন করতে হবে।
‘গত ১২ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি বা সমতুল্য ১১৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে, যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকা বেশি এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬ দশমিক শূন্য ৩ রুপি বা সমতুল্য ১৩০ দশমিক ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা বাংলাদেশ থেকে ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা বেশি। এ পার্থক্যের কারণে বহু কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানীকৃত জ্বালানি পণ্য পাচার হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান। তাই মূল্য সমন্বয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি পণ্যের মূল্যের পার্থক্যজনিত পাচার রোধ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।’
‘বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা কমছে’
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। জ্বালানি পণ্যের বিদ্যমান হারে তেল বিক্রয় ও অন্যান্য আয় খাতে গড়ে বিপিসির মাসিক জমা/আয় প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এলসি পেমেন্টসহ অন্যান্য খাতে বিপিসির ব্যয় বর্তমানে সর্বশেষ জুলাই মাসে গিয়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩১২ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা।’
এতে বলা হয়, ‘বিপিসির জ্বালানি তেলের অর্থায়নের জন্য দুই মাসের আমদানি মূল্যের সমান হিসেবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন হিসেবে সংস্থান রাখা আবশ্যক। বর্তমানে চলতি মূলধন হ্রাস পাওয়ায় গত মার্চ থেকে অদ্যাবধি উন্নয়ন প্রকল্প ও বিবিধ খাত থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে ভর্তুকিসহ জ্বালানি তেলের মূল্য ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।
‘গত ৩১ জুলাই বিপিসির হিসাবে সামগ্রিকভাবে অর্থ জমা রয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে আগস্ট মাসের পর আমদানি ব্যয় অর্থায়ন করা সম্ভব হবে না। উল্লেখ্য, বিপিসির জন্য জাতীয় বাজেটে কোনো অর্থ সংস্থান রাখা হয়নি। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক পেমেন্ট অবিস্মিত রাখার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে বিপিসির আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখা জরুরি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘২০১৬ সালে সরকার যখন জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করে পুনর্নির্ধারণ করে, তখন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৭৯ টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর সরকার যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে, তখন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৫ টাকা, যা বর্তমানে ৯৩ দশমিক ৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
‘অধিকন্তু বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকসমূহ বিসি রেটে বিপিসির এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কেট রেটে ডলার সংগ্রহের নির্দেশনা প্রদান করে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’
সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বর্তমানে বিপিসিতে তার পরিচালন সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিজস্ব তহবিল হতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এগুলো হলো সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডবল পাইপলাইন, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন, জেট এ-১ পাইপলাইন এবং ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন।
‘তা ছাড়া ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পের সমুদয় অর্থ (প্রায় ১৯ হাজার ৪০৪ দশমিক ৭২ কোটি টাকা) বিপিসির নিজস্ব তহবিল হতে সংস্থানের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ডিপিপি অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা না হলে বর্ণিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে বিপিসি আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য