এবার আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ৮ লাখ বেশি পশুর কোরবানি হওয়াটাকে দেশবাসীর সামর্থ্য বাড়ার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘এ বছর দেশবাসী সবার কোরবানির ঈদ উদযাপন বেশ ভালো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ৮ লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক বাড়তি কোরবানি প্রমাণ করে দেশের মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে।’
বুধবার ‘এক নজরে বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ মোড়ক উন্মোচন ও সাংবাদিকদের সাথে ঈদ-পরবর্তী মতবিনিময়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যদিও গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর দাম অনেক বেশি ছিল। তা সত্ত্বেও ৮ লাখ বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। অর্থাৎ এই করোনা মহামারির মধ্যে এবং বৈশ্বিক সংকটে যখন একটি মন্দা পরিস্থিতি সমগ্র বিশ্বে বিদ্যমান, তখন বাংলাদেশের মানুষের অন্তত কোরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে সামর্থ্য বেড়েছে, এটিই বুঝায়।’
সরকারি হিসাবে এবার সারা দেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছে। আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। এই হিসাবে সংখ্যাটি বেড়েছে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১ বেশি।
দেশের সবগুলো হাট এবং অনলাইনে এই পরিমাণ পশু বিক্রি হয়েছে। এই হিসাবে অনলাইনে যেসব পশু বিক্রি হয়েছে, সেগুলোও ধরা আছে।
তবে হাটে না নিয়ে খামারির বাড়ি থেকে বা সড়ক থেকে যে পশু বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এই হিসাবের বাইরে। সে হিসাবে প্রকৃত কোরবানি এর চেয়ে বেশি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোরবানি দেয়া হয়েছে গরু ও মহিষ। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৬টি। এর মধ্যে সিংহভাগই গরু নিশ্চিত হলেও কতগুলো মহিষ, সেই সংখ্যাটি আলাদাভাবে হিসাব করেনি সরকার।
অন্যদিকে ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হয়েছে ৪২ লাখ ২০ হাজার ৮২০টি। এই হিসাবেও কতগুলো ভেড়া তা আলাদাভাবে চিহ্নিত হয়নি।
সারা দেশে বাড়লেও বন্যা আক্রান্ত সিলেট বিভাগে এবার কোরবানি কম হয়েছে। আগের বছর এই বিভাগে পশু হয়েছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪১টি। এবার হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৩টি। অর্থাৎ কমেছে প্রায় ৯৭ হাজার।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আপনারা দেখেছেন কোরবানি বেশি হলেও তার সবটাই দেশীয় পশুতেই সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের যে প্রয়োজন সেটি আমরা নিজেরাই মেটাতে পারছি। অর্থাৎ প্রাণিসম্পদেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। আর এগুলো প্রমাণ করে সরকারের বহুমুখী উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে মানুষ।’
আরও পড়ুন:বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই বলে সুখবর দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নানা পদক্ষেপ বাংলাদেশকে এই সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে এই তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কবলে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতির তোপে পড়লেও বাংলাদেশ সুবিধাজনক জায়গায় আছে। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তবে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাত মিলে দক্ষিণ এশিয়ায় গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মূলত খাদ্য ঘাটতিই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছে সংস্থাটি।
খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। তবে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ও নেপালে বড় ধরনের খাদ্য ঘাটতি দেখা যায়নি। পাকিস্তানে সারের অভাব এবং তাপপ্রবাহের কারণে গম ও চালের উৎপাদন কম হয়েছে। ভুটান এবং শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণ খাদ্য সরবরাহে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি অনুভব করছে। শ্রীলঙ্কায় সারের ঘাটতির কারণে কৃষি উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমেছে এবং খাদ্য আমদানি কেনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার অভাব রয়েছে। সার ও জ্বালানির (জমি প্রস্তুতি, পরিবহন এবং ফসল সংগ্রহের কার্যক্রমের জন্য) অভাব খাদ্য সরবরাহকে আরও সীমিত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮০ শতাংশে উঠেছে। পাকিস্তানে ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচকটি সে তুলনায় অনেক কম, এক অঙ্কের ঘরে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগ মোকাবিলায় চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছে, সারে ভর্তুকি বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
এ ক্ষেত্রে ভারতও স্বস্তিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দেশটি ৪৪ হাজার টন ইউরিয়ার প্রথম চালান পেয়েছে। ভারতীয় চালের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন।
আর ভুটানে সরকার পাইকারি বিক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রত্যক্ষভাবে এবং রেয়াতি কাজের মূলধনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রি মজুদ করছে।
আরও পড়ুন:সারা দেশে ডিম ও মুরগির দাম চড়ে যাওয়ার নেপথ্যে মাত্র তিন দিনের পরিবহন সংকট। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার পর ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা হিসেবে পণ্য পরিবহন খাতে ছিল অঘোষিত ধর্মঘট। ফলে খামার থেকে প্রথম তিন দিন এ দুই পণ্যের সরবরাহ আসেনি।
এতে গোটা দেশে খবর ছড়িয়ে পড়ে সরবরাহ সংকট। এ সুযোগ কাজে লাগায় মধ্যস্বত্বভোগী আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ও অনৈতিক বাড়তি মুনাফার চেষ্টায় প্রথম দফায় এই মধ্যস্বত্বভোগীরা যার যার আগের মজুত থেকেই দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। অন্যদিকে খামারিরা পরিবহন সংকটে সরবরাহ দিতে না পেরে প্রথম দিকে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়লেও বাজারে দাম বাড়ার ফায়দা পরে তারাও নিতে শুরু করেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে ডিম ও মুরগির সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি খামার গেটে প্রতি পিস ডিমের ক্ষেত্রে ২০-৫০ পয়সা হারে এবং লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা করে বাড়াতে থাকেন খামারিরা। এভাবে খামারিরা দফায় দফায় যে হারে দাম বাড়িয়েছেন, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা স্থানভেদে নিজেদের লাভ বিবেচনায় আনুপাতিক হারে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামেন। ফলাফল বাজারে এখন এসব পণ্যের দাম নামছে না।
এ প্রসঙ্গে ফিড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খামার পর্যায়ে দাম বেড়েছে এটা সত্য। এই বাড়তি দামের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে মধ্যস্বত্বভোগী যারা রয়েছে, তাদের আরও বাড়তি মুনাফার একটা অপচষ্টো তো সব সময়ই থাকে। আগে ৬ টাকায় কিনে ৯ টাকায় বিক্রি করত, এখন ৯-১০ টাকায় কিনে ১৩-১৪ টাকা বিক্রি করছে। তবে এবার দাম বাড়ার এই অপচেষ্টার পেছনে ছিল জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি।’
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার জানান, সারা দেশে ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধি উসকে দিয়েছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর মাত্র তিন দিনের পরিবহন সংকট।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী বশিররুল্লাহ বলেন, ‘বাজারে কাঁচা সবজি ও মাছ-মাংসের দাম বাড়ায় মানুষ ডিম ও ব্রয়লার বেশি খাচ্ছে। ফলে চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে।’
ভোক্তার পকেট কেটে কে কতটা লাভ করছে
খামারে একটি ডিমের উৎপাদনের পেছনে খরচ পড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকা। খামারিরা সেই ডিমে পরিচালন খরচ যোগ করার পর আনুপাতিক হারে মুনাফা নির্ধারণ করে থাকেন। খামারসংশ্লিষ্টদের দাবি, খামার গেটে একটি ডিম এখন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে খামারির ডিমপ্রতি লাভ দুই থেকে আড়াই টাকা।
সেই ডিম খামার গেট থেকে আড়তদার, পাইকার ও খুচরাপর্যায়ে তিন দফা হাতবদলের পর পরিবহন খরচ যোগ হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে স্থানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। অর্থাৎ এই মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতিটি ডিম থেকে লাভ করছেন ৪ থেকে ৫ টাকা।
একইভাবে ১৩৫ টাকা আট মাস বিনিয়োগের পর খামারিরা এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার থেকে লাভ করেন ১৫-২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে খামারিদের বিক্রয় মূল্য ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। হাতবদলের পর ভোক্তাপর্যায়ে সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। এখানে হাতবদলে দর বৃদ্ধি ৪০-৪৫ টাকা, যা পুরোটাই যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।
বাড়তি দামে খামারিদেরও আছে যৌক্তিকতা
দেশে ছয়-সাত মাস ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে। ১৭ টাকার ভুট্টা হয়ে গেছে ৩৬ টাকা, ৩০ টাকার সয়াবিন মিল হয়ে গেছে ৬৫ টাকা। আটার দামও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এগুলো দিয়ে পোল্ট্রি ফিড তৈরি হয়। এর দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচের ওপর।
এ ছাড়া বিদ্যুতে লোডশেডিং হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এতে আগের তুলনায় খরচ দুই থেকে আড়াই টাকা বাড়তি যোগ হয়েছে। এর সঙ্গে ওষুধের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সব কিছুর দাম বাড়ায় ব্যবসার পরিচালন খরচও বেড়েছে। এর ফলে এক বছর আগে একটি ডিম উৎপাদনে যেখানে খরচ হতো ৬ টাকা, এখন তার খরচ পড়ছে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকা।
অন্যদিকে এক বছর আগে এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এখন সেই একই ওজনের ব্রয়লারের উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
দাম বাড়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (বিএবি) সভাপতি ও নাহার এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রকিবুর রহমান (টুটুল) জানান, দাম বৃদ্ধির প্রবণতা যেভাবেই ঘটুক, খামারপর্যায়ে দাম যৌক্তিকভাবেই বাড়ানো হয়েছে। দামের এই বৃদ্ধি না হলে দেশি খামারিরা এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যেত।
পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী সাত্তার মিয়া বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। সেতুর টোল ভাড়া বেড়েছে। সড়কে চাঁদাবাজি বেড়েছে। সব মিলিয়ে পরিবহন ব্যয় বাড়ায় ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’
চাহিদার তুলনায় আছে ঘাটতি
করোনা-পরবর্তী সময়ে মুরগি ও ডিমের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। ফলে প্যারেন্ট মার্কেট হোল্ডাররা মুরগির বাচ্চা উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ডিমের খামারও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া অতিমাত্রার গরম ও সার্বিক উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় কুলাতে না পারায় সারা দেশে এখন ছোট বেশির ভাগ খামার বন্ধ রয়েছে। এসবের প্রভাবে সারা দেশে চাহিদার তুলনায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ আগের চেয়ে ২০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ‘হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম বেড়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে খামার পর্যায়ে ডিম উৎপাদন হয় প্রায় চার কোটি পিস।
পোল্ট্রি খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা দাবি করছেন, বিভিন্ন খামার বন্ধ হয়ে পড়ায় এখন সেই উৎপাদন নেমে এসেছে তিন কোটিতে।
১০ টাকায় ডিম খাওয়ার দিন শেষ
ফিড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকসান দিয়ে কেউ ব্যবসা করবে না। সব কিছুর দামই যেখানে বেড়েছে, সেখানে খামারিরা করোনা-পরবর্তী দীর্ঘদিন লোকসান করছিল। এখন পরিস্থিতির কারণে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। একটা ক্রাইসিস পিরিয়ডে মধ্যস্বত্বভোগীরাও হয়তো কিছুটা বাড়তি লাভের চেষ্টা করছে। তাই বলে কি লোকেরা কিনছে না? চাহিদা আছে বলেই তো কিনছে, আবার বাড়তি খরচের পাশাপাশি ঘাটতি থাকার কারণেই তো দাম বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্যারেন্ট হোল্ডাররা যখন ৫ টাকায় মুরগির বাচ্চা বিক্রি করেন, লোকসান দেন, তখন তো সরকার ২০ টাকা লাভ করে দিতে পারে না। যেটা বাড়ছে, সেটা বাড়তি চাহিদা এবং সরবরাহে ঘাটতি কারণেই। কিন্তু এটাকে নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি হচ্ছে। সবারই মনে রাখা দরকার, ৮ টাকায় ডিম খাওয়ার দিন আর নেই। ৯০ টাকার ডলার এখন অফিশিয়ালি হয়েছে ১১৪-১১৫ টাকা। ডলারের এই বাড়তি দামের কারণে এ খাতে ফিড আমদানি খরচ সরাসরি ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ডিজেলের কারণে দেড় থেকে দুই টাকা খরচ বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বাড়তি ডেলিভারি খরচ দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পোল্ট্রি খাতটি একটি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।’
ডিম আমদানির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
খুচরা এক হালি ডিমের দাম এখন ৫৫-৬০ টাকা। স্থানভেদে এখনও প্রতি ডজন ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। যারা মাছ-মাংস ও কাঁচাবাজারের অসহনীয় দামে ভরসা করত এই ডিমের ওপর, তাদের কাছে এখন সেই ডিমও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার ডিম আমদানির পথ উন্মুক্ত করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিমের দাম এত বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কিছু ব্যবসায়ী ডিমের বাজারকে অস্থির করে তুলেছেন। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ভারত থেকে ডিম আমদানির বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।’
তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন খামারিরা। এ প্রসঙ্গে ফিড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিমের দাম বাড়ছে, সেটি ঠিক হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে মুরগির দাম অনেকটা কমে আসছে। কিন্তু খরচ অনেক বাড়ছে। সেটিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। তাই বলে ডিম আমদানি? এটা কোনোভাবেই দেশীয় শিল্পের জন্য সুখকর হতে পারে না।’
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, ‘সরকার এখনও সেই সিদ্ধান্ত নেয়নি। শুধু পরিকল্পনায় আছে। আমার বিশ্বাস, বাস্তবে সেটির প্রতিফলন ঘটবে না, দেশীয় শিল্পের স্বার্থেই।’
আরও পড়ুন:দেশকে অস্থিতিশীল করতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হঠাৎ পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন বলে দাবি করেছেন জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠির নলছিটিতে বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় তিনি এমন দাবি করেন।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমু বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হঠাৎ করেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেতে চাচ্ছেন। পণ্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চান।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের পরাজিত শক্তি পঁচাত্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। তদের মদদ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট লাগিয়ে জিয়া সাড়ে ১১ হাজার মানবতাবিরোধীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি ইনডেমেনিটি বিল করে খুনিদের রক্ষাও করেছিলেন।’
সকাল ১০টার দিকে নলছিটি সরকারি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তছলিম উদ্দিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ কবির খান।
ট্রেজারি-প্রধানদের অপসারণের নির্দেশনার পর এবার ডলার নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগে ছয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর এমডিদের বুধবার এ চিঠি দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
ব্যাংক ছয়টি হলো ডাচ-বাংলা, সাউথইস্ট, প্রাইম, সিটি, ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এর আগে এ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ দিয়ে প্রত্যেক ব্যাংকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একই দিনে আরেকটি চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডলার বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা নেয়া যাবে না ব্যাংকের আয় খাতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাংকে ইন্সপেকশন করা হবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফার তালিকায় আরও প্রায় এক ডজন ব্যাংক আছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এসব ব্যাংককে তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। এ জন্য সব ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
তালিকায় রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের নাম।
এসব ব্যাংক ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন:দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া। ফলে বাজারে পণ্যের সংকট সৃষ্টি। আর ঘাটতির কারণে বেড়ে যাচ্ছে দাম।
ভোজ্যতেলের বাজারে এমন চিত্র বরাবরের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়াতে আবারও সেই পুরোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে চলেছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারের কাছে সয়াবিন ও পামওয়েল তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে আমদানি ও উৎপাদক সমিতি। এবার তাদের যুক্তি টাকার বিপরীতে ডলারের উচ্চ মূল্য। দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু সময় দিতে রাজি নয় কোম্পানিগুলো।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মিরপুরের শেওড়াপাড়াসহ অলিগলির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বাজারে তেলের সংকট হয়েছে। কোম্পানির প্রতিনিধিরা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছেন না।
দোকানিরা বলছেন, টাকা দিলেও তেলের চাহিদা নিচ্ছে না সব কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। ফলে ক্রেতারা চাহিদামতো তেল পাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে আগে সরবরাহ করা তেল থাকলে তা কিনতে পারছেন কিছু ক্রেতা। তবে চাহিদার তুলনায় তা কম।
বাজার পরিস্থিতি
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে মদিনা স্টোরের দোকানি আলতাফ হোসেন জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তেলের সরবরাহ নেই। দোকানে সরিষার তেল ছাড়া কোনো সয়াবিন তেল নেই।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ কোম্পানির কোনো প্রতিনিধিকে এখন দেখা যায় না। দু-একজনের দেখা পেলেও তাদের বক্তব্য- দাম বাড়বে, তাই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না।’
জামাল নামে আরেক দোকানি বলেন, ‘আগের কেনা সামান্য তেল আছে। তা-ও শেষ হয়ে যাবে। তেল চাইলে দেয়া হচ্ছে না। যেসব কোম্পানি বেশি পরিমাণ তেল সরবরাহ করে, তারাই চাহিদা নিচ্ছে না। ক্রেতারা পাঁচ লিটারের ক্যান চান। অথচ দোকানে এক ও দুই লিটারের মাত্র কয়েক বোতল ভোজ্যতেল আছে।’
মিরপুর ৬০ ফুট রোডের জহির জেনারেল স্টোরের জসিম জানান, ‘দোকানে তেল নেই। কোম্পানির লোকদের পাওয়া যায় না। দুই-একজনকে পেলেও তার সরবরাহের বিপরীতে অগ্রিম টাকা নেয় না। বলে, কোম্পানি থেকে তেল দেয়া হচ্ছে না।
‘বাধ্য হয়ে ক্রেতারা রাইস ব্রান অয়েল, সরিষা ও সানফ্লাওয়ার তেল নিচ্ছে। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা এত দামি তেল কিনতে পারছে না। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ‘তেলের সরবরাহ থাকলেও আগের মতো না। দুই-একটি কোম্পানি তেল দিলেও কমিশন কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে একটু ছাড় দিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
দামবৃদ্ধির প্রস্তাব
বিশ্ববাজারে দাম ক্রমান্বয়ে কমে আসায় দেশে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয় ১৮ জুলাই। এক মাস না যেতেই নতুন করে আবার দামবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য পতনের উল্লেখ করে তেলের দামবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০, বোতলজাত ২০৫ ও পাঁচ লিটার তেলের দাম ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বোতলজাত সয়াবিন লিটারে ২০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৪ টাকা ও পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫০ টাকা দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়।
পর্যালোচনা করছে ট্যারিফ কমিশন
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, ১৮ জুলাই দাম সমন্বয়ের পর আবার ১৫ দিনের মাথায় দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব হাস্যকর।
‘দাম নির্ধারণ করা হয় এক মাসের জন্য। কিন্তু কোম্পানিগুলো নেই নিয়ম মানছে না। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম দ্রুত কমছে। আবার ডলারের বিপরীতে কমছে টাকার মান। সবদিক পর্যালোচনা শেষে সবশেষ যে মূল্য নির্ধারণ হয় তখনও ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখীই ছিল।’
ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, ডলারের তেজিভাব কমছে। তবে আগের তুলনায় এখনও বেশি। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দাম এবং বিশ্ববাজারে তেলের দাম বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে ট্যারিফ কমিশন। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ক্রেতার নাভিশ্বাস
প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম চড়া। বাজারে গিয়ে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠেছে। ভোজ্যতেল যেহেতু ক্রেতার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই এই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে কেনার ক্ষমতা হারাচ্ছে ভোক্তা। পড়ছে বাড়তি চাপ।
ক্রেতারা বলেন, সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি এর আগেও করা হয়েছে। এবারও একই কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। ক্রেতাদের স্বার্থ দেখবে কে?
হাতিরপুল বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা আলিম উদ্দিন বলেন, ‘বেতন বাড়ছে না। অথচ সবকিছুর দাম বাড়ছে। ভয়াবহ এক সংকট সামনে এসেছে। আগে সংসারে যে পরিমাণ তেল প্রয়োজন হতো, এখন তা প্রায় অর্ধেক কমিয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না।’
শেওড়াপাড়া বাজারের সানজিদা খাতুন বলেন, ‘তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল দিতে পারছে না। অগত্য দুই লিটার নিতে হলো।’
আলিম স্টোরে তেল কিনতে আসা ক্রেতা আমিনুল জানান, ‘তিনটি দোকান ঘুরে এক দোকানে তেল পাওয়া গেছে। তাও বোতলের গায়ে উল্লেখ থাকা দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। তেল কিনতে পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা
ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, তরল পদার্থ পরিমাপের একক হিসেবে লিটার ব্যবহৃত হলেও ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজারে মণ ও খুচরা বাজারে কেজিতে বিক্রির প্রবণতা রয়ে গেছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খোলা ভোজ্যতেলের মিলগেট মূল্য অতিমাত্রায় পরিবর্তনশীল হওয়ায় সেকেন্ডারি মার্কেটে মূল্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। তাই খোলা ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। খোলা ভোজ্যতেলে সেকেন্ডারি বা পাইকারি বাজারে প্রবেশের পর এই তেলের কোনো ব্রান্ডিং থাকে না।
সরকারের এই প্রতিষ্ঠান মনে করে, খোলা ভোজ্যতেল সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিশোধনকারী মিলগুলো সরবরাহ আদেশে দেয়া মেয়াদ ১৫ দিন উল্লেখ করলেও তা ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত ছাড়িয়ে গ্রহণ করা হয়। এতে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের এসও (চাহিদাপত্র) বাজারে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন:গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেড এবং টি কে গ্যাস অ্যান্ড গ্যাস সিলিন্ডার লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।
চুক্তির আওতায় টি কে গ্যাস অ্যান্ড গ্যাস সিলিন্ডার লিমিটেড গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেডকে আগামী ১ বছরের মধ্যে ৭ লাখ সিলিন্ডার সরবরাহ করবে।
বুধবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এই চুক্তি সই হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান খন্দকার নূরুজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কবির হোসেন, টি কে গ্রুপ অপ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার, টি কে গ্যাস এন্ড গ্যাস সিলিন্ডার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এবং গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আহসান হাবিব হিরক।
অনুষ্ঠানে দুই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অগ্রাধিকারমূলক শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের সুরক্ষায় যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
বুধবার বিকেলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়।
চুক্তির আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০টি শিল্প খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কার্যক্রম নেয়া হবে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধানে সাংগঠনিক পর্যায়ে (শিল্প খাতভিত্তিক মালিক সমিতি) এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সক্ষমতা তৈরি ও প্রচারণা কার্যক্রম নেয়া হবে। এ প্রকল্পে সহায়তা দেবে আইএলওর আরএমজি প্রোগ্রাম। অর্থায়ন করবে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস সরকার।
প্রকল্পের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল, চামড়া, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, আসবাব, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং, স্থানীয় বাজারকেন্দ্রিক তৈরি পোশাক ও স্টিল রি-রোলিং শিল্পে কাজের নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে ১৫টি ইউনিট স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া ২ হাজার ৪০০ সেফটি প্রতিনিধি ও ১০০ সেফটি কমিটির মাধ্যমে শিল্প মালিক ও কর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা ও সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
অনুষ্ঠানে আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, ‘অগ্রাধিকারমূলক শিল্প খাতগুলোর নিরাপদ সংস্কৃতি চর্চাকে উন্নত করার প্রক্রিয়ায় এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আইএলও গর্বিত।
‘আশা করছি, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা এ দেশের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, হতাহতের ঘটনা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে এবং এর ফলে অসংখ্য জীবন রক্ষা পাবে।’
বাংলাদেশের শ্রম আইনে ৫০ অথবা এর বেশি কর্মী কাজ করে এমন সব প্রতিষ্ঠানে সমানসংখ্যক মালিক ও কর্মী প্রতিনিধি নিয়ে সেফটি কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইএলও-এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ৯০০ সেফটি কমিটির সদস্যদের অগ্নিনিরাপত্তা, পেশাগত সেফটি ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। এর ফলে কমিটিগুলো তাদের কর্মক্ষেত্রের সেফটি ইস্যুগুলো আরও ভালোভাবে চিহ্নিত ও তদারক করতে পারবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কর্মীদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। শক্তিশালী ও কার্যকর সেফটি ইউনিট, সেফটি কমিটি ও সেফটি প্রতিনিধি তৈরিতে আইএলওর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় এফবিসিসিআই এই প্রকল্প নিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উন্নত কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হলে আমাদের কারখানা আরও নিরাপদ হবে, উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। আর তা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, পরিচালকবৃন্দ ও এফবিসিসিআইয়ের সেফটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ।
এর আগে গত মে মাসে আইএলওর আরএমজি প্রোগ্রাম ঢাকায় প্রথমবারের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি ফোরামের (আইএসএফ) আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সব শিল্প খাতে কর্মক্ষেত্রে সেফটি ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নবিষয়ক আলোচনা হয়।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইর সহায়তার এক হাজার আরএমজি সেফটি কমিটিকে অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (ওএসএইচ), অগ্নিনিরাপত্তা ও কোভিড-১৯ গাইডলাইন বিষয়ে সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে আইএলওর আরএমজি প্রোগ্রাম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য