রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস দুপুর ২:৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন ঢাকায় আসতে দেরি করায় স্টেশন কর্তৃপক্ষ ট্রেনটির যাত্রার সময় দুই দফায় পিছিয়ে দেয়। প্রথমে বিকেল সাড়ে ৫টায় সময় বেঁধে দিলেও পরে তা আরও পিছিয়ে ৬টা ৫ মিনিট করা হয়। দীর্ঘ সময় ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত যাত্রী। গরমে নাকাল হয়ে ট্রেনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাসিন্দা উজ্জ্বল। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। ঈদের ছুটিতে যাবেন গ্রামের বাড়িতে।
তিনি বলেন, ‘ট্রেন ধরার জন্য দুপুরের আগেই স্টেশনে পৌঁছেছি। এখনও ট্রেনই আসেনি। পাঁচ ঘণ্টা হতে চলল। গরমে প্রাণ যায় আরকি।’
রাজশাহীর ব্যবসায়ী এস এম এ হাসনাত বলেন, ‘চলতে ফিরতেই চার-চারটা ঘণ্টা পার করে ফেললাম। চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা হয়ে গেল! তবুও এলো না সিল্কসিটি এক্সপ্রেস।’
ওদিকে তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেস বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মেই ছিল।
এ ছাড়া আখাউড়াগামী তিতাস কমিউটার ৫টা ৪৫ মিনিটে, টাঙ্গাইল কমিউটার ৬টা, দেওয়ানগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সোয়া ৬টা এবং কিশোরগঞ্জগামী এগার সিন্ধুর ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ট্রেন ছেড়ে গেছে তার প্রতিটিতেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের পাশাপাশি ট্রেনগুলোেও ছেড়েছে কিছু বিলম্বে।
বিল-ঝিলের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘পলো বাওয়া উৎসব’। তবে একেবারে যে হারিয়ে যায়নি তা প্রমাণ করতেই বুঝি হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে হয়ে গেল এই উৎসব।
উপজেলার বড়আন বিলে আয়োজন করা হয় ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই এই বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করেন আতুকুড়া গ্রামবাসী। এতে আশপাশের গ্রামগুলো ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে শত শত শৌখিন ও পেশাদার মাছ শিকারি অংশ নেন।
শনিবার ভোর হতেই ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে বড়আন বিলে আসতে থাকেন হাজারও মাছ শিকারি। সকাল ১১টা বাজতেই কোমর ও মাথায় গামছা বেঁধে পলো নিয়ে মাছ শিকারে বিলের শীতল পানিতে নেমে পড়েন নানা বয়সী মানুষ।
পলোর পাশাপাশি হাতাজাল, উড়াল জালসহ মাছ ধরার নানা ফাঁদ নিয়ে হই-হুল্লোড় আর হাসি-আনন্দে মাছ ধরায় মেতে ওঠেন অনেকে। বিলের আশপাশের গ্রাম ছাড়াও হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার পেশাদার ও শৌখিন মাছ শিকারিরা পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন।
শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিভিন্ন পেশার মানুষ এই মাছ করা উৎসবে অংশ নেন।
দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মাছ ধরা উৎসবে ধরা পড়ে বোয়াল, আইড়, শোলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। অনেকে বড় মাছ ধরতে না পারলেও এমন উৎসবে অংশ নিতে পেরেই খুশি।
পলো উৎসবে নাগুড়া থেকে আসা রবিন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন থেকে এই বড়আন বিলে পলো বাওয়া উৎসবে আসি। তখন বাবার সঙ্গে আসতাম, এখন নাতিকে নিয়ে আসছি। শত শত বছর ধরে এই বিলে পলো উৎসব চলে আসছে।’
বড় একটি বোয়াল মাছ ধরেছেন ফয়েজ মিয়া। খুশিতে আত্মহারা এই মাছ শিকারি বলেন, ‘আমি আজ জীবনের প্রথম পলো উৎসবে এসেছি। প্রথমবার এসেই একটা বড় মাছ ধরতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।’
হবিগঞ্জ সদর থেকে মাছ ধরতে আসা দোকান কর্মচারী পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই আমরা দোকানের ৮ জন গ্রাম থেকে পলো নিয়ে মাছ ধরতে আসছি। মাছও কয়েকটা ধরেছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে।’
আতুকুড়া গ্রামের সাংবাদিক এস এম সুরু আলী বলেন, ‘এক সময় হবিগঞ্জের বিভিন্ন বিলে পৌষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু দিন দিন নদী ও বিল ভরাট এবং দখল হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন এই ঐতিহ্য।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আয়োজক কমিটির সদস্য সুমন আখঞ্জি বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর বড়আন বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করে থাকি। গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্য সময় পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমাদের এমন আয়োজন।’
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউস কে-ক্রাফট নিয়ে এলো বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের কালেকশনে। এই কালেকশনে থাকছে নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, টপস, সালোয়ার-কামিজ, পুরুষদের ফতুয়া, শর্ট-পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক। রং হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে বাসন্তি, হলুদ, কমলা, গোল্ডেন ইয়েলো, ম্যাজেন্টা ও নীল।
পোশাকগুলোর ডিজাইন, কম্পোজিশন ও রঙে থাকছে বসন্তের ছোঁয়া ও ভালোলাগার অনুভূতি। পোশাকের সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন রকমের ফ্যাশন এক্সেসরিস। এ ছাড়া যুগল পোশাকের রয়েছে বিশেষ সম্ভার।
কে-ক্রাফটে শাড়ির দাম ৮৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। এছাড়া টপস ৬৫০ টাকা থেকে ১২০০, সালোয়ার কামিজ ২১০০ টাকা থেকে ৩০০০, ফতুয়া ৫০০ থেকে ৮৫০, শর্ট-পাঞ্জাবি ৮৫০ থেকে ১৩০০ টাকা এবং শার্ট ৫৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা আর গান-বাজনার তালে তালে সাকরাইন উদযাপন করেছেন পুরান ঢাকাবাসী। দিনভর ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি আর রঙ-বেরঙের ফানুস উড়িয়ে এ উৎসবকে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করছেন স্থানীয়রা।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, রায়সাহেববাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, সদরঘাট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আকাশে শনিবার সকাল থেকেই নানা রঙের ঘুড়ি উড়াতে দেখা যায়। সন্ধ্যা নামতেই সে আকাশ ঢেকে গেছে নানা রঙের চাদরে। বাড়ির ছাদ থেকে উড়ছে ফানুস। নানা রঙের আতশবাজির সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে লেজার রশ্মি। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে মিউজিক বক্সে ভেসে আসে নানা গান, তার সঙ্গে নেচেছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।
সাকরাইন উৎসবটি পৌষসংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। মহাভারতে যেটাকে মকরক্রান্তি বলা হয়। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষ দিন সংক্রান্তি হিসেবে উদযাপিত হয়। পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সর্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নিয়েছে। এই দিনে দিনভর ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রংবেরং ফানুসে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী এলাকা।
লক্ষ্মীবাজারের ঠাকুর দাস লেনের নবম তলার একটি বাসার ছাদে গিয়ে দেখা মেলে বড় বড় সাউন্ড বক্সসহ গানবাজনার নানা আয়োজন। এ আয়োজনের উদ্যোক্তা চার তরুণ। তাদের একজন আরমান হোসেন বলেন, ‘বাসার সবার কাছে চাঁদা নিয়ে এ আয়োজন করা হয়েছে। দিনভর ঘুড়ি ওড়ানোর পর রাতেও রয়েছে আয়োজন। সন্ধ্যার পর ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি পোড়ানো হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার রায় বলেন, ‘সাকরাইনের দিন বিকেলে পুরান ঢাকার আকাশে ঘুড়ি দিয়ে কাটাকাটির খেলা উপভোগ করেন সবাই। নানা রং আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি নিয়ে এতে অংশ নেন তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যা নেমে আসলে উৎসবের আমেজে আসে ভিন্নতা। শুরু হয় মুখে আগুন নিয়ে খেলা, রঙ বেরঙের আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। এসব অনুষঙ্গের সঙ্গে রয়েছে গান-বাজনা এবং নাচানাচি। গভীর রাত পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।’
প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৭৪০ সালের পৌষ মাসের শেষ এবং মাঘ মাস শুরুর সন্ধিক্ষণে মোগল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন চালু হয়। কালের পরিক্রমায় দিনটি পুরান ঢাকাইয়াদের একটি অন্যতম উৎসব এবং আমেজে পরিণত হয়েছে।
এবার সাকরাইন উৎসবে ফানুস বিক্রি ও ওড়ানো বন্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কঠোর নির্দেশনা দিলেও সেই নির্দেশনা কেউই তোয়াক্কা করেননি।
স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আজিম উদ্দীন বললেন, ‘১০ বছর ধরে এই উৎসবটা করে আসছি আমরা। আয়োজনে চাকচিক্য আনার জন্য প্রতিবছর চাঁদার পরিমাণ বাড়ানো হয়।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার বড়হট্টি এলাকায় ফসলি জমিতে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ঘিরে উৎসবে মেতেছে হাজারো মানুষ। প্রতিযোগিতায় কিশোরদের পাশাপাশি ঘোড়সওয়ার কিশোরী তাসমিনা আক্তার ও তার ৮ বছরের ছোট বোন হালিমা আক্তার নজর কেড়েছে সবার।
শনিবার বিকেলে ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন স্থানীয় সমাজসেবক জিয়াউর রহমান জনি। এতে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলা, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ কয়েকটি জেলার ৫০টি ঘোড়া নিয়ে অংশ নেন প্রতিযোগীরা।
আয়োজকরা দুপুর ২টায় প্রতিযোগিতা শুরুর ঘোষণা দেয়। তার আগেই আশপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসতে শুরু করে লোকজন। নির্ধারিত সময়ের আগেই পুরো ফসলি মাঠ ও রাস্তা কানায় কানায় ভরে যায়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ এমনকি বৃদ্ধরাও জড়ো হতে থাকেন। প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিকেল ৪টায়।
ঘোড়দৌড় দেখতে আসা উম্মে হাবিবা লিজা বলেন, ‘এই প্রথম মাঠে বসে ঘোড়দৌড় দেখলাম। আমি আমার পরিবারসহ এসেছি। খুব ভালো লাগছে।’
পরিবারের সঙ্গে আসা শিশু তাবাসসুম বলে, ‘আব্বু-আম্মুর সাথে ঘোড়দৌড় খেলা দেখতে এসেছি। কী যে ভালো লাগছে! আগামী বছর এমন আয়োজন হলে আবারও আসবে।’
সামশুল আলম ও লুৎফর রহমান বলেন, ‘নওগাঁর ধামইরহাটের তাসমিনা অনেক সুনাম অর্জন করেছে সারাদেশে। তার সাথে আজ ওর ছোট বোনও ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছে। দুই বোনই ভালো করেছে। তাদের ঘোড়দৌড় দেখার জন্যই এসেছি আমরা। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা খুব ভালো লেগেছে।’
ঘোড়দৌড়ে অংশ নেওয়া তাসমিনার ছোট বোন হালিমা আক্তার বলে, ‘এই প্রথম আমি ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছি। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি। খুব ভালো লাগছে। আগামীতেও খেলতে চাই।’
তাসমিনার অভিব্যক্তি, ‘আমার ছোট বোনের খুব ইচ্ছা ছিল সে-ও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। আজ ওর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আমরা দুই বোন আগামীতেও ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করে যেতে চাই।’
আয়োজক জিয়াউর রহমান জনি বলেন, ‘এলাকার তরুণ ও যুবকদের নির্মল বিনোদন দিতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি। এবার গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যেতে বসা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। স্থানীয় লোকজন বেশ খুশি। আগামীতেও এ ধরনের আয়োজন করা হবে। সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেব, ঘোষনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
অংশগ্রহণকারী তিন বিজয়ীকে পুরস্কার দেয়া হয়। প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয় তাসমিনার ঘোড়া, দ্বিতীয় হয়েছে তার ছোট বোন হালিমা খাতুনের ঘোড়া এবং তৃতীয় হয়েছে সামছুর রহমানের ঘোড়া।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অন্য ১৩ প্রতিযোগীকে বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের জনক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী হাশেম উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে হাসেম উৎসবের উদ্বোধন করেন নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু। এরপর পরে বের করা হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে মাইজদী কোর্ট বিল্ডিংয়ের দীঘির পাড়ে চিরশায়িত এই গুণী গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী মোহাম্মদ হাসেমের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহাপাঠ করা হয়।
এ উপলক্ষে মঙ্গল ও বুধবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অধ্যাপক মোহাম্মদ হাসেমকে নিয়ে উৎসবে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, তার লেখা আঞ্চলিক গানসমূহ পরিবেশন, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে ‘মোহাম্মদ হাশেম পদক’ এবং সম্মাননা প্রদান করা হবে।
মঙ্গলবার উদ্বোধনের পরপরই বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ ঘিরে বসে স্মৃতিচারণ, আড্ডা ও গানের আসর। স্মৃতিচারণ ও আড্ডায় মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কবি ম, পানাউল্যাহ, আবৃত্তিশিল্পী এমদাদ হোসেন কৈশোর, কবি জামাল হোসেন বিষাদ, কবি ম আরমান প্রমুখ।
মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন জানান, এবারের উৎসবে শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে ‘মোহাম্মদ হাশেম পদক’ দেয়া হবে। এবারে মোহাম্মদ হাশেম পদক-২০২৩ পাচ্ছেন সম্মিলিত সাংস্কিৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং তবলাবাদক গৌরাঙ্গ চন্দ্র সরকার। এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জনকল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য ফাউন্ডেশনের জুরি বোর্ড মনোনীত একজন ও একটি প্রতিষ্ঠানকে হাশেম উৎসব ২০২৩ সম্মাননা প্রদান করা হবে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে মোহাম্মদ হাশেম পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হবে। এর আগে বেলা ৩টায় একই মঞ্চে ‘শিল্পী মোহাম্মদ হাশেম’ শিরোনামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু।
বুধবার বিকেল ৫টায় বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে শুরু হবে সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান। রাত ৯টায় প্রজেক্টরে মোহাম্মদ হাশেমের মিউজিক ভিডিও প্রদর্শনের পরপরই গানের কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ প্রদান করা হবে। মোহাম্মদ হাশেম উৎসব-২০২৩ উপলক্ষ্যে ‘গণমানুষের শিল্পী হাশেম’ শিরোনামে স্মারনিকা প্রকাশিত হবে।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালীর প্রধান সংগীত খ্যাত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়াল ডিস্ট্রিক ভাই/ হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’সহ হাজারো গানের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী মোহাম্মদ হাশেমের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি। নোয়াখালী সদরের চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে তার বাড়ি। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান সংগঠক হিসেবে তার পেশাজীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে ঢাকা সংগীত কলেজ, কবিরহাট সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতার পর তিনি ২০০৫ সালে নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর নেন। ২০০৫ সালে অমর একুশে বইমেলায় উৎস প্রকাশন বের করে মোহাম্মদ হাশেমের গানের প্রথম সংকলন ‘নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’। এরপর ২০১৫ সালে মোহাম্মদ হাশেমের রচিত বাছাই করা আড়াইশ গান নিয়ে উৎস প্রকাশন বের করে ‘নির্বাচিত নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’।
মোহাম্মদ হাশেম ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মাইজদী শহরের বড় দিঘির উত্তর পাড়ে কোর্ট মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের লেখা গান চর্চা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন। জেলা শহরে তিন বছর ধরে ১০ জানুয়ারি মোহাম্মদ হাশেমের জন্মদিনে হাশেম উৎসব আয়োজন করে আসছে এই ফাউন্ডেশন। ২০২২ সাল থেকে প্রবর্তন হয় মোহাম্মদ হাশেম পদক।
গেল বছর মোহাম্মদ হাশেম পদক-২০২২ পেয়েছেন বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হাসান মতিউর রহমান এবং বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল। এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জনকল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য ফাউন্ডেশনের জুরিবোর্ড মনোনীত ১৩ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি বইমেলার সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বইবাড়ি সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২৩’। শনিবার মানিকগঞ্জের জাগীর ইউনিয়ন মাঠে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
দিনব্যাপী আয়োজনে থাকবে বাউল গান, কবিতা আবৃত্তি ও বইমেলা। উৎসবে ‘গুনাই বিবি যাত্রাপালা’ পরিবেশন করবে জেলার ধলেশ্বরী একতা সাজঘর।
উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা বীরবিক্রম তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল গবেষক ও লেখক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন এবং যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ।
উৎসবে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বইবাড়ির পরিচালক রবীন আহসান। আরও বক্তব্য দেবেন জাগীর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বাহাদুর রহমান বাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জাকির।
উৎসব আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সহযোগিতায় থাকবে ‘এক রঙা এক ঘুড়ি’। বইবাড়ির আজীবন সদস্যসহ উৎসবে যোগ দেবেন বিশিষ্ট কবি, লেখক, নির্মাতা, শিল্পী ও সুধীজন।
অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার সমকাল, চ্যানেল আই অনলাইন, গ্লোবাল টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকা ঢাকা প্রকাশ।
আরও পড়ুন:রাত ১২টা বাজতেই মুহুর্মুহু কয়েকটি আতশবাজি ফুটল ঢাকার আকাশে। বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের মতো করে নববর্ষের উদযাপন শুরু করে দিলেও এই মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য এখনও অপেক্ষা করছে পশ্চিমা বিশ্ব।
তবে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকেই অন্যান্য বছরের মতো এবারও নতুন বছরের আতশবাজিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে নিউজিল্যান্ডের ওকল্যান্ডের আকাশ। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘরে চলে আসায় সেই সময়টিতে উদযাপন শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার শহরগুলোতেও।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারে নববর্ষ উদযাপন করতে জড়ো হন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই এলাকার হারবার ব্রিজের উপর থেকে ৭ হাজার আতশবাজি ফোটানো হয়েছে। এ ছাড়া কাছাকাছি অপেরা হাউস থেকে দুই হাজার আতশবাজি করা হয়।
বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাপানে নববর্ষ উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণটি চলে আসে। রাজধানী টোকিওসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে আতশবাজি করা হয়। এ ছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে এসব শহরে মনোরম আলোকসজ্জারও ছবি প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুবছর খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনে ভাটা পড়লেও এবারের পরিস্থিতি ব্যতিক্রম। মহামারির ঝুঁকি এখনও থেকে গেলেও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এবার বিশাল আয়োজন করেছে বিভিন্ন দেশের বড় শহরগুলো।
এর আগে বিকেল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় নতুন বছরের উদযাপন শুরু হয়ে গেছে কিরিবাতি, টোঙ্গা ও সামোয়ার মতো ওশেনিয়া অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্রে।
এদিকে, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষাই শুধু নয়, বরং এদিনটি জুড়েও নানা রীতি-নীতি পালিত হয় বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ‘সিলভেস্টার সুইম’ বা বুনো সাঁতার অন্যতম। পুরনো বছরের গ্লানি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়াই এর প্রতীকী তাৎপর্য।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য