ভবনের চারদিকে আগুন। প্রাণ বাঁচাতে ভেতরে আটকে শ্রমিকরা হয়তো চিৎকার করছিলেন। একদিকে আগুন, অন্যদিকে গেট বন্ধ। শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি ৫৪ প্রাণের।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুড ট্র্যাজেডির এক বছর আজ।
২০২১ সালের ৮ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে প্রায় ২৯ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছয়তলা ভবনের ওই কারখানায় লাগা আগুনে প্রাণ হারান ৫৪ জন। ওই ঘটনায় পুলিশ কারখানার মালিকসহ আটজনের নামে মামলা করে।
মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাশেমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আাদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
পরে তারা জামিনে বের হন। আগুনের ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতেও কারখানার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়।
সেই ঘটনার স্মৃতি ভুলতে পারেননি নিহত ও আহতের স্বজনরা। ভয়াবহ ওই আগুনের কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে ওঠেন অনেকে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
বুধবার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সিলগালা অবস্থায় রয়েছে। তবে এখনও মোছেনি আগুনের কালো দাগ।
দেখে মনে হয় যেন সেই পোড়া দেয়ালে কান পাতলে শোনা যাবে নিহত শ্রমিকদের চিৎকার। কারখানার প্রধান ফটকে লাগানো হয়েছে ‘এখানে শিশু শ্রমিক নিষিদ্ধ’।
গত বছর কারখানার আগুনে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল শিশু ও কিশোর। কারখানার পশ্চিম অংশের দেয়াল ধরে নেয়া হয়েছে ১০ ইঞ্চির পানির পাইপ। কারখানা চালু করা হয়েছে পাশের আরেকটি ভবনে। সেখানে শ্রমিকরা কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সহকর্মীকে হারানোর কষ্ট ভুলতে পারেননি।
এখনও কাঁদেন নিহতদের স্বজন ও আহতরা
আগুনে পুড়ে নিহতের একজন মোহাম্মদ ইয়াসিন। তিনি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হয়ে মায়ের মন জয় করবেন। তা আর হয়ে ওঠেনি।
করোনার কারণে ওই বছর পরীক্ষা পেছায়। বাবা হারানো সংসারে মাকে সাহায্য করতে সাময়িকভাবে কাজ নেন ওই কারখানায়। সেই আগুনে পুড়ে যায় ইয়াসিন ও তার মায়ের স্বপ্ন।
ছেলেহারা মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার যে ক্ষয়ক্ষতি হইছে, আমি এর বিচার চাই। আমি কত আশা করছি, কত কষ্ট কইরা আমার সন্তানরে মানুষ করছি। পরীক্ষার ফরমও ফিলাপ করছিল, কিন্তু আর দিতে পারল না। আমি সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’
ওই কারখানার চারতলায় কাজ করতেন আমেনা বেগম। ছেলেকে নিয়ে থাকতেন কর্ণগোপ এলাকায়।
আমেনার মৃত্যুর পর তার ছয় বছরের ছেলে রাফিনকে দেখভাল করছেন শ্বশুর হারুন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগুনের খবর শুনে গেছিলাম সেখানে। অনেক খুঁজছি, কিন্তু আমেনারে পাই নাই। পরে খবর পাইয়া আমেনার বাফে আইছে। রক্ত দিয়া ডিএনএ টেস্ট করছে। এরপর ফোন পাইছি ওর লাশ শনাক্ত হইছে। পরে এখানে দাফন করছি।
‘আমেনার ছেলেডা ওর মারে খালি বিছরায়। আমি ওরে বলি তর মা বিদেশ গেছি। তুই বড় হইলে আইব।’
ভয়াবহ সেই আগুনের শিখা থেকে বাঁচতে ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক। কমরের হাড় ভেঙে কয়েক মাস হাসপাতালে ছিলেন।
ভয়াবহ সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনও কেঁদে ওঠেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘৮ জুলাইয়ের কথা মনে পড়লে কষ্ট লাগে। আমার সাথের লোকগুলি মারা গেছে। ঘটনার পর আমি কয়েক মাস ঘুমাইতে পারি নাই। খালি মনে হইত আগুনের কথা।
‘সুস্থ হয়ে ফেরার পর কাজের জন্য কয়েক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু কাজ পাই নাই। পরে শুনলাম কারখানার অন্য ভবনের শাখা খুলছে তাই সেখানে আবার গেছি। কারখানায় এখনও অনেক শ্রমিক কাম করে। তবে আগের মতো নাই। এখন আগুন লাগলে কী করতে হইব সেগুলো আমাগো শিখাইছে। আহারে আগে যদি কারখানায় এমন ব্যবস্থা করত তাইলে এতগুলো মানুষ মরত না।’
যা বলছে সিআইডি
আগুনে ৫৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের করা মামলা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয় ১৭ জুলাই। সিআইডি আলামত সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণসহ ১০টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত কাজ করে। তবে এক বছরেও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্তের শুরু থেকে আমরা একটি টিম গঠন করে দিয়েছিলাম। তদন্তকারী টিম তদন্ত করেছে গভীরভাবে। তদন্তের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।’
তদন্ত শেষ হতে সময় লাগার কারণ সম্পর্কে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক বিষয় দেখার ছিল। কিছু তদন্ত রিপোর্ট দেখা, ডিএনএ রিপোর্টসহ মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া, সব মিলিয়ে মামলা জটিল ছিল। এ জন্য তদন্তে একটু সময় লেগেছে। মামলার বর্তমান অবস্থা হলো, তদন্ত একেবারে শেষের দিকে।’
দেলোয়ার বলেন, ‘আমাদের তদন্তগুলো পর্যালোচনা করছি। পর্যালোচনায় তদন্তের কোথাও কোনো ভুল আছে কি না সেগুলো দেখা হচ্ছে। আমরা যেকোনো সময় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।
‘আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সবকিছু বলা হবে। কী কারণে সেখানে আগুন লাগল, কাদের গাফিলতি, কারা আগুনের ঘটনার জন্য দায়ী, সবকিছু সাক্ষ্য-প্রমাণসহ আমরা আদালতে উপস্থাপন করব।’
সিআইডির এসপি বলেন, ‘আমরা সবকিছু সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করেছি। প্রতিটি বিষয় আমরা অনুসন্ধান করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, আমাদের তদন্তে যারা বেরিয়ে এসেছে, তারা বিচারের মুখোমুখি হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিন পর্বে মরদেহ হস্তান্তর করেছি। প্রথম হস্তান্তর করা হয় তিন নারীর মরদেহ। এরপর ডিএনএ রিপোর্ট পেয়ে ৪৮ জনের দেহাবশেষ হস্তান্তর করি। সবশেষ কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে আরও তিনজনের মরদেহের অংশ উদ্ধার করে সেগুলো ডিএনএন পরীক্ষা করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি
হাশেম ফুডের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসনিক বিভাগ) ক্যাপ্টেন (অব.) মামুনুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে ভবনে আগুন লেগেছে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ভবনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে দিয়েছি। তবে অন্য যে ভবন রয়েছে, সেখানে আমরা সাময়িকভাবে কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আগুনের যে ভয়াবহতা তা সবাই দেখেছে। এ নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে আমরা বর্তমানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। তাদের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আগুন কীভাবে নেভানো যায়, কীভাবে প্রতিহত করা যায়, সেসব বিষয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছি। পাশাপাশি আমরা কারখানার ভেতর প্রচুর সেফটি রিলেডেট যত ধরনের ইকুয়েভমেন্ট আছে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি।’
দোষীদের শাস্তি দাবি
আগুনে নিহতদের স্বজনদের ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংগঠন। আবেদনে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ এবং আহতদের ৫ লাখ টাকাসহ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
তবে শুধু ক্ষতিপূরণই যেন শেষ না হয়, যারা ঘটনার জন্য দায়ী তাদের শাস্তি দাবি করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নারায়ণগঞ্জের নেতারা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘এমন ঘটনা যাতে অন্য আর কোনো প্রতিষ্ঠানে না ঘটে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর হতে হবে। আমরা এমন মৃত্যু আর চাই না। আগুনের ভয়াবহতা থেকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার।
‘ঘটনার পর পরই আমাদের নাগরিক জোটের কমিটি অনুসন্ধানসহ সুপারিশ দিয়েছিলাম। তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।’
সুজনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা হাশেম ফুডের ঘটনার জন্য দায়ী, আমরা তাদের শাস্তি দাবি করছি।’
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।
সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।
ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।
জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।
এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।
আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।
মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।
অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।
বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’
একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।
একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”
মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’
মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।
ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’
জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।
দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর পোরশা সীমান্তে ২৬ মার্চ গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক আল আমিনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
সীমান্তের হাঁপানিয়া এলাকায় ২৩৬ মেইন পিলারের কাছে বুধবার রাত ৯টার দিকে বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
ওই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ ১৬ বিজিবির নিতপুর ক্যাম্পের সুবেদার মাহফুজুর রহমান জানান, আল আমিনের মরদেহ ফেরত নিতে বিএসএফের সঙ্গে বুধবার দিনভর যোগাযোগ করেন তারা। এরপর সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের পর রাতে আল আমিনের মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ। স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে দেয়া হয় আল আমিনের মরদেহ।
তিনি জানান, বিএসএফের পক্ষ থেকে ভারতের কেদারিপাড়া ক্যাম্পের কমান্ডার পরিদর্শক সুভাষ চন্দ্র মিনা উপস্থিত ছিলেন।
নীতপুর সীমান্ত এলাকায় ২৬ মার্চ ভোরে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আল আমিন।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের পর মৃত্যু হলো আট বছর বয়সী শিশু সোনিয়ারও।
সিলেট থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়ার কিছুক্ষণ পর বুধবার ভোররাত চারটার দিকে মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় এর আগে মৃত্যু হয়েছিল সোনিয়ার মা, বাবা ও তিন ভাই-বোনের।
সোনিয়া জুড়ীর উত্তর গোয়ালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুয়েল উদ্দিন সোনিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি জানান।
সোনিয়ার মামা আবদুল আজিজ জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর দগ্ধ সোনিয়াকে মঙ্গলবার সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার করেন। সেখানে পৌঁছানোর কিছু সময় পরই সে মারা যায়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সোনিয়ার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
স্বাধীনতা দিবসের দিন মঙ্গলবার ভোরে পূর্ব জুড়ীতে ঝড় ও বজ্রপাতের সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পুরো টিনের ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্য ফয়জুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া (১৫), সাবিনা (০৯) এবং একমাত্র ছেলে সায়েম উদ্দিন (৭) ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে বিকেল চারটায় ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রলারডুবির ঘটনায় আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে সোমবার সকালে আলাদা স্থান থেকে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই তিনজন হলেন পুলিশ কনস্টেবল কুমিল্লার দেবিদ্বারের সোহেল রানা (৩৫), তার ছেলে রাইসুল (৫) ও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী গ্রামের বেলন দে (৪৫)।
এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ সবার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত রোববার বিকেল তিনটার দিকে মেঘনা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ যৌথভাবে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। তারা হলেন পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানার মেয়ে মাহমুদা সুলতানা (৭), ভৈরবের আমলাপাড়া এলাকার ঝন্টু দের স্ত্রী রুপা দে (৩০) ও নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামের দারু মিয়ার মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার (১৮)। একই দিন দুপুর ১২টার দিকে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার দিন শুক্রবার একজনের এবং পরের দিন দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন ভৈরব পৌরসভার কমলপুর এলাকার সুবর্ণা বেগম (৩৫), পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমী (২৫) ও ভৈরবের আমলাপাড়া এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী চন্দন দের মেয়ে আরাধ্য দে (১২)।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভৈরবের মেঘনা নদীতে প্রায় ২০ জন যাত্রী নিয়ে সুন্দরবন নামের পর্যটকবাহী একটি ট্রলার বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়।
এ ঘটনায় বাল্কহেডের অজ্ঞাতনামা সুকানি ও ইঞ্জিনচালকের নামে ভৈরব নৌ থানায় একটি মামলা করা হয়।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় টি কে গ্রুপের সুপার বোর্ড কারখানায় রোববার দুপুরে ধরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর ১২টি ইউনিট ১৩ ঘণ্টার চেষ্টায় রোববার রাত দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গজারিয়ার হোসেন্দী ইউনিয়নের জামালদীতে সুপার বোর্ড কারখানাটিতে গতকাল দুপুর একটার দিকে আগুন ধরে। এ আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যায়নি।
ঘটনার পরের দিন সোমবার সকাল সাতটার দিকে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রিফাত মল্লিক বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর রোববার রাত দুইটার দিকে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। আগুন এখন আর বাড়ার বা অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই, তবে ভেতরে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন সম্পূর্ণ নিভতে আরও বেশ কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে।
‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট কাজ করছে।’
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক জামাল হোসেন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত ১১টাা ৫০ মিনিটের দিকে আমরা আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছিলাম। রাত দুইটার দিকে আগুনের তীব্রতা একেবারেই কমে যায়। আমরা চারদিক থেকে আগুনটিকে ঘিরে ফেলি ফলে। তা আর আশপাশের ভবনে ছড়াতে পারেনি। যদি নতুন ভবন বা শেডে আগুন লাগত, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে।
‘আমরা এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি। সে জন্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস এখন আর আগের ফায়ার সার্ভিস নেই। আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষিত জনবলের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে।
‘আমাদের ১২টি ইউনিটের ১৪৭ জন প্রশিক্ষিত কর্মী এখানে কাজ করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় এখন মাত্র তিনটি ইউনিট কাজ করছে। অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে আরও কিছু সময় লাগবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার দুপুর একটার দিকে প্রতিষ্ঠানটির পাটের গুদামে আগুন দেখতে পান কর্মরত শ্রমিকরা। সে আগুন নদীতে নোঙর করে রাখা পাটখড়িবোঝাই ট্রলারে লেগে যায়। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে বাহিনীর সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণের কাজ শুরু করেন।
তারা আরও জানান, প্রতিষ্ঠানের ভেতর পার্টিকেল বোর্ড, পাটখড়ি, প্লাস্টিকের দরজা ও প্লাস্টিকের পাইপের মতো দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হন কোম্পানির সাত কর্মী।
যা বলছেন কোম্পানির কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি
বিষয়টি সম্পর্কে সুপার বোর্ড কোম্পানির পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) শফিউল আতাহার তাসলিম বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে আমাদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ চিত্র নিরূপণ করতে আরও বেশ খানিকটা সময় লাগবে।’
হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, ‘কারখানাটিতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন। প্রায় ১০ বছর আগেও কারখানাটিতে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল।
‘সেবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক দিন সময় লেগে যায়। সেই ঘটনার পরও কোম্পানিটি অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
তদন্ত কমিটি
আগুনের ঘটনা তদন্তে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কনসার্ট হলে মুখোশ পরা বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার এ তথ্য বিশ্ব মিডিয়াকে জানিয়েছে।
তদন্তকারী কমিটি আরও জানিয়েছে, এখনও ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎসবের আমেজে চলছিল কনসার্ট। সেখানে হামলা হয় দুর্বৃত্তদের। রাশিয়ার মস্কোর এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব হতবাক। এই হামলাকে পরিকল্পিত বলছে রাশিয়া।
এদিকে ক্রেমলিনের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দুকধারীরা কনসার্ট হলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন।
এর আগে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হামলায় এখন পর্যন্ত ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তার আগে, নিহতের সংখ্যা ৯৩ জন বলে জানানো হয়েছিল।
এ ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ হামলায় কারা জড়িত তেমন কিছুই নিশ্চিত করেনি।
কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি এটি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, কিউবাসহ বিশ্বনেতারা।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যে এক কিশোরী ও এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হলো। শিশু ও নারীসহ আরও ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল মেঘনা নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার দুজন হলেন নিহত পুলিশ সদস্য সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমী ও মেয়ে মাহমুদা।
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ (বুধবার) সকাল ৮টায় আমাদের ডুবুরি দল অভিযান শুরু করে। দুপুর ১টার দিকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া দুর্ঘটনায় তলিয়ে যাওয়া নৌকাটিও শনাক্ত করা গেছে।
‘নিখোঁজদের উদ্ধারে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস, ভৈরব ফায়ার সার্ভিস, ভৈরব থানা এবং ভৈরব, নৌ থানা পুলিশ কাজ করছে।’
নিখোঁজ অন্য যাত্রীরা হলেন- ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশের কনস্টেবল সোহেল রানা (৩৫), তার ছেলে রায়সুল (৫), ভৈরব পৌর শহরের আমলাপাড়া এলাকার ঝন্টু দে’র স্ত্রী রুপা দে (৩০), তার ভাইয়ের মেয়ে আরাধ্য (১২) ও ভগ্নিপতি বেলন দে (৩৮) এবং নরসিংদীর রায়পুরা এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার (১৮)।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক রেজাউল জানান, আপাতত উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে। রোববার সকাল ৭টায় পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।
বিআইডব্লিউটিএর পাঁচজন ডুবুরি, ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজনসহ স্থানীয় দুইজন উদ্ধার কাজে অংশ নেন বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নিচে বালুবাহী বাল্কহেডের যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য