দিনাজপুরে তেলবাহী লরির ধাক্কায় মা ও বোনের মৃত্যুর পর ১৮ মাসের শিশুটিও মারা গেছে।
দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান আসাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে লরির ধাক্কায় মারা যান শিশু সাইফুলের মা ৩০ বছর বয়সী ফাইমা বেগম ও বোন ১৩ বছরের বিউটি।
গুরুতর আহত হন বাবা ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসাইন ও ১৮ মাস বয়সী শিশু সাইফুল ইসলাম নাসরুল্লাহ।
আহত মোহাম্মদ হোসাইন জেলার বিরল উপজেলার তেঘরা দারুল হাদীস সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার পাঁচটিকরি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পরিবার নিয়ে তেঘরা গ্রামে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন তিনি।
হোসাইনের ভাই মোহাম্মদ হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুরে যখন আমরা ভাবি ও ভাতিজির মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিলাম, সে সময় শিশু সাইফুল মারা যায়। ভাই এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
পরিদর্শক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ঈদের ছুটি পাওয়ায় ভোরে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে পেছন থেকে তেলবাহী একটি লরি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।
‘এতে রাস্তায় পড়ে মা ও মেয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় মোহাম্মদ হোসাইন ও শিশু ছেলে সাইফুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুর মৃত্যু হয়।’
এই ঘটনায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে কর্মীদের পুলিশের লাঠিপেটা এবং বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে তর্কাতর্কির ঘটনায় আলোচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মহররম আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনা ও তদন্তের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, `বরগুনার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ওই ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব কতটা ছিল, ঘটনাস্থলে কী কী হয়েছে তার সব কিছুই তদন্ত করা হবে।
‘ছাত্রলীগের দুটি ধারার এক পক্ষ পুলিশের প্রশংসা করেছে, আরেক পক্ষ সমালোচনা করেছে। পুলিশ তার নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সব কিছুর তদন্ত করবে।’
আরও আসছে...
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সোমবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়।
নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কে এম এহসান উল্লাহ। তবে কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে সোমবার দুপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ।
এ সময় সেখানে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনায় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল, গাড়ি ভাঙচুরকারীকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা মহররম ছিলেন সেখানে। তিনি অনেক ভুল করেছেন।
‘যেখানে আমি উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শোনেননি।’
এমপি শম্ভুর করা অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কী ঘটেছে ডিআইজি স্যারের নেতৃত্বে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এমপি সাহেব মুরব্বি মানুষ। তার সঙ্গে পুলিশের কেউ অশোভন আচরণ করে থাকলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কল রিসিভ করেননি। পরে সরকারি নম্বরের ওয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
যা ঘটেছিল
বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পদবঞ্চিত কয়েকজন হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিল্পকলায় প্রবেশের সময় হামলাকারীরা ছাদ থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ কারণে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।
এতে জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুর চালায়।
আরও পড়ুন:কোনো কিছুতেই কান্না থামছে না জাহিদ আকন্দের। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। ঝর্না ও সন্তানদের নিয়েই ছিল তার সাজানো সংসার। মুহূর্তেই যেন তা এলোমেলো হয়ে গেল।
ভাগনি রিমা মনির বিয়ের দাওয়াত খেতে গত বৃহস্পতিবার জামালপুরের মেলান্দহের আগ পয়লা গ্রামের ঝর্না বেগম, জাহিদ আকন্দ এবং তাদের ২ বছরের ছেলে জাকারিয়া ও ৬ বছরের মেয়ে জান্নাত আশুলিয়া যান।
শনিবার বিয়ে শেষে বাড়ি ফিরে আসেন ইজিবাইক মিস্ত্রি জাহিদ। এরপর সোমবার বৌভাত শেষে আশুলিয়া যাওয়ার পথে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন।
তাদের মধ্যে ঝর্না বেগমের বাড়িতেই মেলান্দহে চলছে শোকের মাতম। দুই সন্তানসহ মায়ের এমন মৃত্যুতে হতবাক তাদের স্বজনসহ এলাকাবাসী। সব প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দ্রুত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।
ঝর্না বেগমের স্বজন হাসনা বেগম বলেন, ‘সোমবার দুপুরে মারা গেছে, অথচ এখনও আমরা লাশ পাইলাম না। আমরা দ্রুত লাশগুলো চাই। তাদের দ্রুত দাফন করতে চাই।’
আরেক স্বজন কনিকা বেগম বলেন, ‘কোনো দিন কল্পনা করিনি, আমাদের আদরের ধন এভাবে মারা যাবে। এখনও আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।’
এ ছাড়া ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি বিক্ষুব্ধ স্বজনদের।
ঝর্নার স্বজন আব্বাস মিয়া বলেন, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত চাই। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। কয়েকজনের গাফিলতির জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে।’
সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্ট ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচ আরোহী নিহত হন। দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী হৃদয় ও ২১ বছর বয়সী রিয়ামনি, যাদের বিয়ে হয়েছে গত শনিবার। সোমবার ছিল বউভাত।
ছেলের বাড়ি রাজধানীর কাওলায়। বউভাত শেষে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিল। ছেলের বাবা রুবেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
রুবেল ছাড়াও যারা মারা গেছেন তারা হলেন কনের মা ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝর্না বেগম, ৬ বছর বয়সী জান্নাত ও দুই বছর বয়সী জাকারিয়া।
আরও পড়ুন:নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় রাজধানীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার সকালে উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে ক্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
উত্তরায় সোমবার বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্টের অংশবিশেষ বা বক্স গার্ডার একটি গাড়ির ওপর পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচজন নিহত হন। কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে এমনকি কাজের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো যানবাহন বন্ধ করা হয়নি।
এমন অবস্থায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আতিকুল মঙ্গলবার এমন নির্দেশ দিয়েছেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজে ন্যূনতম নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। ফলে কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে উন্নয়নকাজ চলতে দেয়া যাবে না। আগে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকায় বিআরটিসহ অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান। সব প্রকল্পের পরিচালকদের আগামী বৃহস্পতিবার নগর ভবনে ডাকা হয়েছে। তারা নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই কাজ শুরু করতে পারবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের কলেজশিক্ষক খায়রুন নাহারের প্রথম বিয়ে হয় তার সহপাঠীর সঙ্গে। সহপাঠী থেকে প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক। চার বছরের প্রেম গড়িয়েছিল দাম্পত্য সম্পর্কে।
নানা টানাপোড়েন আর মান-অভিমানের মধ্য দিয়ে সেই সম্পর্ক টিকে ছিল ১৯ বছর। ২ পুত্রসন্তান থাকার পরও ২০২০ সালে বিচ্ছেদ ঘটান তারা।
খাইরুন নাহারের মৃত্যুতে শোকাহত তার প্রথম স্বামী জহুরুল ইসলাম বাবলু। তিনি বললেন, ‘আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু ছেলেদের সাথে তো ছিল। দোয়া করবেন আমি যেন ওদের মায়ের অভাব পূরণ করতে পারি।’
কলেজছাত্রকে বিয়ে ও মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত শিক্ষক খায়রুন নাহারের প্রথম সংসারের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, মান-অভিমান করেই তাদের সেই সংসার ভেঙে গিয়েছিল। খায়রুনই তালাক দিয়েছিলেন স্বামী জহুরুল ইসলামকে।
জহুরুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের পান্নাপাড়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি পান্নাপাড়া আব্দুর রহমান বিএম কলেজের প্রভাষক। প্রথম সংসার ভেঙে যাবার পর আর বিয়ে করেননি তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম লেখাপড়া শেষ করেই কলেজে শিক্ষকতা শুরু করলেও বহুদিন তার বেতন হয়নি। সম্প্রতি ঘোষিত এমপিও তালিকায় তার বেতন চালু হয়েছে। এর আগে আর্থিক চরম অনটন পার করতে হয়েছে তাকে। সেই সময়টিতে তিনি অটোরিকশাও চালিয়েছেন। এরই মাঝে পারিবারিক অশান্তি থেকে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান।
তবে, বিচ্ছেদের কারণ স্পষ্ট করে বলতে চান না জহুরুল ইসলাম। সোমবার তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পুরোনো সম্পর্ক নিয়ে তিনি তেমন কিছু বলতে আগ্রহ দেখাননি। শুধু এটুকুই জানিয়েছেন যে, মান-অভিমান থেকেই বিচ্ছেদ।
তিনি বলেন, ‘ও খারাপ না ভালো- এটা নিয়ে আমি আর কিছু বলব না। ও-ই আমাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। আমাদের সংসারে দুটি ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে বৃন্ত রাজশাহীতে একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট ছেলে অর্ক বাঘার একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।’
তাদের বিচ্ছেদের পর বৃন্ত কখনও দাদার বাড়ি আবার কখনও নানার বাড়িতে থাকেন। আর অর্ক তার বাবার কাছে দাদার বাড়িতেই থাকে।
পরিচয়, প্রেম ও বিয়ে নিয়ে জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুজনই রাজশাহী কলেজে দর্শন বিভাগে পড়তাম। ১৯৯৫-৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। সেখানেই পরিচয়, বন্ধুত্ব ও প্রেম। অনার্স পরীক্ষা দিয়েই আমরা বিয়ে করেছি। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে। পরে দুজনই মাস্টার্স করেছি। আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
‘পারিবারিক মান-অভিমান থেকে ও-ই তালাক দিয়ে চলে গেছে। পরে আমার সাথে আর যোগযোগ হতো না। ছেলেদের সাথে কথা বলত। অনেক সময় আমার মোবাইল থেকে ছেলেরা কল দিয়ে কথা বলত।’
কলেজছাত্রকে সাবেক স্ত্রীর বিয়ের বিষয়ে জহুরুল ইসলাম বললেন, ‘ওর ভালো লেগেছিল করেছে। ভালো থাকার আশা নিয়েই তো করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘মারা যাবার খবর শুনে খারাপ লেগেছে। বেশি খারাপ লেগেছে আমার বাচ্চাগুলো মা হারা হয়ে গেল।’
আরও পড়ুন:নাটোরে বহুল আলোচিত কলেজশিক্ষক খাইরুন নাহারের মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী কলেজছাত্র মামুন হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মামুনকে জেলা দায়রা জজ আদালতে তোলা হয়।
এ সময় মামুনের জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন। তবে এই আবেদন নাকচ করে মামুনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন।
কোর্ট জিআরও খাদেমুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা নিউজবাংলাকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন তাদের দাম্পত্য কলহের কথা স্বীকার করেছেন। মামুন জানান, শনিবার রাত ২টায় স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হলে তিনি খাইরুনকে লাথি মেরে বাইরে চলে যান।
এরপর শিক্ষক খাইরুন নাহার বেশ কয়েকবার ফোন করলেও মামুন ফোন রিসিভ করেননি। এতে ক্ষোভে খাইরুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান মামুন। সেদিন রাত ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে মামুনের ঘোরাঘুরির তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
রোববার সকাল ৭টার দিকে শহরের বলারিপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে খাইরুন নাহারের মরদেহ উদ্ধারের পর মামুনকে আটক করা হয়।
খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তার দ্বিতীয় স্বামী ২২ বছর বয়সী মামুনের বাড়ি উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে।
আট মাস আগে তারা বিয়ে করলেও সম্প্রতি এই বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাত ৩টার দিকে মামুন তাদের ডেকে বলেন, তার স্ত্রী খায়রুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এলাকাবাসী ছুটে গিয়ে ঘরের মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় খায়রুনের মরদেহ দেখতে পান।
এ ঘটনায় সন্দেহ হলে এলাকাবাসী মামুনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়।
সে সময় বাসার কেয়ারটেকার নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে মামুন বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনটার দিকে বাসায় ফিরে সবাইকে ডাকাডাকি করে বলেন, তার স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে সবাই ঘরে ঢুকে মেঝেতে মরদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পায়।’
নাটোর মডেল থানা পুলিশ জানায়, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পর এক ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয় খাইরুন নাহারের। পরিচয়ের ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে গোপনে তাকে বিয়ে করেন খায়রুন।
আরও পড়ুন:নাটোরে কলেজশিক্ষিক খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আটক স্বামী মামুন হোসেনকে আদালতে নেয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে তাকে আদালতে আনা হয়।
মামুনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা।
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় তাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ বলেন, ‘মামুন হোসেনকে আদালতের হাজতে রাখা হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে তাকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মোসলেম উদ্দীনের আদালতে তোলা হবে।’
এর আগে রোববার সকাল ৭টার দিকে শহরের বলারিপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে কলেজশিক্ষক খাইরুন নাহারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পরপরই তার স্বামী মামুন হোসেনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
৪২ বছর বয়সী খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ২২ বছরের মামুনের বাড়ি উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে। তিনি নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন তারা।
বিয়ের ছয় মাস পর জুলাইয়ে ঘটনাটি জানাজানি হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের বিয়ের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়; সম্প্রচার করা হয় ভিডিও সাক্ষাৎকারও। এতে ‘টক অফ দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয় বিষয়টি।
ওসি নাসিম আহম্মেদ জানান, শিক্ষক খাইরুন নাহার ভালোবেসে গত বছর মামুন হোসেনকে বিয়ে করেন। তারা দুজন শহরের বলারিপাড়ায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। সে বাড়ি থেকেই খাইরুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার দুপুরে সিআইডির সুরতহালের পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ খাইরুনের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরে রাত ৮টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার স্থানীয় আবু বকর সিদ্দিকী কওমি মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে বাবার বাড়ি খামার নাচকৈড় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
খাইরুনের মরদেহ উদ্ধার ঘটনায় তার চাচাতো ভাই সাবের উদ্দিন রাতেই থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন।
ময়নাতদন্তের পর যা বললেন চিকিৎসক
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে খাইরুনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার জানান, আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা শামিউল ইসলাম শান্তকে প্রধান করে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যার পর খাইরুন নাহারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক (আরএমও) শামিউল ইসলাম শান্ত জানিয়েছিলেন, শিক্ষক খায়রুন নাহারের মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপরও ভিসেরা রিপোর্ট পেলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য