× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Semai is not making cosmetics in Amins Henolax factory
google_news print-icon

আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী নয়, তৈরি হচ্ছে সেমাই

হেনোলাক্স
কদমতলী এলাকায় নুরুল আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী উৎপাদন বহু বছর ধরে বন্ধ। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
নিউজবাংলা কদমতলী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, সেখানে নুরুল আমিনের একটি কারখানা থাকলেও প্রসাধনসামগ্রীর উৎপাদন বহু বছর ধরে বন্ধ। কারখানাটি ভাড়া দেয়া হয়েছে একটি সেমাই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে। প্রসাধনীর পরিবর্তে সেই কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে সেমাই।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার নিজের শরীরে আগুন দিয়ে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় সামনে এসেছে হেনোলাক্স কোম্পানির নাম।

মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এই নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।

এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নুরুল আমিনকে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক বলা হলেও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেড় যুগ আগেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নুরুল আমিন বর্তমানে আমিন পোল্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। এর আগে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেট প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেছেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে।

আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী নয়, তৈরি হচ্ছে সেমাই
কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন

ফেসবুকে নিজেকে ডা. এন আমিন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাবসায়িক জীবন শুরু করার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন নুরুল আমিন। ১৯৮৪ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি শুরু করার পর তিনি আগের পেশা থেকে সরে এলেও নামের আগে ডা. ব্যবহার করছেন।

ফেসবুকে তিনি বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন, বাস্তবে সেগুলোর কার্যক্রম নেই। ঠিকানা হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরানা পল্টনের ‘হেনোলাক্স সেন্টার’-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর কদমতলী এলাকার একটি ঠিকানা রয়েছে।

নিউজবাংলা কদমতলী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, সেখানে নুরুল আমিনের একটি কারখানা থাকলেও প্রসাধনসামগ্রীর উৎপাদন বহু বছর ধরে বন্ধ। কারখানাটি ভাড়া দেয়া হয়েছে একটি সেমাই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে। প্রসাধনীর পরিবর্তে সেই কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে সেমাই।

কদমতলীতে নুরুল আমিনের আরেকটি ভবন রয়েছে। সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে আবাসিক ভবন হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এই ভবনের নিচতলায় কিছু দোকানও রয়েছে। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেশ কয়েক বছর ধরে নুরুল আমিনের কোনো প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।

আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী নয়, তৈরি হচ্ছে সেমাই
কদমতলীতে হেনোলাক্স কারখানার প্রধান ফটক

কদমতলীর কারখানায় ভৌতিক পরিবেশ

রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একসময়ের বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে এখনও এক নামে হেনোলাক্স কারখানাকে চেনেন স্থানীয়রা। লোকমুখে কদমতলীর একটি অংশ হেনোলাক্স নামেই পরিচিত।

কদমতলীর মোহম্মদবাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথিত হেনোলাক্স কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর মূল কারখানা, এর পাশের আরও ১০ কাঠা জমিতে একতলা ভবন রয়েছে।

৯৮৭ মোহম্মদবাগ, কদমতলী- এই ঠিকানার মূল কারখানা ভবনটি তিনতলা। আলো নেভানো এবং ভেতর থেকে বন্ধ কারখানাটিতে ভূতুড়ে পরিবেশ দেখা গেছে। ভেতরে ছিলেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গেট খোলার অনুরোধ করলেও তিনি ঢুকতে দেননি।

ওই নিরাপত্তাকর্মী নিজের নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানার ভেতরে কেউ নেই। এটি এখন বন্ধ।’

কারখানা কবে বন্ধ হয়েছে এবং সেখানে কী উৎপাদন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সেমাই তৈরি করা হয়, তবে দুই-তিন দিন ধরে কারখানা বন্ধ।’

পাশের দোকানি আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই কারখানা দেখে আসছি। আগে এটা কদমতলীর মেরাজবাগে ছিল, পরে মোহম্মদবাগে আনছে। একসময় তো এই কারখানায় দিন-রাত কাজ চলত। ক্রিম-তেল এগুলা বানাইত। সারা এলাকায় কত সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যাইত।

‘কারখানার শ্রমিকও ছিল অনেক। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে কারখানার শ্রমিক আর কাজকর্ম কমতে থাকে। এখন তো দেখি এইখানে সেমাই বানায়া ভ্যানে কইরা নিয়া যায়।’

আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা শেষে আবারও কারখানার মূল ফটকের সামনে গিয়ে মিন্টু নামের এক কাভার্ড ভ্যানচালকের দেখা পাওয়া যায়। তিনি হেনোলাক্স গ্রুপের একমাত্র কাভার্ড ভ্যানের চালক।

কারখানা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘ব্যবসায় লসের কারণে নুরুল আমিন সাহেব এই কারখানার এক অংশ এখন সেমাই কারখানাকে ভাড়া দিয়েছেন। অন্য অংশে অনেক বছর ধরে হেনোলাক্সের মেশিন ও যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে।’

মিন্টু বলেন, ‘আরও ১০ থেকে ১২ বছর আগেও কসমেটিকসের নিয়মিত প্রোডাকশন হতো এখানে। কিন্তু লসের পর একে একে হেনোলাক্স, আমিন ফুড ও আমিন হারবালের সব প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেক দিন বন্ধই পড়েছিল কারখানাটি। গত দুই বছর ধরে একটি সেমাই প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে।

‘তবে ব্যবসা মন্দার কারণে গত কয়েক দিন ধরে এখানে সেমাই উৎপাদনও বন্ধ। সেমাই কারখানার মালিক-শ্রমিক কেউ দুই দিন ধরে এখানে আসছেন না।’

নুরুল আমিনের সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারি হয়েছে বলে জানান মিন্টু।

তিনি বলেন, ‘এ জন্য স্যার বেশ কিছুদিন ধরে এখানে আসেন না। কারখানা বন্ধ থাকলেও স্যার আগে কয়েক দিন পরপরই আসতেন। এখন মাঝেমধ্যে ম্যাডাম (নুরুল আমিনের স্ত্রী ফাতেমা আমিন) আসেন, গাড়ি নিয়ে আসেন একটু ঘুরে দেখে আবার চলে যান।’

গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় করা মামলায় নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী নয়, তৈরি হচ্ছে সেমাই
কদমতলীর মেরাজনগরে হেনোলাক্স ভবন

কদমতলীর হেনোলাক্স ভবন দেয়া হয়েছে ভাড়া

ফেসবুকে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে কদমতলীর মেরাজনগরের একটি ঠিকানা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সেটি ‘হেনোলাক্স বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত।

মোহম্মদবাগের কারখানা থেকে অটোরিকশায় মেরাজনগর বাজারে পৌঁছান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই এলাকার অন্য নাম ‘হেনোলাক্স মোড়’। স্থানীয়রা জানান, বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’ নামের ভবনটির কারণেই লোকমুখে এলাকাটির এমন নামকরণ।

এই ভবনের ঠিকানা: ১০৭৬, মেরাজনগর, কদমতলী। এলাকাবাসী জানান, এই ভবনেই হেনোলাক্সের প্রথম কারখানা ছিল, পরে সেটি মোহম্মদবাগে স্থানান্তর করা হয়। এখানকার কারখানা থেকেই নুরুল আমিনের উত্থান।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮০ সালের পরে নুরুল আমিন সাহেব এই জায়গা কিনে কারখানা বানান। তখন উনি সারা দিন এখানে থাকত। অনেক শ্রমিক ছিল। হেনোলাক্স দিয়ে উনি খুব অল্প সময়ে নাম করে ফেলেন।

‘তখন তো এই এলাকায় বাড়িঘর তেমন হয়নি। আশপাশে ডোবা আর জঙ্গল ছিল। এখানে মানুষ খুব একটা যাতায়াত করত না। আমিন সাহেব এই কারখানা করার পর এখানে সারা দিন শ্রমিকের আনাগোনা থাকত। ওদের দেখাদেখি সাধারণ মানুষও এখানে যাতায়াত শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ শুরু থেকে হেনোলাক্সের কারখানা দিয়েই এই এলাকাকে চেনে। এরপর আমিন সাহেব এই এলাকায় প্রচুর জায়গা-সম্পত্তি কিনেছিলেন। এখন শুধু এই বাড়ি আর মোহম্মদবাগের কারখানাটার কথাই জানি। বাকি সম্পদ আছে কি না আমার জানা নাই।’

দেখা গেছে, পাঁচ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে চারতলা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’। এর নিচতলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ওপরের তিনতলা আবাসিক ফ্ল্যাট আকারে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নিচতলায় একপাশে বাজার, অন্যপাশে সেলুন, মুদি দোকান রয়েছে। আর ওপরের তিনতলায় দুটি করে মোট ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

প্রতিটি ফ্ল্যাট মাসিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন নুরুল আমিন। আর নিচের বাজার ও দোকান থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়।

একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আঞ্জুমান আরা নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে ভাড়া থাকেন। তিনি বাড়ির মালিক হিসেবে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর নাম জানেন, তবে কখনও দেখেননি। একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রতি মাসে ভাড়া তুলে নিয়ে যান এবং বাড়ির দেখাশোনা করেন।

আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী নয়, তৈরি হচ্ছে সেমাই
পুরানা পল্টনে কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয় এখন বন্ধ

হেনোলাক্সের কথিত প্রধান কার্যালয়ও জনশূন্য

ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ৩/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ উল্লেখ করেছেন নুরুল আমিন।

সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির নাম ‘স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার’। এর তৃতীয় তলায় কথিত হেনোলাক্সের প্রধান কার্যালয়। আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ঠিকানা হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে কক্ষটির বাইরের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। অফিসের ঠিকানার ফোন নম্বরে কল করা হলেও কেউ ধরেননি।

ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে হেনোলাক্সের এই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে কেউ আসেননি। এর আগে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নিয়মিত অফিসে আসতেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তাদের অফিসে আসতে দেখা গেছে।’

কাদের জানান, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির জমির মালিক নুরুল আমিন। তবে স্কাই ভিউ ডেভেলপার কোম্পানি এর ওপর ১১ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছে। ভবনের ৩৬টি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের ১৮টির মালিক নুরুল আমিন, বাকি অর্ধেক পেয়েছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান।

কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক রতন কুমারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পেরেছে নিউজবাংলা। তিনি মঙ্গলবার দাবি করেন, পাঁচ দিনের ছুটিতে তিনি গাজীপুর আছেন এবং অফিস বন্ধ থাকার কোনো তথ্য তিনি জানেন না। নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গেও সোমবার থেকে যোগাযোগ নেই রতনের।

গাজী আনিসের আত্মহত্যার বিষয়টি অবশ্য জানেন রতন কুমার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিউজে দেখেছি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি এই প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর ধরে কাজ করছি, আমি আনিস নামের ভদ্রলোককে কখনও আমাদের অফিসে দেখিনি৷ ওনার নাকি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এমনটা হলে তার তো অফিসে আসার কথা এবং পুলিশেরও আসার কথা।

‘আমি এমন কিছু কখনও দেখিনি এবং আমাদের স্যার-ম্যাডামও এ বিষয়ে কখনও কোনো কিছু বলেননি। বিষয়টি জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছি।’

রতন কুমার বলেন, ‘হেনোলাক্স ১৯৮৪ সালে প্রথমে ত্বক ফর্সা করা ও মুখের দাগ দূর করার কয়েকটি ক্রিম নিয়ে বাজারে ব্যবসা শুরু করে। এরপর এর জনপ্রিয়তার কারণে হেনোলাক্সের মোড়কে নকল ক্রিমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। মামলা মোকদ্দমা করেও নকল ক্রিমের বাজার বন্ধ করতে না পেরে ২০০৪ সালে এই ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হেনোলাক্স কর্তৃপক্ষ।

‘এরপর নুরুল আমিন হেনোলাক্স ফুড নামে লাইসেন্স নিয়ে রেডি টিসহ দুই-একটি খাদ্যপণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। নুরুল আমিন ২০১২ সালে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের লাইসেন্স নিয়ে এর অধীনে বেশ কিছু প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। তবে ২০১৯ সালের পর এই ব্যবসাতেও ধস নামে।’

রতন কুমার বলেন, ‘আমিন হারবালের উৎপাদনও বন্ধ, কোনো অর্ডার পাওয়া গেলে কেবল সেগুলো তৈরি করে সরবরাহ করা হয়।’

তিনি জানান, ব্যাবসায়িক মন্দার কারণে কদমতলীর কারখানাটি অন্য এক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন নুরুল আমিন। এখন পুরানা পল্টনের ফ্ল্যাট ও কারখানা ভাড়া ছাড়া হেনোলাক্স গ্রুপের আর কোনো দৃশ্যমান আয়ের উৎস নেই।

রতন কুমার বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কর্মকর্তা আছি, তারা পল্টনের অফিসে বসি। আমি মূলত পুরানা পল্টনের ভবনটির ও কারখানার ভাড়া তুলি। আর মো. তসলিম উদ্দীন নামে আমিন হারবালের একজন মার্কেটিং ম্যানেজার আছেন। তিনি দৌড়াদৌড়ি করে হারবালের কিছু অর্ডার নিয়ে আসেন, এভাবেই চলছে।’

আমিনের হেনোলাক্স কারখানায় প্রসাধনী নয়, তৈরি হচ্ছে সেমাই
হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন (মাঝে) ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন (ডানে)

আমিন হারবাল লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. তসলিম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই পদে আছেন। তিনি মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমিন হারবালের প্রসাধনীর প্রচার ও বিপণনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে সোমবারের পর থেকে তাকেও অফিসে দেখা যায়নি। তসলিমের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

নুরুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে। শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাদিম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের সবাই তাকে হেনোলাক্সের কর্ণধার হিসেবে চেনেন।’

ঢাকায় হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পরই নুরুল আমিনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে উল্লেখ করে নাদিম সরকার বলেন, ‘নুরুল আমিন সাহেব আমাদের এলাকায় সহজ-সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার পরিবার অতটা সচ্ছল ছিল না। শুনেছি আগে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। তবে ঢাকায় গিয়ে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়।

‘বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কামান। ঢাকাসহ নরসিংদীতে অনেক জায়গাজমি কেনেন। তবে আবার এই হেনোলাক্স লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বলে আমরা শুনেছি। হেনোলাক্স ছাড়া তার আর কোনো ব্যবসা আছে বলে আমার জানা নেই।’

নুরুল আমিনের শ্বশুরবাড়িও একই এলাকায় জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনার কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। শুধু ঈদের সময় বছরে দুই-একবার গ্রামে আসেন।’

আরও পড়ুন:
হেনোলাক্স মালিকের বিচার চেয়ে ফেসবুকেও সোচ্চার ছিলেন আনিস
বাঁচানো গেল না গায়ে আগুন দেয়া গাজী আনিসকে
নিজের গায়ে আগুন দিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা
কারওয়ান বাজারে ‘রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা’
ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল কিশোরীর মরদেহ

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Torture of Hajti after seeing the activities of Subeda and women prisoners
গাইবান্ধা জেলা কারাগার

সুবেদারের ‘অপকর্ম’ দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে নির্যাতন!

সুবেদারের ‘অপকর্ম’ দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে নির্যাতন! গাইবান্ধা জেলা কারাগার। ছবি: নিউজবাংলা
গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে ফেলেন এক নারী কয়েদি। ঘটনা ফাঁস হওয়ার আতঙ্কে ওই দুজনসহ আরও কয়েক বন্দি ও কারারক্ষী মিলে ওই কয়েদির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসন।

গাইবান্ধা জেলা কারাগারে এক নারী হাজতিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, এক প্রধান কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ দেখে ফেলায় তার মেয়েকে এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী হাজতির নাম মোর্শেদা খাতুন সীমা। তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। সীমা মাদক মামলায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা কারাগারে বন্দি।

লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা। সেই অভিযোগের কপি নিউজবাংলার হাতেও এসেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা।

সুবেদারের ‘অপকর্ম’ দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে নির্যাতন!
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগপত্র।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নং-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন নারী হাজতি সীমা।

বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।

একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।

এতোসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। এদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের অভিযুক্ত প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার নামটা কেন আসতেছে জানা নেই।

‘ঘটনাটি এক মাস আগের। আরেক প্রধান কারারক্ষী মোস্তফার ডিউটির সময়ের। কিন্তু আমার নাম কেন হচ্ছে বিষয়টি জানি না।’

অপর অভিযুক্ত মহিলা কারারক্ষী তহমিনা আক্তার মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যা ঘটেছিল তার বিপরীত ঘটনা তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে। আরেফিন নামে এক নারী কারারক্ষী ও তার স্বামীর মদদে এই বন্দি এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’

কারারক্ষী তহমিনা আরও বলেন, ‘এই বন্দী (সীমা) একাধিক মামলার আসামি। প্রশাসনের লোকজনের ওপর হাত তোলার একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনও সাবানা নামে এক নারী কারারক্ষীর গায়ে হাত তুলেছিলেন এই বন্দি।’

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) এডিসি মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ভেতরের ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে একটি ব্যাপার তৈরি হয়েছে, যা ফোনে বলা সম্ভব নয়। তবে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টির তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The causes of the Faridpur accident were known

ফরিদপুরের দুর্ঘটনার যেসব কারণ জানা গেল

ফরিদপুরের দুর্ঘটনার যেসব কারণ জানা গেল অতিরিক্ত গতি থাকায় সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যায় যানবাহন দুটির সামনের অংশ। ছবি: নিউজবাংলা
সরেজমিনে ঘুরে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে উল্টো লেনে গাড়ি চালানো ও এবড়ো খেবড়ো সড়কের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

ফরিদপুরের কানাইপুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনায় এক পরিবারের চার সদস্যসহ মোট ১৪ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও দুজন।

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরের দিগনগর তেঁতুলতলায় ঢাকা থেকে মাগুরা অভিমুখী ইউনিক পরিবহনের একটি বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে সড়কেই ঝরে পড়ে ১১ প্রাণ। হাসপাতালে নেয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

তবে সরেজমিনে ঘুরে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে উল্টো লেনে গাড়ি চালানো ও এবড়ো খেবড়ো সড়কের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ফরিদপুর পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার ও স্থানীয়দের দাবি অন্তত তা-ই।

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও পিকআপ দুটিরই অতিরিক্ত গতি ছিল। আর পিকআপচালক তার নির্দিষ্ট লেন ছেড়ে বিপরীত লেনে চলে আসেন। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাসের চালক ফিট ছিলেন কি না, পিকআপটির চালকের লাইসেন্স ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার সুবাস বাড়ৈ বলেন, ‘গাড়িটি (বাস) ওভার স্পিডে (অতিরিক্ত গতি) চলছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’

দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই শেখ লিমনের বাড়ি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখানে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু বিট ও তার পাশে গর্ত আছে, রাস্তাও এবড়ো থেবড়ো। ঈদের আগেও এখানে বিশ-বাইশটি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকালে ওই বিটের কাছেই দুর্ঘটনা ঘটে।’

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, নিহতদের দাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের পরবর্তীতে ৫ লাখ এবং গুরুতর আহতদের ৩ লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে।

আরও পড়ুন:
ফরিদপুরে পিকআপে বাসের ধাক্কায় নিহত ১৩

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Syndicate behind Chasiks 20 Ghat Khas collection

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্ণফুলীর একটি ঘাটে যাত্রী পারাপার। ছবি: নিউজবাংলা
উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় পহেলা বৈশাখে ২০ ঘাটের ইজারা হয়নি। আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে চসিকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ইজারালোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

কর্ণফুলীর সল্টগোলা-ডাঙারচর ঘাটসহ ২০টি নদী পারাপার ঘাট ইজারা না হওয়ায় নামমাত্র ‘খাস কালেকশন’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চসিক রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের পুরনো ইজারাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে খাস আদায়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মেয়রের নামও ভাঙাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চসিকের এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রীসহ পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। ঘাটগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ২০ ঘাটের ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি।

ঘাট ইজারা না হওয়াটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে চসিকের রাজস্ব শাখা ‘খাস কালেকশন’ আদায়ের দিকে হাঁটছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতে ইজারালোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন। খাস কালেকশনের নামে রাজস্ব আদায় কম দেখানোর সুযোগ তৈরি করছেন তারা।

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট
একটি ঘাটে ইজারাদারের টোল আদায়ের ঘর। ছবি: নিউজবাংলা

এই খাস কালেকশনকে রাজস্ব ফাঁকির কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছে পাটনিজীবী একাধিক সমিতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন পুরনো ইজারা ব্যবসায়ী বলেন, খাস কালেকশনে টাকা আদায় কম দেখানো গেলে পরবর্তী বছরের ইজারা মূল্য কমানোর আইনগত পথ সৃষ্টি হয়। এছাড়া একাধিকবার খাস কালেকশনে পরের বছর আইনগত ঝামেলা এড়িয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারসাজিতে কয়েক বছর পর পর গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলোর ইজারা মূল্য কমে যায় এবং সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

তারা বলেন, এই পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগারে নামমাত্র অর্থ জমা হলেও বড় অংকের টাকা চলে যাবে চসিক সিন্ডিকেটের পকেটে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে চসিক কিংবা সরকার।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট (১৫১৬৩/২৩) পিটিশনের কারণে এবার বাংলা ১৪৩১ সনে চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলোর ইজারা স্থগিত রয়েছে। ঘাটে ঘাটে আবার কানাঘুষাও চলছে যে এসব চসিকেরই কৌশল। কেননা এতে কপাল খুলে যায় একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও চসিক-সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের।

চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলো হলো- পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, নয়ারাস্তা পাকা পুলঘাট, সদরঘাট, ফিশারীঘাট, নতুনঘাট, এয়াকুব নগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪ নংম্বর ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, ১২ নম্বর তিনটিংগা ঘাট, ৭ নম্বর রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ঘাট, ৯ নম্বর বিওসি ঘাট, অভয় মিত্র ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পানঘাট থেকে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট ও চাক্তাই লবণ ঘাট।

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চলতি বছরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ছিল- পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সল্টগোলা ঘাট ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ১০০ টাকা, বাংলাবাজার ঘাট ২৪ লাখ ৪ হাজার ৬০০ টাকা, সদরঘাট ২১ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ টাকা, ফিশারি ঘাট ২৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা, পতেঙ্গা ১৪ নম্বর ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট ৮৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৯ নম্বর বিওসি ঘাট ৩৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।

হিসাব করলে দেখা যায়, পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্যের সঙ্গে ২০ শতাংশ ভ্যাট যোগ করলে মোট ইজারা দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে দৈনিক কিস্তি পড়ে ৮৮ হাজার ৬০২ টাকা। অনুরূপভাবে সল্টগোলা ঘাটের দৈনিক কিস্তি ১৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

এভাবে প্রতিটি ঘাটে দৈনিক ১০ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকার মতো ইজারা আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু অতি কৌশলে চসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দৈনিক মাত্র ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার নামমাত্র মূল্যে খাস কালেকশন আদায়ের প্রক্রিয়া নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

অভয় মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনকারী মো. আবুল জানান, দৈনিক দু’হাজার টাকা হিসাবে তিনি এই ঘাট নিয়েছেন। বাংলাবাজার ঘাটের লোকমান দয়াল জানান, দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টাকায় তিনি এই ঘাট দেখাশোনা করছেন।

চসিক নীতিমালায় ঘাট ইজারা কিংবা খাস আদায়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত স্থানীয় পাটনিজীবী সমিতিকে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু খাস আদায়ের জন্য স্থানীয় পাটনিজীবী সমিতিগুলো মেয়রের কাছে ধর্না দিয়েও সাড়া না পায়নি। অনন্যোপায় হয়ে তারা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন কিংবা মানববন্ধন কর্মসূচির চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানা গেছে।

সল্টগোলা ডাঙ্গারচর পাটনিজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাম্পান মাঝিরা সাম্পান চালিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই। আমরা চাই কেউ আমাদের পেটে লাথি না মারে। টোল কিংবা খাস কালেকশন যে আদায় করবে করুক, আমরা এই ঘাটের মাঝি; আমরা যাত্রী পারাপার করতে চাই।

‘বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে খাস কালেকশন দিচ্ছি। এখনও চসিক থেকে কেউ আসেনি। আমরা সরকারি রেজিস্ট্রেশনধারী পাটনিজীবী সমিতি। কিন্তু বাইরের কিছু লোক ঘাট দখলের পাঁয়তারা করছে ঘাটে চাঁদাবাজি করার জন্য। আমরা এসব হতে দেব না।’

বেশিভাগ ঘাটের ইজারাদার আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ তেল শুক্কুর বলেন, ‘আমরা কয়েকটি ঘাটের খাস কালেকশন করতেছি। ১৫ দিন পর পর সিটি করপোরেশনে টাকা দিতে হয়।’

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু পাটনিজীবী সমিতি মিলে হাইকোর্টে রিট করে স্টে-অর্ডার করেছে; যাতে ইজারা টেন্ডার বন্ধ থাকে। সে কারণে ঘাটগুলোর ইজারা বন্ধ রয়েছে। আমরা ডকুমেন্টস সংগ্রহ করছি। শিগগিরই রিট শুনানি করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর বর্তমানে ঘাটগুলো বিভিন্নজনকে বিভিন্নভাবে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এস্টেট শাখা ভালো বলতে পারবে।’

চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বিশেষ ট্রেনিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চসিকের সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইন শাখা কাজ করছে। শিগগিরই হাইকোর্টের স্টে-অর্ডারটি ব্যাকেট করা হবে। তারপর ঘাটগুলোর টেন্ডার কল করা হবে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব লোকজন ঘাটগুলো দেখাশোনা করছে। আর সল্টগোলা ডাঙারচর ঘাটে লোকজন গেছে।’

চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু এভাবে খাস কালেকশন চলতে থাকলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসবে না সেটাও সত্য।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Railways helpless with powerful KCC councillors

ক্ষমতাধর কেসিসি কাউন্সিলরের কাছে অসহায় রেলওয়ে

ক্ষমতাধর কেসিসি কাউন্সিলরের কাছে অসহায় রেলওয়ে খুলনা নগরের খালিশপুরে জলাশয় ভরাট করে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি দখল করে রেখেছেন কেসিসির কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্না। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’

রেলওয়ের ৬৬ শতক জলাশয় ভরাট করে দখলে রেখেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এক্ষেত্রে তিনি অজুহাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি)। তার দাবি, মেয়র ওই জায়গায় পার্ক বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পুলিশে অভিযোগ দিয়েও সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারছে না রেলওয়ে।

তবে কেসিসি থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে কোনো নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়নি। আর কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কিছুই জানেন না মেয়র।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে স্থানীয় জনি মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ওই জমি ইজারা দেয়া হয়েছিল। ওই জমিটুকু জলাশয় হওয়ায় ইজারার শর্তে উল্লেখ ছিল যে তা ভরাট করা যাবে না। তবে ইজারা নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জায়গাটি ভরাট করে ফেলা হয়।

রেলওয়ের যশোর ও খুলনার ভূমি কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে ওই জমি ভরাট করা হয়েছে। জনি মিয়ার দায়িত্ব ছিল ওই জলাভূমি রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের। কিন্তু তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নার সঙ্গে যোগসাজস করে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফেলেছেন।’

শর্ত ভঙ্গ করে ভূমি ভরাট করায় জনি মিয়ার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ভূমি কর্মকর্তা। তবে প্রভাবশালী কাউন্সিলরের চাপে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।

মহসিন আলী বলেন, ‘তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জিআরপি থানায় যে ডায়েরি করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। ওই সময়ে কাউন্সিলর মুন্না ও তার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে ওই তদন্ত বন্ধ করে দেন। অবশেষে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমির পুরো জলাশয়টি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যায়।’

সম্প্রতি রেলওয়ের ওই সম্পত্তি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেখানে দেখা যায়, জলাশয়টির কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো জায়গাটি সমতল মাঠে পরিণত হয়েছে। আর কিছু শ্রমিক ভরে ফেলা জায়গাটি সমতল করছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রেলওয়ের ওই জমিতে শিশুপার্ক, কাউন্সিলর কার্যালয়, দোকানপাট ও বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি রেলওয়ের কর্মকর্তারা এখানে এসে অসহায় বোধ করেন। মুন্না স্পষ্ট করেই তাদেরকে বলে দেন- এটি কেসিসির মালিকানাধীন পরিত্যক্ত জমি এবং তারা শিশুদের জন্য একটি পার্কসহ সেখানে কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। তখন রেলওয়ের কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তা নেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনার জিআরপি থানার ওসি ইদ্রিস আলী মৃধার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর দাবি করেন যে ড্রেন সংস্কারের সময় জমে থাকা মাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই কেসিসি মেয়রের নির্দেশে তারা মাটি দিয়ে জলাশয়টি ভরাট করছেন।’

যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নাও দাবি করেন, কেসিসি মেয়রকে জানানোর পর তিনি জলাশয়টি ভরাট করেছেন।

তিনি বলেন,’ জলাশয়টি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। আর তা স্থানীয়দের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই আমি মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং জনগণের স্বার্থে জলাশয়টি ভরাট করে দিয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে একটি শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে।

অনুমতি ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তি জলাশয় ভরাট করা আইনসঙ্গত কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ওই জমিতে সিটি করপোরেশনের পার্ক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আর জমি ভরাট ও দখলের ব্যাপারে মেয়র কোনো কিছুই জানেন না।’

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল। তিনি বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জলাশয় দখল করে নিলেন। আর জমির মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান পুলিশের আশ্রয় নিয়েও তা রক্ষা করতে পারলো না। এখানে আইন অন্ধ দৃষ্টির ভূমিকা রেখেছে।’

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূমি সম্পত্তি কর্মকর্তা (পাকশী জোন) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা জলাশয়টি ভরাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে জায়গাটির চারপাশে বেড়া দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

আরও পড়ুন:
পূর্ব রেলের কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অবশেষে মামলা
চাকরি স্থায়ী করতে প্রতারণার আশ্রয়, কপাল পুড়ল ৩৭ কর্মীর
পূর্ব রেলওয়ের কোটি টাকা আত্মসাৎ, কিনারা হয়নি ২৩ দিনেও
যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণে প্রস্তুত কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Al Amin has cheated various businesses by killing customers money
সিরাজগঞ্জে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় অর্থ জালিয়াতি

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা জনতা ব্যাংক তামাই শাখার সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপক আল-আমিন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজার আল-আমিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর সেসব টাকায় আল-আমিন ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।

ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।

এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।

আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।

মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।

অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।

বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’

একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।

একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”

মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’

মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।

ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।

দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Customers of Janata Bank Tamai branch also have money
ক্যাশভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাবে গরমিল

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’ আটকের পর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় ব্যাংক ম্যানেজার আল আমিনসহ তিনজন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের মর্জিমাফিক কার্যক্রম চালিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আল আমিন। একে একে বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য। অনেক গ্রাহকের হিসাবের টাকাও তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে- তাহলে কি হিসাবে গরমিলের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকাই শেষ কথা নয়?

ব্যাংকিং নিয়মে নয়, নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন।

এদিকে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনও মেলিনি।

বুধবার সকালে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের হিসাবে থাকা টাকা তাদের অজান্তে তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ক্যাশ ভল্টের ওই পরিমাণ টাকাই শেষ কথা নয়? গ্রাহকদের অজান্তে তাদের হিসাবে জমা বিপুল পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?

শাখাটিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে।

তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি উত্তোলন করেননি। অথচ তার ব্যাংক হিসাব ঘেটে দেখা যায় যে তিনি পুরো টাকাই উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এমন ঘটনায় মোতালেব জোয়ারদার হতবাক! এ অবস্থায় তার করণীয় কী হতে পারে বুঝতে পারছেন না।

শুধু আব্দুল মোতালেব নন, আরও অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাব থেকে তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ওই হিসাবে আছে মাত্র এক লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।

তাৎপর্যের বিষয় হল, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন এসএমএস আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদেরকে জানান- সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পাচ্ছেন না।

বুধবার সকালে দেখা যায়, তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।

জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন- ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।

এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তামাই শাখার ক্যাজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনের কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারেও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

কেন স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়া হতো। অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’

এসব বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’

তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ব্যাংকের বিপুল টাকার হদিস না পাওয়ার এই ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম।

আল আমিন সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি পৌর এলাকার মো. হারান শেখের ছেলে, রেজাউল করিম বগুড়ার ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং রাশেদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রোববার জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে।

পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসারে ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Matikhekora chose the darkness of the night by changing tactics

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা দিনের আলোতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের ঝক্কি এড়াতে রানীনগরে রাতের আধাঁরে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়।

নওগাঁর রাণীনগরে কোনোভাবেই থামছে না কৃষি জমির মাটি লোপাট। দিনের আলোতে প্রশাসনের হানা দেয়ার ভয় থাকার কারণে কৌশল পাল্টেছে মাটিখেকোরা। দিনের আলো ফুরাতেই শুরু হচ্ছে মাটি কাটার মহোৎসব।

একটি মেশিনের জায়গায় বর্তমানে একই স্থানে একাধিক মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে সরকারি খাস জমির মাটি। এতে কৃষিজমি হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পাকা সড়ক।

পরিবেশ ও মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে দ্রুত প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দিন ও রাতের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গিয়ে দেখা যায়, মিরাট ইউনিয়নের ২ নম্বর স্লুইস গেট সংলগ্ন স্থানে আতাইকুলা মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ সংলগ্ন স্থানে সরকারি খাস জমির সঙ্গে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বছরে ১৬ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে বন্ধক নিয়ে সেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

মাসখানেক আগে ‘অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা’- এমন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ট্রাক্টরচালককে কারাদণ্ড দেন। পরে সেখানে গিয়ে সরকারি খাস জমির একটি সাইনবোর্ড এবং সরকারি জমি পরিমাপ করে লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করে আসেন উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা
সরকারি জমি-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড থাকলেও তার পাশ থেকেই চলছে মাটি কাটার উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ঘটনার কয়েকদিন পর উপজেলার কুজাইল এলাকার সর্বরামপুর গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জনৈক রাজনৈতিক নেতাকে ‘ম্যানেজ করে’, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে কৌশল পাল্টে রাতে মাটি কাটা শুরু করেছে। তার পর থেকে বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ফলে রাতের আঁধারে দেদারছে সরকারি খাস জমিসহ কৃষি জমি গর্ত করে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বড় বড় ড্রাম ট্রাকের চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও প্রধান পাকা সড়কগুলো। শুধু তা-ই নয়, ট্রাক থেকে সড়কে মাটি পড়ার কারণে তা যানবাহন ও পথচারী চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। তাছাড়া গাড়ির নিয়ন্ত্রণে বেগ পাওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পরে সন্ধির মাধ্যমে চাবি ফিরিয়ে দেয়।

তাদের দাবি, এতো ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই স্থানে কিছু খাস জমি হয়ত আছে। তবে জমির মালিকরা আমার সঙ্গে চুক্তি করে মাটি কেটে নিচ্ছে। আমি মাটির বিনিময়ে তাদের জমি খনন করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি খনন করা হচ্ছে কি না, এই বিষয়ে জমির মালিকরা জানেন। অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না, তা তারা বলতে পারবেন।’

তবে রাতে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় প্রশাসন হানা দেয়, তাই রাতে মাটি কাটা হচ্ছে।’

মিরাট ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওই জমি থেকে মাটি কাটা নিয়ে একটি মামলা চলছিল। পরে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

তবে মাটিখেকোরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই হয়ত রাতে মাটি কাটছে বলে ধারণা তার।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

রানীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ বলেন, ‘পুলিশ শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করে। কে কোথায় মাটি কাটছে, সেই বিষয়টি দেখবে উপজেলা প্রশাসন কিংবা ভূমি অফিস।

‘পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এমন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ইউএনও উম্মে তাবাসসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে মাটিকাটা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও যদি তিনি মাটি কাটা বন্ধ না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য

p
উপরে